সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৯৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক, উনার জন্য। যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম। যিনি আল্লাহ পাক, উনার হাবীব। আল্লাহ পাক, উনার মুহব্বতে যিনি এতই মশগুল যে, জীবনের সার্বক্ষণিক সাথী, একান্ত বিশ্বস্ত, বিচক্ষণ ছাহাবী উনাকে ‘বন্ধু’ হিসেবে গ্রহণ করেননি। তবে বলেছেন, ‘আল্লাহ পাক ব্যতীত অন্য কাউকে যদি বন্ধুরূপে কবুল করতাম তবে, তিনি হতেন আফজালূন নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।’

উল্লেখ্য, জুমাদাল উখরা মাস এ মহান ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উনার বিছাল শরীফ লাভের মাস হওয়ায় স্বভাবতই তা আলাদা গুরুত্ব ও তাৎপর্য রাখে।

সঙ্গতকারণেই আমরা এ মাসে অগাধ শ্রদ্ধার সাথে খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উনাকে স্মরণ করছি এবং বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটকালে গভীরভাবে উনার আলোচনা ও মূল্যায়নের অশেষ আবশ্যকতা বোধ করছি।

স্মরণীয় যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার বিছাল শরীফ-এর পরেই সাকীফায়ে বনী সায়েদায় স্থলাভিষিক্তের প্রসঙ্গ উঠলে, তিনি নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার হাদীছ শরীফ দ্বারাই সমাধান করেন, ভোট বা নির্বাচনের দ্বারা নয়। আর কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হাজারো গুণের সাথে নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার তরফ থেকে ইমামতির ইঙ্গিতপ্রাপ্ত ছাহাবী হওয়ায় উনার কাছেই সকলে বাইয়াত গ্রহণ করেন। এরপর থেকে তিনি ‘খলীফাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ হিসেবে অভিহিত হন।

উল্লেখ্য কম আক্বল, কম বুঝের কারণে অনেকেই মন্তব্য করে বসেন যে, æতিনি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ইসলামে গণতন্ত্রের ভিত তিনিই সর্বপ্রথম স্থাপন করেন।” (নাউযুবিল্লাহ)

মূলত এ কথাটি উনার শানে এতবড় অপবাদ যে, মন্তব্য করা হয়- উনার বিছাল শরীফ লাভের দিন মাটি যেমন থর থর করে কেঁপেছিল শোকে, আর এখন তা কেঁপে উঠছে উনার প্রতি মিথ্যা অপবাদ প্রয়োগের লজ্জাকর অপকর্মে।

স্মরণীয়, খুলাফায়ে রাশিদীন উনাদের কেউ গণতন্ত্র করেননি, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিতও হননি। হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সরাসরি মনোনিত করেন হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি বিছাল শরীফ লাভের পূর্ব মুহূর্তে এক ফরমানে উল্লেখ করেন, æরসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার  খলীফা, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উনার পক্ষ হতে মু’মিন মুসলমানদের প্রতি! আমি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আপনাদের খলীফা নিযুক্ত করলাম। উনাকে মানুন এবং উনার আদেশ পালন করুন।” (তারিখে ইয়াকুব নজফ, কানজুল উম্মাল)

এরপর হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  যখন নিজ শাহাদাতের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে পড়লেন, তখন তিনি হযরত আলি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত যুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ কুরাঈশদের মধ্য হতে ছয় জন বিশিষ্ট ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন যে, উনাদের মধ্য হতে খলীফা হবে। পরবর্তীতে এই ছয়জনের মধ্যে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সিদ্ধান্তদাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে খলীফা মনোনীত করেন। আর উনার পরবর্তীতে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  খলীফা মনোনীত হন।

অতএব জ্ঞাতব্য যে, খুলাফায়ে রাশিদীন উনাদের কেউ সার্বজনীন ভোটাধিকার, সংখ্যাগরিষ্ঠতা, গণতন্ত্র বা জমহুরিয়তের ভিত্তিতে নির্বাচিত হননি।

উল্লেখ্য, অধুনা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ যে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কনসেপ্ট গ্রহণ করেছে তার শতভাগ প্রতিফলিত হয়েছে খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা, একমাত্র উনাদের আমলেই। এছাড়া এ কনসেপ্ট কেবলমাত্র প্রচারণার মধ্যেই রয়ে গেছে, বাস্তবে নেই।

আধুনিক যুগে রাষ্ট্র শুধু উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থা নিয়েই মাথা ঘামায়। সে কারণে রাষ্ট্রের শীর্ষ থেকে নি¤œ পর্যন্তই কেবল লুটপাট চলেনা বরং রাষ্ট্রযন্ত্র নিজেও উৎপাদনের ক্ষেত্রে আদর্শিক মূল্যবোধ তথা ইসলামী নির্দেশনহীন হয়ে দুর্নীতির মূল কারণ ঘটায়।

প্রসঙ্গত রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের এদেশে; হাদীছ শরীফ-এর ভাষ্য অনুযায়ী- যে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর প্রদান ব্যতীত কেউ এক চুল পরিমাণ নড়তে পারবে না; তš§ধ্যে æকোন্ ভাবে সে অর্থ উপার্জন করেছিলো”? এবং æকোন্ পথে সে অর্থ ব্যয় করেছে?”

অন্যতম এ দুটি প্রশ্ন যদি খোদ রাষ্ট্রযন্ত্র নিজে পালন করত তাহলে স্বভাবতই প্রতিটি নাগরিক তাতে প্রভাবিত হতো।

বিগত জোট সরকার সামান্য শুল্ক লাভের আশায় বহু মদের কারখানার অনুমতি দিয়েছিলো। অথচ সংবিধানে তা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিরুৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে।

বলাবাহুল্য, খোদ সরকার যখন বিন্দু পরিমাণ দুর্নীতির জš§ দেয়, গোটা সরকারি বাহিনী তখন পাহাড়-সাগর পরিমাণ দুর্নীতির বিস্তার ঘটায়।

বিগত জোট সরকারে একথা ব্যাপকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

স্মর্তব্য, শুধু উৎপাদন আর বণ্টনেই রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্তব্য শেষ হতে পারে না। এবং অধুনা প্রচারিত কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কল্যাণসূচিও কথিত সীমারেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ হতে পারে না।

উদাহারণত বহিঃবিশ্ব কর্তৃক দেশীয় শ্রমিক বহিষ্কার, বিদেশের মাটিতে, দেশের শ্রমিকদের মৃত্যুঝুঁকি বৃদ্ধি, বিদেশে, দেশের শ্রমিক জেলখানায় বন্দি, ধরপাকড়, নির্যাতন এবং বিদেশ থেকে শ্রমিক লাশ হয়ে আসার কারণে যদি রাষ্ট্রযন্ত্র দায়বদ্ধতা গ্রহণ করতে পারে; তবে প্রবাসী শ্রমিকের লাশসহ গোটা জনসাধারণের লাশও দাফন করার পর পরিণতি কি হবে? সে প্রশ্নের আঙ্গিকে যাবতীয় পৃষ্ঠপোষকতা করার দায়-দায়িত্বও রাষ্ট্রযন্ত্রকে স্বীকার করতে হবে।

সরকার ভারত থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সফলতার পথে। সরকারের পক্ষ থেকে মোস্ট ওয়ান্টেড হিসেবে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশী ৬৯ জন নাগরিকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করতে সক্ষম হয়েছে।

এসব ঘটনা প্রতিভাত করে  যে, শুধু স্বদেশের মাটিতেই নয় বিদেশের মাটিতেও দেশের নাগরিক হিসেবে সরকারের করণীয় অনেক কিছু। যদি তাই হয়ে থাকে তবে মৃত্যুর পর নাগরিকের যখন অবস্থান হয় কবরের মাটিতে; যে কবর সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, æকবর দোযখের একটি টুকরা অথবা জান্নাতের একটি টুকরা” সে স্পর্শকাতর স্থানে নাগরিকের অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার, তার দায়-দায়িত্ব কীভাবে অস্বীকার করতে পারে?

ধর্মব্যবসায়ী মৌলানারা ধর্মের নামে অধর্মতেই ব্যস্ত ও অজ্ঞ থাকার কারণে এ বিষয়টি সরকারকেও বোঝাতে সক্ষম হয়নি। জনমনেও সচেতনতা তৈরি করতে পারেনি। পরকালের কল্যাণ সাধনে যাবতীয় পৃষ্ঠপোষকতা ব্যতীত তথা গুনাহর কাজগুলো বাধাগ্রস্ত করা এবং নেককাজগুলোর পরিবেশ তৈরিসহ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা প্রচারণার পৃষ্ঠপোষকতা ব্যতীত বাকি হাজারো কিছুর যোগান, মুসলমানের জন্য যে প্রকৃত ‘কল্যাণমূলক’ এর ধারণা গৃহীত হতে পারেনা- এসব কথা তারা ব্যক্ত করতে পারেনি।

তারা বরং প্রচারণা চালিয়েছে ও মত্ত থেকেছে হারাম ও নাজায়িয জঙ্গিপনায়, হরতালে, লংমার্চে, ধর্মব্যবসায়ী, ইসলামের দোহাই দিয়ে নির্বাচনে।

মূলত এসব উলামায়ে ‘ছূ’দের মিটিয়ে দিতে হলে অনিবার্যভাবে চাই রূহানী শক্তি। আর যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, উনার নেক ছোহবতের মাধ্যমেই সে কাঙ্খিত নিয়ামত বাঞ্ছিতভাবে হাছিল সম্ভব।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়