সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাত মাঝে হাযির-নাযির। এ সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের কি আক্বীদা?

সংখ্যা: ২৪৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ রহমতুল্লাহ, খিলগাঁও, ঢাকা


সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাত মাঝে হাযির-নাযির। এ সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের কি আক্বীদা?

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ফাতহ্ শরীফ উনার ৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

انا ارسلناك شاهدا

 অর্থ: ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) সাক্ষ্যদানকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।’

জানা আবশ্যক, যিনি সাক্ষ্য দিবেন উনার জন্য যেরূপ হাযির বা উপস্থিত থাকা শর্ত, তদ্রুপ নাযির বা দেখাও শর্ত।

কাজেই, বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কুল-মাখলুক্বাতের সবকিছুই হাযির ও নাযির।

এটিই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণকারীরা ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইউস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউয়াল, ক্বউইয়্যূল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ‘বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ’ উনাদের বরাত দিয়ে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

انما انا قاسم والله يعطى

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি হাদিয়া করেন আর নিশ্চয়ই আমি হলাম (উক্ত হাদিয়া) বণ্টনকারী।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সর্বপ্রকার নিয়ামত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া করেছেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুল-মাখলূক্বাতের যাকে যতটুকু ইচ্ছা তাকে ততটুকু নিয়ামত বণ্টন করেন। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, যিনি কুল-মাখলুক্বাতের জন্য নিয়ামত  বণ্টনকারী; তিনি যদি কুল-মাখলূক্বাতের কাছে হাযির বা উপস্থিত না থাকেন এবং তাদেরকে নাযির বা দেখে না থাকেন, তাহলে তিনি তাদের মাঝে কিভাবে নিয়ামত বণ্টন করবেন? কাজেই কায়িনাতের সমস্ত সৃষ্টির জন্য তিনি যেহেতু নিয়ামত বণ্টনকারী, সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখে না- তিনি হাযির-নাযির তো অবশ্যই বরং সবকিছুই উনার নিকট হাযির ও নাযির। সুবহানাল্লাহ!

হযরত ইমাম তবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত নঈম ইবনে উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের থেকে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ان الله قد رفع لى الدنيا فانا انظر اليها والى ما هو كائن فيها الى يوم القيامة كانما انظر الى كفى هذه

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পৃথিবীকে আমার চোখের সামনে এরূপভাবে রেখেছেন যে, আমি এ সমগ্র পৃথিবীকে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার মধ্যে যা কিছু সৃজিত বা সংঘটিত হবে তদসমূহকে ওইরূপভাবে দেখি, যেরূপ আমার হাত মুবারক উনার তালু মুবারক দেখে থাকি।” সুবহানাল্লাহ! (তবারানী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি জিসিম ও ছূরত-এ দুটির কোনো একটি হিসেবে হাযির ও নাযির নন। বরং তিনি ছিফত অর্থাৎ ইলম ও কুদরত মুবারক উনার দ্বারা এবং ছিফত মিছালী ছূরত মুবারক হিসেবে কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিফত অর্থাৎ ইলম ও মু’জিযা শরীফ দ্বারা এবং ছিফত অর্থাৎ নূর ও রহমত মুবারক হিসেবে কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির। আর উনার যেহেতু জিসিম ও ছূরত মুবারক রয়েছে, সেহেতু তিনি যে জিসিম মুবারকে পবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করছেন উনার ইখতিয়ার ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি সেই জিসিম মুবারক নিয়ে কোথাও হাযির হবেন না। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের হযরত ইমাম-মুজতাহিদগণ উনারা এ বিষয়ে একমত যে, তিনি ওই জিসিম মুবারক নিয়ে রওযা শরীফ থেকে উঠলে ক্বিয়ামত হয়ে যাবে। তাই তিনি উক্ত জিসিম মুবারক উনার অনুরূপ জিসিম মুবারক ও ছূরত মুবারক এবং মিছালী ছূরত মুবারক-এ কায়িনাত মাঝে হাযির ও নাযির থাকেন, যে কারণে উনার আশিকগণ উনাকে স্বপ্নে, মুরাক্বাবা-মুশাহাদার হালতে, এমনকি জাগ্রত অবস্থার মধ্যেও দেখে থাকেন এবং কথোপকথনও করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কুল-মাখলূক্বাতের সবকিছুই হাযির ও নাযির। এটিই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণকারীরা ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৯৪তম সংখ্যা পাঠ করুন।

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব