সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৫৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

কুরবানী শব্দটি এসেছে ‘কুরব’ থেকে; যার অর্থ নৈকট্য, সান্নিধ্য ও নিকটবর্তী হওয়া। কুরবানীর মাধ্যমে কোনো কিছু মহান আল্লাহ পাক উনার নামে নিবেদিত করে উনার নিকটবর্তী হওয়া।

পবিত্র কুরবানী উনার গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে বহু পবিত্র হাদীছ শরীফ মুবারক বর্ণিত রয়েছে। যেমন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা পবিত্র কুরবানী করবে না, তারা যেন ঈদগাহের নিকটে না আসে।”

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “আদম সন্তান পবিত্র কুরবানী উনার দিন যেসব নেকীর কাজ করে থাকে তন্মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হলো পবিত্র কুরবানী করা। ক্বিয়ামত দিবসে পবিত্র কুরবানী উনার পশু তার শিঙ, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে এবং পবিত্র কুরবানীদাতার নাজাতের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করবে।” সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র ঈদুল আযহা উনার দিনে বান্দা-বান্দীর পবিত্র কুরবানী উনার পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাক তিনি তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।” সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে সমস্ত পশু দ্বারা পবিত্র কুরবানী করা হবে, ক্বিয়ামতের দিন সেই পশুগুলো পবিত্র কুরবানীদাতাকে পিঠে করে বিদ্যুৎবেগে পুলছিরাত পার করে বেহেশেত পৌঁছিয়ে দিবে।” সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র কুরবানী একটি প্রতীকী ঘটনা। এর মাধ্যমে মূলত মুসলমান শিরক এবং গাইরুল্লাহকেই জবেহ করে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার জজবা লাভ করে থাকেন। তাই পবিত্র কুরবানী মুসলমানদের কাছে যেমন প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিধর্মীদের কাছে তেমনি অপ্রিয় ও অপছন্দের কাজ।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “সব বিধর্মীদের ধর্ম এক।”

বাস্তবতা তাই প্রমাণ করে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সব বিধর্মীর দেশেই পবিত্র কুরবানী উনাকে নিষিদ্ধ তথা চরম বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মুসলমানরা কুরবানী দেন গরু কিংবা ভেড়া। তবে সেটা আমাদের দেশের মতো রাস্তা বা মাঠে প্রকাশ্যে নয়। নির্ধারিত একটি জায়গায় একত্র হয়ে কুরবানী দেন তারা। যুক্তরাজ্যের মুসলমানরাও বাংলাদেশ বা উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের মতো আড়ম্বরপূর্ণভাবেভাবে পবিত্র কুরবানীর ঈদ পালন করতে পারেন না। অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতা পালন মাত্র।

এই একই চিত্র দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়। সেখানে কুরবানী দেয়ার জন্য হাটে গরু দেখে কেনা হয় না। কোনো গরুর হাট বসে না। ফার্মে সরাসরি গিয়ে গরু পছন্দ করে অর্ডার দিয়ে আসেন গ্রাহকরা। খামারে ইলেকট্রনিক ও অটোমেটিক মেশিনে জবাই হয়। ফলত, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে পবিত্র কুরবানী হয় না।

এদিকে গত ১৪ জুন-২০১৬ ঈসায়ী ভারতে গরু জবাই নিষিদ্ধ করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় আইন তৈরির নির্দেশ দিয়েছে হিমাচল প্রদেশের হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে, গরু জবাই, গবাদিপশুর আমদানি-রফতানী এবং গরুর গোশত থেকে তৈরি পণ্য নিষিদ্ধকরণ করার জন্য আইন কার্যকরভাবে বলবৎ করার জন্য বিবেচনা করতে হবে। হাইকোর্টের পক্ষ থেকে এজন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে ৩ মাসের সময় দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারতের মোট ২৯টি প্রদেশ। এরমধ্যে ২৪টি প্রদেশেই গরু কুরবানী ও সারা বছর গরু জবাই নিষিদ্ধ। নাউযুবিল্লাহ! এবং তার শাস্তি হিসেবে ৬ মাস থেকে ৩ বছরের জেল ও ৫ হাজার রুপির জরিমানা পর্যন্ত নির্ধারণ হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতের হিন্দু জনসংখ্যার বিশ্বাসের উপর আঘাতের অভিযোগে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এসব গো-বধ নিষিদ্ধ করার মতো কঠোর আইন জারি করে। আমাদের কথা হলে ভারতে যদি হিন্দু জনসংখ্যার বিশ্বাসকে এভাবে মূল্যায়ন করা হয়, তবে ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে কেন মহা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের বিশ্বাসকে মূল্যায়ন করে কুরবানীর জন্য ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে না? কেন উল্টো ভারতেরই প্রভাবে অথবা অনুকরণে আমাদের দেশেও ছলেবলে কৌশলে কুরবানীকে বাধাগ্রস্ত করার অপকৌশল চলছে?

কেন কুরবানীর পশু জবাইয়ের জন্য ঢাকা উত্তরে ৫৬৭ ও ঢাকা দক্ষিণে ৫৮৩টি মোট ১১৫০টি স্থান নির্দিষ্ট করেছে দুই সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়? এছাড়া রাজধানীর বাইরে সারাদেশের ১১টি সিটি কর্পোরেশনের মোট ৬২৩৩টি স্থান পশু কুরবানী জন্য কেন নির্ধারণ করা হয়েছে?

অথচ দৈনিক আল ইহসান শরীফের অনুসন্ধানে জানা গেছে- শুধু ঢাকা শহরেই প্রতিবছর ৩০ লাখ গরু কুরবানী হয়ে থাকে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের অর্বাচীন ব্যক্তিরা এ সংখ্যা ধরেছে মাত্র ৩ লাখ। দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট ১১৫০টি স্পটে কুরবানীর করতে হলে একটি স্পটে ২৬৫০ জনকে কুরবানী করতে হবে। যা সম্পূর্ণ অসম্ভব ও অবাস্তব। ধারাবাহিকভাবে তিন দিন কুরবানী করলেও ২৬৫০ জন কখনো কুরবানী করতে পারবে না। একই অবস্থা হবে সারাদেশে।

সঙ্গতকারণেই আমরা মনে করি, কুরবানীর স্থান নির্দিষ্ট থাকলে লাখ লাখ কুরবানীদাতারা একই সময়ে কুরবানী তো করতে পারবেনই না, বরং নির্দিষ্ট স্থানে কুরবানীর জন্য দীর্ঘ সারি, যাতায়াতের সমস্যা, পরিবহন সমস্যা, গোশত বহনের ঝামেলা, গোশত ও চামড়ার নিরাপত্তা, মাস্তানদের অপতৎপরতাসহ হাজারো সমস্যার মুখোমুখি হবেন। এতে ঢাকাসহ সারাদেশের লাখ লাখ কুরবানীদাতা ওয়াজিব পালনে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে তথা নানা দুর্ভোগে পরে; তাদের প্রত্যেকের অন্তরেই সরকারের প্রতি ক্ষোভ সৃষ্টি হবে। এ কারণে অনেকে সরকার পতনের আন্দোলনে যোগও দিবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে লোক দেখানো বৌদ্ধ হামলার পর এখন বৌদ্ধদের কাঁচা ঘরগুলোকে দালান করে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মায়ানমার-ভারতসহ বহির্বিশ্বে মুসলমানদেরকে যে গণহারে শহীদ করা হচ্ছে, পদে পদে ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘিত করা হচ্ছে, ন্যূনতম মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, সেদিক থেকে কোনো মুসলমান দেশই সোচ্চার হচ্ছে না। কোনো মুসলমান দেশই টু শব্দ করছে না। এমনকি ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান অধ্যুষিত এদেশে কুরবানীর উপর একের পর এক যে হিন্দুত্ববাদী নীলনকশা প্রণয়ন করা হচ্ছে সেক্ষেত্রেও মুসলমান কোনো প্রতিবাদ করছে না। প্রতিহত করতে উদ্যোগী হচ্ছে না। কুরবানীর গরু সম্পর্কে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কুরবানীর হাটকে কমিয়ে আনা হচ্ছে। এরপর আবার হাটের ইজারামূল্য দ্বিগুণ করা হচ্ছে। এতে করে কুরবানীর পশুর দাম বাড়বে। এবং কুরবানীদাতা সংখ্যায় কম হবে। নাঊযুবিল্লাহ! কিন্তু এতসব ষড়যন্ত্রের পরও সক্রিয় হচ্ছে না মুসলমান। মুসলমান যেন বিন্দুতম পবিত্র ঈমানী অনুভূতি ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার চেতনা মুবারক হারিয়ে ফেলেছে। নাঊযুবিল্লাহ!

মূলত, মুসলমান আজ বেপর্দা, বেহায়া এবং গান-বাজনাসহ বিধর্মীয় কালচারে মত্ত হয়ে যাওয়ার জন্যই এরূপটি হচ্ছে। এর থেকে ফিরে পবিত্র ঈমানী কুওওয়াত তথা জজবা উপলব্ধির জন্য চাই রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক তথা তায়াল্লুক মায়াল্লা। কেবলমাত্র হক্ব ওলীআল্লাহ তথা সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পবিত্রতম নেক ছোহবত মুবারক উনার মাধ্যমেই তা প্রাপ্তি সম্ভব।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে তা নছীব করুন।  (আমীন) 

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়