হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৩৯) তাসলীম-এর মাক্বাম হাছিল করা ব্যতীত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উপর ইস্তিক্বামত থাকা সম্ভব নয় (৩) আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

সংখ্যা: ২৮০তম সংখ্যা | বিভাগ:

সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বিশর মুসলমান নয়। সে মুনাফিক। সে আপনার ফায়সালা মুবারক মানেনি। সেটা নাকি তার মনপুতঃ হয়নি। নাউযুবিল্লাহ্! নাউযুবিল্লাহ্! নাউযুবিল্লাহ্!

বিশরের আত্মীয়-স্বজনরা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বিশর যে মুসলমান নয়, সে যে মুনাফিক তার দলীল বা প্রমাণ কি? তখন স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করতঃ তার প্রমাণ দিলেন-

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُوْنَ حَتّٰى يُـحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوْا فِيْۤ أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّـمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا

অর্থ: আপনার মহান রব তায়ালা উনার কসম! কোন লোক ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবেনা, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনার সিদ্ধান্তকে বিনা দ্বিধায় মেনে না নিবে। এমনকি আপনার ফায়সালার ক্ষেত্রে তাদের অন্তরে কোন সংশয়, সন্দেহ এবং সংকীর্ণতা থাকতে পারবে না। বরং সন্তুষ্টচিত্তে, সর্বান্তকরণে তা মেনে নিতে হবে। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)

কাজেই, তাসলীম উনার মাক্বাম তথা আদেশ-নির্দেশ বিনা দ্বিধায় সন্দেহাতীতভাবে মেনে নিতে না পারলে মুনাফিকী থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য যে, বিলায়েতের যামানায় তথা ওলীআল্লাহগণ উনাদের যামানায় কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান না মানা কিংবা চু-চেরা ক্বীল-ক্বালের দ্বারা তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। কাজেই যারা কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার পর উনার আদেশ-নির্দেশ মুবারকগুলো বিনা দ্বিধায় মানে না বরং চু-চেরা ক্বীল-ক্বাল করে তারাও বিশরের মত জীবন্ত মুনাফিক। তাদেরও পরিণতি হবে বিশরের মত। নাউযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে হিফাযত করুন। (আমীন)

তাসলীম উনার মাক্বাম হাছিল না হলে আমল বরবাদ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে

تَسْلِيْم (তাসলীম) উনার মাক্বাম হাছিল না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি بِاغِىْ বাগী বা বিদ্রোহী হয়। আর যখন কেউ বিদ্রাহী হয় তখন সে ব্যক্তি কুফরীতে শিরকিতে নিমজ্জিত হয়। কুফরী-শিরকিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে তার সকল আমল বরবাদ হয়ে যায়।

সাধারণত ছগীরা, কবীরা গুনাহের কারণে আমল বরবাদ হয় না। কারণ, তারা মু’মিন। তবে কোন গোনাহের কাজকে যদি জায়িয মনে করে তখনই কুফরে পরিণত হয়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَأَنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ أَجْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ

অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি মু’মিনগণের কোন প্রতিদান নষ্ট করেন না। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭১)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاصْبِرْ فَإِنَّ اللهَ لَا يُضِيْعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِيْنَ

অর্থ: ধৈর্য্যধারণ করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি মুহসীন তথা সৎকর্মশীলগণের প্রতিদান নষ্ট করেন না। (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৫)

উল্লেখ্য যে, মু’মিন  ও মুহসিন বা সৎকর্মশীলগণের আমল বা প্রতিদান নষ্ট হয় না। কিন্তু বান্দা বা উম্মত যখন কাফির ও মুশরিক হয় কিংবা মুরতাদ হয় তখন তার আমল বরবাদ হয়ে যায়।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلَاتُبْطِلُوْا أَعْمَالَكُمْ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতায়াত বা অনুসরণ-অনুকরণ করো। (উনাদের ইতায়াত থেকে বিমুখ থেকে) তোমাদের আমলগুলোকে বিনষ্ট করো না। (পবিত্র সূরা মুহম্মদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)