সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৩২তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

সরকারী হিসাবে দেশের মুসলমানের সংখ্যা নব্বইভাগ বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে মুসলমানের সংখ্যা কমপক্ষে ৯৭ ভাগ। অর্থাৎ ষোলো কোটি জনসংখ্যার দেশে প্রায় সাড়ে পনের কোটি লোক মুসলমান।

তারা ঈদ পালন করেন। মুসলমান নাম ধারণ করেন। মুসলমান হিসেবে বাঁচেন। কিš‘ মুসলমানের অনুভূতি তাদের মধ্যে নেই। মুসলমানের দায়বোধ বা কর্তব্যবোধ নেই। মুসলমানের মর্যাদাবোধ নেই। মুসলমানের সংজ্ঞা জানা নেই।

মুসলমান হিসেবে সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার সীমারেখা জানা নেই। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার পালনের আবশ্যকতাবোধ নেই। হালাল হারামের ইলম নেই। প্রতিটি কাজে নেকী-বদীর অনুভব নেই। জাহান্নামের ভয় নেই। জান্নাত উনার আকাঙ্খা নেই।

আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কিত বিন্দুমাত্র ইলম নেই। উনাদের নিছবত-তায়াল্লুক নেই। তায়াল্লুক অর্জনের ইলম ও অনুভূতি কোনোটাই নেই। বর্তমান যামানায় আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ তথা সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম ও উনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কেও সম্যক উপলব্ধি নেই। অথচ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে যামানার ইমাম উনাকে চিনলনা সে যেনো জাহিলিয়াতের মধ্যে মারা গেল।” নাঊযুবিল্লাহ!

মূলত, মুসলমানদের মৃত্যু পরবর্তী জীবনই যে আসল জীবন সে চেতনা আজ কিছুই নেই। মুসলমান মিথ্যা বলতে পারে না। মুসলমান হারাম খেতে পারে না। মুসলমান দুর্নীতি করতে পারে না। মুসলমান মুনাফাখোরী হতে পারে না। সিন্ডিকেট করতে পারে না। মুসলমান শ্রমিককে ঠকাতে পারে না। গার্মেন্টসের শ্রমিকদের ফাকি দিতে পারে না। মুসলমান আমানত খেয়ানতকারী হতে পারে না। মুসলমান হিসেবে এসব দায়বোধ আজ শূন্যের কোঠায়।

বিপরীত দিকে মুসলমান মাত্রই সত্যবাদী। মুসলমান ইহসানকারী। মুসলমান ভ্রাতৃত্ববন্ধনে বিশ্বাসী। মুসলমান পরোপকারে নিবেদিত। মুসলমান ইয়াতীম, শিশু, নারীর কল্যাণে উজ্জীবিত। এসব ইসলামী মূল্যবোধ আজ মুসলমানের অন্তর থেকে তিরোহিত। নাঊযুবিল্লাহ!

অবাক বিষয় হচ্ছে, তারপরেও আমরা মুসলমান হিসেবে নিজেদের মনে করছি। পরিচয় দি”িছ। কিš‘ এটা কতটুকু সঙ্গত? এ উপলব্ধি ও চেতনা আমাদের থাকা দরকার। ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতি আমাদের ঘৃণা আছে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নাম দিয়ে যারা রাজনৈতিক ফায়দা হাছিল করতে চায়; তাদের প্রতি আমাদের ধিক্কার আছে। কিš‘ মুসলমান নাম ধারণ করে যদি সম্মানিত ইসলামী অনুভব ও আমল না থাকে তাহলেও কী তা ধিক্কারের বিষয় নয়? মুসলমান পরিচয় অত সস্তা নয়। হাক্বীক্বী মুসলমান অর্থ মু’মিন হওয়া। এজন্য পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমরা বল যে তোমরা আত্মসমর্পণ করেছ কিš‘ তোমরা মু’মিন হওনি।” (পবিত্র সূরা হুজুরাত শরীফ)

এ জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ তোমরা ঈমান আনো।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ)

অন্যত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ তোমরা পরিপূর্ণভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে প্রবেশ করো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ)

পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করার অর্থ সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত পরিপূর্ণভাবে পালন করা। হারাম গান-বাজনা, ছবি, খেলাধুলা, বেপর্দা-বেহায়া ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা। পক্ষান্তরে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র হাত মুবারক উনার মধ্যে বাইয়াত হওয়া, সুন্নতী পোশাক পরা, যিকির-আযকার করা, তায়াল্লুক নিছবত হাছিল করা। এটাই হচ্ছে মুসলমানের পরিচয়।

কিš‘ মুসলমান আজ মুসলমানের পরিচয় ভুলে যাচ্ছে। বাস্তবে হাইব্রিড শস্যাদিকে যেমন মানুষ আসল শস্য বলছে না। হাইব্রিড শস্য ফলেও প্রচুর আর আকারেও বড় কিš‘ স্বাদে মাকাল। ঠিক আজ মুসলমান ঘরে ঘরে। মুসলমান চারদিকে। কিš‘ আসল মুসলমান কয়জন?

প্রসঙ্গত, ভুয়া ডাক্তার, ভুয়া শিক্ষক, ভুয়া সাংবাদিক, ভুয়া র‌্যাব, ভুয়া পুলিশ আমাদের সমাজে চিহ্নিত হয়। পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয় এবং আইনে তাদের শাস্তিও হয়। কারণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তারা যোগ্যতাধারী না হয়েও তারা সে পরিচয় জ্ঞাপনকারী। যদি তাই হয় তা হলে হক্কানী মুসলমান না হয়েও নিজেকে মুসলমান ভাবা বা সমাজে মুসলমান পরিচয় দেয়া কী অপরাধের বিষয় নয়?

মুসলমান ওই ব্যক্তি যে সম্পূর্ণভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক মতে মত এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক পথে পথ।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক ও উনার প্রিয় রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ফায়ছালা অন্তরের অন্তঃ¯’ল থেকে পরিপূর্ণরূপে এবং সš‘ষ্ট চিত্তে মেনে না নিবে।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ)

যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আধুনিকতার নামে, প্রগতির নামে ৯৭ ভাগ মুসলমান উনাদের দেশে হারাম গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, ব্রিটিশ ফৌজধারী ও দেওয়ানী দ-বিধি, সুদী অর্থ ব্যবস্থা, ধর্মবিহীন শিক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি কিছুই চলতে পারেনা। কারণ মুসলমান তা গ্রহণ করতে পারেনা। বরদাশত করতে পারেনা। মুসলমান হিসেবে এখানে আমাদের প্রতিবাদকারী ও প্রতিহতকারী হতে হয়। কিন্তু আজ সারাদেশ হারামে সয়লাব হলেও মুসলমানের মধ্যে কোন বিকার নেই। কোনো প্রতিবাদী চেতনা নেই। প্রতিহতের জজবা নেই। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনবে। (পবিত্র সুরা আলে ইমরান শরীফ)

প্রতিভাত হচ্ছে, সৎকাজের নির্দেশ দেয়া ও অন্যায় কাজে বাধা দেয়া ঈমানদার তথা মুসলমান হওয়ার শর্ত। কাজেই আজ মুসলমান কতটুকু মুসলমান আছে সেটা জ্বলন্ত প্রশ্ন? মনে রাখতে হবে মুসলমান অতি উচ্চঙ্গের শব্দ। অতি মর্যাদাপূর্ণ শব্দ। মুসলমান সব সদ গুণাবলীর শব্দ। সব অন্যায় পরিত্যাগের শব্দ। পরিপূর্ণভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে প্রবেশের শব্দ।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করার মতো ভয় করো এবং তোমরা পরিপূর্ণ মুসলমান না হয়ে ইন্তিকাল করোনা।” (পবিত্র সুরা আলে ইমরান শরীফ) কাজেই, ইন্তিকালের পূর্বেই মুসলমানের হিসেব করা উচিত উনি প্রকৃত মুসলমান হয়েছেন কিনা?

মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়