সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৯৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

পবিত্রতা ও প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি সব মাসের মাঝে রমাদ্বান শরীফকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। ছলাত ও সালাম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। যাঁর উছীলায় উম্মতে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামগণকে রমাদ্বান শরীফ উপলক্ষে দেয়া হয়েছে অনন্য মর্যাদা-মর্তবা।

চন্দ্র মাসের পরিক্রমায় রমাদ্বান শরীফ নিয়ে আসে অনেক ফযীলতের অনুষঙ্গ। রমাদ্বান  শরীফ রাতের শেষভাগে উঠে সাহরী গ্রহণের উদ্দীপনা, সারাদিন রোযা রেখে মাগরিবে ইফতারী করার খুশি, কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মোহিত আবেশ, যিকরুল্লাহ্র প্রশান্তি, দরূদ শরীফ পাঠের ফযীলত, যাকাত দানের বরকত, ফিতরা আদায়ের ইতমিনান, ই’তিকাফের উদ্যম, শবে ক্বদর লাভের ব্যাকুলতার আবহে এক অভাবনীয় রহমত, বরকত ও নাজাতের প্রাচুর্য।

এর প্রতিফলন আমরা ধর্মপ্রাণদের মাঝে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লক্ষ্য করি। যথাসময়ে সাহরী শেষকরণ, সময় স্বল্প হলে সাহরী সংক্ষিপ্তকরণ, আদৌ সময় না পেলে বিনা সাহরীতেই রোযা পালন, দাঁত পরিষ্কারে সতর্কতা অবলম্বন, ওযু-গোছলে পানি না পানের সাবধানতা পালন, ইচ্ছাকৃত ধোঁয়া গ্রহণ থেকে হিফাযতের প্রচেষ্টা ইত্যাদি সবই রোযাকে যথাযথভাবে পালনের তথা তার অঙ্গহানি না করার এক বাঞ্ছিত প্রচেষ্টার নিদর্শন।

আমরা মনে করি রোযা পালনে এ সতর্ক প্রয়াস কেবল রোযার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিৎ নয়। আমাদের সামগ্রিক ইসলামী কর্মকা-ের ক্ষেত্রে এই মূল্যবোধের প্রতিফলন অপরিহার্যভাবে ঘটানো উচিত। কার্যত তা না করার কারণে আমরা প্রতারিত হচ্ছি সর্বত্র। বিশেষত ইসলামী আন্দোলন নামক স্পর্শকাতর বিষয়টিতে এ প্রতারণা সুস্পষ্টভাবে পরিস্ফুট।

উল্লেখ্য, ইসলাম পূর্ব যুগেও রোযা প্রচলিত ছিল, কিন্তু রোযার দিন, সময়, সংখ্যা, ধারাবাহিকতা, সুনির্দিষ্টভাবে পালিত হতোনা। চলতো, খেয়াল-খুশির চরিতার্থকরণ তথা অবহেলা, অলসতা, আর অনিয়ম পালন। কিন্তু ইসলাম সে যথেচ্ছাচার সর্বোতরূপেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ইখতিয়ারের পরিবর্তে ইসলাম দিক নির্দেশনা দিয়েছে নির্দিষ্ট পথের এবং নির্ভেজাল আনুগত্যের। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, æআমাদের ও আহলে কিতাবদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী বিষয় হচ্ছে সাহরী।” (মুসলিম শরীফ) অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইহুদী-নাছারাদের ন্যায় বিলম্বে ইফতার করণের প্রতি ঘৃণা ব্যক্ত করা হয়েছে। (আবু দাউদ শরীফ)

মূলত ইসলামের মৌলিক আদর্শই হলো- ইহুদী-নাছারার খিলাফকরণ, তাদের আদর্শ না অনুসরণ। রমাদ্বান শরীফ সে সত্যই উদারভাবে উদ্ভাসিত করে। কিন্তু দাজ্জালের চেয়েও বেশী ভয়ঙ্কর উলামায়ে ‘ছু’রা সে সত্যটিকে বার বার উপেক্ষা করে উম্মাহকে ভ্রষ্ট পথে পরিচালিত করছে।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, æআমি তোমাদের ব্যাপারে কতিপয় ব্যক্তিকে দাজ্জালের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর মনে করি।” প্রশ্ন করা হলো, তারা কারা? তিনি বললেন, æভ্রষ্ট পথে পরিচালনাকারী সমাজ ও জাতির নেতা তথা উলামায়ে ‘ছূ’র দল।” (মুকাশাফাতুল কুলুব)

উল্লেখ্য, ইসলামী আন্দোলন, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী সকল মুসলমানেরই প্রাণ স্পন্দন। কিন্তু কথিত ইসলামী আন্দোলনকেই যখন আন্দোলিত করা হয় অনৈসলামের পথে, কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী মাওসেতুং-এর লংমার্চ অভিযাত্রায়, হিন্দুদের কুশপুত্তলিকা দাহ ক্রিয়ায়, কট্টর হিন্দু গান্ধীর হরতাল পালনে, ইহুদী-নাছারার ব্লাসফেমী, মৌলবাদ আর গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়, তখন রোযার শিক্ষা- ‘ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীর আদর্শের খেলাফকরণের’- প্রেক্ষিতে তাকে কি ইসলামী আন্দোলন বলা যায়? বরং এ আন্দোলন কি তখন ওইরূপই হয়ে যায়না, যেমনটি বলা হয়েছে, হাদীছ শরীফে রোযা ঢাল স্বরূপ, যতক্ষণ পর্যন্ত রোযাদার নিজেই তা ফুটো করে না দেয়। (নাসাঈ শরীফ)

ইহুদী-নাছারার আদর্শে তথা হারাম পথে পরিচালিত এসব তথাকথিত ইসলামী আন্দোলন কি তখন ওইরূপই হয়না যেমনটি হয়,, সারাদিন রোযা রেখে হারাম মাল দ্বারা সাহরী ও ইফতারী করলে অথবা সুব্হে সাদিকের পরে খেয়ে, ইশার সময় ইফতার করার মত খেয়াল-খুশিনুযায়ী চললে, যেমন হাদীছ শরীফ-এ বলা হয়েছে, æঅনেক রোযা পালনকারী এমন, যাদের ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকাই সার হয়। তদ্রƒপ অনেক ইবাদতকারী এরূপ যাদের রাত কাটানোই সার হয়।”

সকল প্রকার বাদানুবাদ, ফিৎনা-ফাসাদ থেকে হিফাজতে থাকা রোযার আবেদন। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, æরোযাবস্থায় তোমাদের কেউ যেন অশালীন ও অর্থহীন কথাবার্তায় লিপ্ত না হয়। কেউ যদি বাদানুবাদে অথবা ফাসাদে লিপ্ত হতে চায় তবে সে যেন এ কথা বলে দেয় যে, আমি রোজাদার।” (বুখারী)

উল্লেখ্য মৌখিক ফিৎনা থেকে বিরত থাকাই যেখানে রোজার বিশেষ তাগিদ সেখানে মৌলবাদী, জামাত-জঙ্গিরা বোমা হামলার দ্বারা সারাদেশে কত গভীর ফিৎনা তৈরি করেছে এবং করে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এদের সাথে ধর্মব্যবসায়ী তথাকথিত অন্যান্য ইসলামী দলগুলোরও খাছ সম্পর্ক দিন দিন উন্মোচিত হচ্ছে।

মূলত রসুন কোয়া কোয়া হলেও গোড়া যেমন এক তেমনি তথাকথিত ইসলামী দলগুলো আলাদা আলাদা নামে হলেও এদের চিন্তা, চেতনা ও উদ্দেশ্য একই। এদের আসল উদ্দেশ্য ইসলাম নয়। বরং ইসলামের নামে ক্ষমতা দখল। সেক্ষেত্রে ইসলামী আদর্শের খেলাফ যথা ছবি, বেপর্দা, নারী নেতৃত্ব মানা, লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচনে তথা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ বা বোমাবাজিতেও এরা অগ্রগামী।

স্মর্তব্য, রোযার মূল শিক্ষা হচ্ছে- তাক্বওয়া। তাক্বওয়া তাছাউফের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যা হক্ব ওলী আল্লাহগণের ছোহবতের দ্বারাই অর্জন সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, ইমামে আ’যম, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার ছোহবতের মাধ্যমে রোযার নির্যাস, তাক্বওয়া তথা তাছাউফ হাছিল করার তৌফিক দান করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়