মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১৬৯)

সংখ্যা: ২১০তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

ফানা-এর মাক্বামে অবস্থানকারী কতিপয় আওলিয়ায়ে কিরাম

রহমতুল্লাহি আলাইহিম

আল্লাহ পাক উনার কোটি কোটি ওলী রয়েছেন। উনাদের কোটি কোটি হাল (অবস্থা) রয়েছে। ক্বিয়ামত পর্যন্ত আরো কোটি কোটি আওলিয়ায়ে কিরাম আসবেন। উনাদের কোটি কোটি হালও (অবস্থা) হতে পারে। তবে সুন্নতের অনুসরণ-অনুকরণে যে হাল বা অবস্থার সৃষ্টি হয় সেটাই অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। সে হাল দ্বারাই আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বাধিক নৈকট্য মা’রিফাত, মুহব্বত হাছিল হয়। আর তা সকলের জন্য সহজ ও সম্ভব বটে।

তবে পূর্ববর্তী আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং ইস্তিক্বামত (অবিচল) থাকার বিষয়টি থেকে ইবরত-নছীহত গ্রহণের জন্য কয়েকজন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সুলূক তথা মা’রিফাত-মুহব্বত হাছিলের পথে ফানা-এর কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো-

(১)

তাযকিরাতুল আওলিয়া কিতাবের ৭৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, একবার কয়েকজন মুরীদ শাইখুল মাশায়িখ, ইমামুল আওলিয়া, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল ওয়াহিদ ইবনে যায়িদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমতে আরয করলেন, হুযূর! বেয়াদবি মাফ চাই। বর্তমানে এমন কোন মুরীদ আছেন, যিনি ফানা-এর মাক্বামে অবস্থান করছেন? যিনি দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিমুখ, দুনিয়াবী কোনকিছুই উনার দৃষ্টিগোচর হয় না? তিনি বললেন, তোমরা অপেক্ষা করো। এমন একজন মুরীদ একটু পরেই এখানে আসবে।

সত্যিই কিছুক্ষণ পরেই হযরত উতবা ইবনে গোলাম রহমতুল্লাহি আলাইহি আসলেন। শাইখুল মাশায়িখ, ইমামুল আওলিয়া হযরত আব্দুল ওয়াহিদ ইবনে যায়িদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “বাড়ি থেকে বের হয়ে দরবার শরীফ-এ আসার পথে কারো সাথে তোমার সাক্ষাত হয়েছে কি?” তিনি জবাবে বললেন, জি-না হুযূর, আমার সাথে কারো সাক্ষাত হয়নি। আমি কাউকে দেখিনি। অথচ সবাই জানতেন যে, একটি জনকোলাহলপূর্ণ বড় বাজারের উপর দিয়ে উনাকে দরবার শরীফ-এ আসতে হয়েছে। কিন্তু উনার দৃষ্টিতে কেউ পড়েনি। আরো বর্ণিত আছে যে, এক রাতে হযরত উতবা ইবনে গোলাম রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বপ্নে দেখলেন, একজন রূপসী জান্নাতী হুর এসে উনাকে বলছেন, উতবা! আমি তোমার আশিক হয়েছি। তাই বলছি, তুমি এমন কোন কাজ করো না যা তোমার ও আমার মধ্যে বিচ্ছেদের কারণ হয়।

হযরত উতবা ইবনে গোলাম রহমতুল্লাহি আলাইহি জবাব দিলেন, আমি তো আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফাত-মুহব্বতে গরক হয়ে দুনিয়াকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করেছি। এমতাবস্থায় তোমার দিকে কিভাবে নজর দিতে পারি?

(২)

লিসানে তাছাউফ, মুজতাহিদ ফী ইলমিত তরীক্বত হযরত আবু সাঈদ খাযযার রহমাতুল্লাহি আলাইহি যখন “তাওয়াক্কুল” এর মাকাম হাছিলের পথে ফানা হয়েছিলেন সে সময়ের ঘটনা।

‘তাওয়াক্কুল’ অর্থ ভরসা করা, নির্ভর করা। নিজ ক্ষমতা ও শক্তি হতে অপারগ হয়ে সব কাজের ভার আল্লাহ পাক উনার কাছে সোপর্দ করাকে তাওয়াক্কুল বলে। নফস লতীফা হচ্ছে তাওয়াক্কুল-এর মাকাম। কামিল শায়খ উনার নির্দেশ মত যিকির-ফিকির করা এবং তাওয়াক্কুল-এর পরিপন্থী কোন কাজ না করা। তবেই শায়েখ উনার ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ পেয়ে আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রহমত ও ইহসান লাভ হবে। ফলে সেই মাক্বামে উপনীত হওয়া যাবে। সাথে সাথে সেই মাক্বামে ইস্তিক্বামত থাকতে হলে সেই মাক্বামের খিলাফ কোন কাজ না করা। আর তার জন্য সবসময় সহজ দৃষ্টি রাখা।

লিসানে তাছাউফ হযরত আবু সাঈদ খাযযার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একবার আমি কোথাও যাওয়ার জন্য রওয়ানা হলাম, পথ চলতে চলতে আমি ক্লান্ত হলাম। আমার অত্যন্ত ক্ষুধা বোধ হল। নফস আমাকে বলতে লাগল, আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ কোন কিছু প্রার্থনা করুন। আমি বললাম, এটা তওয়াক্কুলের পরিপন্থী। আল্লাহ পাক তো আমার সবকিছুই দেখছেন। কাজেই, আমি তা কখনো করতে পারি না। তখন নফস নিরাশ হয়ে অন্যভাবে প্রতারণা করলো। সে বললো, যদি আপনি খাদ্য না চান তাহলে আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ অন্তত ছবর বা ধৈর্য্য চান। তখন আমি তাই করার জন্য প্রস্তুত হলাম। ঠিক সে মুহূর্তে আল্লাহ পাক উনার করুণায় আমার মনে ভাবান্তর সৃষ্টি হলো। আমি অদৃশ্য আওয়াজ শুনতে পেলাম। “আমার বন্ধু জানেন যে, আমি উনার খুব নিকটে রয়েছি। আর এটাও নিশ্চয়ই যে, যিনি আমার দিকে আসেন আমি উনাকে কোন দিন ধ্বংস করি না। আমার নিকট খাদ্য প্রার্থনা করতে উনার অন্তর সায় দেয়না। এমনকি তিনি নিজ অক্ষমতা ও দূর্বলতার কথা স্মরণ করে মনে করেন যে, তিনি আমার সাহায্য ব্যতিরেকে ছবরও করতে পারেন না। তবুও আমার নিকট ছবরের প্রার্থনা করতেও ইতস্তত বোধ করেন। আমি এমন লোককে বিনষ্ট করিনা।”

তিনি বলেন, অতঃপর এভাবে নফসের বিরোধিতা করে যখন আমি গন্তব্য স্থানের নিকটবর্তী হলাম তখন তথায় খেজুরের বাগিচা দেখে নফসের কিছুটা সান্তনা দেখা দিল। কিন্তু আমি নফসের বিরোধিতা করে উক্ত স্থান বদলে প্রান্তরের ভিন্ন এক জায়গায় অবস্থান করলাম। এ সময় কোন কাফেলার একটি লোক আমাকে জোর করে নিয়ে গেল। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি এখানে রয়েছি তা আপনি কি করে জানতে পারলেন? তিনি জবাব দিলেন, আমি গাইবী আওয়াজ শুনতে পেয়েছি যে, আল্লাহ পাক উনার এক বন্ধু বালুর স্তুপের আড়ালে আত্মগোপন করে আছেন। উনাকে নিয়ে আসুন। (তাযকিরাতুল আওলিয়া-৩৮২)

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল ল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৪৯)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫০)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)