মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৭৩) তওবা-এর মাক্বাম এবং সেই মাক্বামে ফানা কতিপয় আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম

সংখ্যা: ২১৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

 

শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে গভীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে খালিছভাবে তওবা ও ইস্তিগফার করা আবশ্যক।

খালিছভাবে তওবা করলে আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা অত্যন্ত খুশি হন। গুনাহ-খতা ক্ষমা করেন। এমনকি গুনাহগুলোকে নেকীতে পরিণত করে দেন। নৈকট্য দেন, সন্তুষ্টি, রেযামন্দি দেন। মাহবূব বান্দায় পরিগণিত করেন। আর ওলীআল্লাহগণ উনাদের নিছবত, তায়াল্লুক দান করেন। কাজেই একথা অনস্বীকার্য যে, তওবা-ইস্তিগফার দ্বারা সবচেয়ে বেশি নৈকট্য হাছিল হয়।

তওবা (توبة) অর্থ: ফিরে আসা, অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকা।

হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার æমুর্শিদুল আমীন” কিতাবে উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে গুনাহ ছেড়ে দেয়া, ভবিষ্যতে আর গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প বদ্ধ হওয়া এবং অতীত কাজসমূহের ক্ষতিপূরণ করার নামই তওবা।

আর ইস্তিগফার অর্থ হচ্ছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

উল্লেখ্য যে, মানুষ মাত্রই কিছু না কিছু গুনাহ করে থাকে। আল্লাহ পাক তিনি কেবলমাত্র নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তা থেকে পাক-ছাফ রেখেছিলেন। গুনাহ হতে তওবা করা ইনসানের পক্ষে অত্যাবশ্যক। হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, মানুষ গুনাহ করলে তার দিলের উপর একটি কালো দাগ পড়ে যায়, যদি সে ব্যক্তি গুনাহ হতে তওবা করে এবং আল্লাহ পাক উনার নিকট গুনাহ মাফ চায়, তবে তার দিল পরিষ্কার হয়ে যায়। যদি তা না করে পূনঃপুন গুনাহ করতে থাকে তখন কালো দাগ তাতে বাড়তে থাকে; অবশেষে গুনাহর ছিয়াহী তার দিলকে ঢেকে ফেলে। তার নাম দিলের মরিচা। গুনাহ পুনঃপুন করতে থাকলে অবশেষে দিল পাথর অপেক্ষাও কঠিন হয়ে পড়ে। গুনাহ বিষতুল্য। যতই তা অধিককাল শরীরে থাকবে ততই রূহানী শক্তিকে বিনষ্ট করে শয়তান ও নফসের কর্মশক্তিকে বাড়িয়ে দিতে থাকে; ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাতের প্রতি জজবা বা আকর্ষণ কম হয়ে পড়ে, এমনকি অবশেষে তার আস্বাদ পর্যন্তও লোপ পায়। গুনাহ করে তওবা না করলে দিল ব্যাধিগ্রস্ত সর্বোতভাবে অকেজো হয়ে পড়ে এবং নেক কাজের আকাঙ্খা বা ইচ্ছা আদৌ থাকে না।

গুনাহর চাপে শক্তিহারা হয়ে অবশেষে দিল মরণাপন্ন হয়ে পড়ে, তখন তার নিকট নেক কাজ বিষের মতো এবং বদ কাজ মধুর মতো বোধ হতে থাকে। এমতাবস্থায় প্রত্যেকের কর্তব্য, খালিছ নিয়তে আল্লাহ পাক উনার নিকট তওবা করা। কাজেই, সালিক বা মুরীদ জীবনে যা কিছু গুনাহ করেছে তা হতে তওবা করতঃ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে যে, বাকী জীবনে আর কোন গুনাহই করবে না। যা কিছু গুনাহ এই জীবনে করেছ, তার জন্য আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট অনুতপ্ত হবে, আর ভগ্ন হৃদয়ে উনার নিকট তওবা করবে। যখন মানব জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী করা, তখন উনার দরবারে পৌঁছতে যাহিরী ও বাতিনী নাপাকী হতে পাক সাফ হয়ে উপস্থিত হওয়া দরকার।

গুনাহ অনেক প্রকারে হয়ে থাকে। তন্মধ্যে শিরকী গুনাহ সর্বাপেক্ষা বড় ও শক্ত কঠিন। শিরক করলে ঈমান চলে যায় এবং শিরককারীর সব নেক আমল বরবাদ হয়ে যায়। ভুলক্রমে কোন শিরকী গুনাহ করে ফেললে তৎক্ষণাৎ তওবা করে পুনরায় কালিমা পড়ে মুসলমান হতে হয় এবং আহলিয়ার (স্ত্রী) সাথে নিকাহ দোহরিয়ে নিতে হয়। হক্কুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার হক্ব সংশ্লিষ্ট গুনাহ হলে খালিছ দিলে তা হতে তওবা করলে, আল্লাহ পাক তিনি তা মাফ করে দেন, কিন্তু হক্কুল ইবাদ অর্থাৎ বান্দার হক্ব বিনষ্ট করলে বা বান্দার হক্ব সংশ্লিষ্ট কোন গুনাহ হলে তা বান্দা হতে মাফ না নেয়া পর্যন্ত মাফ হবে না। নামায, রোযা ইত্যদি আদায় না করে থাকলে, উহার কাযা আদায় করে নিতে হবে। মদ, জুয়া, ব্যভিচার, খেলা-ধুলা করা, ছবি তোলা, দেখা, রাখা ইত্যাদি হারাম কাজ করে থাকলে বেদনার্ত হৃদয়ে ও কাকুতি-মিনতি করে আল্লাহ পাক উনার নিকট তওবা করতে হবে কিন্তু বান্দার হক্ব বিনষ্ট করলে, অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করে থাকলে তা ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত মাফ হবে না। সুদ ও ঘুষ নিলে কিংবা অন্যায়ভাবে কোন প্রকার ধন, মাল, জায়গা-জমি আত্মসাৎ করলে তা মালিককে ফেরত দিতে হবে। ফেরত না দেয়া পর্যন্ত তা মাফ হবে না। আদায় করার ক্ষমতা না থাকলে মাফ চেয়ে নিতে হবে। কোন লোকের গীবত, গালাগালি ইত্যাদি করে থাকলে, তার নিকট হতে মাফ চেয়ে নিতে হবে। নতুবা গুনাহর জন্য আল্লাহ পাক উনার নিকট জবাবদিহি করতে হবে। হায়াতে বেঁচে থাকতে উক্ত প্রকার হক্ব আদায় বা মাফ চেয়ে না নিলে, আল্লাহ পাক তিনি কিয়ামতের দিন তার কৃত নেক আমলসমূহ দ্বারা তা আদায় করে দিবেন। অতএব হায়াত থাকতে অন্তরে গুনাহর ভয় জাগিয়ে রাখা, এবং প্রত্যহ তওবা করা উচিত। (সিরাজুছ সালিকীন-১৮২)

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৪৮)

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল ল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৪৯)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫০)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)