সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৯৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

হিদায়েতের মালিক আল্লাহ পাক উনার জন্যই সব প্রশংসা। সত্য দ্বীন এবং হিদায়েতসহ প্রেরিত রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বেশুমার দরূদ ও সালাম।
মহান আল্লাহ পাক স্বীয় কালাম পাকে ইরশাদ করেন, “সময়কে আমি পর্যায়ক্রমে মানুষের মাঝে পরিবর্তন করি।” সময় বহতা নদীর মত। সাধারণ মানুষ সময় দ্বারা প্রভাবিত হয়।
সময়ের প্রবাহে পুষ্ট অধিকাংশের বিশ্বাস এরূপ যে, ‘চলমান পরিস্থিতিতে প্রচলিত অনৈসলামিক আচারও অনৈসলামিক থাকে না। তাদের ধারণা গান—বাজনা, খেলা—ধুলা, সুদ, ঘুষ, টিভি, সিনেমা, বেপর্দা, বেহায়া এগুলো বর্তমান সময়ের দাবি। যা সময়ের প্রেক্ষিতে জায়িয ও সহনীয়।’ নাউযুবিল্লাহ!
আওয়ামুন নাসের ভিতরে এসব বিশ্বাস শক্ত করে এঁটে বসার কারণে তাদের সে অনুভূতির বিপরীতে চালিত হতে ভয় পায়, স্বার্থান্বেষী আলিম সমাজ। চলমান আবহের প্রতিকূলে ইসলামী আদর্শকে প্রকাশ ও প্রচার করা নয় বরং তার উপর ইসলামী লেবেল অঁাটার অপচেষ্টার প্রেক্ষিতে ছবি তোলা, ভিডিও, টেলিভিশন জায়িয করা হয়েছে বহু পূর্বেই। এ ধারাবাহিকতায় যাবতীয় অনৈসলামিক কাজের প্রতি বাধাদান এবং ইসলাম কায়িমের পথটিকেও করা হয়েছে বিকৃত, কলঙ্কিত। অনৈসলামিক কাজের বাধা দানের পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে— মুশরিকদের হরতাল, মজুসীদের মশাল মিছিল, নাছারাদের ব্লাসফেমী আইন ইত্যাদি। পক্ষান্তরে ইসলামী দাবি আদায়ের জন্য অবতারণা করা হয়েছে— কমিউনিস্টদের লংমার্চ, খ্রিস্টানদের মৌলবাদ, গণতন্ত্র তথা নির্বাচন।
মূলত এসব কিছুই বিধর্মীদের থেকে উৎপত্তি লাভ করে সাধারণভাবে সমাজে সম্পৃক্ত হয়েছে। কিন্তু এসবের বিপরীতে স্বকীয় আদর্শে পরিচালিত হওয়াই ছিল ইসলামী মূল্যবোধের দাবি। ইসলামী আদর্শ সম্পর্কে অজ্ঞতা, চলমান মানসিকতার প্রতিকূলে চলার গভীর শঙ্কা, সংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষী মালানাদের পরাভূত করেছে। সময়ের স্রোতে এরা ভেসে চলছে। ইসলামের পরিভাষায় এদেরকে আখ্যা দেয়া হয়— ‘ইবনুল ওয়াক্ত’ বা ‘সময়ের সন্তানরূপে।’
সময়ের প্রকৃতি ও প্রবাহে যারা চলবেন, সময়ের দোহাই যারা দিবেন তাদের জন্য মূলতঃ দ্বীন ইসলামের ধারক ও বাহক হওয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “সময়ের শপথ! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততার মধ্যে লিপ্ত। তবে তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।” (সূরা আছর)
এখানে শপথ করা হয়েছে সময়ের। আর এর তাফসীর হচ্ছে, সময়ের স্রোতে নির্বিচারে যারা গা ভাসিয়ে দিবে অর্থাৎ যারা ইবনুল ওয়াক্ত তারা মূলতঃ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বলাবাহুল্য, সমঝদার না হলে এসব ইবনুল ওয়াক্ত মাওলানাদের অন্তঃসার শূন্যতা উপলব্ধি কষ্টকর। বিশেষত তাদের অনুসারীদের জন্য তা আরো দুরূহ। যেহেতু তারা দৃশ্যতঃ সমজাতীয়দের বিরাট সমাবেশ দেখতে পায়।
স্মর্তব্য, বিরাট সমাবেশ বা বেশি সংখ্যাই কিন্তু হক্বের মাপকাঠি নয়। তা বরং নাহক্বের সূচকও বটে। আল্লাহ পাক তিনি বলেন, ‘আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহ পাক উনার পথ থেকে বিপথগামী করে দিবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমানভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে। আপনার প্রতিপালক তাদের সম্পর্কে জ্ঞাত রয়েছেন, যারা উনার পথ থেকে বিপথগামী হয়।” (সূরা আনয়াম : আয়াত শরীফ ১১৬)
এ আয়াত শরীফে স্পষ্টভাবে ব্যক্ত যে, পৃথিবীর অধিকাংশ লোক নাহক্ব। সুতরাং যেসব নামধারী মাওলানারা তাদেরকে তোয়াজ করে, তাদের মুখী যারা হয় তারাও মূলত নাহক্ব। আর উভয়ের সম্মিলিত শক্তিটি ধাবিত হয় হক্ব ওলীআল্লাহগণের প্রতি তথা যামানার মুজাদ্দিদের বিরুদ্ধে।
কারণ, সময়ের নাহক্ব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কেবল তিনিই হক্ব কথা উচ্চারণ করেন। ইসলামকে ইসলামী পন্থায় প্রতিষ্ঠা করার মত নীতিবোধ, আকল, হিম্মত ও তাওয়াক্কুল থাকায় ইসলামকে, ইসলামী কায়দায়ই রূপায়নে কেবল তিনিই হন যোগ্য ও নিবেদিত। অর্থাৎ ইসলামী মূল্যবোধের বিপরীতে সময় বা সমসাময়িক তর্জ—তরীকা, মানসিকতা তাঁর উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা মোটেই। বরং সেসবের উপর তিনিই হন জয়ী। ইসলামী পরিভাষায় তিনি “আবুল ওয়াক্ত” বা সময়ের উপর প্রাধান্য বিস্তারকারী রূপে অতীব সম্মানিত।
উল্লেখ্য, সময়ের বিপরীতে চলা তথা সময়ের সন্তান— উলামায়ে ছূ’ ও তাদের দ্বারা প্রভাবিত সাধারণ মানুষের মানসিকতার বিরুদ্ধে ইসলামের কথা বলা মূলত খুবই দুরূহ। কারণ, সবাই তখন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। অপবাদ রটনা করে, বিরোধিতা করে। তারপরেও আবুল ওয়াক্ত তথা যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম সময়ের বিপরীতে সত্য দ্বীনের কথা বলেন। ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত দ্বীনকে তুলে ধরেন। কারণ এ যে আল্লাহ পাক উনার আদেশ এবং এই তার হক্ব হওয়ার ও যোগ্যতার বিশেষ পরিচয়। কুরআন শরীফ—এ বলা হয়েছে, “অতএব, আপনার পালনকর্তার আদেশ পালনের জন্য ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করুন এবং ওদের মধ্যকার কোন পাপিষ্ঠ (উলামায়ে ‘ছূ’) ও কাফিরের আনুগত্য করবেন না।” (সূরা আদ দাহর : আয়াত শরীফ ২৪)
এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে ‘সূরা আহযাবে’ আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “হে নবী (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করুন ও মুনাফিকদের (ধর্মব্যবসায়ী, উলামায়ে ছূ’দের) কথা মানবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। আপনার পালনতর্কার পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয় আপনি তার অনুসরণ করুন। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ পাক সে বিষয়ে জ্ঞাত।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ১)
মূলত মুজাদ্দিদে আ’যম আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মনোনীত বলে, উনাকে সেই কুয়ত দিয়েই আল্লাহ পাক তিনি প্রেরণ করেন। হাদীছ শরীফ—এ ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই এই উম্মতের মাঝে আল্লাহ পাক তিনি প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে একজন মুজাদ্দিদ পাঠাবেন। যিনি বিরাজমান সময়ে সংস্কার করবেন।”
‘ইবনুল ওয়াক্ত’ না হয়ে ‘আবুল ওয়াক্তরূপে’ যিনি আল্লাহ পাক উনার রহমত বিকশিত করবেন। সময়ের স্রোতে ঢুকে পড়া বেশরা, বিদ্য়াত থেকে ইসলামকে তিনি মুক্ত করবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সেই মহান মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম উনার অনুসরণ করত সমসাময়িক গুমরাহী হতে হিফাজত করুন এবং হিদায়েত নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়