সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৩৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমস্ত প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

১৪ নভেম্বর ২০০৭। সারাদেশের আকাশ ছিল মেঘলা। আবহাওয়াবীদরা প্রথমে ৫ নম্বর সংকেত দিতে থাকেন। এবং তা রাত অবধি ৮নং বিপদ সংকেত গিয়ে পৌঁছে। ১৫ নভেম্বর সকালে ঘোষণা করা হয় সিডর নামের ঘূর্ণিঝড় ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের উপকূলে। দুপুর নাগাদ তা বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করবে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। অবশেষে এটি বাংলাদেশের আঘাত হানে ১৫ নভেম্বর দিবাগত রাত ৯টায়।

সর্বপ্রথম এটি আঘাত হানে দুবলারচরে। মুহূর্তেই ল-ভ- হয়ে যায় সব। পর্যায়ক্রমে এটি আঘাত হানে বরিশালের সকল উপকূলসহ পিরোজপূর, পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, ঝালকাঠিসহ বাংলাদেশের প্রায় ৩১টি জেলায়। এবং প্রচ- আঘাতে তুলার মতো উড়তে থাকে সব কিছু। এ যেন রোজ ক্বিয়ামতে হাশরের ময়দানের মতো।

সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি ডলার বা ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা এখনও সরকার পূরণ করতে পারেনি।

এর আগে আমাদের দেশে ১৯৭০ সালের পর সবচেয়ে প্রলয়ংকরী ঝড় হয়েছিলো ১৯৯১ সালে। প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার লোক ২৯শে এপ্রিল রাতে ক্যাটাগরি ৪ মাত্রায় আঘাত হানা সেই ঘূর্ণিঝড়ে মারা গিয়েছিলো।

আর ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর সকাল ৯:৫৬ মিনিটে ভোলা ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৫ লাখ লোক প্রাণ হারায়। সে আমলে এতে ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলার।

এছাড়া বন্যার কারণে বিভিন্ন সময়ে এদেশে ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ১৯৭০, ১৯৯১, ১৯৮৭, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ এবং ২০০৭ সালে বাংলাদেশে যে বন্যা হয়, তাতে জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের উত্তরে হিমালয়ের অবস্থান থাকায় এটি ভূমিকম্পনের ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। ১৮৯৭, ১৯০৫, ১৯৩৪ এবং ১৯৫০ সালে রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার চেয়েও বড় ধরনের চারটি ভূমিকম্পসহ গত ১০০ বছরে এই বেল্টে ১০-১২টি অতিমাত্রিক ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে। বলাবাহুল্য, এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে এদেশে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হয়েছে।

উল্লেখ্য, আমাদের দেশে যে পরিবারগুলো ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা দুর্যোগে স্বজন হারায়, আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যৎসামান্য রিলিফ বিতরণের পরে রাষ্ট্র তাদের কোনো খোঁজ-খবর রাখে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে কথিত পুনর্বাসন পর্যায়ের অথচ কাজ হলো এদের জীবনকে দুর্যোগপূর্ব পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাদের চাকরি, ব্যবসা, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, দুর্যোগ এলাকায় যে ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট, হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু শুধু বাংলাদেশ কেন? কোনো দেশের সরকারই তা পারেনি এবং পারবে না।

ত্রাণ কার্যক্রম এবং কর্মপদ্ধতি তথা সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তনের কথা মনে রেখে বাংলাদেশ সরকার ২০০৩ সালে পূর্ববর্তী ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়’ রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে তা ‘খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ’ হিসেবে পুনর্গঠিত হয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মনে করে, রাষ্ট্রের কাজ হলো রাষ্ট্রীয়ভাবে দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি নেয়া।

এক্ষেত্রে রয়েছে- সবরকম দুর্যোগ চিহ্নিত করা, সময়মতো দুর্যোগের পূর্বাভাস দেয়া, জনসাধারণকে অবহিত করা, উদ্ধার কাজ যেন তরান্বিত হয় তার পরিকল্পনা করে রাখা, নাগরিক এবং উদ্ধারকারীদের জন্য বিভিন্ন রকম ড্রিল, এক্সারসাইজ, ওয়ার্কশপ, ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। কিন্তু এসব করে ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগকে থামিয়ে বা বন্ধ করে দেয়া বা প্রাণহানি ও ক্ষতি থেকে সম্পূর্ণ রক্ষা করার ক্ষমতা রাষ্ট্রের বা বাংলাদেশের সরকারের নেই।

সেক্ষেত্রে সরকার বা জনগণের বাঁচার তথা নিরাপত্তা লাভের উপায় কি? বলাবাহুল্য, এর জবাব মুসলমান হিসেবে যেমন অজানা থাকা উচিত নয়, তেমনি রাষ্ট্র দ্বীন হিসেবে ইসলাম উনাকে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত বাংলাদেশের সরকারের জন্যও তা অবহিত হওয়া অনিবার্য।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “নিশ্চয়ই আমার হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উদাহরণ হলো হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম উনার কিস্তির ন্যায়। যে তাতে প্রবেশ করেছে বা আরোহন করেছে সেই নাযাত পেয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (সিররুশ শাহাদাতাইন)

অর্থাৎ হযরত আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে যারা মুহব্বত করবে তারা সকলেই নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “নিশ্চয়ই আমার হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনারা বনী ইসরাইলের হিত্তাতুন-এর ন্যায়। যারা তা বলেছে তারা নাজাত লাভ করেছে।” সুবহানাল্লাহ! (সিররুশ্ শাহাদাতাইন)

অর্থাৎ হযরত আওলাদুর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে যারা মুহব্বত করবে তারা সকলেই নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন- “তারকাসমূহ আসমানবাসীদের জন্য নিরাপত্তা দানকারী আর আমার বংশধর বা আওলাদ আলাইহিমুস সালামগণ উনারা হচ্ছেন যমীনবাসীদের জন্য নিরাপত্তা দানকারী। সুতরাং যখন আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ বা হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালামগণ উনারা (দুনিয়া থেকে) চলে যাবেন অর্থাৎ বিদায় গ্রহণ করবেন তখন দুনিয়াবাসী সকলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। অর্থাৎ তখন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, হাশিয়ায়ে মিশকাত শরীফ)

কাজেই বাংলাদেশের ৯৭ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান ও তাদের সরকারের উচিত- যাবতীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবার জন্য বর্তমান যামানায় অবস্থানকারী হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার পবিত্র আহাল পাক আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুখাপেক্ষী হওয়া। উনাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয় মহা তা’যীম, তাকরীম এবং জওক-শওক ও সর্বোচ্চ আর্থিক খিদমতের সাথে পালন করা ও চরম খুশি প্রকাশ করা। সুবহানাল্লাহ!

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়