সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৬৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুসাম্মত লুৎফা বেগম

সদর, চাঁদপুর

 

সুওয়াল: দেন মোহর কি পরিমাণ হওয়া বাঞ্চনীয় এবং কখন আদায় করা নিয়ম? মোহর সামাজিক অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে কথাটি কতটুকু সঠিক?

জাওয়াব: দেন মোহর যাহরায়ী শরীফ অনুযায়ী হওয়া বাঞ্চনীয় অর্থাৎ সুন্নত। সামাজিক অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে একথা সম্পূর্ণরূপে গুমরাহীমূলক। অবশ্যই দেন মোহর সম্মানিত সুন্নত মুবারক অনুযায়ী হওয়াই উচিত। কেননা প্রতিটি আমল বা কাজের ক্ষেত্রেই সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ অনুকরণ করার জন্য পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে আদেশ মুবারক করা হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে যিনি খ্বালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُوْلِ اللّٰـهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

অর্থ: অবশ্যই তোমাদের জন্য যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

উল্লেখ্য, সাধারণত সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ী আহলিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইন্নিাস সালাম উনাদের এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত খইরুল বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মোহরের পরিমাণ ছিল প্রায় পাঁচশত দিরহাম যা একশ সোয়া একত্রিশ তোলা রুপার মূল্যের সমান। এ পরিমাণ দেন মোহর সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, বিদআতুম মিন রসূলিল্লাহ, শাবীহাতু রসূলিল্লাহ, আন নূরুর রাবিআহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনারও ছিল। যার কারণে এ মোহরকে মোহরে যাহরায়ী শরীফও বলা হয়। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, বিবাহ-শাদীতে উক্ত মোহরে যাহরায়ী শরীফ ধার্য করাই উচিত এবং তা ফযীলতের কারণ।

সামর্থ থাকলে বিবাহ সম্পাদনের সাথে সাথেই মোহর আদায় করা উচিত এবং উত্তম। অন্যথায় পরেও আদায় করতে পারবে। মোহর আহলের প্রতি আহলিয়ার হক বা অধিকার স্বরূপ।

বিবাহের মধ্যে মোহর আদায় করা ওয়াজিব। অর্থাৎ অপরিহার্য শর্ত। মোহর ধার্য করতেই হবে এবং তা প্রদানও করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاٰتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً

অর্থ: তোমরা আহলিয়াদেরকে তাদের মোহর সন্তুষ্টচিত্তে প্রদান করো। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪)

অতএব, আহল বা স্বামীর তরফ থেকে আহলিয়া বা স্ত্রীকে অবশ্যই মোহর প্রদান করতে হবে।

সামাজিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে মোহর ধার্য করতে হবে; এ বক্তব্য ও বিশ্বাস সম্পূর্ণরূপে গুমরাহীমূলক। যা সম্মানিত শরীয়ত ও সম্মানিত সুন্নত উনার খিলাফ। বরং সম্মানিত শরীয়ত ও সম্মানিত সুন্নত হচ্ছে, সকলের জন্য মোহরে যাহরায়ী শরীফ ধার্য করা। অর্থাৎ বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী একশ সোয়া একত্রিশ তোলা রুপার মূল্য ধার্য করা।

মোহর আদায়ের পূর্বে আহাল যদি ইনতেকাল করে তবে আহালের সম্পত্তি থেকে মোহর আদায় করা ওয়াজিব। অন্যথায় ব্যভিচারের গুনাহ হবে।

 মুসাম্মত তাসলীমা আক্তার

সদর, নূরানীবাদ (নরসিংদী)

 সুওয়াল: শুধু তালাক দিলেই মোহর দিতে হবে। অন্যথায় নয়, বক্তব্যটি কি ঠিক?

জাওয়াব: না, বক্তব্যটি আদৌ ঠিক বা শুদ্ধ নয়। কেননা মোহর ধার্য ও আদায় করার বিষয়টি বিবাহের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তালাকের সাথে নয়।

তবে কোনো আহাল যদি সামর্থ না থাকার কারণে অথবা অন্য কোন কারণে বিবাহের সাথে সাথে আহলিয়াকে সম্পূর্ণ মোহর না দিয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে আহাল ও আহলিয়ার মধ্যে বনাবনী না হওয়ার দরুন উভয়ের মধ্যে তালাক বা বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তখন অবশ্যই আহালের তরফ থেকে আহলিয়াকে সম্পূর্ণ মোহর পরিশোধ বা প্রদান করতে হবে।

শুধু তাই নয়, বিবাহের পর কোনো আহাল যদি তার আহলিয়ার সাথে নির্জন অবস্থান না করে থাকে এমন অবস্থায় উভয়ের মাঝে বিচ্ছেদ হয়ে যায় তবুও আহলিয়াকে অর্ধেক দেন মোহর দেয়া আহালের প্রতি কর্তব্য। আর নির্জন অবস্থান হলে তো সম্পূর্ণ মোহরই আহলিয়ার হক বা প্রাপ্য।

 মুসাম্মত সাবরীন জাহান

নোয়াখালী

 সুওয়াল: আহলিয়ার বোনের সাথে আহালের অবৈধ সম্পর্ক হলে আহলিয়া তালাক হবে কিনা? এক্ষেত্রে আহলের প্রতি কি শাস্তি বর্তাবে?

জাওয়াব: আহলিয়ার বোনের সাথে আহালের অবৈধ সম্পর্ক হলে তালাক হবে না। তবে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া হলো উক্ত আহলের প্রতি হদ তথা মৃত্যুদ-ের শাস্তি বর্তাবে যদি খিলাফত জারী থাকে। বর্তমানে যেহেতু খিলাফত ব্যবস্থা জারী নেই সেক্ষেত্রে উক্ত অপরাধের জন্য আহালকে খালিছ তওবা-ইস্তগফার করতে হবে। তার তওবা কবুল হলে সে পরকালে শাস্তি হতে রেহাই পাবে। অন্যথায় সে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।

 মুসাম্মত আফরোজা আক্তার

দিনাজপুর

 

সুওয়াল: বোরকা কেমন হওয়া উচিৎ?

জাওয়াব: বোরকা কালো হওয়াই উচিৎ। কারণ বোরকা পরিধান করা হয়ে থাকে বেগানা বা পরপুরুষের সাথে পর্দা রক্ষা করার জন্য এবং পরপুরুষের নিকট যাতে সৌন্দর্য প্রকাশিত না হয় সেজন্য। কালো ব্যতীত অন্য রংয়ের কাপড় পরিধানে সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়, সেজন্য শুধুমাত্র কালো রঙের বোরকা পরিধান করাই আবশ্যক।

 মুসাম্মত মালিহা আক্তার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

 সুওয়াল: পাতলা ও টাইট বা চিপা পোশাক পরিধান করা কতটুকু ঠিক?

জাওয়াব: যেসব পাতলা ও টাইট পোশাক পরিধান করলে শরীর দেখা যায় তা পরিধান করা জায়িয নেই। এমন ধরণের পোশাক পরিধান করা উচিৎ যেন শরীর দেখা না যায়। কারণ পোশাক পরিধানের উদ্দেশ্যই হচ্ছে শরীর বা দেহ আবৃত রাখা।

কাজেই, যে পোশাক পরলে দেহ ভালভাবে আবৃত হয় না বরং দেহ দেখা যায় তা কখনোই জায়িয হতে পারে না। তা পরা আর না পরা উভয়ই সমান।

পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যেই সুন্নতী পোশাক পরিধান করাই ফরয। উক্ত পোশাকই উত্তম পোশাক। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلِبَاسُ التَّقْوٰى ذٰلِكَ خَيْرٌ

অর্থ: তাক্বওয়া বা সুন্নতী পোশাকই হচ্ছে উত্তম পোশাক।

অর্থাৎ যেসব পোশাক সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পরিধান করেছেন উক্ত পোষাক পুরুষদের জন্য পরিধান করাটাই তাক্বওয়া ও সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ ফরয। আর যেসব পোশাক হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা এবং হযরত মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনারা পরিধান করেছেন উক্ত পোশাক মহিলাদের জন্য পরিধান করাটাই তাক্বওয়া ও সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ ফরয।

সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত অনুযায়ী পুরুষদের সুন্নতী পোশাক মুবারক হচ্ছে সেলাইবিহীন লুঙ্গি, সেলোয়ার। কাপড়ের গুটলীযুক্ত নিছফু সাক কোণাবন্ধ কোর্তা। সাদা, সূতি কাপড়ের চার টুকরা বিশিষ্ট টুপি। সাদা, সবুজ ও কালো রংয়ের পাগড়ী, পাঞ্জেগানা নামাযে ও সবসময় পরিধানের জন্য ৭ হাত বিশিষ্ট, তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য ৩ হাত বিশিষ্ট, আর ঈদের নামাযে কখনো কখনো ১২ হাত বিশিষ্ট পাগড়ী পরিধান করা। পাগড়ির উপরে সাদা রুমাল পরিধান করা। বিশেষ ক্ষেত্রে জুব্বা ও চাদর পরিধান করা।

সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত অনুযায়ী মহিলাদের সুন্নতী পোশাক মুবারক হচ্ছে সেলোওয়ার পরিধান করা। ফুলহাতা বিশিষ্ট নিছফু সাক কোনাবন্ধ গুটলীযুক্ত ক্বমীছ বা কোর্তা পরিধান করা। ওড়না পরিধান করা। চাদর ব্যবহার করা। বোরকা পরিধান করা।

 

মীর মুহম্মদ ছাবের আলী

বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা

মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন,ঢাকা

মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

 

সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।

এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়ছালা হচ্ছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক  অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, প্রত্যেক অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এ ফতওয়াটি ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য। এর খিলাফ কোন ফতওয়াই ছহীহ নয়, দলীলভিত্তিকও নয় এবং গ্রহণযোগ্যও নয়।

আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খ-ন করবো। ইন্শাআল্লাহ!

স্মর্তব্য যে, আমরা প্রথমত: প্রমাণ করেছি যে, মসজিদের ভিতরে, নামায পড়ার উদ্দেশ্যে চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোন আসন ইত্যাদি প্রবেশ করানোই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।

দ্বিতীয়ত: প্রমাণ করেছি যে, চেয়ারে বসে নামায পড়াও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বা হারাম। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা, হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত তাবি-তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই অসুস্থ অবস্থাতে কখনো চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন এরূপ কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। তাই চেয়ারে বসে নামায পড়া সুস্পষ্ট বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ।

তৃতীয়ত: আমরা প্রমাণ করেছি যে, চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। কারণ চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে ফরয ক্বিয়াম তরক হয়। আর নামাযে ফরয তরক করলে নামায বাতিল  হয়।

চতুর্থত: আমরা প্রমাণ করবো যে, চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। কারণ চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে চেয়ারে টেক লাগানো হয়। আর সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছে নামায অবস্থায় কোন কিছুর মধ্যে টেক দিয়ে, হেলান দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী। আর নামায মাকরূহ তাহরীমী হলে দোহরানো ওয়াজিব।

যেমন, বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের প্রথম খ-ের ১১৯ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-

ويكره ان يصلى وهو يعتمد على حائط او اسطوانة

অর্থ: “দেয়ালে, খুঁটিতে বা অন্য কিছুতে টেক দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।”

শরহুন নিক্বায়া” কিতাবের  ১ম খণ্ডের ২১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(التخصر)… التوكؤ على…عصا

অর্থ: “(তাখাচ্ছুর)… অর্থাৎ নামাযের মধ্যে লাঠিতে বা খুঁটিতে বা অন্য কিছুতে টেক দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।”

ফতহুল কাদীর মা’য়াল কিফায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৫৭ উল্লেখ আছে-

هو ان يصلى متكئا على عصى

অর্থ: “লাঠিতে বা খুঁটিতে বা অন্য কিছুতে টেক দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।”

ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের প্রথম খণ্ডের ১০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

والاتكاء على العصا …فى الفرائض … على الاصح

অর্থ: “আর বিশুদ্ধমতে …ফরয নামাযের মধ্যে … লাঠিতে বা খুঁটিতে বা অন্য কিছুতে টেক দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।”

হাশিয়াতুত তাহ্তাবী” আলা মারাকিউল ফালাহ্্ শারহে নূরুল ইজাহ্্ কিতাবের ২৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(والتخصر) … هو ان يتكئ على عصا فى الصلاة

অর্থ: “(তাখাচ্ছুর)… অর্থাৎ নামাযের মধ্যে লাঠিতে বা খুঁটিতে বা অন্য কিছুতে টেক দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।”

হাশিয়াতুত তাহ্তাবী” আলা মারাকিউল ফালাহ্্ কিতাবের ২৩৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

ولا شك فى كراهة الاتكاء فى الفرض

অর্থ: “নিঃসন্দেহে ফরয নামাযের মধ্যে লাঠিতে বা খুঁটিতে বা অন্য কিছুতে টেক দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।”

আল বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ان يتوكأ فى الصلاة على عصا

অর্থ: “নামাযের মধ্যে লাঠিতে বা খুঁটিতে বা অন্য কিছুতে টেক দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।”

আল বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২১ পৃষ্ঠায় আরোও উল্লেখ আছে-

ولا شك فى كراهة الاتكاء فى الفرض

অর্থ: “নিঃসন্দেহে ফরয নামাযের মধ্যে লাঠিতে বা খুঁটিতে বা অন্য কিছুতে টেক দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।”

হেদায়া মা’য়াদ দেরায়া” কিতাবের ১৪০ পৃষ্ঠার ৪নং হাশিায়ায়  উল্লেখ আছে-

التخصر … هو التوكى على عصا

অর্থ: “(তাখাচ্ছুর)… অর্থাৎ নামাযের মধ্যে লাঠিতে বা খুঁটিতে বা অন্য কিছুতে টেক দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।”

ফতওয়ায়ে কাজীখান” কিতাবে উল্লেখ আছে-

ويكره ان يصلى وهو يعتمد على حائط او اسطوانة 

অর্থ: “দেয়ালে, খুঁটিতে বা অন্য কিছুতে টেক দিয়ে, ভর দিয়ে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।” উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনার দ্বারা সুস্পষ্ঠভাবে প্রমাণিত হলো যে, নামায অবস্থায় কোন কিছুর মধ্যে টেক দিয়ে, হেলান দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী। শুধু তাই নয়; লাঠি, খুঁটি, দেয়াল ছাড়াও নামাযী ব্যক্তি যদি তার নিজের শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর টেক দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করে, তথাপিও নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।

যেমন বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব “হাশিয়াতুত তাহ্্তাবী” আলাদ “দুররিল মুখতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২০২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

فلو قام على عقبيه او اطراف اصابعه او رافعا احد رجليه عن الارض …يكره

অর্থ: “যদি নামাযী ব্যক্তি তার পায়ের গোড়ালীদ্বয়ের উপর দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে অথবা তার পায়ের আঙ্গুলের  অগ্রভাগের উপর দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে অথবা তার দু’পায়ের এক পা যমীন থেকে উঠিয়ে রেখে (অর্থাৎ এক পায়ের উপর ভর দিয়ে বা এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে) নামায আদায় করে; তাহলে নামায…মাকরূহ তাহরীমী হবে।”

আল জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ্” কিতাবের ৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ويكره القيام على احد القدمين فى الصلاة

অর্থ: “নামাযে দু’পায়ের এক পায়ের উপর  ক্বিয়াম করে (অর্থাৎ এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে) নামায আদায় করলে, নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।”

হাশিয়াতুত তাহ্তাবী” আলা মারাকিউল ফালাহ্্ কিতাবের ১৫০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ويكره على احدى الرجلين

অর্থ: “নামাযী ব্যাক্তি দু’পায়ের এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে নামায আদায় করলে, নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।”

ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খ-ের ৬৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ويكره القيام على احدى القدمين

অর্থ: “দু’পায়ের এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা, মাকরূহ তাহরীমী।”

ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ويكره القيام على احد القدمين فى الصلاة

অর্থ: “নামাযে দু’পায়ের এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা, মাকরূহ তাহরীমী।”

হাশিয়াতুত তাহ্তাবী” আলা মারাকিউল ফালাহ্ কিতাবের ১৫০ পৃষ্ঠায়  আরো উল্লেখ আছে-

اصل القيام لا امتداده

অর্থ: (অর্থাৎ নামাযে ক্বিয়াম করা ফরয। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা ফরয।) আর এই ক্বিয়ামের মুল হলো এমন ক্বিয়াম করা; যাতে কোন প্রকার সাহায্য-সহায়তা নেয়া যাবে না। অর্থাৎ এমনভাবে ক্বিয়াম করতে হবে বা দাঁড়াতে হবে যাতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি খুশু-খুযূর সহিত, বিনয়ের সহিত ক্বিয়াম করেছেন বা দাঁড়িয়েছেন।

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, নামায অবস্থায় কোন কিছুর মধ্যে টেক দিয়ে, হেলান দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী। শুধু তাই নয়; লাঠি, খুঁটি, দেয়াল ছাড়াও নামাযী ব্যক্তি যদি তার নিজের শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর টেক দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করে, তবুও নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে। সেই সাথে এটাও প্রতিভাত হয়েছে যে, যেহেতু নামাযে ক্বিয়াম করা ফরয অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা ফরয। সেহেতু এই কি¦য়ামের মুল হলো এমনভাবে ক্বিয়াম করা যাতে কোন প্রকার সাহায্য-সহায়তা নেয়া যাবে না। অর্থাৎ এমনভাবে ক্বিয়াম করতে হবে বা দাঁড়াতে হবে যাতে প্রমানিত হয় যে, তিনি খুশু-খুযূর সহিত, বিনয়ের সহিত নামাযে ক্বিয়াম করেছেন বা নামাযে দাঁড়িয়েছেন।

আর সেটাই  মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন

قوموا لله قانتين

অর্থ: “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য একান্ত আদব ও বিনয়ের সাথে দাঁড়াও।” (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩৮)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ১ম খ-ের ২৯০ ও ২৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قوله فرضها التحريمة … والقيام لقوله تعالى وقوموا لله قانتين اى مطيعين والـمراد به القيام فى الصلاة باجماع المفسرين وهو فرض فى الصلاة.

অর্থাৎ “নামাযের ফরয সমূহের মধ্যে প্রথমটি হলো তাকবীরে তাহরীমা বলা। আর দ্বিতীয়টি হলো ক্বিয়াম করা। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায পড়া। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য অত্যন্ত বিনয়ের সহিত অর্থাৎ একান্ত আদব ও আনুগত্যের সহিত দাঁড়িয়ে যাও।” আর وقوموا لله قانتين  এই পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নামাযে ক্বিয়াম করা অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায পড়া যা সমস্ত মুফাসসির রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, ফরয নামাযের মধ্যে ক্বিয়াম করা ফরয। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে নামায পড়া ফরয।”

সুতরাং চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। কারণ চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে চেয়ারে টেক লাগানো হয়। আর সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছে নামায অবস্থায় কোন কিছুর মধ্যে টেক দিয়ে, হেলান দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী। আর নামায মাকরূহ তাহরীমী হলে নামায দোহরানো ওয়াজিব।

যেমন বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১০৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

فان كانت تلك الكراهة كراهة تحريم تجب الاعادة

অর্থ: “নামাযের মধ্যে যদি মাকরূহ তাহরীমী হয়, তাহলে নামায দোহরানো ওয়াজিব।”

হিদায়া মা’য়াদ দেরায়া” কিতাবের ১৪৩ পৃষ্ঠার ৩নং হাশিায়ায়  উল্লেখ আছে-

وتعاد … بين كونه كراهة تحريم فيجب الاعادة

অর্থ: “নামায মাকরূহ তাহরীমী হলে, নামায দোহরানো ওয়াজিব।”

ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবে উল্লেখ আছে-

فان كانت تلك الكراهة كراهة تحريم تجب الاعادة

অর্থ: “নামাযের মধ্যে যদি মাকরূহ তাহরীমী হয়, তাহলে নামায দোহরানো ওয়াজিব।”

দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে-

كل صلاة اديت مع كراهة التحريم تجب اعادتها.

অর্থ: “প্রত্যেক নামায যা মাকরূহ তাহরীমীর সাথে আদায় হয়, তা দোহরিয়া পড়া ওয়াজিব।”

হাশিয়াতুত তাহ্্তাবী” আ’লা মারাকিউল ফালাহ্্ কিতাবের ২৩৩ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-

كل صلاة اديت مع الكراهة فانها تعاد

অর্থ: “প্রত্যেক নামায যা মাকরূহ তাহরীমীর সাথে আদায় হয়, তা অবশ্যই দোহরিয়া পড়তে হবে।”

মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবে উল্লেখ আছে-

كل صلاة اديت مع الكراهة فانها تعاد

অর্থ: “প্রত্যেক নামায যা মাকরূহ তাহরীমীর সাথে আদায় হয়, তা অবশ্যই দোহরিয়া পড়তে হবে।”

নূরুল ইজাহ” কিতাবের ৮৮ পৃষ্ঠার ৬নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-

وتعاد الصلاة مع كونها … وجوبا

অর্থ: “নামায মাকরূহ তাহরীমীর সাথে আদায় হলে, তা  দোহরিয়া পড়া …ওয়াজিব।”

ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

كل صلاة اديت مع كراهة التحريم تجب اعادتها.

অর্থ: “প্রত্যেক নামায যা মাকরূহ তাহরীমীর সাথে আদায় হয়, তা দোহরিয়া পড়া ওয়াজিব।”

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। কারণ চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে চেয়ারে টেক লাগানো হয়। আর সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছে নামায অবস্থায় কোন কিছুর মধ্যে টেক দিয়ে, হেলান দিয়ে, ভর দিয়ে নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী। আর নামায মাকরূহ তাহরীমী হলে নামায দোহরানো ওয়াজিব। সুতরাং যারা  চেয়ারে বসে নামায পড়বে, তাদের নামায দোহরানো ওয়াজিব।

 

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল: মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর- ৪০)

আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার একখানা অর্থ মুবারক হচ্ছেন ‘অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী’:

ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীক্বত, ছাহিবুল ইলমিল আউওয়ালি ওয়াল ইলমিল আখিরি, ইমামু আইম্মাতি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘য়াহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি শুধু মুজাদ্দিদই নন; বরং তিনি হচ্ছেন পূর্বের এবং পরের সমস্ত মুজাদ্দিদগণ উনাদের সাইয়্যিদ। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে আখাছ্ছুল খাছ বিশেষ ব্যক্তিত্ব মুবারক। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা উনাকে উনাদের সম্মানিত অসীম ইলম মুবারক এবং এমন আখাছ্ছুল খাছ তা‘য়াল্লুক্ব-নিসবত মুবারক হাদিয়া মুবারক করেছেন, যা ইতিপূর্বে আর কেউ হাছিল করতে পারেনি। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে তিনি সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ এবং সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরসহ সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার যাবতীয় বিষয়ে সর্বোত্তম বিশুদ্ধ আক্বীদাহ মুবারক এবং সর্বোচ্চ হুসনে যন মুবারক শিক্ষা দিচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ! যা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের চিন্তা ও কল্পনার উর্ধ্বে।সুবহানাল্লাহ! সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী আমরা সকলে যদি এই সর্বোত্তম বিশুদ্ধ আক্বীদাহ মুবারক এবং সর্বোচ্চ হুসনে যন মুবারক নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারি, তাহলে আমরা ইহকাল ও পরকালে সর্বোচ্চ হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে পারবো আরো পারবো আখাছ্ছুল খাছ হাক্বীক্বী তা‘য়াল্লুক্ব-নিসবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করতে। সুবহানাল্লাহ! সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী আমরা সকলেই যেন সেই সম্মানিত নিয়ামত মুবারক লাভে ধন্য হতে পারি সেজন্য আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি অত্যন্ত দয়া-ইহসান মুবারক করে আমাদের মাঝে সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ এবং সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে সম্মানিত আহলু সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার সর্বোত্তম বিশুদ্ধ আক্বীদাহ মুবারকসমূহ প্রকাশ করে যাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ! মূলত, এটা হচ্ছে তিনি যে ‘অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী’ সেই সম্মানিত অসীম ইলম মুবারক উনারই একটি বহিঃপ্রকাশ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তাই আমরা এখন এ বিষয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ! এজন্য আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম যিনি সম্মানিত অসীম ইলম মুবারক উনার মালিক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বদম মুবারক-এ বুছা দিয়ে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানার্থে আখাছ্ছুল খাছ দয়া-ইহসান, ফয়েয-তাওয়াজ্জুহ, ইলম এবং তাওফীক্ব মুবারক ভিক্ষা চাচ্ছি, যেন তিনি যেভাবে চান, সেভাবে সম্মানিত আহলু সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার সর্বোত্তম বিশুদ্ধ আক্বীদাহ মুবারকসমূহ সকলের মাঝে সহজ-সরলভাবে উপস্থাপন করতে পারি এবং এই সর্বোত্তম বিশুদ্ধ আক্বীদাহ মুবারক ও সর্বোচ্চ হুসনে যন মুবারক আমরা সকলেই নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারি। আমীন!

ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীক্বত, ছাহিবুল ইলমিল আউওয়ালি ওয়াল ইলমিল আখিরি, ইমামু আইম্মাতি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘য়াহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মানিত ও পবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা নাযিলকৃত একমাত্র মনোনীত, পরিপূর্ণ এবং সন্তুষ্টি মুবারক প্রাপ্ত সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন হচ্ছেন ‘সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম’। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবেন।” সুবহানাল্লাহ!

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ও পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ.

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হচ্ছেন ‘সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম’।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আল ‘ইমরান শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯)

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْـمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِـىْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا.

অর্থ: “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন পূর্ণ করে দিলাম, আমি তোমাদের উপর আমার সম্মানিত নিয়ামত মুবারক পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং আমি সন্তুষ্টি মুবারক চিত্তে সম্মানিত ও পবিত্র ইসলাম উনাকে তোমাদের জন্য সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” সুবহানাল্লাহ! (দ সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)

 

মুহম্মদ আব্দুর রহমান মাছুম

শিবগঞ্জ, বগুড়া

 

সুওয়াল: সম্প্রতি এক কুখ্যাত মাসিক পত্রিকায় হজ্জের অজুহাতে ছবি তোলাকে বৈধ বলা হয়েছে।  এক্ষেত্রে দলীল হিসেবে পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ ১৭৩, পবিত্র সূরা আনআম শরীফ ১১৯ ও ১৪৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, তীব্র প্রয়োজন হারাম বস্তুকে সাময়িক হালাল করে দেয়। তাই হজ্জের ফরয আদায় করতে হারাম ছবি তোলা সাময়িক বৈধতা পাবে। নাউযুবিল্লাহ!

জাওয়াব: উক্ত পত্রিকার বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের খিলাফ বা বিরোধী ও কুফরী হয়েছে। কারণ হারাম বা ফাসিকী কাজ করে তথা ছবি তুলে, বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা যাবেনা। এটা সরাসরি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। যেমন পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ১৯৭ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

فَمَنْ فَرَضَ فِيْهِنَّ الْـحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوْقَ وَلَا جِدَالَ فِى الْـحَجِّ ۗ وَمَا تَفْعَلُوْا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللّٰـهُ ۗ وَتَزَوَّدُوْا فَاِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوٰى ۚ وَاتَّقُوْنِ يَا اُولِى الْاَلْبَابِ.

অর্থ: “যার প্রতি হজ্জ ফরয সে যেন হজ্জ পালনকালে অশ্লীল-অশালীন কাজ না করে এবং কোন প্রকার ফাসিকী কাজ না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। আর তোমরা যে নেক কাজ করো তা মহান আল্লাহ পাক তিনি জানেন। তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করো। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯৭)

বলার অপেক্ষা রাখে না, ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়া প্রকাশ্য ফাসিকী ও অশ্লীল-অশালীন কাজ। উক্ত হারাম কাজ আমভাবে সকলের জন্য নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও হজ্জের ফরয পালনকারীদের জন্য খাছভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

কাজেই, হজ্জ করার জন্য ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়া ইত্যাদি হারাম কাজ করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বিধান মোতাবেক হারাম। তাছাড়া হজ্জে মাবরূর তথা হজ্জ কবুল হওয়ার জন্য শর্তই হচ্ছে সমস্ত প্রকার হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকা।

শুধু তাই নয়, হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য শুধু পাথেয় বা অর্থ-সম্পদ থাকাই শর্ত নয়। বরং আরো অনেক শর্ত রয়েছে। তন্মধ্যে হারাম থেকে বেঁচে থাকাও একটি অন্যতম শর্ত। হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য সমস্ত শর্ত পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কারো প্রতি হজ্জ ফরয হবে না।

মোটকথা, হজ্জ পালনকালে যেখানে সমস্ত হারাম থেকে বেঁচে থাকা শর্ত করা হয়েছে, সেই হারাম কাজ আবার হজ্জের জন্য বৈধ বা হলাল হয় কি করে? কখনই বৈধ হতে পারে না।

এরা এমন গ-মূর্খ যে, মাসয়ালা হচ্ছে এক বিষয়ে আর দলীল দিয়েছে অন্য বিষয়ে। তাহচ্ছে, যখন কেউ হালাল খাদ্যের ব্যবস্থা করতে চরমভাবে নিরুপায় হয়ে যায় অথবা কেউ ৩ দিন অভুক্ত বা না খেয়ে থাকে তখন জীবন বাঁচানোর তাগিদে তার জন্য আবশ্যিক পরিমাণ হারাম খাদ্য গ্রহণ করাটা মুবাহ হয়। কিন্তু তা বৈধ বা হালাল হয়ে যায়না। সেটাই সুওয়ালে উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহ উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে।

যেমন পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ১৭৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا اُهِلَّ بِه لِغَيْرِ اللّٰـهِ ۖ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَا اِثْمَ عَلَيْهِ ۚ انَّ اللّٰـهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ

অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক মৃত প্রাণী, রক্ত, শূকরের গোশত এবং মহান আল্লাহ পাক ব্যতীত অন্যের নামে যবাইকৃত পশুকে খাদ্যবস্তু রূপে হারাম ঘোষণা করেছেন। কিন্তু যে অনন্যোপায় অথচ অন্যায়কারী অথবা সীমালঙ্ঘণকারী নয় তার জন্য কোন গুনাহ হবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৩)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর বা ব্যাখ্যায় সুপ্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে মাযহারীতে উল্লেখ রয়েছে যে, যারা ক্ষুধার্তের কারণে অনন্যোপায় (সীমালঙ্ঘন না করে) হারাম বস্তু ভক্ষণ করে তাদের জন্য কোনো গুহনাহ হবে না। কেননা তারা অন্যায়কারী নয়, আর এমতাবস্থায় খাদ্য আস্বাদনও তাদের উদ্দেশ্য থাকে না। উদ্দেশ্য থাকে শুধুমাত্র জীবন বাঁচানো। এ রকম নিরুপায় অবস্থায় যতটুকু খাদ্য গ্রহণ করলে মৃত্যুর আশঙ্কা রোধ হয়, ততোটুকুই গ্রহণ করা মুবাহ। এর অতিরিক্ত নয়। এক্ষেত্রে হারাম বস্তুগুলো হালাল বলা কুফরী হবে বরং মুবাহ  বলতে হবে মাজুর হিসেবে।

অনুরূপ পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ১১৯ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَمَا لَكُمْ اَلَّا تَأْكُلُوا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّٰهِ عَلَيْهِ وَقَدْ فَصَّلَ لَكُمْ مَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ اِلَّا مَا اضْطُرِرْتُمْ اِلَيْهِ

অর্থ: যে পশুর উপর (যবেহ কালে) মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উচ্চারিত হয়েছে তা হতে না খাওয়ার ব্যপারে তোমাদের কি কারণ থাকতে পারে? অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন যেগুলো তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। কিন্তু যখন তোমরা নিরুপায় হয়ে যাও তখন হারাম বস্তুগুলোর মাধ্যমে জীবন রক্ষা করতে পারো।”

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরে মাযহারীতে উল্লেখ রয়েছে, যখন জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে তখন জীবন রক্ষার জন্য হারাম বস্তু ভক্ষণ করা যেতে পারে। হারাম তখনও হারামই থাকে। কিন্তু জীবন রক্ষার অত্যাবশ্যক তাগিদে তখন হারাম ভক্ষণ করলে গুনাহ হবে না মুবাহ হিসেবে।

একইভাবে, পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার ১৪৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

قُلْ لَا أَجِدُ فِي مَا اُوحِيَ الَيَّ مُحَرَّمًا عَلٰى طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا اَنْ يَكُوْنَ مَيْتَةً اوْ دَمًا مَسْفُوحًا اَوْ لَحْمَ خِنْزِيرٍ فَانَّهُ رِجْسٌ أَوْ فِسْقًا اُهِلَّ لِغَيْرِ اللّٰـهِ بِهِ ۚ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَإِنَّ رَبَّكَ غَفُورٌ رَحِيمٌ

অর্থ: বলে দিন, আমার প্রতি যে ওহী মুবারক নাযিল হয়েছে, উনার মধ্যে লোকেরা যা আহার করে তারমধ্যে হারাম কিছুই আমি পাই না মৃত, প্রবাহমান রক্ত, শূকরের গোশত ব্যতীত। কেননা এসব অপবিত্র অথবা অবৈধ মহান আল্লাহ পাক তিনি  ব্যতীত অন্যের নাম নেয়ার কারণে। তবে কেউ অবাধ্য না হয়ে এবং সীমালঙ্ঘণ না করে তা গ্রহণে বাধ্য হলে আপনার প্রতিপালক তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে- فمن اضطر অর্থ: হারাম ভক্ষণে বাধ্য হলে غير باغ অর্থ: অবাধ্য না হয়ে ولا عاد অর্থ: সীমালঙ্ঘন না করে। অর্থাৎ জীবন রক্ষার জন্য প্রবৃত্তির অনুসরণ না করে অবাধ্যতার উদ্দেশ্য না নিয়ে হারামকে হালাল মনে না করে এবং সীমালঙ্ঘন না করে ও প্রয়োজন অনুযায়ী হারাম বস্তু গ্রহণ করতে পারে মুবাহ হিসেবে।

উল্লেখ্য, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হালাল সমূহ ও হারাম সমূহ স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে। তাই কোন হারাম কখনো হালাল হবে না তদ্রুপ কোন হালালও কখনো হারাম হবে না। আর হজ্জের বিষয়টি জীবন বাঁচানোর মতো কোনো বিষয় নয়। তাই হজ্জের ক্ষেত্রে তাদের সেই অজুহাত মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়, বরং সম্পূর্ণরূপেই পরিত্যাজ্য।

যার প্রমাণ তাদের মুরুব্বী তথাকথিত শাইখুল হাদীছ আজিজুল হক নিজেও। যেমন সে তার লিখিত ‘আল কুরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা’ নামক বইয়ের ৫৬ পৃষ্ঠায় কি লিখেছে দেখুন- “বর্তমানে হজ্জ করতে মহিলাদের যেহেতু পর্দার ক্ষতি হয়, তাই মহিলাদের উপর হজ্জ ফরয হলে, বদলী হজ্জ করানো চাই। কারণ এই হজ্জের ন্যায় বরকতময় ছফরে অনেক মহিলা দেখা যায় মাহরাম পুরুষ ব্যতীত রওয়ানা হয়ে যায়, যা কবীরা গুনাহ ও নাজায়িয। অনেক সময় দেখা যায় মাহরাম সাথে থাকা সত্ত্বেও মহিলারা হজ্জের ছফরে পর্দাহীন চলে ও অনেক অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। তাই বদলী হজ্জ করানোই মহিলাদের জন্য উত্তম। এ সম্পর্কে আল্লামা কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

لَا يَلِيْقُ بِالْـحِكْمَةِ اِيْـجَابٌ فَرْضٌ عَلٰى وَجْهٍ يَفُوْتُه فَرْضٌ اٰخَرُ.

অর্থ: এমন হিকমত বা কৌশল অবলম্বন করা উচিত হবে না, যা দ্বারা একটি ফরয আদায় করতে গিয়ে অন্য একটি ফরয ছুটে যায়।” (রাহনুমায়ে হুজ্জাজ)

তাদের উক্ত মুরুব্বীর মতে একজন মহিলার যদি টাকা থাকার পরও বেপর্দা হওয়ার আশঙ্কায় হজ্জে যাওয়া না যায় তবে পুরুষের টাকা থাকার পরও হারাম কাজ তথা ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়ার আশঙ্কা থাকা সত্বে তার উপর হজ্জ ফরয হবে কি করে বা সে হজ্জে যাবে কিভাবে?

তাছাড়া খাছ লোক ও আম লোকের মাসয়ালা তো এক রকম নয়। আম লোকের জন্য যেটা ছওয়াবের কাজ খাছ লোকের জন্য সেটা গুনাহের কারণ। কাজেই আম লোক সর্বদাই ছবি তোলে, বেপর্দা হয় বা হারাম কাজ করে, তাই তারা যদি ছবি তুলে বেপর্দা হয়ে হজ্জ করে; তাদের মাসয়ালা আলাদা। কিন্তু খাছ লোকের জন্য অর্থাৎ আলিম-উলামা, পীর-মাশায়েখ বা হাদীদের জন্য কখনোই ছবি তুলে বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা জায়িয নেই।

অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে যেটা হারাম সেটা পবিত্র মক্কা শরীফ-পবিত্র মদীনা শরীফসহ সমগ্র বিশ্বের মৌলবীরা একমত হয়ে জায়িয বললেও তা কখনই জায়িয হবে না, হতে পারে না।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ছবি তুলে ও বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা যাবে না, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২১৭ ও ২৫৪তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ পাঠ করুন।

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব