সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২১৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি উনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের প্রতি অনন্তকালের জন্য অপরিসীম, অব্যক্ত, অশেষ দরূদ শরীফ এবং ছলাত ও সালাম শরীফ।

অধুনা পুলিশী রাষ্ট্রের পরিবর্তে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণার প্রবর্তন হয়েছে। কিছুটা অনুশীলন হচ্ছেও বলে দাবি করা হেচ্ছ। কিন্তু কল্যাণমূলক ধারণার প্রকৃত ব্যাপ্তি নির্দেশিত হয়েছে কুরআন শরীফ-এ। ইরশাদ হয়েছে, æহে মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাদের দুনিয়াবী কল্যাণ দান করুন এবং পরকালীন কল্যাণ দান করুন।মূলত পরকালীন কল্যাণের চেতনা সম্পৃক্ত না থাকলে কোনদিন কোনকিছুতেই দুনিয়াবী কল্যাণ সাধিত হয়না; হতে পারেনা।

অপরদিকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রধান অবদান হচ্ছে তথ্য অবগতি। অধুনা কল্যাণমূলক রাষ্ট্রগুলো তথ্য অধিকার আইন পাস করেছে। যার সুবাদে প্রতিটি নাগরিককে সর্বোচ্চ তথ্য জানার অধিকারকে নিশ্চিত করা হয়। প্রকৃত অর্থে কথিত কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের এই তথ্য সেবা কিঞ্চিৎকর এবং অপূর্ণ। কথিত রাষ্ট্রে মৃত্যুর পর কাউকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় কিন্তু রাষ্ট্রীয় তথ্যে জানা যায়না যে কবরে ওই সমাহিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে কি হচ্ছে বা না হচ্ছে? অথচ কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ-এ এ ধরনের তথ্য অবগতি বা তথ্য সমারোহ প্রচুর এবং অকাট্য। বরং এক্ষেত্রে মানুষ কি ধরনের গাফলতি অথবা নিষ্ক্রিয়তা পোষণ করে থাকে তাও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

* ‘সূরা আল গাশিয়াহ’-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, (১) (হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনার নিকট কি আচ্ছন্নকারী ক্বিয়ামতের সংবাদ পৌঁছেনি। অর্থাৎ আপনার নিকট আচ্ছন্নকারী ক্বিয়ামতের ইল্ম রয়েছে। (৪) তারা অত্যন্ত জ্বলন্ত ও উত্তপ্ত অগ্নিতে প্রবেশ করবে।

* ‘সূরা হুমাযাহ’-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, (৫) আপনি কি জানেন, হুতামাহ কি? অর্থাৎ আপনি জানেন, হুতামাহ কি। (৬) আল্লাহ পাক উনার প্রজ্জ¦লিত অগ্নি।

* ‘সূরা তাকাছুর’-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, (১) আধিক্যের লালসা (দুনিয়ার লোভ) তোমাদেরকে (আল্লাহ পাক উনার থেকে) গাফিল করে রেখেছে। (২) যে পর্যন্ত না তোমরা কবরস্থান যিয়ারত কর অর্থাৎ ইন্তিকাল পর্যন্ত।

* ‘সূরা আল ক্বারিয়াহ’-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, (১) আঘাতকারী বা ক্বিয়ামত। (২) আঘাতকারী বা ক্বিয়ামত কি? (৩) এবং আপনি কি জানেন, আঘাতকারী বা ক্বিয়ামত দিবস কি? অর্থাৎ আপনি জানেন আঘাতকারী বা ক্বিয়ামত দিবস সম্পর্কে। (৬) অতঃপর নেকীর পাল্লা ওজনে ভারী হবে। (৭) অতঃপর সে জীবনযাপন বা বসবাস করবে সন্তুষ্টির মধ্যে সন্তুষ্টচিত্তে। (৮) এবং অতঃপর নেকীর পাল্লা ওজনে হালকা হবে। (৯) অতঃপর তার আশ্রয়স্থল হবে হাবিয়াহ দোযখে।

* ‘সূরা আল আদিয়াত’-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, (৮) এবং নিশ্চয়ই সে (মানুষ) ধন-সম্পদের মোহে কঠিনভাবে মোহগ্রস্ত। (৯) তবে সে (মানুষ) কি জানে না যখন উত্থিত হবে কবরসমূহে যা কিছু রয়েছে।

 সূরা যিলযাল’-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, (১) যখন যমীনকে তার উপযুক্ত কম্পনে প্রকম্পিত করা হয় (২) এবং যমীন বের করে দিবে তার সমস্ত বোঝাসমূহ (৩) এবং মানুষ বলবে তার কি হলো (৪) সেদিন যমীন তার (উপরে ঘটে যাওয়া) সমস্ত সংবাদ বর্ণনা করবে বা বলে দিবে।

 ‘সূরা ফজর’-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, (২৪) সে বলবে, হায় আফসুস! (আমার জন্য কতই না উত্তম হতো) যদি আমার এ হায়াত বা জীবনের জন্য অগ্রিম কিছু নেকী বা পাথেয় প্রেরণ করতাম।

এছাড়া ক্বিয়ামতের কঠিন অবস্থা বর্ণনা করে আরও নাযিল হয়েছে- সূরা ইবরাহীম (৪৮), সূরা বনী ইসরাইল (৫৮), সূরা আম্বিয়া (৪৭, ৯৫-১০৪), সূরাতুল হজ্জ (১-২), সূরা রূম (৪৩), সূরা ইয়াসীন (৪৮-৫৪), সূরা সাফফাত (১৯-২১), সূরা কাফ (২০-২৯, ৪১-৪৪), সূরা যারিয়াহ (১-১৪), সূরা তুর (১-১২), সূরা নজম (৫৭-৫২), সূরা কামার (১-৮, ৪৬-৪৮), সূরা আর রহমান (৩৭-৪০), সূরা হাক্কা (১-৩), সূরা মায়ারিজ (১-১৮), সূরা মুযাম্মিল (১৭-১৯), সূরা ইমরান (৩০, ১০৬-১০৯, ১৮৫), সূরা মায়িদা (১৪), সূরা আনয়াম (১২), সূরা হুদ (১০৩-১০৮), সূরা নহল, (২৭, ৮৪-৮৯, ৯২), সূরা কাহাফ (৯৯-১০১), সূরা মরিয়ম ৯৩-৯৬), সুরা মুমিন (১৫-১৮), সূরা জাসিয়া (১৭, ২৪-৩৪), সূরা তাগাবুন (৯-১০), সূরা ক্বিয়ামাহ (১-৪০)।

উল্লেখ্য, মিডিয়ার জগতে প্রথম হলো প্রিন্ট মিডিয়া। আর প্রিন্ট মিডিয়ার সুসংহত রূপ হলো কিতাব। আর ওহীক কিতাব কুরআন শরীফ-এ প্রথমেই মহান আল্লাহ পাক তিনি কিতাবের কথা বলেছেন। উল্লেখ করেছেন- এটা এমন এক কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই।” (সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ ২) অন্যত্র ইরশাদ করেন, এ কিতাবে আমি শুকনা ও ভিজা কোন কিছুই ইরশাদ করতে ছাড়ি নাই।” (সূরা আনয়াম : আয়াত শরীফ ৩৮)

প্রতিভাত হয় যে ওহীক কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ-এই ক্বিয়ামত সম্পর্কে বিস্তারিত ও চূড়ান্ত সত্য তথ্য বর্ণিত হয়েছে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি মুসলমান এই তথ্যের মুখোমুখি। কাজেই ক্বিয়ামত ও কবরে তথ্য অবগত থেকে অথবা যারা অবহেলা করে ক্বিয়ামত ও কবরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেনা, অনৈসলামী আমল ছেড়ে ইসলামী আমল আরম্ভ করছে না তাদের আফসুস ও দুঃখ। তাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, æতবে কী উৎকৃষ্ট জিনিসের পরিবর্তে নিকৃষ্ট জিনিসই তোমাদের পছন্দ।আর জাহান্নাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, কতই না নিকৃষ্ট সে আবাসস্থল।

বর্তমান যামানায় মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের লক্ষ্যস্থল মহান মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আযম আলাইহিস উনার উসীলায় এই দ্বীনি সমঝ আলীমুল হাকীম, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকেই নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়