সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২১২তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। যিনি একটি গুপ্ত ধনভা-ার ছিলেন। হাদীছে কুদসীতে তিনি ইরশাদ করেন, আমার ইচ্ছা হল- আমি প্রকাশিত হই, অতঃপর আমি সর্বপ্রথম নূরে মুকাররম, নূরে মুজাজসাম, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুরারক তৈরি করলাম।

নূর নবীজী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অনন্তকালের জন্য অফুরন্ত দরূদ শরীফ এবং ছলাত ও সালাম শরীফ। উনার আগমনে খুশি হওয়া তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাযথভাবে পালনের অর্থ মহান আল্লাহ পাক উনার মূল ও প্রধান ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। আর তার বিপরীত হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার মূল ও প্রধান ইচ্ছার প্রতি অসম্মান ও শত্রুতা করা। যা ইবলিসী খাছলত এবং চূড়ান্ত হালাকীর কারণ। (নাঊযুবিল্লাহ!)

হালে সরকারিভাবে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করা হয়। ভি,আই,পি রাস্তায় কিছু রঙ্গিন পতাকা, ব্যানার ইত্যাদি টানানো হয়। বিচ্ছিন্নভাবে অন্তঃসারশূন্য কিছু মাহফিল, সেমিনার ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয় এবং একেই যথেষ্ট বলে মনে করা হয়। অথচ তুলনামূলক তথ্যে দেখা যায়- এদেশের রবীন্দ্র, নজরুলের স্মরণসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে যে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয় তার চেয়ে অনেক কম অর্থই কেবল নয় বরং কম উৎসাহ ও কম আয়োজনের দ্বারা যেনোতেনোভাবে পবিত্র ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ-এর দিনটিকে অতিক্রান্ত করা হয়। অথচ ঈমানের একান্ত দাবির কারণেই এ মুবারক উপলক্ষটি সরকারি-বেসরকারি সর্বমহলে, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নির্বিশেষে ব্যাপক আয়োজনে, বিপুল উৎসাহে, গভীর মূল্যায়ণে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হওয়ার দাবি রাখে।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে: æতোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন এমনকি নিজের জীবন থেকে আমাকে বেশি মুহব্বত করতে না পারবে।”

এই হাদীছ শরীফ-এর প্রেক্ষিতে জ্বলন্ত জিজ্ঞাসা ব্যক্তি মুসলমান থেকে রাষ্ট্রের প্রতি; আমরা কী আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে, সর্বক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে পেরেছি?’

অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআন শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, æআমি আপনার আলোচনাকে বুলন্দ করেছি।” কতটুকু বুলন্দ? এতটুকু যে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক-এর সাথে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। কোন ব্যক্তি শুধু ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়লে ক্বিয়ামত পর্যন্ত মুসলমান হতে পারবেনা। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ‘মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ না পড়বেন। (সুবহানাল্লাহ!)

উল্লেখ্য, এদেশের ৯৭ ভাগ জনগোষ্ঠী ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’- এ কালিমা শরীফ-এ বিশ্বাসী।

এদেশে দশ লাখ ঊর্ধ্ব মসজিদের ৫ ওয়াক্ত আযানে দৈনিক দশবার করে অর্থাৎ কোটিবারেরও বেশি উচ্চারিত হয় ‘আশহাদু আন্না মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ।’ অর্থাৎ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল।’

আর মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, æমহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিদায়েত এবং সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন সকল দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিয়ে (সমস্ত দ্বীন ও মতবাদকে বাতিল ঘোষণা করে) এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষ্যই যথেষ্ট। (যার সাক্ষী মহান আল্লাহ পাক তিনি) আর রসূল হচ্ছেন, মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (সূরা ফাতাহ : আয়াত শরীফ- ২৮, ২৯)

অর্থাৎ ইসলাম হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত একমাত্র দ্বীন। যা বাড়ানো-কমানো বা ইফরাত-তাফরীত কোনটিই জায়িয নেই। যে বাড়াবে-কমাবে, সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, এদেশের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম স্বীকৃত। কিন্তু কথা হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র কী ইসলাম মানে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী ইসলাম স্বীকার করে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী ইসলাম পালনে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী ইসলামী মূল্যবোধ এর উজ্জীবন ঘটায়? রাষ্ট্রযন্ত্র কী ইসলাম বিরোধী আচার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়?

বলাবাহুল্য, ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশ হিসেবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম-এর দেশ হিসেবে রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষে উপরিল্লিখিত জিজ্ঞাসার জবাব হ্যাঁ বোধক হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হল রাষ্ট্রযন্ত্র তা করতে চরম-পরমভাবে ব্যর্থ। বরং উল্টোদিকে তার বল্গাহীন অগ্রযাত্রা। (নাঊযুবিল্লাহ!)

এজন্য ব্যক্তি মুসলমানও কম দায়ী নয়। ব্যক্তি মুসলমান প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাযের আযানে ও ইক্বামতে ২০ বার করে শুনে ‘আশহাদু আন্না মুহম্মদুর রসূলাল্লাহ।’ অর্থাৎ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এবং বিতর সহ ৫ ওয়াক্ত নামাযের মধ্যে তাশাহুদে কমপক্ষে ১৭ বার সাক্ষ্য দেয়, “……ওয়া আশহাদু আন্না মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ।” অর্থাৎ ব্যক্তি মুসলমান দৈনিক ৩৭ বার সাক্ষ্য দেয়, ‘আশহাদু আন্না মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ।’ (সুবহানাল্লাহ!)

আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা এনেছেন তা আঁকড়িয়ে ধর এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকো।” (সূরা হাশর: আয়াত শরীফ ৭)

বলাবাহুল্য, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল হিসেবে ৩৭ বার সাক্ষ্য দেবার পরও দেশের ৯৭ ভাগ মুসলমান ফরয-ওয়াজিব পালন থেকে দূরে থাকে কীভাবে? সুন্নত পালন থেকে গাফিল থাকে কীভাবে? হারাম-হালাল একাকার করে  কী করে? বেপর্দা-বেহায়া-বেশরায় মশগুল হয় কী করে? তাহলে কীভাবে বিশবার ‘মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ’ কানে শোনা ও স্বীকৃতি দেয়া হয়? এবং বিতর সহ ৫ ওয়াক্ত নামাযে ১৭ বার তাশাহুদে নিজ মুখে উচ্চারণ করা ‘আশহাদু আন্না মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ’ বলার অর্থ কিসে পরিণত হয়?

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, æহে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে।” (সূরা ফাতহ : আয়াত শরীফ ৯

প্রসঙ্গত জান্নাতের সুসংবাদ এবং জাহান্নামের ভয় এখানে উল্লেখ্য।

বলাবাহুল্য, দেশের মুসলমান এখনও জান্নাত আশা করে জাহান্নামকে ভয় পায়। আর জান্নাত-জাহান্নামের আমল সম্পর্কেও তারা অজ্ঞাত নয়। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে জান্নাত-জাহান্নামের মূলত মালিক- আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা মূল্যায়ন, শান-মান, অনুধাবন, আদেশ, নিষেধ পালন থেকে তারা কী করে পিছিয়ে থাকতে পারে?

কাজেই মুসলমানকে ‘মুসলমানিত্ব’ বুঝতে হবে। ‘আশহাদু আন্না মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাক্বীক্বীভাবে বলতে হবে ও আমলে আনতে হবে।

মূলত: সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাযথ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালনের দ্বারাই মুসলমান সে ঈমানী চেতনা ও প্রেরণা তথা কুওওয়াত বা নিয়ামত পাবে।

রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের এদেশে, ৯৭ ভাগ মুসলমান অধিবাসীর এদেশে- সর্বপ্রধান, সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বোচ্চ সরকারি উৎসব হবে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের উৎসব। এ উৎসবকে উপলক্ষ করেই হাজার হাজার কোটি টাকা বাজেট করতে হবে। দেশের সব গরিব-দুঃখীদের এ ঈদ পালনের জন্য প্রভূত সরকারি সাহায্য দিতে হবে। গোটা রবীউল আউয়াল শরীফ মাসকেই ছুটির মাস হিসেবে গণ্য করতে হবে। দেশের দশ লাখ মসজিদে ব্যাপক সরকারি সহযোগিতায় ওয়াজ মাহফিল, মীলাদ মাহফিল ও উন্নতমানের তবারক বিতরণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে।

তবে আবশ্যকীয়ভাবে মনে রাখতে হবে, হামিলু লিওয়ায়িল হামদ, হাবীবে আ’যম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সার্বক্ষণিক রূহানী সংযোগ সমৃদ্ধ ও উনার মহান সুন্নত দ্বারা সুশোভিত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতের মাধ্যমেই আমাদের পক্ষে পাওয়া সম্ভব সনদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জাত ও ছিফত সম্পর্কিত ইলম ও ফিকির, উনার হাক্বীক্বত সম্পর্কিত মা’রিফাত এবং উনার পূর্ণ অনুসরণ ও সুন্নত পালনের এবং সর্বোপরি চরম, পরম ও গভীর মুহব্বত, তা’যীম-তাকরীম ও আদবের সাথে সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের কুওওয়ত। পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে সেসব নিয়ামত হাছিলই হোক আমাদের অন্তরের আরজু। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়