সুওয়াল-জাওয়াব

সংখ্যা: ২৬৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

সাইয়্যিদ খুবাইব আহমদ ছাফওয়ান, পূর্ব গোড়ান, ঢাকা

সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করলে তথা সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করলে পরকালে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়, উপরন্তু বিনা হিসাবে জান্নাত নছীব হয়। এ বিষয়ে অনেক বর্ণনাও রয়েছে। কিন্তু সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করলে দুনিয়াবী শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার ব্যাপারে কোনো বর্ণনা আছে কি? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: হ্যাঁ, সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করলে পরকালে যেমন জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে পরিত্রাণ লাভ হয় এবং সম্মানিত জান্নাত এবং উনার নাজ-নিয়ামত নছীব হয়। একইভাবে সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করলে দুনিয়াবী শাস্তি থেকেও পরিত্রাণ পাওয়া যায়, এমনকি দুনিয়াবী সবচেয়ে বড় শাস্তি মৃত্যুদ-; সেই মৃত্যুদ- থেকেও পরিত্রাণ পেয়েছেন এমন অনেক ঘটনাই কিতাবে বর্ণিত রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে-

أنه كان فى زمان الخليفة عبد الـملك بن مروان شاب حسن الصورة في الشام، وكان يلهو بركوب الخيل فبينما هو ذات يوم على ظهر حصانه إذ أجفل الحصان وحمله فى سكك الشام ولم يكن له قدرة على منعه فوقع طريقه على باب الخليفة فصادف ولده ولم يقدر الولد على رد الحصان فصدمه بالفرس وقتله، فوصل الخبر الى الخليفة فأمر بإحضاره، فلما أن أشرف إليه خطر على باله أن قال إن خلصني الله تعالى من هذه الواقعة أعمل وليمة عظيمة وأستقرئ فيها مولد النبي صلى الله عليه وسلم فلما حضر قدامه ونظر إليه ضحك بعدما كان يخنقه الغضب، فقال: يا هذا أتحسن السحر؟ قال لا والله يا أمير الـمؤمنين. فقال عفوت عنك، ولكن قل لي ماذا قلت؟ قال: قلت إن خلصنى الله تعالى من هذه الواقعة الجسيمة أعمل له وليمة لأجل مولد النبى صلى الله  عليه وسلم. فقال الخليفة قد عفوت عنك، وهذه ألف دينار لأجل مولد النبي صلى الله عليه وسلم، وأنت فى حل من دم ولدى. فخرج الشاب وعفى عن القصاص وأخذ ألف دينار ببركة مولد النبي صلى الله عليه وسلم وإنما أطلت الكلام فى ذلك لأجل أن يعتنى ويرغب جميع الاخوان، في قراءة مولد سيد ولد عدنان، لان من لأجله خلقت الأرواح والأجسام، بحق أن يهدى له الروح والـمال والطعام وفقنا الله وإياكم لقراءة مولد نبيهالكريم على الدوام، وإنفاق الـمال لأجله في سائر الأوقات والأيام امين

অর্থ: শাসক আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানের শাসনকালে শামদেশের এক সুদর্শন যুবক সে ঘোড়ায় চড়ে খেলতেছিল। একদিন হঠাৎ সে তার ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যায়। অতঃপর ঘোড়ার পিঠে উঠলে ঘোড়াটি তাকে নিয়ে শাম দেশের পথে চলতে শুরু করে। ঘোড়াটিকে সে থামাতে সক্ষম হচ্ছিল না। অতঃপর ঘোড়াটি খলীফার দরজায় গিয়ে উপনীত হলো। তখন খলীফার ছেলে ঘোড়ার সামনে চলে আসলো এবং খলীফার ছেলেটিও ঘোড়াটিকে ফিরিয়ে রাখতে সক্ষম হলো না বরং সে ঘোড়ার দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং নিহত হয়। এই সংবাদ খলীফার নিকট পৌঁছলে খলীফা উক্ত যুবককে তার দরবারে উপস্থিত হওয়ার জন্য আদেশ করলো। খলীফার আদেশ যখন তার প্রতি ঘোষণা করা হলো, সেটা কঠিন বিপদ মনে করে সেই যুবক বললো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আমাকে এই কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার করেন তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদত শরীফ উপলক্ষে আমি বড় করে ওলীমা বা খাবারের মজলিসের ব্যবস্থা করবো এবং তা (প্রতিবছর) জারী রাখবো।

অতঃপর সেই যুবক খলীফার সমীপে উপস্থিত হলো এবং তার দিকে দৃষ্টি দিল। তখন হত্যার গোস্বা থাকা সত্ত্বেও খলীফা হেসে দিল। অতঃপর বললো, হে ব্যক্তি! তুমি কি জাদু করো? সে বললো, হে আমীরুল মু’মিনীন! মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি জাদু করি না। অতঃপর খলীফা বললো, আমি তোমার অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম। অতএব, তুমি যা বলার তা আমাকে বলতে পারো। তখন সেই যুবক বললো, আমি নিয়ত করেছিলাম, মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি আমাকে এই কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার করেন তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদত শরীফ বা মীলাদ শরীফ উপলক্ষে ওলীমা মাহফিলের ব্যবস্থা গ্রহন করবো এবং প্রতিবছর তা জারী রাখবো। অতঃপর খলীফা পূনরায় বললো, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাকে সুমহান মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা হাদিয়া করলাম এবং আমার ছেলের হত্যার অপরাধ থেকেও মুক্তি দান করলাম। যুবক খলীফার দরবার থেকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বের হলো এবং সুমহান মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতে এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা গ্রহণ করলো। এ বিষয়টি যখন প্রকাশিত হলো, তখন যুবকের সমস্ত ভাই মনযোগী ও আগ্রহী হলো আদনান গোত্রের শ্রেষ্ঠতম আওলাদ অর্থাৎ সাইয়্যিদে উইলদে আবুল বাশার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদত শরীফ তথা মীলাদ শরীফ পালনের ব্যাপারে। কেননা উনার কারণেই সমস্ত রূহ ও দেহ সৃষ্টি হয়েছে এবং উনার সম্মানার্থে তারা লাভ করেছে জীবন, সম্পদ ও খাদ্য।

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে ও আপনাদেরকে উনার সম্মানিত নবী ও রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদত বা মীলাদ শরীফ দায়িমীভাবে পালন করার তাওফীক দান করুন। এবং এ উদ্দেশ্যে সমস্ত দিনব্যাপী ও সময়ব্যাপী মাল সম্পদ খরচ করারও তাওফীক দান করুন। আমীন। (ইয়ানাতুত ত্বালিবীন: ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং ৬১৩)

মুহম্মদ রূহুল কুদুস, বগুড়া।, ডা. মুহম্মদ আওক্বাত আলী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।

সুওয়াল: মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা এবং খলীফাতুল উমাম, আল মানছূর সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ১১তম খলীফা এবং ‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অর্থ, ব্যাখা-বিশ্লেষণ ও মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান খলীফা ‘হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম’ এবং উনার মুবারক উছীলায় যে, অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান যামানায় সম্মানিত খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ মুবারক প্রতিষ্ঠিত হবে এ সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : (পূর্ব প্রকাশিতের পর- ৪২)

‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার একখানা অর্থ মুবারক হচ্ছেন ‘অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী’। সুবহানাল্লাহ! নিম্নে এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা তুলে ধরা হলো, যা ‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অর্থ যে ‘অসীম ইলম মুবারক উনার অধিকারী’ এবং মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম  মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনিই যে ‘আস সাফফাহ’ সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অধিকারী তা বুঝা সহজ এবং সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ!

যে সকল বিষয় মুবারকসমূহ সম্মানিত আক্বীদাহ মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।

ইমামু আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘য়াহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার সংশ্লিষ্ট বিষয় মুবারকসমূহ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উনার সংশ্লিষ্ট বিষয় মুবারকসমূহ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং উনাদের সংশ্লিষ্ট বিষয় মুবারকসমূহ, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং উনাদের সংশ্লিষ্ট বিষয় মুবারকসমূহ, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা এবং উনাদের সংশ্লিষ্ট বিষয় মুবারকসমূহ, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এবং উনাদের সংশ্লিষ্ট বিষয় মুবারকসমূহ এবং সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার এবং উনার সংশ্লিষ্ট বিষয় মুবারসমূহ হচ্ছেন সম্মানিত আক্বীদাহ মুবারক উনার আলোচ্য বিষয়। সুবহানাল্লাহ! এ সকল সম্মানিত ও পবিত্র বিষয় মুবারক-এ সম্মানিত আক্বীদাহ মুবারক বিশুদ্ধ করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের উপর ফরযে আইন।” সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত ঈমান উনার মূল এবং যে সকল বিষয় মুবারক উনাদের উপর অবশ্যই ঈমান আনতে হবে-

১.         খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার উপর,

২.         সম্মানিত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর,

৩.         সম্মানিত আসমানী কিতাবসমূহ উনাদের উপর,

৪.         হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর,

৫.         আখিরাত বা পরকালের উপর,

৬.         সম্মানিত তাক্বদীর উনার উপর এবং

৭.         মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সম্মানিত বিশুদ্ধ আক্বীদাহ মুবারক

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ওয়াজিবুল ওয়াজূদ। তিনি এক-অদ্বিতীয়। তিনি ক্বাদীম তথা অনাদি। আর ক্বাদীম হচ্ছেন এমন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজূদ মুবারক, যেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজূদ মুবারক উনার সম্মানিত অস্তিত্ব মুবারক উনার কোনো সূচনা নেই। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি হাদেছ তথা সৃষ্টি নন। তিনি নশ্বর নন। তিনি অনাদি ও অনন্ত। তিনি ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন। উনার কোনো শুরুও নেই, শেষও নেই। তিনি সমগ্র কায়িনাতের অস্তিত্ব প্রদানকারী, খালিক্ব, মালিক, রব, রিযিক্বদাতা। তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, চিরঞ্জীব, সর্বজ্ঞানী, সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা, সমস্ত ইচ্ছার অধিকারী, স্বাধীন, মহাপরাক্রমশালী। তিনি ছমাদ তথা বেনিয়ায। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি শরীর বা জিসিম থেকে, চওড়া ও প্রশস্ততা থেকে, পরিধি ও ব্যাস থেকে, আকার ও আকৃতি থেকে, সংখ্যা থেকে, টুকরা টুকরা হওয়া থেকে, অংশ হওয়া থেকে, কোনো কিছুর সম্মিলিতরূপ হওয়া থেকে, শুরু ও শেষ হওয়া থেকে, সীমাবদ্ধতা থেকে, বস্তু হওয়া থেকে, কোনো বস্তু উনার সাথে সামঞ্জস্যশীল হওয়া থেকে, কোনো ধরণ হওয়া থেকে, কোনো স্থানে সমাসীন হওয়া থেকে, উনার উপর কোনো কাল অতিক্রম হওয়া থেকে পরিপূর্ণভাবে পবিত্র। সুবহানাল্লাহ! এমনকি তিনি ‘মহান আল্লাহু পাক’ লফয বা শব্দ মুবারক থেকেও পবিত্র। তিনি এই সম্মানিত লফয বা শব্দ মুবারক উনারও মুহতাজ নন। সুবহানাল্লাহ! কোনো কিছু উনার সম্মানিত ইলম মুবারক ও সম্মানিত কুদরত মুবারক উনাদের বাইরে নয়। সুবহানাল্লাহ!

 

মুহম্মদ আহনাফ মুর্শিদ, বগুড়া।

সুওয়াল: পবিত্র হজ্জ উনার ফরযসমূহ কয়টি?

জাওয়াব: পবিত্র হজ্জ উনার ফরয হচ্ছে ৩টি। (১) ইহরাম বাঁধা অর্থাৎ “মীক্বাত” হতে ইহরাম বাঁধা। (২) ওকূফে আরাফা অর্থাৎ ৯ই যিলহজ্জ উনার দ্বিপ্রহরের পর হতে অর্থাৎ সূর্য ঢলার পর হতে ১০ই যিলহজ্জ ছুব্হে ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময় আরাফার ময়দানে উপস্থিত থাকা। (৩) তাওয়াফে যিয়ারত অর্থাৎ ১০, ১১ ও ১২ই যিলহজ্জ তারিখের মধ্যে কা’বা শরীফ তাওয়াফ করা।

মুহম্মদ যাহিদুল ইসলাম, কাতার

সুওয়াল : পবিত্র হজ্জ উনার ওয়াজিব কয়টি?

জাওয়াব : পবিত্র হজ্জ উনার মূল ওয়াজিব ৫টি। (১) সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সায়ী করা। (২) মুযদালিফায় অবস্থান করা। (৩) রমী বা কঙ্কর নিক্ষেপ করা। (৪) মাথা মু-ন করা। (৫) তাওয়াফে বিদা বা বিদায়ী তাওয়াফ করা।

মুহম্মদ আব্দুন নূর, মাদারীপুর।

সুওয়াল : মীক্বাত কাকে বলে?

জাওয়াব : যে স্থান থেকে পবিত্র হজ্জ উনার জন্য ইহরাম বাঁধতে হয় সে স্থানকে মীক্বাত বলে। বাংলাদেশের হাজী ছাহিবরা যেহেতু ইয়েমেন হয়ে পবিত্র হজ্জ করতে যায় সেহেতু ইয়েমেনবাসীর যে মীক্বাত “ইয়ালামলাম” বাংলাদেশীদেরও সেই একই মীক্বাত। আর যদি বাংলাদেশী হাজী ছাহিবরা মদীনা শরীফ হয়ে যায় তাহলে মদীনা শরীফবাসীদের যে মীক্বাত “যুলহুলাইফা” সেখান থেকে তাদেরকে ইহরাম বাঁধতে হবে।

এছাড়াও যদি ইরাক হয়ে যায় তাহলে ইরাকবাসীদের যে মীক্বাত “যাতে ইরাক” সেখান থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে।

আর যদি সিরিয়া হয়ে যায় তাহলে “জুহ্ফা” থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে যা সিরিয়াবাসীদের মীক্বাত।

আর যদি নজদ হয়ে যায় তাহলে “করণ” হতে ইহরাম বাঁধতে হবে যা নজদবাসীদের মীক্বাত।

এছাড়াও আরও মীক্বাত রয়েছে। যারা মীক্বাতের ভিতরের অধিবাসী তাদের মীক্বাত হলো “হিল”। মীক্বাত ও হেরেম শরীফ উনার মধ্যবর্তী স্থানকে হিল বলে।

মক্কাবাসীদের পবিত্র পবিত্র হজ্জ উনার জন্য মীক্বাত হলো- “হেরেম শরীফ।” আর উমরার জন্য মীক্বাত হলো- “হিল।”

মুহম্মদ বাহাউল ইসলাম, আমান-বাড়িয়া

সুওয়াল : পবিত্র হজ্জ পালনের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার আমলের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?  জাওয়াব : হ্যাঁ, পুরুষ ও মহিলার আমলের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। তন্মধ্যে জরুরী কিছু পার্থক্য বর্ণনা করা হলো। (১) হজ্জে পুরুষেরা মাথা খোলা রাখবে মহিলারা মাথা ঢেকে রাখবে। (২) পুরুষেরা তালবিয়া পাঠ করবে উচ্চস্বরে আর মহিলারা তালবিয়া পাঠ করবে নিম্নস্বরে। (৩) পুরুষেরা তাওয়াফের সময় রমল করবে মহিলারা রমল করবেনা। (৪) ইজতেবা পুরুষেরা করবে মহিলাদের করতে হয়না। (৫) সাঈ করার সময় পুরুষেরা মাইলাইনে আখজারাইনের মধ্যস্থানে দৌড়াবে মহিলারা দৌড়াবেনা। (৬) পুরুষেরা মাথা কামাবে মহিলারা শুধু মাথার চুল এক অঙ্গুলি বা এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটবে। (৭) বিদেশী পুরুষ হাজী সাহেবদের জন্য তাওয়াফে বিদা করা ওয়াজিব। বিদেশী মহিলা হাজীদের জন্যও ওয়াজিব। তবে প্রাকৃতিক কারণে মহিলারা অসুস্থ হয়ে পড়লে এ ওয়াজিব তাদের জন্য সাকিত হয়ে যায়। (৮) পুরুষদের জন্য সেলাই করা কাপড় পরিধান নিষিদ্ধ মহিলারা সেলাই করা কাপড় পরিধান করবে।

মুহম্মদ খাইরুল ইসলাম, মানিকনগর, ঢাকা।

সুওয়াল : পবিত্র হজ্জ আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে যে আলাদা আলাদা দোয়া-দুরূদ ও তাসবীহ পড়ার নিয়ম রয়েছে তা প্রায় অনেক হাজী সাহেবদের পক্ষেই আদায় করা সম্ভব হয়না। তার কারণ হচ্ছে- (১) স্মরণ শক্তির অভাব, (২) সময়ের স্বল্পতা ও (৩) অধিক ব্যস্ততা ইত্যাদি।

এক্ষেত্রে তাদের জন্য এমন কোন আমল আছে কি যা হাজী সাহেবরা সহজে আদায় করতে পারবে? জাওয়াব : হ্যাঁ, যে সমস্ত হাজী সাহেবরা পবিত্র হজ্জ উনার বিস্তারিত দোয়া-দরূদ ও তাসবীহ ইত্যাদি পাঠ করতে অপারগ তাদের জন্য সবচেয়ে সহজ আমল হচ্ছে তারা প্রতি কদমে, প্রতি মাকামে ও প্রতি স্থানে শুধু দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। আর দুরূদ শরীফ উনার মধ্যে সবচেয়ে সহজ দুরূদ শরীফ হলো-

صلى الله عليه وسلم

উচ্চারণ : “ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”

আর যদি কোন হাজী ছাহেবদের পক্ষে সম্ভব হয় তাহলে উক্ত দুরূদ শরীফ পাঠ করার ফাঁকে ফাঁকে যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ দোয়া, তা পাঠ করতে পারে। দোয়াটি হচ্ছে-

لا اله الا الله وحده لا شريك له له الـملك وله الحمد وهو على كل شىء قدير

উচ্চারণ : “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকালাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির।”

 

মুহম্মদ দেলোয়ার হুসাইন, বালিয়া, চাঁদপুর

সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকে পবিত্র কুরবানী দেয়ার হুকুম সম্পর্কে জানতে চাই।

জাওয়াব: পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ حَنَشٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ رَاَيْتُ حَضْرَتْ عَلِيًّا عَلِيْهِ السَّلَامُ يُضَحِّى بِكَبْشَيْنِ فَقُلْتُ لَهُ مَا هٰذَا فَقَالَ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْصَاِنْى اَنْ اُضَحِّى عَنْهُ فَانَا اُضَحِّى عَنْهُ.

অর্থ : “হযরত হানাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে দুটি দুম্বা কুরবানী করতে দেখলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কি? (দুটি কেন?) জবাবে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে ওছিয়ত মুবারক করে গিয়েছেন যে, আমি যেন উনার পক্ষ হতে পবিত্র কুরবানী করি। সুতরাং আমি উনার পক্ষ থেকে (একটি) পবিত্র কুরবানী করতেছি।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ ২য় খণ্ড ২৯ পৃষ্ঠা, তিরমিযী শরীফ ১ম খণ্ড ১৮০ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ১২৮ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে এটা স্পষ্ট যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে কুরবানী করার জন্য ওছিয়ত মুবারক করলেন।

এখন ফিকিরের বিষয় হচ্ছে, সাধারণ একজন উম্মত যদি তার সন্তানদেরকে ওছিয়ত করেন তাহলে সন্তানের জন্য তা মান্য করা ফরয-ওয়াজিব হয়ে যায়। সন্তান যদি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও সে ওছিয়ত পূর্ণ না করে তাহলে শরীয়ত অনুযায়ী গুনাহগার সাব্যস্ত হবে।

একজন পিতার ওছিয়ত পালন না করলে সন্তান যদি গুনাহগার হয় তাহলে হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওছিয়ত মুবারক পালন না করলে তা কত ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কাজেই যিনি নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, যিনি সমস্ত বাবারও বাবা! মহান আল্লাহ পাক উনার পরে যিনি মর্যাদা বা মাক্বাম মুবারক উনার অধিকারী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে ওছিয়ত মুবারক করলেন, উক্ত ওছিয়ত মুবারক পালনের গুরুত্ব কত বেশি এবং তা পালন না করলে উম্মতের কত কঠিন ও বড় গুনাহ হবে তা উম্মত মাত্রই সকলকে উপলব্ধি করে ফরয হিসেবে উনার সম্মানিত নাম মুবারকে কুরবানী করতে হবে। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْـهَوٰى. اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْىٌ يُّوحٰى.

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী ব্যতীত কোন কথা বলেন না, কোন কাজ করেন না।” (পবিত্র সূরা নজম শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ, ৩-৪)

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উক্ত ওছিয়ত মুবারক মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকেই।

এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয়- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে ওছিয়ত মুবারক করলেন। আর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভুক্ত।

তিনি হযরত খুলাফায়ে রশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি আশারায়ে মুবাশশরা উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি ইমামুল আউয়াল মিন আহলে বাইতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। একসাথে অনেক কিছু। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত সুন্নত বা আদর্শ মুবারক পালন করা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়েছে। আর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজজাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত চতুর্থ খলীফা। সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজজাহূ আলাইহিস সালাম উনার আদর্শ মুবারক- “প্রতি বছর নিজের তরফ থেকে একটি এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে আরেকটি কুরবানী করা” এই সম্মানিত আদর্শ মুবারক প্রতিটি মুসলমানের মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে হবে অর্থাৎ দৃঢ়তার সাথে দায়িমীভাবে অনুসরণ করতে হবে।

তাছাড়া নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো উম্মতের পক্ষ থেকে কুরবানী দিতেন। তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে কুরবানী করার সুমহান দায়িত্ব তো স্বাভাবিকভাবেই উম্মতের উপর বর্তায়। এই ব্যাপারে চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করার কোন অবকাশই নেই। বরং উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে চরম পরম মুহব্বত ও আনুগত্যতার সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে কুরবানী করা।

আর তাই মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি প্রতি বছর শত শত কুরবানী দেন। সুবহানাল্লাহ! উনার কাছে কমপক্ষে ১০ লক্ষ নাম মুবারক উনার তালিকা আছে। সুবহানাল্লাহ! তিনি হযরত আবূ রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের প্রত্যেকের নাম মুবারকে উনাদের তরফ থেকে কুরবানী করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

মুহম্মদ মিজানুর রহমান, বাবুরহাট, চাঁদপুর

সুওয়াল: পবিত্র কুরবানী ও কুরবানীদাতার ফযীলত সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: পবিত্র কুরবানী উনার ফযীলত সম্পর্কে বহু পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ زَيدِ بْنِ اَرْقَمَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! مَا هذِه الْاَضَاحِىْ؟ قَالَ سُنَّةُ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ الـسَّلاَمُ قَالُوْا فَمَا لَنَـا فِيْهَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ بِكُلّ شَعْرَةٍ حَسَنَةٌ قَالُوْا فَالصُّوْفُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ مِّنَ الصُّوْفِ حَسَنَةٌ.

অর্থ : “হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই কুরবানী কি? তিনি জাওয়াবে বললেন, আপনাদের পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত। উনারা পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এতে আমাদের জন্য কি পরিমাণ নেকী রয়েছে? তিনি বললেন, পবিত্র কুরবানী উনার পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী রয়েছে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পশমওয়ালা পশুর ক্ষেত্রে কি হুকুম? তিনি বললেন, পশমওয়ালা পশুর প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তেও একটি করে নেকী রয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত দাউদ আলাইহিস্ সালাম উনাকে বলেন, হে হযরত দাঊদ আলাইহিস্ সালাম! আপনি পবিত্র কুরবানী করুন। হযরত দাঊদ আলাইহিস্ সালাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কি শুধু আমার জন্যই? মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, না এটা হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম উনার থেকে শুরু করে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর্যন্ত জারী থাকবে। হযরত দাঊদ আলাইহিস্ সালাম তিনি বলেন, আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের জন্য পবিত্র কুরবানী উনার মধ্যে কী ফযীলত রয়েছে? মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, দুনিয়াবী হায়াতে প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে দশটি নেকী দেয়া হবে, দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। সুবহানাল্লাহ! আর পরকালে পবিত্র কুরবানী উনার পশুর মাথার প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একজন করে হুর দেয়া হবে। শরীরের প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে একটি করে বালাখানা দেয়া হবে। প্রতিটি গোশতের টুকরার বিনিময়ে একটি করে পাখি দেয়া হবে আর প্রতিটি হাড়ের বিনিময়ে একটি করে বোরাক (বাহন) দেয়া হবে। যাদ্বারা সে বিদ্যুত গতিতে পুলছিরাত পার হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  قَالَ استفرهوا ضحاياكم فانها مطاياكم على الصراط

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন- তোমরা তোমাদের কুরবানীর পশুগুলো শক্তিশালী ও মোটা-তাজা দেখে নির্বাচন কর। কারণ এগুলো তোমাদের পুলসিরাতের উপর চড়ে যাওয়ার বাহন হবে।” (দাইলামী-মুসনাদুল ফিরদাউস ১/৮৫)

আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

سَـمِّنُوْا ضُحَايَاكُمْ فَاِنَّـهَا عَلَى الصِّرَاطِ مَطَايَاكُمْ

অর্থ: “তোমরা মোটা-তাজা, হৃষ্টপুষ্ট পছন্দনীয় পশু কুরবানী করো, কেননা কুরবানীর পশুগুলো তোমাদের জন্য পুলছিরাত পার হওয়ার বাহন স্বরূপ হবে।” সুবহানাল্লাহ! (আরিযাতুল আহওয়াযী লী শরহে তিরমিযী ৬/২৮৮)

পুলছিরাত হচ্ছে হাশর ময়দান থেকে জান্নাতে যাওয়ার পথে জাহান্নামের উপর একখানি পুল। বর্ণিত রয়েছে, এই পুল চুল অপেক্ষা চিকন এবং তলোয়ার বা ক্ষুর অপেক্ষা ধারালো। এই পুলছিরাত ৩০ হাজার বছরের রাস্তা। প্রত্যেককেই এই পুল ছিরাত পার হতে হবে। পুলছিরাত পার না হওয়া পর্যন্ত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। সাধারণভাবে এই পুলছিরাত পার হওয়া অত্যন্ত কঠিন। পুলছিরাত পার হওয়ার পথে যাদের বাহন থাকবে তাদের জন্য পুলছিরাত পার হওয়া সহজ হবে। আর পুলছিরাত পার হওয়ার সেই বাহন হচ্ছে পবিত্র কুরবানীর পশু। সুবহানাল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে একটি ওয়াক্বিয়া বর্ণিত রয়েছে যে, একজন লোক ছিল। লোকটা খারাপ ছিলো না। সে দ্বীনদার আল্লাহওয়ালা হওয়ার জন্য কোশেশ করতো। যেহেতু বিভ্রান্তি সব যুগেই ছিলো। যেমন, বর্তমানে অনেকে বলে থাকে- ‘কুরবানী না করে পশুটা দান করে দিলে অসুবিধা কোথায়?’ এটা কাট্টা কুফরী কথা। কেউ যদি এরূপ কথা বলে সে কাট্টা কাফির হয়ে যাবে। কেননা, সে সম্মানিত ওয়াজিব ইবাদত উনাকে অস্বীকার করলো, ইনকার করলো। সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছে, পবিত্র সুন্নত মুবারক উনাকে অবজ্ঞা বা অস্বীকার করা কুফরী। সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া হচ্ছে, পবিত্র ওয়াজিব উনাকে ইহানত করলে বা অবজ্ঞা করলেও কাট্টা কাফির হবে। আজকাল কিছু লোক রয়েছে, যাদের আক্বীদা বদ অথচ তারা মুসলমান দাবীদার প্রকৃতপক্ষে এরাই এলোমেলো কথা বলে থাকে। এরা কিন্তু হিন্দুদের পূজার সময় বলে না যে, পুজা না করে দান করে দাও। বরং তারা নিজেরা তখন আরো সাহায্য করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! মূলত এই লোকগুলো সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী। যার কারণে সম্মানিত কুরবানী নিয়ে চু-চেরা করে থাকে।

সেই লোকটিও হক্ব তালাশী হওয়ার পরও তাদের ওয়াসওয়াসায় বিভ্রান্ত হয়ে পবিত্র কুরবানী করেনি। সে পবিত্র কুরবানীর পয়সা দান করে দিতো। সেই লোক একদিন স্বপ্নে দেখলো, ক্বিয়ামত হয়ে গেছে। বিচার হয়ে গেছে। সকলের ফায়ছালা হয়ে গেছে। অসংখ্য অগণিত লোক, সকলেই পুলছিরাতের সামনে উপস্থিত।

এখানে কোটি কোটি ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও আছেন। এখন পুলসিরাত পার হতে হবে। ত্রিশ হাজার বছরের রাস্তা অনেক দীর্ঘ রাস্তা। যমীন হতে আকাশ হচ্ছে পাঁচশত বছরের রাস্তা। তাহলে পুলসিরাত পার হবে কি দিয়ে? সে দখতে পেলো কিছুক্ষণ পরপর কোথা হতে অদৃশ্য বোরাক এসে একজন একজন করে নিয়ে যেতে লাগলো। বোরাক আসলে একজন চড়ে তাকে চোখের পলকে নিয়ে যায়। এভাবে এক সময় সবাই চলে গেলো। শুধু সেই লোকটিই দাঁড়িয়ে রইলো। তার জন্য কোনো বাহন আসতেছে না।

তখন সে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বললো, ‘সকলের জন্যতো বাহন আসলো, সবাইতো চলে গেলো, তাহলে আমার বাহন কোথায়?’ তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, ‘তোমার তো বাহন নেই। তুমিতো পবিত্র কুরবানী করোনি। তুমি কি করে পুলসিরাত পার হবে? তোমার বাহন আসবে কোথা হতে? তুমি তো পবিত্র কুরবানীর পশু কুরবানীই করোনি।’ সেই লোকটি বলে, একথা শুনে তার শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তখন সে ইস্তিগফার করলো, তওবা করলো। অতীত বছরের কুরবানীগুলো আদায় করলো এবং প্রতি বছর পশু কুরবানী শুরু করলো।

বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে দশ বছর অবস্থান মুবারক করেছেন। প্রতি বছরই পবিত্র কুরবানী করেছেন; কখনও তা ছাড়েননি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও পবিত্র কুরবানী করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন।

পবিত্র কুরবানী না করে তার অর্থ দান করে দেয়ার বিধান শরীয়ত উনার মধ্যে জায়িয নেই। কেননা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিংবা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কখনো এরূপ করেননি। অথচ উনাদের যুগেই এর জরুরত ছিল অধিক। বরং উনারা পবিত্র কুরবানী করেছেন এবং কুরবানীকৃত পশুর গোশত ও চামড়া অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করতে বলেছেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ مَا عَمِلَ اِبْنُ اٰدَم مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ اَحَبُّ اِلٰى اللهِ مِنْ اِهْرَاقِ الدَّمِ وَاِنَّهٗ لَيَأْتِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُوْنِـهَا وَاَشْعَارِهَا وَاَظْلَافِهَا وَاِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللهِ بِـمَكَانِ قَبْلَ اَنْ يَّقَعَ بِالْاَرْضِ فَطِيْبُوْا بِـهَا نَفْسًا.

অর্থ : “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বান্দা-বান্দী বা উম্মত পবিত্র কুরবানী উনার দিন যেসব নেকীর কাজ করে থাকে তন্মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হলো পবিত্র কুরবানী করা। ক্বিয়ামত দিবসে পবিত্র কুরবানী উনার পশু তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে এবং পবিত্র কুরবানী উনার পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পৌঁছে যায়। (সুবহানাল্লাহ!) কাজেই আপনারা আনন্দচিত্তে পবিত্র কুরবানী করুন।” (তিরমিযী শরীফ ও ইবনে মাজাহ শরীফ)

উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উল্লেখ রয়েছে-

اَفْضَلُ الْعِبَادَاتِ يَوْمُ الْعِيْدِ عِرَاقَةُ دَمِ الْقُرْبَاتِ

অর্থ : “ঈদের দিন রক্ত প্রবাহিত করা সর্বশ্রেষ্ঠ আমল।” সুবহানাল্লাহ! (তুহফাতুল আহওয়াজী)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিনে বান্দার পবিত্র কুরবানী উনার পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাক তার গুণাহ মাফ করে দেন।” সুবহানাল্লাহ!

এক বর্ণনা মতে, পবিত্র কুরবানী উনার পশু কুরবানীদাতার নাজাতের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করবে। (হাকিম ৪/২২২, বাযযার ২/৫৯, কাশফুল আসতার)

 

মুহম্মদ মাউদুর রহমান, পঞ্চগড়

সুওয়াল: পবিত্র কুরবানীর পশুর জন্য কোন কোন ত্রুটি থেকে মুক্ত হওয়া জরুরী?

জাওয়াব: পবিত্র কুরবানীর জন্য পশু দোষ-ত্রুটি মুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। পশুর ত্রুটিগুলি দু’ভাগে বিভক্ত। (এক) আয়িবে ফাহিশ অর্থাৎ বড় ধরনের দোষ বা ত্রুটি। যার কোন একটি পশুর মধ্যে থাকলে উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে না। যেমন- এমন দূর্বল পশু, যার হাড়ে মজ্জা বা মগজ শুকিয়ে গেছে। অথবা যে সকল পশু কুরবানীর জায়গা পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারেনা। যেসব পশুর একটি পা এরূপ নষ্ট হয়ে গেছে যে, উক্ত পা দ্বারা চলার সময় কোন সাহায্য নিতে পারে না। যে পশুর কান অথবা লেজের তিনভাগের একভাগ কাটা গেছে, যে পশুর শিং-এর গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে পশুর কান একেবারে গজায়নি, অর্ধেক দাঁত পড়ে গেছে এরূপ পশু দ্বারা পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবে না।

(দুই) আয়িবে ইয়াসির অর্থাৎ সাধারণ দোষ বা ত্রুটি। যে দোষ-ত্রুটি থাকলে পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবে। যেমন যে পশুর কোন এক অঙ্গের এক তৃতীয়াংশের কম নষ্ট হলে উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ হবে। অথবা যে পশুর অর্ধেকের বেশী দাঁত যদি থাকে, তবে উক্ত পশু দ্বারা কুরবানী জায়িয রয়েছে। অথবা যে পশুর শিং একেবারে উঠেনি, উক্ত পশু দ্বারা পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবে।

হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত-

اَشَارَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِه وَيَدِى قَصْرٌ مِنْ يَدِه اَرْبَع لَايُضَحّىْ بِـهِنَّ اَلْعَوْرَاء اَلْبَيّنُ عَوْرُهَا وَالْـمَرِيْضَةُ اَلْبَيّنُ مَرْضُهَا وَالْعَرْجَاء اَلْبَيّنُ ظَلْعُهَا وَالْعَجْفَاءَ اَلَّتِيْ لَا تُنْقِي فَقَالُوْا لِلْبَرَاءِ فَاِنـَّمَا نَكَرَهُ النُّقْصَ فِى السّنّ وَالْاُذْنِ وَالذَّنْبِ قَالَ فَاكْرِهُوْا مَا شِئْتُمْ وَلَا تُـحَرّمُوْا عَلى النَّاسِ.

অর্থ : “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাত মুবারক দিয়ে ইশারা মুবারক করেন, আমার হাত মুবারক তো উনার হাত মুবারক থেকে ছোট এবং বলেন, ‘চার ধরণের পশু দ্বারা কুরবানী করা যায় না- ১) যে পশুর চোখের দৃষ্টিহীনতা সুস্পষ্ট, ২) যে পশু অতি রুগ্ন, ৩) যে পশু সম্পূর্ণ খোড়া এবং ৪) যে পশু এত জীর্র্ণ-শীর্র্ণ যে তার হাড়ে মগজ নেই।’ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, আমরা তো দাঁত, কান ও লেজে ত্রুটিযুক্ত প্রাণী দ্বারাও কুরবানী করা অপছন্দ করি। তিনি বললেন, যা ইচ্ছা অপছন্দ করতে পারেন তবে তা অন্যের জন্য হারাম করবেন না।” (আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত-

اَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ نَسْتَشْرِفَ الْعيْنَ وَالْاُذْنَ وَاَنْ لَّانُضَحِّى بِـمُقَابَلَةِ وَلَا مُدَابَرَةِ وَلَا شَرْقَاءِ وَلَا خَرْقَاءِ.

অর্থ : “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের আদেশ মুবারক করেন, আমরা যেন পবিত্র কুরবানী উনার পশুর চোখ ও কান ভালোভাবে লক্ষ্য করি এবং ওই পশু দ্বারা পবিত্র কুরবানী না করি, যার কানের অগ্রভাগ বা পশ্চাদভাগ কর্তিত। তদ্রুপ যে পশুর কান লম্বায় ফাঁড়া বা কান গোলাকার ছিদ্রযুক্ত।” (আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)

হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে আরো বর্ণিত আছে-

نَـهٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ نُضَحِّى بِاَعْضَبِ الْقَرْنِ وَالْاُذْنِ.

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের শিং ভাঙ্গা বা কান-কাটা পশু দ্বারা পবিত্র কুরবানী করতে নিষেধ করেছেন।” (ইবনে মাজাহ শরীফ)

অন্যত্র বর্ণিত আছে-

وَلَاتَذْبَـحُوْا عَجْفَاءَ وَلَا عَرْجَاءَ وَلَا عَوْرَاءَ وَلَامَقْطُوْعَةَ الْاُذْنِ وَلَوْ وَاحِدَةً

অর্থ : “তোমরা ক্ষীণ-দুর্বল, পঙ্গু, চক্ষুহীণ ও কান কাটা পশু যদিও একটি কান হয়। এমন পশু কুরবানী করবে না।

অর্থাৎ নিম্নোক্ত দোষ-ত্রুটিযুক্ত পশু কুরবানী করলে কুরবানী ছহীহ হবে না-

১. শিং ভাঙ্গা,    ২. কান কর্তিত বা গোলাকার ছিদ্রযুক্ত, ৩. চক্ষুহীন বা দৃষ্টিহীনতা সুস্পষ্ট, ৪. নাক কাটা, ৫. ঠোঁট কাটা বা দাঁত ভাঙ্গা, ৬. পা খোড়া বা পঙ্গু, ৭. লেজ কর্তিত, ৮. খুজলী/পাচড়াযুক্ত ৯. অতি রুগ্ন বা এমন জীর্ণ শীর্ণ যে তার হাড়ে মগজ নেই, ১০. ত্রুটিযুক্ত বাঁট, ১১. পিছন দিক ত্রুটিযুক্ত।

 

মুহম্মদ এনায়েত উল্লাহ টিপু, ঢাকা।

সুওয়াল: পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত কি কি?

জাওয়াব: পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে- (১) মুসলমান হওয়া, (২) স্বাধীন হওয়া, (৩) মুক্বীম হওয়া, (৪) বালেগ হওয়া, (৫) মালিকে নিসাব হওয়া, (৬) পাগল না হওয়া অর্থাৎ আক্বলমন্দ হওয়া।

পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১০ তারিখের ছুবহে ছাদিক হতে ১২ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি কেউ মালিকে নিসাব হয় অর্থাৎ হাওয়ায়িজে আছলিয়াহ (নিত্য প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদ) বাদ দিয়ে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রূপা বা তার সমপরিমাণ মূল্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব।

উল্লেখ্য যে, যদি কারো নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থাকে এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয়, যেমন- কারো পাঁচটি ঘর আছে, একটির মধ্যে সে থাকে আর তিনটির ভাড়া দিয়ে সে সংসার চালায় আর একটি অতিরিক্ত, যার মূল্য নিসাব পরিমাণ। এ ক্ষেত্রে তার উপরে পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব হবে। (আলমগীরী, শামী, আইনুল হিদায়া, ফতহুল কাদীর, গায়াতুল আওতার, শরহে বিকায়া, বাহর, দুররুল মুখতার, কাজীখান, ইনায়া)

 

মুহম্মদ আব্দুর রহমান, নূরানীবাদ (নরসিংদী)

সুওয়াল: আক্বীক্বার পশুর গোশতের কি হুকুম?

জাওয়াব: অনেকে বলে থাকে, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হয়, তার গোশত পিতা-মাতা খেতে পারবে না। মূলত তাদের একথা শরীয়ত সম্মত নয়। সম্মানিত শরীয়ত উনার মাসয়ালা হলো, পবিত্র আক্বীকা উনার পশুর গোশতের হুকুম পবিত্র কুরবানী উনার পশুর গোশতের হুকুমের মতো। কাজেই, সন্তানের নামে যে পশু আক্বীকা দেয়া হবে তার গোশত পিতা-মাতাসহ সকলেই খেতে পারবে। এটাই শরীয়তসম্মত মাসয়ালা বা ফতওয়া। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

 

মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ, মতলব, চাঁদপুর

সুওয়াল: বিগত বছরের অনাদায়ী কুরবানীর হুকুম কি?

জাওয়াব: কোন ব্যক্তি যদি গাফলতির কারণে কিংবা অন্য কোন কারণে তার ওয়াজিব কুরবানী যে বছর ওয়াজিব হয়েছে সে বছরে না করে তার পরবর্তী বছর করে তাহলে পবিত্র কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে উক্ত পবিত্র কুরবানী উনার গোশত কুরবানীদাতা ও তার পরিবারবর্গ খেতে পারবে না। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

মুহম্মদ আনিছুর রহমান, রাজশাহী

সুওয়াল: পবিত্র কুরবানীর পশুর গোশত বণ্টনের কোন পদ্ধতি আছে কি?

জাওয়াব: পবিত্র কুরবানীকৃত পশুর গোশত বণ্টন প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-

يَسْتَحِبُّ التَّصَرُّفُ ثُلُثٌ لِنَفْسِه ثُلُثٌ هَدِيَّةٌ ثُلُثٌ لِلْفُقَرَاءِ وَالْـمَسَاكِيْنَ وَاِنْ كَانَتْ وَصِيَّةٌ يَتَصَدَّقُ بِـجَمِيْعِهَا.

অর্থ : “পবিত্র কুরবানী উনার গোশত বণ্টন করার মুস্তাহাব নিয়ম হচ্ছে- এক তৃতীয়াংশ নিজের জন্য রাখবে, এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীর জন্য হাদিয়া স্বরূপ দিবে আর এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনের জন্য দান স্বরূপ দিবে। আর যদি কুরবানীকৃত পশুটি ওছিয়তকৃত হয়ে থাকে তাহলে সম্পূর্ণটাই গরীব-মিসকীনকে দান করে দিতে হবে।” (ফিক্বাহর কিতাবসমূহ)

অর্থাৎ কুরবানীদাতার জন্য কুরবানীকৃত পশুর গোশ্ত কাউকে দেয়া বা না দেয়া তার ইখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত। সে ইচ্ছা করলে সম্পূর্ণটাই দান করে দিতে পারে, আবার ইচ্ছা করলে সম্পূর্ণটাই রেখে খেতে পারে। এতে কুরবানী উনার কোন ত্রুটি হবেনা।

উল্লেখ্য, কোন কোন গ্রামে-গঞ্জে বা মহল্লায় দেখা যায়, সেখানে যত পশু পবিত্র কুরবানী করা হয় প্রত্যেক কুরবানীদাতার কুরবানীকৃত পশুর এক তৃতীয়াংশ গোশত এক স্থানে জমা করে উক্ত এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ জমাকৃত গোশতগুলোকে এলাকার গরীব মিসকীন ও ধনী অর্থাৎ যারা পবিত্র কুরবানী করেছে আর যারা পবিত্র কুরবানী করেনি তাদের প্রত্যেককেই সমহারে বণ্টন করে দেয়।

এই ধরণের বণ্টনের কারণে গরীব মিসকীনের হক নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ জমাকৃত গোশতগুলোকে এলাকার গরীব মিসকীন ও ধনী নির্বিশেষে সকলের মাঝেই বণ্টন করছে।

আরো উল্লেখ্য, এলাকাবাসী যদি গরীব-মিসকীনকে বণ্টন করে দেয়ার জন্যই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে গোশত দিয়ে থাকে। তাহলে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হবে শুধুমাত্র গরীব-মিসকিনদের মধ্যেই উক্ত গোশ্ত বণ্টন করে দেয়া। এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিগণ যদি বিপরীত কাজ করে তাহলে তারাই গরীব-মিসকীনের হক নষ্টকারী হিসাবে সাব্যস্ত হবে এবং এর জন্য তাদেরকে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে। আর তারাই দায়ী থাকবে।

এছাড়াও এতে কুরবানীদাতারও হক্ব নষ্টের সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা কুরবানীদাতাদের মধ্যে যারা এক তৃতীয়াংশ গোশত দিয়ে দিলে তারা তাদের পরিবারবর্গ বা অধীনস্থদেরকেই পবিত্র ঈদ উনার দিন তৃপ্তিসহকারে খাওয়াতে পারবেনা এমন ব্যক্তির নিকট থেকেও গোশত সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ যদি প্রকৃতপক্ষেই গরীব-মিসকিনদের উপকার করতে চায় তাহলে তাদের উচিত হবে এলাকার ঐ সমস্ত কুরবানীদাতাদের নিকট থেকে এক তৃতীয়াংশ গোশত সংগ্রহ করা। যারা এক তৃতীয়াংশ গোশত দেয়ার পরও তাদের পরিবার বা অধীনস্থদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ গোশত থেকে যায়, অথবা যারা স্বেচ্ছায় দান করে। যাদের নিকট পর্যাপ্ত পরিমাণে গোশত নেই অর্থাৎ যারা এক তৃতীয়াংশ গোশ্ত দিয়ে দিলে তারা তাদের পরিবারবর্গ বা অধীনস্থদেরকেই পবিত্র ঈদ উনার দিন তৃপ্তিসহকারে খাওয়াতে পারবেনা এমন ব্যক্তির নিকট থেকে জবরদস্তি করে গোশত সংগ্রহ করলে ছওয়াবের পরিবর্তে কঠিন গুণাহই হবে।

আর বণ্টনের ক্ষেত্রে ওই সমস্ত লোকদেরকে গোশত দিতে হবে যারা পবিত্র কুরবানী দেয়নি অথবা যদি পবিত্র কুরবানী দিয়েও থাকে তথাপিও তারা চাহিদা মুতাবিক গোশত পায়নি। পবিত্র কুরবানী দেয়ার কারণে যাদের নিকট পর্যাপ্ত পরিমাণে গোশত রয়েছে তাদেরকে মিসকীনের অংশ থেকে গোশত দেয়া কখনই নেকীর কাজ হবেনা। (মিরকাত, বাহরুর রায়িক, আলমগীরী, শামী)

মুহম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, কুমিল্লা

সুওয়াল: পবিত্র কুরবানীর পশুর কোন কোন অংশ খাওয়া নাজায়িয?

জাওয়াব: পবিত্র কুরবানী বা হালাল পশুর ৮টি অংশ খাওয়া যাবে না। (১) দমে মাছফূহা বা প্রবাহিত রক্ত যা হারাম, (২) গুটলী বা গোদুদ খাওয়াও হারাম, (৩) অ-কোষ, (৪) মূত্রথলী, (৫) পিত্ত, (৬) ছোট ইস্তিঞ্জার রাস্তা বা লিঙ্গ, (৭) বড় ইস্তিঞ্জার রাস্তা বা গুহ্যদ্বার, এ ৭টি অংশ খাওয়া মাকরূহ তাহরীমী এবং (৮) শিরদাড়ার ভিতরের মগজ, এটা কেউ মাকরূহ তাহরীমী, আবার কেউ মাকরূহ তানযীহী বলেছেন। (শামী, মাতালিবুল মু’মিনীন, উমদাতুল কালাম, কিতাব- শাইখুল ইসলাম)

মুহম্মদ মাহদিউল ইসলাম, মানিকগঞ্জ

সুওয়াল: পবিত্র কুরবানীর পশুর দ্বারা কোন প্রকার ফায়দা লাভ করা যাবে কিনা?

জাওয়াব: সাধারণত পবিত্র কুরবানী উনার পশুর দ্বারা কোন প্রকারের ফায়দা লাভ করা জায়িয নেই। যেমন-

(১) পবিত্র কুরবানী উনার পশুর উপর আরোহণ করে চলাচল করা জায়িয নেই, তবে যদি পবিত্র কুরবানী উনার পশুর পানীয় ও ঘাসের বন্দোবস্ত করানোর জন্য আরোহণ করে কোথাও যায়, তাতে কোন ক্ষতি নেই। অথবা পালিত পশু যদি হয়, যার উপর মালিক পূর্ব থেকেই আরোহণ করতো এখন মালিক তা পবিত্র কুরবানী দেয়ার নিয়ত করেছে, তাতে আরোহণ করলেও ক্ষতি হবেনা। তবে পবিত্র কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে পবিত্র কুরবানী করে দিতে হবে, আরোহণ করার জন্য রাখা যাবেনা।

(২) পবিত্র কুরবানী উনার পশুর পশম কেটে বিক্রয় করা জায়িয নেই। যদি কেউ বিক্রি করে, তবে তার মূল্য ছদ্কা করে দিতে হবে। তা পবিত্র কুরবানী উনার পূর্বে হোক বা পবিত্র কুরবানী উনার পরে হোক। আর পবিত্র কুরবানী উনার পর পবিত্র কুরবানী উনার পশুর পশম থেকে ফায়দা হাছিল করতে পারবে অর্থাৎ নিজ কাজে ব্যবহার করতে পারবে অথবা কাউকে হাদিয়াও দিতে পারবে। যেমন পশমী কম্বল ও চাদর ইত্যাদি।

(৩) পবিত্র কুরবানী উনার পশুকে হালের কাজে ব্যবহার করা জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ হালের গরুকে পবিত্র কুরবানী দেয়ার নিয়ত করে যে, আমি হালের এই গরুটি আগামী ঈদের দিনে পবিত্র কুরবানী করবো, তাহলে কুরবানী উনার দিনের পূর্ব পর্যন্ত হালের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। পবিত্র কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে, হালের কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আর রাখা যাবেনা।

(৪) পবিত্র কুরবানী উনার পশুর দ্বারা বোঝা বহন করা জায়িয নেই। তবে উক্ত পশু পালিত হলে বোঝা বহন করাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে পবিত্র কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে তখন আর বোঝা বহনের জন্য রাখা যাবেনা। কুরবানী করে দিতে হবে।

(৫) পবিত্র কুরবানী উনার পশুর দুধ পান করা বা বিক্রি করা জায়িয নেই। যদি কেউ পান করে বা বিক্রয় করে তবে তার মূল্য ছদকা করে দিতে হবে। কিন্তু যদি উক্ত প্রাণীর দুধ মালিক পূর্ব থেকেই পান করে বা বিক্রয় করে আসছে অর্থাৎ পালিত পশু যদি হয়, তাহলে দুধ পান করতে বা বিক্রয় করতে কোন অসুবিধা নেই। তবে পবিত্র কুরবানী উনার দিন উপস্থিত হলে তা পবিত্র কুরবানী করে দিতে হবে।

(৬) পবিত্র কুরবানী উনার পশুর গোবরের হুকুমও দুধের অনুরূপ।

স্মরণীয় যে, পবিত্র কুরবানী উনার পশু যদি আইইয়ামে নহরের মধ্যে কিনে এনে সাথে সাথে পবিত্র কুরবানী করে, তাহলে তা থেকে কোন প্রকার ফায়দা হাছিল করা জায়িয নেই। যদি পবিত্র কুরবানী পশুর দুধ, পশম ইত্যাদি দ্বারা ফায়দা হাছিল করে, তাহলে তার মূল্য ছদ্কা করে দিতে হবে। তবে যদি আইইয়ামে নহরের দু’চারদিন আগে কিনে এনে পশুকে খাওয়ায় বা পান করায়, তাহলে উক্ত পশু দুধ দিলে তাও পান করতে পারবে খাদ্যের বিনিময়ে।

(৭) পবিত্র কুরবানী উনার পশুর রশি, নাক বন্ধ, পায়ের খুরাবৃত, গলার ঘন্টা, জিনপোষ, লাগাম ইত্যাদি দ্বারা কোন প্রকার ফায়দা হাছিল করা জায়িয নেই। যদি এ সমস্ত দ্রব্য দ্বারা কোন প্রকার ফায়দা হাছিল করে, তবে তার মূল্য ছদকা করে দিতে হবে। (শামী, আলমগীরী, বাহর, কাজীখান)

মুহম্মদ সিরাজুদ্দীন, কুড়িগ্রাম

সুওয়াল: কাজের পারিশ্রমিক বাবদ পবিত্র কুরবানীর পশুর গোশত, হাড্ডি, ভুঁড়ি, খুরা ইত্যাদি কাউকে দিলে পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবে কি না?

জাওয়াব: গোশত বা চামড়া অথবা চামড়া বিক্রয়ের পয়সা দিয়ে যবেহ করানো, চামড়া ছিলানো অথবা গোশত বানানোর উজরত (পারিশ্রমিক) দেয়া জায়িয হবে না। দিলে পবিত্র কুরবানী বাতিল হয়ে যাবে। অনুরূপ যদি কেউ কাউকে কাজের পারিশ্রমিক বাবদ গোশত, হাড্ডি, ভুঁড়ি, খুরা ইত্যাদি দিয়ে দেয়, তবে তার সঠিক মূল্য ছদকা করে দেয়াও ওয়াজিব হবে। অন্যথায় তার পবিত্র কুরবানী শুদ্ধ হবেনা। (ফতওয়ায়ে শামী ও অন্যান্য ফিক্বাহর কিতাব)

 

মুহম্মদ ইরফান আলী, বরিশাল

সুওয়াল: আনজুমানে মুফিদুল ইসলাম তথাকথিত জণকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া বা চামড়া বিক্রির অর্থ প্রদান করা জায়িয হবে কি?

জাওয়াব: বর্তমান সময়ে তথাকথিত জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের অন্যতম হচ্ছে “আনজুমানে মফিদুল ইসলাম”। তারা জনকল্যাণের নামে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার পবিত্র কুরবানী পশুর চামড়া ও চামড়া বিক্রির অর্থ মুসলমান উনাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। এই অর্থ তারা আমভাবে খরচ করে থাকে। যেমন রাস্তাঘাট, পানির ব্যবস্থা, বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কাজে; সেটা মুসলমানদেরও হতে পারে আবার বিধর্মীদেরও হতে পারে। অথচ পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া ও যাকাত-ফিতরা মুসলমান গরিব-মিসকীনদের হক্ব।

তা আমভাবে খরচ করা যাবে না, বরং মুসলমান গরিব-মিসকীনদের মালিক করে দিতে হবে। অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী সম্মানিত শরীয়ত উনার নির্ধারিত খাতেই ব্যয় করতে হবে। তাই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামে পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া বা তার মূল্য ও যাকাত-ফিতরা দেয়া হারাম।

শুধু তাই নয়; এদের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ, দুর্নীতি, লাশ গায়েব এবং কঙ্কাল চুরি (কবর থেকে লাশ তুলে কিংবা লাশকে দাফন না করে গরম পানিতে লাশের গোশত ছাড়িয়ে সে লাশের কঙ্কাল উচ্চ দামে বিক্রি করা) ও পাচারকারী দলের সাথে জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। যা অনলাইনসহ অনেক মিডিয়াতেই প্রকাশ পেয়েছে। কাজেই, আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামে পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া বা তার মূল্য ও যাকাত-ফিতরা দেয়ার অর্থ হচ্ছে- টাকা আত্মসাৎ, দুর্নীতি, লাশ গায়েব এবং কঙ্কাল চুরি ও পাচার এসবের মতো হারাম ও গুনাহের কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করা। নাউযুবিল্লাহ!

তাছাড়া পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ৮ খাতের কোনো খাতের মধ্যেই আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম পড়ে না। তাই এদেরকে পবিত্র কুরবানীর পশুর চামড়া ও যাকাত, ফিতরা দিলে তা কস্মিনকালেও আদায় তো হবেই না; বরং গুনাহ হবে।

অনুরূপভাবে কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকেও যাকাত, ফিতরা ও কুরবানী পশুর চামড়া দেয়া জায়িয হবে না। কারণ- (১) তারা তা ধনী-গরীব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে খরচ করে থাকে। যেমন রাস্তা-ঘাট, পানির ব্যবস্থা, বেওয়ারিশ লাশ দাফন করার কাজে। অথচ কুরবানী পশুর চামড়া মুসলমান গরীব-মিসকীন উনাদের হক্ব। (২) মুসলমান গরীব-মিসকীন উনাদের হক্ব ধনীদেরকে প্রদানের মাধ্যমে মুসলমান ধনীদেরকে হারাম খাওয়ানোর মাধ্যমে তাদের ইবাদত-বন্দেগী বিনষ্ট করছে। নাঊযুবিল্লাহ! (৩) মুসলমান গরীব-মিসকীন উনাদের হক্ব মুসলমান উনাদের শত্রু কাফির-মুশরিকদের উপকারার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! (৪) এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান ইসলামী শরীয়ত নির্ধারিত যাকাত, ফিতরা, মানত, কুরবানী পশুর চামড়া বা বিক্রিত অর্থ প্রদানের কোন খাতের আওতাভুক্তই নয়।

কাজী মুহম্মদ শাফায়াত হুসাইন, দিনাজপুর

সুওয়াল: পবিত্র কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি এবং নিয়ত জানালে খুশি হবো।

জাওয়াব:  পবিত্র কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর পবিত্র কুরবানী করতে হবে। আর  পবিত্র কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরে নরম স্থানের উপর থেকে গলার মধ্যে একটি উঁচু হাড় রয়েছে: উভয়ের মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মুখভাগে দুটি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দুটি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবেনা। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বিজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

কুরবানীর নিয়ত: (যবেহ করার পূর্বে)

انى وجهت وجهى للذى فطر السموت والارض حنيفا وما انا من الـمشركين ان صلاتى ونسكى ومحياى ومماتى لله رب العلمين لا شريك له وبذلك امرت وانا من الـمسلمين. اللهم منك ولك.

উচ্চারণ: ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছলাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া ইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রব্বিল আলামীন। লা শারীকালাহূ ওয়া বি যালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া লাকা।

এ দোয়া পড়ে-

بسم الله الله اكبر

‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে যবেহ করতে হবে।

যবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে-

اَللّهُمَّ تَقْبَلْهُ مِنِّـىْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ سَيِّدِنَا رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخَلِيْلِكَ سَيِّدِنَا حَضْرَتْ إِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা রাসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খলীলিকা সাইয়্যিদিনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।

যদি নিজের কুরবানী হয়, তবে مِنِّـىْ (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি  অন্যের  কুরবানী হয়, তবে  مِنْ (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কুরবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয়, তাহলে مِنِّـىْ (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর مِنْ (মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে। কেউ যদি উপরোক্ত নিয়ত না জানে, তাহলে যবেহ করার সময় শুধু বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে পবিত্র কুরবানী করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে অবশ্যই প্রত্যেক যবেহকারীর উচিত উপরোক্ত নিয়ত শিক্ষা করা। কেননা উপরোক্ত নিয়ত পাঠ করে পবিত্র কুরবানী করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।

{দলীলসমূহ: আহমদ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, দারিমী ইবনে মাযাহ শরীফ, বজলূল মযহুদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, মুযাহেরে হক্ব শরীফ, লুমায়াত শরীফ, ত্বীবী শরীফ, তালিকুছ ছবীহ শরীফ, আশয়াতুল লুমায়াত শরীফ, আলমগীরী শরীফ, শামী শরীফ, দুররুল মুখতার শরীফ, আইনুল হিদায়া ও বাহর শরীফ ইত্যাদি।}

মুহম্মদ উমর ফারূক, সদর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়াল: এক এলাকার এক হিন্দুর মালিকানায় একটি বাড়ী ছিলো। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই বাড়ীটি  Enemy property (এনিমি প্রোপার্টি) হিসেবে সরকারী নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এরপর থেকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে জেলা প্রশাসক এই বাড়ীটি ভাড়া দিয়ে থাকে। গত ১৪ বছর ধরে একটি মাদরাসা পরিচালনার জন্য এই বাড়িটি জেলা প্রশাসকের নিকট হতে ভাড়া নিয়ে মাদরাসার কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে এবং জুমুয়ার নামায, পাঞ্জেগানা নামায নিয়মিত চালু আছে।

এটা প্রশ্ন হলো, এলাকার বেশ কিছু ব্যক্তি অভিযোগ করে, এটা হিন্দুর বাড়ি ছিলো তাই এখানে নামায হবে না। এবং এই ব্যাপারে তারা মাদরাসা কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে।

এখন জানার বিষয় হলো যে, আসলেই কি এই বাড়িটিতে নামায হবে না। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ থেকে জানাতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব: সম্মানিত দ্বীন ইসলাম তথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিধান বা ফতওয়া মতে, উক্ত বাড়ীতে অবশ্যই নামায হবে। নামায না হওয়ার শরঈ কোন কারণ নেই।

উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজেই উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য সমস্ত যমীনকে নামায পড়ার উপযোগী করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

جعلت لى الارض مسجدا وطهورا

অর্থ: আমার জন্য সমস্ত যমীনকে সিজদার স্থান অর্থাৎ নামায পড়ার স্থান হিসেবে এবং পবিত্র করে দেয়া হয়েছে। (মুসলিম শরীফ)

অতএব, কাফির মুশরিকদের মালিকানাধীন ঘর-বাড়ি, জায়গা-জমি মুসলমান খলীফা বা সরকারের অধিকারে আসলে তাতে নামায পড়া নিষিদ্ধ নয়। বরং যে স্থানে নামায পড়বে বা পড়া হবে তা পাক হলেই সেখানে নামায পড়া যাবে এবং নামায হয়ে যাবে। তবে যেসব স্থানে নামায পড়ার ব্যাপারে শরীয়তে নিষেধ করা হয়েছে সেখানে নামায পড়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৭ জায়গায় নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। (১) আবর্জনা ফেলার স্থানে। (২) যবেহখানায় (৩) কবরস্থানে (৪) রাস্তার মাঝখানে (৫) উটশালায় (৬) গোশালায় এবং (৭) বাইতুল্লাহ শরীফ উনার ছাদে। (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

অর্থাৎ উক্ত স্থানসমূহ পাক থাকা সত্ত্বেও তাতে নামায পড়া মাকরূহ। এছাড়া বাকী সমস্ত স্থানেই নামায নামায পড়া যাবে। তন্মধ্যে ভাড়া করা জায়গা-জমি, ঘর-বাড়ি ইত্যাদিতে নামায পড়ার ব্যাপারে কোনরূপ নিষেধাজ্ঞা নেই।

কাজেই, উক্ত বাড়িতে নামায না হওয়ার আপত্তি ও অভিযোগ তুলে যারা মাদরাসা বন্ধের চক্রান্ত করছে তারা সম্পূর্ণরূপে কুফরী কাজ করছে। তাদের উচিত উক্ত কুফরী কাজ থেকে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা। অন্যথায় মাদরাসা-মসজিদ কার্যক্রম বাধা দেয়ার কারণে তাদের ঈমান নষ্ট হয়ে তারা কাফির, মুনাফিক ও মুরতাদে পরিণত হবে এবং পরকালে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত কালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللهِ أَنْ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُه‘ وَسَعَى فِي خَرَابِهَا اُولٰئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ اَنْ يَدْخُلُوهَا إِلَّا خَائِفِينَ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ.

অর্থ: “ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কে? যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত মসজিদসমূহে উনার যিকির মুবারক করতে, উনার সম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় বা বিরাণ করতে চেষ্টা করে। তাদের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অর্থাৎ খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা ব্যতীত মসজিদসমূহে প্রবেশ করা জায়িয নেই। তাদের জন্য রয়েছে ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ নং ১১৪)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ‘বড় যালিম’ উনার ব্যাখ্যায় বড় কাফির বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!

স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ নিয়ে সেখানে যে মসজিদ নির্মাণ করেন তা মসজিদে নববী শরীফ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। উক্ত মসজিদেই তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার তা’লীম-তালক্বীন দিতেন। অর্থাৎ মাদরাসার যে উদ্দেশ্য ইলিম শিক্ষা দেয়া ও শিক্ষা করা তার ক্ষেত্র ছিল মসজিদে নববী শরীফ। তাই মসজিদ ভিত্তিক মাদরাসা অথবা মাদরাসা ভিত্তিক মসজিদ এটা সুন্নত। উক্ত মসজিদে নববী শরীফ উনার জায়গা যখন সংকুলান হচ্ছিল না তখন আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ইহুদীর কাছ থেকে অধিকমূল্য দিয়ে জায়গা কিনে মসজিদে নববী শরীফ সম্প্রসারণ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَخْرِجُوا الْـمُشْرِكِيْنَ مِنْ جَزِيْرَةِ الْعَرَبِ

অর্থাৎ আরব দ্বীপ থেকে মুশরিকদেরকে বের করে দাও।

এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বাস্তবায়ন করেন আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি। তিনি সমস্ত আরব এলাকা থেকে কাফির-মুশরিকদেরকে বিতাড়িত করেন।

এখন কথা হচ্ছে আরব এলাকা থেকে যেসব কাফির-মুশরিক বাড়ী-ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেল সে সমস্ত স্থানে মসজিদ মাদরাসা নির্মাণে এবং তাতে নমাায পড়তে কোনো রকম বাধা নিষেধ আছে কি?

তাছাড়া আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে যেসমস্ত স্থান বিজয় করতেন, বিজয় করার পর সেখানে মসজিদ নির্মাণ করার জন্য তিনি গভর্ণরদেরকে আদেশ করতেন।

যদি কাফির মুশরিকদের জায়গাতে মসজিদ নির্মাণ করা নাজায়িয হতো তাহলে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মসজিদ নির্মাণ করার জন্য কখনোই আদেশ মুবারক করতেন না। আর গভর্ণরগণ উনারাও মসজিদ নির্মাণ করতেন না। কেননা উনারা প্রত্যেকেই বিশিষ্ট ছাহাবায়ে কিরাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

অতএব, সুওয়ালে উল্লেখিত বাড়িটি যদিও আগে হিন্দুর মালিকানায় ছিল কিন্তু সে ভেগে যাওয়ার পর পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে মুসলমান দেশের মুসলমান জনগণই মালিক আর মুসলমানদের পক্ষে সে মালিকানা সরকারই নিয়ন্ত্রণ করবে। কাজেই সরকারের নিযুক্ত জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ মাদরাসার কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন এবং সেখানে নামায পড়ছেন, তাই উক্ত স্থানে নামায পড়ার ব্যাপারে সংশয় সন্দেহের কোনই অবকাশ নেই।

শুধু তাই নয়, কোনো হিন্দুর বাড়ী ভাড়া নিয়ে যদি কোনো মুসলমান সেখানে থাকেন এবং নামায পড়েন সেটা কি নাজায়িয হবে? কখনোই নয়। তাহলে মুসলমান দেশের সম্পত্তি মুসলমান সরকারের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে সেখানে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ ইত্যাদি শিক্ষা দিলে ও সেখানে নামায পড়লে তা নাজায়িয হবে কেন?

কাজেই, যারা উক্ত স্থানে নামায হবে না বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা মুসলমান হলে তাদেরকে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের থেকে দলীল পেশ করতে হবে। দলীল ব্যতীত কারো কোনো কথা গ্রহণযোগ্য নয়। (মুসলমি শরীফ, শরহে নববী, মশিকাত, মরিকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, আইনুল হদিায়া, আলমগরিী, শামী, দুররুল মুখতার, ফাতহুল ক্বাদীর, বনোয়া, মাবছূত, তাতারখানয়িা, বাহরুর রায়কি, মারাকউিল ফালাহ্)

মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম, রূপসী, নূরানীগঞ্জ

সুওয়াল: কেউ যদি তার শাশুড়ির হাতের দিকে অন্য কারোও হাত বা স্ত্রীর হাত মনে করে শাহওয়াতের সাথে তাকায় কিংবা শাশুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ সৌন্দর্য উপলব্ধি করে তবে কি এতে ‘হুরমতে মুছাহিরা’ সাব্যস্ত হবে? এ বিষয়ে দলীল জানালে খুশি হবো।

জাওয়াব: শুধু দৃষ্টি দ্বারা হুরমতে মুছাহিরা সাব্যস্ত হওয়ার জন্য

فَرْجُهَا الدَّاخِلُ

শর্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ শাহওয়াতের সাথে মহিলার গোপন অঙ্গ দেখতে হবে।

যেমন এ সম্পর্কে শরহে বেক্বায়াহর ব্যাখ্যাগ্রন্থ আনওয়ারুদ দেরায়া কিতাবের বিবাহ অধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে-

وَمَنْظُوْرَةٌ اِلٰى فَرْجِهَا الدَّاخِلِ بِشَهْوَةٍ

অর্থাৎ শাহওয়াতের সাথে যে মহিলার গোপন অঙ্গের প্রতি দৃষ্টি করেছে তার সন্তান হারাম।

অনুরূপ ইবনে আবী শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি কোন মহিলার প্রতি আসক্তির সাথে দৃষ্টি করে তার জন্য সেই মহিলার মেয়ে এবং মা উভয়ই হারাম হয়ে যাবে।

আর দৃষ্টি দ্বারা

فَرْجُهَا الدَّاخِلُ

শর্ত করা হয়েছে। আর উক্ত শর্ত দ্বারা অন্য অঙ্গ বের হয়ে গেছে। তাই অন্য অঙ্গ দেখার বা অন্য অঙ্গের প্রতি তাকানোর দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হবে না।

অতএব, শাশুড়ীর হাত হোক, চেহারা হোক ইত্যাদি অঙ্গের দিকে তাকিয়ে সৌন্দর্য উপলব্ধি করলে তাতে হুরমতে মুছাহিরাহ সাব্যস্ত হবে না। (কুদুরী, শরহে বেক্বায়া, আলমগীরী, দুররুল মুখতার ইত্যাদি)

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব