সুওয়াল জাওয়াব

সংখ্যা: ২৮৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, খাগড়াছড়ি

সুওয়াল: যাকাত, ফিতরা ও উশর সম্পর্কে জানতে চাই এবং তা সহজে কিভাবে হিসাব রেখে প্রদান করা যায়?

জাওয়াব: “যাকাত” অর্থ বরকত বা বৃদ্ধি, পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধি। অর্থাৎ যারা যাকাত আদায় করবে, প্রদান করবে তাদের মালী, জিসমানী, রূহানী, সবদিকে বরকত ও বৃদ্ধি হবে এবং পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধি হাছিল হবে।

‘মালী’ তথা মাল-সম্পদে বরকত হবে, বৃদ্ধি হবে, পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হবে।

জিসমানী হচ্ছে তার দৈহিকভাবে বৃদ্ধি হবে, সে সুস্থ থাকবে, সব ধরনের পবিত্রতা হাছিল হবে। কোন বর্ধন তার হারাম দ্বারা হবে না। বরং হালাল দ্বারা হবে।

‘রূহানী’ বৃদ্ধি হচ্ছে তার তাযকিয়া অর্জন হবে, রূহানী যে বাধাসমূহ থাকে তা কেটে যাবে। আর রূহানী পবিত্রতা মানেই হচ্ছে সে কামালিয়াত অর্জন করে আল্লাহওয়ালা হয়ে যাবে। সুবাহানাল্লাহ!

যদি কারও নিছাব পরিমাণ সম্পত্তি অর্থাৎ ৭.৫ (সাড়ে সাত) ভরী সোনা অথবা ৫২.৫ (সাড়ে বায়ান্ন) ভরী রূপা অথবা তার সমতুল্য পরিমাণ অর্থ কারও কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদী বাদ দিয়ে এক বছর ধরে অতিরিক্ত থাকে তখন তার উপর যাকাত ফরয।

কতটুকু দিবে? ৪০ ভাগের ১ ভাগ, অর্থাৎ শতকরায় ২.৫%।  কখন দিবে? প্রত্যেক হিজরী বছরে ১ বার। মালে তেজারতের নিছাব পূর্ণ হলেও যাকাত দিতে হবে।

ফিতরা: ফিতরাও এক প্রকার যাকাত। যাকে ‘ছদকাতুল ফিতরা’ বা ‘যাকাতুল ফিতর’ বলা হয়। ফিতরা শব্দটা এসেছে ‘ইফতার’ থেকে। ইফতার হচ্ছে রোযা বিরতী দেওয়া। আমরা ঈদের দিন রোযা বিরতী করি, অর্থাৎ ঈদের দিন ছুবেহ ছাদিকের সময় ফিতরা ওয়াজিব হয়। পরিবারের সবাইকে অর্থাৎ পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড়, গোলাম-আযাদ সবাইকে ফিতরা দিতে হবে।

কে দিবে? যিনি পরিবারের কর্তা তিনি ফিতরা দিবেন। কতটুকু দিবে? ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য। কখন দিবে? রোযা শেষ হলে ঈদের নামাযের আগেই ফিতরা দিতে হয়। তবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের সুন্নত ছিল রমযান মাসের শেষ দিকে অর্থাৎ রমযানের মধ্যেই ফিতরা আদায় করা। তা না হলে রোযার মধ্যে যে ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে সে কারণে রোযা আসমান ও যমীনের মাঝে ঝুলে থাকে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে তা পৌছে না বা কবুল হয় না। কাজেই যথাসময়েই ফিতরা আদায় করতে হবে।

উল্লেখ্য, এ বছর অর্থাৎ ১৪৪৩ হিজরীতে ঢাকা শহরে ভালো লাল আটা ৫০.০০ টাকা কেজি। সে হিসাবে অর্ধ সা’ অর্থাৎ এক সের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য- ৮৩.০০ টাকা (প্রায়)।

যেমন, ১ কেজি বা ১০০০ গ্রাম আটার মূল্য ৫০.০০ টাকা।

প্রতি গ্রাম আটার মূল্য ৫০.০০/১০০০= ০.০৫ টাকা।

১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য ১৬৫৭x০.০৫=৮২.৮৫ টাকা অর্থাৎ ৮৩ টাকা (প্রায়)। এর কম দেয়া যাবে না। তবে ইচ্ছা করলে বেশি দিতে পারবে।

যাদের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব অর্থাৎ ঈদের দিন ছুব্হে ছাদিকের সময় যাদের নিকট নিছাব পরিমাণ (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য, যা বর্তমানে ৯৩৩ টাকা তোলা হিসেবে ৪৮,৯৮৩ টাকা) সম্পদ থাকে, তাদের প্রত্যেককেই উল্লিখিত ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটা বা তার মূল্য দান করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় আটার দাম বিভিন্ন রকম। কাজেই যাদের উপর ছদাক্বাতুল ফিতর ওয়াজিব, তাদেরকে বর্তমান মূল্য হিসাবে একসের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য হিসাবে দিতে হবে।

উশর: উশর শব্দটি এসেছে ‘আশরাতুন’ শব্দ থেকে। যার অর্থ হচ্ছে ১০ ভাগের ১ ভাগ। উশর হচ্ছে ফল-ফসলাদির যাকাত।

সম্মানিত হানাফী মাযহাব মতে পবিত্র উশর উনার কোন নিছাব নেই। বিনা পরিশ্রমে যমীন থেকে উৎপাদিত ফল-ফসলাদির ১০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: বাড়ীর আঙ্গিনায় একটি আম গাছে কোন পরিশ্রম ছাড়াই বছরের পর বছর আম হয়। এক্ষেত্রে, ১০০ টি আম হলে উশর দিতে হবে ১০টি আম বা তার মূল্য। আর পরিশ্রম করে ফল-ফসলাদি ফলানো হলে তখন ২০ ভাগের ১ ভাগ বা তার মূল্য প্রদান করতে হবে। যেমন: ধান, গম ইত্যাদির ক্ষেত্রে। যদি কোন জমিতে ১০০ মণ ধান হয় তবে উশর দিতে হবে ৫ মণ বা তার মূল্য।

কে দিবে? যিনি ফল-ফসলাদির মালিক হবেন বা পাবেন তিনি উশর দিবেন। কতটুকু দিবে? বিনা পরিশ্রমে হলে ১০ ভাগের ১ ভাগ। আর পরিশ্রম করে হলে ২০ ভাগের ১ ভাগ। কখন দিবে? যখন ফল-ফসলাদি তোলা হবে তখনই উশর বা নিছফে উশর দিতে হবে। এবং যতবার ফল-ফসলাদি তোলা হবে ততবারই উশর বা নিছফে উশর দিতে হবে।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاٰتُـوْا حَقَّهٗ يَـوْمَ حَصَادِهٖ

অর্থ: তোমরা ফসল কাটার সময় তার হক (উশর) আদায় করো। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪১)

ফসল কাটার সময় উশর আদায় করতে হবে। যাকাতের মতই উশর ফরয।

পবিত্র উশর আদায়ের উদাহরণ: যখনই কোন ফল-ফসল উৎপন্ন হবে তখনই নীচের ছকে লিখে রাখতে হবে।

নং জমির বর্ণনা ফল/ফসল উৎপাদনের সময় (মাস/তারিখ          ফল/ফসলের নাম উৎপন্ন ফল/ফসলের পরিমাণ উশর বিনা পরিশ্রমে উৎপাদিত ফল ফসলের ক্ষেত্রে (১০ ভাগের ১ ভাগ      নিছফে-উশর পরিশ্রম করে উৎপাদিত ফল ফসলের ক্ষেত্রে (২০ ভাগের ১ ভাগ ফল/ ফসলের বাজার দর (টাকা) উশর-নিছফে উশর বাবদ বিক্রকৃত অর্থ (টাকা)
বাড়ির আঙ্গিনা   আম ৫০০ টি ৫০ টি x ১০ ৫০০
অমুক জমি-১  বিঘা   ধান ১০০ মন X ৫ মন ৮০০ ৪০০০

মুহম্মদ আতিকুল্লাহ, পূরানবাজার, চাঁদপুর

সুওয়াল: পূর্বের অনাদায়ী যাকাত প্রদান করতে হবে কি না? হলে কিভাবে প্রদান করতে হবে?

জাওয়াব: অনাদায়ী যাকাত ঋণ স্বরূপ। পবিত্র যাকাত, ফিতরা, ওশর হচ্ছে ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। আর ফরযের ক্বাযা আদায় করাও ফরয এবং ওয়াজিবের ক্বাযা আদায় করাও ওয়াজিব। চলতি বছরে যাকাত আদায়ের পূর্বেই অনাদায়ী যাকাত, ফিতরা, ওশর আদায় করতে হবে। তবে কারো পক্ষে যদি সম্ভব না হয় তবে চলতি বছরেরটা আদায় করবে আর পিছনেরটা অল্প অল্প করে আদায় করে দিবে (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)।

বিগত বছরগুলিতে তার যে পরিমাণ সম্পদ ছিলো তা হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য, যদি কারো অতীত যাকাত, ফিতরা, ওশর অনাদায়ী বা অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তা ঋণের মধ্যে গণ্য হবে। যার কোন কাফফারা নেই। নির্ধারিত যাকাত পরিশোধের পূর্বেই সম্পদের মালিক মারা গেলে এই ঋণ তার ওয়ারিছদের উপর বর্তাবে এবং তা ওয়ারিছদের আদায় করতে হবে। যদি পূর্ববর্তী বৎসরগুলিতে যাকাত কত হয়েছে তা নির্দিষ্ট করা না হয়ে থাকে তাহলে বর্তমান বাজার দরে আদায় করতে হবে।

মুহম্মদ ফযলুল হক, নূরপুর।

সুওয়াল: যাদের আক্বীদা-আমল-আখলাক্ব শুদ্ধ নয় এমন গরীব মিসকীনদেরকে যাকাত দেয়া যাবে কি?

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

تَـعَاوَنُـوْا عَلَى الْبِـرِّ وَالتَّـقْوٰى وَلَاتَـعَاوَنُـوْا عَلَى الْإِثْـمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّـقُوا اللهَ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ

অর্থ: “তোমরা নেকী ও পরহেযগারীর মধ্যে সহযোগিতা করো; পাপ ও নাফরমানীর মধ্যে সহযোগিতা করো না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: সম্মানিত পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন কোথায় আমাদের যাকাত, ফিতরা, উশর দিতে হবে। অর্থাৎ ১. আদেশ: যারা নেককার, পরহেযগার তাদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর দিতে হবে। আর ২. নিষেধ: পাপে, বদীতে, সীমালঙ্ঘনে, শত্রুতায় কোন সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নিষেধ মানা ফরয। কোন কারণে তা লঙ্ঘণ করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

স্মরনীয় যে, যাদের ঈমান-আক্বীদা বিশুদ্ধ নয়: যাদের ঈমান নাই,আক্বীদা নষ্ট তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে না। অনুরূপ যারা নেককার-পরহেযগার নয়। যারা পাপী; মহাপাপী। তাদেরকেও যাকাত, ফিতরা, উশর দেয়া যাবে না।

হযরত ইমাম গাযযালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন- বিরাট পর্বতমালা যার অস্তিত্ব শত শত মাইল দূর হতে দেখা যায়। কিন্তু ঈমান অত্যন্ত সূক্ষ, যার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না। কিভাবে যে একজন ঈমানদার ব্যক্তি বেঈমান হয়ে যায় তা বোঝা কঠিন।  যার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে কাদিয়ানীরা। তারা সব মানে কিন্তু  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘খ্বাতামুন নাবিয়্যীন’ অর্থাৎ শেষ নবী স্বীকার করে না। নাঊযুবিল্লাহ! এ কারণে তারা মির্জা গোলাম কাদিয়ানী (যে কিনা বাথরুমে পড়ে মারা গিয়েছে) তাকে নবী বলে দাবী করে। নাঊযুবিল্লাহ! এরা যত আমলই করুক না কেন এদের কোন আমলই কবুল হবে না। এরা কাট্টা কাফির, চির জাহান্নামী।

এরকম যারা বলে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাত-পা আছে, নাঊযুবিল্লাহ যারা বলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বড় ভাই, নাঊযুবিল্লাহ! যারা বলে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা দোষ করেছেন, নাঊযুবিল্লাহ!  যারা বলে থাকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ত্রুটি আছে, নাঊযুবিল্লাহ! যারা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্মান নিয়ে নানা কথা বলে, নাঊযুবিল্লাহ! এই সমস্ত লোকদের ঈমান নেই। তারা পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী।

এ রকম আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে। যেমন-আশরাফ আলী থানবী, যে ‘হিফযুল ঈমান’ (তার মোটা মোটা আরও অনেক বই আছে) নামে একটি বইয়ের মধ্যে লিখেছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গইব হাইওয়ান, বাচপান, মজনুন অর্থাৎ উনার ইলমে গইব পশুর মতো নাঊযুবিল্লাহ! শিশুর মতো নাঊযূবিল্লাহ! এবং পাগলের মতো নাঊযূবিল্লাহ! সুতরাং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে যে এমন নিকৃষ্ট উদাহরণ দিতে পারে শরীয়তের ফতওয়া মতে তার ঈমান থাকতে পারে না।

ক্বওমী, দেওবন্দী তাদের সিলেবাসে এগুলো শিখানো হয়। নাঊযুবিল্লাহ!  কওমী, দেওবন্দীরা আরো বলে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নাকি মিথ্যা কথা বলতে পারেন। নাঊযূবিল্লাহ! তারা বলে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের বড় ভাই। নাউযুবিল্লাহ!

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে একটি দল নাযাতপ্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মত মুবারক ও পথ মুবারক উনাদের উপর যারা কায়িম থাকবেন (উনারাই নাযাতপ্রাপ্ত দল)।” (তিরমিযী শরীফ)

সুতরাং বোঝা যায়, এরা মূলত বাতিল ৭২ ফেরকার অন্তর্ভুক্ত। এদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর কিছুই দেয়া যাবে না। এদেরকে যাকাত, ফিতরা, উশর দিলে তা কবুল হবে না।

এছাড়া আরো যাদেরকে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর দেয়া যাবে না তারা হচ্ছে:

১। উলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মালানা অথবা তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদদের দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, কুশপুত্তলিকা দাহ ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত, সেই সব মাদরাসাগুলোতে পবিত্র যাকাত প্রদান করলে পবিত্র যাকাত আদায় হবে না। যেমন পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলতঃ তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল, সন্ত্রাসী কর্মকা-ে তথা ধর্মব্যবসায় ও পবিত্র দ্বীন-ইসলাম বিরোধী কাজেই ব্যয়িত হয়। কাজেই এদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না, যে বা যারা তাদেরকে যাকাত দিবে কস্মিনকালেও তাদের যাকাত আদায় হবে না।

২। ঠিক একইভাবে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা- যেখানে আমভাবে ধনী-গরীব সকলের জন্য ফায়দা লাভের সুযোগ করে দেয়- এমন কোন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে বা সংগঠনে প্রদান করা হারাম ও নাজায়িয। যেমন ‘আনজুমানে মফিদুল ইসলাম’ এই সংগঠনটি বিশেষ ৩ পদ্ধতিতে মুসলমানদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে-

(ক) পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নেয়ার মাধ্যমে গরীব-মিসকীনদের হক্ব বিনষ্ট করে তাদেরকে বঞ্চিত করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

(খ) অপরদিক থেকে জনকল্যাণমূলক সুবিধা প্রদান ও গ্রহণের মাধ্যমে ধনীদেরকেও পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা খাওয়ায়ে তথা হারাম গ্রহণের মাধ্যমে তাদের ইবাদত-বন্দেগী বিনষ্ট করে দিচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

গ) আরেক দিক থেকে যাকাতদাতাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা যথাস্থানে না যাওয়ায় এবং যথাযথ কাজে ব্যবহার না হওয়ায় যাকাত দাতাদেরকে ফরয ইবাদতের কবুলিয়াত থেকে বঞ্চিত করছে। নাউযুবিল্লাহ! অর্থাৎ যাকাতদাতাদের কোন যাকাতই আদায় হচ্ছে না। কাজেই এ সমস্ত সংগঠনে পবিত্র যাকাত উনার টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।

৩। অনুরূপভাবে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা আত্মসাতের আরেকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন’। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত হিন্দু ও বৌদ্ধদের ‘যোগ সাধনা শিক্ষা’ প্রদানের একটি প্রতিষ্ঠান, যা মুসলমান উনাদের জন্য শিক্ষা করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী। এই প্রতিষ্ঠানটি একদিকে এই কুফরী শিক্ষা বাস্তবায়ন করে মুসলমান উনাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অন্যদিকে মুসলমান উনাদের পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, দান-ছদকা, মান্নত বা কুরবানীর চামড়া বিক্রিকৃত টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা তাদের কুফরী কর্মকা-ে ব্যবহারের মাধ্যমে গরীব-মিসকীনের হক্ব বিনষ্ট করছে। অপরদিকে যাকাত প্রদানকারীদেরকেও তাদের ফরয ইবাদত থেকে বঞ্চিত করে কবীরা গুনাহে গুনাহগার করছে। নাউযুবিল্লাহ! কাজেই মুসলমানদের জন্য কাফিরদের এই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে পবিত্র যাকাত, ফিতরা, উশর, ছদকা, মান্নত ও কুরবানীর চামড়া বা চামড়া বিক্রিকৃত টাকা প্রদান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয তো অবশ্যই, এমনকি সাধারণ দান করাও হারাম ও নাজায়িয।

৪। নিছাব পরিমাণ মালের অধিকারী বা ধনী ব্যক্তিকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। এদেরকে পবিত্র যাকাত দিলে আবার তা নতুন করে আদায় করতে হবে।

৫। মুতাক্বাদ্দিমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী আলিমগণ উনাদের মতে কুরাইশ গোত্রের বনু হাশিম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম হযরত জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আক্বীল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের বংশধরের জন্য পবিত্র যাকাত গ্রহণ বৈধ নয়। তবে মুতাআখখিরীন অর্থাৎ পরবর্তী আলিমগণ উনাদের মতে বৈধ।

৬। অমুসলিম ব্যক্তিকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

৭। দরিদ্র পিতা-মাতাকে এবং উর্ধ্বতন পুরুষ অর্থাৎ দাদা-দাদী, নানা-নানীকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

৮। আপন সন্তানকে এবং অধঃস্তন সন্তান অর্থাৎ নাতি-নাতনীদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

৯। স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরকে পবিত্র যাকাত দিতে পারবে না।

১০। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইয়াতীমখানা লিল্লাহ বোডিংয়ের জন্য পবিত্র যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত হলে তাকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

১১। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি উপার্জন ছেড়ে দিয়ে পবিত্র নামায-রোযা ইত্যাদি নফল ইবাদতে মশগুল হয়ে যায় তাকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। তবে সে যদি উপার্জন না থাকার কারণে পবিত্র যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত হয় তবে যাকাত দেয়া যাবে।

১২। পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের হুকুম অনুযায়ী যারা আমল করেনা অর্থাৎ যারা পবিত্র শরীয়ত উনার খিলাফ আমল ও আক্বীদায় অভ্যস্ত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

১৩। যারা পবিত্র যাকাত গ্রহণ করে উক্ত যাকাতের টাকা দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নাফরমানীমূলক কাজে মশগুল হয় তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

১৪। বেতন বা ভাতা হিসেবে নিজ অধিনস্ত ব্যক্তি বা কর্মচারীকে পবিত্র যাকাত উনার টাকা দেয়া যাবে না।

১৫। যাদের আক্বীদা ও আমল আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত বহির্ভুত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। যারা হারাম কাজে অভ্যস্ত তাদেরকে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

১৬। জনকল্যাণমূলক কাজে ও প্রতিষ্ঠানে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না। যেমন : আমভাবে লাশ বহন ও দাফন, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, সেতু নির্মাণ, হাসপাতাল নির্মাণ, বৃক্ষরোপন, পানির ব্যবস্থাকরণ ইত্যাদি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পবিত্র যাকাত দেয়া যাবে না।

মুহম্মদ রাশিদুল ইসলাম, রংপুর

সুওয়াল: পাওনা ও আটকে পড়া সম্পদের পবিত্র যাকাত উনার বিধান কি?

জাওয়াব: এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

عَنْ حَضْرَتِ الْـحَسَنِ الْبَصْرِىِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ اَذَا حَضَرَ الْوَقْتُ الَّذِىْ يُـوَدِّىْ فِيْهِ الرَّجُلُ زَكَاتَهٗ اَدّٰى عَنْ كُلِّ مَالٍ وَّعَنْ كُلِّ دَيْنٍ اِلَّا مَا كَانَ ضِمَارًا لَا يَـرْجُوْهُ

অর্থ: “বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন পবিত্র যাকাত প্রদানের সময় উপস্থিত হবে, তখন পবিত্র যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তি তার সমস্ত সম্পদের উপর এবং সকল পাওনার উপর পবিত্র যাকাত দিবেন। তবে যে পাওনা বা সম্পদ আটকে রাখা হয়েছে এবং যা ফেরত পাওয়ার সে আশা করে না, সেই সম্পদের পবিত্র যাকাত দিতে হবে না। তবে যখন পাবে তখন (শুরু থেকে পাওয়া পর্যন্ত) তার পবিত্র যাকাত আদায় করবে।” (ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ মতটি হযরত আবূ উবাইদ কাসিম ইবনে সালাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সঙ্কলন করেছেন)

মুহম্মদ রাহাতুল ইসলাম, মানিকনগর, ঢাকা

সুওয়াল: কোনো ব্যক্তি যদি পবিত্র রোযা রেখে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় ভুলে কিছু পান করে অথবা খেয়ে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় স্বপ্নে কিছু পান করলে বা খেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। আর জাগ্রত অবস্থায় ভুলে পেট ভরে পানাহার করলেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে অবশ্যই পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। পবিত্র রোযা উনার কথা স্মরণ হওয়ার পরও যদি সামান্য খাদ্য বা পানীয় গিলে ফেলে, তবে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এতে শুধু উক্ত পবিত্র রোযা উনার কাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। (দুররুল মুখতার, শামী)

মুহম্মদ ওসমান গণী, ডেমরা, ঢাকা।

সুওয়াল: পবিত্র রোযা অবস্থায় তরকারী পাক করার সময় লবণ হয়েছে কিনা, তা দেখার জন্য জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করা জায়িয আছে কিনা?

জাওয়াব: সাধারণভাবে এরূপ করা জায়িয নেই। হ্যাঁ, যদি কেউ সতর্কতার সাথে এরূপ করে, তবে তা মাকরূহের সহিত জায়িয রয়েছে, না করাই উচিত। তবে কারো স্বামী যদি এমন যালিম হয় যে, তরকারীতে লবণ কম বা বেশি হলে মারধর, যুলুম ইত্যাদি করে, তাহলে যালিমের যুলুম হতে বাঁচার জন্য জিহ¡ার অগ্রভাগ দিয়ে তরকারীর স্বাদ পরীক্ষা করা জায়েয রয়েছে। এক্ষেত্রে মাকরূহ্ হবে না।

লক্ষ্যণীয় যে, তরকারীযুক্ত থুথু কোনো ক্রমেই যেন ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)

মুহম্মদ রাকিবুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

সুওয়াল: রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করালে মায়ের রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, পবিত্র রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মায়ের পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না, এমন কি ওযুও ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী)

মুহম্মদ সেলিম হুসাইন, নূরানীবাদ

সুওয়াল: রোযা রাখা অবস্থায় বমি করলে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব: পবিত্র রোযা রাখা অবস্থায় বমি করার ব্যাপারে কয়েকটি ছূরত কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। বমি করাটা সাধারণতঃ দু’প্রকারের হয়ে থাকে- (১) ইচ্ছাকৃত, (২) অনিচ্ছাকৃত।

কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করে, তাহলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর ইচ্ছাকৃত অল্প বমি করলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি হোক অথবা অল্প বমি হোক, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে অথবা অল্প বমি গিলে ফেলে, তাতে তার পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি ভিতরে চলে চায়, তাতে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু মুখ ভরা বমি অনিচ্ছাকৃতভাবেও ভিতরে চলে গেলে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে।

উপরোল্লিখিত কোনো কারণে পবিত্র রোযা ভঙ্গ হলে সেটার ক্বাযা আদায় করতে হবে কিন্তু কাফাফারা আদায় করতে হবে না। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)

মুহম্মদ মিজানুর রহমান, সদর, চাঁদপুর

সুওয়াল:  অনেকে দেখা যায়, পবিত্র রোযা রেখে বারবার থুথু ফেলে থাকে। এই থুথু না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোনো ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াব:  পবিত্র রোযা রেখে মুখের থুথু বারবার না ফেলে গিলে ফেললে পবিত্র রোযার কোনো ক্ষতি হবে না। (আলমগীরী)

 

আহমাদ মালিহা, চাপাইনবাবগঞ্জ

 

সুওয়াল: রোযা রেখে করোনার টিকা নেয়া যাবে কি- না?

জাওয়াব: রোযা অবস্থায় করোনা টিকাসহ কোন ধরনের াটকা,ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন, ইনসুলিন ইত্যাদি গ্রহণ করা যাবে না। গ্রহণ করলে অবশ্যই রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمُـؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَائِشَةَ عَلَيْـهَا السَّلَامُ قَالَتْ اِنَّـمَا الْاِفْطَارُ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ وَفِـىْ رِوَايَةٍ اَلْفَطْرُ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ

অর্থ : “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে। কিছু বের হলে ভঙ্গ হবে না।” (আবূ ইয়া’লা শরীফ ৪/৩২৮: হাদীছ শরীফ ৪৬০২)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ الله بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰـى عَنْهُ مِنْ قَـوْلِهٖ اِنَّـمَا الْوُضُوْءُ مِـمَّا خَرَجَ وَلَيْسَ مِـمَّا دَخَلَ وَالْفَطْرُ فِى الصَّوْمِ مِـمَّا دَخَلَ وَلَيْسَ مِـمَّا خَرَجَ

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে- ওযূর ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীর হতে কিছু বের হলে ওযূ ভঙ্গ হবে, প্রবেশ করলে ভঙ্গ হবে না। আর রোযার ব্যাপারে নিয়ম হলো- শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে, বের হলে নয়।” (বায়হাক্বী শরীফ ১/১১৬: হাদীছ ৫৬৬, ত্ববারানী শরীফ)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰـى عَنْهُ اَلْفَطْرُ مِـمَّا دَخَلَ وَالْوُضُوْءُ مِـمَّا خَرَجَ

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে, বের হলে রোযা ভঙ্গ হবে না। শরীর হতে কিছু বের হলে ওযূ ভঙ্গ হবে, প্রবেশ করলে ভঙ্গ হবে না।” (আবূ শায়বা শরীফ ৩/৩৯: হাদীছ ৯২৯৩, ত্ববারানী শরীফ)

উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত যে, শরীরের ভিতর কোন কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণ ফতওয়া দিয়েছেন যে, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার, ইনসুলিন, টিকা ইত্যাদি নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ। যা ফিক্বাহ’র বিশ্বখ্যাত কিতাব- ফতওয়ায়ে শামী, বাহরুর রায়িক, ফতহুল ক্বাদীর, হিদায়া, আইনুল হিদায়া, জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ আছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে ‘রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়ার আহকাম’ কিতাবখানা এবং মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২১, ২২ এবং ২৮২তম সংখ্যা পাঠ করুন।

আহমদ তাহমীনা আক্তার, আমান বাড়িয়া

সুওয়াল:  রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াব: না, রোযা রাখা অবস্থায় চোখে ওষুধ বা সুরমা দিলে রোযা ভঙ্গ হবে না। এমনকি যদি ওষূধের স্বাদ গলায় অনুভব হয় বা সুরমার রং যদি থুথুর সাথে দেখা দেয়, তাতেও পবিত্র রোযা ভঙ্গ হবে না। (আলমগীরী, মাবছূত, আইনুল হেদায়া)

আহমাদ আফরোজা, দিনাজপুর

সুওয়াল: মহিলারা মসজিদে গিয়ে তারাবীহ নামায জামায়াতে পড়তে পারবে কি না?

জাওয়াব: সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া হলো মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত, পবিত্র জুমুয়া, পবিত্র তারাবীহ ও পবিত্র ঈদের নামাযসহ সকল নামাযের জামায়াতের জন্য মসজিদ, ঈদগাহ অর্থাৎ যে কোনো স্থানে যাওয়া নাজায়িয, হারাম ও  কাট্টা কুফরী।

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১১, ১৪, ১৯, ২২, ২৯, ৩৭, ৪৪, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৬৫, ৭১, ৮২, ১০১ ও ১০২তম সংখ্যাগুলো পড়–ন যাতে বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ হতে প্রায় ১০০টি দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হয়েছে।

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, কুমিল্লা

সুওয়াল: পবিত্র তারাবীহ উনার নামায বা অন্যান্য সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করার ব্যাপারে সঠিক ফায়ছালা জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা শর্ত সাপেক্ষে জায়িয, আবার শর্ত সাপেক্ষে নাজায়িয। অর্থাৎ সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হলে ইমামতী, শিক্ষকতা, পবিত্র হজ্জ উনার মাসয়ালা-মাসায়িল ও পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়ে খতম বা তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয। আর সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করা না হলে উজরত গ্রহণ করা জায়িয নেই। এর উপরই উলামায়ে মুতাআখ্খিরীনগণের ফতওয়া এবং এটাই গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত।

যেমন, ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব “বাহরুর রায়িকে” উল্লেখ আছে-

اِنَّ الْـمُفْتٰـى بِهٖ جَوَازُ الْاَخْذِ عَلَى الْقِرَائَةِ

অর্থ: “নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয হওয়া ফতওয়াগ্রাহ্য মত।”

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ২৩ ও ২৪তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৫১টি নির্ভরযোগ্য কিতাবের দলীল পেশ করা হয়েছে।

মুহম্মদ আলী রায়হান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়াল: কেউ কেউ বলে, পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ৮ রাকায়াত। আবার কেউ কেউ বলে, ১২ রাকায়াতও পড়া যায়। তাদের বক্তব্য কতটুকু সঠিক?

জাওয়াব: উক্ত বক্তব্য মোটেও সঠিক নয়। সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের ফতওয়া হচ্ছে, পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। অতএব, কেউ যদি ২০ রাকায়াত থেকে এক রাকায়াতও কম পড়ে, তবে তার সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করার গুনাহ হবে। অর্থাৎ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াতই পড়তে হবে এবং এর উপরই ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

যারা পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ৮ রাকায়াত বলে থাকে, তারা বুখারী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ দলীলস্বরূপ পেশ করে থাকে। যাতে বর্ণিত আছে যে, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে এবং পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্য মাসে (বিতিরসহ) ১১ রাকায়াত নামায আদায় করতেন।”

মূলত, এটি হচ্ছে পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায উনার বর্ণনা, পবিত্র তারাবীহ নামায উনার বর্ণনা নয়। কারণ পবিত্র তারাবীহ উনার নামায শুধু পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের জন্যই নির্দিষ্ট। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ব্যতীত অন্য মাসে পবিত্র তারাবীহ উনার নামায নেই। আর পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায সারা বৎসরই পড়তে হয়।

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৩০৪ খানা অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণ করা হয়েছে যে, পবিত্র তারাবীহ উনার নামায ২০ রাকায়াত পড়াই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।)

মুহম্মদ ইবনে মুনীরুজ্জামান, ঢাকা

সুওয়াল: সম্প্রতি আবুল কালাম আজাদ (বাশার) এবং মিজান আজহারি টুপি ও পাঞ্জাবি সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রচার করেছে তা আমার নিকট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ বিরোধী মনে হয়েছে। তাই তাদের প্রচারিত বক্তব্যটি আপনাদের জ্ঞাতার্থে প্রেরণ করলাম। আশা করি সঠিক জাওয়াব দিয়ে উপকৃত করবেন।

জাওয়াব: তথাকথিত আজাদ এবং মিজান আজহারি এরা টুপি, পাঞ্জাবি তথা পোশাক সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রচার করেছে তা শুধু মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ ও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের খিলাফ বা বিরোধীই হয়নি সাথে সাথে তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, কল্পনাপ্রসূত, বিভ্রান্তিকর ও গোমরাহীমূলক হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!

তাদের প্রকাশিত বিভ্রান্তিকর ও গোমরাহীমূলক বক্তব্যের কিছু জাওয়াব গত দুই সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়েছে। বাকী কিছু জাওয়াব এ সংখ্যায় প্রদান করা হলো।

(ধারাবাহিক)

(৪)       অতঃপর টুপির ব্যাপারে তারা বলেছে, “রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টুপি পরতেন, তবে নির্দিষ্ট কোন টুপি পরিধান করেন নি। তিনি মাঝে মাঝে এক খন্ড কাপড় মাথার উপরে এমন ভাবে রাখতেন, যা মাথার তৈলের কারণ মাথার সাথে লেপটে যেতো। তিনি মাথা ঢেকে চলা পছন্দ করতেন। টুপির উদ্দেশ্যও মাথা ঢেকে রাখা। তাই তো সৌদি আরব, ওমান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের আলেমগণ ভিন্ন ভিন্ন টুপি পরিধান করেন। এটাও ইসলামের উদারতার কারণেই।”

এর জাওয়াবেও বলতে হয় যে, অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে প্রথম পর্বে সুন্নতী টুপি মুবারকের বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে। তা হচ্ছে, সাদা সুতি কাপড়ের চার টুকরা- উপরে এক টুকরা আর চারদিকে তিন টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি, যা মাথার সাথে লেগে থাকে, মাথা থেকে উঁচু হয়ে থাকে না এবং কপালের সিজদার স্থান খোলা থাকে। এ ধরনের টুপি মুবারক পরিধান করাই খাছ সুন্নত মুবারক। অর্থাৎ এ ধরণের টুপি মুবারকই মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরিধান করতেন।

প্রতিভাত যে. মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে টুপি মুবারক পরিধান করতেন তা নির্দিষ্ট। অথচ উলামায়ে সূ’রা বলছে, মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নির্দিষ্ট কোন টুপি পরিধান করেন নি। নাঊযুবিল্লাহ! তাদের এ বক্তব্য মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি চরম মিথ্যা ও কুফরীর শামিল এবং যা মুরতাদ, কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَـيْرِ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ عَنْ أَبِيْهِ الزُّبَيْرِ بْنِ الْعَوَامِ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـقُوْلُ مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَـلْيَـتَـبَـوَّأْ مَقْعَدَهٗ مِنَ النَّارِ

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার সম্মানিত পিতা হযরত যুবাইর ইবনুল আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করে বলেন, আমি শুনেছি, মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করলো, সে অবশ্যই তার আবাসস্থল জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল। নাঊযুবিল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

উলামায়ে সূদ্বয় এমন জাহিল যে, টুপির বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছে, মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “তিনি মাঝে মাঝে এক খ- কাপড় মাথার উপরে এমনভাবে রাখতেন, যা মাথার তৈলের কারণে মাথার সাথে লেপটে যেতো।” উলামায়ে সূ’রা জানেই না যে, উক্ত কাপড় মুবারক তিনি টুপি মুবারকের নিচে পরিধান করতেন। উক্ত কাপড়কে বলা হয়, ‘কিনায়া’। তা আলাদা বা টুপি মুবারকের বিকল্প হিসেবে পরিধান করতেন না। তাছাড়া উক্ত কাপড় মুবারকের যে পৃথক নাম রয়েছে সেটাও তাদের জানা নেই। অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে প্রথম পর্বে তা আমরা উল্লেখ করেছি।

উলামায়ে সূ’দের আরো জানা উচিত যে, টুপির উদ্দেশ্য কেবল মাথা ঢাকা নয়। টুপি ছাড়া আরো অনেক কিছু দিয়েও মাথা ঢেকে রাখা যায় কিন্তু তা দিয়ে টুপি পরার যে উদ্দেশ্য তা কখনোই হাছিল হবে না। মনে রাখতে হবে যে, টুপি সহ সমস্ত সুন্নত মুবারক অনুসরণ ও পালনের একই উদ্দেশ্য তা হচ্ছে, মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্তিবা বা অনুসরণ মুবারকের মাধ্যমে যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের রেযামন্দি সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা।

উল্লেখ্য, উলামায়ে সূ’রা জামা বা কোর্তার ন্যায় টুপির ক্ষেত্রেও একই রকমের বক্তব্য উদগীরণ করেছে, যা মোটেও শুদ্ধ নয়। তা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, গোমরাহী ও কুফরী। যার জাওয়াব পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। উলামায়ে সূ’দের জানা উচিত যে, বিধর্মীরাও টুপি পরে কিন্তু তারা সুন্নতী টুপি পরে না। সুতরাং মুসলমানদের পরিহিত একমাত্র  টুপি হচ্ছে  সুন্নতী টুপি মুবারক। এর বিপরীত যেসব ভিন্ন ভিন্ন টুপি রয়েছে সেসব টুপি পরিধান করা বিদআত, গোমরাহী ও কুফরী।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَلَوْ تَـرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَكَفَرْتُمْ اَوْلَضَلَلْتُمْ

অর্থ: যদি তোমরা তোমাদের মহাসম্মানিত রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক তরক করো বা ছেড়ে দাও তাহলে অবশ্যই তোমরা কুফরী করলে এবং তোমরা  অবশ্যই গোমরাহ  বা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। (মুসলিম শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, নাসাঈ শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি)

(৫)       তারা আরো বলেছে, “নির্দিষ্ট কোন ডিজাইনের টুপিকে সুন্নাত মনে করা ইসলামের উদারতাকে সংকীর্ণ করার নামান্তর। যারা এক কল্লি, তিন কল্লি, পাঁচ কল্লি, লম্বা, গোল, উঁচু, নীচু ইত্যাদির কোনটিকে সুন্নাত বানাবে তারা সীমালঙ্ঘনকারী।”

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, নির্দিষ্ট কোন ডিজাইনের টুপিকে সুন্নত মনে করা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উদারতাকে সংর্কীণ করার নামান্তর। এটা কোথায় রয়েছে? এ বক্তব্যের সমর্থনে কোন দলীল আছে কি? কেননা বিনা দলীলে কারো কোন বক্তব্য বা লিখনী গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয় নয়। মুসলমানকে তার আক্বীদা-আমলের অবশ্যই দলীল পেশ করতে হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেছেন-

هَاتُـوْا بُـرْهَانَكُمْ اِنْ كُنْـتُمْ صَادِقِيْنَ

অর্থ: যদি তোমরা মু’মিন বা মুসলমান হয়ে থাক তবে (তোমাদের আমলের সপক্ষে) দলীল পেশ করো। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১)

উলামায়ে সুদের উক্ত বক্তব্যের সমর্থনে কোন দলীল নেই। তাদের উক্ত বক্তব্য সর্ম্পূণ মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং কুফরী।

আর এক কল্লি,তিন কল্লি, পাঁচ কল্লি, লম্বা, উঁচু, নীচু ইত্যাদি কোনটিই সুন্নতী টুপি নয়। আর যে টুপি সুন্নতী নয় সে টুপিকে যারা সুন্নত বলবে এবং আমল করবে প্রকৃতপক্ষে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। এ মাসয়ালা বা ফতওয়ার আলোকে উক্ত উলামায়ে সু’ দুটিও সীমালঙ্ঘনকারীর অর্ন্তভুক্ত। কারণ তারা ভাল লাগে বলে উঁচু টুপি পরিধান করে। নাঊযুবিল্লাহ! যা পরিধান করা সুন্নত নয় বরং বিদআত আর তাই ফিক্বাহর কিতাবে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, বুরনুস তথা উঁচু টুপি পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।

(৬)       এরপর উলামায়ে সূরা বলেছে, “কিন্তু যারা ভিন্ন টুপি পরে তাদের ব্যাপারে কখনো তাদের মনে সামান্য বিরুপ চিন্তা তৈরি হয় না। হবেই বা কেন? এটা তো তার এখতিয়ার।”

এর জাওয়াবে বলতে হয়, যারা বিদয়াত আমল করে তাদের নিকট বিদয়াত আমলকারীদের ব্যাপারে বিরুপ চিন্তা তৈরি না হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। আর মুসলমানের জন্য শুধু টুপিই নয় যে কোন পোশাক পরিধান করতে হলে তাকে একমাত্র সুন্নতী পোশাক পরিধান করতে হবে। এ ব্যাপারে কারো কোন এখতিয়ার নেই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেটা যেভাবে করেছেন বা করতে বলেছেন, সেটা সেভাবেই করতে হবে। এতে বিন্দু হতে বিন্দু পরিমাণ নিজস্ব মত পেশ বা অবহেলা, অবজ্ঞা করা বেঈমান হওয়ার কারণ। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُـؤْمِنُوْنَ حَتّٰى يُـحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَـيْـنَـهُمْ ثُـمَّ لَا يَـجِدُوْا فِىْ اَنْـفُسِهِمْ حَرَجًا مِّـمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا

অর্থ : “আপনার মহান রব তায়ালা উনার কসম, তারা কখনই ঈমানদার হতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের পরস্পরের মধ্যে সৃষ্ট সমস্ত মত বিরোধে বা সমস্ত বিষয়ে আপনাকে ফায়সালাকারী হিসাবে মেনে না নিবে। শুধু মেনে নিবে এতটুকু নয়, মেনে তো নিতেই হবে বরং সাথে সাথে আপনার ফায়সালাকৃত বিষয়ে তারা তাদের নিজেদের অন্তরেও কোন রকম চু-চেরা, ক্বীল ও ক্বাল অর্থাৎ কোন প্রকার সংকীর্ণতাও অনুভব করতে পারবে না। শুধু এতটুকুই নয় বরং সাথে সাথে তা আনুগত্যের সহিত আনন্দচিত্তেও মেনে না নিবে।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)

মনে রাখতে হবে, মুসলমান আক্বীদা, আমলে, আখলাক্বে কোন বিদয়াতী ও বিধর্মীকে অনুসরণ করতে পারে না। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَـهُوَ مِنْـهُمْ

  অর্থ: যে যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে, সে তাদেরই অর্ন্তভুক্ত হবে। (আবূ দাউদ শরী, মিশকাত শরীফ)

আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا

অর্থ: ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অর্র্ন্তভুক্ত নয় যে আমাকে বাদ দিয়ে অন্যদের অনুসরণ করে। (তিরমিযী শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ)

(৭)       এরপর উলামায়ে সূ’দ্বয়ের একজন বলেছে,“উঁচু টুপি মাথায় দিয়ে সে চর্মনাই গিয়েছে, আহমক শফী’র জানাযায় হাটহাজারী গিয়েছে। কোন অসৌজন্যতা পায়নি। বরং পীর সাহেব দ্বয়ের মেহমানদারী ও হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্রদের ভালোবাসায় দারুণভাবে সিক্ত হয়েছে।”

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, সে যাদের মেহমানদারী ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে তাদের ও তার আক্বীদা-আমলের মধ্যে কোন পাথর্ক্য নেই। তাদের উদাহরণ হচ্ছে ময়লার এপিঠ আর ওপিঠ। তারা সকলেই উলামায়ে সূ’র অর্ন্তভুক্ত।

স্মরণীয় যে, সুন্নতী পোশাক অবশ্যই হক্ব চেনার আলামত। যদিও বালহুম আদ্বল্লু অর্থাৎ পশুর চেয়ে নির্বোধ উলামায়ে সূ’দের তা উপলব্ধির বাইরে। আর বিভক্তি ইসলামে হারাম নয়। বরং ইসলাম সম্মত। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

تَـفْتَرِقُ أُمَّتِىْ عَلٰى ثَلاَثٍ وَّسَبْعِيْنَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِى النَّارِ إِلَّا مِلَّةً وَّاحِدَةً قَالُوْا وَمَنْ هِىَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِىْ

অর্থ: আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ব্যতীত বাকী ৭২টি দলই জাহান্নামী হবে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নাজাতপ্রাপ্ত বা জান্নাতী দলটির পরিচয় কি? জাওয়াবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি এবং আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের আদর্শ মুবারকের যারা অনুসারী হবেন উনারাই নাজাতপ্রাপ্ত দলের অর্ন্তভুক্ত। (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি)

মূলত, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সম্মত বিষয়কে হারাম বলার কারণে এবং সুন্নতী কোর্তা ও সুন্নতী টুপিসহ সুন্নতী পোষাক সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে উলামায়ে সূ’রা কাট্টা কাফির, মুনাফিক ও মুরতাদে পরিণত হয়েছে। তাদের উক্ত কুফরী বক্তব্য সমূহ থেকে খালিছ তওবা ইস্তিগফার না করা পর্যন্ত তারা মুসলমান হিসেবে সাব্যস্ত হবে না। আর এ অবস্থায় মারা গেলে তাদের প্রতি মুরতাদের হুকুম বর্তাবে। আর মুরতাদের ফায়সালা হচ্ছে- তার ঈমান নষ্ট হবে। সে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম থেকে খারিজ হবে। বিবাহিত হলে বিবাহ বিচ্ছেদ হবে। হজ্জ করে থাকলে হজ্জ বাতিল হবে। ওয়ারিছ হলে ওয়ারিছসত্ত্ব বাতিল হবে। জীবনের সমস্ত নেকী বরবাদ হবে। মারা গেলে তার গোসল, কাফন, জানাযা দেয়া যাবে না। মুসলমানদের কোন কবরস্থানে দাফন করাও যাবে না। বরং তার লাশ মৃত কুকুর শৃগালের ন্যয় কোন গর্তে পুঁতে রাখতে হবে। নাঊযুবিল্লাহ!

মুহম্মদ আহসান হাবীব, মীরগঞ্জ, রংপুর।

সুওয়াল:  বাতিল ফিরক্বার লোকদের আক্বীদা হলো, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত আর কেউই ইলমে গইব উনার ইলিম রাখেন না। এমনকি যিনি কুল-মাখলূক্বাতের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও নাকি ইলমে গইব উনার ইলিম রাখেন না। নাউযুবিল্লাহ!

এ বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের কি আক্বীদা? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব:

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اُرْسِلْتُ اِلَى الْـخَلْقِ كَافَّةً

অর্থ: আমি সমস্ত সৃষ্টির জন্যে রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইলমে গইব প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا هُوَ عَلَى الْغَيْبِ بِضَنِيْنٍ

অর্থাৎ- তিনি (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গইবের সংবাদ প্রকাশে কৃপণতা করেননা।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা তাকউয়ীর শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরে “মায়ালিমুত তানযীল”-এ উল্লেখ আছে-

يَـقُوْلُ اِنَّهٗ يَاْتِيْهِ عِلْمَ الْغَيْبِ فَلَايَـبْخَلُ بِهٖ عَلَيْكُمْ بَلْ يُعَلِّمُكُمْ وَلَايَكْتُمُهٗ

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ইল্মে গইব রয়েছে।  সুতরাং তিনি তোমাদেরকে তার সংবাদ দানে কৃপণতা করেন না। বরং তিনি তোমাদেরকে তা শিক্ষা দেন এবং তা গোপন করেন না। অনুরূপ তাফসীরে খাযিন ও তাফসীরে বাগবীতেও উল্লেখ আছে।”

মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আর রহমান শরীফ’ উনার ১-৪নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

الرَّحْمٰنُ .‏ عَلَّمَ الْقُرْاٰنَ.‏ خَلَقَ الْإِنْسَانَ.‏ عَلَّمَهُ الْبَـيَانَ

অর্থ : “দয়াময় মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি ইনসান সৃষ্টি করেছেন এবং উনাকে বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আর রহমান শরীফ : সম্মানিত পবিত্র আয়াত শরীফ ১-৪)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে খাযিনে’ উল্লেখ আছে-

قِيْلَ الْـمُرَادُ بِالْاِنْسَانِ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْبَـيَانَ يَعْنِىْ بَـيَانٌ مَا كَانَ وَمَايَكُوْنُ لِاَنَّهٗ يُـنْبِئُ عَنْ خَبْرِ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاٰخِرِيْنَ وَعَنْ يَوْمِ الدِّيْنِ

অর্থ: “বলা হয়েছে যে, ইনসান দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। আর বয়ান দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, যা ঘটেছে এবং যা ঘটবে, পূর্বাপর সমস্ত কিছুর ইলিম মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে হাদিয়া করেছেন। কেননা উনাকে পূর্ববর্তী-পরবর্তী এবং পরকাল সম্পর্কিত সকল (গইবী বিষয়ে) ইলিম মুবারক হাদিয়া করেছেন।” অনুরূপ তাফসীরে মায়ালিমুত তানযীল, তাফসীরে হুসাইনী, তাফসীরে সাবীতেও উল্লেখ আছে।”

সম্মানিত ও পবিত্র সূরা হুদ শরীফ উনার ৬নং সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

كُلٌّ فِىْ كِتٰبٍ مُّبِيْنٍ

অর্থ : “(মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতের) সমস্ত কিছুই সুস্পষ্ট কুরআন শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে।”

অর্থাৎ সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমন কোন বিষয় নেই যার বর্ণনা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নেই। সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সমসÍ ইলিম মুবারক তথা যাহিরী ও বাতিনী সমস্ত ইলিম যাঁর রয়েছে উনার নিকট কোনকিছু অজানা থাকেনা।

বুখারী শরীফ ও মিশকাত শরীফ উনাদের মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ عَلَيْهَ السَّلَامُ قَالَ قَامَ فِيْـنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا فَأَخْبَـرَنَا عَنْ بَدْءِ الْخَلْقِ حَتّٰى دَخَلَ أَهْلُ الْـجَنَّةِ مَنَازِلَهُمْ وَأَهْلُ النَّارِ مَنَازِلَهُمْ حَفِظَ ذٰلِكَ مَنْ حَفِظَهٗ، وَنَسِيَهٗ مَنْ نَسِيَهٗ‏.‏

অর্থ: “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে সৃষ্টির শুরু থেকে জান্নাতবাসীদের জান্নাতে প্রবেশ এবং দোযখবাসীদের দোযখে প্রবেশ করা পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ের সংবাদ প্রদান করেন। এগুলো যাঁরা স্মরণ রাখতে পেরেছেন উনারা স্মরণ রেখেছেন, আর যাঁরা স্মরণ রাখতে পারেননি উনারা ভুলে গেছেন।”

‘ছহীহ মুসলিম শরীফ’ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ আছে যে-

عَنْ حَضْرَتْ حُجَيْـفَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ فِيْـنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَامًا مَا تَـرَكَ شَيْـئًا يَكُوْنُ فِيْ مَقَامِهِ ذَلِكَ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ إِلَّا حَدَّثَ بِهِ

অর্থ : “হযরত হুযাইফা রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে তার সবকিছুই বর্ণনা করে দিলেন, কোন কিছুই বাদ দিলেন না।”

শরহুস্ সুন্নাহ ও মিশকাত শরীফ ৫৪১ পৃষ্ঠায় আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْـرَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ جَاءَ ذِئْبٌ إِلَى رَاعِيْ غَنَمٍ، فَأَخَذَ مِنْـهَا شَاةً، فَطَلَبَهُ الرَّاعِيْ حَتّٰى اِنْـتَـزَعَهَا مِنْهُ قَالَ فَصَعِدَ الذِّئْبُ عَلٰى تَلٍّ فَأَقْـعٰى وَاسْتَـقَرَّ وَقَالَ عَمَدْتُّ إِلٰى رِزْقٍ رَزَقَنِيْهِ اللهُ أَخَذْتُهٗ ثُمَّ انْـتَـزَعْتَهُ مِنِّيْ فَـقَالَ الرَّجُلُ تَاللهِ إِنْ رَأَيْتُ كَالْيَـوْمِ ذِئْبٌ يَـتَكَلَّمُ فَـقَالَ الذِّئْبُ أَعْجَبُ مِنْ هٰذَا رَجُلٌ فِي النَّخَلَاتِ بَيْنَ الْحَرَّتَـيْنِ يُخْبِرُكُمْ بِمَا مَضٰى وَمَا هُوَ كَائِنٌ بَعْدَكُمْ قَالَ فَكَانَ الرَّجُلُ يَهُوْدِيًّا فَجَاءَ اِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاَخْبَـرَهٗ وَاَسْلَمَ فَصَدَّقَهُ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদা একটি নেকড়ে বাঘ এক ছাগল পালের দিকে আসলো এবং সেখান থেকে একটি ছাগল ধরে নিয়ে গেল, রাখাল তার পিছনে ছুটলো এবং ছাগলটিকে ছিনিয়ে নিয়ে আসলো। হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন, নেকড়ে বাঘটি তার বিশেষ ভঙ্গিতে একটি টিলার উপর গিয়ে বসলো এবং তার লেজ উভয় পায়ের মধ্যখানে রেখে বলতে লাগল, (হে রাখাল!) তুমি আমার নিকট হতে এমন রিযিক ছিনিয়ে নিতে ইচ্ছে করছ যা মহান আল্লাহ পাক আমাকে দান করেছেন। রাখাল বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আজকের মত এরূপ বিস্ময়কর অবস্থা আমি কখনো দেখিনি যে, নেকড়ে বাঘ কথা বলে। নেকড়ে বাঘ বললো, এর চেয়ে বিস্ময়কর অবস্থা সেই মহান রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যিনি খেজুর বৃক্ষ সম্বলিত এলাকায় দু’ পাহাড়ের মাঝখানে অর্থাৎ মদীনা শরীফে অবস্থান করেন এবং তোমাদেরকে ঐ সমস্ত বিষয়ের সংবাদ দেন যা হয়েছে এবং যা ভবিষ্যতে হবে। হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, লোকটি ছিল ইহুদী, সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আসলো এবং উনার নিকট ঘটনাটি বর্ণনা করলো এবং মুসলমান হয়ে গেল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত ঘটনাটি সত্যায়ন করলেন। (চলবে)

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ