সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৯৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

আলীমুল হাকীম আল্লাহ পাকই সকল হামদ ও শুকরিয়ার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতিই সকল ছলাত ও সালাম।

শিক্ষিত মুসলমান মাত্রই জানেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রূপায়িত ইসলাম মাত্র এক হিজরী শতকের মাঝেই আরব উপদ্বীপ থেকে বিস্তার লাভ করে পূর্বে সিন্ধু, চীন ও তুর্কিস্তান এবং পশ্চিমে স্পেন পর্যন্ত বিজয় রেখা সূচীত করেছিল। অর্থাৎ শিক্ষা-সভ্যতা-ঐশ্বর্যে কর্তৃত্বে তখন মুসলমানই ছিল সর্বেসর্বা।

ইসলামের সে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় আজ ইতিহাস। আজ মুসলমান বাদশাহী ছেড়ে স্বেচ্ছায় গোলামীত্ব বরণ করেছে। ভিক্ষার ঝুলি হাতে তুলে নিয়েছে। ভিক্ষার পরিমাণ নিয়ে দর কষাকষিতেই আত্মতুষ্টির প্রয়াস পাচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ!

প্রসঙ্গত ইউরোপের কোপেনহেগেনে গত ৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর বিশ্বের ১৯২টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষ হয়েছে।

এর পটভূমিকার প্রচারণা সম্পর্কে মুসলিম এবং অমুসলিম বিশ্বের মধ্যে কোনো ইখতিলাফ বা মতানৈক্য দেখা যায়নি।

সবারই ঐকমত্য প্রচারণা ছিল: বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর নাগরিকরা নিজেদের ভোগের জন্য অতিমাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে (কার্বন নিঃসরণ) ভূপৃষ্ঠের বায়ুর তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে থাকে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে মেরু অঞ্চল ও পর্বত চূড়াগুলোর বরফ গলে ক্রমে সঙ্কুচিত হতে শুরু করে এবং গলিত পানি সমুদ্রে জমা হয়ে গড় সমুদ্রতল বেড়ে যেতে শুরু করে। একবিংশ শতাব্দীতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় সমুদ্রতটবর্তী দেশগুলো এবং সমুদ্রতলের উচ্চতার কাছাকাছি দ্বীপগুলো অচিরেই বর্ধিত সাগরতলের নিচে ডুবে যাওয়ার হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।

এক্ষেত্রে মূলত ইউরোপ আমেরিকা তথা শিল্পোন্নত অমুসলিম দেশগুলোকেই দায়ী করা হয়েছে। এক হিসেবে দেখা যায়, কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে, চীন দেশ হিসেবে সবার শীর্ষে বসে বিশ্বের মোট নিঃসরণের ২১.৫% একাই করছে। এরপর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ২০.২% এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৩.৮%।

জলবায়ু পরিবর্তন তথা বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলো বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার পরিবর্তে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ঋণ দিতে চেয়েছে। এ জন্য কোপেনহেগেন সম্মেলনে যে চুক্তি হলো তাতে ২০১০-১২ সাল নাগাদ ৩০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০ সাল নাগাদ ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থের যোগান দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সইয়ে নেয়ার (Adaptation) ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কিন্তু এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট নয় বলে দেশে-বিদেশের কথিত বোদ্ধামহলের অনেকেই তীব্র প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছেন।

উল্লেখ্য, বিশ্বের ১৯২টি দেশের সরকারি প্রতিনিধিরা যেমন কোপেনহেগেনের বেলা সেন্টারে জাতিসংঘের UNFCC সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন এবং কার্বন নির্গমনের মাত্রা কে কত কমাবে তাই নিয়ে দেন দরবার করছেন, অন্যদিকে Klimaforum-09- The People’s Climate Summit-G ৬৭টি দেশের প্রায় ৫৩৮টি সংগঠনের প্রায় ১০ হাজার বেসরকারি প্রতিনিধি একত্রিত হয়েছেন। তারা জলবায়ু সংক্রান্ত আলোচনায় ইনসাফের (Climate Justice) শ্লোগান দিয়েছেন।

বলাবাহুল্য, এক্ষেত্রে সব মুসলিম দেশগুলোর বক্তব্য ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হওয়ার কথা ছিল। কারণ শুধু কার্বন নিঃসরণ একমাত্র সমস্যা নয় পাশাপাশি গোটা পৃথিবীতে যে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশান্তি ইত্যাদি লেগেই আছে সে বিষয়গুলোর আসল কারণও যথাযথভাবে উচ্চারণের, আলোচনার জোর দাবি রাখে।

সুতরাং কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে যদি দায়ী দেশগুলো দোষ স্বীকার করে ও ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয় তবে আজকে পৃথিবীতে খাদ্যশস্য উৎপাদনের জটিলতা, সোয়াইন ফ্লুসহ হাজারো রোগের প্রকোপ, সামাজিক ভারসাম্যহীনতা, মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদি বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণের সমস্যার মত একইভাবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে তাদের কৃতকর্ম স্বীকার করতে হবে এবং কার্বন নিঃসরণের পথ থেকে সরে আসার মতই একইভাবে অপরাপর উল্লিখিত সমস্যা তৈরির পথ থেকেও দূরে যেতে হবে। আর মুসলমান দেশগুলোকে ইসলামের আলোকে এর জোর দাবি উচ্চকিতভাবে তুলতে হবে।

উল্লেখ্য, হাদীছ শরীফ-এর ভাষ্যানুযায়ী হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম যখন পুনঃআগমন করবেন এবং খিলাফত কায়িম করবেন তখন পৃথিবীতে অবর্ণনীয় বরকত হবে। অচিন্তনীয় সংক্ষিপ্ত সময়ে প্রচুর ফসল হবে। এক গাছেই প্রচুর ফল হবে। আর তা আকারে অনেক বড়, পরিমাণে অনেক বেশি, অধিকতর সুস্বাদু ইত্যাদি হবে। যেমনটি প্রথম যুগে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম-এর সময় ছিল।

অর্থাৎ কিনা প্রতিভাত হয় যে, অধিকতর কার্বন নিঃসরণ যেমন জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত করে তেমনি শিরক-কুফরী ও হারামের চর্চা পৃথিবীতে অবিরতভাবে খোদাতায়ালার লা’নত টেনে আনে। গযব নাযিল করে। আর সে লা’নতের কারণেই মুসলমান তাদের কাঙ্খিত বরকত পায় না। নাঊযুবিল্লাহ!

যেমনটি বর্ণনা করা হয়েছে বেপর্দা মেয়েলোকের কারণে লা’নত বর্ষিত হয়। মাপে কম দিলে দুর্ভিক্ষ আসে। যাকাত না দিলে অতি বৃষ্টি অনাবৃষ্টি হয়। বেপর্দা-বেহায়া বেড়ে গেলে দুরারোগ্য ব্যধি বেড়ে যায়। আর গোটা বিষয়টি কুরআন শরীফ-এর একটি আয়াত শরীফ-এই স্পষ্ট করা হয়েছে- “যমীনে এবং পানিতে যা কিছু আযাব-গযব সব মানুষের বদ আমলের কারণে।”

কাজেই, অমুসলিম দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ করে বিধায় যদি তাদের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার দাবি স্বীকৃত ও গৃহীত হয়,

তবে তারা যে কুফর-শিরক তথা গান-বাজনা বেপর্দা-বেহায়া, অশ্লীলতা দ্বারা গোটা পৃথিবীকে লা’নতের আকড় করে পৃথিবীবাসী তথা মুসলিম বিশ্বের অবর্ণনীয় ও অপূরণীয় ক্ষতি করে চলছে; সে ক্ষতিকেও জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে। সে ক্ষতিপূরণের দাবি উচ্চকিতভাবে তুলতে হবে। যমীন থেকে যাবতীয় কুফর-শিরক তথা সব পাপাচার বন্ধের জন্য শক্ত  ও সাহসী এবং দৃঢ় প্রতিবাদী পদক্ষেপ নিতে হবে। গোটা মুসলিম বিশ্বকে এই হক চেতনাবোধে উদ্বুদ্ধ হতে হবে।

উল্লেখ্য, এ ঈমানী জজবায় আপ্লুত করার জন্য আমাদের তথাকথিত ইসলামী রাজনীতিকদের কোন আওয়াজ নেই। বরং এ ব্যাপারে পুরোই নিষ্ক্রিয় ও নীরব থেকে তারা দিব্যি বোবা শয়তানের ভূমিকা পালন করছে। পক্ষান্তরে ছবি তোলা, লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী আইন, ইসলামের নামে নির্বাচন, শয়তান প্রসূত এসব হারাম কাজে ঠিকই তাদের কণ্ঠই বড়ই জোরদার।

সুতরাং উম্মাহর স্বার্থেই আজ আমাদের এসব ধর্মব্যবসায়ী তথা উলামায়ে ছূ’দের প্রতিহত করার উদ্যোগ নিতে হবে।

আর কেবলমাত্র হক্ব ওলী আল্লাহ তথা মুজাদ্দিদে আ’যম-এর ছোহবতের দ্বারাই তা সম্ভব। 

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়