সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২২৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমস্ত প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ মুবারক ও সালাম মুবারক।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “সৃষ্টির মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হলেন হক্কানী-রব্বানী উলামায়ে কিরাম।” বিপরীত দিকে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “সৃষ্টির মধ্যে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট হলো ধর্মব্যবসায়ী নামধারী আলিমগণ।”

এর সাক্ষাৎ প্রমাণ দেখিয়েছে হেফাজতে ইসলাম নামধারী হেক্বারতে ইসলামী দল (ইসলাম অবমাননাকারী দল) পৃথিবীতে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার গভীর বিদ্বেষী দেশ ভারত, আমেরিকা নয়; রাষ্ট্রধর্ম দ্বীন ইসলাম উনার দেশ; ৯৭ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ; হাজার হাজার বছরের পবিত্র ইসলামী ঐতিহ্যমণ্ডিত দেশ; খোদ বাংলাদেশে- হেফাজতে ইসলাম নামধারীরা পনের হাজার পবিত্র কুরআন শরীফ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আবহমান গ্রাম-বাংলার প্রেক্ষাপটে ‘গিলাফ’ একটি পবিত্র ও সম্মানিত শব্দ। সেই সাথে বাঙালি মুসলমানের ঘরে ঘরে আরো একটি বহুল উচ্চারিত ও অতীব সম্মানিত শব্দ হলো ‘রেহাল’। কারণ বাংলার মুসলমান তাদের ঈমানের অনুভূতি হিসেবে ঘরের সর্বোচ্চ তাকে অথবা আলমারির সবচেয়ে উপরের তাকে রেহালের উপরে গিলাফ দ্বারা বেঁধে রাখে তাদের কাছে সবচেয়ে সম্মানিত পবিত্র কুরআন শরীফ। (সুবহানাল্লাহ)

বাঙালি মুসলমান কখনো পবিত্র কুরআন শরীফ বিনা ওযুতে স্পর্শ করেনা। পবিত্র কুরআন শরীফ ধরে আগে চুমু খায়। পড়ার পর আবারো চুমু খেয়ে গিলাফ পরিয়ে রেহালে রেখে দেয়। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রতি এই হচ্ছে আবহমান বাংলার মানুষের চিরন্তন অনুভূতি। নিখাঁদ নিগূঢ় ধর্মীয় অনুভূতি।

মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রতি শুধু বাংলার মুসলমানেরই এই সর্বোচ্চ ধর্মীয় অনুভূতি নয় বরং গোটা বিশ্বের সব মুসলমানদেরও একই অনুভূতি। (সুবহানাল্লাহ) যে কারণে কিছুদিন পূর্বে আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পবিত্র কুরআন শরীফ পোড়ানোর ঘটনায় পুরো দেশ বিক্ষোভে উত্তাল হয়। ১২ জন আফগান শহীদ হন। ২ জন মার্কিন সেনাকে হত্যা করা হয়। হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিসি) ওবামার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। খোদ ওবামা ২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০১২তে আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের কাছে লেখা এক চিঠিতে ক্ষমা চায়। সারা বিশ্বের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রেক্ষিতে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়। অথচ এই স্পর্শকাতর ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম নামধারী হেক্বারতে ইসলাম (ইসলাম অবমাননাকারী দল)। তারা গত ৫ই মে বায়তুল মোকাররমে পনের হাজার কুরআন শরীফ-এ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পূর্ব থেকে জামায়াতে ইসলামী দাবিদার থেকে সদ্য হেফাজতে ইসলাম নামধারীদের তথাকথিত ইসলামী আন্দোলন এদেশের মুসলমানরা দেখেছে। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ডে সাধারণ মুসলমান বারবার বিভ্রান্ত হয়েছেন। প্রতারিত হয়েছেন। আর তারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে সব সময়ই অনৈসলামী কাজ করে আসছে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অবমাননা করেছে। ’৭১-এ রাজাকারগিরি করেছে। ২০১৩ সনে পুলিশ-রেব-বিজিবিসহ শত শত নিরীহ মুসলমানকে শহীদ করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ভাংচুর করেছে। লুটপাট করেছে। চরম সহিংসতা করেছে। গভীর নৈরাজ্য চালিয়েছে। যা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে কঠোর হারাম ও কুফরী।

উল্লেখ্য, জামাতে ইসলাম থেকে হেফাজতে ইসলামসহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামধারী কোনো দলই স্বাধীনতা পূর্ব থেকে এ যাবৎ ইসলামী আন্দোলনের নামে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার কোনো কাজ করতে পারেনি। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার খিদমত করতে পারেনি। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ফুটিয়ে তুলতে পারেনি। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মাহাত্ম্য প্রচার করতে পারেনি। অনৈসলামী আবহ ও আইনের বিরুদ্ধে কোনো চাপ তৈরি করতে পারেনি। বরং জামাতে মওদুদী থেকে হেফাজতসহ সব ইসলামী আন্দোলনকারী দাবিদারদের অবৈধ গর্ভ থেকে বেরিয়ে এসেছে- হারাম ছবি তোলা, আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্র, ও নারী নেতৃত্ব, মাওসেতুং-এর লংমার্চ, গান্ধীর হরতাল, ইহুদী-খ্রিস্টানদের ব্লাসফেমী আইন ইত্যাদি।

মূলত ইসলামী আন্দোলনের দাবিদার হলেও আসলে ওরা মুনাফিক, প্রতারক, জালিম ও জাহেল। ইসলামী আন্দোলনের দাবিদার হলেও; বর্তমান যামানায় পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ধারক বাহক কে? কাঁর কাছে সত্যিকার পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আমল আছে? পবিত্র ইলম মুবারক আছে? কাঁর সাথে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে বেমেছাল তায়াল্লুক নিছবত আছে? কাঁর কাছে খোদায়ী পবিত্র ইলহাম-ইলকা মুবারক আছে? কাঁর কাছে খোদায়ী মদদ আছে? পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে কাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে? এসব প্রশ্ন ওরা অনুধাবন করে না। এসব প্রশ্নের উত্তর ওরা খোঁজে না। এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মাধ্যমে সত্যিকার পবিত্র দ্বীন ইসলামী খিদমত উনার পথে ওরা পরিচালিত হয়না।

অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এ বিষয়টি স্পষ্ট। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পর যামানার সত্যিকার উলীল-আমর উনাদের আদেশ মুবারক মানার কথা বলা হয়েছে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “প্রত্যেক যামানায়ই মুজাদ্দিদ আসবেন।” তাহলে বর্তমান যামানার মুজাদ্দিদ কে? এ প্রশ্নের উত্তরই যারা জানেনা, বুঝেনা; তারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে বুঝবে কি করে? ইসলামী আন্দোলন করবে কী করে? মূলত কোনোটাই তারা কোনোদিন পারেনি আর কখনো পারবেও না। বরং ওরা সব সময় ধর্মব্যবসায়ী তথা নিকৃষ্ট জাহান্নামী থেকে যাবে। (নাঊযুবিল্লাহ)

অপরদিকে দেশের অর্থনীতি আজ মারাত্মকভাবে বিধ্বস্ত। আইন-শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত। রাজনৈতি অস্থিরতায় মানুষ হতাশাগ্রস্ত। বিদেশী থেকে স্বদেশী সব উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত। বারবার সংলাপের কথা বললেও বারবারই তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভেঙ্গে যাচ্ছে। সার্বিক দিক থেকে দেশের অবস্থা হয়ে উঠছে ভয়াবহ। কী ধর্মীয় কী রাজনৈতিক সবক্ষেত্রেই সঙ্কট মহা ঘনীভূত।

উল্লেখ্য, এমন ভীষণ সঙ্কট দেখা দিবে পবিত্র ক্বিয়ামত উনার আগে। কানা দাজ্জালের ফিতনার সময়। তখন মানুষ সমাধানের জন্য হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার খোঁজ করবে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর উনি প্রকাশে পাবেন এবং মানুষ আশ্রয় লাভ করবে।

প্রসঙ্গতঃ আমরা মনে করি বর্তমানেও ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি সবই যখন চরমভাবে সমস্যাগ্রস্ত এবং সমাধানের পথও দিন দিন দুরূহ হচ্ছে। তাই সবারই উচিত অন্য পথে না গিয়ে বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে তালাশ করা। উনার কাছে সমর্পিত হওয়া এবং সমাধান নেয়া। এটাই প্রজ্ঞার কাজ। এর বিপরীত হবে মূর্খতা ও আত্মঘাতী পথে চলা। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে যামানার ইমাম উনাকে চিনলো না সে জাহিলিয়াতের মধ্যে মারা গেলো।” মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে বর্তমান যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মহান মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার খিদমতে আসার তাওফিক দান করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়