হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২০৩) হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।

সংখ্যা: ২৪৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২০৩)

হুসনুল খুল্ক্ব বা সচ্চরিত্রবান মুরীদই শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সর্বাধিক নৈকট্যশীল

ও সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত।

আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম

 

ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আলোচ্য পবিত্র আয়াত শরীফ খানা নাযিল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমি কোন দিন চিন্তাও করিনি যে, মুসলমানগণের মধ্যেও সংসার অনুরাগী লোকের অস্তিত্ব রয়েছে।

منكم من يريد الدنيا ومنكم من يريد الاخرة

অর্থ: “তোমাদের মধ্যে কতক লোক সংসারকে চায় বা প্রাধান্য দেয়। আর কতক লোক পরকালকে চায় বা প্রাধান্য দেয়।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫২)

উল্লেখ্য যে, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, ঘর-বাড়ী ও জীবনোপকরণ আবশ্যকীয় বিষয়াবলী পরিত্যাগ করে একাকী ও বনে-জঙ্গলে জীবন অতিবাহিত করাকে যুহদ বা দুনিয়া বিরাগ বলা হয় না। জীবনযাপনের একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয় বস্তুসমূহ গ্রহণ করা যুহদ উনার খিলাফ নয়।

হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সেগুলো ব্যবহার করছেন। তাই তো মরমী কবি বলেছেন, “মহান আল্লাহ পাক থেকে গাফিল থাকাটাই হচ্ছে দুনিয়া। স্ত্রী, সন্তান-সন্তনতি এগুলো দুনিয়া নয়।”

زهد (যুহদ) উনার ফযীলত

زهد (যুহদ) উনার ফাযায়িল-ফযীলত অশেষ। সবচেয়ে বড় হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যাহিদ ব্যক্তির প্রতি সর্বদা সন্তুষ্ট। যিনি দুনিয়ার খাহেশ ত্যাগ করেন এবং নিষিদ্ধ বস্তুকে পরহেয করেন তাঁকে যাহিদ বলা হয়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত- সন্তুষ্টি পেতে চাও তাহলে দুনিয়া বিরাগী, সংসার ত্যাগী হও।” হযরত হারেসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার দয়া, দান, ইহসানের বদৌলতে আমি প্রকৃত মু’মিন হতে পেরেছি। তিনি বললেন, ইহার প্রমান কি? হযরত হারেসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিবেদন করলেন, “আমার পবিত্র অন্তর দুনিয়ার মায়া জাল ছিন্ন করে এমনভাবে পলায়ন করেছে যে, আমার দৃষ্টিতে স্বর্ণ এবং পাথর খ-ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। জান্নাত ও জাহান্নামকে আমি যেন চাক্ষুস দেখতে পাচ্ছি।” নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, সম্মানিত ঈমান উনার যে অবস্থা আপনার পাওয়া  দরকার ছিল তা আপনি যথাযথভাবেই পেয়েছেন। এখন উনাকে সযতেœ রক্ষা করুন।”

অতঃপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-

عبد نور الله تعالى قلبه

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি এই ব্যক্তির পবিত্র অন্তরকে নূরানী বা আলোকিত করেছেন।” (কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত-৪/১৯৪)

হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত” কিতাবের ৪/১৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, “যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন পর্যন্ত সংসারের প্রতি বিরাগী ও অনাসক্ত থাকতে পারবে তার অন্তরে ইলিম ও হিকমতের বহু সংখ্যক ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হতে থাকবে।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত মা’রিফাত পেতে চাও তাহলে যুহদ অবলম্বন করো বা যাহিদ হও।”

 زهد (যুহদ) উনার মাক্বাম হাছিলকারী ব্যক্তিত্বের শরহে ছূদুর হয়। সীনা মুবারক প্রসারিত হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

فمن يرد الله ان يهديه يشرح صدره للاسلام

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে হিদায়েত দিতে চান সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার জন্য তার শরহে ছুদূর করেন তথা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে তার জন্য হৃদয়গ্রাহী করেন।” (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১২৫)

হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!! শরহে ছুদূর (বক্ষ মুবারক প্রসারিত হওয়া) কি?

হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে  (৯ পৃষ্ঠার পর)

তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “উহা একপ্রকার নূর বা আলো। যা অন্তরে প্রবেশ করে। আর তার প্রভাবে হৃদয় বা অন্তর উন্মুক্ত ও প্রসারিত হয়। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম আবার নিবেদন করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!! তার আলামত বা চিহ্ন কি? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, সংসার থেকে মন উঠে যাওয়া। সংসারে কোন কিছুতেই মন আকৃষ্ট না হওয়া। চিরস্থায়ী পরকালের প্রতি মন ছুটে যাওয়া। মন আকৃষ্ট হওয়া। আর মৃত্যু আসার পূর্বেই মৃত্যুর পরবর্তীকালের জন্য পাথেয় বা সম্বল সংগ্রহে লিপ্ত ও ব্যস্ত হয়ে পড়া। ” (ক্বিমিয়ায়ে সা’য়াদাত-৪/১৯৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫১)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫২)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার: মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৩)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৪)

ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৫৫)