সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৬৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আব্দুল আউওয়াল, হোমনা, কুমিল্লা

সুওয়াল: কা’বা শরীফ উনার ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া যাবে কিনা? অথবা সবুজ গম্বুজ উনার ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া যাবে কিনা? অথবা সবুজ, কালো, সাদা বা লাল জায়নামাযে নামায পড়া যাবে কিনা?

জাওয়াব: পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া যাবে না। একইভাবে রওযা শরীফ উনার সবুজ গম্বুজের ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়াও যাবে না। উক্ত দু’ প্রকার জায়নামাযে নামায পড়া সম্পূর্ণরূপে হারাম, চরম বেয়াদবী ও কুফরী এবং ঈমান-আক্বীদা ও আমল নষ্ট হওয়ারও কারণ। আর পবিত্র রওযা শরীফ উনার গম্বুজ সবুজ এবং পবিত্র কা’বা শরীফ উনার গিলাফ কালো হওয়ার কারণে সম্মান বা আদবের কারণে উক্ত দুরংয়ের জায়নামায ব্যবহার করা হতে বিরত থাকতে হবে। অনুরূপভাবে উক্ত দু রংয়ের সেন্ডেল  পরিধান করা হতেও বিরত থাকা কর্তব্য।

এছাড়া সাদা রংয়ের জায়নামায পুরুষ-মহিলা উভয়ই ব্যবহার করতে পারবে। আর লাল রংয়ের জায়নামায ইচ্ছা করলে শুধু মাত্র মহিলারা ব্যবহার করতে পারবে। আর পুরুষের জন্য লাল কাপড় পরিধান করা অথবা লাল কাপড়ের জায়নামায ব্যবহার করা কোন মতেই জায়িয নেই।

মুহম্মদ ফাহীমুর রহমান, ঢাকা

সুওয়াল: শরহে বিকায়া কিতাবে ঈলা অধ্যায়ে দেখলাম যে, ঈলার মাসয়ালা আলোচনা করতে গিয়ে লেখা হয়েছে; কোন ব্যক্তি যদি তার আহ্লিয়া বা স্ত্রীর সাথে চিরস্থায়ী ঈলা করে অর্থাৎ আহাল বা স্বামী এভাবে ক্বসম বা শপথ করে বলে, “আমি আমার আহলিয়ার সাথে কখনো মিলিত হবো না।” এমতাবস্থায় সে ৪ মাসের মধ্যে আহ্লিয়ার সাথে মিলিত হলো না। তখন তার  আহলিয়ার উপর  এক তালাক বাইন পতিত হবে। অতঃপর এখন আহাল বা স্বামী যদি তার আহলিয়াকে পুনরায় বিবাহ করে কিন্তু মিলিত না হয়, তবে দ্বিতীয় ৪ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর দুই তালাক বাইন পতিত হবে। অনুরূপভাবে যদি আহাল পুনরায় অর্থাৎ তৃতীয়বার বিবাহ করে কিন্তু মিলিত না হয়।  এক্ষেত্রে আহলিয়ার উপর তিন তালাক বাইন পতিত হবে। ঈলা শেষ হবে কিন্তু ক্বসম বাকী থাকবে। এমনটাই উল্লেখ আছে শরহে বিকায়া কিতাবে।

এখন আমার  সুুওয়াল হলো:  চিরস্থায়ী ঈলার কারনে যদি আহলিয়ার উপর তিন তালাক বাইন পতিত হয়; তাহলে সে আহ্লিয়াকে পুনরায় গ্রহন করার জন্য সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা কি? জানতে বাসনা করি।

জাওয়াব: ঈলার মাসয়ালাটি একটি জটিল ও সূক্ষ্ম মাসয়ালা। কোন আহাল বা স্বামী যদি ঈলায়ে মুয়াব্বাদা বা চিরস্থায়ী ঈলা করে অর্থাৎ আহ্লিয়ার সাথে চিরস্থায়ীভাবে মিলিত না হওয়ার ক্বসম করে। তবে উক্ত আহলিয়ার সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত ঈলা ও ক্বসম দুটোই বহাল থাকবে। আর যদি আহাল ৪ মাসের মধ্যে আহ্লিয়ার সাথে মিলিত হয়। এক্ষেত্রে আহালকে ক্বসমের কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। আর এক্ষেত্রে আহ্লিয়ার উপর কোন তালাক পতিত হবে না। আর যদি ৪ মাসের  মধ্যে মিলিত না হয়, তাহলে আহ্লিয়ার উপর এক তালাক বাইন পতিত হবে। এমতাবস্থায় আহলিয়াকে দ্বিতীয়বার বিবাহ না করা পর্যন্ত পুনরায় অর্থাৎ দ্বিতীয় তালাক বাইন পতিত হবে না। যদি দ্বিতীয়বার বিবাহ করে তাহলে ঈলার হুকুম পুনরায় বর্তাবে।

অর্থাৎ ৪ মাসের মধ্যে যদি মিলিত না হয়, তাহলে দ্বিতীয় তালাক বাইন পতিত হবে। এরপর যদি তৃতীয়বার বিবাহ করে তাহলে ঈলার হুকুম পুনরায় বর্তাবে। ৪ মাসের মধ্যে মিলিত না হলে তিন তালাক বাইন পতিত হবে। অর্থাৎ তার আহ্লিয়া তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা  হলো হিলা ব্যতীত উক্ত স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহন করতে পারবে না। অর্থাৎ তার আহ্লিয়ার অন্যত্র বিবাহ হওয়ার পর উক্ত আহাল যদি তালাক দেয়, তবে ইদ্দত পালনের পর প্রথম আহাল তাকে পুনরায় বিবাহ করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রেও আহ্লিয়ার সাথে মিলিত হলে ক্বসমের কাফ্ফারা আদায় করতে হবে।

ক্বসমের কাফ্ফারা হলো: দশজন মিস্্কীনকে দু’বেলা খাওয়াতে হবে। অথবা দশজন মিস্কীনকে পোশাক-পরিচ্ছদ দিতে হবে। অথবা  একজন গোলাম আজাদ করতে হবে। অতঃপর কসম ভঙ্গকাকারী ব্যক্তি যদি উক্ত  কাফ্ফারা দিতে সমর্থ না হয়, তবে তার জন্য কাফ্ফারা হলো সে ব্যক্তি তিন দিন রোযা রাখবে।

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ, সিরাজগঞ্জ

সুওয়াল: একজন ইদ্দত পালনকারী মহিলার জন্য কি কি করা যাবে, আর কি কি করা যাবে না? অর্থাৎ ইদ্দত পালনকারী কোন মহিলা তালিমে যেতে পারবেন কিনা, রঙ্গীন জামা কাপড় পরতে পারবেন কিনা, আত্মীয় স্বজন ইন্তেকাল করলে সেখানে যেতে পারবেন কিনা? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইদ্দত পালন সম্পর্কে সম্মানিত কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে একাধিক পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা ত্বলাক্ব শরীফ উনার শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَأَحْصُوا الْعِدَّةَ ۖ وَاتَّقُوا اللهَ رَبَّكُمْ ۖ لَا تُخْرِجُوْهُنَّ مِنْ بُيُوْتِهِنَّ وَلَا يَخْرُجْنَ إِلَّا أَنْ يَّأْتِيْنَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ ۚ وَتِلْكَ حُدُوْدُ اللهِ ۚ وَمَنْ يَّتَعَدَّ حُدُوْدَ اللهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهٗ

অর্থ: তোমরা ইদ্দত গণনা করো (এ বিষয়ে) যিনি তোমাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। আহলিয়া বা স্ত্রীদেরকে তাদের ঘর থেকে বহিষ্কার করো না এবং তারাও যেনে বের না হয়, যে পর্যন্ত না তারা কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়। এ সমস্ত মহান আল্লাহ পাক উনার সীমা। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সীমালংঘন করে সে নিজেরই ক্ষতি করে।

আহালের তালাক্ব প্রদান ও আহালের ইন্তিকালের পর আহলিয়ার অপেক্ষমান সময়কে ইদ্দত বলা হয়।

ইদ্দত দু’ প্রকার। ইদ্দত যদি আহালের ইন্তিকালের কারণে হয় তাকে ইদ্দতে ওফাত বলা হয়। আর তালাক বা খোলা তালাক ইত্যাদির কারণে হলে তাকে ইদ্দতে তালাক বলা হয়। উভয় ইদ্দতের হুকুম ও সময়-সীমার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

ইদ্দতের আভিধানিক অর্থ হলো গণনা করা, সংখ্যা, হিসাব। সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় বৈবাহিক সম্পর্ক চলে যাওয়ার পর আহলিয়ার (স্ত্রীর) অপেক্ষমান সময়কে ইদ্দত বলে।

স্মরণীয় যে, ইদ্দতের দিনগুলি স্মরণে রাখা বা গণনার দায়িত্ব আহাল ও আহলিয়া উভয়ের। আহলিয়া আহালের যে ঘরে অবস্থান করতো সে ঘরেই ইদ্দতের দিনগুলি অতিবাহিত করবে। এটা তার জন্য ওয়াজিব। ইদ্দত পূর্ণ হওযার পূর্বে আহালের পক্ষ থেকে আহলিয়াকে তার অবস্থানকৃত ঘর থেকে বহিষ্কার করা হারাম। অনুরূপভাবে আহলিয়ার জন্যও উক্ত ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়া হারাম; যদিও আহাল এর অনুমতি দেয়।

সাধারণত তালাকপ্রাপ্তা আহলিয়াকে তার অবস্থানকৃত ঘর থেকে বহিষ্কার করা জায়িয নয়। কিন্তু যদি সে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় এবং তার অপরাধ প্রমাণিত হয় তখন তাকে ইদ্দতের ঘর থেকে বের করা যাবে। একইভাবে তালাকপ্রাপ্তা আহলিয়া যদি কটুভাষিণী বা ঝগড়াটে হয় এবং আহালের আপনজনের সাথে দুর্বব্যহার করে, তবে তাকে ইদ্দতের ঘর থেকে বের করা যাবে। এ সমস্ত হচ্ছে সম্মানিত শরীয়ত উনার নির্ধারিত বিধান। যারা এ সমস্ত বিধান লঙ্ঘন করে প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করলো অর্থাৎ নিজেদেরই ক্ষতিসাধন করলো। নাউযুবিল্লাহ!

উল্লেখ্য, যখন আহাল স্বীয় আহলিয়াকে ‘তালাকে বাইন’ অথবা ‘তালাকে রেজয়ী’ দিয়ে দেয় অথবা উভয়ের মধ্যে তালাক ব্যতীত পৃথকতা সৃষ্টি হয়ে যায় এবং মহিলা যদি আজাদ (স্বাধীন) হয় এবং স্বাভাবিক মা’জূর হয়, তাহলে ওই মহিলার ইদ্দত তিন ‘কুরূ’ তথা তিন স্বাভাবিক মা’জুরতা।

কিন্তু যদি ওই মহিলা স্বল্প বয়স অথবা বার্ধক্যের কারণে স্বাভাবিক মা’জূর না হয়, তাহলে তার ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যদি আহলিয়া সন্তানসম্ভবা হয়, তবে তার ইদ্দত সন্তান হওয়া পর্যন্ত। আর যদি মহিলা বাঁদী হয়, তবে তার ইদ্দত দুই ‘কুরূ’ বা স্বাভাবিক মা’জুরতা। যদি তার স্বাভাবিক মা’জূরতা না হয়, তাহলে ইদ্দত দেড় মাস।

আহালের ইন্তিকালের পর আহলিয়াকে চার মাস দশদিন ইদ্দত পালন করতে হবে যদি আহলিয়া আযাদ বা স্বাধীন হয়। আর আহলিয়া বাঁদী হলে তার ইদ্দত দুই মাস পাঁচ দিন। আহলিয়া যদি গর্ভবতী হয় তবে সন্তান প্রসবের সাথেই ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে। এমনকি আহালের ইন্তিকালের কিছুক্ষণ পরই যদি আহলিয়া সন্তান প্রসব করে তথাপি ঐ মূহুর্তেই তার ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে। ইন্তিকালের সময় আহাল যেই ঘরে বসবাস করতো সেই ঘরেই ইদ্দত পালন করতে হবে।

ইদ্দতের সময় বর্জনীয় কাজ

আহালের তালাক প্রদান অথবা ইন্তিকালের পর ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আহলিয়ার জন্য স্বীয় গৃহের বা বাড়ির বাইরে যাওয়া, অন্য কোথাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বা সাজসজ্জা করা হারাম। অর্থাৎ ইদ্দত চলাকালীন আহলিয়ার জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা, পোশাক-পরিচ্ছদ সুরভিত করা, গহনা-অলঙ্কার ব্যবহার করা, নতুন পোশাক পরিধান করা, মেহেদী ব্যবহার করা, চোখে সুরমা লাগানো, পান খেয়ে ঠোট লাল করা, দাঁত মিসি করা, মাথায় তৈল ব্যবহার ও চিরণী বিন্যাস বা বিনুনী করা, সুন্দর চাকচিক্যময় রেশমী ও রঙ্গিন পোশাক পরিধান করা হারাম। তবে রঙ্গিন পোশাক যদি পুরাতন ও চাকচিক্যবিহীন হয়, তা পরিধান করতে পারবে। অনুরূপ তৈল  ব্যবহার করা ব্যতীত থাকতে না পারলে সেক্ষেত্রে তৈল ব্যবহার করতে পারবে।

ইদ্দতের সময় বাইরে বের হওয়া

আহালের ইন্তিকালের সময় আহলিয়া যেই ঘরে বা বাড়িতে বসবাস করতো ঐ ঘরে বা বাড়িতেই ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। বাইরে যাওয়া জায়িয নয়। অবশ্য আহলিয়া যদি একান্ত গরীব হয়, জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা হাতে না থাকে তবে তা ব্যবস্থার জন্য অন্যের বাড়িতে রান্না-বান্না কিংবা কাজের উদ্দেশ্যে পর্দার সাথে যেতে পারবে। তবে রাতে নিজের ঘরে বা বাড়িতে এসেই থাকতে হবে এবং দিনের বেলায়ও কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে নিজের ঘরে বা বাড়িতে ফিরে আসতে হবে।

অনুরূপভাবে, ইদ্দত সম্পর্কীয় এবং অন্যান্য জরুরী বিষয় সম্পর্কে মাসয়ালা-মাসায়িল যদি জানা না থাকে, তবে ইদ্দত ও উল্লেখিত বিষয় সম্পর্কীয় ইলম হাছিলের লক্ষ্যে তা’লীম গ্রহণ করতে যেতে পারবে। অপ্রয়োজনে ইদ্দত পালন করার স্থান ব্যতিত অন্য কোথাও অবস্থান করা জায়িয নেই। (শামী, দুররুল মুখতার)

তবে অবশ্যই ইদ্দত পালনকারিণী মহিলার জন্য অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া যেমন জায়িয নেই, তদ্রুপ সৌন্দর্য্য বর্ধনকারী রঙিন পোশাক পরিধান করা, আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদি কোনটিই জায়িয নেই।

মুহম্মদ ফারুকুর রহমান, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম

সুওয়াল: কেউ বলে, দাড়ী এক মুষ্ঠি হওয়ার আগে সুন্নতী চুল রাখা যাবে না। আবার কেউ বলে, দাড়ী উঠার আগেও সুন্নতী চুল রাখা যাবে। এখন আমরা কোনটা গ্রহণ করবো?

জাওয়াব: দাড়ী এক মুষ্ঠি হওয়ার আগে সুন্নতী চুল তথা বাবরী চুল রাখা যাবে না; একথাটির অর্থ হলো দাড়ী মোচ উঠার আগে আগে সুন্নতী বাবরী চুল রাখলে মহিলাদের সাথে তাশাব্বুহ বা সাদৃশ্য হয়ে যায়, তাই নিষেধ করা হয়। অর্থাৎ পুরুষরা দাড়ী মোচ বিহীন অবস্থায় বাবরী চুল রাখলে মহিলাদের মতো মনে হতে পারে বা মহিলাদের মতো দেখা যেতে পারে। এ কারণেই দাড়ী মোচ উঠার আগে তাদের জন্য বাবরী চুল রাখা নিষেধ করা হয়।

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহিলাদের ছূরত ধারণকারী পুরুষ এবং পুরুষদের ছূরত ধারণকারী মহিলাদের প্রতি লা’নত বর্ষনের কথা উল্লেখ রয়েছে। শুধু তাই নয় এসমস্ত পুরুষ-মহিলা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না বলে উল্লেখ রয়েছে এবং এদের জন্য কঠিন আযাব রয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!

উল্লেখ্য, সুন্নতী বাবরী চুল রাখার জন্য দাড়ী এক মুষ্ঠি হওয়া শর্ত নয়। বরং ভালভাবে দাড়ী উঠলেই বা ভালভাবে দাড়ী উঠা শেষ হলেই অর্থাৎ পুরুষকে স্পষ্টভাবে পুরুষ বুঝা গেলেই সুন্নতী বাবরী চুল রাখা যাবে এবং রাখতে হবে। যা খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।

কারণ, এমন অনেক লোক আছে, যাদের দাড়ী এক মুষ্ঠি হতে দীর্ঘ বছর অতিবাহিত হয় আবার অনেকের দাড়ী এক মুষ্ঠি পরিমাণ লম্বাই হয় না।

কাজেই, দাড়ী এক মুষ্ঠি হওয়ার আগে সুন্নতী চুল তথা বাবরী চুল রাখা যাবে তবে পুরুষকে অবশ্যই স্পষ্টভাবে পুরুষ বুঝা যেতে হবে।

মুহম্মদ আলাউদ্দীন আল আজাদ, মতলব, চাঁদপুর

সুওয়াল: কিছুদিন পূর্বে বিডিনিউজ ২৪ ডটকম ব্লগে ‘মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামি আঙ্গিক’ শিরোনামে হাসান মাহমুদ নামে মুসলমান নামধারী এক  জাহিল ও মিথ্যাবাদী প্রকৃতপক্ষে মুনাফিক কিছু বাতিল ও মনগড়া দলীল যোগাড় করে ‘মূর্তিকে জায়িয প্রমান করার অপচেষ্টা করেছে। তার উক্ত বক্তব্যের  মাধ্যমে যে সকল বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তাহলো-

(১) সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও সীরাত গ্রন্থ।

(২)  প্রতিমা, ভাস্কর্য ও মূর্তি  এক বিষয় নয়।

(৩) কুরআন শরীফে মূর্তি ভাস্কর্য জায়িয বলে উল্লেখ আছে।

(৪) হাদীছ শরীফে মূর্তি ভাস্কর্য জায়িয বলা হয়েছে।

(৫) পৃথিবীর অনেক দেশে মূর্তি ভাস্কর্য রয়েছে তাই তা জায়িয।

এখন আমার প্রশ্ন হলো- তার উক্ত বক্তব্যগুলো কতটুকু সঠিক হয়েছে? পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ থেকে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।

জাওয়াব: বিগত ২৬২তম ও ২৬৫তম সংখ্যায় আমরা প্রমাণ করেছি যে, হারাম মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামী আঙ্গিক শিরোনামে মুসলমান নামধারী প্রকৃতপক্ষে মুনাফিক, ইহুদীর চর হাসান মাহমূদ উরফে কাফির মাগদূব যে বক্তব্য দিয়েছে, তার উক্ত বক্তব্যগুলো সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন, অপব্যাখ্যা বিভ্রান্তিকর  এবং কুফরী সম্বলিত হয়েছে।

কেননা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, পুতুল, কারো দেহের ছবি, ইত্যাদি তৈরী করা, করানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো, সম্পূর্ণ রূপে হারাম ও নাজায়িয। চাই আরাধনা বা উপাসনার উদ্দেশ্যে হোক অথবা সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে হোক অথবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই হোক না কেন।

আর প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, পুতুল, কারো দেহের ছবি, ইত্যাদি এগুলোকে হালাল বা বৈধ বলা, হালাল বা বৈধ মনে করা কাট্টা কুফরী। মুসলমান পরিচয় দিয়ে যারা কুফরী করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়।

আমরা পূরবর্তী সংখ্যা ২৬২ ও ২৬৫ তে প্রমাণ করেছি সম্মানিত শরীয়ত উনার দলীল হচ্ছেন ৪টি। (১) পবিত্র ও সম্মানিত কুরআন শরীফ (২) পবিত্র ও সম্মানিত হাদীছ শরীফ (৩) পবিত্র ও সম্মানিত ইজমা শরীফ (৪) পবিত্র ও সম্মানিত কিয়াছ শরীফ।

আর বর্তমান সংখ্যায় কাফির মাগদূবের দ্বিতীয় বক্তব্য (২) “প্রতিমা, ভাস্কর্য ও মূর্তি এক বিষয় নয়।” তার খ-নমুলক জাওয়াব প্রদান করা হবে। ইন্শাআল্লাহ্!

তার উক্ত বক্তব্যের জাওয়াবে বলতে হয় যে, গত সংখ্যায় আমরা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ এবং অনেক নির্ভরযোগ্য লুগাত বা অভিধান গ্রন্থের দ্বারা প্রমাণ করেছি যে,  প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল কারো দেহের ছবি, ইত্যাদি শব্দগুলো সমার্থবোধক বা একই অর্থপ্রকাশক অর্থাৎ একই জিনিসের ভিন্ন ভিন্ন নাম।

এখন আমরা পবিত্র আয়াত শরীফগুলো উল্লেখ করে বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য তাফসীর সমূহের কিতাব থেকে প্রমাণ করবো যে, প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল, কারো দেহের ছবি, ইত্যাদি শব্দগুলো সমার্থবোধক বা একই অর্থপ্রকাশক অর্থাৎ একই জিনিসের ভিন্ন ভিন্ন নাম।

যেমন, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اِنَّـمَا الْـخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ

অর্থ: “হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, বেদী, মূর্তি পূজা (অর্থাৎ মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কযর্, প্রাণীর ছবি ইত্যাদি।) ও ভাগ্য নির্ধারক তীরসমূহ ঘৃণ্য অপবিত্র বস্তু, শয়তানী কাজ। সুতরাং তোমরা এগুলো বর্জন কর, এতে তোমরা অবশ্যই সফলকাম হতে পারবে।” (পবিত্র সূরাতুল মায়িদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯০)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে اَلْأَنْصَابُ শব্দটি দ্বারা মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রতিমা, দেব-দেবী, বেদী, মূর্তিপূজার পাথর, প্রাণীর ছবি ইত্যাদিকে বুঝানো হয়েছে। যার অনুশীলনকে ঘৃণ্য অপবিত্র শয়তানী কাজ হিসেবে ঘোষণা করে এর থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত ৪টি বিষয়কে শয়তানী কাজ ও হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। নিম্নে উল্লেখযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ থেকে কিছু দলীল পেশ করা হলো-

(يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اِنَّمَا الْخَمْرُ) الشراب الذى خامر العقل (وَالْمَيْسِرُ) القمار كله (وَالْأَنْصَابُ) عبادة الاوثان (وَالْأَزْلاَمُ) استعمال القدح (رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ) حرام بامر الشيطان ووسوسته (فَاجْتَنِبُوْهُ) فاتركوه (لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ) لكى تنجوا من السخطة والعذاب وتأمنوا فى الاخرة.

অর্থ : “(হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মদ,) এমন পানীয় যা আক্বল বা জ্ঞানকে লোপ করে তথা যা মাতলামী আনে (জুয়া,) সকল প্রকারের জুয়া (মূর্তি) প্রতিমা পূজা (ও ভাগ্য নির্ধারক তীরসমূহ) পাশা খেলা (ঘৃণ্য অপবিত্র বস্তু শয়তানী কাজ) এগুলো হারাম কাজ; যা শয়তানের নির্দেশে ও প্ররোচনায় হয়ে থাকে। (সুতরাং তোমরা এগুলো বর্জন কর) এগুলো ত্যাগ কর (অবশ্যই তোমরা সফলকাম হতে পারবে) যাতে তোমরা ক্রোধ ও আযাব থেকে রক্ষা পেতে পার এবং আখিরাতে নিরাপদ নিশ্চিন্ত থাকতে পার।” (তানবীরুল মাকবাস মিন তাফসীরে ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, ১৩১ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, বৈরূত- লেবানন)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লিখিত وَالْأَنْصَابُ শব্দ মুবারক উনার তাফসীরে عِبَادَةُ الْاَوْثَانِ অর্থাৎ প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল, কারো দেহের ছবি ইত্যাদির পূজা করাকে বুঝানো হয়েছে। যার অনুশীলনকে ঘৃণ্য, অপবিত্র, শয়তানী কাজ হিসেবে ঘোষণা করে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যা ফাসিকী, গোমরাহী, মূর্খতা, শিরকী ও কুফরী মুলক কাজ।”

(يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ) اى القمار (وَالْأَنْصَابُ) الاصنام لانـها تنصب فتعبد (وَالْأَزْلاَمُ) وهى القداح التى مرت (رِجْسٌ) نجس او خبيث مستقذر من عمل الشيطان فكانه عمله (فَاجْتَنِبُوْهُ) يرجع الى الرجس او الى عمل الشيطان او الى الـمذكور.

অর্থ :  “(হে মু’মিনগণ!  নিশ্চয়ই মদ, জুয়া) সকল প্রকার জুয়া (মূর্তি) اَلْأَنْصَابُ দ্বারা মূর্তি প্রতিমা উদ্দেশ্য।

কেননা এগুলোকে যমীনে স্থাপন করে পূজা করা হয়ে থাকে, (ও ভাগ্য নির্ধারক তীর সমূহ) পাশা, যা পূর্বে উল্লেখ হয়েছে (ঘৃণ্য) অপবিত্র, মন্দ ও শয়তানের জঘন্য কাজ, যেহেতু এগুলো শয়তানী আমল (সুতরাং তোমরা এগুলো বর্জন কর) অর্থাৎ অপবিত্র ঘৃণ্য জঘন্য কাজ থেকে, শয়তানী আমল থেকে এবং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হারাম কাজগুলো থেকে ফিরে থাক।” (তাফসীরে মাদারিকুত তানযীল ওয়া হাক্বায়িকুত তা’বীল- ইমাম হাফিযুদ্দীন আবুল বারাকাত আব্দুল্লাহ বিন আহমদ নাসাফী হানাফী মাতুরীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ওফাত: ৭০১ হিজরী- ১ম খণ্ড ৪৯০ পৃষ্ঠা প্রকাশনা: দারুল মা’রিফাহ বৈরূত -লেবানন)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লিখিত وَالْأَنصَابُ শব্দ মুবারক উনার তাফসীরে

    (وَالْأَنْصَابُ) الاصنام لانـها تنصب فتعبد

অর্থাৎ প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল, কারো দেহের ছবি ইত্যাদির পূজা করাকে বুঝানো হয়েছে। যার অনুশীলনকে ঘৃণ্য, অপবিত্র, শয়তানী কাজ হিসেবে ঘোষণা করে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যা ফাসিকী, গোমরাহী, মূর্খতা, শিরকী ও কুফরী  মুলক কাজ।”

(يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ) اى الاصنام التى نصبت للعبادة (وَالْأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ)  اى من تسويله وتزئينه فكانه عمله (فَاجْتَنِبُوْهُ) الضمير للرجس.

অর্থ : “(হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই  মদ, জুয়া, মূর্তি) অর্থাৎ উপাসনার উদ্দেশ্যে তৈরিকৃত বা পুজা করার উদ্দেশ্যে  স্থাপিত মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য (ও ভাগ্য নির্ধারক তীরসমূহ ঘৃণ্য অপবিত্র বস্তু শয়তানী কাজ) অর্থাৎ এগুলো শয়তানের কুমন্ত্রণা ও ধোকা। এগুলো শয়তানেরই আমল। (সুতরাং তোমরা এগুলো বর্জন কর) এখানে ه হু দ্বমীর বা সর্বনাম দ্বারা الرجس অর্থাৎ ঘৃণ্য অপবিত্র বস্তুগুলোকে বুঝানো হয়েছে। (আত তাফসীরুল মাযহারী লিল ক্বাদ্বী মুহম্মদ ছানাউল্লাহ উছমানী হানাফী মাযহারী মুজাদ্দিদী নকশবন্দী পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ওফাত: ১২২৫ হিজরী, ২য় খণ্ড ১৭১ পৃষ্ঠা, প্রকাশনী: মাকতাবায়ে রশীদিয়াহ সিরকী রোড, কুয়েটা)

(يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ) الاصنام التى نصبت للعبادة (رِجْسٌ) قذر (مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ) لانه مسبب من تسويله وتزيينه (فَاجْتَنِبُوْهُ) الضمير للرجس (لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ) لكى تفلحون بالاجتناب عنه.

অর্থ : (হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি) যা উপাসনার জন্য তৈরি করা হয়েছে। (ঘৃণ্য-অপবিত্র) নাপাক (শয়তানী কাজ) এগুলো শয়তানী ধোকা ও কুমন্ত্রণায় হয়। (সুতরাং তোমরা এগুলো বর্জন কর) অপবিত্র জঘন্য হারাম কাজ থেকে দূরে থাক। (এতে তোমরা সফলকাম হতে পারবে) এ হারাম কাজগুলো বর্জন করার মাধ্যমে তোমরা কামিয়াবী অর্জন কর। (আত তাফসীরু লিল বাইদ্বাবী সূরাতুল মায়িদাহ শরীফ ৯০ নম্বর আয়াত শরীফ ২য় খণ্ড ১১১ পৃষ্ঠা প্রকাশনা : কুতুবখানা রহীমিয়াহ- দেওবন্দ)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লিখিত وَالأَنصَابُ শব্দ মুবারক উনার তাফসীরে-

اَىْ اَلْاَصْنَامُ الَّتِىْ نُصِبَتْ لِلْعِبَادَةِ

অর্থাৎ প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল, কারো দেহের ছবি ইত্যাদিকে  বুঝানো হয়েছে। আর প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল, কারো দেহের ছবি ইত্যাদি যেগুলোকে উপাসনার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে বা পূজা করার উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়েছে। যার অনুশীলনকে ঘৃণ্য, অপবিত্র, শয়তানী কাজ হিসেবে ঘোষণা করে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ করা হয়েছে। যা ফাসিকী, গোমরাহী, মূর্খতা, শিরকী ও কুফরী কাজ।”

(يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ) اَىِ الْقِمَارُ (وَالْأَنْصَابُ) يَعْنِى الْاَوْثاَنَ، سُـمِّيَتْ بِذٰلِكَ لِاَنَّـهُمْ كَانُوْا يَنْصِبُوْنـَهَا وَاحِدُهَا نَصْبٌ بِفَتْحِ النُّوْنِ، وَسُكُوْنُ الصَّاِدِ وَنَصْبٌ بِضَمِّ النُّوْنِ مُـخَفَّفًا وَمُثَقَّلًا (وَالْأَزْلاَمُ) يَعنى القداح التى يستقسمون بها واحدها زلـم (رِجْسٌ) خبيث مستقذر (مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ) من تزيينه (فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ).

অর্থ : “(হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া) অর্থাৎ সকল প্রকারের জুয়া (মূর্তি) অর্থাৎ মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য প্রাণীর ছবি ইত্যাদি। اَلْاَنْصَابُ করে এজন্য নামকরণ করা হয়েছে যেহেতু মুশরিকরা এগুলোকে নিজেই স্থাপন করে। اَلْاَنْصَابُ শব্দটির একবচন হচ্ছে نصب নাছবুন। ‘নূন’ বর্ণে যবর, ‘ছোয়াদ’ বর্ণে সাকিন যোগে। এ ছাড়া ‘নূন’ বর্ণে পেশ যোগেও পড়া যায়। (ও ভাগ্য নির্ধারক তীরসমূহ) অর্থাৎ পাশাখেলা, যা দ্বারা ভাগ্য নির্ধারণ করার চেষ্টা করা হয়। الازلام শব্দটির একবচন زلـم যালমুন। (ঘৃণ্য অপবিত্র কাজ বা বস্তু) নাপাক জঘন্য কাজ। (শয়তানী কাজ) শয়তানী ধোকায় এ কাজগুলো হয় (সুতরাং তোমরা এগুলো বর্জন কর, তাহলে অবশ্যই তোমরা সফলকাম হতে পারবে)। (তাফসীরুল বাগবী আলমা’রূফ মায়ালিমুত তানযীল লিআবী মুহম্মদ হুসাইন বিন মাসঊদ আল ফারা আলবাগবী আশ শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওফাত: ৫১৬ হিজরী,  ২য় খ- ৮৮ পৃষ্ঠা প্রকাশনা: মাকতাবাহ মুস্তফা আল বাবা আল হালবী ওয়া আওলাদুহু- মিশর)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লিখিত وَالْأَنصَابُ শব্দ মুবারক উনার তাফসীরে

يعنى الاوثان، سميت بذلك لانهم كانوا ينصبونـها

অর্থাৎ প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল, কারো দেহের ছবি ইত্যাদিকে  বুঝানো হয়েছে। আর اَلْاَنْصَابُ তথা প্রতিমা, ভাস্কর্য, মূর্তি, ম্যানিকিন, ছবি, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল, কারো দেহের ছবি ইত্যাদি এগুলোকে এজন্য নামকরণ করা হয়েছে যেহেতু মুশরিকরা এগুলোকে নিজেই স্থাপন করে। যার অনুশীলনকে ঘৃণ্য, অপবিত্র, শয়তানী কাজ হিসেবে ঘোষণা করে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ করা হয়েছে। যা ফাসিকী, গোমরাহী, মূর্খতা, শিরকী ও কুফরী কাজ।

(يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اِنَّمَا الْخَمْرُ) الـمسكر الذى يخامر العقل (وَالْمَيْسِرُ) القمار (وَالْأَنْصَابُ) الاصنام (والازلام) قداح الاستقسام (رِجْسٌ) خبيث مستقذر (مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ) الذى يزينه (فَاجْتَنِبُوْهُ) الرجس الـمعبر به عن هذه الاشياء ان تفعلوه (لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ).

অর্থ : “(হে মু’মিনগণ!  নিশ্চয়ই মদ) আক্বল তথা জ্ঞানকে লোপ করে দেয় এমন সর্বপ্রকার নেশা (জুয়া), সকল প্রকার জুয়া (মূর্তি) প্রতিমার উপাসনা (ও ভাগ্য নির্ধারক তীর সমূহ) ভাগ্য বণ্টনের পাশা (ঘৃণ্য অপবিত্র) নাপাক জঘন্য বস্তু (শয়তানী কাজ) যা শয়তানের প্রতারণায় সংঘটিত হয়। (সুতরাং তোমরা এসকল কাজকে বর্জন করো) বর্ণিত জঘন্য হারাম-নাজায়িয কাজ থেকে নিজেদেরকে ফিরিয়ে রাখ (এতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পারবে)। (তাফসীরুল জালালাঈন সূরাতুল মায়িদাহ শরীফ ৯০নং আয়াত শরীফ ১০৬ পৃষ্ঠা)

অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সর্বপ্রকার মদ, জুয়া, মূর্তি পুজা ও ভাগ্য নির্ধারক তীর হারাম-নাজায়িয। এগুলোকে হালাল মনে করা কুফরী।

বিশেষ করে اَلْاَنْصَابُ ‘আল আনছাব’ শব্দটি দ্বারা মূর্তি, মূর্তির পাথর, প্রতিমা, প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য, পুতুল, ম্যানিকিন, প্রাণীর ছবি ইত্যাদি সবগুলোই উদ্দেশ্য। এগুলো তৈরি করা, তৈরি করতে সাহায্য করা, তৈরির স্বপক্ষে থাকা, এগুলো দেখে আনন্দ উপভোগ করা হারাম। এগুলোকে সম্মান প্রদর্শন করা এবং  মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্যের উদ্দেশ্যে তৈরি করা কুফরী শিরকী।

এগুলোর ব্যবসা করা, এগুলোর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয।

এজন্য সকল মু’মিন-মুসলমানের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে, মূর্তি প্রতিমা ভাস্কর্য এ জাতীয় সবকিছুর চর্চা থেকে দূরে থাকা।

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে  অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, মূর্তি  প্রতিমা ও ভাস্কর্য ভিন্নার্থক শব্দ নয়। বরং মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি, প্রতিচ্ছবি, প্রতিমূর্তি, পুতুল , কারো দেহের ছবি ইত্যাদি শব্দগুলো একই অর্থপ্রকাশক শব্দ। অর্থাৎ  একই জিনিসের ভিন্ন ভিন্ন নাম। একটি হারাম মানে সবগুলোই হারাম। সুতরাং কোন মূর্তির উপাসনা করা হোক অথবা নাই হোক সবগুলোর একই হুকুম অর্থাৎ হারাম বা  নিষিদ্ধ।”

কাজেই, মুসলমান নামধারী মুনাফিক উল্লেখিত কাফির মাগদূব যে বলেছে, “প্রতিমা, ভাস্কর্য ও মূর্তি  এক বিষয় নয়” তার উক্ত বক্তব্য সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে ভুল মনগড়া, অপব্যাখ্যা, দলীলবিহীন, বিভ্রান্তিকর ও কুফরী সম্বলিত হয়েছে।

মুহম্মদ জাকির হুসাইন, রাজশাহী

সুওয়াল: পবিত্র মুহররম শরীফ মাসের নির্দিষ্ট কোনো আমল আছে কি? থাকলে দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: পবিত্র মুহররম শরীফ মাসের উল্লেখযোগ্য ও শ্রেষ্ঠতম দিন হচ্ছে ১০ই মুহররম শরীফ ‘আশূরা’র দিনটি। এ দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। সৃষ্টির সূচনা হয় এ দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ দিনে। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এ দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনাও এ দিনেই সংঘটিত হয়।

বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে সাইয়্যিদুনা আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পর্যন্ত প্রায় সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোন না কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা এ দিনে সংঘটিত হয়েছে। সঙ্গতকারণে এ দিনটি আমাদের সবার জন্যে এক মহান আনুষ্ঠানিকতার দিন, যা রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত, নিয়ামত মুবারক হাছিল করার দিন।

ফলে এ দিনে বেশ কিছু আমল করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন-

১। পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে দু’দিন রোযা রাখা: পবিত্র আশূরা শরীফ উপলক্ষে দু’দিন রোযা রাখা সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ

অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার ফরয রোযার পর উত্তম রোযা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার মাস পবিত্র মুহররম শরীফ উনার রোযা।” (মুসলিম শরীফ)

عَنْ حَضْرَتْ أَبِىْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ‏ صِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ إِنِّـىْ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُّكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِىْ قَبْلَهٗ

অর্থ : হযরত আবূ কাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র আশূরা শরীফ উনার রোযা পালনে আমি মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে আশা করি যে, তিনি (উম্মতের) বিগত বছরের গুনাহখতা ক্ষমা করে দিবেন।” (মুসলিম শরীফ)

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ  قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صُوْمُوا التَّاسِعَ وَالْعَاشِرَ وَخَالِفُوْا فِيْهِ الْيَهُوْدَ.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা ৯ ও ১০ই মুহররম শরীফ রোযা রেখে ইহুদীদের খিলাফ তথা বিপরীত আমল করো।” (তিরমিযী শরীফ)

২। রোযাদারদেরকে ইফতার করানো: রোযাদারদেরকে ইফতার করানো সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

مَنْ فَطَّرَ فِيْهِ صَائِمًا فَكَاَنَّـمَا أَفْطَرَ عِنْدَهٗ جَمِيْعَ أُمَّةِ (سَيِّدِنَا حَبِيْبِنَا شَفِيْعِنَا مَوْلَانَا) مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ : “পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, তিনি যেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমস্ত উম্মতকে ইফতার করালো।” সুবহানাল্লাহ!

৩। পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়ানো : পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়ানো সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ وَّسَّعَ عَلٰى عِيَالِهٖ فِى النَّفَقَةِ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ سَائِرَ سَنَتِهٖ

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আশূরা শরীফ উনার দিন তার পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়াবে-পরাবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সারা বৎসর ওই ব্যক্তিকে সচ্ছলতা দান করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তবারানী শরীফ, শুয়াবুল ঈমান, মা ছাবাতা বিস্সুন্নাহ, মুমিন কে মাহে ওয়া সাল ইত্যাদি)

৪ ও ৫। গরিবদের পানাহার করানো ও ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো :

গরিবদের পানাহার করানো ও ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

مَنْ مَّسَحَ فِيْهِ عَلٰى رَأْسِ يَتِيْمَ وَاَطْعَمَ جَائِعًا وَسَقٰى شَرْبَةً مِّنْ مَّاءَ أَطْعَمَهُ اللهُ مِنْ مَّوَائِدِ الْـجَنَّةِ وَسَقَاهُ اللهُ تَعَالٰى مِنَ الرَّحِيْقِ الْسَلْسَبِيْلِ

অর্থ:  “পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন কোন মুসলমান যদি কোন ইয়াতীমের মাথায় হাত স্পর্শ করে, কোন ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ায় এবং কোন পিপাসার্তকে পানি পান করায় তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাত উনার দস্তরখানায় খাদ্য খাওয়াবেন এবং ‘সালসাবীল’ ঝর্ণা থেকে পানীয় (শরবত) পান করাবেন।” সুবহানাল্লাহ!

৬। চোখে (ইছমিদ) সুরমা দেয়া :

চোখে সুরমা দেয়া সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

مَنْ اِكْتَحَلَ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ بِكُحْلٍ فِيْهِ مِسْكٌ لَـمْ يَشْكُ عَيْنُهٗ إِلٰى قَبِيْلٍ مِّنْ ذٰلِكَ الْيَوْمِ

অর্থ : “যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন মিশক মিশ্রিত সুরমা চোখে দিবে, সেদিন হতে পরবর্তী এক বৎসর তার চোখে কোন প্রকার রোগ হবেনা।” সুবহানাল্লাহ! (মাক্বাছিদে হাসানাহ, শুয়াবুল ঈমান, দায়লামী, মা ছাবাতা বিস্সুন্নাহ্)

৭। গোসল করা : পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিনে গোসল করা সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

مَنْ اِغْتَسَلَ فِيْهِ عُفِىَ وَلَـمْ يَـمْرَضْ اِلَّا مَرَضَ الْـمَوْتِ وَاَمِنَ مِنَ الْكَسْلِ وَالتَّعْلِيْلِ

অর্থ : “যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন গোসল করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন। মৃত্যু ব্যতীত তার কোন কঠিন রোগ হবেনা এবং সে অলসতা ও দুঃখ-কষ্ট হতে নিরাপদ থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!

অতএব, পবিত্র মুহররমুল হারাম মাস এবং উনার মধ্যস্থিত পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিনের ফাযায়িল-ফযীলত ও আমল সম্পর্কে জেনে সে মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর দায়িত্ব-কর্তব্য।

মুহম্মদ আবুল হুসাইন, মৌলভীবাজার

সুওয়াল: আশূরা উপলক্ষে একটি রোযা রাখা যায় কি? জানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

صُوْمُوْا يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَخَالِفُوْا فِى الْيَهُوْدِ وَصُوْمُوْا قَبْلَهٗ يَوْمًا أَوْ بَعْدَهٗ يَوْمًا.

অর্থ: “তোমরা আশূরার রোযা রাখ এবং (এ ব্যাপারে) ইহুদীদের বিপরীত কর। তোমরা আশূরার আগের দিন অথবা পরের দিনেও রোযা রাখো।”

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র আশূরা উনার উদ্দেশ্যে দুটি রোযা রাখা সুন্নত। মুহররমের ৯ ও ১০ তারিখে অথবা ১০ ও ১১ তারিখে। তবে উত্তম হলো ৯ ও ১০ তারিখে রোযা রাখা। শুধু ১০ই মুহররম আশূরার উদ্দেশ্যে ১টি রোযা রাখা মাকরূহ। কারণ ইহুদীরা সেদিনটিতে রোযা রেখে থাকে। {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী শরীফ, (২) মুসলিম শরীফ, (৩) মিশকাত, (৪) তিরমিযী, (৫) মুয়াত্তা ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, (৬) জামিউল ফাওয়ায়েদ, (৭) মুসনাদে ফেরদৌস দায়লামী, (৮) মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ্, (৯) মুসনাদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি}

মুহম্মদ খলীলুর রহমান, চাঁদপুর

সুওয়াল: কেউ বলে নববর্ষ উপলক্ষে ভালো খেতে ও পরতে হবে, আবার কেউ বলে পবিত্র আশূরা উনার দিনে ভালো খেতে ও পরতে হবে, কোনটা সঠিক ও শরীয়তসম্মত।

জাওয়াব: পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে নওরোজ বা যে কোন নববর্ষ পালন করা হারাম ও বিদয়াত।”

কাজেই, নববর্ষ সেটা বাংলা হোক, ইংরেজি হোক, আরবী হোক ইত্যাদি সবই ইহুদী-নাছারা,  বৌদ্ধ, মজুসী-মুশরিকদের তর্জ-তরীক্বা; যা পালন করা থেকে বিরত থাকা সকল মুসলমানের জন্য ফরয-ওয়াজিব।

উল্লেখ্য, সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের শাসক জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল এবং এ ধারাবাহিকতা এখনও পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়। ইরান থেকেই এটা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বেয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে।

তাছাড়া বাংলা পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ উপলক্ষে শহরে ও গ্রামে যে ভোজ, মেলা উৎসব হয় তাও ইরানের নওরোজ হতে পরোক্ষভাবে এদেশে এসেছে। মোঘল পূর্ববর্তী আমলে এদেশে নওরোজ বা নববর্ষ পালনের রীতি প্রচলিত ছিল না।

ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ পালনের সংস্কৃতি হিন্দুদের থেকে এসেছে। তবে কথিত বাংলা সন প্রকৃতপক্ষে ফসলী সন বা পহেলা বৈশাখ বাঙালি দ্বারা প্রবর্তিত নয়। বাদশাহ আকবর ফসলী সন হিসেবে এর প্রবর্তন করে। আর বাদশাহ আকবর ছিল মঙ্গলীয় এবং ফারসী ভাষী। তাহলে এটা কি করে বাঙালি সংস্কৃতি হতে পারে? কাজেই বাঙালিদের জন্য এটা অনুসরণীয় নয়। আর মুসলমানদের জন্য তো এটা অনুসরণ করার প্রশ্নই আসেনা।

হযরত ইমাম আবু হাফস্ কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “নওরোজ বা নববর্ষ উপলক্ষে যদি কেউ একটা ডিমও দান করে তার ৫০ বৎসরের আমল থাকলেও তা বরবাদ হয়ে যাবে।” অর্থাৎ নওরোজ বা নববর্ষ পালনের কারণে তার জিন্দেগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে।

বিশেষত বাংলা নববর্ষ হিন্দুদের খাছ ধর্মীয় উৎসবের দিন। এর আগের দিন তাদের চৈত্র সংক্রান্তি। আর পহেলা বৈশাখ হলো ঘট পূজার দিন।

কাজেই, মুসলমানদের জন্য বাংলা নববর্ষসহ বিভিন্ন নববর্ষ পালন করার অর্থ হচ্ছে বিজাতি ও বিধর্মীদের সাথেই মিল রাখা। তাদেরই অনুসরণ অনুকরণ করা। নাঊযুবিল্লাহ!

অথচ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِندَ اللهِ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ

অর্থ: “নিশ্চয়ই সমস্ত প্রাণীর মাঝে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কাফিররাই নিকৃষ্ট, যারা ঈমান আনেনি।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫)

অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْـمُنَافِقِيْنَ

অর্থ: কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করো না। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

অর্থ:  “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (সুনানে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)

অতএব, পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারি, পহেলা মুর্হরম ইত্যাদি নববর্ষ পালন করার জন্য উৎসাহিত করা এবং সাথে সাথে ভাল খাওয়া-পড়ার জন্যও উৎসাহিত করা কাট্টা হারাম ও কুফরী যা থেকে বিরত থাকা ও বেঁচে থাকা সকল মুসলমানের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।

পবিত্র দশই মুহররম শরীফ অর্থাৎ আশূরা শরীফ উনার দিনে প্রত্যেক পরিবারের প্রধানকে তার পরিবারের সদস্যদেরকে ভালো খাদ্য খাওয়ানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

مَنْ وَّسَّعَ عَلٰى عِيَالِهٖ فِى النَّفَقَةِ يَوْمَ عَاشُوْرَاءَ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ سَائِرَ سَنَتِهٖ

অর্থ: “যে ব্যক্তি তার পরিবারবর্গকে পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন অর্থাৎ পবিত্র দশই মুহররম শরীফ তারিখে ভালো খাদ্য খাওয়াবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে এক বৎসরের জন্য সচ্ছলতা দান করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তবারানী শরীফ, মা-ছাবাতা বিসসুন্নাহ)

অতএব, পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিনে ভালো খেতে ও পরতে হবে একথাটি সঠিক ও সম্মানিত শরীয়তসম্মত।

মুহম্মদ আব্দুর রহমান, বগুড়া।

সুওয়াল: পবিত্র ১০ই মুহররম আশূরা শরীফ উপলক্ষে অনেকে আলোচনা করতে যেয়ে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে এলোমেলো বক্তব্য দিয়ে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে, সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি গন্দম খেয়ে ভুল করেছেন কিংবা একটি গুনাহ করেছেন। সত্যিই কি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা কোন ভুল বা গুনাহ করেছিলেন?

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হলো, কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা কখনো ভুল করেননি। ইচ্ছাকৃত তো নয়ই, এমনকি অনিচ্ছাকৃতও নয়। অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা অবশ্যই কোন ভুলই করেননি। (শরহে আক্বাইদে নছফী, ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্কাহ)

অর্থাৎ সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ও মনোনীত বান্দাগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন পবিত্র ওহী মুবারক উনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সুবহানাল্লাহ! পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একাধিক স্থানে ইরশাদ  মুবারক হয়েছে-

نُوْحِىْ اِلَيْهِمْ

অর্থ: “আমি উনাদের (হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের) প্রতি পবিত্র ওহী মুবারক করতাম।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ইউসূফ শরীফ উনার পবিত্র ১০৯ আয়াত শরীফ, পবিত্র সূরা নহল শরীফ উনার পবিত্র ৪৩ আয়াত শরীফ, পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার ৭ আয়াত শরীফ)

অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সকল কার্যাবলীই পবিত্র ওহী মুবারক উনার দ্বারা (মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুতাবিক) পরিচালিত হতো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে-

اَلْأَنْبِيَاءُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ كُلُّهُمْ مَعْصُوْمُوْنَ

অর্থ: “সকল হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা মা’ছূম বা নিষ্পাপ।” সুবহানাল্লাহ! (শরহে আক্বাইদে নছফী)

আরও উল্লেখ রয়েছে যে-

اَلْأَنْبِيَاءُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ كُلُّهُمْ مُنَزَّهُوْنَ عَنِ الصَّغَائِرِ وَالْكَبَائِرِ وَالْكُفْرِ وَالْقَبَائِحِ

অর্থ : “সকল হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা ছগীরা, কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।” সুবহানাল্লাহ! (আল ফিক্বহুল আকবার লি ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি)

অতএব, যারা হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ভুল সম্পর্কে বলে থাকে, আক্বাইদ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই তারা তা বলে থাকে। যেমন তারা বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!

মূলত তাদের একথা সঠিক নয়। প্রকৃত ঘটনা হলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে আদেশ মুবারক করেছিলেন যে-

لَا تَقْرَبَا هٰذِهِ الشَّجَرَةَ

অর্থ : “আপনারা এই (গন্দমের) গাছের নিকটবর্তী হবেন না।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৫)

তখন উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার এ আদেশ অনুযায়ী সে গাছের নিকটবর্তী হননি। বরং উক্ত গাছের অনুরূপ বিপরীত দিকের অন্য একটি গাছ দেখিয়ে ইবলিস শয়তান এসে হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাকে মিথ্যা কছম খেয়ে বলেছিল যে, আপনারা যদি এ গাছের ফল খান, তবে আপনারা ফেরেশতা হয়ে যাবেন অথবা স্থায়ীভাবে বেহেশতে বসবাস করতে পারবেন। কোন কোন বর্ণনা মোতাবেক, তখন হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম তিনি সে গাছ হতে ফল এনে শরবত বানিয়ে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে খাইয়েছিলেন। অপর বর্ণনায়, ফল কেটে খাইয়েছিলেন। এ ঘটনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং যা অজান্তে সংঘটিত হয়, তা কি করে ভুল বা অপরাধ হতে পারে? বাস্তবিক তা অবশ্যই কখনই ভুল  হতে পারেনা। (সমূহ তাফসীরের কিতাব)

এর মেছালস্বরূপ উল্লেখ করা যায়- সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস ছানী আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারক উনার ঘটনা। তিনি যে শাহাদাত মুবারক বরণ করেছিলেন, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। উনাকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার শত্রুরা শহীদ করার জন্য একে একে পাঁচবার বিষ পান করায়। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে তিনি প্রত্যেকবারই বেঁচে যান। ষষ্ঠবার উনাকে শহীদ করার জন্য উনার পানির কলসি মুবারক, যে কলসি মুবারক উনার মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখতেন, (যেন তার ভিতর কিছু ফেলা না যায়,) সেই কাপড় মুবারক উনার উপর শত্রুরা মারাত্মক হিরক চূর্ণ বিষ উনার অজান্তে মিশিয়ে দিয়েছিল। তিনি গভীর রাত্রিতে হিরক চূর্ণ বিষ মিশ্রিত পানি কলসি মুবারক থেকে ঢেলে পান করেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। যা উনার অজান্তেই সংঘটিত হয়েছিল। (সিররুশ শাহাদাতাইন, শুহাদায়ে কারবালা, সীরতে ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন আলাইহিমাস সালাম)

এখন প্রশ্ন উঠে, ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে উনার শাহাদাতকে আত্মহত্যা বলতে হবে, না ভুল করার কারণে বিছাল শরীফ লাভ করেছেন, তা বলতে হবে?

মূলত উপরোক্ত দুটির কোনটিই বলা যাবেনা। যদি কেউ কোন একটিও বলে, তবে সে মিথ্যা তোহমত দেয়ার গুনাহে গুনাহগার হবে; যা কুফরীর শামিল হবে। তদ্রূপ হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ঘটনাও। যা উনার অজান্তে সংঘটিত হয়েছে।

অনুরূপ অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঘটনাও। মানুষ সঠিক ইতিহাস না জানার কারণে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে, হযরত নবী আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের শানে বেয়াদবিমূলক, কুফরী কথাবার্তা বলে থাকে।

পঞ্চম হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার আল মুরশিদুল আমীন কিতাবে উল্লেখ করেন, “একবার মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হুজরা শরীফ-এ বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চাইলেন। এ সংবাদ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছালেন। তখন নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন যে, সে ব্যক্তিকে অপেক্ষা করতে বলুন। একথা বলে নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ি মুবারক, কোর্তা মুবারক ইত্যাদি গোছগাছ করে নিলেন। এমনকি পবিত্র হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে পানির গামলাতে নিজের চেহারা মুবারক দেখে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। তা দেখে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিও কি এরূপ করেন?

তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, কিরূপ করি? উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছছালিছাহ আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, এরূপ পরিপাটি। এর জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নবী। আমাদের কোন কাজ কারো অপছন্দ হলে, সে ঈমানহারা হয়ে যাবে।”

অতএব, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যে কতটুকু অপছন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকতেন, এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ঘটনা তারই প্রমাণ। তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে বা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ভুল-ত্রুটি করেছিলেন? নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! বস্তুত এরূপ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণরূপেই কাট্টা কুফরী।

তদ্রূপ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে ও উনাদের শানের খিলাফ কোন অর্থ গ্রহণ করা যাবেনা বরং এমন অর্থ ব্যবহার বা গ্রহণ করতে হবে, যাতে উনাদের শান-মান মুবারক সমুন্নত থাকে।

অতএব, কোন লোকের জন্যেই হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারক উনার বিন্দুমাত্র খিলাফ কথাবার্তা বলা যাবেনা। কেউ যদি বলে থাকে, তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী এবং সে কাট্টা জাহান্নামী হবে। এ ধরনের কুফরী আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকা সমস্ত মুসলমান পুরুষ-মহিলাদের জন্য অবশ্যই ফরযে আঈন।

মুহম্মদ আমীর হুসাইন, সদর, দিনাজপুর

সুওয়াল: ইমামুছ ছালিছ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতকে কেন্দ্র করে অনেকে জলীলুল ক্বদর ছাহাবী হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করে থাকে। এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিস্ সালাম উনাকে যেমন কোন ব্যাপারে দোষারোপ করা জায়িয নেই। তদ্রƒপ কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেও কোন ব্যাপারে দোষারোপ করা জায়িয নেই।

এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ أُخْرٰى

অর্থ: “একজনের পাপের বোঝা অপরজন বহন করবেনা।” (পবিত্র সূরা আনয়াম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১৬৪)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সন্তানের অপরাধের জন্য পিতাকে এবং পিতার অপরাধের জন্য সন্তানকে দায়ী করা বৈধ নয়। যেমন, কাবিলের অপরাধের জন্য হযরত আবুল বাশার আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনাকে, কেনানের অপরাধের জন্য হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম উনাকে দায়ী করা বৈধ নয়। তেমনি ইয়াযীদের অপরাধের জন্য হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দায়ী করাও বৈধ নয়। বরং সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لِيَغِيْظَبِهِمُ الْكُفَّارَ

অর্থ: “কাফিররাই উনাদের (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের) প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে।” (পত্রি সূরা ফাতহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ নং ২৯)

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ مَالِكِ بْنِ اَنَسٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ مَنْ غَاظَهٗ أَصْحَابَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَهُوَ كَافِرٌ

অর্থ: “হযরত মালিক ইবনে আনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সে কাফির।” (নাসীমুর রিয়াদ্ব)

এখানে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার যে, আল্লাহ পাক-উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আদরের দৌহিত্র হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার মর্মান্তিক শাহাদাতে মুসলিম উম্মাহ’র অন্তর ব্যথাতুর হবে তা চরম সত্য কথা এবং এটি ঈমান মজবুতীর আলামতও বটে। কিন্তু এজন্য হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি আল্লাহ পাক-উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার জলীলুল ক্বদর ছাহাবী উনাকে দোষারোপ করা কস্মিনকালেও শরীয়ত সম্মত হতে পারে না।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ سَعِيْدِنِ الْـخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ‏ لَا تَسُبُّوْا اَصْحَابِـىْ فَلَوْ اَنَّ اَحَدَكُمْ اَنْفَقَ مِثْلَ اُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ اَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيْفَهٗ.

অর্থ: “হযরত আবু সায়ীদ খুদুরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে গালি দিওনা। কেননা তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহ পাক-উনার রাস্তায় দান কর, তবুও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এক মূদ্ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মূদ্ (৭ ছটাক) গম দান করার ফযীলতের সমপরিমাণ ফযীলত অর্জন করতে পারবে না।” (বুখারী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-

عَنْ حَضْرَتْ عُوَيـْمِرِ بْنِ سَاعِدَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللهَ اِخْتَارَنِيْ وَاخْتَارَلِـىْ أَصْحَابًا فَجَعَلَ لِىْ مِنْهُمْ وُزَرَاءَ وَأَنْصَارًا وَأَصْهَارًا فَمَنْ سَبَّهُمْ فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْـمَلٰئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ وَلَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُمْ صَرْفًا وَّعَدْلًا.

অর্থ: “হযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে মনোনীত করেছেন এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খিদমতকারী ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়বর্গ নির্ধারণ করেছেন। অতএব যারা উনাদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও মানুষ সকলেরই লা’নত এবং তাদের কোন ফরয ও নফল ইবাদত মহান আল্লাহ পাক তিন কবুল করবেন না।” (তবারানী শরীফ, হাকিম শরীফ)

স্মরণযোগ্য যে, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে একজন বিশেষ শ্রেণীর ছাহাবী যাকে ‘উলুল আযম বা জলীলুল ক্বদর ছাহাবী বলা হয়। তিনি ছিলেন আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, কাতিবীনে ওহীর সদস্য, হাদীছ শরীফ উনার রাবী, ফক্বীহ ইত্যাদি মর্যাদার অধিকারী। উনার ইলমের পূর্ণতা, হিদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা, উনার দ্বারা লোকদের হিদায়েত লাভ, কিতাব শিক্ষাদান এবং জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করেছেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ أُمُّ حَرَامٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنَّهَا سَمِعَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ‏ أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِىْ يَغْزُوْنَ الْبَحْرَ قَدْ أَوْجَبُوْا

অর্থ: “হযরত উম্মু হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, আমার উম্মতের প্রথম যে দল সমুদ্র পথে জিহাদে অংশগ্রহণ করবেন উনাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব।” (বুখারী শরীফ)

হযরত ইমাম তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ২৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম সমুদ্র পথে জিহাদের মাধ্যমে কাবরাসের উপর আক্রমণ করেন এবং কাবরাস তিনিই বিজয় করেন।”

হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মর্যাদা-মর্তবার মধ্যে অন্যতম মর্যাদা হলো, তিনি ছিলেন একজন আদিল বা ইনসাফগার খলীফা। উনার ন্যায় বিচার ও ইনসাফ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবী হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “আমার দৃষ্টিতে হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম, এরপর হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চেয়ে অধিক ন্যায় বিচারক কেউ নেই।” সুবহানাল্লাহ!

এক ব্যক্তি হযরত মুয়াফা ইবনে ইমরান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললো, ন্যায় বিচারের দিক দিয়ে হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? একথা শুনে তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি কোন প্রকার ক্বিয়াস করা যাবে না। হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছাহাবী, কাতিবে ওহী ও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘আমীন’ (আমানতদার)।”

আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, “হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শ্রেষ্ঠ, না হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শ্রেষ্ঠ?” তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ঘোড়ায় চড়ে জিহাদে যেতেন, তখন ঘোড়ার নাকে যে ধুলোবালিগুলো প্রবেশ করতো, সেই ধুলোবালিগুলোও হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বহুগুণে শ্রেষ্ঠ।” (ফতওয়ায়ে হাদীছিয়াহ)

সুতরাং, এত সব মর্যাদা ও মর্তবার পরও যারা হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, উনাকে নাক্বিছ বলে গালি দেয়, তাদের জন্যে হযরত ইমাম শিহাবুদ্দীন খাফ্ফাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথাই অধিক প্রযোজ্য। তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে গালি দেয়, নাকিছ বলে, সমালোচনা করে, সে হাবিয়া দোযখের কুকুরসমূহের মধ্য হতে একটি কুকুর।”

উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শুধু ছাহাবীই ছিলেন না, বরং উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, জলীলুল ক্বদর ছাহাবী ও খলীফা ছিলেন। সুতরাং হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সহ সকল ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে সাবধানে কথা বলতে হবে। মূলত উনাদের সকলের প্রতিই সুধারণা পোষণ করতে হবে, মুহব্বত করতে হবে এবং উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণও করতে হবে।

কেননা উনারা হলেন দ্বীন ইসলাম উনার সম্মানিত ইমাম এবং হাবীবে খোদা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শের বাস্তব প্রতিফলন। এই জন্য উনারা যেভাবে ঈমানের স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং আমলে যেভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, ঠিক সেভাবেই ঈমানের স্বীকৃতি দেয়া এবং আমলে নিয়োজিত হওয়া পরবর্তী উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য।

এ প্রসঙ্গে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

اٰمِنُوْا كَمَا اٰمَنَ النَّاسُ

অর্থ: “তোমরা ঈমান আন যেভাবে অন্যান্য লোক অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ঈমান এনেছেন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র  আয়াত শরীফ নং ১৩)

মহান আল্লাহ পাক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-

رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ

“অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করেছেন।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِاِحْسَانٍ رَّضِىَ اللهُ عَنْهُمْ

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই সকল বান্দাদের প্রতিও সন্তুষ্ট যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উত্তমরূপে অনুসরণ করেন।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُمَرُ بْنِ الْـخَطَّاب عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَصْحَابِـىْ كَالنُّجُومِ فَبِأَيِّهِمْ اِقْتَدَيْتُمْ اِهْتَدَيْتُمْ.

অর্থ: হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তারকা সাদৃশ্য। উনাদের যে কাউকে অনুসরণ করলে তোমরা হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে।” (মিশকাত শরীফ)

আর মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

فَاِنْ اٰمَنُوْا بِـمِثْلِ مَا اٰمَنْتُمْ بِهٖ فَقَدِ اهْتَدَوْا

অর্থ: যদি তোমরা (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) উনাদের মতো ঈমান আনতে পারো, তাহলে অবশ্যই হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩৭)

অতএব, মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরাসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করতে চাইলে এবং হাক্বীক্বী হিদায়েত হাছিল করতে চাইলে অবশ্যই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে, উনাদের মত ঈমান আনতে হবে এবং উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, সমালোচনা করা ও নাক্বিছ বলা হতে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে হবে। যা সকলের জন্যই অবশ্যই ফরযে আঈন।

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।, ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ

সুওয়াল: মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: (পূর্ব প্রকাশিতের পর- ৪৩)

‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার একখানা অর্থ মুবারক হচ্ছেন ‘অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী’:

মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি যে অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী তা বুঝার জন্য- তিনি যে সমস্ত কায়িনাতবাসীকে মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত শান মুবারক সম্পর্কে সর্বোচ্চ এবং সর্বোত্তম সম্মানিত বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ মুবারক শিক্ষা দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন, তা ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সম্মানিত বিশুদ্ধ আক্বীদাহ মুবারক

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ. اللهُ الصَّمَدُ. لَـمْ يَلِدْ وَلَـمْ يُوْلَدْ. وَلَـمْ يَكُنْ لَّهٗ كُفُوًا اَحَدٌ

অর্থ: “(আমার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি (সমস্ত কায়িনাতবাসীকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি এক। মহান আল্লাহ পাক তিনি বেনিয়াজ অর্থাৎ তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। উনার থেকে কেউ আসেনি এবং তিনিও কারো থেকে আসেননি। উনার সমকক্ষ কেউ নেই।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৪)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

لَيْسَ كَمِثْلِهٖ شَىْءٌ

অর্থ: “কোনো কিছুই উনার সম্মানিত মেছাল মুবারক উনার অনুরূপ নেই। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত মেছাল মুবারক উনারও কোনো মেছাল নেই।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা শূরা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ও পবিত্র আরশে আযীম মুবারক-এ সমাসীন আছেন বলা কুফরী। কেননা, এর দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে সৃষ্টি জগতের সাথে তুলনা দেয়া হয় এবং উনাকে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের অধীন সাব্যস্ত করা হয়, যা সুস্পষ্ট কুফরী। মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত তাজাল্লী মুবারক সর্বপ্রথম সম্মানিত ও পবিত্র আরশে আযীম মুবারক-এ প্রকাশ পান অতঃপর সেখান থেকে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েন। সুবহানাল্লাহ! উনাকে নূর বলা কুফরী। তিনি হচ্ছেন সম্মানিত নূর মুবারক উনার খালিক্ব তথা সৃষ্টিকর্তা। অনুরূপভাবে উনার চোখ, মুখ, কান, হাত, পা ইত্যাদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আছে বিশ্বাস করা কুফরী। মুশাবিহাহ ফিরক্বার কুফরী আক্বীদাহ হচ্ছে ‘মহান আল্লাহ পাক উনার মুখ, চোখ, নাক, হাত, পা ইত্যাদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আছে।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে যেখানে মহান আল্লাহ পাক উনার চোখ, মুখ, কান, হাত, পা ইত্যাদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মুবারক উনাদের কথা বলা হয়েছে, এর দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত কুদরত মুবারক উনাকে বুঝানো হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো শরীক তথা সমকক্ষ নেই। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যাত মুবারকগত দিক থেকে হোক অথবা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছিফত মুবারকগত দিক থেকে হোক, কোনো দিক থেকেই মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো শরীক বা সমকক্ষ নেই। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক উনার অসংখ্য-অগণিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছিফত মুবারক রয়েছেন। এ সকল মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছিফত মুবারকসমূহ উনাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যাতী ছিফত মুবারক হচ্ছেন ৮টি। এগুলো মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার থেকে জুদাও নন। উক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছিফত মুবারকগুলো হচ্ছেন, ১. ইলম, ২. কুদরত, ৩. হায়াত, ৪. ইরাদাত বা ইচ্ছা শক্তি, ৫. সামা’ বা শ্রবণ শক্তি, ৬. বাছার বা দর্শন শক্তি, ৭. কালাম বা বাক শক্তি, ৮. তাকওইন বা সৃষ্টি শক্তি। এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছিফত মুবারকগুলো ক্বদীম (অনাদী) এবং আযালী (চিরন্তন)। সুবহানাল্লাহ! এছাড়া মহান আল্লাহ পাক উনার যত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছিফত মুবারক রয়েছেন, সেগুলো হচ্ছেন ছিফতী ছিফত। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক উনার প্রত্যেকটি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছিফত মুবারকই হচ্ছেন ক্বদীম (অনাদী) এবং আযালী (চিরন্তন)। তিনি উনার যাবতীয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছিফত মুবারকসহ সবসময় ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন। সুবহানাল্লাহ! যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছিফত মুবারক উনাদেরকে সৃষ্ট অথবা অস্থায়ী বলবে অথবা সিদ্ধান্ত প্রকাশে চুপ থাকবে অথবা এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করবে, সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। না‘ঊযুবিল্লাহ!

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব