সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৩৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমস্ত প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের একটি অসতর্ক অধ্যায় হলো কথিত সাম্যবাদীদের দ্বারা সাময়িক বিভ্রান্তি।

কবি তখন অকুণ্ঠচিত্তেই লিখেছেন- “গাহি সাম্যবাদের গান।” অভিযোগ রয়েছে, নজরুলের অভাব ও আত্মভোলা মানসিকতাকে পূজি করে তখন সাম্যবাদী তথা সমাজতন্ত্রীরা বেশ কিছু কবিতা লিখিয়ে নিয়েছিল। তার মধ্যে বহুল প্রচারিত দুটি লাইন হচ্ছে-

“বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে আমরা তখনও পিছে,

বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজছি হাদিস-কোরান চষে।” নাঊযুবিল্লাহ!

উল্লেখ্য, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী সমাজতন্ত্রী ও নব্য ইংরেজী শিক্ষিতরা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে তখন যে মানসিকতা পোষণ করেছিল তারই বহিঃপ্রকাশ হয়েছে লাইন দুটিতে। কিন্তু এর মাধ্যমে যে সম্মানিত ইসলামী মূল্যবোধের মর্মস্থলে কুঠারাঘাত করা হয়েছে তা আজো অনুদঘাটিত ও অনালোচিত রয়ে গেছে। সূক্ষ্মভাবে ফিকিরযোগ্য যে- মুসলমান স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি শরঈ বৈবাহিক সম্পর্ক না থাকে, তাহলে তাদের সন্তান বৈধ হবে না এবং স্বভাবতই তখন যে সন্তান হবে সে হবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিমুখ, উন্মাসিক এক সন্তান। যত হারাম কাজ এমনকি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী সমস্ত কাজের হোতা। নাঊযুবিল্লাহ!

বলাবাহুল্য, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ও সমাজতন্ত্রীরা এরূপটিই চেয়েছিল। আর তা তখনই সম্ভব ছিল যখন মুসলমানরা বিবাহ তালাকের শরঈ বিধান অনুধাবন থেকে অনুৎসাহী থাকতো, অজ্ঞ থাকতো। বিজ্ঞান সাধনার নামে, বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে যুক্ত থাকার নামে প্রগতির পথে পরিচালিত হওয়ার নামে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী ষড়যন্ত্রকারীরা তখনকার মুসলমানদেরই তেমনই গাফিল ও গুমরাহ করতে পেরেছিল। ফলত আজকের তথাকথিত শিক্ষিত, সংস্কৃতিবান, প্রগতিশীল নামধারী কিন্তু পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিমুখ মুসলমান জনগোষ্ঠীর গোড়াপত্তনটা বেশ মজবুতভাবে তারা বিস্তৃত করতে পেরেছিল। নাঊযুবিল্লাহ!

এ ধারাবাহিকতায় তারা ‘ওয়ায়েজদেরও প্রভাবিত করতে পেরেছিল। ওয়ায়েজদের আলোচনায় বেশিরভাগই থাকে নারী সংক্রান্ত বিষয় এবং হুর-গেলমানদের মোহাবিষ্ট আকর্ষণীয় বর্ণনা’- ইত্যকার সমালোচনায় তারা মুখর ছিল। বিশেষ করে স্বাধীনতা উত্তর হুর-গেলমানের চিত্তাকর্ষক ওয়ায়েজের বিরোধিতা দিন দিন তীব্র ও জোরালো হয়। এ ফাঁদে পা দিয়ে তখন থেকেই অদূরদর্শী ও অজ্ঞ ওয়ায়েজরা হুর-গেলমানের ও অকল্পনীয় বেহেশতী সুখের আলোচনা থেকে বিরত রয়। এবং এখন পর্যন্ত এ আলোচনা একেবারেই অবান্তর বলে অনুশীলিত হয়। নাঊযুবিল্লাহ! বিশেষ করে যে যত তথাকথিত স্মার্ট ও চৌকষ বক্তা মনে করে সে হুর-গেলমান, বেহেশতী সুখের আলোচনাকে তত বেশিভাবে পরিহার করে। নাঊযুবিল্লাহ!

আর এ সুযোগটি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী ষড়যন্ত্রকারীরা চরমভাবে লুফে নেয়। তারা বেহেশতী হুর-গেলমানের কল্পনার প্রতি কটূক্তি করে। বেহেশতী হুর-গেলমানের প্রতি লোভ করার প্রতি কঠোরভাবে নিন্দাবাদ প্রচার করে ও ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ায়। কিন্তু তার বিপরীতে তারা আজকের কথিত নায়িকা, গায়িকা, মডেল, রূপজীবী তথা দেহব্যবসায়ীদের আলোচনা ও বিবস্ত্র ছবির অবাধ বিস্তার ঘটায়। যত দিন যাচ্ছে এর পরিধি ও পরিম-ল তথা পরিচর্যা ততই বাড়ছে। নাঊযুবিল্লাহ! কিছুদিন পূর্বেও এসব নায়িকা, গায়িকাদের যেসব ছবি অশ্লীল গণ্য করে আলাদা সিনে পত্রিকায় পত্রস্থ হতো; এখন তার চেয়ে অনেক বেশি অশ্লীল ছবি তথাকথিত প্রতিটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায়ই অত্যন্ত অন্যায় ও গর্হিতরূপে প্রকাশিত হয়। নাঊযুবিল্লাহ!

শুধু তাই নয়, মুসলমান নতুন প্রজন্ম থেকে শিশুরাও আজ হুর-গেলমানকে অচ্ছুৎভাবে বিবেচনা করছে। পক্ষান্তরে তারা গো-গ্রাসে গিলছে- “একান্তবাস আবেদনময়ী”, “আইটেম গার্ল”, “সেলিব্রেটি”, “বলিউড তারকা”, “ঢালিউড তারকা”, “রূপালী পর্দায় শরীর দেখিয়ে ঝড় তোলা”, “ড্রিম গার্ল”, “আইকন”, “আইডল”, “মডেল”, “র‌্যাম্প মডেল”, “সুপার স্টার” ইত্যাদি সব জঘন্য শব্দ।

উল্লেখ্য, নতুন প্রজন্ম থেকে আমলহীন প্রবীণরাও এখন এসব শব্দ আয়েশ করে আওড়ায়। তাড়িয়ে তাড়িয়ে এদের বিবস্ত্র ছবি দেখে। মনস্তাত্ত্বিকভাবে এদের ভোগ করে। দেহরেখা পাঠ করে। নাঊযুবিল্লাহ! পত্রিকাগুলো এদের রগরগে বর্ণনা দেয়। বিবসনা অঙ্গিভঙ্গীকে হিট পারফর্মেন্স বলে উল্লেখ করে। নাঊযুবিল্লাহ! অর্থাৎ এসব অশ্লীল, চরিত্রহীন, বিবস্ত্রপনা শব্দ আউরাতে, লিখতে, ছবি ছাপতে তাদের প্রতি মনোযোগ তৈরিতে এবং দিতে তাদের কোনো কুণ্ঠা নেই। নাঊযুবিল্লাহ! কিন্তু তাদের যত শ্লেষ আর ঘৃণা এবং সংকুচিত মনোভাব বেহেশতী সুখ, হুর-গেলমান ইত্যাদি নিয়ামত অনুধাবনে। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ হুর-গেলমানের আলোচনা ও আকর্ষণ সাধারণ মুসলমানের নফসকে নিবৃত্ত রাখতে পারতো সব নারীদেহ অবলোকনে। বিরত রাখতে পারতো সিনেমা, টিভি ইত্যাদি সব হারাম থেকে। অনুপ্রাণিত করতো চোখ ও চরিত্র সুরক্ষায়। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ না করায়। এবং মুত্তাকী মুসলমান হওয়ায়। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি হুরদের সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন, তথায় থাকবে হুর তথা আনতনয়ন নারীগণ, কোনো জিন ও মানুষ পূর্বে যাদের স্পর্শ করেনি। প্রবাল ও ইয়াকুত সদৃশ নারীগণ। সেখানে থাকবে সচ্চরিত্রা সুন্দরী নারীগণ। কোনো জিন ও মানুষ পূর্বে তাদেরকে স্পর্শ করেনি। তারা সবুজ মসনদে এবং উৎকৃষ্ট মূল্যবান বিছানায় হেলান দিয়ে বসবে। (পবিত্র সূরা আর রহমান শরীফ)

তথায় থাকবে আনতনয়না হুরগণ। এ সমস্ত আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়, তারা নিজেদের কৃতকর্মের বিনিময়ে প্রাপ্ত হবে। আমি হুরদেরকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী মনোহারিণী, সমবয়স্কা। (পবিত্র সূরা ওয়াকিয়া শরীফ)

এছাড়াও সম্মানিতা হুরদের সম্পর্কে পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ, পবিত্র সূরা আন নিসা শরীফ, পবিত্র সূরা আদ দুখান শরীফ, পবিত্র সূরা তুর শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের সহজাত একান্তবাস প্রবণতাকে বিকৃতভাবে ও প্রবলভাবে প্ররোচিত করছে অনৈসলামী অর্থনীতি ও বিশ্ব পরিস্থিতি। এতে হারিয়ে যাচ্ছে সম্মানিত ইসলামী অনুভূতি। সুতরাং সাধারণ মুসলমানদের আমল রক্ষার্থে বেহেশতের সুখ ও হুরী নিয়ামত রোমান্থন হতে পারে এক নির্মল সহায়ক শক্তি। সঙ্গতকারণেই এক্ষেত্রে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষীদের বিরূপ মন্তব্যকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে হবে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উৎসাহব্যাঞ্জক বেহেশতী সুখ তথা হুর-গেলমানের নিয়ামত বর্ণনা, ওয়াজে, লেখনীতে, বিজ্ঞাপনে, বিলবোর্ডে আসতে হবে। মুসলমান মানসে ছড়িয়ে দিতে হবে।

মূলতঃ এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়