সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৩০তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব ছানা ছিফত মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। উনার সর্বোত্তম ছানা-ছিফত করেছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। তিনি বলেন, “আয় মহান আল্লাহ্ পাক, আপনি তো ঐ রকমই যেমনটি নিজেকে নিজে বর্ণনা করেছেন।” আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত সম্পর্কে বলা হয়, তিনি তো ঐ রকমই যেমনটি স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বর্ণনা করেছেন।  সবাই অবগত যে, এ মহান সৃষ্টি অর্থাৎ আকরামুল আওয়ালীন ওয়াল আখিরীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমণের দিন হিসেবে পবিত্র ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবার হিসেবে তথা মহিমান্বিত পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে মশহুর। মর্যাদার দিক থেকে যা শবে-বরাতের চেয়ে অনেক বেশি রহমতপূর্ণ, শবে-ক্বদরের চেয়ে অনেক বেশী-ফযীলতযুক্ত, দু’ঈদের চেয়েও অনেক বড় ঈদ, এমনকি সম্মানিত জুমুয়া শরীফ থেকে অনেক মহান ও মহা সম্মানিত ফযীলতযুক্ত, বরকতময় রহমতে পরিপূর্ণ, যে মহান দিনটি; সেই মহান দিনটিই কুল-মাখলুক্বাতের নিকট ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ’, ‘সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম’, ‘সাইয়্যিদে ঈদে আকবর’ হিসেবে মহা সম্মানিত। যা ‘পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ হিসেবে মশুহুর। আর এ দিন মুবারকই সর্বাপেক্ষা বেশী সম্মানিত ও সমাদৃত।

হালে সরকারিভাবে পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করা হয়। ভি, আই, পি, রাস্তায় কিছু রঙ্গীন পতাকা, ব্যানার ইত্যাদি টানানো হয়। বিচ্ছিন্নভাবে অন্তসারশুন্য কিছু মাহ্ফিল, সেমিনার ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয় এবং একেই যথেষ্ট বলে মনে করা হয়। অথচ তুলনামূলক তথ্যে দেখা যায় এদেশে রবীন্দ্র, নজরুলের স্মরণসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে যে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয় তার চেয়ে অনেক কম অর্থই কেবল নয় বরং কম উৎসাহ ও কম আয়োজনের দ্বারা যেনোতেনোভাবে পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার মত পবিত্র দিনটিকে অতিক্রান্ত করা হয়। অথচ ঈমানের একান্ত দাবীর কারণেই এ মুবারক উপলক্ষটি সরকারি বেসরকারি সর্বমহলে, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নির্বিশেষে ব্যাপক আয়োজনে, বিপুল উৎসাহে, গভীর মূল্যায়ণে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হওয়ার দাবী রাখে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যারা উনার প্রতি ঈমান আনবে, উনার তাযীম করবে, উনাকে খিদমত করবে এবং উনার উপর অবতীর্ণ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অনুসরণ করবে উনারাই হবে সফলকাম।” পাশাপাশি যারা তার বিপরীত, যারা অস্বীকারকারী, অবমাননাকারী তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক ফরমান, “কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুর্খ। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য শত্রু করেছি, শয়তান, মানব ও জ্বীনকে। তারা ধোকা দেয়ার জন্য একে অপরকে কারুকার্যখচিত কথাবার্তা শিক্ষা দেয়। আপনি তাদেরকে এবং তাদের মিথ্যা অপবাদকে ছেড়ে দিন।” মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক ফরমান, “কাফিররা যখন আপনাকে দেখে তখন আপনার সাথে ঠাট্টা, উপহাস ও ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা ছাড়া তাদের আর কোন কাজ থাকেনা।” যদি কাফিররা ঐ সময়টি জানত, যখন তারা তাদের সম্মুখ ও পৃষ্ঠদেশ থেকে আগুন প্রতিরোধ করতে পারবেনা এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবেনা বরং তা আসবে তাদের উপর অতর্কিতভাবে, অতঃপর তাদেরকে তা হতবুদ্ধি করে দেবে, তখন তারা তা রোধ করতেও পারবেনা এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবেনা।  আপনার পূর্বেও অনেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে ব্যঙ্গবিদ্রুপ, উপহাস করা হয়েছে। অতঃপর যে বিষয়ে তারা ব্যঙ্গ করত তা উল্টো ব্যঙ্গকারীদের উপরই আপতিত হয়েছে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬-৪১)

প্রদত্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনাদের থেকে প্রতিভাত হয় যে, একটি বদ মহল থাকবে যারা ফখরে আউওয়ালীন ওয়াল আখিরীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা উনার সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াবলীকে অবহেলা ও ব্যঙ্গ বিদ্রুপ তথা অবমূল্যায়ন করবে। (নাউযুবিল্লাহ)

স্মর্তব্য যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামেও  আবু জাহিল গং বিভিন্ন অপবাদ রটিয়েছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি এজাতীয় লোকদের প্রকৃতি সম্পর্কে বলেন, “হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তার কথায় কর্ণপাত করবেন না, সে মিথ্যা শপথকারী, ঘৃণিত, অপমানিত, নিন্দাকারী, চোগলখোর, সৎকাজ নিষেধকারী, সীমালংঘনকারী, পাপিষ্ঠ, পাষাণ হৃদয় এবং অধিকন্ত সে অবৈধ সন্তান। (পবিত্র সূরা ক্বলম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০-১২)

জ্ঞাতব্য যে, এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরানুযায়ী বলা হয়েছে, যারা ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানী উনাদের নামে মিথ্যা অপবাদ প্রচার করে তারাও উল্লিখিত খারাপ গুণাবলীর কারণে সে খারাপ কাজে উৎসাহ পেয়ে থাকে। আর তাদের কাজের পরিণতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “এই সমস্ত মুনাফিকরা মহান আল্লাহ পাক এবং মুমিনগণকে প্রতারিত করতে চায়। অথচ তারা যে নিজদিগকে ভিন্ন আর কাউকেও প্রতারিত করেনা, তা তারা বুঝতে পারেনা।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ)

উল্লেখ আবশ্যক, কুল-মাখলুকাত তথা কাফির-মুশরিকরাও, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত। উম্মতে দাওয়াত বলে তারা গণ্য। পক্ষান্তরে মুসলমানরা উম্মতে ইজাবত বা কবুলকারী উম্মত হিসেবে অভিহিত। অনেক কাফির মনীষী ফখরে কায়িনাত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত বর্ণনায় প্রবৃত্ত হয়েছে। কিন্তু উনার আদর্শ গ্রহণ না করে শুধুই মুখরোচক বর্ণনা যে, কেবলই অন্তসারশুন্যতা তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। যদিও কোন কোন মহল এসব বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনায় বিশেষ দলীল হিসেবে মূল্যায়ণ করেন। কিন্তু হাক্বীক্বতের বিচারে এ সবই অজ্ঞতা। কারণ মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিজ কথা, “আমি আপনার যিকিরকে, সম্মানকে বুলন্দ করেছি।” (পবিত্র সূরা আলাম নাশরাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪)

এটাই মূখ্য বিষয়। কাফির মনীষীদের আপাত সুখ্যাতির মূল্যায়ণ কেবলই অবান্তর।

মূলতঃ এ ধরণের অসার উপলদ্ধিই বর্তমান বিজ্ঞানের শীর্ষ যুগে ছাহিবে ইকরা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অবদানের মূল্যায়ণ করতে ব্যর্থ।

বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বস্তুতান্ত্রিক সভ্যতা। উপযোগগত উপকরণ। উপকরণ মানব-জীবনের সহায়ক হতে পারে কিন্তু নিয়ন্ত্রনকারী হতে পারেনা। বরং উপকরণের যথাযথ ব্যবহারের ব্যর্থতা মানুষকে বল্গাহারা জীবনে প্রবৃত্ত করে অবশেষে অবসাদগ্রস্থ করে। মানুষ একটি হৃদয়ের অধিকারী। এ হৃদয়কে প্রস্ফুটিত করতে পারে আদর্শভিত্তিক আচরণ ও মূল্যবোধ।

আর সে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেই আমরা দেখি, অত্যাধুনিক উপকরণ, বহুমূল্য বিলাস-ব্যাসনে ব্যাপৃত থাকার পরও বর্তমান জমিনে তথাকথিত সবচেয়ে শক্তিধর সাম্রাজ্যবাদী দেশের কর্ণধারকে পারিবারিক জীবনে বিপর্যস্থ হতে, চারিত্রিক স্খলনে অপদস্থ হতে এবং জীবন-সঙ্গীনির কাছে মার খাওয়ার মত নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে। আর এ চিত্রটি শুধু সে দেশের শাসকদেরই নয় বরং সামগ্রিকভাবে কি ইউরোপ, কি আমেরিকা, গোটা বিশ্বের কাফির দেশেরই।

যদিও তারা দাবী করে থাকে যে, বস্তুতান্ত্রিক উপযোগগত উপকরণের দিক থেকে তারা তৃতীয়-বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো থেকে প্রায় শত বর্ষ-এগিয়ে আছে। তারা সী-প্লেনে ভ্রমন করছে, কম্পিউটারাইজড জীবন যাপন করছে কিন্তু সত্যিকার অর্থে তারা রূহের খোরাকের আসল সওগাত থেকে, আদর্শ জীবনবোধ ও তার ব্যবহার থেকে মুসলিম মূল্যবোধের উপলদ্ধি ও প্রাপ্তির তুলনায় হাজার কোটি বছর পিছিয়ে রয়েছে। পবিত্র ঈমান উনার নূর ছাড়াও তারা বঞ্চিত স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক হক্ব উপলব্ধি ও আদায় থেকে, যে কারণে তাদের মাঝে বিবাহ-বিচ্ছেদ একটি গণ-ব্যধি। পিতা-মাতা এবং সন্তানের হক্ব সর্ম্পকে তারা অজ্ঞ, যে কারণে একটা সময়ে তারা উভয়েই বড় অসহায়। প্রতিবেশীর হক্ব সম্পর্কে তারা অবুঝ, যে কারণে বিপদগ্রস্থ এমনকি পার্শ্ববর্তী মৃত প্রতিবেশীর সাহায্যে এগিয়ে আসে প্রতিবেশী নয় পুলিশ। ‘খাও, দাও স্ফুর্তি কর’ এ বল্গাহারা জীবন-দর্শনে তারা ব্যাপৃত। যে কারণে এসব অস্থায়ী উপযোগের নিঃশেষে তাদের জীবনটাও পরিনতিতে হয়ে উঠে বড়ই দুর্দশার।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সম্মানিত খিলাফত তথা সর্বক্ষেত্রে আমাদেরকে সর্বোত্তম আদর্শ দিয়ে গেছেন। যে আদর্শবোধ সান্তনা দেয় ক্ষুধিতের হৃদয়ে, যে আদর্শ ধৈর্য্য তৈরী করে রোগীর অন্তরে, যে আদর্শ মমতা তৈরী করে স্বামী-স্ত্রীতে, সন্তানে পিতা-মাতায়, যে আদর্শ সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখে, যমীনে সম্মানিত খিলাফত উনার ফযীলত দান করে সর্বোপরি অনন্তকালের জন্য তায়াল্লুক মায়াল্লাহ্ বা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে রূহানী সর্ম্পক তৈরী করে জীবনকে সর্বোতরূপে সাফল্যমন্ডিত করে।

উল্লেখ্য, ফিৎনার এ যুগে প্রবৃত্তির সংশোধন তথা রূহানী আনন্দের সাথে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আমলে প্রবৃত্ত হওয়ার জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সার্বক্ষণিক রূহানী সংযোগ সমৃদ্ধ ও উনার মহান সুন্নত দ্বারা সুশোভিত মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতের কোনো বিকল্প নেই।

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়