সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৯৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

খ¦লিক্ব মালিক রাব্বুল আলামীন মহান আল্লাহ পাক তিনি কি কোনো আমল করেন? করলে কতক্ষণ করেন? কখন থেকে শুরু করেছেন? কতদিন পর্যন্ত করবেন? এখনি বা কী করছেন? এসব মহান প্রশ্নের সুমহান তাজদীদী ইলম বিতরণ করেছেন যামানার সুমহান ইমাম ও মুজতাহিদ, ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শির্দ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!

তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সৃষ্টির শুরু হতে খলিক্ব মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত মুবারক পড়ছেন। এখনো পড়ছেন এবং অনাদিকাল থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত পড়তেই থাকবেন। এ বিষয়টিই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ পাঠ করবেন অর্থাৎ দুরূদ শরীফ পাঠ করেন অর্থাৎ পবিত্র ও সম্মানিত ছানা ছিফত মুবারক করেন। হে মু’মিনগণ! তোমরাও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ তথা দুরূদ শরীফ পাঠ করো এবং সালাম শরীফ প্রেরণ করো প্রেরণ করার মতো।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক উনার সুন্নত অবলম্বনে যমীনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি- প্রতিদিন, প্রতি মাস, প্রতি বছর, প্রতি যুগ, প্রতি শতাব্দী, প্রতি সহস্রব্দী থেকে ক্বিয়ামতকাল এবং ক্বিয়ামতকাল থেকে অনন্তকাল তথা প্রতিক্ষণ, অনুক্ষণ সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল জারি করেছেন রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শির্দ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি। মহিমান্বিত “সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ” নামে যা আজ সমধিক পরিচিত। সুবহানাল্লাহ!

চন্দ্র মাসের ধারাবাহিকতায় প্রতি সম্মানিত ঈদ উনার ক্ষেত্রেই বলতে হয়- বছর ঘুরে আবারো এলো মহাসম্মানিত ঈদ। কিন্তু পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার ক্ষেত্রে এ কথামালা প্রযোজ্য নয়। কারণ সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ এমন মহাসম্মানিত ঈদ- যার কেবল শুরুই আছে। যার কোনো শেষ নেই। যার কোনো বিরতি নেই। যা অনন্তকালের জন্য। আর পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম এ অনন্তকালের পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার তাজদীদ মুবারক করেছেন,  ধারণ করেছেন, বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছেন, কুল-কায়িনাতবাসীকে বিতরণ করেছেন সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!

বলার অপেক্ষা রাখে না, মহান সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ তাজদীদ মুবারক অনিবার্য কারণে সর্বক্ষণ আলোচনা, পর্যালোচনা এবং সর্বস্তরে প্রতিফলন তথা বাস্তবায়নের চূড়ান্ত দাবি রাখে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, জনগণ এবং সরকার উভয়েই মহান সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনে যুগপৎভাবে দুঃখজনক ও লজ্জাজনকভাবে ব্যর্থ। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!

উল্লেখ্য, এদেশের সরকার, রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম স্বীকৃত বা বর্ণিত সংবিধানের [২(ক) অনুচ্ছেদ] অধীন। আর সংবিধান মতে সংবিধানের ক্ষমতা সংসদ তথা নির্বাহী বিভাগ বা মন্ত্রিপরিষদের চেয়েও বেশি।

কিন্তু মন্ত্রিপরিষদ তথা সরকার, সংবিধানে বর্ণিত ২(ক) অনুচ্ছেদের কার্যকর প্রতিফলন আদৌ ঘটায় না। এক্ষেত্রে সম্পৃক্ত প্রশ্ন হচ্ছে-

পবিত্র দ্বীন ইসলাম অর্থ কী?

পবিত্র দ্বীন ইসলাম কিভাবে ব্যক্ত হয়?

পবিত্র দ্বীন ইসলাম কীভাবে পালিত হয়?

সবারই জানা রয়েছে-

পবিত্র দ্বীন ইসলাম হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনাকে এক ও অদ্বিতীয় মানা এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল হিসেবে মানা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মানার অর্থ হচ্ছে, পরিপূর্ণভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ মানা। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!

আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন, তা তোমরা আঁকড়িয়ে ধরো এবং তিনি তোমাদেরকে যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তা থেকে তোমরা বিরত থাকো। আর তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (সম্মানিত সূরা হাশর শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ৭)

কিন্তু সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে রাষ্ট্রদ্বীন স্বীকারের পরও রাষ্ট্রযন্ত্র তথা সরকার কী এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার হুকুম তামীল করছে?

বলার অপেক্ষা রাখে না, এর জবাব হলো ‘একেবারেই না’।

তাহলে কি সংবিধান মানা হচ্ছে?

বলাবাহুল্য, এর জবাবও ‘না’?

প্রসঙ্গত, সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে-

“জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোনো আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।”

এখন সঙ্গত প্রশ্ন হচ্ছে, খোদ সংবিধানের আইন যদি সংবিধানের অন্য আইনের সাথে অসামঞ্জস্য হয় তাহলে কি হবে?

বলাবাহুল্য, সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদের সাথে সংবিধানের অন্য অধিকাংশ বিধান অসামঞ্জস্য। কারণ ২(ক) অনুচ্ছেদে বর্ণিত পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সাথে সংবিধানের অন্য অধিকাংশ অনুচ্ছেদ শুধু অসামঞ্জস্যই নয়; বরং সম্পূর্ণ বিরোধ ও সংঘাতপূর্ণ।

প্রসঙ্গত, সংবিধানকে সমুন্নত রাখার শপথেই সাংসদ, নির্বাহী বিভাগ বা সরকার তথা বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টগণ শপথ গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে সমুন্নত রাখাই প্রধান কর্তব্য। নচেৎ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে তা শপথ ভাঙ্গার পর্যায়ে পড়ে। এবং শপথ ভাঙ্গলে সংবিধানিকভাবেও সংশ্লিষ্টরা নীতিগতভাবে ক্ষমতায় থাকার অধিকার হারায়। সঙ্গতকারণেই এ বিষয়টি গভীরভাবে মূল্যায়নের দাবি রাখে। অর্থাৎ ক্ষমতায় থাকতে হলে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে পরিপূর্ণ অনুসরণ অনুকরণ করা অনিবার্য হয়ে পড়ে।

প্রতিভাত হয় যে, সংবিধানে বর্ণিত ধর্মনিরপেক্ষতা আর পবিত্র দ্বীন ইসলাম সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। আর বাস্তবে রাষ্ট্রযন্ত্রে ধর্মনিরপেক্ষতাই সর্বোতভাবে কার্যকর। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রাবল্যে ও প্রাধান্যে সাধারণ মুসলমান নিজেদের খুব অসহায় ও দুর্বল মনে করে এবং হীনম্মন্যতায় ভোগে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে হারাম কাজকে রাষ্ট্রীয় পরিমন্ডলে হারাম দেখতে ব্যর্থ হয়ে তারা ভারাক্রান্ত হয়। মুসলমান হিসেবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের আবেগ, উচ্ছ্বাস, অনুভূতি বাধাগ্রস্ত বেদনাহত ও বিপর্যস্ত হয়। মুসলমান হিসেবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের অধিকার তখন দলিত, মথিত এবং সম্পূর্ণ মিথ্যা ও চরম প্রতারণা ও জালিয়াতি হিসেবে সাব্যস্ত হয়।

ধর্মনিরপেক্ষতার প্রভাবের কারণে মুসলমান শত শত পবিত্র আয়াত শরীফ এবং হাজার হাজার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আমল করতে পারে না। মুসলমান নিজেদের ঈমানদার মুসলমান বলে ভাবতে পারে না। তাই মুসলমানকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের অধিকার দিতে হলে, সংবিধানে কথিত ধর্মনিরপেক্ষতা থাকতে পারে না। মুসলমানকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের সুযোগ দিতে হলে, সংবিধানে সর্বত্রই পবিত্র দ্বীন ইসলাম প্রতিফলিত করতে হবে। পাশাপাশি ঈমানের হক্ব আদায় করতে হলে, প্রত্যেক মুসলমানকেই এসব কথা বুলন্দ আওয়াজে উচ্চারণ করতে হবে।

মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ অনন্তকালব্যাপী পালন করার ইলম ও জজবা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত মুবারক তথা মুবারক ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ।

ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শির্দ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়