সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২২৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ মুবারক ও সালাম মুবারক।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যমীনে এবং পানিতে যত ফিতনা-ফাসাদ সব মানুষের হাতের কামাই।” (পবিত্র সূরা রূম শরীফ: আয়াত শরীফ ৪১)

বলাবাহুল্য, মহা ফিতনা, ভয়ঙ্কর সহিংসতা, সর্বনাশা হরতাল আর চরম রাজনৈতিক দুর্যোগের মধ্যে যাচ্ছে বর্তমান সময়। কিন্তু এগুলো যে আমাদের সবার হাতের কামাই তা আমরা উপলব্ধি করেছি ক’জন? চিন্তা-ফিকির করেছি ক’জন? অনুভব করেছি ক’জন? অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি বিভিন্ন সূরা শরীফ উনার বিভিন্ন স্থানে, ইয়াতাদাব্বারূন- দূরদর্শিতার সাথে চিন্তা কর, ইয়াতাফাক্কারূন- ফিকির কর, ইয়াতাযাক্কারূন- স্মরণ কর, ইয়াফক্বাহূন- বুঝার চেষ্টা কর ইত্যাদি হৃদয়াঙ্গম করার মতো শব্দগুলো বারবার উল্লেখ করে মানুষকে সচেতন করেছেন।

বলাবাহুল্য, সাধারণ মানুষের অধিকাংশই আজ দু’দলের প্রতিই বীতশ্রদ্ধ। দু’দলের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি, লুটপাটের এন্তার অভিযোগ। স¦জনপ্রীতি, দলবাজির বিস্তর অভিযোগ। টেন্ডারবাজি, দখলবাজির প্রচুর অভিযোগ। সিন্ডিকেট, আত্মসাৎ ইত্যাদির নির্মম অভিযোগ। হরতালের নামে গান পাউডার দিয়ে মানুষ মারার নৃশংস অভিযোগ। বছরের দুই-তৃতীয়াংশ সময় হরতাল করে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত করার চরম অভিযোগ, দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষকে ক্ষুধার্ত রাখার করুণ অভিযোগ। দেশের জ্বালানি-খনিজ সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার ঘৃণ্য অভিযোগ। দেশবিরোধী ট্রানজিট চুক্তি, ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি, সীমান্তে নৃশংস হত্যাকা-ে নীরবতা পালন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, টিকফা চুক্তিকরণ, দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি তৈরি, কৃষিতে ভর্তুকি হ্রাস, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি ইত্যাদি ষড়যন্ত্র-জুলুম-শোষণে দেশের মানুষ আজ ক্ষত-বিক্ষত তথা মহাক্ষুব্ধ।

দেশের মানুষের ক্ষোভের অনলে ঘি পড়ে যখন ক্ষমতার প্রশ্নে দু’দলই তথা দুনেত্রীই অনড় থাকে। আর তাদের নির্মম ক্ষমতালিপ্সার স¦ীকার হয় সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষ ক্ষমতালিপ্সার এই নৃশংস প্রতিযোগিতাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে। কিন্তু ক্ষমতালিপ্সার প্রক্রিয়াকে প্রত্যাখ্যান করতে শিখছে না। তাই সাধারণ মানুষকে অনুধাবন করতে হবে শুধু ক্ষমতালোভী নেতা বা নেত্রীই নয় বরং ক্ষমতা লাভের প্রক্রিয়াও অর্থাৎ আজকের নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রও চরম প্রশ্নবিদ্ধ। এই প্রশ্নেই সাধারণ মানুষকে জোরদার হতে হবে। কেননা এটা পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সাথেও সংযুক্ত বিষয়।

বুখারী ও মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা তাকে (দেশের) শাসনভার বা ক্ষমতা দেইনা, যে তার জন্য প্রার্থী বা লালায়িত হয়।” বুখারী ও মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্ষমতাপ্রার্থী হতে নিষেধ করেছেন এবং যে স্বেচ্ছায় ক্ষমতাপ্রার্থী হয় সে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে কোন রকম মদদ পায়না অর্থাৎ সে লা’নতগ্রস্ত হয়।”

আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন বা জীবন-ব্যবস্থা হচ্ছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: আয়াত শরীফ ১৯)

অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে ছাড়া অন্য কোনো তন্ত্রমন্ত্র নিয়মনীতি, তর্জ-তরীক্বা গ্রহণ করবে তার থেকে তা গ্রহণ করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান শরীফ: আয়াত শরীফ ৮৫)

উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের প্রেক্ষিতে প্রতিভাত হয়- মুসলমানের জীবনব্যবস্থা গণতন্ত্র হতে পারে না এবং কোন মুসলমান ক্ষমতাপ্রার্থী বা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে না। মূলত, সমগ্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে এমন অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ আছে যার দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়- পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে গণতন্ত্র হারাম; যা সত্যায়ন করেছেন, মুবারক তাজদীদ করেছেন যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম।

মূলত, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মাঝে যা হারাম তার কুফল ব্যাপক। এই কুফল শুধু সাধারণ মানুষকে নয় নেতা-নেত্রীদেরও বিশেষ মালুম করতে হবে। দুই নেত্রীর ফোনালাপকে সাধারণ মানুষ নিছক ঝগড়া ছাড়া আর কিছু বলতে পারেনি।

ক্ষমতাসীন দলীয় নেত্রী ও সরকারপ্রধান দাবি করছেন তিনি সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেত্রী তা মানছেন না এবং ক্ষমতাসীন নেত্রীর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ করছেন। এক্ষেত্রে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে বিবেচনা করতে হবে যে, ক্ষমতাসীন নেত্রী মুখ্য বিষয় নয়, বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে ক্ষমতাসীন নেত্রী যে প্রক্রিয়ায় এত ক্ষমতাধর এবং ক্ষমতাকে নিজ স¦ার্থে ব্যবহার করছেন সেই ক্ষমতার প্রক্রিয়া অর্থাৎ নির্বাচনভিত্তিক নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ক্ষমতা। এই ক্ষমতা দিয়ে যে একমাত্র ছেলেকে মেয়ে আর মেয়েকে ছেলে ব্যতীত সব করা যায়- তা উপলব্ধি করা। আর এসবই যে হারাম গণতন্ত্রের ফল তা অনুভব করা।

অপরদিকে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী- বিরোধীদলীয় নেত্রীর গো ধরার ব্যাপক সমালোচনা করছেন। কিন্তু তাকেও উপলব্ধি করতে হবে যে প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাই একজনের জন্য সবকিছু হয়ে দাঁড়ায়, ব্যক্তিক্ষমতার জন্য দেশ-জাতি-জনগণ সব তুচ্ছ হয়ে যায়, সে ব্যক্তিক্ষমতা লাভের প্রক্রিয়া তথা গণতন্ত্র আসলে বাঞ্ছিত নয়, গ্রহণযোগ্য নয়, কল্যাণকর নয়, জায়িয নয়।

অপরদিকে জনগণকেও বুঝতে হবে যে রাষ্ট্রযন্ত্র, রাষ্ট্রব্যবস্থা, রাজনৈতিকব্যবস্থা, জনগণকে আদর্শবাদী, মানবতাবাদী করতে পারে না তা প্রত্যাখ্যান করা দরকার। আজকের রাষ্ট্রযন্ত্র, রাজনৈতিক মতবাদ তথা গণতন্ত্র দেশের নাগরিককে এমন শিক্ষা দিতে পারেনি; যার আলোকে হরতালের নামে যাবতীয় সহিংসতা থেকে মানুষ পোড়ানো থেকে তারা বিরত থাকতে পারে, বিব্রতবোধ করতে পারে তথা আদর্শকে লালন ও পালন করতে পারে।

মূলত, এটাই গণতন্ত্রের ব্যর্থতা। গণতন্ত্রের এই ব্যর্থতার দায়ভার গণমানুষকেই নিতে হবে। গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। নির্বাচনকে বয়কট করতে হবে। পবিত্র ‘খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নুবুওয়াহ’র পথে চলতে হবে। এজন্য খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার ছোহবত মুবারকে গণমানুষ থেকে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় সব নেতা-কর্মীদের নিবেদিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আমাদের কবুল করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়