‘থার্টিফার্স্ট নাইট’, ‘ভ্যালেইনটাইন ডে’ আর ‘পহেলা বৈশাখের’ নামে হুজ্জোতির জন্য ধর্মব্যবসায়ীদের কৌশলগত নিষ্ক্রীয়তা, স্বার্থবাদী মৌসুমী রাজনৈতিক তৎপরতা এবং সংস্কৃতি বিপননকারীদের দূরভিসন্ধিতা ও মধ্যবিত্তের তত্ত্ব-তালাশহীন প্রবণতা তথা হুজুগে মাতা প্রবৃত্তিই দায়ী-২

সংখ্যা: ১৬৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

ঊহপুপষড়ঢ়ধফরধ ইৎরঃধহরপধ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, ‘প্রাচীন ভারতীয় ও বিদেশী সনের পাশাপাশি মোঘল সম্রাট আকবর কয়েকটি নতুন সনের প্রচলন করেন। তন্মধ্যে বাংলাদেশের জন্য বাংলা সন, উড়িষ্যা এলাকার জন্য আমলী সন, বিলায়েতী, ফসলি বা মৌসুমি, অঞ্চল বিশেষের জন্য, খুরাশান, মহারাষ্ট্র এলাকার জন্য এবং তার রাজ্য সন হিসেবে ইলাহী সন’।

সম্রাট আকবরের রাজস্ব কর্মচারীরা অনুধাবন  করেছিলেন যে, চান্দ্র সনে চন্দ্রের অস্থিরতার কারণে প্রতিবছর নির্দিষ্ট মৌসুমে নির্দিষ্ট দিন খাজনা আদায় ব্যবস্থায় বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই তারা সৌর সনভিত্তিক একটি নতুন সন প্রবর্তনের জন্য সম্রাটের নিকট আবদার করেন। ফলে সম্রাট নিজেও হিজরী তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে অসুবিধার কথা বিবেচনা করে অবিলম্বে এ বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এ প্রসঙ্গে সম্রাট আকবরের বন্ধু ও মন্ত্রী আবুল ফজল তার আকবরনামা গ্রন্থে বলেছেন,

ঞযব ৎবঢ়বধঃবফ ৎবঢ়ৎবংবহঃধঃরড়হ ড়ভ ঃযব. নড়ফু ড়ভ সবহ (ঃযব মৎবধঃ ড়ভভরপবৎং ড়ভ ঃযব ঈড়ঁৎঃ) ধহফ ধ ৎবমধৎফ ভড়ৎ ঃযধরৎ ঢ়বঃরঃরড়হ ঢ়ৎবাধরষবফ ধহফ বিধঃ ধপপবঢ়ঃবফ ড়ৎফবৎ ধিং রংংঁবফ ঃযধঃ ঃযব হবি ুবধঃ যিরপয ভষষবিফ পষড়ংব ঃড় ঃযব ুবধৎ ড়ভ ঃযব ধপপবংংরড়হ ংযড়ঁষফ নব সধফব ঃযব ভড়ঁহফধঃরড়হ.

তিনি আরো নির্দেশ দান করেন যে,

যিবৎব ধং রহ ঃযব ধষসধসধপ পঁৎৎবহঃ রহ রহফরধ ঃযব ঁবধৎং বিৎব ংড়ষধঃ ধহফ ঃযব সড়হঃযং ষঁহবৎ. বি ড়ৎফবৎবফ ঃযধঃ সড়হঃযং ড়ভ ঃযব হবি বৎধ ংযড়ঁষফ নব ংড়ষধৎ.

অর্থাৎ যেহেতু ভারতের প্রচলিত সনগুলো সৌর পদ্ধতির এবং তার মাসগুলো চান্দ্র পদ্ধতির, তাই আমার নির্দেশ এই যে, প্রস্তাবিত সনটি যেন পূর্ণাঙ্গ সৌর পদ্ধতির হয়।

সম্রাট আকবরের এই যুগান্তকারী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দায়িত্ব অর্পিত হয় সম্রাটের দরবারের রাজস্ব কর্মকর্তা আমির ফতেহ উল্লাহ শিরাজীর উপর।

আমীর ফতেহ উল্লাহ শিরাজী তার  উদ্ভাবিত বাংলা সনে মাসের নামসমূহ রেখেছিলেন শকাব্দের মাসের নামসমূহ থেকে প্রায় অভিন্ন করে। নিম্নোক্তভাবে বিষয়টি দেখা যেতে পারে।

১. বাংলা- বৈশাখ, শকাব্দ- বৈশাখ, ব্যুৎপত্তি- বিশাখা নক্ষত্র

২. বাংলা- জ্যৈষ্ঠ, শকাব্দ- জেষ্ঠ, ব্যুৎপত্তি- জেষ্ঠা নক্ষত্র

৩. বাংলা- আষাঢ়, শকাব্দ- আষাঢ়, ব্যুৎপত্তি- আষাঢ় নক্ষত্র

৪. বাংলা- শ্রাবণ, শকাব্দ- শাওন, ব্যুৎপত্তি- শ্রাবণা নক্ষত্র

৫. বাংলা- ভাদ্র, শকাব্দ- ভাঁদো, ব্যুৎপত্তি- ভাদ্রপাদ নক্ষত্র

৬. বাংলা-আশ্বিন, শকাব্দ- কুনওয়ার, ব্যুৎপত্তি- আশ্বিনী নক্ষত্র

৭. বাংলা-কার্তিক, শকাব্দ- কার্তিক, ব্যুৎপত্তি- কির্ত্তিকা নক্ষত্র

৮. বাংলা- অগ্রহায়ণ, শকাব্দ- আঘান, ……

৯. বাংলা- পৌষ, শকাব্দ- পৌষ, ব্যুৎপত্তি- পুষ্যা নক্ষত্র

১০. বাংলা- মাঘ, শকাব্দ- মাঘ, ব্যুৎপত্তি- মঘা,

১১. বাংলা- ফাল্গুন, শকাব্দ- ফাগুন, ব্যুৎপত্তি- ফগুনী

১২. বাংলা- চৈত্র, শকাব্দ- চৈত, ব্যুৎপত্তি- চিত্রা।

পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শকাব্দ ভারতবর্ষের একটি প্রাচীন সন। আনুমানিক ৭৮ খ্রিস্টাব্দে শকায়ী শালিবাহন নামে একজন রাজার স্মৃতিকে সামনে রেখে শককলা বা শকাব্দের প্রচলন করা হয়, এ প্রসঙ্গে ১০৩০ খ্রিস্টাব্দে রচিত আলবেরুনী ভারত ভারতত্ত্ব গ্রন্থে লিখেছেন যে, ‘শকাব্দ অর্থাৎ শককাল রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজস্বকালের ১৩৫ বছর পর থেকে শুরু হয়েছে। আসমুদ্রহিমাচল ভারতবর্ষের মধ্যস্থিত আর্যাবর্তে বাস স্থাপন করে এই শক রাজা সে দেশের উপর প্রভুত্ব করেছিল এবং ভারতীয়দেরকে শক ভিন্ন অন্য কোনও জাতির সাথে নিজ সম্বন্ধের পরিচয় দেয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। অনেকে বলেন, শক রাজা আলমানসুয়ার এক শূদ্র ছিল। আবার কারও কারও মতে তিনি ভারতীয় ছিলেন না। পশ্চিমের কোন দেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন। ভারতীয়রা তার হাতে খুবই নির্যাতিত হয়েছিল। অবশেষে পূর্ব দেশ থেকে সাহায্য পেয়ে রাজা বিক্রমাদিত্য শক রাজাকে পরাজিত ও নিহত করেন। আলবেরুনীর মতে শক রাজার নিহত হবার সময়কালে উপর ভিত্তি করে শকাব্দ সন গণনা হয়ে আসছে। শকাব্দ সর্ব ভারতীয় সন হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও বর্ষ শুরু করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন মাস ব্যবহার করা হত। আলবেরুনীর মতে, ভারতবর্ষের জ্যোতিষীরা শকাব্দের বর্ষ শুরু করতেন চৈত্র মাসে, কাশ্মীর এলাকার লোকজন বর্ষ শুরু  করতেন অগ্রহায়ণ মাসে। তবে শকাব্দের বৎসর সৌর ভিত্তিক হলেও মাসগুলো গণনা হত চান্দ্রভিত্তিক।

আমির ফতেহ উল্লাহ শিরাজী কর্তৃক উদ্ভাবিত সনসমূহের মূল কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু ঐ সনগুলোর দিন মাস ইত্যাদি নামকরণ ও বিন্যাস করা হয়েছিল ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে। যেমন- বাংলা সনের মাস ও দিন গণনার পদ্ধতি শকাব্দের সাথে মিল করে করা হয়েছে অন্যদিকে এলাহী সনের বিন্যাস করা হয়েছে পারস্য গুরনানী পদ্ধতিতে। আইন-ই আকবরী গ্রন্থে এলাহী সনের নামগুলো লিপিবদ্ধ রয়েছে।  নিম্নে বাংলা, হিজরী ও ইলাহী সনের নামগুলো উদ্ধৃত করা হলো:

১. হিজরী- মুর্হরম, এলাহী- কেরীদুন, বাংলা- বৈশাখ

২. হিজরী- সফর, এলাহী- আদিবিহিস্ত, বাংলা- জ্যৈষ্ঠ

৩. হিজরী- রবীউল আউয়াল, এলাহী- খুর্দাদ, বাংলা- আষাঢ়,

৪. হিজরী- রবীউস সানী, এলাহী- তীর, বাংলা- শ্রাবণ,

৫. হিজরী- জুমাদাল ঊলা, এলাহী- সারদাদ, বাংলা- ভাদ্র

৬. হিজরী- জুমাদিউস সানী, এলাহী- শাহরিয়াম, বাংলা- আশ্বিন

৭. হিজরী- রজব, এলাহী- সিহির, বাংলা- কার্তিক,

৮. হিজরী- শাবান, এলাহী- আকান, বাংলা- অগ্রহায়ণ

৯. হিজরী- রমাদ্বান, এলাহী- আজর, বাংলা- পৌষ

১০. হিজরী- শাওয়াল,  এলাহী- দে, বাংলা- মাঘ

১১. হিজরী- জিলক্বদ, এলাহী- বাহমন, বাংলা- ফাল্গুন

১২. হিজরী- জিলহজ্ব, এলাহী- ইসপন্দর, বাংলা- চৈত্র।

উল্লেখযোগ্য যে, আমীর ফতেহ উল্লাহ শিরাজীর উদ্ভাবিত প্রতিটি সন স্বাধীন ও স্বমর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়।

বর্তমান বাংলা সনঃ

বাংলা সন আসলে হিজরী সনেরই বংশধর। হিজরী সাল শুরু হয় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হিজরতের দিন থেকে। আর গণনা শুরু হয় দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর ফারুক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নির্দেশে ১৬ জুলাই ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে। বাংলা সালও কিন্তু এই একই তারিখ থেকেই গণনা শুরু হয়। মোঘল সম্রাট আকবর সিংহাসনে বসেন ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে। তারই নির্দেশে প-িত আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী উদ্ভাবন করেন এই সাল। সামঞ্জস্য রাখেন হিজরী সালের সঙ্গে। অর্থাৎ বাংলা সন ও হিজরী সনের গণনা শুরু হয় একই দিন  থেকে। কিন্তু  বর্তমানে হিজরী ১৪২৮ সন আর বাংলা ১৪০৭। কেন এই পার্থক্য? এর কারণ, হিজরী সন চলে চান্দ্রমাস অনুযায়ী। আর এক চান্দ্র মাস ২৯ অথবা ৩০ দিনে। সেই হিসাবে ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে এক চান্দ্র বছর বা এক হিজরী সন হয়। অন্যদিকে বাংলা মাস ৩৬৫ দিনেই। ফলে হিজরী সাল প্রতি বছর ১০ বা ১১ দিন পিছিয়ে পড়ে বাংলা সন থেকে। তাই বর্তমানে ১৪ বছর পিছিয়ে আছে বাংলা সন। এই পিছিয়ে পড়ার কারণ হলো, বাংলা সন ৯৬৩ হিজরী, ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে শরু করে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কোনরূপ ব্যতিক্রম করা হয়নি। উভয়ের চলার পথ বদলে দেওয়া হয় ৯৬৪ হিজরী/১৫৫৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে। অর্থাৎ হিজরী হিজরী সনই রয়ে যায়। আর বাংলা সন রূপ পায় সৌর পদ্ধতিতে। ফলে এই দুটো সনের মধ্যে ১০/১১ দিনের যে ব্যবধান তা মিটে যায়। চান্দ্র বছর প্রতি চলতি বছরে প্রায় ১১ দিন বাড়তে বাড়তে ৩ বছরে পার্থক্য দাঁড়ায় ৩২ দিনের বেশি। তখন একটি চান্দ্র মাস বাদ দিয়ে সৌর বছরের সঙ্গে মিল করাহয়। এই মিলকে ‘সাবনমিতি’ এবং অতিরিক্ত মাসটিকে ‘মলমাস’ বলা হয়। পুরো ৩৩ বছর পার হওয়ার পর হিজরী ও বাংলা সনে পার্থক্য হয় ১ বছরের। এভাবে ৪১৮ বছরে পার্থক্য দাঁড়ায় প্রায় ১৩ বছরের। তবে লক্ষ্য করার বিষয় যে,  বাংলা ও হিজরী সনের জন্ম ৬২২ খ্রিস্টীয় সনে। আর বাংলা সনের প্রচলন হয় ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে, ৯৬৩ বছর পর। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ-ভারত উপমহাদেশে সৌর বছর চালু ছিল। কিন্তু মাস গণনা হতো চান্দ্র পদ্ধতিতে। কিন্তু মাস গণনা করা হতো এক পূর্ণিমা থেকে আর এক পূর্ণিমা পর্যন্ত। তিথির হিসাবে। এক মাসে মোট ৩০টি তিথি হতো। তিথির হিসাবে সাড়ে ২৯ দিনে মাস। কেননা, তিথি সাধারণত একদিনের একটু ছোট। এজন্য এক বছরের ৩৬০ তিথিতে ৩৫৪ দিন ৯ ঘণ্টার বেশি হয়না। তাই ৩৫৫ দিনে ১ চান্দ্র বছর। আর সৌর বছর ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টায়। সম্রাট আকবর এই বাড়তি দিনগুলোকে সমতায় আনার জন্য মলমাস ও সাবনমিতির ওপর জোর দিয়েছিলেন। তাই বলা হয়, সম্রাট আকবরের এই বাংলা সনই ত্রুটিমুক্ত করেছিল দেশীয় প্রাচীন সনগুলোকে।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বাদশাহ আকবর এই বাংলা সনের প্রবর্তন করেছিলেন কিন্তু আজকের পহেলা বৈশাখের উৎসবের প্রবর্তন করেননি।

পহেলা বৈশাখের উৎসবের আজকের তথাকথিথ চেতনাবোধের উন্মেষ  তখন আদৌ হয়নি।

কাজেই বাংলা সনের প্রথম দিন হিসেবে আজকে পহেলা বৈশাখ উৎসবের বিষয়টি রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়; একে সার্বজনীন উৎসব বলা আরো বোকামি বটে।

-মুহম্মদ ওলীউল্লাহ, ঢাকা।

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩২

কোকাকোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পর্কে উন্মোচিত সত্য-১৮

‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’- একটি সূক্ষ্ম ও গভীর ষড়যন্ত্রের প্রক্রিয়া অথচ নিশ্চুপ তথাকথিত খতীব, মহিউদ্দীন, আমিনী ও শাইখুল হাদীছ গং তথা তাবত ধর্মব্যবসায়ীরা- (১)

মওদুদীর নীতি থেকেও যারা পথভ্রষ্ট সেই জামাত- জামাতীদের জন্যও ভয়ঙ্কর মুনাফিক॥ আর সাধারণের জন্য তো বলারই অপেক্ষা রাখেনা

প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২