সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৯৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

পবিত্র ভূমি ফিলিস্তীনের স্বাধীনতাকামী মুজাহিদ হামাসের বিশ্লেষকরা বলেছেন, গত ৭ অক্টোবর দখলদার, সন্ত্রাসী ইসরাইলের ভেতরে যে সফল অভিযান চালিয়েছে তার মধ্যদিয়েই ইসরাইলের পতন ঘটেছে, এখন তারা বেঁচে আছে আমেরিকার লাইফ সাপোর্টে।

গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের বিষয়ে সন্ত্রাসী, হানাদার ইসরাইলের প্রতি আমেরিকার পাশাপাশি ইউরোপ অকুন্ঠ সমর্থন এবং সব ধরণের সহযোগিতা দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

গভীর দু:খ ও আফসোসের সাথে বলতে হয় এর বিপরীতে মুসলিম বিশ্বে আমরা কি দেখলাম? অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যখন সন্ত্রাসী, হানাদার ইসরাইল নিরীহ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ গণহত্যা চালাচ্ছে তখন ৫৭টি মুসলিম দেশের শীর্ষ নেতারা রিয়াদ সম্মেলনে (১২ নভেম্বর, ২০২৩) ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে একমত হতে পারেননি।

সম্মেলনে ইরানের পক্ষ থেকে দখলদার সন্ত্রাসী হানাদার ইসরাইলি বাহিনীকে ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ ঘোষণা করার এবং সিরিয়ার পক্ষ থেকে দখলদার কাপুরুষ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এই দু’টি প্রস্তাবের কোনোটিই সম্মেলনে গৃহিত হয়নি।

আরব কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, আরব লীগের দুই সদস্যদেশ লেবানন ও আলজেরিয়া সন্ত্রাসী, হানাদার ইসরাইলকে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব দেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সন্ত্রাসী, হানাদার ইসরাইলে তেল ও খাদ্যসহ সব পণ্য সরবরাহ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু রিয়াদ সম্মেলনে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের বিরোধিতার কারণে এই প্রস্তাব গৃহিত হয়নি। আরব আমিরাত ও বাহরাইন উভয়ে ২০২০ সালে সন্ত্রাসী, হানাদার ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এবং সে সম্পর্ক তারা এখনও অটুট ও বৃদ্ধি করার কথা বলেছে নাউযুবিল্লাহ।

মুসলিম বিশ্বের কথিত এসব নেতা নিজেরা কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়ে এমন একটি দাবি চূড়ান্ত করে যা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা সুদূরপরাহত। দাবিটি হচ্ছে, গাজার ওপর আগ্রাসন বন্ধ করতে সন্ত্রাসী, হানাদার ইসরাইলকে বাধ্য করার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাস করতে হবে। নাউযুবিল্লাহ।

অর্থাৎ তারা ইসলামী আক্বীদা-ঈমান বাদ দিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তা ও মর্যাদা উপলব্ধিতে ব্যর্থ হয়ে যে জাতিসংঘের তথা ইহুদীসংঘের উপর গাজাবাসীকে ছেড়ে দিল সে ঘৃণ্য জাতিসংঘই ১৯৪৭ সালে ইহুদীবাদী, দখলদার, হানাদার সন্ত্রাসী ইসরাইলের জন্ম দিয়েছে। নাউজুবিল্লাহ!

প্রসঙ্গত, পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার রজ্জু (সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদেরকে) ঐক্যবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’

সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, …তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়েছিল এবং মতভেদ করেছিল।

‘মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আনুগত্য করো। পরস্পর বিবাদ করো না। তাহলে দুর্বল হয়ে যাবে এবং তোমাদের প্রভাব বিলুপ্ত হবে।

এসব আয়াত শরীফ মুসলিম বিশ্ব না মানার কারণে সত্যিই কোনো কারণ ছাড়াই আজ নতজানু।

পৃথিবীতে বর্তমানে মুসলমানের সংখ্যা ৩০০ কোটির বেশি এবং মুসলমান দেশের সংখ্যা ৬৫-এরও অধিক। পৃথিবীতে মোট তেল ও গ্যাসের ৮০ ভাগ, কয়লার ৬০ ভাগ, স্বর্ণের ৬৫ ভাগ, রাবার ও পাটের ৭৫ ভাগ এবং খেজুরের ১০০ ভাগই মুসলমান দেশের। সুবহানাল্লাহ! পৃথিবীর মোট দেশের আয়তনের তিনভাগের একভাগের বেশি এখনো মুসলমানদের দেশসমূহ। পৃথিবীর মোট তিন কোটি সৈন্যের  দেড় কোটিই মুসলমান। অমুসলিম বিশ্বের ৮৭ ভাগ বাণিজ্যই মুসলমানের সাথে। অমুসলিম বিশ্ব মুসলমান বিশ্বের  সম্পদ নির্ভর করেই বেঁচে আছে।

কিন্তু মুসলমান নিজেদের শক্তিমত্তা, সোনালী ইতিহাসে উদ্দীপ্ত নয়।

পবিত্র বিদায় হজ্জ উনার মশহুর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আমি তোমাদের জন্য দুটো জিনিস রেখে গেলাম (১) পবিত্র কুরআন শরীফ ও (২) মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। যতদিন পর্যন্ত উনাদের আঁকড়িয়ে ধরবে, ততদিন পর্যন্ত সাফল্যের শীর্ষে থাকবে। আর যখন তা থেকে বিচ্যুত হবে তখনই লাঞ্ছিত, পদদলিত হবে।” (আল মুসনাদ, ইবনে আবি শাইবাহ, আবু ইয়ালা, ইবনে সা’দ, কানযুল উম্মাল)

প্রসঙ্গত হামাস মুজাহিদরা অনেক বুদ্ধিমত্তা, রণ কৌশল, রসদ ইত্যাদিতে অভিনত্ব দেখিয়েছেন। কিন্তু একটি বিষয়ে তাদের ঘাটতি। বর্তমান যামানায় মহাসম্মানিত, মহাপবিত্র হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের লক্ষ্যস্থল সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আযম, ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কিত তথ্য যথাযথভাবে অবগত হওয়া এবং জাহেরীভাবে উনার ছোহবতে আসা। তবে উনার মকবুল নির্দেশনা যদি এখনও তারা যথাযথভাবে পালন করতে পারে তবে তাদের কামিয়াবী ইনশাআল্লাহ সুনিশ্চিত। বিশেষ করে তারা যদি সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়াদ শরীফ, মীলাদ শরীফ পালন করতে পারে তবে তাদের বিজয় খুব কাছাকাছি। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার সাহায্য অতি নিকটবর্তী। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়