হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২০৫) হুসনুল খুলক বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত। আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

সংখ্যা: ২৪৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

زهد (যুহ্দ) উনার স্বরূপ ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়

زهد (যুহদ) তথা দুনিয়ার খাহেশ ত্যাগ করা এবং নিষিদ্ধ বস্তু হতে বিরত থাকা। যুহদ উনার মাক্বাম হাছিলের অভিলাসী সাধক বা সালিকের কর্তব্য হচ্ছে سر (সির) লতীফার সবক রীতিমত আদায় করা। নিয়মিত যিকির-ফিকির করা। স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিয়মিত ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা। সাথে সাথে এই মাক্বাম হাছিলের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী তথা নাজায়িয, হারাম কাজ-কর্ম, কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, চিন্তা-ভাবনা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা। অন্যথায় এই মাক্বামে উপনিত হওয়া সম্ভব নয়।

রোগীকে রোগ নিরাময়কারী ঔষধ সেবনের পাশাপাশি রোগ সৃষ্টিকারী কিংবা বৃদ্ধিকারী খাদ্য-পানীয় থেকে বিরত থাকা যেমন আবশ্যক তেমনি যিকির ফিকির, ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার পাশাপাশি যুহদ উনার মাক্বাম হাছিলের পথে অন্তরায় সৃষ্টিকারী বিষয় বস্তু থেকেও বিরত থাকা আবশ্যক।

পূর্ববর্তী আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের জীবনী মুবারকে চট পরিধান করা, দীর্ঘদিন পর্যন্ত খাদ্য-পানীয় থেকে বিরত থাকা, অত্যন্ত নিম্নমানের, কমদামী পোষাক পরিধান করা, লোকালয় ছেড়ে বনে-জঙ্গলে, নির্জনস্থানে একাকী জীবন-যাপনের যে চিত্র দৃষ্টিগোচর হয় তা উনাদের দুনিয়া বিরাগীর মাক্বাম মুবারক অর্থাৎ যুহদ উনার মাক্বাম মুবারক হাছিলের জন্য যে রিয়াজত ও মাশাক্কাত করেছেন তার বহিঃপ্রকাশ।

অর্থাৎ সালিক বা সাধকের যুহদ উনার মাক্বাম হাছিলের পথে ফানা বা লয় হওয়ার বাহ্যিকরূপ। তবে এই বাহ্যিক রূপ সবার সমান নয়। ব্যক্তি বিশেষে, ক্ষেত্র বিশেষে পার্থক্য রয়েছে। অনেকটা আবার নিয়তের সাথে সংশ্লিষ্ট। উনাদের এই হাল বা অবস্থা বাহ্যিকভাবে নির্ণয় করা কঠিন। কেননা একজন ছাত্রের زهد বা দুনিয়া বিরাগীর রূপ আর একজন শিক্ষকের দুনিয়া বিরাগী এক নয়। সাধনার পথে একজন সাধকের زهد আর সাধনায় সিদ্ধিলাভকারী একজন কামিল ব্যক্তিত্বের দুনিয়া বিরাগীর বাহ্যিক রূপ দৃশ্যত এক নয়।

উদাহরণ স্বরূপ বলা হয়- তিন ব্যক্তি। একজন নদী পার হয়ে অপর পারে বসে আছেন ইতমিনানের সাথে। আর একজন নদীর এপারেই বসে আছেন ইতমিনানের সাথে। অপর ব্যক্তি নদী পার হওয়ার জন্য নদীতে সাঁতার কাটছেন, প্রাণপন কোশেশ করছেন। এপারে ও ওপারে যাঁরা ইতমিনানের সাথে বসে আছেন ছূরতান বা বাহ্যিকভাবে দুজনের অবস্থা এক ও অভিন্ন। আর যিনি নদী পার হওয়ার জন্য প্রাণপণ কোশেশ করে যাচ্ছেন উনার অবস্থা ব্যতিক্রম। সেই দুই ব্যক্তি বাহ্যিকভাবে একই হলেও উনাদের মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

কাজেই, যিনি زهد (যুহদ) উনার মাক্বাম হাছিল করেছেন উনার অবস্থা আর যিনি হাছিলের চিন্তাও করেননি উনার অবস্থা দৃশ্যত এক ও অভিন্ন। কিন্তু উনাদের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। আর যিনি সালিক বা সাধক। যিনি زهد (যুহদ) উনার মাক্বাম হাছিলের কোশেশ করছেন উনার অবস্থা ভিন্ন। আমরা উনাদের অবস্থা, হাল কিরূপ হবে বা হওয়া উচিত সে দিকটি নিয়েই আলোচ্য নিবন্ধে আলোচনা করবো।

সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সালিকের দুনিয়া বিরাগী উনার উদাহরণ দিয়ে বলেন, সালিক বা সাধক সর্বপ্রথম দুনিয়াকে এক তালাক দেন। এর কিছুদিন পর দুই তালাক দেন। অতঃপর কিছুদিন অতিবাহিত হলে তিন তালাক দেন তথা দুনিয়াকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করেন।

এভাবে আরো কিছুদিন অতিক্রান্ত হলে সেই সালিক বা সাধক আখিরাতকে এক তালাক দেন। কিছুদিন পরে দুই তালাক দেন। তারপর কিছুদিন অতিবাহিত হলে তিন তালাক দিয়ে আখিরাতের বিষয় নিয়ে চিন্তা করা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হন।

তারপর কিছুদিন অতিবাহিত হলে মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়াকে কুৎসিত, কাদকার করে সালিক বা সাধকের কাছে ফেরত পাঠান। সাথে সাথে দুনিয়াকে এটাও বলে দেন যে, “তুমি কখনো উনার ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা করবে না।” তিনি আরো বলেন, দুনিয়াকে কুৎসিত, কদাকার করে পাঠানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, সেই সাধক বা সালিক যেন দুনিয়ার সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে তার দিকে ধাবিত না হয়। উদাহরণ দিয়ে বলেন, আশিক যখন মাশুকের কাছে কোন হাদিয়া পাঠান। তখন দৃষ্টি বিকর্ষণকারী, কুৎসিত, কদাকার বাহককে দিয়ে সেই হাদিয়া পাঠান। উদ্দেশ্য মাশুক যেন তার রূপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে মুহব্বত না করে। তার ইশকে গরক না হয়। অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মনোনীত বান্দাগণ উনাদের নিকট দুনিয়াকে ফেরত পাঠান। কিন্তু তার হাক্বীক্বী রূপ কাদাকার, কুৎসিত, বিকর্ষনীয় করে পাঠান। উপরোন্ত সতর্ক করে দেন যেন কখনো উনাকে আকর্ষন করার চেষ্টাও না করে। যার জন্য ওলীআল্লাহগণ কখনো দুনিয়াদার দিকে মায়েল বা রুজু হন না। দুনিয়ার চাক-চিক্য উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের থেকে কখনো জুদা বা বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। দুনিয়া কখনো উনাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে না।

 ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল ল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৪৯)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫০)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)