সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৯২তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমস্ত প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

পবিত্র ইসলাম শান্তির দ্বীন। তারপরেও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উপরই শুধু আঘাত আর আঘাত। সংবিধানে বিধিবদ্ধ রাষ্ট্রদ্বীন পবিত্র ইসলাম। তা সত্ত্বেও পবিত্র ইসলাম উনার উপরই রাষ্ট্রের অযাচিত বিধিনিষেধ। এমনকি ভয়ানক বৈষম্যও। অথচ এজন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। ইনশাআল্লাহ ইনসাফের জজবায় তেজোদ্বীপ্ত হয়েই আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম।

অথচ সেই স্বাধীনতার সুফল থেকে আজ ৯৮ ভাগ মুসলমান বঞ্চিত। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সেভেন্থ ডে এডভেন্টিষ্ট নামে একটি সম্প্রদায় আছে। তাদের ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী সাবত বা শনিবার পড়াশোনা, লেখালেখি করা নিষেধ। সরকার যে তাদের এ ধর্মীয় বিধির প্রতি সম্মান দেখিয়েছে শুধু তাই নয় সরকার খ্রিষ্টান ধর্মের এ বিধানের প্রতি সম্মানবোধ আরো সম্প্রসারিতও করেছে। আগে তাদেরকে বোর্ডে নিয়ে পরীক্ষা দিতে হতো। কিন্তু এখন সরকার প্রতি জেলায় জেলায় খ্রিষ্টানদের এ সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা করেছে। তাদের আলাদা থাকা-খাওয়ার আয়োজন করে সাবত বা শনিবার দিবাগত রাতে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।

বিগত বৎসরে ২০২২ সালে ১লা ফেব্রুয়ারী কুষ্টিয়ায় এ ধরনের পরীক্ষা হয়েছিল। এক্ষেত্রে কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র প্রশ্ন তুলেনি শুধুমাত্র ১ জন খ্রিষ্টান ছাত্রের জন্য ১৩ জন শিক্ষক- কর্মচারী আলাদা কষ্ট করবেন কেন? শুধুমাত্র ১ জন খ্রিষ্টান শিক্ষার্থীর জন্য এত আলাদা সময়, অর্থ ব্যায় করা হবে কেন? শুধু মাত্র ১ জন খ্রিষ্টান ছাত্রের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেয়া হবে কেনো? আলাদা প্রক্রিয়া চালানো হবে কেনো? কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র তা করেছে। এতে করে যা প্রতিভাত হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র ঐ খ্রিষ্টান শিক্ষার্থীর ধর্মবিশ্বাস তা যৌক্তিক অথবা অযৌক্তিক তা আমলে নেয়নি। তার দ্বীনি বিশ্বাস পালনের পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। রাষ্ট্রযন্ত্র তার জন্য বেশি লোকবল নিয়োগে, বেশি অর্থ ব্যয়ে, বেশি সময় দিয়ে, বেশি ব্যবস্থা গ্রহণে কোন কার্পন্য করেনি। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাস অনুভবে ব্যক্তিকে উপহাস করেনি।

খ্রিষ্টান দ্বীনি বিশ্বাস প্রতিফলনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করতে কার্পন্য করেনি। অথচ এরা মোট জনসংখ্যার .০০০১%ও নয়।

গত ২০২২ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর নরসিংদীতে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে হিন্দু ধর্মাবলম্বী পরীক্ষার্থীদের শাঁখা-সিঁদুর পরে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ২ শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ। তার বিপরীতে দেশের জনসংখ্যার ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানদের ক্ষেত্রে আমরা কি দেখি?

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ কতৃর্ক পরীক্ষা চলাকালীন কানসহ মুখমন্ডল খোলা রাখার প্রজ্ঞাপনের প্রতিবাদে ঢাবির শিক্ষার্থীরা রিট করেন। বোরকা বা হিজাব পরা সাংবিধানিক অধিকার বলে মন্তব্য করে  হাইকোর্ট।

কিন্তু গত ২৯ মে হাইকোর্টের ঐ আদেশ স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ।

তবে আপিল বিভাগ পাশাপাশি আরো বলেন, হাইকোর্টে আগামী ২ মাসের মধ্যে ইতোপূর্বে করা রুলটির নিস্পত্তি করতে হবে।

উল্লেখ্য বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনায় অ্যামিক্যাস কিউরি বা আদালতের বন্ধু বলে একটা বিশেষ অভিধা আছে।

বলা হয়েছে, আদালত যদি কোন বিষয় না বোঝে অথবা আরো বোঝার বা জানার থাকলে, বিব্রত হলে কিংবা প্রয়োজন মনে করলে যে কোন বিষয়ের বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে পারে। এই বিশেষজ্ঞদের তখন আদালতের বন্ধু বলা হয়। এখন প্রশ্ন আসতে পারে এই বিশেষজ্ঞ কারা? কারা “অ্যামিকাস কিউরি” হতে পারেন? আসলে এর কোন সুনির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা নেই তবে, যারা যেই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বীকৃত, তাদের সেই বিষয়ে জানতে আদালত ডাকতে পারে। যেমন দাঁতের সমস্যা নিয়ে কোন বিষয়ে বুঝতে আদালতের (জজ সাহেবের) সমস্যা হল, তখন তিনি একজন প্রখ্যাত দাঁতের ডাক্তারকে ডাকতে পারে তাকে এ বিষয়টি বোঝানোর জন্য।

এক্ষেত্রে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিষয়ে সম্মানিত শরিয়ত উনার হুকুম বা হক্কানী রব্বানী আলিমগণ উনাদের অভিমত নেয়া যতটা বেশী প্রাসঙ্গিক ততধিক প্রয়োজনীয় ও অনিবার্য।

প্রসঙ্গত আমরা মনে করি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আইন বা হুকুম কী তা নির্ণয়ে বিচারকরা যদি বিরত থাকেন তবেই তা শোভনীয় ও সঠিক হয়। কারণ বিচারকের কাজ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মাসয়ালা দেয়া নয়। বিচারকের দায়িত্ব সংবিধান অনুযায়ী সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অধিকার সাব্যস্ত করা। প্রসঙ্গত আমরা মনে করি পর্দা বিষয়ে রুল নিস্পত্তিতে হাইকোর্ট উপরোক্ত বিষয়গুলো আমলে নিবেন। এবং সাংবিধানিক ভাবে রাষ্ট্রদ্বীন সম্মানিত ইসলাম স্বীকৃত এই দেশে তথা ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানদের এই দেশে মুসলিম ধর্মপ্রান শিক্ষার্থীদের হাত, মুখ, কানের পর্দা করার অধিকার দিতে সম্যক সম্মত হবেন।

ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শির্দ ক্বিবলা মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা অনুধাবন করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়