সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৭৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ মুশাররফ হুসাইন, সউদী আরব

সুওয়াল: কেউ কেউ বলে তারাবীহ নামায ৮ রাকায়াত পড়াই সুন্নত। আবার কেউ কেউ বলে থাকে, ১২ রাকায়াত। কোন মতটি ছহীহ?

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া মুতাবিক পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি ২০ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুনাহ হবে। অর্থাৎ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াতই পড়তে হবে এবং এর উপরই ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

যারা পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ৮ রাকায়াত বলে থাকে, তারা বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ দলীলস্বরূপ পেশ করে থাকে। যাতে বর্ণিত আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে এবং পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্য মাসে (বিতরসহ) ১১ রাকায়াত নামায আদায় করতেন।”

মূলত, এটি হচ্ছে পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায উনার বর্ণনা, পবিত্র তারাবীহ নামায উনার বর্ণনা নয়। কারণ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায শুধু পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের জন্যই নির্দিষ্ট। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্য মাসে পবিত্র তারাবীহ উনার নামায নেই। আর পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায সারা বৎসরই পড়তে হয়।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকার ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে ছাবিত করা হয়েছে যে, পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ছহীহ মত।

মুসাম্মত যায়দা খাতুন, সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল: মহিলাদের তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়া জায়িয কি না?

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া হলো মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত, পবিত্র জুমুয়া, পবিত্র তারাবীহ ও পবিত্র ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ অর্থাৎ যে কোনো স্থানে যাওয়া নাজায়িয, হারাম ও  কাট্টা কুফরী।

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬৫, ৭১, ৮২, ১০১ ও ১০২তম সংখ্যাগুলো পড়–ন যাতে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রায় ১০০টি দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হয়েছে।

মুহম্মদ আরিফ হাসান, কুড়িগ্রাম

সুওয়াল: পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করার ব্যাপারে সঠিক ফায়ছালা জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা শর্ত সাপেক্ষে জায়িয, আবার শর্ত সাপেক্ষে নাজায়িয। অর্থাৎ সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হলে ইমামতী, শিক্ষকতা, পবিত্র হজ্জ উনার মাসয়ালা-মাসায়িল ও পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়ে খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয। আর সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করা না হলে উজরত গ্রহণ করা জায়িয নেই। এর উপরই উলামায়ে মুতাআখ্খিরীনগণের ফতওয়া এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।

যেমন, ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব “বাহরুর রায়িকে” উল্লেখ আছে-

اِنَّ الْـمُفْتٰـى بِهٖ جَوَازُ الْاَخْذِ عَلَى الْقِرَائَةِ.

অর্থ: “নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয হওয়া ফতওয়াগ্রাহ্য মত।”

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২৩ ও ২৪তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৫১টি নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল পেশ করা হয়েছে।

মুহম্মদ সোহেলুর রহমান, দুবাই

সুওয়াল: “পবিত্র রোযা অবস্থায় ইনজেকশন এমনকি স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও নাকি পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয় না।” এ বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত?

জাওয়াব: যারা বলে যে, পবিত্র রোযা অবস্থায় ইনজেকশন বা স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয় না” তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, জিহালতপূর্ণ, দলীলবিহীন এবং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য একটি দলীলও পেশ করতে পারবে না।

পক্ষান্তরে পবিত্র রোযা অবস্থায় যে কোনো ইনজেকশন নিলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে এ ফতওয়াটিই ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য। কারণ এর স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য অসংখ্য দলীল বিদ্যমান রয়েছে।

যেমন, হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وَمَنْ اِحْتَقَنَ … اَفْطَرَ لِقَوْلِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْفَطْرُ مِـمَّا دَخَلَ

অর্থ: “এবং যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে।”

“বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খণ্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وَمَنْ اِحْتَقَنَ … اَفْطَرَ لِقَوْلِهٖ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَلْفَطْرُ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ

অর্থ: “যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে না।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وَمَنْ اِحْتَقَنَ … اَفْطَرَ

অর্থ: “এবং যদি কোনো ব্যক্তি ইনজেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে।” অনুরূপ “ফতওয়ায়ে শামীতে”ও উল্লেখ আছে।”

অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, ইনজেকশন নিলে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হবে।

{বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২১, ২২, ৪৬ ও ৪৭তম সংখ্যা পাঠ করুন।}

মুহম্মদ আনীছুয যামান, রাজশাহী

সুওয়াল: রোযা অবস্থায় বমি করলে রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় বমি করার ব্যাপারে কয়েকটি ছূরত কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। বমি করাটা সাধারণতঃ দু’প্রকারের হয়ে থাকে- (১) ইচ্ছাকৃত, (২) অনিচ্ছাকৃত।

কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করে, তাহলে তার পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর ইচ্ছাকৃত অল্প বমি করলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি হোক অথবা অল্প বমি হোক, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে অথবা অল্প বমি গিলে ফেলে, তাতে তার পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি ভিতরে চলে চায়, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু মুখ ভরা বমি অনিচ্ছাকৃতভাবেও ভিতরে চলে গেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে।

উপরোল্লিখিত কোনো কারণে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হলে সেটার ক্বাযা আদায় করতে হবে। কিন্তু কাফাফারা আদায় করতে হবে না।  (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)

আহমদ আবিদা খাতুন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়াল: পবিত্র রোযা অবস্থায় তরকারী পাক করার সময় লবণ হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করা জায়িয হবে কিনা?

জাওয়াব:  সাধারণভাবে এরূপ করা জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ সতর্কতার সাথে এরূপ করে, তবে তা মাকরূহের সহিত জায়িয রয়েছে, না করাই উচিত। তবে কারো স্বামী যদি এমন যালিম হয় যে, তরকারীতে লবণ কম বা বেশি হলে মারধর, যুলুম ইত্যাদি করে, তাহলে যালিমের যুলুম হতে বাঁচার জন্য জিহ¡ার অগ্রভাগ দিয়ে তরকারীর স্বাদ পরীক্ষা করা জায়েয রয়েছে। এক্ষেত্রে মাকরূহ্ হবে না।

লক্ষ্যণীয় যে, তরকারীযুক্ত থুথু কোনো ক্রমেই যেন ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)

আহমদ হুসাইন, কিশোরগঞ্জ

সুওয়াল: পবিত্র রোযা রেখে অনেকে বারবার থুথু ফেলে থাকে। এই থুথু না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোনো ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব:  পবিত্র রোযা রেখে মুখের থুথু বারবার না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। (আলমগীরী)

আহমদ আরিফা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

সুওয়াল:  রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করালে মায়ের রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মায়ের পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না, এমনকি ওযুও ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী)

মুহম্মদ জাকির হুসাইন, সউদী আরব

সুওয়াল:  রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে না। এমনকি যদি ওষূধের স্বাদ গলায় অনুভব হয় বা সুরমার রং যদি থুথুর সাথে দেখা দেয়, তাতেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী, মাবছূত, আইনুল হেদায়া)

মুহম্মদ ইয়াসীর, আমানবাড়িয়া

সুওয়াল: কোনো ব্যক্তি যদি পবিত্র রোযা রেখে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় ভুলে কিছু পান করে অথবা খেয়ে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় স্বপ্নে কিছু পান করলে বা খেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। আর জাগ্রত অবস্থায় ভুলে পেট ভরে পানাহার করলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে অবশ্যই পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার পরও যদি সামান্য খাদ্য বা পানীয় গিলে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এতে শুধু উক্ত পবিত্র রোযা উনার কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। (দুররুল মুখতার, শামী)

মুহম্মদ মুনীর হুসাইন, নূরানীগঞ্জ

সুওয়াল: যাকাত, ফিতরা ও উশর সম্পর্কে জানতে চাই এবং তা সহজে কিভাবে হিসাব রেখে প্রদান করা যায়?

জাওয়াব: “যাকাত” অর্থ বরকত বা বৃদ্ধি, পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধি। অর্থাৎ যারা যাকাত আদায় করবে, প্রদান করবে তাদের মালী, জিসমানী, রূহানী, সবদিকে বরকত ও বৃদ্ধি হবে এবং পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধি হাছিল হবে।

‘মালী’ তথা মাল-সম্পদে বরকত হবে, বৃদ্ধি হবে, পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হবে।

‘জিসমানী’ তথা তার দৈহিকভাবে বৃদ্ধি হবে, সে সুস্থ থাকবে, সব ধরনের পবিত্রতা হাছিল হবে। কোন বর্ধন তার হারাম দ্বারা হবে না। বরং হালাল দ্বারা হবে।

‘রূহানী’ বৃদ্ধি হচ্ছে তার তাযকিয়া অর্জন হবে, রূহানী যে বাধাসমূহ থাকে তা কেটে যাবে। আর রূহানী পবিত্রতা মানেই হচ্ছে সে কামালিয়াত অর্জন করে আল্লাহওয়ালা হয়ে যাবে। সুবাহানাল্লাহ!

যদি কারও নিছাব পরিমাণ সম্পত্তি অর্থাৎ ৭.৫ (সাড়ে সাত) ভরী সোনা অথবা ৫২.৫ (সাড়ে বায়ান্ন) ভরী রূপা অথবা তার সমতুল্য পরিমাণ অর্থ কারও কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদী বাদ দিয়ে এক বছর ধরে অতিরিক্ত থাকে তখন তার উপর যাকাত ফরয।

কতটুকু দিবে? ৪০ ভাগের ১ ভাগ, অর্থাৎ শতকরায় ২.৫%।  কখন দিবে? প্রত্যেক হিজরী বছরে ১ বার। মালে তেজারতের নিছাব পূর্ণ হলেও যাকাত দিতে হবে।

ফিতরা: ফিতরাও এক প্রকার যাকাত। যাকে ‘ছদকাতুল ফিতরা’ বা ‘যাকাতুল ফিতর’ বলা হয়। ফিতরা শব্দটা এসেছে ‘ইফতার’ থেকে। ইফতার হচ্ছে রোযা বিরতী দেওয়া। আমরা ঈদের দিন রোযা বিরতী করি, অর্থাৎ ঈদের দিন ছুবেহ ছাদিকের সময় ফিতরা ওয়াজিব হয়। পরিবারের সবাইকে অর্থাৎ পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড়, গোলাম-আযাদ সবাইকে ফিতরা দিতে হবে।

কে দিবে? যিনি পরিবারের কর্তা তিনি ফিতরা দিবেন। কতটুকু দিবে? ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য। কখন দিবে? রোযা শেষ হলে ঈদের নামাযের আগেই ফিতরা দিতে হয়। তবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের সুন্নত ছিল রমযান মাসের শেষ দিকে অর্থাৎ রমযানের মধ্যেই ফিতরা আদায় করা। তা না হলে রোযার মধ্যে যে ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে সে কারণে রোযা আসমান ও যমীনের মাঝে ঝুলে থাকে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে তা পৌছে না বা কবুল হয় না। কাজেই যথাসময়েই ফিতরা আদায় করতে হবে।

উল্লেখ্য, এ বছর অর্থাৎ ১৪৪০ হিজরীতে ঢাকা শহরে ৩৫.০০ টাকা কেজি হিসাবে অর্ধ সা’ অর্থাৎ এক সের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য- ৫৮.০০ টাকা (প্রায়)।

যেমন, ১ কেজি বা ১০০০ গ্রাম আটার মূল্য ৩৫.০০ টাকা।

প্রতি গ্রাম আটার মূল্য ৩৫.০০স্ট১০০০= ০.০৩৫ টাকা।

১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য ১৬৫৭ী০.০৩৫=৫৭.৯৯৫ টাকা অর্থাৎ ৫৮ টাকা (প্রায়)। এর কম দেয়া যাবে না। তবে ইচ্ছা করলে বেশি দিতে পারবে।

যাদের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব অর্থাৎ ঈদের দিন ছুব্হে ছাদিকের সময় যাদের নিকট নিছাব পরিমাণ (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য, যা বর্তমানে ১০৫০ টাকা তোলা হিসেবে ৫৫,১২৫ টাকা) সম্পদ থাকে, তাদের প্রত্যেককেই উল্লিখিত ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য দান করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় আটার দাম বিভিন্ন রকম। কাজেই যাদের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব, তাদেরকে বর্তমান মূল্য হিসাবে একসের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য হিসাবে দিতে হবে।

উশর: উশর শব্দটি এসেছে ‘আশরাতুন’ শব্দ থেকে। যার অর্থ হচ্ছে ১০ ভাগের ১ ভাগ। উশর হচ্ছে ফল-ফসলাদির যাকাত।

সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে পবিত্র উশর উনার কোন নিছাব নেই। বিনা পরিশ্রমে যমীন থেকে উৎপাদিত ফল-ফসলাদির ১০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: বাড়ীর আঙ্গিনায় একটি আম গাছে কোন পরিশ্রম ছাড়াই বছরের পর বছর আম হয়। এক্ষেত্রে, ১০০ টি আম হলে উশর দিতে হবে ১০টি আম বা তার মূল্য। আর পরিশ্রম করে ফল-ফসলাদি ফলানো হলে তখন ২০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: ধান, গম ইত্যাদির ক্ষেত্রে। যদি কোন জমিতে ১০০ মণ ধান হয় তবে উশর দিতে হবে ৫ মণ বা তার মূল্য।

কে দিবে? যিনি ফল-ফসলাদির মালিক হবেন বা পাবেন তিনি উশর দিবেন। কতটুকু দিবে? বিনা পরিশ্রমে হলে ১০ ভাগের ১ ভাগ। আর পরিশ্রম করে হলে ২০ ভাগের ১ ভাগ। কখন দিবে? যখন ফল-ফসলাদি তোলা হবে তখনই উশর বা নিছফে উশর দিতে হবে। এবং যতবার ফল-ফসলাদি তোলা হবে ততবারই উশর বা নিছফে উশর দিতে হবে।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاٰتُوْا حَقَّه‘ يَوْمَ حَصَادِه

অর্থ: তোমরা ফসল কাটার সময় তার হক (উশর) আদায় করো। (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪১)

ফসল কাটার সময় উশর আদায় করতে হবে। যাকাতের মতই উশর ফরয।

 

পবিত্র উশর আদায়ের উদাহরণ:

যখনই কোন ফল-ফসল উৎপন্ন হবে তখনই নীচের ছকে লিখে রাখতে হবে।

 

নং জমির বর্ণনা ফল/ফসল উৎপাদনের সময় (মাস/তারিখ ফল/ফসলের নাম উৎপন্ন ফল/ফসলের পরিমাণ নিছফে-উশর পরিশ্রম করে উৎপাদিত ফল ফসলের ক্ষেত্রে (২০ ভাগের ১ ভাগ উশর বিনা পরিশ্রমে উৎপাদিত ফল ফসলের ক্ষেত্রে (১০ ভাগের ১ ভাগ ফল/ ফসলের বাজার দর (টাকা) উশর-নিছফে উশর বাবদ বিক্রকৃত অর্থ (টাকা)
বাড়ির আঙ্গিনা   আম 500টি 50 টি X ১০ ৫০০
অমুক জমি-১ বিঘা   ধান 100মন X ৫ মন 800 ৪০০০

মুহম্মদ শরীফ হুসাইন, মুন্সীগঞ্জ

 

সুওল: সম্মানিত যাকাত উনার নিছাব ও ছাহিবে কাকে বলে?

জাওয়াব: ‘হাওয়ায়িজুল আছলিয়্যাহ’ বা মৌলিক প্রয়োজন বা চাহিদার অতিরিক্ত যে পরিমাণ অর্থ-সম্পদের মালিকানা ১ বছর থাকলে যাকাত আদায় করা ফরয হয়, নূন্যতমভাবে ওই পরিমাণ অর্থ-সম্পদকে সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় ‘নিছাব’ বলে।

নূন্যতম এই পরিমাণ হচ্ছে ২০ মিছকাল অর্থাৎ সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ অথবা ২০০ দিরহাম অর্থাৎ সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্য অথবা ঐ সমপরিমাণ অর্থ-সম্পদ।

আর যিনি নিছাব পরিমাণ মাল-সম্পদের মালিক হন উনাকে ছাহিবে নিছাব বা মালিকে নিছাব বলে।

মৌলিক প্রয়োজনীয় বস্তু বা সম্পদ : কোন মু’মিন-মুসলমান উনার কার্পণ্য ও অপচয় ব্যতিরেকে মধ্যমপন্থায় নিজের ও পরিবারের চাহিদা মিটানোর জন্যে যা যা আবশ্যক মূলতঃ সেটিই হচ্ছে মৌলিক প্রয়োজনীয় বস্তু। যেমন- খাদ্যদ্রব্য, পরিধেয় বস্ত্র, বসবাসের বা থাকার ঘর, ঘরের আসবাবপত্র, চিকিৎসার অর্থকড়ি বা ঔষধপত্র, গৃহস্থলি সামগ্রী, পেশাসংক্রান্ত উপকরণ, কারখানাার যন্ত্রপাতি ও স্থান, যোগাযোগের বাহন খরচ এগুলোর উপর যাকাত নেই। (আল হিদায়া, মুখতাছরুল কুদূরী)

মুহম্মদ ইমরান হুসাইন,মানিকগঞ্জ

সুওয়াল: সম্মানিত যাকাত উনার হিসাব কখন থেকে করতে হবে?

জাওয়াব: সম্মানিত যাকাত বছরান্তে ফরয হয় এবং বছরান্তে সম্মানিত যাকাত উনার হিসাব করা ওয়াজিব। চন্দ্র বছরের তথা আরবী বছরের যে কোন একটি মাস ও তারিখকে সম্মানিত যাকাত হিসাবের জন্যে নির্ধারণ করতে হবে। ফসলী বা ইংরেজী বছর হিসাব করলে তা শুদ্ধ হবে না। সম্মানিত যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ ও পণ্যের বেলায় এই শর্ত আরোপিত কিন্তু কৃষিজাত ফসল, মধু, খনিজ সম্পদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বছরান্তের শর্ত নেই। প্রতিটি ফসল তোলার সাথে সাথেই সম্মানিত যাকাত (উশর) আদায় করতে হবে কম বেশি যা-ই হোক। তবে ছদাক্বাতুল ফিত্বর-এর জন্যে বছর পূর্ণ হওয়া শর্ত নয়। পবিত্র ঈদের দিন ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই ছাহিবে নিছাব হলে ছদাক্বাতুল ফিত্বর আদায় করতে হবে। আর পবিত্র কুরবানী উনার হুকুমও অনুরূপ অর্থাৎ ১০, ১১, ১২ই যিলহজ্জ শরীফ উনার মধ্যে যে কোন দিন মালিকে নিছাব হলে পবিত্র কুরবানী করা ওয়াজিব। হিসাবের সুবিধার্থে পহেলা রমাদ্বান শরীফ; এ সম্মানিত যাকাত হিসাব করা যেতে পারে। এটাই উত্তম ও পবিত্র সুন্নত মুবারক।

সম্মানিত যাকাত পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে দেয়াই উত্তম :

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যে ১টি ফরয আদায়ে ৭০টি ফরয আদায়ের ছাওয়াব দান করেন। সুবহানাল্লাহ!

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার মধ্যেই সম্মানিত যাকাত আদায় করতেন।

যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّ حَضْرَتْ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَانَ يَقُوْلُ هٰذَا (شَهْرُ رَمَضَانَ) شَهْرُ زَكَاتِكُمْ فَمَنْ كَانَ عَلَيْهِ دَيْنٌ فَلْيُؤَدِّ دَيْنَهٗ حَتّٰى تَـحْصُلَ اَمْوَالُكُمْ فَتُؤَدُّوْنَ مِنْهُ الزَّكَاةَ.‏

অর্থ : “হযরত সাইব ইবনে ইয়াযীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে বলতেন, এ মাস আপনাদের সম্মানিত যাকাত আদায়ের মাস। অতএব, কারো ঋণ থাকলে তিনি যেন উনার ঋণ পরিশোধ করেন, যেন আপনাদের সম্পদ সঠিকভাবে নির্ণীত হয় এবং আপনারা (সঠিকভাবে) তা থেকে সম্মানিত যাকাত আদায় করতে পারেন।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক শরীফ : খ- ১৭ : কিতাবুয্ যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ৫৯৬)

মুহম্মদ জাহিদুল্লাহ, মোমেনশাহী

সুওয়াল: যাকাত আদায় না করলে কি ধরণের ক্ষতি হয়?

জাওয়াব: যারা যাকাত আদায় করে না তাদের হালাল মালের মধ্যে যাকাতের মাল সংমিশ্রিত হয়ে সমস্ত মালকে হারাম করে দেয়। ফলে উক্ত মাল থেকে মালিকে নিছাব যখন নিজের প্রয়োজন মিটায় তখন উক্ত ব্যক্তির গৃহীত হারাম খাদ্য-পানীয় দ্বারা তার দেহের বৃদ্ধি ঘটে। এক গ্লাস পানিতে এক ফোঁটা নাপাক পড়লে যেমন গ্লাসের পুরো পানিই নাপাক হয়ে যায় ও পানের অযোগ্য ও হারাম হয়ে যায়। ঠিক তেমনি হালাল মালের সাথে যাকাতের মাল মিশ্রিত হয়ে পুরো মালই হারাম হয়ে যায়।

আর হারাম খাবার গ্রহণ প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يَدْخُلُ الْـجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِيَ بِالْـحَرَامِ.

অর্থ : “হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ওই দেহ বেহেশতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম জীবিকা দ্বারা গঠিত হয়েছে।” (শু‘য়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী, মিশকাত শরীফ ২য় খ- ১২৯ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ২৭৮৭)

একদা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার এক গোলাম উনাকে কিছু খাবার দিল। হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি তা খেলেন। খাওয়া শেষ হলে তিনি উক্ত গোলামকে জিজ্ঞেস করলেন, “এটা কোথা থেকে এসেছে? এ প্রশ্নের জবাবে সে বলল, আমি জাহিলী যুগে এক ব্যক্তির ভাগ্য গণনা করেছি। অথচ আমি ভাগ্য গণনায় পারদর্শী নই। আমি লোকটিকে ধোঁকা দিয়েছি। আর সে আমাকে এটা দিয়েছে। আর তাই আপনি এইমাত্র খেলেন। এ কথা শুনে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নিজ মুখে হাত ঢুকিয়ে বমি করে দিলেন। পেটে যা ছিল সব বের করে দিলেন। অতঃপর বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ, যদি তা বের করতে গিয়ে আমার জীবন দিতে হতো তবে আমি তাই করতাম।” (জামি‘উল আহাদীছ, বাবু মুসনাদ আবি বকর, হাদীছ শরীফ নং ২৭৮০৭)

এছাড়া যাকাত আদায় না করে মূল মালের সাথে মিশ্রিত করলে মাল-সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায় : পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, যখন মূল মালের সাথে সম্মানিত যাকাত উনার মাল মিশবে তখন সেই মালই মূল মালকে ধ্বংস করে ফেলবে অর্থাৎ উভয় মালই ধ্বংস হবে। নাঊযুবিল্লাহ! এটা বর্ণনা করেছেন হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তারীখ গ্রন্থে। এছাড়া হযরত ইমাম হুমায়দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বৃদ্ধি করে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমার উপর যে মালের সম্মানিত যাকাত ফরয হয় অতঃপর সে মালের সম্মানিত যাকাত বের করবে না, তখন এই হারাম মালই অর্থাৎ যে মালের যাকাত আদায় করা হয়নি সেই মালই অন্য সমস্ত হালাল মালকে ধ্বংস করে দিবে।” নাঊযুবিল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)

শুধু তাই নয়, যাকাত দেয়া বন্ধ করলে মাল-সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায়। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যমীনে এবং পানিতে যেখানেই কোন সম্পদ বিনষ্ট বা ধ্বংস হয়, তা কেবল মালের যাকাত দেয়া বন্ধ করার কারণেই অর্থাৎ যাকাত না দেয়ার কারণে।” (ত্ববারানী শরীফ)

সর্বোপরি যাকাত না দিলে কোন ইবাদত-বন্দেগী কবুল হয় ন।  এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اُمِرْتُـمْ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ فَمَنْ لَّـمْ يُزَكِّ فَلَا صَلَاةَ لَهٗ.

অর্থ : ফক্বীহুল উম্মত, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা সম্মানিত নামায এবং সম্মানিত যাকাত আদায়ের জন্যে আদিষ্ট হয়েছেন। কাজেই যে ব্যক্তি সম্মানিত যাকাত আদায় করেনা, তার নামায কবুল হয়না।” (তাফসীরে কুরতুবী ৮ম খ-, ৮১ পৃষ্ঠা, সূরা তওবা শরীফ- আয়াত শরীফ নং ১২, প্রকাশনী : দারুল কিতাবুল মিছরিইয়্যা, কায়রো, ১৩৮৪ হিজরী; তাফসীরে রূহুল মায়ানী ৫ম খ-, ২৫২ পৃষ্ঠা, সূরা তওবা শরীফ, প্রকাশনী : দারুল কিতাবুল ‘ইলমিইয়্যা, বৈরুত, ১৪১৫ হিজরী; তাফসীরে খযীন ২য় খ-, ৩৩৯ পৃষ্ঠা, সূরা তওবা শরীফ, প্রকাশনী : দারুল কিতাবুল ‘ইলমিইয়্যা, বৈরুত, ১৪১৫ হিজরী; তাফসীরে বাগবী ৩য় খ-, ৩৩৬ পৃষ্ঠা, প্রকাশনী : দারুস সালাম লিন নাশার ওয়াত তাওযী’, রিয়াদ, ১৪১৬ হিজরী; তারগীব ওয়াত তারহীব ২য় খ-, ২২৪ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং : ১৪৭৬, প্রকাশনী : দারুল হাদীছ, কায়রো, ১৪১৪ হিজরী)

মূলতঃ যাকাত আদায় না করার কারণে উক্ত মাল যা গরীব-মিসকীনের হক্ব তা মালিকে নিছাব নিজেই ভক্ষণ করছে যা তার জন্য হারাম। এই হারাম ভক্ষন করার কারণে তার কোন ইবাদত-বন্দেগী, দু‘আ-মুনাজাত কবুল হবে না। যেহেতু ইবাদত-বন্দেগী, দু‘আ-মুনাজাত কবুল হওয়ার পূর্বশত হচ্ছে হালাল রিযিক।

মুহম্মদ আতিকুর রহমান, জয়পুরহাট

সুওয়াল: সম্মানিত যাকাত কাদেরকে দেয়া যাবে না?

জাওয়াব: সম্মানিত যাকাত যেহেতু সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ৩য় ও মধ্যবর্তী স্তম্ভ এবং সম্মানিত যাকাত হচ্ছেন সম্মানিত ঈমান উনার দলীল। তাই সম্মানিত যাকাত প্রদান করার ক্ষেত্রেও শরয়ী খুঁতমুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে প্রদান করতে হয়, নতুবা যাকাত আদায় হবে না। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ মুবারক প্রদান করেন-

تَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ‌ وَالتَّقْوٰى . وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْاِثْـمِ وَالْعُدْوَانِ. وَاتَّقُوا اللهَ . اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ.

অর্থ : “তোমরা নেক কাজে ও পরহেযগারীতে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো। বদ কাজে ও শত্রুতাতে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো না। আর এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

সুতরাং সম্মানিত যাকাত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে প্রদানের পূর্বে নি¤œলিখিত বিষয়গুলো অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে।

১. তাদের ঈমান-আক্বীদা বিশুদ্ধ কিনা,

২. সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নামে দ্বীন উনাকে ক্ষতি করার কাজে লিপ্ত কিনা,

৩. নেককার-পরহেজগার কিনা।

১.         যাদের ঈমান-আক্বীদা বিশুদ্ধ নয় তাদেরকে যাকাত প্রদান করা যাবে না : মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ মুবারক প্রদান করেন-

يَآ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اٰمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِيْ نَزَّلَ عَلٰى رَسُوْلِهٖ وَالْكِتَابِ الَّذِيْٓ اَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ ۚ

অর্থ : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করো অর্থাৎ আক্বীদা বিশুদ্ধ করো এবং আক্বীদা বিশুদ্ধ করো উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ও উনার প্রতি নাযিলকৃত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রতি এবং মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে নাযিলকৃত পূর্ববর্তী পবিত্র আসমানী কিতাব মুবারক উনাদের প্রতি।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৬)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে প্রতিভাত হয়েছে যে, যারা ঈমান এনেছে তাদের আক্বীদা বিশুদ্ধ হতে হবে অর্থাৎ তাদের ঈমান খুঁতমুক্ত হতে হবে। নতুবা তারা ঈমান আনার পরও মুসলমান উনাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। তাই যারা ঈমান আনার পরও আক্বীদা বিশুদ্ধ করতে পারেনি অর্থাৎ যাদের ঈমান খুঁতমুক্ত নয় এমন ব্যক্তি বা এমন ব্যক্তি কর্তৃক পরিচালিত কোন প্রতিষ্ঠানে সম্মানিত যাকাত প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।

হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, বিরাট পর্বতমালা যার অস্তিত্ব শত শত মাইল দূর হতে দেখা যায়। কিন্তু ঈমান অত্যন্ত সূক্ষ্ম, যার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। কিভাবে যে একজন ঈমানদার ব্যক্তি বেঈমান হয়ে যায় তা বোঝা কঠিন। যার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে কাদিয়ানীরা। তারা সব মানে কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘খ¦তামুন নাবিয়্যীন’ অর্থাৎ শেষ নবী হিসেবে স্বীকার করে না। নাঊযুবিল্লাহ! ১ টি শব্দ ‘খ¦তাম’ যার অর্থ ‘শেষ’ না মানার কারণে তারা মিথ্যাদাবীদার, প্রতারক গোলাম কাদিয়ানী (যে ইস্তেঞ্জাখানায় পড়ে মারা গিয়েছে) তাকে তারা শেষ নবী বলে দাবী করে। নাঊযুবিল্লাহ! এরা যত আমলই করুক না কেন এদের কোন আমলই কবুল হবে না। এরা কাট্টা কাফির, চির জাহান্নামী। এদেরকে কোনভাবেই যাকাত প্রদান করা যাবে না।

কাদিয়ানীদের মতো আমাদের সমাজে এমন অনেক সম্প্রদায় রয়েছে যাদের ঈমান-আক্বীদা বিশুদ্ধ নয়।

এদের প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

تَفْتَرِقُ اُمَّتِيْ عَلٰى ثَلَاثٍ وَّسَبْعِيْنَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ اِلَّا مِلَّةً وَّاحِدَةً قَالُوْا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّـمَ قَالَ مَآ اَنَا عَلَيْهِ وَاَصْحَابِـى.‏

অর্থ : “আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে একটি দল নাযাতপ্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মত মুবারক ও পথ মুবারক উনাদের উপর যারা কায়িম থাকবেন (উনারাই নাযাতপ্রাপ্ত দল)।” (তিরমিযী শরীফ : কিতাবুল ঈমান : বাবু মা-জা-য়া ফিফতিরাক্বি হাজিহিল উম্মাতি : হাদীছ শরীফ নং ২৬৪১)

অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, “আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, খলীফাতু ইমামি ছানী আলাইহিস সালাম সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, জেনে রাখুন! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বলেন, জেনে রাখুন! আপনাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাব ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছে এবং এ উম্মত অদূর ভবিষ্যতে ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। এর মধ্যে ৭২টি দল জাহান্নামে যাবে, আর একটি দল জান্নাতে যাবে। মূলতঃ সে দলটিই হচ্ছে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত।” (আবূ দাউদ শরীফ : কিতাবুস সুন্নাহ : বাবু শারিহিস সুন্নাহ : হাদীছ শরীফ নং ৪৫৯৭)

এই ৭২ টি বাতিল ও জাহান্নামী দলের মধ্যে কয়েকটি হলো- খারিজী সম্প্রদায়, ওহাবী সম্প্রদায়, দেওবন্দী সম্প্রদায়, দেওবন্দী সিলসিলাভুক্ত সমস্ত ক্বওমী মাদরাসা ইত্যাদি।

মহান আল্লাহ পাক সম্পর্কে দেওবন্দী সম্প্রদায়ের আক্বীদা হচ্ছে-

(১) “মহান আল্লাহ পাক তিনি মিথ্যা বলতে পারেন।” নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (রশিদ আহমদ গাংগুহী, ফতওয়া রশিদিয়া ১ম খ- পৃষ্ঠা ১৯; রশিদ আহমদ গাংগুহী, তালিফাত রশিদিয়া, পৃষ্ঠা ৯৮; খলীল আহমদ আম্বেঢী, তাজকিরাতুল খলীল, পৃষ্ঠা ১৩৫, মেহমুদ হাসান, আল-জিহাদুল মুগিল, পৃষ্ঠা ৪১)

(২) “মহান আল্লাহ পাক তিনি বান্দা ভবিষ্যতে কি করবে তা আগে থেকে বলতে পারেন না। বান্দা কর্ম-সম্পাদনের পর তিনি তা জানতে পারেন।” নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (হুসাইন আলী, তাফসীরে বুঘাতুল হাইরান, পৃষ্ঠা ১৫৭-১৫৮)

আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে তাদের আক্বীদা হচ্ছে-

(১) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জ্ঞানের চেয়ে শয়তান ও হযরত আযরাঈল আলাইহিস্ সালাম উনার জ্ঞান বেশি। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (খলীল আহমদ আম্বেঢী, বারাহীন-ই-কাতেয়া, পৃষ্ঠা-৫১)

(২) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাধারণ মানুষের কাছে খাতামুন নাবিয়্যীন হলেও বুযূর্গ ব্যক্তির কাছে নয়। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (কাশেম নানুতুবী, তাহযীরুন্নাছ, পৃষ্ঠা-৩)

(৩) যে বলবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাজির-নাযির সে কাফির। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (গোলামুল্লাহ খান প্রণীত যাওয়াহিরুল কোরান)

(৪) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আগে বা সর্বশেষে আসার মধ্যে কোন ফযীলত নেই। ফযীলত হলো মূল নবী হওয়ার মধ্যে। উনার পরে যদি এক হাজার নবীরও আগমন মেনে নেয়া হয় তাতেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খতমে নুবুওওয়াতের কোন রূপ বেশ-কম হবে না। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (কাশেম নানুতুবী, তাহযীরুন্নাছ, পৃষ্ঠা-২৫)

(৫) একজন নবীর জন্য সকল মিথ্যা থেকে মুক্ত ও নিষ্পাপ হওয়ার প্রয়োজন নেই। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (কাশেম নানুতুবী, শফীয়াতুল আক্বাইদ, পৃষ্ঠা ২৫)

(৬) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তাগুত (শয়তান) বলা যায়। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (হুসাইন আলী, তাফসীর বুঘাতুল হাইরান, পৃষ্ঠা ৪৩)

(৭) নবী-রসূলের চেয়ে নবী-রসূলগণের উম্মত আমলের মাধ্যমে মর্যাদাবান হয়। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (কাশেম নানুতুবী, তাহযীরুন নাছ, পৃষ্ঠা ৫)

(৮) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পুলছিরাত হতে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছি। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (হুসাইন আলী, তাফসীর বুঘাতুল হাইরান, পৃষ্ঠা ৮)

(৯) কালিমা শরীফ-এ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ”-এর পরিবর্তে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আশরাফ আলী রসূলুল্লাহ” এবং দুরূদ শরীফ-এর “আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা সাইয়্যিদিনা নাবিয়ানা মুহম্মদ”-এর পরিবর্তে “আল্লাহম্মা ছল্লি আলা সাইয়্যিদিনা নাবিয়ানা আশরাফ আলী” পড়লে কোন ক্ষতি হবে না।” নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (আশরাফ আলী থানভী, রিসালা আল ইমদা, পৃষ্ঠা ৩৪-৩৫)

(১০) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা আর হিন্দুদের দেবতা কৃষ্ণের জন্মদিন পালন করা একই। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (খলীল আহমদ আম্বেটী, বারাহীন-ই-কাতেয়া, পৃষ্ঠা ১৪৮)

(১১) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষত্ব দাজ্জালের মত। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (কাশেম নানুতুবী, আবে হায়াত, পৃষ্ঠা ১৬৯)

(১২) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের বড় ভাই এবং আমরা উনার ছোট ভাই। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (খলীল আহমদ আম্বেটী, বারাহীন-ই-কাতেয়া, পৃষ্ঠা ৩)

(১৩) রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মরে মাটির সাথে মিশে গেছেন। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (ফতওয়ায়ে রশিদিয়া)

(১৪) কোন কিছু ঘটানোর জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইচ্ছা পোষণ করার গুরুত্ব নেই। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (কাশেম নানুতুবী প্রণীত আবে হায়াত, পৃষ্ঠা ১৬১)

(১৫) হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুজিযা শরীফ থেকে যাদুকরদের যাদু সর্বোকৃষ্ট হতে পারে। নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক! (ফতওয়ায়ে রশিদিয়া, ২য় খ-, পৃষ্ঠা ৩৫)

এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। যেমন- আশরাফ আলী থানবী যে ‘হিফজুল ঈমান’ নামে একটি বইয়ের মধ্যে লিখেছে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গাইব হাইওয়ান, বাচপান, মজনুন অর্থাৎ উনার ইলমে গাইব পশুর মতো নাঊযুবিল্লাহ! শিশুর মতো নাঊযুবিল্লাহ! এবং পাগলের মতো নাঊযুবিল্লাহ!

সুতরাং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে যে এমন নিকৃষ্ট উদাহরণ দিতে পারে তার তো ঈমান থাকতে পারে না। শরঈ ফতওয়া মুতাবিক, সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হওয়ার কথা।

এই ক্বওমী, দেওবন্দী এদের সিলেবাসে এগুলো শিখানো হয়। নাঊযুবিল্লাহ! এদের কাছ থেকে এগুলো শিখে এই সব কওমী, দেওবন্দীরা বলে মহান আল্লাহ পাক তিনি নাকি মিথ্যা কথা বলতে পারেন। নাঊযুবিল্লাহ! তারা বলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বড় ভাই। নাঊযুবিল্লাহ! আর যদি বড় ভাই মারা যায় তাহলে বড় ভাইয়ের আহলিয়াকে বিয়ে করা যায়। নাঊযুবিল্লাহ! সুতরাং বোঝা যায় এরা মূলতঃ বদ চরিত্র।

অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা তাদের লিখিত ও অন্তরে পোষণকৃত এ সমস্ত কুফরী আক্বীদা হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। এছাড়া দ্বীন ইসলাম উনার অন্যান্য বিষয়েও উক্ত সম্প্রদায়ের আক্বীদাগত ত্রুটি রয়েছে।

সুতরাং যাদের ঈমানে খুঁত বা ত্রুটি রয়েছে তাদেরকে সম্মানিত যাকাত প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। তাদেরকে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা করার অর্থই হলো গরীব মুসলমান উনাদের হক্ব নষ্ট করে মুসলমান উনাদের শত্রু কাফিরদের সাহায্য-সহযোগিতা করা। নাঊযুবিল্লাহ!

২. যাদের আমলে ত্রুটি রয়েছে তাদেরকে যাকাত প্রদান করা যাবে না :

ঈমানী খুঁতযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে যেমন সম্মানিত যাকাত প্রদান করা হারাম তেমনি যারা গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে তাদেরকেও সম্মানিত যাকাত প্রদান করা হারাম। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَرِيْرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَنَّ فِى الْاِسْلَامِ سُنَّةً سَيّئَةً كَانَ عَلَيْهَا وِزْرُهَا وَ وِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِـهَا مِنْ بِعْدِهٖ.

অর্থ : “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে কেউ একটা বদ কাজের সূচনা করলো যতজন তাতে শরীক হলো তাদের সবার গুনাহই যে বদকাজের সূচনা করেছে তার উপর গিয়ে পড়বে।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)

বর্তমান সমাজে প্রচলিত মাদরাসাগুলো একদিকে যেমন ঈমানী খুঁতযুক্ত তথাকথিত আলিম তৈরী করছে অন্যদিকে তাদের আমলেও রয়েছে অনেক গলদ। ইসলামী শরীয়ত উনার দ্বারা নিষিদ্ধ বা হারামকৃত বিষয়গুলো যেমন প্রাণীর ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, খেলাধুলা করা ও দেখা, গান-বাজনা করা ও দেখা, গণতন্ত্রের চর্চা করা, মৌলবাদের চর্চা করা, সন্ত্রাসবাদের চর্চা করা ইত্যাদিকে তারা হালাল জেনে ও মেনে নিজেরা যেমন সে অনুযায়ী আমল করছে তেমনি মুসলমান উনাদেরকেও সে হারাম আমলগুলো করতে উদ্ধুদ্ধ করছে। নাঊযুবিল্লাহ!

অর্থাৎ শরাবের বোতলে হালাল সীল লাগালে যেমন শরাব পান হালাল হয়ে যায় না বরং হারামই থাকে। ঠিক তেমনি উপর দিয়ে যতই ইসলামী লেবাস পরিধান করুক না কেন এদের সম্পৃক্ততা হচ্ছে হারামের সাথে। তাই ধর্মব্যবসায়ীদের মাদরাসাতে অর্থাৎ সন্ত্রাসী তৈরিকারী মাদরাসাগুলোতে সম্মানিত যাকাত প্রদান করা জায়িয হবে না।

আরো যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে বা ব্যক্তিকে যাকাত, ফিত্বরা ও উশর প্রদান করা যাবে না। তাদের বিবরণ নিচে দেয়া হলো-

(১) আনজুমানে মফিদুল ইসলাম : বর্তমান সময়ে তথাকথিত জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের অন্যতম হচ্ছে “আনজুমানে মফিদুল ইসলাম”। এই প্রতিষ্ঠানটি কথিত ফ্রি লাশ পরিবহন, ফ্রি দাফন সেবার নামে দেশ থেকে যেমন যাকাত, ফিত্বরা, দান, ছদকা বিভিন্নভাবে অর্থ সংগ্রহ করছে তেমনি বিদেশ থেকেও বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ডোনেশন সংগ্রহ করছে। এই পদ্ধতিতে বর্তমানে এটি বিশাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেক বছর দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা এখন তাদের নিকট মামুলি ব্যাপার। তারা ফ্রি লাশ পরিবহন ও ফ্রি দাফন সেবার নাম দিয়ে মানুষের বেওয়ারিশ লাশ সংগ্রহ করে সে লাশগুলো কবর না দিয়ে বরং গরম পানিতে সিদ্ধ করে গোশতগুলো আলাদা করে ফেলে। এরপর হাড়গুলো বিক্রি করে। নাঊযুবিল্লাহ!

এছাড়াও কবর থেকে লাশ তুলে গরম পানিতে লাশের গোশত ছাড়িয়ে সে লাশের কঙ্কালও উচ্চ দামে বিক্রি করার, কবর থেকে পুরাতন কঙ্কাল চুরি ও পাচারকারী দলের সাথে জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। যা অনলাইনসহ অনেক মিডিয়াতেই প্রকাশ পেয়েছে। কাজেই, আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামে যাকাত-ফিত্বরা দেয়ার অর্থ হচ্ছে- টাকা আত্মসাৎ, দুর্নীতি, লাশ গায়েব এবং কঙ্কাল চুরি ও পাচার এসবের মতো হারাম ও গুনাহের কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করা। নাঊযুবিল্লাহ!

(২) কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন : মুসলমান উনাদের সম্মানিত যাকাত উনার অর্থ আত্মসাতে আরেক জঘন্যতম প্রতিষ্ঠান হচ্ছে “কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন”। এর প্রধানকে তারা গুরুজি বলে ডাকে। যার সাড়ে তিন হাত শরীরে সম্মানিত সুন্নত উনার কোনো চিহ্নই নেই। তার দাড়ি নেই এবং বের্পদা মহিলাদের সাথে সে হরহামেশা সাক্ষাৎ করে। এই কোয়ান্টামের সাথে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। এই কোয়ান্টাম সম্মানিত যাকাত-ফিত্বরা এসব মুসলমানদের কাছ থেকে নিয়ে পাহাড়ে সন্ত্রাসী উপজাতি বৌদ্ধদের পিছনে খরচ করে। মূলতঃ কোয়ান্টামের কার্যক্রম, তাদের নীতি সব সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার খিলাফ। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদেরকে গুরুত্ব না দিয়ে অর্থাৎ পরিহার করে এই ‘কোয়ান্টাম’ হিন্দু-বৌদ্ধ ইত্যাদি বাতিল ধর্ম-মতের কথা এনে মুসলমান উনাদের মাঝে ছড়াচ্ছে; যা সম্পূর্ণ কুফরী।

এছাড়া হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন নোংরা যোগী-সন্ন্যাসীরা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নারী-পুরুষ একাকার করে এই প্রতিষ্ঠানে যোগ সাধনা বা মেডিটেশন শিক্ষা দিয়ে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! আর এই যোগ সাধনা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সস্পূর্ণরূপে হারাম।

“কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন” এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যম দিয়ে অর্থ সংস্থান করে হারাম ও কুফরী কাজে বিনিয়োগ করে ব্যবসা করে। তারা মানুষের মগজ ধোলাই করে শুধু পয়সাই আদায় করে না, ফ্রি রক্তদান কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের দেয়া রক্ত বিক্রি করেও পয়সা সংগ্রহ করে ব্যবসা করে। তারা তাদের মাটির ব্যাংক যা লা’নতের কারণ, এর মাধ্যমেও অর্থ সংগ্রহ করে থাকে।

তাছাড়াও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ৮ খাতের কোনো খাতের মধ্যেই কোয়ান্টাম পড়ে না। তাই এদেরকে পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া ও যাকাত, ফিত্বরা দিলে তা কস্মিনকালেও আদায় তো হবেই না; বরং কুফরীর গুনাহ হবে।

(৩) জাকির নায়েক ওরফে কাফির নায়েক ও পিস টিভি : বর্তমান যামানায় সবচেয়ে জঘন্যতম বাতিল ফিরক্বা ওহাবী মতবাদের একনিষ্ঠ ধারক-বাহক হচ্ছে জাকির নায়েক ওরফে কাফির নায়েক ও তার দ্বারা পরিচালিত পিস টিভি। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে টিভি দেখা, টিভি’তে প্রোগ্রাম করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কবীরা গুনাহ। কেননা, টিভি’র মূলই হচ্ছে ছবি। আর ছবি সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “প্রত্যেক ছবি তুলনেওয়ালা ও তোলানেওয়ালাই জাহান্নামী। (মুসলিম শরীফ)

তাই সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ফায়ছালা হলো- ছবি তোলা, তোলানো, আঁকা, রাখা, দেখা সবই হারাম। হালাল বা জায়িয মনে করা কুফরী। অথচ তারা হালাল বা জায়িয মনে করেই টিভি’তে প্রোগ্রাম করছে। কাজেই তারা যে শুধু হারাম কাজ করছে তা নয়, বরং তারা সুস্পষ্ট কুফরী করছে। তাদের কারণে যারা টিভি’কে জায়িয মনে করবে তারাও কুফরী করবে। অর্থাৎ কাফির হবে। এরপর বেপর্দা ও গান-বাজনার গুনাহ তো রয়েছেই।

আর জাকির নায়েক ওরফে কাফির নায়েকের মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার লেশমাত্রও নেই। নাঊযুবিল্লাহ! উপরন্তু সে চব্বিশ ঘণ্টা ইহুদী-নাছারাদের লেবাস কোট-প্যান্ট, টাই পরিধান করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! সে পর্দার বিধান চরমভাবে লঙ্ঘন করে। স্কাট পরা বেপর্দা মহিলার সাথে দেখা করতেও দ্বিধাবোধ করে না। নাঊযুবিল্লাহ! শুধু তাই নয়, সে অসংখ্য কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী। আর সেই কুফরী আক্বীদাগুলোই সে পিসটিভি’র মাধ্যমে প্রচার-প্রসার করে অসংখ্য লোককে কাফির বানাচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! যেমন, তার বক্তব্য হলো-

১. ‘রাম ও কৃষ্ণ নবী হতে পারে।’ নাঊযুবিল্লাহ!

২. ‘পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ব্যাকরণগত ভুল আছে।’ নাঊযুবিল্লাহ!

৩. ‘ওযু ছাড়া পবিত্র কুরআন শরীফ স্পর্শ করা ও পড়া যাবে।’ নাঊযুবিল্লাহ!

৪. ‘হিন্দুদের বেদ মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী হতে পারে।’ নাঊযুবিল্লাহ!

৫. মহান আল্লাহ পাক উনার সবকিছুর উপর ক্ষমতা রয়েছে; কিন্তু তিনি সবকিছু সৃষ্টি করতে অক্ষম। যেমন তিনি লম্বা বেটে মানুষ তৈরি করতে অক্ষম।’ নাঊযুবিল্লাহ!

৬. মাযহাব মানা জরুরী নয়। পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ মুতাবিক চললেই হয়। নাঊযুবিল্লাহ! (জাকির নায়েক : লেকচার সমগ্র)

তাছাড়া পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ৮ খাতের কোনো খাতের মধ্যেই পিস টিভি পড়ে না। তাই এদেরকে যাকাত, ফিৎরা দিলে তা কস্মিনকালেও আদায় তো হবেই না; বরং কুফরীর গুনাহ হবে।

(৪) ইসলামী ব্যাংক ও সরকারী যাকাত ফাউন্ডেশন : সরকারের সাথে লেয়াজু রাখার জন্য ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে যাকাত উনার একটি অংশ সরকারী কোষাগারে জমা দেয়। সরকার এই যাকাত উনার অর্থ ত্রাণ তহবিলের মাধ্যমে হিন্দুদের দূর্গা পূজায় প্রদান করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! এছাড়াও সরকারের যাকাত ফাউন্ডেশনের যাকাত উনার অর্থও দূর্গা পূজায় ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই ইসলামী ব্যাংক কিংবা সরকারী যাকাত ফাউন্ডেশনে যাকাত প্রদান করা সুস্পষ্ট শিরক। কেননা উক্ত প্রতিষ্ঠানে যাকাত প্রদানের মাধ্যমে মুশরিকদের পূজাকে সহযোগীতা করা হচ্ছে, যা সুস্পষ্টভাবে শিরক।

তাই বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, যামানার মুজতাহিদ ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইউস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল উমাম, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বর্তমানে হক্ব মত-পথ ও সুন্নতী আমলের একমাত্র ও উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো, ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা।

কাজেই, যাকাত-ফিত্বরা বা অন্যান্য দান-ছদক্বা-মান্নত ইত্যাদি যারা ছদকায়ে জারিয়ার খাতে দিয়ে ছওয়াব হাছিল করতে চান তাদের জন্য একমাত্র ও প্রকৃত স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা ও ইয়াতীমখানা’ ৫নং আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা।

মুহম্মদ আব্দুর রহীম, নূরগাঁও

সুওয়াল: ব্যবসায়িক মালের কিসের উপর যাকাত দিতে হবে?

জাওয়াব: ব্যবসায়িক মালের মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে: একটা লোক মালের ব্যবসা করবে। সে ১০ লাখ টাকার জিনিস কিনলো। এখন এই মালের দাম ২০ লাখ টাকা হয়ে গেছে। পুঁজি ছিলো ১০ লাখ। ২০ লাখ হলেই সে আর ২০ লাখ টাকা পাচ্ছে না। কারণ যদি মালের দাম ৫ লাখ টাকা হয়ে যায় তাহলে কি করবে। বিক্রি করার আগ পর্যন্ত কেনা দামই থাকবে। যখন বিক্রি করে ফেললো, বেশি দাম পেলো তখন বেশি দামের উপরই যাকাত দিতে হবে।

মাল কিনলো ১০ লাখ টাকা দিয়ে কিন্তু এটা এখন বাজারে ৫ লাখ টাকা হয়ে গেছে তাহলে তাকে ৫ লাখ টাকার উপরই যাকাত দিতে হবে। যেহেতু এটা বাজার দরের উপর নির্ভর করে।

একটা লোক স্বর্ণের ব্যবসা করে তার যাকাতের এক হুকুম আর স্বর্ণ যে ব্যবহার করে তার আরেক হুকুম। দুই জনের দুই হুকুম।

একটা লোক স্বর্ণ কিনলো ১০ কোটি টাকার। বাজার দর এটার দাম আছে ১৪ কোটি টাকা বা ১৫ কোটি টাকা, তাহলে সে ১০ কোটি টাকার যাকাত দিবে। বিক্রিত দামে নয়, কেনা দামে। আর একটা লোক স্বর্ণ কিনলো, সে ব্যবহার করে। তার ১০০ ভরি স্বর্ণ আছে। ১০০ ভরি স্বর্ণ কিনেছিলো ১০ লাখ টাকা দিয়ে এখন এটা ৫০ লাখ টাকা হয়েছে।

তাহলে তাকে ৫০ লাখ টাকার উপর যাকাত দিতে হবে। দুইটার দুই হুকুম। এই বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে কিনলো তার পুঁজিতো সেটা। এখন ৫ লাখ টাকার জিনিস ২৫ লাখ টাকা বিক্রি করলে তখন তাকে ২৫ লাখ টাকার উপর যাকাত দিতে হবে। কারণ নিছাব আগেই হয়েছে।

লাভ-ক্ষতি দুটাই হিসাব করতে হবে। একটা হিসাব করলে হবে না। দুটাই হিসাব করতে হবে। দুইটা হিসাব করলে তাহলে বুঝতে সহজ।

রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সম্মানিত যাকাত আদায়ের বিধান : সাধারণভাবে যারা রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করে তার কিছুই নেই। অর্থাৎ জমির মালিকের সাথে চুক্তি করে বাড়ি নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বিক্রি করে। এই ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত পুঁজির হিসাব করতে হবে। এখানে ফ্ল্যাটের দাম দেখা যাবে না।

একটা লোক ৫০ লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করলো। অতঃপর ১০ জন মালিকের সাথে চুক্তি করলো, জায়গা নিলো, ৫ কোটি টাকা লোন নিয়ে ফ্ল্যাটগুলো করতে থাকলো, এগুলো সে বিক্রি করবে, লাভ করবে। সে যে ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করছে, এটা তার ব্যবসার মাল, মূল পুঁজি। এটার উপর অর্থাৎ তার মূল পুঁজি ৫০ লক্ষ টাকারই যাকাত দিতে হবে। ঐ ৫ কোটি টাকার জন্যে ৫০ লক্ষ টাকা মাইনাস হবে না। ঐ ৫ কোটি টাকার বিল্ডিং আছে। ঐ বিল্ডিংগুলো সে যেহেতু বানিয়ে বিক্রি করবে সেটাতো তার মালিকানা বা অধীনে না। কারণ যে কোন কিছুর যাকাত দিতে হলে সেটা তার মালিকানায় ১ বছর থাকতে হবে। এখন সেটা তৈরি করা হলে বিক্রি করে যে লাভটা হবে সেই লাভটা যদি ১ বছর থাকে তাহলে তার নিছাব হবে।

ঔষধ কোম্পানীগুলোর সম্মানিত যাকাত আদায়ের বিধান : ঔষধ কোম্পানীগুলোর ব্যাঙ্কে টাকা জমা থাকে। আবার বহু টাকার প্রোডাক্ট/পণ্য মার্কেটে/বাজারে থাকে। যে টাকা ব্যাঙ্কে আছে তার যাকাত যেমন আদায় করতে হবে, ঠিক তেমনি মার্কেটে যত টাকার প্রোডাক্ট আছে তারও যাকাত আদায় করতে হবে। তবে যে টাকা বকেয়া হিসেবে মার্কেটে আছে সেই টাকা যদি দেনাদাররা স্বীকার করে যে, আদায় করে দিবে তবে তা হস্তগত হওয়ার পূর্বেও আদায় করতে পারবে। অন্যথায় হস্তগত হওয়ার পরও আদায় করতে পারবে। আর দেনাদার যদি দেনা অস্বীকার করে অথবা টাকা দিতে অস্বীকার করে তবে সে টাকার যাকাত দিতে হবে না।

মুহম্মদ আবূ বকর ছিদ্দীক্ব, দাউদকান্দি, কুমিল্লা।, মুহম্মদ কাউছার মিয়া, দাউদকান্দি, কুমিল্লা।

সুওয়াল: আরবী ১২ মাসের চাঁদ দেখার সঠিক মাসআলা দলীল-আদিল্লাহ ভিত্তিক জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব:

আরবী ১২ মাসের চাঁদ দেখার সঠিক মাসআলা নিম্নে বর্ণিত হলো-

পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস: যদি আকাশ মেঘলা থাকে, তাহলে সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাসে শুধু একজন পুরুষ বা একজন মহিলা চাঁদ দেখলেই যথেষ্ট হবে। আর যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে তাহলে বহুসংখ্যক লোক চাঁদ দেখা আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

وَإِذَا كَانَ بِالسَّمَاءِ عِلَّةٌ قَبِلَ الْإِمَامُ شَهَادَةَ الْوَاحِدِ الْعَدْلِ فِي رُؤْيَةِ الْـهِلَالِ رَجُلًا كَانَ أَوْ امْرَأَةً حُرًّا كَانَ أَوْ عَبْدًا.

অর্থ: “আর যখন আকাশে কোন ত্রুটি থাকবে অর্থাৎ আকাশ যখন মেঘলা থাকবে, তখন ইমাম সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাসের চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে একজন ন্যায় পরায়ণ ব্যক্তির সাক্ষি গ্রহণ করবেন, হোক সেই ব্যক্তি পুরুষ অথবা মহিলা, স্বাধীন অথবা দাস।” সুবহানাল্লাহ! (আল মুখতাছারুল কুদূরী, বিদায়াতুল মুবতাদী, হিদায়াহ্, ইনায়াহ্, বিনায়াহ্ ইত্যাদি)

কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছ,

وَإِذَا لَمْ تَكُنْ بِالسَّمَاءِ عِلَّةٌ لَمْ تُقْبَلْ الشَّهَادَةُ حَتَّى يَرَاهُ جَمْعٌ كَثِيرٌ يَقَعُ الْعِلْمُ بِخَبَرِهِمْ.

 অর্থ: “আর যখন আকাশে কোন প্রকার ত্রুটি না থাকবে অর্থাৎ আকাশ পরিষ্কার থাকবে, তখন অসংখ্য লোক চাঁদ দেখতে হবে, যাদের সংবাদের ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকবে না।” সুবহানাল্লাহ! (বিদায়াতুল মুবতাদী, হিদায়াহ্, ইনায়াহ্, বিনায়াহ্ ইত্যাদি)

পবিত্র শাওওয়াল ও পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস: যদি আকাশ মেঘলা থাকে, তাহলে সম্মানিত শাওওয়াল শরীফ ও সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ মাসে দুইজন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা চাঁদ দেখলেই যথেষ্ট হবে। আর যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে, তাহলে বহুসংখ্যক লোক চাঁদ দেখা আবশ্যক। যেমন- এ প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের বিশ্বখ্যাত ফক্বীহ হযরত ইমাম আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (বিছাল শরীফ: ১২৫২ হিজরী শরীফ) উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘রদ্দুল মুহ্তার আলাদ্ র্দুরিল মুখ্তারের ৩য় খণ্ডের ৩৬১ নং পৃষ্ঠায়’ বলেন-

 ذُو الْحَجَّةِ كَشَوَّالٍ فَلَا يَثْبُتُ بِالْغَيْمِ إلَّا بِرَجُلَيْنِ أَوْ رَجُلٍ وَامْرَأَتَيْنِ وَفِي الصَّحْوِ لَا بُدَّ مِنْ زِيَادَةِ الْعَدَدِ.

অর্থ: “ সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ মাস হচ্ছে সম্মানিত শাওওয়াল শরীফ মাসের অনুরূপ। আকাশ মেঘলা থাকলে দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সাক্ষিই যথেষ্ট হবে। আর যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে, তাহলে বহুসংখ্যক লোক চাঁদ দেখা আবশ্যক।” সুবহানাল্লাহ!

বাকি ৯ মাস তথা সম্মানিত শা’বান শরীফসহ অন্যান্য মাস: সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ, সম্মানিত শাওওয়াল শরীফ ও সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ এই তিন মাস ছাড়া বাকি ৯ মাস তথা সম্মানিত শা’বান শরীফ, সম্মানিত যিলক্বদ শরীফ, সম্মানিত মুহররমুল হারাম শরীফ, সম্মানিত ছফর শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূর শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবী‘উল আউওয়াল শরীফ), সম্মানিত রবী‘উছ ছানী শরীফ, সম্মানিত জুমাদাল ঊলা শরীফ, সম্মানিত জুমাদাল উখরা এবং সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ মাসের ক্ষেত্রে আকাশ মেঘলা থাকুক অথবা পরিষ্কার থাকুক উভয় অবস্থায় দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা চাঁদ দেখলেই যথেষ্ট হবে। যেমন- এ প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের বিশ্বখ্যাত ফক্বীহ হযরত ইমাম আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘রদ্দুল মুহ্তার আলাদ্ র্দুরিল মুখ্তারের ৩য় খণ্ডের ৩৬১ নং পৃষ্ঠায়’ বলেন,

)وَبَقِيَّةُ الْاَشْهُرِ التِّسْعَةِ) فَلَا يُقْبَلُ فِيْهَا اِلَّا شَهَادَةُ رَجُلَيْنِ اَوْ رَجُلٍ وَامْرَاَتَيْنِ.

অর্থ: “আর বাকী ৯ মাসের ক্ষেত্রে অর্থাৎ সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ, সম্মানিত শাওওয়াল শরীফ এবং সম্মানিত যিলহজ্জ শরীফ এই ৩ মাস ছাড়া বাকী ৯ মাসের ক্ষেত্রে (সম্মানিত শা’বান শরীফ মাসসহ অন্যান্য মাসের ক্ষেত্রে চাঁদ দেখার জন্য) দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সাক্ষীই গ্রহণযোগ্য হবে।” সুবহানাল্লাহ! (রদ্দুল মুহ্তার আলাদ্ র্দুরিল মুখ্তার ৩/৩৬১)

উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-

أَنَّهُ فِي الْأَهِلَّةِ التِّسْعَةِ لَا فَرْقَ بَيْنَ الْغَيْمِ وَالصَّحْوِ.

অর্থ: “৯ মাসের চাঁদের ক্ষেত্রে আকাশ মেঘলা এবং পরিষ্কার উভয় অবস্থাতে কোন পার্থক্য নেই।” সুবহানাল্লাহ! (রদ্দুল মুহ্তার আলাদ্ র্দুরিল মুখ্তার ৩/৩৬১)

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া। ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

সুওয়াল: মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: (পূর্ব প্রকাশিতের পর- ৪৫)

‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার একখানা অর্থ মুবারক হচ্ছেন ‘অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী’:

মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি যে অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী তা বুঝার জন্য- তিনি যে সমস্ত কায়িনাতবাসীকে মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত শান মুবারক সম্পর্কে সর্বোচ্চ এবং সর্বোত্তম সম্মানিত বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন, তা ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদাহ মুবারক: সর্বপ্রথম সৃষ্টি মুবারক:

মহান আল্লাহ পাক তিনি পুশীদাহ (গোপন) ছিলেন। তিনি ব্যতীত আর কোনো কিছুরই অস্তিত্ব ছিলো না। তিনি যখন ইচ্ছা মুবারক করলেন যে, তিনি উনার মহাসম্মানিত রুবূবিয়্যাত মুবারক প্রকাশ করবেন, তখন তিনি সম্মানিত মুহব্বত মুবারক করে সর্বপ্রথম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাহবূব হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! তিনিই মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বপ্রথম সৃষ্টি মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত আর কোনো কিছুরই অস্তিত্ব ছিলো না। সুবহানাল্লাহ!

হাবীবুল্লাহ হিসেবে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হিসেবে, সমস্ত সম্মানিত ও পবিত্র ছিফত মুবারক এবং সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারকসহই সৃষ্টি মুবারক

যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাবীবুল্লাহ হিসেবে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হিসেবে, পবিত্রতম এবং পবিত্রতাদানকারী হিসেবে, মুত্তলা’ ‘আলাল গয়িব হিসেবে, রহমতুল্লিল ‘আলামীন হিসেবে, সমস্ত সম্মানিত ও পবিত্র ছিফত মুবারক এবং সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক হাদিয়া মুবারক করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! কাজেই, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৪০ বছর বয়স মুবারকে নবী ও রসূল হয়েছেন, এর আগে তিনি নবী ও রসূল ছিলেন না, এ কথা বলা কাট্টা কুফরী। বরং এ কথা বলতে হবে যে, তিনি সৃষ্টির শুরু থেকেই মহাসম্মানিত নবী ও রসূল ছিলেন। তবে দুনিয়াবী দৃষ্টিতে বা হিসেবে ৪০ বছর বয়স মুবারক-এ উনার আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত নুবুওওয়াতী ও রিসালতী শান মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক ঘটেছে। সুবহানাল্লাহ! এ কথা বলাও সুস্পষ্ট কুফরী যে, তিনি কিছু জানতেন না, পরে উনাকে সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে ইলম মুবারক হাদিয়া করা হয়েছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! মূলত, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত ইলম মুবারক হাদিয়া মুবারক করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তবে সম্মানিত ওহী মুবারক করে উনার সেই সম্মানিত ইলম মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক ঘটিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! এ কথা বলাও কাট্টা কুফরী ও চিরজাহান্নামী হওয়ার কারণ যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল ইলম মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সীনা মুবারক) চাক করে উনাকে পবিত্রতা মুবারক হাদিয়া করা হয়েছে এবং এর আগে উনার মধ্যে নাপাকী ছিলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! মূলত, উনাকে পবিত্রতম এবং পবিত্রতাদানকারী হিসেবেই সৃষ্টি মুবারক করা হয়েছে। তবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল ইলম মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সীনা মুবারক) চাক করে উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের বহিঃপ্রকাশ মুবারক ঘটানো হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

 

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব