সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৩৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমস্ত প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে ওয়ারিসস্বত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাবার সম্পত্তিতে সন্তানের ওয়ারিসস্বত্ব রয়েছে। বাবা সম্পদ বেশি রেখে গেলে এবং সন্তান সে সম্পদের সদ্ব্যবহার করলে সহজেই সমৃদ্ধশালী হয় এবং সুখী জীবন লাভ করতে সমর্থ হয়। পক্ষান্তরে সন্তান যদি বাবার সম্পদের সদ্ব্যবহার না করে, তাহলে সে অনিবার্যভাবে দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এক সময় নিঃশেষ হয়ে যায়।

অপরদিকে সমাজে এমনও লোক আছে, যারা তন্ন তন্ন করে ওয়ারিস হিসেবে বাবার রেখে যাওয়া সম্পদের চূড়ান্ত সন্ধান চালায় এবং উহার সংরক্ষণ ও বিস্তারের জন্য কোশেশ করে। ফলত এরা লাভবান হয় এবং সমৃদ্ধশালী ও উন্নত জীবনযাপনে সমর্থ হয়।

পক্ষান্তরে সমাজে এমনও লোক রয়েছে, যারা ওয়ারিস হিসেবে পিতার রেখে যাওয়া সম্পদের খবর জানে না; এমনকি জানার জন্য কোনো খোঁজও চালায় না। এমনকি খোঁজ নিয়ে ওয়ারিস সম্পত্তির খবর জেনে তার সদ্বব্যবহার করে সে যে চলমান অভাব-অনটন, সমস্যা-সঙ্কট থেকে মুক্তি লাভ করে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ জীবনযাপনে সমর্থ হতে পারে- এ বিষয়েও কোনো আগ্রহ দেখায় না। এরূপ ব্যক্তিদের সম্পর্কেই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তাফসীর তথা দ্বীন ওই ব্যক্তি বেশি বুঝে, যে দুনিয়া বেশি বোঝে। এক্ষেত্রে বলার অবকাশ রয়েছে যে, আজ বাংলাদেশের সম্পদ যেভাবে ভারত লুটেপুটে নিচ্ছে, উগ্র হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার আসার পর মাত্র দু’মাসে ভারত যেভাবে ৬০০ দাঙ্গায় অসংখ্য মুসলমানকে শহীদ করেছে, যালিম হায়েনা বার্মীজ সরকার নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে নির্বিচারে শহীদ করছে, কাশ্মীরে যুগ যুগ ধরে মুসলমানদেরকে শহীদ করছে ভারতীয় হায়েনারা, হানাদার ইসরাইল অর্ধ শতাব্দী ধরে ফিলিস্তিনে নির্মম ও পাশবিক হত্যাকা- চালিয়ে যাচ্ছে, হানাদার আমেরিকানরা হযরত বড়পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইরাক দখল করে লুটপাট করছে, কুচক্রী খ্রিস্টানরা সুদানকে খ-িত করে দিয়েছে; মিশর, লিবিয়া ও সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়েছে; সউদী আরব, দুবাই, কাতার তথা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে কব্জা করে শুষে শুষে খাচ্ছে। কিন্তু মুসলমানদের তো এমন অবস্থা হওয়ার কথা ছিল না। আজ মুসলমানরা যে দুর্বল অবস্থায় আছে- এ অবস্থায় তো থাকার কথা ছিল না। মুসলমান তো উত্তরাধিকার সূত্রে চরম-পরম ক্ষমতা ও সম্পদের অধিকারী। এ নিয়ামত মুসলমানদের জন্য রেখে গেছেন স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “আমি তোমাদের জন্য দুটি নিয়ামত মুবারক রেখে যাচ্ছি। প্রথম নিয়ামত মুবারক হলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কিতাব। উনার মধ্যে রয়েছে হিদায়েত ও নূর মুবারক। তোমরা পবিত্র কিতাবুল্লাহ উনাকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধরো। তিনি কিতাবুল্লাহ উনার প্রতি উৎসাহ প্রদান করলেন। অতঃপর বললেন, দ্বিতীয় নিয়ামত মুবারক হলেন, আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ বা (আওলাদ আলাইহিমুস সালাম) বংশধরগণ। আমি তোমাদেরকে আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ হতে বিশেষ নছীহত মুবারক করছি।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন- “আমি তোমাদের নিকট দুটি নিয়ামত মুবারক রেখে যাচ্ছি। যদি তোমরা উক্ত নিয়ামত নিয়ামত মুবারকদ্বয়কে আঁকড়িয়ে ধরো, তবে পথভ্রষ্ট হবে না। প্রথমতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কিতাব; দ্বিতীয়তঃ আমার বংশধর বা আওলাদ আলাইহিমুস সালামগণ উনারা।”

তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন- “নিশ্চয়ই আমার হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের উদাহরণ হলো হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম উনার কিস্তির ন্যায়। যে তাতে প্রবেশ করেছে বা আরোহণ করেছে, সে-ই নাজাত পেয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (সিররুশ শাহাদাতাইন) অর্থাৎ হযরত আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে যারা মুহব্বত করবে তারা সকলেই নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন- “নিশ্চয়ই আমার হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনারা বনী ইসরাইলের হিত্তাতুন-এর ন্যায়। যারা তা বলেছে তারা নাজাত লাভ করেছে।” সুবহানাল্লাহ! (সিররুশ্ শাহাদাতাইন)

অর্থাৎ হযরত আওলাদে রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে যারা মুহব্বত করবে, তারা সকলেই নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন- “তারকাসমূহ আসমানবাসীদের জন্য নিরাপত্তা দানকারী আর আমার বংশধর বা আওলাদ আলাইহিমুস সালামগণ উনারা হচ্ছেন যমীনবাসীদের জন্য নিরাপত্তা দানকারী। সুতরাং যখন আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ বা হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালামগণ উনারা (দুনিয়া থেকে) চলে যাবেন অর্থাৎ বিদায় গ্রহণ করবেন, তখন দুনিয়াবাসী সকলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। অর্থাৎ তখন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, হাশিয়ায়ে মিশকাত শরীফ)

কাজেই বিশ্ববাসীর জন্য নিরাপত্তা দানকারী, নাজাত দানকারী, ধ্বংস থেকে রক্ষাকারী, পবিত্র ঈমান ও আমল হিফাযতকারী হযরত আওলাদে রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদেরকে মুহব্বত করলে মহান আল্লাহ পাক উনার ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক পাওয়া যাবে। এ মর্মে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে খাওয়া পরার যে নিয়ামত মুবারক দিয়েছেন, সেজন্য মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো। আর আমাকে মুহব্বত করো মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করার জন্য। আর আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার সন্তুষ্টি মুবারক লাভের জন্য।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

বলাবাহুল্য, সমগ্র পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দ্বারা এটাই সুস্পষ্ট প্রতিভাত ও প্রমাণিত হয় যে, মুসলমানদের নাজাতের, সমৃদ্ধির, শক্তির, সুখ-শান্তির জন্য রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওয়ারিসস্বত্ব হিসেবে আওলাদে রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাদিয়া মুবারক করেছেন। তথা ওয়ারিসস্বত্ব হিসেবে রেখে গেছেন। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু আজকের মুসলমানরা তাদের সে ওয়ারিসস্বত্বের মূল্য বুঝছে না এবং মূল্যায়ন করছে না। ফলত চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মূলত, যা হওয়ার কোনো কথাই ছিল না।

মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়