সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৬২তম সংখ্যা | বিভাগ:

মাওলানা ক্বারী এ. কে. এম জুনাইদ আল হুসাইনী

মুহম্মদ আব্দুল আউওয়াল

মাধবপুর, হবিগঞ্জ

 

সুওয়াল: আমাদের মাধবপুর থানায় চৌমুহনী ইউনিয়নের মঙ্গলপুর গ্রামে মূল ওয়াকফকৃত মসজিদের জায়গায় বারান্দা রেখে, মসজিদের নতুন আরেকজন দাতার জায়গায় মসজিদ বানানো যাবে কিনা। পুরাতন মসজিদের ওয়াকফকৃত জায়গায় বারান্দাসহ সামনের জায়গায় ঈদগাহ বানানো যাবে কিনা। পুরাতন মসজিদের ওয়াকফকৃত জায়গায় ঈদগাহ বা ঈদের নামায পড়া ও ঈদগাহ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে কিনা?

জাওয়াব: মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জায়গায় মসজিদের বারান্দা করা যাবে। আর মসজিদ বড় বা সম্প্রসারণ করার জন্য নতুন ওয়াকফকৃত জায়গায় মসজিদ তৈরি করাও যাবে।

কিন্তু মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জায়গায় ঈদগাহ বানানো যাবে না; তবে ঈদের নামায পড়া যাবে।

স্মরণীয় যে, ওয়াক্ফের মাসয়ালা হচ্ছে, যে জায়গা যে কাজের জন্য ওয়াক্ফ করা হবে বা হয়েছে, সে জায়গা সে হিসেবে প্রকাশ করতে হবে।

এ সম্পর্কে সুপ্রসিদ্ধ ফিক্বাহর কিতাব হিদায়া, ফতহুল ক্বাদীর ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

لانه لا بد من العمارة ليبقى على التابيد فيحصل مقصود الواقف

অর্থ: কেননা ওয়াক্ফ করা সম্পত্তি যেন স্থায়ীভাবে বিদ্যমান থাকে এবং ওয়াক্ফকারীর উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়।

অতএব, সম্পত্তি যেজন্যে ওয়াক্ফ করা হয়েছে সে নামে প্রকাশ করতে হবে।

দলীলসমূহ: আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, হিদায়া, ফতহুল ক্বাদীর ইত্যাদি ফিক্বাহর কিতাব।

 

মুহম্মদ আব্দুল্লাহিল বাক্বী

ধামইরহাট, নওগাঁ

 

সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন মাসে সম্মানিত নুবুওওয়াত লাভ করেন। কেউ বলেন, রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে কেউ বলেন, রমাদ্বান শরীফ মাসে। কোন মতটি সঠিক?

জাওয়াব: সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টিকাল হতেই সম্মানিত নবী-রসূল ও হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ সম্মানিত নবী, রসূল ও হাবীবুল্লাহ হিসেবেই তিনি সৃষ্টি হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كنت اول النبين فى الخلق واخرهم فى البعث.

র্অথ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সৃষ্টিসমূহের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম নবী হিসেবে সৃষ্টি হয়েছি। কিন্তু আমি প্রেরিত হয়েছি সব নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের  শেষে। (কানযুল উম্মাল শরীফ ৩১৯১৬, দাইলামী শরীফ ৪৮৫০, মিরকাত শরীফ ১১/৫৮)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-

عن حضرت ميسرة الفجر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كنت نبيا وادم بين الروح والجسد.

র্অথ: “হযরত মাইসারাতুল ফাজর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তখনো নবী যখন হযরত আদম আলাইহসি সালাম তিনি রূহ ও দেহ মুবারকে অবস্থান করছিলেন।” (তারীখে বুখারী শরীফ, আহমদ শরীফ, আলহাবী শরীফ, ইত্তিহাফুসসাআদাত শরীফ, কানযুল উম্মাল শরীফ, দাইলামী শরীফ, ত্ববরানী শরীফ, আবু নঈম শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ- ১১/৫৮)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت مطرف بن عبد الله بن الثخير رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كنت نبيا بين الروح والطين من ادم.

অর্থ: “হযরত মুর্তরফ বিন আব্দুল্লাহ ইবনুছ ছিখখীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি তখনো নবী যখন হযরত আদম আলাইহসি সালাম তিনি রূহ ও মাটি অবস্থায় ছিলেন।” (ইবনে সা’দ, কানযুল উম্মাল শরীফ ৩২১১২)

كنت نبيا وادم بين الـماء والطين.

অর্থ: আমি তখনো নবী ছিলাম, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি পানি ও মাটিতে ছিলেন। (মিরকাত শরীফ ১১/৫৮)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

كنت نبيا ولاماء ولاطين.

অর্থ: আমি তখনো নবী ছিলাম যখন পানিও ছিল না, মাটিও ছিল না। (মিরকাত শরীফ ১১/৫৮)

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুকাল থেকেই সাইয়্যিদুল আম্বিয়া, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

কাজেই, উনার সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক ও সম্মানিত রিসালাত মুবারক লাভ করা নয়, বরং সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক ও সম্মানিত রিসালাত মুবারক আনুষ্ঠানিকভাবে সরাসরি সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন সম্মানিত রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ সূরা ‘আলাক্ব শরীফ উনার প্রথম ৫খানা পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার মধ্য দিয়ে। আর সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে যে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে তা সম্মানিত লওহে মাহফূয থেকে দুনিয়ার আসমানে অর্থাৎ প্রথম আসমানে অবস্থিত ‘বাইতুল ইজ্জত’ নামক সম্মানিত ঘর মুবারক উনার মধ্যে একসাথে নাযিল হয়েছে।

 

মুহম্মদ আশরাফুল হক

নওগাঁ।

সুওয়াল: ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কত সংখ্যক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের হাফিয ছিলেন এবং কত সংখ্যক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সংগ্রহে ছিল?

জাওয়াব: হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের হাকিম ছিলেন অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম রাখতেন। সুবহানাল্লাহ!

 

মুহম্মদ আব্দুর রহমান

নওগাঁ।

সুওয়াল: একটি পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম, দুরূদে ইবরাহীম শরীফ নামাযের বাইরে পড়া মাকরূহ। উক্ত মতটি কতটুকু সঠিক?

জাওয়াব: হ্যা, দুরূদে ইবরাহীম শরীফ শুধু সম্মানিত নামায উনার মধ্যেই পড়তে হবে। সম্মানিত নামায উনার বাইরে উক্ত দুরূদ শরীফ পড়া যাবে না। কারণ উক্ত দুরূদ শরীফ উনার মধ্যে সম্মানিত সালাম শরীফ উনার বিষয়টি উল্লেখ নেই।

অথচ যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শানে সম্মানিত ছলাত শরীফ পেশ করার সাথে সাথে সম্মানিত সালাম শরীফ পেশ করার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما

অর্থ: নিশ্চয়ই খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ পেশ করেন। হে ঈমানদাররা! উনার মুবারক শানে তোমরাও ছলাত শরীফ পেশ করো এবং সালাম শরীফ পেশ করো সালাম পেশ করার মতো অর্থাৎ আদব ও সম্মান সহকারে সালাম শরীফ পেশ করো।

কাজেই, সম্মানিত ছলাত শরীফ উনার সাথে সম্মানিত সালাম শরীফ উনার বিষয়টিও অবশ্যই থাকতে হবে। এটা সম্মানিত ফরয-ওয়াজিব উনার অন্তর্ভুক্ত। যার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারকে সংক্ষিপ্ত যে দুরূদ শরীফখানা পড়া হয় বা পেশ করা হয় উনার মধ্যেও সম্মানিত সালাম শরীফ পেশ করার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। উক্ত দুরূদ শরীফখানা হচ্ছেন-

صلى الله عليه وسلم

(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

অর্থাৎ এমন কোনো দুরূদ শরীফ নেই যার মধ্যে সম্মানিত সালাম শরীফ উনার বিষয়টি উল্লেখ নেই।

মূল কথা হলো, প্রতিটি দুরূদ শরীফ উনার মধ্যেই সম্মানিত সালাম শরীফ উনার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। তবে সম্মানিত দুরূদে ইবরাহীম শরীফ উনার মধ্যে সম্মানিত সালাম শরীফ উনার বিষয়টি উল্লেখ না থাকার যে কারণ তা হচ্ছে- উক্ত দুরূদে ইবরাহীম শরীফ পাঠের পূর্বে যে সম্মানিত তাশাহ্হুদ শরীফ পড়া হয় উনার মধ্যে সম্মানিত সালাম শরীফ উনার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

যেমন সম্মানিত তাশাহ্হুদ শরীফ উনার মধ্যে সম্মানিত সালাম শরীফ হচ্ছেন-

السلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركاته

অর্থ: আয় আমার পেয়ারা রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতিও সালাম এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত ও বরকতসমূহ।

উক্ত সম্মানিত সালাম শরীফ উনার বিষয়টি উল্লেখ থাকার কারণেই পরে পঠিত সম্মানিত দুরূদে ইবরাহীম শরীফ উনার মধ্যে কেবল সম্মানিত ছলাত শরীফ উনার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

সম্মানিত তাশাহ্হুদ শরীফ উনার মধ্যে সালাম শরীফ আর সম্মানিত দুরূদে ইবরাহীম শরীফ উনার মধ্যে ছলাত শরীফ উভয় মিলে মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক

صلو عليه وسلموا تسليما

“নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ পেশ করো এবং আদব ও সম্মান সহকারে সালাম শরীফ পেশ করো” উনার আমল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

অর্থাৎ সম্মানিত নামায উনার মধ্যেও সালাম শরীফ পেশ করার বিষয়টিকে বাদ দেয়া হয়নি। তাহলে সম্মানিত নামায উনার বাইরে কি করে সালাম শরীফ পেশ করার বিষয়টিকে বাদ দেয়া যেতে পারে? কখনোই তা হতে পারে না। যদি বাদ দেয়া হয়, তাহলে সেটা সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক লঙ্ঘনের শামিল হয়ে যায়।

অতএব, সম্মানিত সালাম শরীফ ব্যতীত শুধু ছলাত শরীফ সম্বলিত দুরূদ শরীফ অসম্পূর্ণ; যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারকে ব্যবহার করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের সম্মত নয়।

 

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।

ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

 

সুওয়াল : মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাই১িহছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উসীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর ৩৬)

মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই হচ্ছেন সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম:

পাঁচ. فَيَكُوْنُ اِعْطَاؤُهُ الْمَالَ حَثْيًا “তিনি উনার দু’হাত মুবারক ভরে অঢেল, বেহিসাব ধন-সম্পদ বিলিয়ে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ!

আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত প্রতিটি খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারকই মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মামদূহ মুুর্শিদ ক্বিবলা খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সাথে পরিপূর্ণরূপে মিলে যায়। এছাড়া অতীতের অন্য কোনো মুজাদ্দিদ, গাউছ, কুতুব, নক্বীব-নুক্বাবা, ওলী-আবদাল, ইমাম ও খলীফা উনাদের সাথে আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত উপরোক্ত খুছূছিয়াত তথা বৈশিষ্ট্য বা শর্ত মুবারকগুলো মিলে না। আর না মিলাটাই স্বাভাবিক এবং মিলাটাই হচ্ছে অস¦াভাবিক, অসম্ভব এবং অবান্তর।

কেননা ইতঃপূর্বে যামানার শেষের দিক আসেনি, বর্তমান যামানার ন্যায় ফিতনা-ফাসাদসমূহ চরমভাবে প্রকাশ পায়নি, আহলু বাইত শরীফ তথা সাইয়্যিদা শাবাবি আহলিল জান্নাহ, ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার এবং ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের মুবারক বংশধর উনাদের মধ্য থেকে ‘আস সাফফাহ’ লক্বব মুবারক উনার অধিকারী কোন খলীফাও আসেননি এবং যামানার শেষের দিকে তথা বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতকে তথা বর্তমান যামানায় মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আমাদের প্রাণের আক্বা মামদূহ মুুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ব্যতীত আস সাফফাহ লক্বব মুবারক উনার অধিকারী তথা-

১. অধিক খুন বা রক্ত বহানেওয়ালা,

২. সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তিদানকারী,

৩. মুক্তির দিশারী,

৪. সর্বশ্রেষ্ঠ আযাদদানকারী,

৫. অসীম দাতা,

৬. বড় উদার,

৭. অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী,

৮. সুবক্তা,

৯. সর্বোত্তম ওয়ায়িজ,

১০. সর্বশ্রেষ্ঠ নছীহতকারী,

১১. সর্বোত্তম ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকারী,

১২. সর্বোত্তম বর্ণনাকারী,

১৩. মিষ্টভাষী,

১৪. বিশুদ্ধভাষী,

১৫. বাগ্মী,

১৬. সাখী বা সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল,

১৭. কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা, গুমরাহ, মুনাফিক্ব¡ ও উলামায়ে সূ’দেরকে ধ্বংসকারী,

১৮. নাহক্বকে নিশ্চিহ্নকারী,

১৯. তাগুতী শক্তিকে বিলীনকারী,

২০. বিশুদ্ধ,

২১. খাঁটি,

২২. পূত-পবিত্র,

২৩. সর্বোত্তম ও সুমহান চরিত্র মুবারক উনার অধিকারী,

২৪. অনুসরণীয়,

২৫. উসওয়াতুন হাসানাহ,

২৬. পবিত্র অর্থাৎ নূরে মুকাররাম, নূরে মুয়ায্যাম,

২৭. মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে গুণান্বিত হয়ে কথা মুবারক বলনেওয়ালা,

২৮. সাখী বা হাবীবুল্লাহ,

২৯. অপরিসীম ফায়িযদানকারী,

৩০. বেমেছাল ইছলাহদানকারী ইত্যাদি সম্মানিত ছিফত বা গুণ মুবারক উনাদের অধিকারী অন্য কোনো খলীফা প্রকাশ পাননি- যিনি মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার ন্যায় দু’হাত মুবারক ভরে অঢেল, বেহিসাব ধন-সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছেন এবং কাফির-মুশরিক, ইহুদী, খ্রিস্টান, হিন্দু-বৌদ্ধ, মজূসী, মুনাফিক্ব¡ ও উলামায়ে সূ’দেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। সুতরাং এই কথা আবারো দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই হচ্ছেন আলোচ্য সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের মধ্যে এত সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকার পরও যারা মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, খলীফাতুল মুসালিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমাদের প্রাণের আক্বা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাকে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ হিসেবে মেনে নিবে না এবং এই ব্যাপারে চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করবে, তাদের দায়িত্ব হলো সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ ও সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের  মাধ্যমে তাদের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করা। অন্যথায় তাদের দাবি মিথ্যা বলে সাব্যস্ত হবে। নাঊযুবিল্লাহ!

উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক বর্ণনা দ্বারা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই হচ্ছেন, সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ এবং পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাদের মধ্য থেকে অন্যতম একজন বিশেষ খলীফা আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম। সুবহানাল্লাহ! উনার মুবারক উসীলায় অতিশীঘ্রই অবশ্য অবশ্যই সম্মানিত খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ!

তাই প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জিন-ইনসান সকলের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- উনাকে চেনা, উনাকে খলীফা হিসেবে মেনে নেয়া, উনাকে ইতিয়াত তথা অনুসরণ-অনুকরণ করা, উনার মুবারক আদেশ-নির্দেশ মুতাবিক চলা। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমাদের প্রাণের আক্বা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনাকে চেনার, উনার মুবারক নির্দেশিত পথে চলার, উনার হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক লাভ করার এবং উনার হাক্বীক্বী গোলাম হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

 

মুহম্মদ আলাউদ্দীন আল আজাদ

মতলব, চাঁদপুর

 

সুওয়াল:  কিছুদিন পূর্বে বিডিনিউজ ২৪ ডটকম ব্লগে ‘মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামি আঙ্গিক’ শিরোনামে হাসান মাহমুদ নামে মুসলমান নামধারী এক মুনাফিক কিছু বাতিল ও মনগড়া দলীল জোগাড় করে ‘মূর্তিকে জায়িয প্রমান করার অপচেষ্ট করেছে। তার উক্ত বক্তব্যের  মাধ্যমে যে সকল বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তাহলো-

(১) সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও সীরাত গ্রন্থ ।

(২)  প্রতিমা, ভাস্কর্য ও মূর্তি  এক বিষয় নয়।

(৩) কুরআন শরীফে মূর্তি  ভাস্কর্য জায়িয বলে উল্লেখ আছে।

(৪) হাদীছ শরীফে মূর্তি  ভাস্কর্য জায়িয বলা হয়েছে।

(৫) পৃথিবীর অনেক দেশে মূর্তি  ভাস্কর্য   রয়েছে তাই তা  জায়িয।

এখন আমার প্রশ্ন হলো তার উক্ত বক্তব্যগুলো কতটুকু সঠিক হয়েছে ? পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ  থেকে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।

জাওয়াব:  হারাম মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামী আঙ্গিক শিরোনামে মুসলমান নামধারী মুনাফিক, ইহুদীর চর হাসান মাহমূদ উরফে কাফির মাগদূব যে বক্তব্য দিয়েছে, তার উক্ত বক্তব্যসমূহ সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সঠিক তো হয়ই নি। বরং সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমুলক হয়েছে। কেননা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে অর্থাৎ সম্মানিত কুরআন শরীফ, সম্মানিত হাদীছ শরীফ, সম্মানিত ইজমা শরীফ, সম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে  প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি ইত্যাদি তৈরী করা, করানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো, সম্পূর্ণ রূপে হারাম ও নাজায়িয। চাই তা আরাধনা বা  উপাসনার উদ্দেশ্যে হোক অথবা সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে হোক অথবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই হোক না কেন।

আর প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি ইত্যাদি এগুলোকে হালাল বা বৈধ বলা, হালাল বা বৈধ মনে করা কাট্টা কুফরী। মুসলমান পরিচয় দিয়ে যারা কুফরী করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়।

আর সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মুরতাদের ফায়সালা হলো, তার স্ত্রী তালাক হবে যদি বিয়ে করে থাকে এবং এক্ষেত্রে পুনরায় তওবা না করে, বিয়ে না দোহরানো ব্যতীত তার স্ত্রীর সাথে বসবাস করা বৈধ হবেনা। আর এ অবৈধ অবস্থায়  সন্তান হলে সে সন্তানও অবৈধ হবে। হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে যদি হজ্জ করে থাকে, সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে, তার ওয়ারিশসত্ব বাতিল হবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য। যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে; অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ-। কেননা সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, তিন কারণে মৃত্যুদ- দেয়া জায়িয। যথা- ১. ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। ২. ঐ যিনাকার বা যিনাকারিনী, যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা । ৩. যে অন্যায়ভাবে কাউকে ক্বতল করে, তাকে।

আর মুরতাদ মারা যাবার পর যারা জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগীতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণ উনাদের  কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। এমনকি মুসলমানের ন্যায়ও দাফন করা যাবেনা। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।

অতএব, হারাম মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামী আঙ্গিক শিরোনামে মুসলমান নামধারী মুনাফিক, ইহুদীর চর হাসান মাহমূদ উরফে কাফির মাগদূব হারামকে হালাল ফতওয়া দেয়ার কারণে তার উপর মুরতাদের হুকুম বর্তাবে।

নিম্নে পর্যায়ক্রমে তার উল্লিখিত প্রতিটি বক্তব্যের দলীল ভিত্তিক খ-নমুলক জাওয়াব প্রদান করা হলো। যেমন প্রথমত: সে তার বক্তব্যের মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছে যে, (১) সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও সীরাত গ্রন্থ ।

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, মুলত ইহুদীর চর হাসান মাহমূদ উরফে কাফির মাগদূবের  উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল। কেননা সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হচ্ছেন ৪টি যথাঃ (১) পবিত্র কুরআন শরীফ, (২) পবিত্র হাদীছ শরীফ, (৩) পবিত্র ইজমা শরীফ (৪) পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ। উল্লেখিত মাগদূব সম্মানিত শরীয়ত উনার চারটি দলীল উনাদের মধ্যে প্রথম ২টি দলীল উল্লেখ করে তৃতীয় ও চতুর্থ দলীল উল্লেখ না করে মনগড়াভাবে তৃতীয় দলীল হিসেবে সীরত গ্রন্থকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে যা কাট্টা মিথ্যা ও কুফরী।

এ প্রসঙ্গে সর্বজনমান্য, বিশ্ববিখ্যাত উছূলে ফিক্বাহ উনার কিতাব থেকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো যা কিতাবে উল্লেখ আছে-

اعلم ان اصول الشرع ثلثة الكتاب والسنة واجماع الامة والاصل الرابع القياس

অর্থ: “জেনে রাখুন, নিশ্চয়ই সম্মানিত শরীয়ত উনার ভিত্তি হলো ৩টি (১) পবিত্র কুরআন শরীফ, (২) পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, (৩) উম্মত উনাদের পবিত্র ইজমা শরীফ অর্থাৎ ইখতিলাফ পূর্ণ মাসয়ালায় উম্মতে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে  মুজতাহিদ উনাদের একমত এবং (৪)  চতুর্থটি  হলো পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ।” (আল মানার, নূরুল আনওয়ার ফী শারহিল মানার)

“উছূলে বাযদূবী” কিতাবের ৫নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

اعلم ان اصول الشرع ثلثة الكتاب والسنة والاجماع والاصل الرابع القياس

অর্থ: “জেনে রাখুন, নিশ্চয়ই সম্মানিত শরীয়ত উনার ভিত্তি হলো ৩টি (১) পবিত্র কুরআন শরীফ, (২) পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, (৩) পবিত্র ইজমা শরীফ অর্থাৎ ইখতিলাফ পূর্ণ মাসয়ালায় সম্মানিত মুজতাহিদ উনাদের একমত এবং (৪) চতুর্থটি  হলো পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ।” (উছূলুশ শাশী)

“উছূলে ফিকাহ” কিতাবের ৩নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

والادلة الشرعية اربعة الكتاب والسنة والاجماع والقياس

অর্থ: “ সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হলো ৪টি (১) পবিত্র কুরআন শরীফ, (২) পবিত্র সুন্নাহ শরীফ, (৩) পবিত্র ইজমা শরীফ অর্থাৎ ইখতিলাফ পূর্ণ মাসয়ালায় সম্মানিত মুজতাহিদ উনাদের একমত এবং (৪) চতুর্থটি  হলো পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ।”

উপরোক্ত সর্বজনমান্য, বিশ্ববিখ্যাত উছূলে ফিক্বাহ উনাদের কিতাব থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হচ্ছেন ৪টি যথাঃ (১) পবিত্র কুরআন শরীফ, (২) পবিত্র হাদীছ শরীফ, (৩) পবিত্র ইজমা শরীফ  (৪) পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, সীরাত গ্রন্থ সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল নয়।

অতএব, হারাম মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামী আঙ্গিক শিরোনামে মুসলমান নামধারী মুনাফিক, ইহুদীর চর হাসান মাহমূদ উরফে কাফির মাগদূব তার বক্তব্যের মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছে যে সীরাত গ্রন্থও সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল! তার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল বানোয়াট ও ডাহা মিথ্যা বলেই প্রমাণিত হলো। আর এটাই স্বভাবিক যে, মুসলমান নামধারী মুনাফিক ইহুদীর চরেরা চাকচিক্য ও ডাহা মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে সাধারণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করবে। এবং সেই সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, ইহুদীর চর হাসান মাহমূদ উরফে কাফির মাগদূব তার বক্তব্যের মাধ্যমে সীরাত গ্রন্থকে সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হিসেবে চালিয়ে দিয়ে সাধারণ মুসলমানদেরকে ধোকা দিয়েছে।

উল্লেখ্য যে, সীরাত গ্রন্থ সমূহের বর্ণনা সমূহ তখনই দলীল হিসেবে গ্রহনযোগ্য হবে, যখন তা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ  সম্মত হবে। আর সীরাত গ্রন্থ সমূহের  যে সকল বর্ণনা সমূহ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের খিলাফ হবে তা দলীল হিসেবে কখনোই গ্রহনযোগ্য হবে না।

সুতরাং আবারো প্রমাণিত হলো যে, সীরাত গ্রন্থ সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল নয়। বরং সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হচ্ছেন ৪টি (১) পবিত্র কুরআন শরীফ, (২) পবিত্র হাদীছ শরীফ, (৩) পবিত্র ইজমা শরীফ  (৪) পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ।

অতএব, মুসলমান নামধারী মুনাফিক ইহুদীর চর হাসান মাহমূদ উরফে কাফির মাগদূব তার বক্তব্যের মাধ্যমে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সাথে সীরাত গ্রন্থকেও সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হিসেবে চালিয়ে দিয়ে সাধারণ মুসলমানদেরকে ধোকা দিয়েছে।

দলীলসমূহঃ (১) আল মানার, (২) নূরুল আনওয়ার ফী শারহিল মানার, (৩) উছূলে বাযদূবী, (৪) উছূলুশ শাশী, (৫) উছূলে ফিক্বাহ, (৬) উছূলে কারখী, (৭) কানযূল উছূল ইলা মা’রিফাতিল উছূল।

 

মুহম্মদ মুঈনুল মিল্লাত

মিরপুর, ঢাকা

 

সুওয়াল: যিহার কাকে বলে? যিহারের কাফফারা ও হুকুম কি? কোনো নিয়ত ছাড়া আমার আহলিয়াকে বললাম, তোমার পেটের এই অংশ আমার মায়ের পেটের অংশের মতো। এতে কি যিহার হবে? দয়া করে জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: ظهار (যিহার) অর্থ পিঠের সাথে তুলনা দেয়া। স্বীয় আহলিয়া বা স্ত্রীর সাথে নিরিবিলি অবস্থান না করার জন্য বা নিরিবিলি অবস্থানকে নিজের জন্য হারাম করে নেয়ার উদ্দেশ্য নিজের মা-বোন ইত্যাদি মাহরাম ব্যক্তিদের এমন কোনো অঙ্গের সাথে স্বীয় স্ত্রীর অঙ্গের তুলনা দেয়া, যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি দৃষ্টি দেয়া হারাম। যেমন পিঠ, পেট, উরু ইত্যাদি।

উল্লেখ্য যে, হাত, পা, মুখম-লের সাথে তুলনা দিলে ظهار হবে না। কেননা এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দিকে দৃষ্টি দেয়া মাহরাম ব্যক্তিদের জন্য জায়িয।

যেমন কেউ তার আহলিয়াকে হারাম করার উদ্দেশ্যে বললো যে, তুমি আমার মায়ের মতো কিংবা তোমার পেট বা পিঠ আমার মায়ের পেট বা পিঠের মতো। তুমি আমার নিকট আমার মায়ের সমতুল্য। এই সব অবস্থায় দেখতে হবে, এর দ্বারা তার উদ্দেশ্য কি? যদি উদ্দেশ্য হয় যে, তা’যীমী-বুযুর্গীতে, সীরত-ছূরতে মায়ের মতো অথবা তোমার বয়স অনেক বেশি, বয়সে আমার মায়ের সমান, তাহলে এরূপ বলায় যিহার হবে না। আর যদি বলার সময় কোনো নিয়ত না থাকে, এমনি বলে ফেলেছে তাতেও যিহার হবে না।

কিন্তু যদি তালাক বা ছেড়ে দেয়ার নিয়ত থেকে থাকে, তাহলে এক তালাকে বায়িন হবে। আর যদি তালাক দেয়ার নিয়ত না থাকে, বরং মতলব শুধু এই যে, যদিও তুমি আমার আহলিয়া বা স্ত্রী, তোমাকে তালাক দিচ্ছি না, তবে তোমার সাথে কখনো নিরিবিলি অবস্থান করবো না, তোমার সাথে নিরিবিলি অবস্থান করা আমার জন্য হারাম করে নিলাম। ভরণ-পোষণ নিয়েই পড়ে থাক। একথায় তালাক দেয়ার নিয়ত নেই, তবে নিরিবিলি অবস্থান হারাম করে নিয়েছে। তাকেই যিহার বলে। কাজেই, আপনার বর্ণনা মতে আপনার এক্ষেত্রে যিহার হয়নি বটে, কিন্তু এরূপ কথা বার্তা বলা থেকে বিরত থাকা উচিত।

ظهار (যিহার)-এর হুকুম: ظهار (যিহার) দ্বারা স্বীয় আহলিয়া বা স্ত্রী সাময়িকভাবে হারাম হয়। কাফফারা আদায় না করা পর্যন্ত নিরিবিলি অবস্থান এবং নিরিবিলি অবস্থানের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী কাজগুলো করা হরাম। কাফফারা আদায় করলে আবার তা জায়িয হবে। সেক্ষেত্রে পুনরায় নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন হবে না।

কাফফারা: ظهار যিহার-এর কাফফারা রোযার কাফফারার ন্যায়। একজন গোলাম আযাদ বা মুক্ত করতে হবে। যদি সামর্থ্য না থাকে, তাহলে একাধারে দু মাস রোযা রাখতে হবে। যদি এতে সামর্থ্যবান না হয় তাহলে ৬০ জন মিসকীনকে খাদ্য দান করতে হবে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالَّذِيْنَ يُظَاهِرُوْنَ مِنْ نِّسَائِهِمْ ثُمَّ يَعُوْدُوْنَ لِمَا قَالُوا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مِّنْ قَبْلِ ان يَتَمَاسَّا ۚ ذٰلِكُمْ تُوعَظُوْنَ بِه ۚ وَاللّـهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

অর্থ: “যারা তাদের আহলিয়া বা স্ত্রীর সাথে যিহার করে অতঃপর নিজেদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তাদের কাফফারা হচ্ছে, একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি গোলামকে আযাদ করবে। এটা তোমাদের জন্য উপদেশ। তোমরা যা করো সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি খবর রাখেন।” (পবিত্র সূরা মুজাদালাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ০৩)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِن قَبْلِ اَن يَّتَمَاسَّا ۖ فَمَن لَّمْ يَسْتَطِعْ فَاِطْعَامُ سِتِّيْنَ مِسْكِينًا ۚ

অর্থ: “যার সামর্থ্য নেই সে ব্যক্তি একজন অপরজনকে স্পর্শ করার পূর্বে একাধারে দুই মাস রোযার রাখবে।” আর সে এতেও যদি অক্ষম হয়, তাহলে ষাটজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে।” (পবিত্র সূরা মুজাদালাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ০৪)

মীর মুহম্মদ ছাবের আলী

বায়তুল মোকাররম মার্কেট, ঢাকা

মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, সংসদ ভবন,ঢাকা

মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

 

সুওয়াল: বর্তমানে মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার ব্যাপারে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, মসজিদের ভিতরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা জায়িয নেই। আবার কেউ বলছে জায়িয। উভয়েই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে দলীল দিয়ে থাকে।

এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করবো? বহুল প্রচারিত দলীলভিত্তিক মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এ এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সঠিক ফায়সালা তুলে ধরলে সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হতো।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে মসজিদের ভিতরে বা মসজিদের বাহিরে চেয়ারে বসে নামায আদায় করার সঠিক ফায়ছালা হচ্ছে, মসজিদের ভিতরে হোক অথবা মসজিদের বাহিরে হোক, দাঁড়াতে সক্ষম হোক  অথবা দাঁড়াতে অক্ষম হোক, প্রত্যেক অবস্থাতেই চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ অথবা অনুরূপ (পা ঝুলে থাকে এমন) কোনো আসনে বসে নামায আদায় করা কাট্টা হারাম, নাজায়িয ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং নামায বাতিল হওয়ার কারণ। এ ফতওয়াটি ছহীহ, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য। এর খিলাফ কোনো ফতওয়াই ছহীহ নয়, দলীলভিত্তিকও নয় এবং গ্রহণযোগ্যও নয়।

আমরা ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহ পেশ করার পাশাপাশি যারা চেয়ার, টেবিল, টুল ও বেঞ্চে বসে নামায পড়াকে জায়িয বলে, তাদের সে সমস্ত বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা খ-ন করবো। ইন্শাআল্লাহ!

উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা, হযরত তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত তাবি-তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কেউই অসুস্থ অবস্থাতেও কখনো চেয়ারে বসে নামায পড়েছেন এরূপ কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। অথচ পবিত্র নামাযসহ প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ মুবারক রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ اللّـهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

অর্থ: “অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

আর তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিহ্্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (সুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তা যেরূপ সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, তদ্রূ মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন তাও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে চেয়ারে বসে নামায পড়ার বিষয়ে এত মতভেদের কি কারণ থাকতে পারে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন, সেটা দেখলেই তো সমস্ত মতভেদ দূরীভূত হয়ে যায়।

যেমন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে   ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-

عن حضرت مالك بن الحويرث رضى الله تعالى عنه قال قال لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم صلوا كما رايتمونـى اصلى.

অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে হুয়াইরিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে বলেন, “তোমরা ঐভাবে নামায পড়ো, যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

তাই আসুন এখন আমরা দেখে নেই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করা অবস্থায় (অসুস্থাবস্থায়) কিভাবে পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

যেমন, “মিশকাত শরীফ” কিতাবের ১০২পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عن حضرت عبيد الله بن عبد الله رحمة الله عليه قَالَ دَخَلْتُ عَلَى حضرت عَائِشَةَ عليها السلام فَقُلْتُ أَلاَ تُحَدّثِينِى عَنْ مَرَضِ رسول الله صلى الله عليه وسلم قالت بلى ثقل النبى صلى الله عليه وسلم فقال اصَلّىَ النَّاسُ فقلنا لا يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلمَ وهُمْ يَنْتَظِرُونَكَ قال ضَعُوا لِى مَاءً فِى الْمِخْضَبِ قالت فَفَعَلْنَا فَاغْتَسَلَ فذهب لِيَنُوءَ فَأُغْمِىَ عَلَيْهِ ثُمَّ أَفَاقَ فَقَالَ أَصَلَّى النَّاسُ قُلْنَا لاَ هُمْ يَنْتَظِرُونَكَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم َقَالَ ضَعُوا لِي مَاءً فِى الْمِخْضَبِ قالت فقعد فَاغْتَسَلَ ثُمَّ ذَهَبَ لِيَنُوءَ فاغمى عليه ثم افاق فقال اصلى الناس قلنا لا هم  ينتظرونك يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قال ضعوا لى ماء فى الـمخضب فقعد فاغتسل ثم ذهب لينوء فاغمى عليه ثم افاق فقال اصلى الناس قلنا لا هم  ينتظرونك يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وَالنَّاسُ عُكُوفٌ فِى الْمَسْجِدِ يَنْتَظِرُونَ النبى صلى الله عليه وسلم لِصَلاَةِ الْعِشَاءِ الاخرة فَاَرْسَلَ النبى صلى الله عليه وسلم اِلى ابـى بَكْرٍ عليه السلام باَنْ يصلى بِالنَّاسِ فَاتاه الرَّسُولُ فَقَالَ انَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَأْمُرُكَ أَنْ تُصَلِّىَ بِالنَّاسِ فقال  اَبُوْ بَكْرٍ عليه السلام وكان رَجُلاً رَقِيقًا  يَا عُمَرُ عليه السلام صَلِّ بالناس فَقَالَ له عُمَرُ عليه السلام أَنْتَ أَحَقُّ بِذَلِكَ فَصَلَّى أَبُو بَكْرٍ عليه السلام تِلْكَ الأَيَّامَ ثُمَّ انَّ النبى صلى الله عليه وسلم وَجَدَ فِىْ نَفْسِهِ خِفَّةً وخرج بَيْنَ رَجُلَيْنِ أَحَدُهُـمَا الْعَبَّاسُ عليه السلام لِصَلاَةِ الظُّهْرِ وابو بكر عليه السلام يصلى بالناس فَلَمَّا رَاه َاَبُو بَكْرٍ عليه السلام ذَهَبَ لِيَتَأَخَّرَ فَأَوْمى اِلَيْهِ النبى صلى الله عليه وسلم باَنْ لاَ يَتَأَخَّرَ قال اَجْلَسَانى الَى جَنْبِهِ فاجلساه الى جنب ابى بكر عليه السلام والنبى صلى الله عليه وسلم قاعد وقال عبيد الله رضى الله تعالى عنه فدخلت على عبد الله ابن عباس رضى الله تعالى عنه فقلت له الاَ اعْرِضُ عَلَيْكَ مَا حَدَّثَتْنِى ام الـمؤمنين حضرت عَائِشَةُ عليها السلام عَنْ مَرَضِ رسول الله صلى الله عليه وسلم : قال هات فعرضت عليه حديثها فما أَنْكَرَ مِنْهُ شَيْئًا غَيْرَ أَنَّهُ قَالَ أَسَمَّتْ لَكَ الرَّجُلَ الَّذِى كَانَ مَعَ الْعَبَّاسِ عليه السلام قُلْتُ: لاَ قَالَ هُوَ عَلِى كرم الله وجهه عليه السلام.

অর্থ: “হযরত উবায়দুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, আমি (উম্মুল মু’মিনীন আছ্ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম) উনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত হয়ে বললাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মারীদ্বী শান মুবারক সম্পর্কে আপনি কি আমাকে কিছু বিস্তারিত শুনাবেন? তিনি বললেন, অবশ্যই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করলেন, তখন তিনি জিজ্ঞাসা মুবারক করলেন, লোকজন কি নামায আদায় করেছেন? আমরা বললাম, না, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনারা আপনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বললেন, আমার জন্য গোসল মুবারকের পাত্রে পানি দিন। উম্মুল মু’মিনীন আছ্ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমরা তাই করলাম। তিনি গোসল মুবারক করলেন। অতঃপর একটু উঠতে চাইলেন, তখন তিনি বেহুঁশী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। কিছুক্ষণ পর বাহুঁশী শান মুবারক প্রকাশ করে তিনি জিজ্ঞাসা মুবারক করলেন, লোকজন কি নামায আদায় করেছেন? আমরা বললাম, না, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনারা আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বললেন, আমার জন্য গোসল মুবারকের পাত্রে পানি রাখুন। উম্মুল মু’মিনীন আছ্ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উঠে বসলেন এবং গোসল মুবারক করলেন। অতঃপর আবার উঠতে চাইলেন। এবারও তিনি বেহুঁশী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। অতঃপর কিছুক্ষণ পর বাহুঁশী শান মুবারক প্রকাশ করে তিনি জিজ্ঞাসা মুবারক করলেন, লোকজন কি নামায আদায় করেছেন? আমরা বললাম, না, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনারা আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বললেন, আমার জন্য গোসল মুবারকের পাত্রে পানি রাখুন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উঠে বসলেন এবং গোসল মুবারক করলেন। অতঃপর আবার উঠতে চাইলেন। এবারও তিনি বেহুঁশী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। অতঃপর কিছুক্ষণ পর বাহুঁশী শান মুবারক প্রকাশ করে তিনি জিজ্ঞাসা মুবারক করলেন, লোকজন কি নামায আদায় করেছেন? আমরা বললাম, না, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনারা আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।  ওদিকে লোকজন ইশার নামাযের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অপেক্ষায় মসজিদে অবস্থান  করতেছিলেন।

অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নিকট একজন লোক পাঠালেন যে, তিনি যেন লোকজনকে নিয়ে নামায আদায় করে নেন। সংবাদ বাহক সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাকে লোকজনকে নিয়ে নামায আদায় করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন অত্যন্ত কোমল মনের অধিকারী। তাই তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আপনি লোকজনকে নিয়ে নামায আদায় করে নিন। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনিই এর জন্য অধিক হক্বদার। সুতরাং সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি লোকজনকে নিয়ে ঐ কয়েকদিন নামায পড়ালেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন কিছুটা ছিহ্হাতি শান মুবারক প্রকাশ করলেন, তখন দুজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের কাঁধে ভর করে পবিত্র যুহরের নামায আদায়ের জন্য বের হলেন। উনাদের দুজনের একজন ছিলেন হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি তখন লোকজনকে নিয়ে নামায আদায় করছিলেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পেলেন, পিছনে সরে আসতে চাইলেন, কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে পিছনে না আসার জন্য ইশারা মুবারক করলেন এবং দুজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদেরকে বললেন, আপনারা আমাকে উনার পাশে বসিয়ে দিন। দুজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পাশে বসিয়ে দিলেন।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন যমীনে বসা অবস্থায় পবিত্র নামায আদায় করছিলেন। বর্ণনাকারী হযরত উবায়দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু  তা‘য়ালা আনহু উনার নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কে উম্মুল মু’মিনীন আছ্্ ছালিছাহ্্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি আমাকে যে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, তা কি আমি আপনার নিকট বর্ণনা করবো না? তিনি বললেন, হ্যাঁ বর্ণনা করুন। অতঃপর আমি উনাকে পবিত্র হাদীছ শরীফখানা শুনালাম। তিনি এ বর্ণনার কোন অংশই আপত্তি করলেন না, তবে উনাকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে যে অপর ছাহাবী ছিলেন, উম্মুল মু’মিনীন আছ্্ ছালিছাহ্্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি কি উনার নাম মুবারক উল্লেখ করেছেন? আমি বললাম না। তিনি বললেন, তিনি ছিলেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম।”

অতএব, উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমানিত হলো যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মারীদ্বি (অসুস্থতা) শান মুবারক প্রকাশকালে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে যমীনে বসে পবিত্র নামায আদায় করেছেন।

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন

চাঁদপুর সদর।

সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে পবিত্র কুরবানী দেয়ার হুকুম সম্পর্কে জানতে চাই।

জাওয়াব: পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ حَنَشٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ رَاَيْتُ حَضْرَتْ عَلِيًّا عَلِيْهِ السَّلَامُ يُضَحِّى بِكَبْشَيْنِ فَقُلْتُ لَهُ مَا هٰذَا فَقَالَ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْصَاِنْى اَنْ اُضَحِّى عَنْهُ فَانَا اُضَحِّى عَنْهُ.

অর্থ : “হযরত হানাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে দুটি দুম্বা কুরবানী করতে দেখলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কি? (দুটি কেন?) জবাবে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে ওছিয়ত মুবারক করে গিয়েছেন যে, আমি যেন উনার পক্ষ হতে পবিত্র কুরবানী করি। সুতরাং আমি উনার পক্ষ থেকে (একটি) পবিত্র কুরবানী করতেছি।” (আবূ দাঊদ শরীফ ২য় খ- ২৯ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ ১ম খ- ১৮০ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১২৮ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে এটা স্পষ্ট যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে কুরবানী করার জন্য ওছিয়ত মুবারক করলেন।

এখন ফিকিরের বিষয় হচ্ছে, সাধারণ একজন উম্মত যদি তার সন্তানদেরকে ওছিয়ত করেন তাহলে সন্তানের জন্য তা মান্য করা ফরয-ওয়াজিব হয়ে যায়। সন্তান যদি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও সে ওছিয়ত পূর্ণ না করে তাহলে শরীয়ত অনুযায়ী গুনাহগার সাব্যস্ত হবে।

একজন পিতার ওছিয়ত পালন না করলে সন্তান যদি গুনাহগার হয় তাহলে হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওছিয়ত মুবারক পালন না করলে তা কত ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কাজেই যিনি নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, যিনি সমস্ত বাবারও বাবা! মহান আল্লাহ পাক উনার পরে যিনি মর্যাদা বা মাক্বাম মুবারক উনার অধিকারী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে ওছিয়ত মুবারক করলেন, উক্ত ওছিয়ত মুবারক পালনের গুরুত্ব কত বেশি এবং তা পালন না করলে উম্মতের কত কঠিন ও বড় গুনাহ হবে তা উম্মত মাত্রই সকলকে উপলব্ধি করে ফরয হিসেবে উনার সম্মানিত নাম মুবারকে কুরবানী করতে হবে। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْـهَوٰى. اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْىٌ يُّوحٰى.

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী ব্যতীত কোন কথা বলেনা, কোন কাজ করেন না।” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ, ৩-৪)

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উক্ত ওছিয়ত মুবারক মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকেই।

এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয়- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে ওছিয়ত মুবারক করলেন। আর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন-

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।

তিনি হযরত খুলাফায়ে রশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি আশারায়ে মুবাশশরা উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি ইমামুল আউয়াল মিন আহলে বাইতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। একসাথে অনেক কিছু।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত সুন্নত বা আদর্শ মুবারক পালন করা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়েছে। আর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজজাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত চতুর্থ খলীফা।

সুতরাং হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজজাহূ আলাইহিস সালাম উনার আদর্শ মুবারক- “প্রতি বছর নিজের তরফ থেকে একটি এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে আরেকটি কুরবানী করা” এই সম্মানিত আদর্শ মুবারক প্রতিটি মুসলমানের মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে হবে অর্থাৎ দৃঢ়তার সাথে দায়িমীভাবে অনুসরণ করতে হবে।

তাছাড়া নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো উম্মতের পক্ষ থেকে কুরবানী দিতেন। তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে কুরবানী করার সুমহান দায়িত্ব তো স্বাভাবিকভাবেই উম্মতের উপর বর্তায়। এই ব্যাপারে চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করার কোন অবকাশই নেই। বরং উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে চরম পরম মুহব্বত ও আনুগত্যতার সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে কুরবানী করা।

আর তাই মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি প্রতি বছর শত শত কুরবানী দেন। সুবহানাল্লাহ! উনার কাছে কমপক্ষে ১০ লক্ষ নাম মুবারক উনার তালিকা আছে। সুবহানাল্লাহ! তিনি হযরত আবূ রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের প্রত্যেকের নাম মুবারকে উনাদের তরফ থেকে কুরবানী করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

 

মুসাম্মত বেলায়েত হুসাইন

দিনাজপুর

 সুওয়াল: কুরবানী ও কুরবানীদাতার ফযীলত সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক।

 জাওয়াব: পবিত্র কুরবানী উনার ফযীলত সম্পর্কে বহু পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ زَيدِ بْنِ اَرْقَمَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! مَا هذِه الْاَضَاحِىْ؟ قَالَ سُنَّةُ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ الـسَّلاَمُ قَالُوْا فَمَا لَنَـا فِيْهَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ بِكُلّ شَعْرَةٍ حَسَنَةٌ قَالُوْا فَالصُّوْفُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ مِّنَ الصُّوْفِ حَسَنَةٌ.

অর্থ : “হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই কুরবানী কি? তিনি জাওয়াবে বললেন, আপনাদের পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত। উনারা পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এতে আমাদের জন্য কি পরিমাণ নেকী রয়েছে? তিনি বললেন, পবিত্র কুরবানী উনার পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী রয়েছে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পশমওয়ালা পশুর ক্ষেত্রে কি হুকুম? তিনি বললেন, পশমওয়ালা পশুর প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তেও একটি করে নেকী রয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত দাউদ আলাইহিস্ সালাম উনাকে বলেন, হে হযরত দাঊদ আলাইহিস্ সালাম! আপনি পবিত্র কুরবানী করুন। হযরত দাঊদ আলাইহিস্ সালাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি শুধু আমার জন্যই? মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, না এটা হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম উনার থেকে শুরু করে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত জারী থাকবে।

হযরত দাঊদ আলাইহিস্ সালাম তিনি বলেন, আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের জন্য পবিত্র কুরবানী উনার মধ্যে কী ফযীলত রয়েছে? মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, দুনিয়াবী হায়াতে প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে দশটি নেকী দেয়া হবে, দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। সুবহানাল্লাহ! আর পরকালে পবিত্র কুরবানী উনার পশুর মাথার প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একজন করে হুর দেয়া হবে। শরীরের প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে একটি করে বালাখানা দেয়া হবে। প্রতিটি গোশতের টুকরার বিনিময়ে একটি করে পাখি দেয়া হবে আর প্রতিটি হাড়ের বিনিময়ে একটি করে বোরাক (বাহন) দেয়া হবে। যাদ্বারা সে বিদ্যুত গতিতে পুলছিরাত পার হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  قَالَ استفرهوا ضحاياكم فانها مطاياكم على الصراط

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন- তোমরা তোমাদের কুরবানীর পশুগুলো শক্তিশালী ও মোটা-তাজা দেখে নির্বাচন কর। কারণ এগুলো তোমাদের পুলসিরাতের উপর চড়ে যাওয়ার বাহন হবে।” (দাইলামী-মুসনাদুল ফিরদাউস ১/৮৫)

سَـمّنُوْا ضُحَايَاكُمْ فَاِنَّـهَا عَلَى الصِّرَاطِ مَطَايَاكُمْ

অর্থ : “তোমরা মোটা-তাজা, হৃষ্টপুষ্ট পছন্দনীয় পশু কুরবানী করো, কেননা কুরবানীর পশুগুলো তোমাদের জন্য পুলছিরাত পার হওয়ার বাহন স্বরূপ হবে।” (আরিযাতুল আহওয়াযী লী শরহে তিরমিযী ৬/২৮৮)

পুলছিরাত হচ্ছে হাশর ময়দান থেকে জান্নাতে যাওয়ার পথে জাহান্নামের উপর একখানি পুল। বর্ণিত রয়েছে, এই পুল চুল অপেক্ষা চিকন এবং তলোয়ার বা ক্ষুর অপেক্ষা ধারালো। এই পুলছিরাত ৩০ হাজার বছরের রাস্তা। প্রত্যেককেই এই পুল ছিরাত পার হতে হবে। পুলছিরাত পার না হওয়া পর্যন্ত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। সাধারণভাবে এই পুলছিরাত পার হওয়া অত্যন্ত কঠিন। পুলছিরাত পার হওয়ার পথে যাদের বাহন থাকবে তাদের জন্য পুলছিরাত পার হওয়া সহজ হবে। আর পুলছিরাত পার হওয়ার সেই বাহন হচ্ছে কুরবানীর পশু। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে একটি ওয়াক্বিয়া বর্ণিত রয়েছে যে, একজন লোক ছিল। লোকটা খারাপ ছিলো না। সে দ্বীনদার আল্লাহওয়ালা হওয়ার জন্য কোশেশ করতো। যেহেতু বিভ্রান্তি সব যুগেই ছিলো। যেমন, বর্তমানে অনেকে বলে থাকে- ‘কুরবানী না করে পশুটা দান করে দিলে অসুবিধা কোথায়?’ এটা কাট্টা কুফরী কথা। কেউ যদি এরূপ কথা বলে সে কাট্টা কাফির হয়ে যাবে। কেননা, সে সম্মানিত ওয়াজিব ইবাদত উনাকে অস্বীকার করলো, ইনকার করলো। সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছে, পবিত্র সুন্নত মুবারক উনাকে অস্বীকার করা কুফরী। সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছে, পবিত্র ওয়াজিব উনাকে ইহানত করলে বা অবজ্ঞা করলেও কাট্টা কাফির হবে। আজকাল কিছু লোক রয়েছে, যাদের আক্বীদা বদ অথচ তারা মুসলমান দাবীদার প্রকৃতপক্ষে এরাই এলোমেলো কথা বলে থাকে। এরা কিন্তু হিন্দুদের পূজার সময় বলে না যে, পুজা না করে দান করে দাও। বরং তরা নিজেরা তখন আরো সাহায্য করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! মূলত এই লোকগুলো সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী। যার কারণে সম্মানিত কুরবানী নিয়ে চু-চেরা করে থাকে।

সেই লোকটিও হক্ব তালাশী হওয়ার পরও তাদের ওয়াসওয়াসায় বিভ্রান্ত হয়ে কুরবানী করেনি। সে কুরবানীর পয়সা দান করে দিতো। সেই লোক একদিন স্বপ্নে দেখলো, ক্বিয়ামত হয়ে গেছে। বিচার হয়ে গেছে। সকলের ফায়ছালা হয়ে গেছে। অসংখ্য অগণিত লোক, সকলেই পুলসিরাতের সামনে উপস্থিত।

এখানে কোটি কোটি ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও আছেন। এখন পুলসিরাত পার হতে হবে। ত্রিশ হাজার বছরের রাস্তা অনেক দীর্ঘ রাস্তা। যমীন হতে আকাশ হচ্ছে পাঁচশত বছরের রাস্তা। তাহলে পুলসিরাত পার হবে কি দিয়ে? সে দখতে পেলো কিছুক্ষণ পরপর কোথা হতে অদৃশ্য বোরাক এসে একজন একজন করে নিয়ে যেতে লাগলো। বোরাক আসলে একজন চড়ে তাকে চোখের পলকে নিয়ে যায়। এভাবে এক সময় সবাই চলে গেলো। শুধু সেই লোকটিই দাঁড়িয়ে রইলো। তার জন্য কোনো বাহন আসতেছে না।

তখন সে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বললো, ‘সকলের জন্যতো বাহন আসলো, সবাইতো চলে গেলো, তাহলে আমার বাহন কোথায়?’ তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, ‘তোমার তো বাহন নেই। তুমিতো কুরবানী করোনি। তুমি কি করে পুলসিরাত পার হবে? তোমার বাহন আসবে কোথা হতে? তুমি তো কুরবানীর পশু কুরবানীই করোনি।’ সেই লোকটি বলে, একথা শুনে তার শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তখন সে ইস্তিগফার করলো, তওবা করলো। অতীত বছরের কুরবানীগুলো আদায় করলো এবং প্রতি বছর পশু কুরবানী শুরু করলো।

বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে দশ বছর অবস্থান মুবারক করেছেন। প্রতি বছরই পবিত্র কুরবানী করেছেন; কখনও তা ছাড়েননি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও পবিত্র কুরবানী করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন।

পবিত্র কুরবানী না করে তার অর্থ দান করে দেয়ার বিধান শরীয়ত উনার মধ্যে জায়িয নেই। কেননা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিংবা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কখনো এরূপ করেননি। অথচ উনাদের যুগেই এর জরুরত ছিল অধিক। বরং উনারা পবিত্র কুরবানী করেছেন এবং কুরবানীকৃত পশুর গোশত ও চামড়া অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করতে বলেছেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثالثة الصدّيْقَة عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ مَا عَمِلَ اِبْنُ اٰدَم مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ اَحَبُّ اِلٰى اللهِ مِنْ اِهْرَاقِ الدَّمِ وَاِنَّه لَيَأْتِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُوْنِـهَا وَاَشْعَارِهَا وَاَظْلَافِهَا وَاِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللهِ بِـمَكَانِ قَبْلَ اَنْ يَّقَعَ بِالْاَرْضِ فَطِيْبُوْا بِـهَا نَفْسًا.

অর্থ : “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বান্দা-বান্দী বা উম্মত পবিত্র কুরবানী উনার দিন যেসব নেকীর কাজ করে থাকে তন্মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হলো পবিত্র কুরবানী করা। ক্বিয়ামত দিবসে পবিত্র কুরবানী উনার পশু তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে এবং পবিত্র কুরবানী উনার পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পৌঁছে যায়। (সুবহানাল্লাহ!) কাজেই আপনারা আনন্দচিত্তে পবিত্র কুরবানী করুন।” (তিরমিযী শরীফ ও ইবনে মাজাহ শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اَفْضَلُ الْعِبَادَاتِ يَوْمُ الْعِيْدِ عِرَاقَةُ دَمِ الْقُرْبَانِ

অর্থ : “ঈদের দিন রক্ত প্রবাহিত করা সর্বশ্রেষ্ঠ আমল।” সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিনে বান্দার পবিত্র কুরবানী উনার পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাক তার গুণাহ মাফ করে দেন।” সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এ ব্যাপারে আরো বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَلِىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَه عَلَيْهِ السّلَام اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ قَالَ لِفَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ يَا فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَاشْهَدِىْ اُضْحِيَّتِك اما ان لك باول قَطْرَةٍ مِنْ دَمِهَا مغفرة لكل ذنب اما انه يجاء بها يَوْم الْقِيَامَةِ بِلُحُوْمِهَا ودمائها سَبْعِيْنَ ضعفا حتى توضع فى مِيْزَانِك

অর্থ: “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- “হে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম! আপনি আপনার কুরবানীর পশুর নিকট যবেহ করার সময় উপস্থিত থাকবেন। জেনে রাখুন! ঐ পশুর রক্তের প্রথম ফোঁটা (মাটিতে) পড়ার সাথে সাথে আপনার অর্থাৎ উম্মতের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। জেনে রাখুন! কিয়ামত দিবসে কুরবানীর ওই পশুগুলোকে রক্ত, গোশত সহ সত্তরগুণ বৃদ্ধি করে নিয়ে আসা হবে এবং আপনার দাঁড়িপাল্লায় তা রাখা হবে।” (বাইহাকী ৯/২৮৩, আবদুবনু হুমাইদ ৭/৮)

عَنْ حَضْرَتْ اُمّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثالثة الصِدّيْقَة عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ يَا فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ قُوْمِىْ اِلٰى اُضْحِيَّتِكِ فَاشْهَدِيْهَا  فَاِنَّـهَا لَكِ بِكُلّ قَطْرَةٍ تَقْطُرُ مِنْ دَمِهَا اَنْ يَّـغْفِرَ لَكِ مَاسَلَكَكِ مِنْ ذُنُوْبِكِ قَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلَنَا خَاصَّةً وَاَهْلَ الْبَيْتِ اَوْ لَنَا وَلِلْمُسْلِمِيْىنَ قَالَ بَلٰى لَنَا وَلِلْمُسْلِمِيْىنَ.

অর্থ : “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত।, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম! আপনি আপনার কুরবানী উনার পশুর কাছে চলুন এবং যেখানে (কুরবানী উনার সময়) উপস্থিত থাকুন। নিশ্চয়ই পশুর প্রত্যেক ফোঁটা রক্তের বিনিময়ে আপনার অর্থাৎ উম্মতের বিগত জীবনের গুণাহ খতা ক্ষমা করা হবে। তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই কুরবানী উনার ফযীলত কি শুধু আমাদের এবং হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য? নাকি আমাদের জন্য এবং সমস্ত মু’মিন মুসলমান উনাদের জন্য? তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হ্যাঁ, আমাদের জন্য এবং সমস্ত মু’মিন মুসলমান উনাদেরও জন্য।” এক বর্ণনা মতে, পবিত্র কুরবানী উনার পশু কুরবানীদাতার নাজাতের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করবে। (হাকিম ৪/২২২, বাযযার ২/৫৯, কাশফুল আসতার)

স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَنَا وَاَهْلُ بَيْتِىْ مُطَهَّرُوْنَ مِنَ الذُّنُوْبِ

অর্থ: “আমি এবং আমার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা সমস্ত গুনাহ হতে পবিত্র।” (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, খছায়িছুল কুবরা)

তাই রক্তের ফোঁটার বিনিময়ে গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া সংক্রান্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার হুকুম সম্মানিত আহলে বাইতে রসূল হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হয়ে উম্মতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

মুহম্মদ জাকির হুসাইন

পঞ্চগড়

 

 সুওয়াল: কুরবানীর পশুর জন্য কোন কোন ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়া জরুরী?

 জাওয়াব: পবিত্র কুরবানীর জন্য পশু দোষ-ত্রুটি মুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। পশুর ত্রুটিগুলি দু’ভাগে বিভক্ত। (এক) আয়িবে ফাহিশ অর্থাৎ বড় ধরনের দোষ বা ত্রুটি। যার কোন একটি পশুর মধ্যে থাকলে উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে না। যেমন- এমন দূর্বল পশু, যার হাড়ে মজ্জা বা মগজ শুকিয়ে গেছে। অথবা যে সকল পশু কুরবানীর জায়গা পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারেনা। সেসব পশুর একটি পা এরূপ নষ্ট হয়ে গেছে যে, উক্ত পা দ্বারা চলার সময় কোন সাহায্য নিতে পারে না। যে পশুর কান অথবা লেজের তিনভাগের একভাগ কাটা গেছে, যে পশুর শিং-এর গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে পশুর কান একেবারে গজায় নেই, অর্ধেক দাঁত পড়ে গেছে ইত্যাদি পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে না।

(দুই) আয়িবে ইয়াসির অর্থাৎ সাধারণ দোষ বা ত্রুটি। যে দোষ-ত্রুটি থাকলে কুরবানী শুদ্ধ হবে। যেমন যে পশুর কোন এক অঙ্গের এক তৃতীয়াংশের কম নষ্ট হলে উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে। অথবা যে পশুর অর্ধের বেশী যদি দাঁত থাকে, উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী জায়িয রয়েছে। অথবা যে পশুর শিং একেবারে উঠেনি, উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে।

হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত-

اَشَارَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِه وَيَدِى قَصْرٌ مِنْ يَدِه اَرْبَع لَايُضَحّىْ بِـهِنَّ اَلْعَوْرَاء اَلْبَيّنُ عَوْرُهَا وَالْـمَرِيْضَةُ اَلْبَيّنُ مَرْضُهَا وَالْعَرْجَاء اَلْبَيّنُ ظَلْعُهَا وَالْعَجْفَاءَ اَلَّتِيْ لَا تُنْقِي فَقَالُوْا لِلْبَرَاءِ فَاِنـَّمَا نَكَرَهُ النُّقْصَ فِى السّنّ وَالْاُذْنِ وَالذَّنْبِ قَالَ فَاكْرِهُوْا مَا شِئْتُمْ وَلَا تُـحَرّمُوْا عَلى النَّاسِ.

অর্থ : “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাত মুবারক দিয়ে ইশারা মুবারক করেন, আমার হাত মুবারক তো উনার হাত মুবারক থেকে ছোট এবং বলেন, ‘চার ধরণের পশু দ্বারা কুরবানী করা যায় না- ১) যে পশুর চোখের দৃষ্টিহীনতা সুস্পষ্ট, ২) যে পশু অতি রুগ্ন, ৩) যে পশু সম্পূর্ণ খোড়া এবং ৪) যে পশু এত জীর্র্ণ-শীর্র্ণ যে তার হাড়ে মগজ নেই।’ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, আমরা তো দাঁত, কান ও লেজে ত্রুটিযুক্ত প্রাণী দ্বারাও কুরবানী করা অপছন্দ করি। তিনি বললেন, যা ইচ্ছা অপছন্দ করতে পারেন তবে তা অন্যের জন্য হারাম করবেন না।” (আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত-

اَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ نَسْتَشْرِفَ الْعيْنَ وَالْاُذْنَ وَاَنْ لَّانُضَحِّى بِـمُقَابَلَةِ وَلَا مُدَابَرَةِ وَلَا شَرْقَاءِ وَلَا خَرْقَاءِ.

অর্থ : “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের আদেশ মুবারক করেন, আমরা যেন পবিত্র কুরবানী উনার পশুর চোখ ও কান ভালোভাবে লক্ষ্য করি এবং ওই পশু দ্বারা কুরবানী না করি, যার কানের অগ্রভাগ বা পশ্চাদভাগ কর্তিত। তদ্রুপ যে পশুর কান লম্বার ফাঁড়া বা কান গোলাকার ছিদ্রযুক্ত।” (আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)

হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে আরো বর্ণিত আছে-

نَـهٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ نُضَحِّى بِاَعْضَبِ الْقَرْنِ وَالْاُذْنِ.

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের শিং ভাঙ্গা বা কান-কাটা পশু দ্বারা পবিত্র কুরবানী করতে নিষেধ করেছেন।” (ইবনে মাজাহ শরীফ)

অন্যত্র বর্ণিত আছে-

وَلَاتَذْبَـحُوْا عَجْفَاءَ وَلَا عَرْجَاءَ وَلَا عَوْرَاءَ وَلَامَقْطُوْعَةَ الْاُذْنِ وَلَوْ وَاحِدَةً

অর্থ : “তোমরা ক্ষীণ-দুর্বল, পঙ্গু, চক্ষুহীণ ও কান কাটা পশু যদিও একটি কান হয়। এমন পশু কুরবানী করবে না।

অর্থাৎ নিম্নোক্ত দোষ-ত্রুটিযুক্ত পশু কুরবানী করলে কুরবানী ছহীহ হবে না-

১. শিং ভাঙ্গা,  ২. কান কর্তিত বা গোলাকার ছিদ্রযুক্ত, ৩. চক্ষুহীন বা দৃষ্টিহীনতা সুস্পষ্ট, ৪. নাক কাটা, ৫. ঠোঁট কাটা বা দাঁত ভাঙ্গা, ৬. পা খোড়া বা পঙ্গু, ৭. লেজ কর্তিত, ৮. খুজলী/পাচড়াযুক্ত ৯. অতি রুগ্ন বা এমন জীর্ণ শীর্ণ যে তার হাড়ে মগজ নেই, ১০. ত্রুটিযুক্ত বাঁট, ১১. পিছন দিক ত্রুটিযুক্ত।

 

মুহম্মদ এনায়েত হুসাইন

কক্সবাজার

 

 সুওয়াল: কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত কি কি?

 জাওয়াব: পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে- (১) মুসলমান হওয়া, (২) স্বাধীন হওয়া, (৩) মুক্বীম হওয়া, (৪) বালেগ হওয়া, (৫) মালিকে নিসাব হওয়া, (৬) পাগল না হওয়া অর্থাৎ আক্বলমন্দ হওয়া।

পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১০ তারিখের ছুবহে ছাদিক হতে ১২ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিসাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রূপা বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব।

উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নিসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরে পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হবে। (আলমগীরী, শামী, আইনুল হিদায়া, ফতহুল কাদীর, গায়াতুল আওতার, শরহে বিকায়া, বাহর, দুররুল মুখতার, কাজীখান, ইনায়া)

 

মুহম্মদ সিরাজুদ্দীন

কুড়িগ্রাম

 

সুওয়াল: আক্বীক্বার পশুর গোশতের কি হুকুম?

জাওয়াব: অনেকে বলে থাকে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয়, তার গোশত পিতা-মাতা খেতে পারবে না। মূলত তাদের একথা শরীয়ত সম্মত নয়। শরীয়তের মাসয়ালা হলো, পবিত্র আক্বীকা উনার পশুর গোশতের হুকুম পবিত্র কুরবানী উনার পশুর গোশতের হুকুমের মতো। কাজেই, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হবে তার গোশত পিতা-মাতাসহ সকলেই খেতে পারবে। এটাই শরীয়তসম্মত মাসয়ালা বা ফতওয়া। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

 

মুহম্মদ মনির হুসাইন

রংপুর

 

 সুওয়াল: বিগত বছরের অনাদায়ী কুরবানীর হুকুম কি?

 জাওয়াব: কোন ব্যক্তি যদি গাফলতির কারণে কিংবা অন্য কোন কারণে তার ওয়াজিব কুরবানী যে বছর ওয়াজিব হয়েছে সে বছরে না করে তার পরবর্তী বছর করে তাহলে কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে উক্ত কুরবানী উনার গোশত কুরবানীদাতা ও তার পরিবারবর্গ খেতে পারবে না। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

 

মুহম্মদ আজহারুল ইসলাম

ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম

 

 সুওয়াল: কুরবানীর পশুর গোশতের বণ্টনের কোন পদ্ধতি আছে কি?

 জাওয়াব: কুরবানীকৃত পশুর গোশত বণ্টন প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-

يَسْتَحِبُّ التَّصَرُّفُ ثُلُثٌ لِنَفْسِه ثُلُثٌ هَدِيَّةٌ ثُلُثٌ لِلْفُقَرَاءِ وَالْـمَسَاكِيْنَ وَاِنْ كَانَتْ وَصِيَّةٌ يَتَصَدَّقُ بِـجَمِيْعِهَا.

অর্থ : “পবিত্র কুরবানী উনার গোশত বণ্টন করার মুস্তাহাব নিয়ম হচ্ছে- এক তৃতীয়াংশ নিজের জন্য রাখবে, এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীর জন্য হাদিয়া স্বরূপ দিবে আর এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনের জন্য দান স্বরূপ দিবে। আর যদি কুরবানীকৃত পশুটি ওছিয়তকৃত হয়ে থাকে তাহলে সম্পূর্ণটাই গরীব-মিসকীনকে দান করে দিতে হবে।” (ফিক্বাহর কিতাবসমূহ)

অর্থাৎ কুরবানীদাতার জন্য কুরবানীকৃত পশুর গোশ্ত কাউকেও দেয়া বা না দেয়া তার ইখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত। সে ইচ্ছা করলে সম্পূর্ণটাই দান করে দিতে পারে, আবার ইচ্ছা করলে সম্পূর্ণটাই রেখে খেতে পারে। এতে কুরবানী উনার কোন ত্রুটি হবেনা।

উল্লেখ্য, কোন কোন গ্রামে-গঞ্জে বা মহল্লায় দেখা যায়, সেখানে যত পশু কুরবানী করা হয় প্রত্যেক কুরবানীদাতার কুরবানীকৃত পশুর এক তৃতীয়াংশ গোশত এক স্থানে জমা করে উক্ত এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ জমাকৃত গোশতগুলোকে এলাকার গরীব মিসকীন ও ধনী অর্থাৎ যারা কুরবানী করেছে আর যারা কুরবানী করেনি তাদের প্রত্যেককেই সমহারে বণ্টন করে দেয়।

এই ধরণের বণ্টনের কারণে গরীব মিসকীনের হক নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ জমাকৃত গোশতগুলোকে এলাকার গরীব মিসকীন ও ধনী নির্বিশেষে সকলের মাঝেই বণ্টন করছে।

আরো উল্লেখ্য, এলাকাবাসী যদি গরীব-মিসকীনকে বণ্টন করে দেয়ার জন্যই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে গোশত দিয়ে থাকে। তাহলে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে শুধুমাত্র গরীব-মিসকিনদের মধ্যেই উক্ত গোশ্ত বণ্টন করে দেয়া। এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিগণ যদি বিপরীত কাজ করে তাহলে তারাই গরীব-মিসকীনের হক নষ্টকারী হিসাবে সাব্যস্ত হবে এবং এর জন্য তাদেরকে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে। আর তারাই দায়ী থাকবে।

এছাড়াও এতে কুরবানীদাতারও হক্ব নষ্টের সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা কুরবানীদাতাদের মধ্যে যারা এক তৃতীয়াংশ গোশত দিয়ে দিলে তারা তাদের পরিবারবর্গ বা অধীনস্থদেরকেই পবিত্র ঈদ উনার দিন তৃপ্তিসহকারে খাওয়াতে পারবেনা এমন ব্যক্তির নিকট থেকেও গোশত সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ যদি প্রকৃতপক্ষেই গরীব-মিসকিনদের উপকার করতে চায় তাহলে তাদের উচিত হবে এলাকার ঐ সমস্ত কুরবানীদাতাদের নিকট থেকে এক তৃতীয়াংশ গোশত সংগ্রহ করা। যারা এক তৃতীয়াংশ গোশত দেয়ার পরও তাদের পরিবার বা অধীনস্থদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ গোশত থেকে যায়, অথবা যারা স্বেচ্ছায় দান করে। যাদের নিকট পর্যাপ্ত পরিমাণে গোশত নেই অর্থাৎ যারা এক তৃতীয়াংশ গোশ্ত দিয়ে দিলে তারা তাদের পরিবারবর্গ বা অধীনস্থদেরকেই পবিত্র ঈদ উনার দিন তৃপ্তিসহকারে খাওয়াতে পারবেনা এমন ব্যক্তির নিকট থেকে জবরদস্তি করে গোশত সংগ্রহ করলে ছওয়াবের পরিবর্তে কঠিন গুণাহই হবে।

আর বণ্টনের ক্ষেত্রে ওই সমস্ত লোকদেরকে গোশত দিতে হবে যারা কুরবানী দেয়নি অথবা যদি কুরবানী দিয়েও থাকে তথাপিও তারা চাহিদা মুতাবিক গোশত পায়নি। কুরবানী দেয়ার কারণে যাদের নিকট পর্যাপ্ত পরিমাণে গোশত রয়েছে তাদেরকে মিসকীনের অংশ থেকে গোশত দেয়া কখনই নেকীর কাজ হবেনা। (মিরকাত, বাহরুর রায়িক, আলমগীরী, শামী)

 

মুহম্মদ জহিরুল ইসলাম

নবাবগঞ্জ, ঢাকা

 

সুওয়াল: কুরবানীর পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নাজায়িয?

জাওয়াব: পবিত্র কুরবানী বা হালাল পশুর ৮টি অংশ খাওয়া যাবে না। (১) দমে মাছফূহা বা প্রবাহিত রক্ত যা হারাম, (২) গুটলী বা গোদুদ খাওয়াও হারাম, (৩) অ-কোষ, (৪) মূত্রথলী, (৫) পিত্ত, (৬) ছোট ইস্তিঞ্জার রাস্তা বা লিঙ্গ, (৭) বড় ইস্তিঞ্জার রাস্তা বা গুহ্যদ্বার, এ ৫টি অংশ খাওয়া মাকরূহ তাহরীমী এবং (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ তাহরীমী, আবার কেউ মাকরূহ তানযীহী বলেছেন। (শামী, মাতালিবুল মু’মিনীন, উমদাতুল কালাম, কিতাব- শাইখুল ইসলাম)

 

মুহম্মদ আনিছুর রহমান

পুরানবাজার, চাঁদপুর

 

সুওয়াল: কুরবানীর পশুর দ্বারা কোন প্রকার ফায়দা লাভ করা যাবে কিনা?

জাওয়াব: সাধারণত পবিত্র কুরবানী উনার পশুর দ্বারা কোন প্রকারের ফায়দা লাভ করা জায়িয নেই। যেমন-

(১) কুরবানী উনার পশুর উপর আরোহণ করে চলাচল করা জায়িয নেই, তবে যদি কুরবানী উনার পশুর পানীয় ও ঘাসের বন্দোবস্ত করানোর জন্য আরোহণ করে কোথাও যায়, তাতে কোন ক্ষতি নেই। অথবা পালিত পশু যদি হয়, যার উপর মালিক পূর্ব থেকেই আরোহণ করতো এখন মালিক তা কুরবানী দেয়ার নিয়ত করেছে, তাতে আরোহণ করলেও ক্ষতি হবেনা। তবে কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে কুরবানী করে দিতে হবে, আরোহণ করার জন্য রাখা যাবেনা।

(২) কুরবানী উনার পশুর পশম কেটে বিক্রয় করা জায়িয নেই। যদি কেউ বিক্রি করে, তবে তার মূল্য ছদ্কা করে দিতে হবে। তা কুরবানী উনার পূর্বে হোক বা কুরবানী উনার পরে হোক। আর কুরবানী উনার পর কুরবানী উনার পশুর পশম থেকে ফায়দা হাছিল করতে পারবে অর্থাৎ নিজ কাজে ব্যবহার করতে পারবে অথবা কাউকে হাদিয়াও দিতে পারবে। যেমন পশমী কম্বল ও চাদর ইত্যাদি।

(৩) কুরবানী উনার পশুকে হালের কাজে ব্যবহার করা জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ হালের গরুকে কুরবানী দেয়ার নিয়ত করে যে, আমি হালের এই গরুটি আগামী ঈদের দিনে কুরবানী করবো, তাহলে কুরবানী উনার দিনের পূর্ব পর্যন্ত হালের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে, হালের কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আর রাখা যাবেনা।

(৪) কুরবানী উনার পশুর দ্বারা বোঝা বহন করা জায়িয নেই। তবে উক্ত পশু পালিত হলে বোঝা বহন করাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে তখন আর বোঝা বহনের জন্য রাখা যাবেনা। কুরবানী করে দিতে হবে।

(৫) কুরবানী উনার পশুর দুধ পান করা বা বিক্রি করা জায়িয নেই। যদি কেউ পান করে বা বিক্রয় করে তবে তার মূল্য ছদকা করে দিতে হবে। কিন্তু যদি উক্ত প্রাণীর দুধ মালিক পূর্ব থেকেই পান করে বা বিক্রয় করে আসছে অর্থাৎ পালিত পশু যদি হয়, তাহলে দুধ পান করতে বা বিক্রয় করতে কোন অসুবিধা নেই। তবে কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে তা কুরবানী করে দিতে হবে।

(৬) কুরবানী উনার পশুর গোবরের হুকুমও দুধের অনুরূপ।

স্মরণীয় যে, কুরবানী উনার পশু যদি আইইয়ামে নহরের মধ্যে কিনে এনে সাথে সাথে কুরবানী করে, তাহলে তা থেকে কোন প্রকার ফায়দা হাছিল করা জায়িয নেই। যদি কুরবানী পশুর দুধ, পশম ইত্যাদি দ্বারা ফায়দা হাছিল করে, তাহলে তার মূল্য ছদ্কা করে দিতে হবে। তবে যদি আইইয়ামে নহরের দু’চারদিন আগে কিনে এনে পশুকে খাওয়ায় বা পান করায়, তাহলে উক্ত পশু দুধ দিলে তাও পান করতে পারবে খাদ্যের বিনিময়ে।

(৭) পবিত্র কুরবানী উনার পশুর রশি, নাক বন্ধ, পায়ের খুরাবৃত, গলার ঘন্টা, জিনপোষ, লাগাম ইত্যাদি দ্বারা কোন প্রকার ফায়দা হাছিল করা জায়িয নেই। যদি এ সমস্ত দ্রব্য দ্বারা কোন প্রকার ফায়দা হাছিল করে, তবে তার মূল্য ছদকা করে দিতে হবে। (শামী, আলমগীরী, বাহর, কাজীখান)

 

মুহম্মদ ওয়াহিদুর রহমান

চট্টগ্রাম

সুওয়াল: কাজের পারিশ্রমিক বাবদ কুরবানীর পশুর গোশত, হাড্ডি, ভুঁড়ি, খুরা ইত্যাদি কাউকে দিলে কুরবানী শুদ্ধ হবে কি না?

জাওয়াব: গোশত বা চামড়া অথবা চামড়া বিক্রয়ের পয়সা দিয়ে যবেহ করানো, চামড়া ছিলানো অথবা গোশত বানানোর উজরত (পারিশ্রমিক) দেয়া জায়িয হবে না। দিলে কুরবানী বাতিল হয়ে যাবে। অনুরূপ যদি কেউ কাউকে কাজের পারিশ্রমিক বাবদ গোশত, হাড্ডি, ভুঁড়ি, খুরা ইত্যাদি দিয়ে দেয়, তবে তার সঠিক মূল্য ছদকা করে দেয়াও ওয়াজিব হবে। অন্যথায় তার কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। (ফতওয়ায়ে শামী ও অন্যান্য ফিক্বাহ্্র কিতাব)

 

মুহম্মদ আরিফ হুসাইন

নূরসিবাদ (নরসিংদী)

 

সুওয়াল: আনজুমানে মুফিদুল ইসলাম তথাকথিত জণকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে কুরবানীর পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করা জায়িয হবে কি?

জাওয়াব: বর্তমান সময়ে তথাকথিত জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের অন্যতম হচ্ছে “আনজুমানে মফিদুল ইসলাম”। তারা জনকল্যাণের নামে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার কুরবানী পশুর চামড়া ও চামড়া বিক্রির অর্থ মুসলমান উনাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। এই অর্থ তারা আমভাবে খরচ করে থাকে। যেমন রাস্তাঘাট, পানির ব্যবস্থা, বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কাজে; সেটা মুসলমানদেরও হতে পারে আবার বিধর্মীদেরও হতে পারে। অথচ পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া ও যাকাত-ফিতরা মুসলমান গরিব-মিসকীনদের হক্ব।

তা আমভাবে খরচ করা যাবে না, বরং মুসলমান গরিব-মিসকীনদের মালিক করে দিতে হবে। অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী সম্মানিত শরীয়ত উনার নির্ধারিত খাতেই ব্যয় করতে হবে। তাই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামে পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া বা তার মূল্য ও যাকাত-ফিতরা দেয়া হারাম।

শুধু তাই নয়; এদের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ, দুর্নীতি, লাশ গায়েব এবং কঙ্কাল চুরি (কবর থেকে লাশ তুলে কিংবা লাশকে দাফন না করে গরম পানিতে লাশের গোশত ছাড়িয়ে সে লাশের কঙ্কাল উচ্চ দামে বিক্রি করা) ও পাচারকারী দলের সাথে জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। যা অনলাইনসহ অনেক মিডিয়াতেই প্রকাশ পেয়েছে। কাজেই, আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামে পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া বা তার মূল্য ও যাকাত-ফিতরা দেয়ার অর্থ হচ্ছে- টাকা আত্মসাৎ, দুর্নীতি, লাশ গায়েব এবং কঙ্কাল চুরি ও পাচার এসবের মতো হারাম ও গুনাহের কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করা। নাউযুবিল্লাহ!

তাছাড়া পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ৮ খাতের কোনো খাতের মধ্যেই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম পড়ে না। তাই এদেরকে পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া ও যাকাত, ফিতরা দিলে তা কস্মিনকালেও আদায় তো হবেই না; বরং গুনাহ হবে।

অনুরূপভাবে কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকেও যাকাত, ফিতরা ও কুরবানী পশুর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না। কারণ- (১) তারা তা ধনী-গরীব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে খরচ করে থাকে। যেমন রাস্তা-ঘাট, পানির ব্যবস্থা, বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কাজে। অথচ কুরবানী পশুর চামড়া মুসলমান গরীব-মিসকীন উনাদের হক্ব। (২) মুসলমান গরীব-মিসকীন উনাদের হক্ব ধনীদেরকে প্রদানের মাধ্যমে মুসলমান ধনীদেরকে হারাম খাওয়ানোর মাধ্যমে তাদের ইবাদত-বন্দেগী বিনষ্ট করছে। নাঊযুবিল্লাহ! (৩) মুসলমান গরীব-মিসকীন উনাদের হক্ব মুসলমান উনাদের শত্রু কাফির-মুশরিকদের উপকারার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! (৪) এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান ইসলামী শরীয়ত নির্ধারিত যাকাত, ফিতরা, মানত, কুরবানী পশুর চামড়া বা বিক্রিত অর্থ প্রদানের কোন খাতের আওতাভুক্তই নয়।

 

মুহম্মদ সেলিমুর রহমান

সদর, ঠাকুরগাঁও

 

সুওয়াল: পবিত্র কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি এবং নিয়ত জানালে খুশি হবো।

জাওয়াব:  পবিত্র কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর পবিত্র কুরবানী করতে হবে। আর  পবিত্র কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরে নরম স্থানের উপর থেকে গলার মধ্যে একটি উঁচু হাড় রয়েছে: উভয়ের মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মুখভাগে দুটি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দুটি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবেনা। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বিজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

কুরবানীর নিয়ত: (যবেহ করার পূর্বে)

انى وجهت وجهى للذى فطر السموت والارض حنيفا وما انا من الـمشركين ان صلاتى ونسكى ومحياى ومماتى لله رب العلمين لا شريك له وبذلك امرت وانا من الـمسلمين. اللهم منك ولك.

উচ্চারণ: ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহূ ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা। এ দোয়া পড়ে بسم الله الله اكبر ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করতে হবে।

যবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে-

اللهم تقبله منى كما تقبلت من حبيبك سيدنا رسول الله صَلَّى الله عليه وسلم وخليلك سيدنا حضرت ابراهيم عليه السلام

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খলীলিকা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।

যদি নিজের কুরবানী হয়, তবে منى (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি  অন্যের  কুরবানী হয়, তবে  من (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কুরবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয়, তাহলে منى (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর من (মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে যবেহ করার সময় শুধু বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে পবিত্র কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক যবেহকারীর উচিত উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে পবিত্র কুরবানী করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

{দলীলসমূহ: আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, দারিমী ইবনে মাযাহ শরীফ, বজলূল মযহুদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, মুযাহেরে হক্ব শরীফ, লুমায়াত শরীফ, ত্বীবী শরীফ, তালিকুছ ছবীহ শরীফ, আশয়াতুল লুমায়াত শরীফ, আলমগীরী শরীফ, শামী শরীফ, দুররুল মুখতার শরীফ, আইনুল হিদায়া ও বাহর শরীফ ইত্যাদি।}

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব