সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২১৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম ধর্ম ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরিত্র মুবারক নিয়ে তৈরি চরম মানহানিকর একটি সিনেমার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। তারা অবিলম্বে সিনেমাটি বন্ধ, এর নির্মাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি জানাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এর প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালিয়েছে মার্কিন দূতাবাসে। বিক্ষুব্ধ জনতা লিবিয়ার বেনগাজী শহরে মার্কিন কনস্যুলেটের উপর হামলা চালালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন ক্রিস্টোফার স্টিভেন্স এবং আরও তিন মার্কিন কর্মকর্তা নিহত হয়েছে।

এদিকে কায়রোতে মার্কিন দূতাবাসের সামনেও হাজার হাজার মানুষ ওই সিনেমার প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হয়। প্রতিবাদকারীরা দূতাবাস ভবনের দেয়ালে উঠে পড়ে এবং মার্কিন পতাকা ছিঁড়ে ফেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাকিস্তানে এর প্রতিবাদে প্রায় বিশ জন শহীদ হয় এবং ক্রমশই গোটা মুসলিম বিশ্বই উত্তাল ও উত্তপ্ত হচ্ছে।

ইহুদী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের এই জঘন্য ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী ভিডিও চিত্র ছিল চরম উস্কানিমূলক। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ওই ইহুদী যে বীভৎসভাবে চিত্রিত করে সেটা দেখলে পৃথিবীর যে কোন মুসলমানের ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ হওয়া স্বাভাবিক।

সংবাদপত্রের পাঠকবৃন্দ এবং ইলেট্রনিক মিডিয়ার দর্শকবৃন্দ শুধুমাত্র এ টুকুই জেনেছে যে, ইসলাম ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এই ভিডিও চিত্রে মানহানি করা হয়েছে। মানহানির ভাষা ও তার চিত্রায়ন যে কতখানি অশ্লীল, জঘন্য ও কদর্য সেটি একজন সুরুচিসম্পন্ন মানুষ চিন্তাও করতে পারবে না। তারা মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জঘন্যতম ভাষায় গালাগালি করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, উনার চরিত্র মুবারক নিয়ে কুৎসিত চিত্রায়নের দুঃসাহস দেখিয়েছে। ওই ভিডিও চিত্রটি তথ্যগতভাবে ডাহা মিথ্যায় ঠাঁসা এবং নির্মাণশৈলীর দিক দিয়ে চরম বিকৃত মনের পরিচায়ক।

সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন উঠেছে- কেন বারবার ইসলাম-মুসলমান এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র এবং ইসলাম সম্পর্কে বিকৃত ব্যাখ্যা ও তথ্য প্রদান করা হচ্ছে? মূলত এটা ওদের মজ্জাগত স্বভাবে পরিণত হয়েছে। উল্লেখ্য, বিগত এক দশকে অসংখ্যবার এই ধরনের আপত্তিকর ঘটনা ঘটানো হয়েছে। একযুগেরও আগে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদি ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ নামের একটি চরম ইসলামবিরোধী পুস্তক লেখে। বিশ্ব মুসলিমের বিক্ষোভের মুখে সালমান রুশদী পশ্চিমাদের আশ্রয়ে লুকায়। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে ড্যানিশ কার্টুনিস্টের ব্যঙ্গচিত্র বিশ্ব মুসলিমের ক্ষোভের কারণ হয়। যাদের এসব ব্যঙ্গচিত্র আপত্তিকর ও মানহানিকর লেখনী বা চলচ্চিত্র নির্মাণের কারণে বারবার বিশ্বের মুসলমানের ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে তাদের সম্পর্কে পশ্চিমা বিশ্ব সব সময় অর্থপূর্ণ নীরবতা পালন করে। তাদের এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের কারণেই একই ধরনের অবাঞ্ছিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

বিষয়টি গভীরভাবে অনুসন্ধান করলে বুঝতে অসুবিধা হয়না যে, এসব অবাঞ্ছিত ঘটনা পশ্চিমাদের সাময়িক আবেগ প্রসূত অথবা তাৎক্ষণিক উত্তেজনার ফসল নয়। বিশ্ব মুসলিমের বিরুদ্ধে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনের বুকে ইসরাঈল নামক ইহুদী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করে মধ্যপ্রাচ্যে যে ক্যান্সারের জন্ম দেয়া হয়, সেই ক্যান্সারকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন সময় পর্যায়ক্রমে ইসলাম ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার মাধ্যমে। একদিকে যেমন চালানা হচ্ছে তথ্যসন্ত্রাস, অন্যদিকে তেমনি বিভিন্ন ছুতা-নাতায় আগ্রাসন চালানো হচ্ছে একের পর এক মুসলিম রাষ্ট্র। প্রত্যক্ষ সামরিক অভিযানের মাধ্যমে কব্জা করা হয়েছে আফগানিস্তান, ইরাক এবং লিবিয়া। এখন চলছে সিরিয়া গ্রাসের পরিকল্পনা। এদিকে ইরানের বিরুদ্ধেও বন্দুক তাক করা আছে পাকিস্তানের মতো একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের উপর নৈমিত্তিক ড্রোন হামলা চলছে। সারা বিশ্বে আমেরিকা গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের ফেরি করে বেড়ায়। কিন্তু একটি সুনির্দিষ্ট ধর্ম, অর্থাৎ ইসলামের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে যে আক্রমণ ও কুৎসা প্রচার চলছে তা তাদের কথিত গণতন্ত্র মানবাধিকারের কোন সংজ্ঞাতেই পড়ে না। বরং তাদের এই একদেশদর্শী মনোভাব সমগ্র মুসলিম জাহানকে পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধ বৈরী করে তুলেছে। তার ঘোষণা এবং প্রতিশ্রুতি মোতাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা যদি মুসলিম জাহানকে আমেরিকার বন্ধ হিসেবে পেতে চায়, তাহলে মুসলিম জাহানের বিরুদ্ধে তাদের আচরণ বদলাতে হবে।

এদিকে বাংলাদেশেও গুটিকয়েক নামধারী ইসলামিক দল নামকাওয়াস্তে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে এর কোন উল্লেখযোগ্য জোরালো প্রতিবাদ করা হয়নি। এমনকি বাংলাদেশের জনগণও সমবেতভাবে এর কোন সক্রিয় প্রতিবাদ করেনি। মার্কিন দুতাবাস ঘেরাও করতে পারেনি। এটা সবারই ঈমানী দুর্বলতা। বলাবাহুল্য, এর জন্য দায়ী উলামায়ে ‘সূ’। ‘ছবি তোলা জায়িয’ তাদের এ ফতওয়াই মুসলমানদের ঈমানীভাবে দুর্বল করেছে। ছবির বিরুদ্ধে বিষোদগার ও ঘৃণাবোধ কমিয়ে ফেলেছে। ফলত তাদের ঈমানী বোধও কমেছে। এমতাবস্থায়ই ইসলাম বিদ্বেষীরা একের পর এক ব্যাঙ্গচিত্র তথা বিকৃত ও মিথ্যা সিনেমা তৈরির সাহস পেয়েছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

কিন্তু ‘মুসলমানরা কখনও ছবি তুলে না’- এ সত্য যদি প্রচারিত থাকতো তাহলে কোন বিধর্মীই ছবির মাধ্যমে ইসলামের অবমাননা করার সুযোগ ও সাহস পেত না। সঙ্গতকারণেই আমরা শুধু বিকৃত সিনেমা তৈরিকারী ইহুদীদেরই শাস্তি চাইনা পাশাপাশি আমরা ছবি জায়িযকারী ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ‘সূ’দেরও নিপাত চাই।

মূলত সব সমস্যা সমাধানে চাই সদিচ্ছা ও সক্রিয়তা তথা সততা। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন নেক  ছোহবত, নেক সংস্পর্শ তথা রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার  নেক ছোহবতেই কেবলমাত্র তা পাওয়া সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়