সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৫৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

মাষ্টার মুহম্মদ ইমদাদুর রহমান

সদর, সুনামগঞ্জ।

সুওয়াল:  গত ১লা জুলাই-২০০৬ ঈসায়ী ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় এসেছে, বায়তুল মোর্কারমের খতীব বলেছে, “আগামী নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন আর যারা ভোট দিবেন উভয়ের জন্যই ইসলামে কিছু বিধি-বিধান রয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। এটি উপযুক্ত ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করবে। …. এ সম্পর্কে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জেনে শুনে দল বা ব্যক্তির চাপে অথবা টাকার বিনিময়ে অযোগ্য ও অসৎ লোককে ভোট দিলো সে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খেয়ানত করলো।”

এখন আমার জানার ও বুঝার বিষয় হলো-

১.  আল্লাহ পাক কুরআন শরীফের কোন্ সূরার কত নম্বর আয়াত শরীফে ‘ভোটকে আমানত বলে উল্লেখ করেছেন।’ অর্থাৎ আল্লাহ পাক সত্যিই কি ভোটকে আমানত বলেছেন?

২. খতীব ছাহেব সৎলোককে ভোট দেয়া সম্পর্কিত যে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছেন তা কোন্ হাদীছ শরীফের কিতাবে উল্লেখ আছে? অর্থাৎ হাদীছ শরীফে ভোট দেয়ার কথা উল্লেখ আছে কি? আর খতীব ছাহেবের উক্ত বক্তব্য সঠিক ও শরীয়তসম্মত হয়েছে কি?

৩. ভোট, নির্বাচন ও প্রার্থী হওয়া সম্পর্কে শরীয়তের বিধান কি?

উল্লিখিত বিষয়গুলোর কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: ভোট, নির্বাচন সম্পর্কিত তথাকথিত খতীব ছাহেবের উপরোক্ত বক্তব্য মোটেও সঠিক ও শরীয়তসম্মত হয়নি। বরং সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন ও কুফরীমূলক হয়েছে।

নিম্নে তথাকথিত খতীব ছাহেবের উল্লিখিত বক্তব্যের কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে শরীয়তসম্মত জাওয়াব দেয়া হলোঃ

তথাকথিত খতীবের দ্বিতীয়

বক্তব্যের শরীয়তসম্মত জাওয়াব

খতীব দ্বিতীয়ত বলেছে- “এ সম্পর্কে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জেনে শুনে অসৎ লোককে ভোট দিল সে আল্লাহ পাক ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিয়ানত করলো।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, তথাকথিত খতীবের এ বক্তব্যও কাট্টা কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ সে সরাসরি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যারোপ করেছে। কেননা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অনুরূপ কোন বক্তব্যই হাদীছ শরীফের কোথাও উল্লেখ নেই। খতীবের প্রতি  চ্যালেঞ্জ রইলো, যদি সে সত্যবাদী হয়ে থাকে তবে প্রমাণ করুক কোন হাদীছ শরীফে ‘ভোটের ব্যাপারে” অনুরূপ বক্তব্য উল্লেখ আছে। খতীব তা কস্মিনকালেও প্রমাণ করতে পারবে না।

উল্লেখ্য, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের অসংখ্য স্থানে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যারোপ করার ভয়াবহ পরিণতি ও কঠিন আযাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা কথা বলে বা বানিয়ে বানিয়ে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে সে অবশ্যই কুফরী করে কঠিন আযাবের উপযুক্ত হয় আর যে আযাবের উপযুক্ত হয় সেই চির জাহান্নামী হয়।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক সূরা নহলের ১১৩নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,

لقد جاءهم رسول منهم فكذ بوه فا خذ هم العذ اب وهم ظلمون.

অর্থঃ “তাদের নিকট তাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল আগমণ করেছিলেন, অনন্তর তারা (কাফিরেরা) তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করলো। তখন আযাব এসে তাদেরকে পাকড়াও করলো এবং নিশ্চিত তারাই ছিল জালিম।”

এ আয়াত শরীফ এটাই প্রমাণ করে যে, যারা কাফির ও জালিম তারা রসূলের প্রতি মিথ্যারোপ করে অর্থাৎ রসূল যা বলেন নাই তা বলেছেন বলে ও রসূল যা বলেছেন তা বলেন নাই বলে, মূলতঃ এদের জন্যই রয়েছে কঠিন আযাব বা শাস্তি। আর যারা আযাবের উপযুক্ত তারাই জাহান্নামী। তাই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে উম্মতদেরকে এ ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابن عبا س رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اتقوا الحد يث عنى الا ماعلمتم فمن كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.

অর্থঃ “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার পক্ষ হতে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। যে পর্যন্ত না তা তোমরা আমার বলে নিশ্চিত হবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بلغوا عنى ولو اية وحد ثوا عن بنى اسرا ئيل ولا حرج ومن كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.

অর্থঃ “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার পক্ষ হতে মানুষের নিকট পৌঁছে দাও যদি একটি আয়াত শরীফ হয়। বণী ইসরাঈলের নিকট হতে শুনা কথা বলতে কোন আপত্তি নেই। তবে যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার নামে মিথ্যা বললো, সে যেন তার স্থান জাহান্নামেই নির্ধারণ করে নিলো।” (বুখারী, মিশকাত)

অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن سمرة بن جندب والمغيرة بن شعبة رضى الله تعالى عنهما قالا قال رسول الله سلى الله عليه وسلم من حدث عنى بحديث يرى انه كذب فهو احد الكاذبين.

অর্থঃ “হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব ও মুগীরা ইবনে শু’বাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার নামে এমন কথা বললো যা সে মিথ্যা মনে করে তবে সেও মিথ্যুকদের একজন।” (মুসলিম, মিশকাত)

আর মিথ্যাবাদীদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,

لعنت الله على الكذ بين

অর্থঃ- “মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক-এর লা’নত।” (সূরা আলে ইমরান-৬১)

والله يشهد ان المنفقين لكذ بون.

অর্থঃ “আল্লাহ পাকই সাক্ষী যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী।” (সূরা মুনাফিকুন-১)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা অকাট্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, যারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা কথা বলে বা বানিয়ে বানিয়ে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব যা বলেন নাই তা বলেছেন বলে ও যা বলেছেন তা বলেন নাই বলে তারা চরম জালিম, মিথ্যাবাদী, মুনাফিক ও কাট্টা কাফির। তাদের স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে যে মিথ্যা বলে সে কুফরী করে, আর যে কুফরী করে সে মুরতাদ হয়ে যায়।

আর শরীয়তের ফতওয়া হলো, যে সমস্ত মুসলমান কুফরী করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়। আর যারা মুরতাদ হয়ে যায় তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। শরীয়তে তাদের তওবা করার জন্য তিনদিন সময় দেয়া হয়েছে অন্যথায় তাদের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড।

সুতরাং তথাকথিত খতীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে ও হাদীছ শরীফের নামে সুস্পষ্ট মিথ্যা বলেছে যা কাট্টা কুফরী হয়েছে। কারণ এটা কোন  হাদীছ শরীফ নয়। বরং এটা তথাকথিত খতীবের সম্পূর্ণ বানানো কথা। অর্থাৎ সে হাদীছ শরীফ জালকারী।

আর খতীব যদি বলে যে, “আমি তো ভাবার্থে বা ব্যাখ্যামূলক অর্থে বলেছি।”

তার একথা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবেনা। কারণ সে সরাসরি বলেছে, “এ সম্পর্কে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জেনে শুনে অসৎ লোককে ভোট দিল সে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিয়ানত করল।”

কাজেই, এখানে ভাবার্থে বা ব্যাখ্যামূলকভাবে বলেছি এটা বলার কোন সুযোগ নেই। এরপরেও যদি আমরা একথা ভাবার্থে বা ব্যাখ্যামূলক হিসেবে ধরি তথাপিও খতীবের উক্ত বক্তব্য কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ নির্ভরযোগ্য কোন হাদীছ শরীফের শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থে ভোটের কোন কথাই উল্লেখ নেই। এটা খতীবের সম্পূর্ণই মনগড়া ও বানানো ব্যাখ্যা।

উল্লেখ্য, কুরআন শরীফের তাহরীফ, তাবদীল অর্থাৎ পরিবর্তন, পরিবর্ধন যেমন নাজায়িয ও কুফরী তেমনি হাদীছ শরীফেরও একই হুকুম। কাজেই, বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, উভয় দিক থেকেই খতীবের উপরোক্ত বক্তব্য কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ সে আল্লাহ পাক সম্পর্কে, কুরআন শরীফ সম্পর্কে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে এবং হাদীছ শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে। এখন তার দায়িত্ব হলো, খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করা। অন্যথায় তার পিছনে নামায পড়া কারো পক্ষে জায়িয হবেনা। যদি কেউ পড়ে তবে তার নামায শুদ্ধ হবে না। সে নামায তরক্বের গুনাহে গুনাহগার হবে।    (চলবে)

মুহম্মদ আব্দুল মালেক

কাউখালী, পিরোজপুর।

সুওয়াল:  গত ২১ এপ্রিল/২০০৬ ঈসায়ী ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকায় ‘সাঈদীর ধরনা’ শিরোনামে প্রথম পাতায় ছোট্ট একটি খবর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘পিরোজপুর-১  আসনের সাংসদ ও জামাতে ইসলামীর সংসদীয় দলের নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আগামী নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট আদায়ের লক্ষ্যে মন্দির-আশ্রমে ধর্ণা দিতে শুরু করেছে। বুধবার পিরোজপুর পৌর এলাকার ঘুমুরিয়া শ্রী শ্রী বিপিন চাঁদ ঠাকুরের ১৪৩তম জন্মবার্ষিকী ও মতুয়া সম্মেলনে সাঈদী উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখে এবং আশ্রমে ৫০ হাজার টাকা অনুুদানের ঘোষণা দেয়। এর কিছুদিন আগে সে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে পিরোজপুুর রামকৃষ্ণ আশ্রম, কালীবাড়ি মন্দির, বিপিন চাঁদ সেবাশ্রমসহ বিভিন্ন আশ্রম ও মন্দিরে আলোচনা অনুষ্ঠানে মিলিত হয়।”

এখন আমার সুওয়াল হলো- মাওলানা সাঈদীর হিন্দু ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী ও মতুয়া সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তাদের প্রতি প্রশংসামূলক বক্তব্য রাখা এবং হিন্দু আশ্রমে ৫০ হাজার টাকা অনুদানের ঘোষণা দেয়া অর্থাৎ তাদেরকে সাহায্য করার ব্যাপারে শরীয়তের কি ফতওয়া? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব:  উপরোক্ত সুওয়ালের পরিপ্রেক্ষিতে দু’টা বিষয় ফুঠে উঠেঃ

১. কাফির-মুশরিক তথা বিধর্মীদেরকে কুফরী-শেরেকীতে দৃঢ় থাকার পরও তাদের প্রশংসা করা। ২. কুফরী ও শেরেকীতে সাহায্য-সহযোগীতা করা।

২. কাফির-মুশরিক তথা বিধর্মীদেরকে কুফরী-শেরেকীতে দৃঢ় থাকার পরও তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করা কাট্টা হারাম ও কুফরী।

কেউ বলতে পারে যে, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়া হলে তো দোষের কিছু নেই। এর জাওয়াবে বলতে হয়, এক্ষেত্রেও দু’টি অবস্থা (ক) গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র শরীয়ত সম্মত নয়। সেহেতু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পক্ষ  থেকে কাফির মুশরিকদের সাহায্য বা দান করা হলে এজন্য দায়ি হবে সরকার। তবে যে সাহায্য বা দানের ঘোষণা দিল সে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার কারণে সেও কুফরী গুনাহে গোনাহগার হবে। (খ) আর ব্যক্তিগতভাবে কোন মুসলমানের জন্য কাফির মুশরিকদের কুফরী ও শিরেকী কাজে সাহায্য বা দান করা জায়িয নেই। তা সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কাজেই মাওলানা সাঈদীর হিন্দু আশ্রমে ৫০ হাজার টাকা অনুদানের ঘোষণা দেয়া কুফরী হয়েছে। কারণ হিন্দু সম্প্রদায় তথা কাফির-মুশরিকের আশ্রমে অনুদানের ঘোষণা দেয়ার অর্থ কুফরীর মধ্যে সাহায্য করা। এটাও কাট্টা কুফরী।

কেননা আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

تعاونوا على البر وا لتقوى ولا تعاونوا على الا ثم والعد وان واتقوا الله ان الله شد يد العقاب

অর্থঃ- “তোমরা পরস্পর পরস্পরকে নেক কাজ ও পরহিযগারীর মধ্যে সাহায্য কর, পাপ ও শত্রুতার মধ্যে সাহায্য করোনা। এ বিষয়ে আল্লাহ পাককে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠোর শাস্তিদাতা।” (সূরা মায়িদা-২)

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে রয়েছে,

عن لعرس بن عميرةرضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال اذا عملت الخطيئة فى الارض من شهد ها فكرهها كان كمن غاب عنها ومن غاب فر ضيها كان كمن شهدها.

অর্থঃ- হযরত উরস্ বিন উমাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যখন পৃথিবীতে কোথাও কোন পাপ কাজ সংঘটিত হয়, তখন যে ব্যক্তি উক্ত স্থানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও উহাকে ঘৃণা করে, সে ব্যক্তি এরূপ যেন উহা হতে দূরে ছিল। আর যে ব্যক্তি দূরে থেকেও উক্ত পাপের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সে এরূপ যেন তথায় উপস্থিত ছিল।” (আবূ দাউদ, মিশকাত)

অর্থাৎ গুণাহ্র কাজ যে স্থানেই সংঘটিত হোক না কেন, তাতে যে ব্যক্তি সম্মতি পেশ করবে অথবা সমর্থন করবে, সে ব্যক্তিই সেই গুণাহে গুণাহ্গার হবে। সেখানে তার উপস্থিত থাকা বা না থাকা উভয়টাই বরাবর।

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.

অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)

এ প্রসঙ্গে হিন্দুস্থানের একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হিন্দুস্থানে একজন জবরদস্ত আল্লাহ পাক-এর ওলী ছিলেন। যিনি ইন্তিকালের পর অন্য একজন বুযুর্গ ব্যক্তি তাঁকে স্বপে¦ দেখে জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহ পাক-এর ওলী, আপনি কেমন আছেন?”

তখন সেই আল্লাহ্ পাক-এর ওলী জাওয়াবে বলেন, “আপাততঃ আমি ভালই আছি, কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তখন স্বপ¦দ্রষ্টা ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি আমাকে আপনার সেই কঠিন অবস্থা সম্পর্কে বলবেন? আল্লাহ্ পাক-এর ওলী জবাব দিলেন অবশ্যই বলবো। কারণ তাতে যমীনবাসীদের জন্য শক্ত ইবরত বা নছীহত রয়েছে। এরপর বলা শুরু করলেন, আমার ইন্তেকালের পর আমাকে ফেরেশ্তারা সরাসরি আল্লাহ্ পাক-এর সম্মুখে পেশ করেন। আল্লাহ্ পাক ফেরেশ্তাদের বললেন, “হে ফেরেশ্তাগণ তোমরা কেন তাকে এখানে নিয়ে এসেছ”? ফেরেশ্তাগণ বললেন, হে আল্লাহ্ পাক! আমরা তাকে খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাত করার জন্য নিয়ে এসেছি।

একথা শুনে আল্লাহ্ পাক বললেন, “তাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, তার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে। কেননা সে পূঁজা করেছে। সেকথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং আমার সমস্ত শরীর ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগল।  তখন আমি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট আরজু করলাম, “আয় আল্লাহ পাক! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো সব সময়ই আপনার এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফরমাবরদার ছিলাম। কখনও ইচ্ছাকৃত নাফরমানি করিনি আর পূজা করার তো প্রশ্নই উঠেনা।’ আয় আল্লাহ পাক! পূজা তো দূরের কথা আমি কখনো মন্দিরের আশ-পাশ দিয়েও হাঁটিনি।  তখন আল্লাহ পাক বললেন, “তুমি সেদিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন হিন্দুস্থানে হোলি পূঁজা হচ্ছিল। তুমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলে। তোমার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে আশে-পাশে সমস্ত গাছ-পালা, তরুলতা, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ, বাড়ী-ঘর, সব কিছুতেই রং দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় তোমার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ (গাধা) হেঁটে যাচ্ছিল যাকে রং দেয়া হয়নি। তখন তুমি পান চিবাচ্ছিলে, তুমি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পিক বা পানের রঙ্গীন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলে- হে গর্দভ! তোমাকে তো এই হোলি পুজার দিনে কেউ রং দেয়নি তাই আমি তোমাকে রং দিয়ে দিলাম। এতে কি তোমার পুজা করা হয়নি? তুমি কি জান না যে আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

من تشبه بقوم فهو منهم.

 “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” সুতরাং তোমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে।

যখন আল্লাহ পাক এই কথা বললেন, তখন আমি লা জওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বললাম, “আয় আল্লাহ পাক! আমি তো বুঝতে পারিনি, আর আমাকে তো কেউ বুঝিয়েও দেয়নি। আমার অন্তরও সাড়া দেয়নি। হে আল্লাহ্ পাক! আমাকে আপনি দয়া করে ক্ষমা করুন।”

কিছুক্ষণ পর আল্লাহ্ পাক বললেন, “হ্যাঁ, তোমার অন্যান্য আমল অর্থাৎ তুমি যেহেতু বুঝতে পারনি এবং তোমাকে কেউ বুঝিয়েও দেয়নি আর এ ব্যাপারে তোমার অন্তরও সাড়া দেয়নি ইত্যাদি কারণে তোমাকে আজ ক্ষমা করা হলো।

অতএব, মুসলমানদের জন্য কোন বিধর্মীদের ছানা-ছিফত করা এবং তাদের আশ্রম অনুষ্ঠানে সাহায্য-সহযোগিতা করা সম্পূর্ণরূপে কুফরী।

শরীয়তের ফতওয়া হলোঃ কোন মুসলমান কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়।  মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে- তার যিন্দিগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। বিয়ে করে থাকলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তার ওয়ারিছ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তার তওবার জন্য সময়সীমা হচ্ছে তিনদিন। এর মধ্যে তওবা না করলে ইসলামী খিলাফতের তরফ থেকে তার একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। সে মারা গেলে তার জানাযা, দাফন, কাফন কোনটিই জায়িয নেই। বরং তাকে কুকুর-শৃগালের মত গর্তে পুঁতে রাখতে হবে।

{দলীলসমূহ- (১) আহকামুল কুরআন লিল জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) রুহুল মায়ানী, (৪)  রুহুল বয়ান, (৫) মাযহারী, (৬) কবীর, (৭) খাযেন, (৮) বাগবী, (৯) আহমদী, (১০) ইবনে কাছীর, (১১) তাবারী, (১২) যাদুল মাছীর, (১৩) মুসনদে আহমদ (১৪) সুনানে আবু দাউদ (১৫) মিশকাত, (১৬) বজলুল মাযহুদ, (১৭) আওনুল মা’বুদ (১৮) মিরকাত, (১৯) আশয়াতুল্ লুময়াত, (২০) লুময়াত, (২১) ত্বীবী, (২২) তালীকুছ্ ছবীহ, (২৩) মুযাহিরে হক্ব, (২৪) ফিকহুল আকবর, (২৫) শরহে আকাঈদে নছফী, (২৬) আকাঈদে হাক্কা, (২৭) তাকমীলুল ঈমান ইত্যাদি}

মুহম্মদ রুহুল ইসলাম, শান্তিবাগ, ঢাকা।

মুহম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন (শিশির), নোয়াখালী।

মুহম্মদ কাওছার আলী, বরিশাল।

সুওয়ালঃ  আমরা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফযীলতের কথা জেনে তা পালন করে আসছি। কিন্তু ইদানিংকালে সৌদী আরবের  দারুল ইফতার সাবেক প্রধান আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ বিন বা’য বলেছে, “বর্তমানে প্রচলিত বিদ্য়াত সমূহের মধ্যে একটি বিদ্য়াত হচ্ছে শবে বরাত পালন করা এবং এ দিনে রোযা রাখা।” (সূত্রঃ সাপ্তাহিক আরাফাত, ৩০তম সংখ্যা)

বাইতুল মোকাররমের খতীব উবায়দুল হক বলেছে, “যারা শুধুমাত্র শবে বরাত উপলক্ষে দিনে রোযা রাখে এবং রাতে নফল ইবাদত এবং আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠানাদী পালন করে তারা এটাকে প্রথা বা একটি রসম-রিওয়াজে পরিণত করেছে। এছাড়া সে আরো বলে, “যারা ইসলামকে রসম-রিওয়াজ ও প্রথা হিসেবে ব্যবহার করবে তারা আল্লাহ পাক-এর কাছ থেকে কোন প্রকার খায়ের বরবত হাছিল করতে পারবে না। (দৈনিক সংগ্রাম, ৬-১২-’৯৭ ঈঃ)

জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের উপনেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী বলেছে, “পবিত্র শবে বরাত মানুষের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনেনা। শবে বরাতের কোন গুরুত্ব নেই। শরীয়তে শবে বরাতের কোন জায়গা নেই। (দৈনিক সংবাদ, ১৩-০৩-’৯৪ ঈঃ)

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, শবে বরাত সম্পর্কে উক্ত ব্যক্তিত্রয়ের বক্তব্য কি সঠিক? যদি সঠিক না হয় তাহলে তাদের ব্যাপারে শরীয়তের কি হুকুম?

জাওয়াবঃ ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে উক্ত ব্যক্তিত্রয়ের বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরী। কারণ, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শবে বরাতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দিগী করেছেন এবং দিনের বেলা রোযা রেখেছেন। আর উম্মতকেও এ মুবারক রাতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দিগী করার এবং দিনে রোযা রাখার জন্য আদেশ করেছেন। যেমন এ মর্মে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فاذا هو بالبقيع فقال اكنت تخافين ان يحيف الله عليك ورسوله قلت يا رسول الله انى ظننت انك اتيت بعض نسا ئك فقال ان الله تعالى ينزل لبلة النصف من شعبان الى السماء الد نيا فيغفر لا كثر من عدد شعر غنم كلب.

 অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত্রিযাপন করছিলাম। এক সময় তাঁকে বিছানায় না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়ত অন্য কোন আহলিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর হুজ্রা শরীফে গেছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে তাঁকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ্ পাক-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফে ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, আপনি কি মনে করেছেন, আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন! আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো আপনার অপর কোন আহলিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর নিকটে গেছেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বণী কল্বের মেষের গায়ে যত সংখ্যক পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, রযীন, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ, মিশকাত, মিরকাত)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت  ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الد نيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فا عافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.

অর্থঃ- “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বানের রাত উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন। অর্থাৎ রহমত খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর বা ছুবহে ছাদিক পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ, মিশকাত, মিরকাত)

হাদীছ শরীফের দ্বারা সাব্যস্ত হলো যে, শবে বরাত বা বরাতের রাতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দিগী করা এবং দিনের বেলা রোযা রাখা খাছ সুন্নত। আর এ সুন্নত পালনের জন্য উম্মতকে আদেশ দেয়া হয়েছে। আর পরিপূর্ণ খায়ের বরকত সুন্নতের মধ্যেই। সুন্নত পালনের যে কি গুরুত্ব তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

কাজেই, শবে বরাত পালন করাকে বিদয়াত বলা, প্রথা বা রসম-রিওয়াজ হিসেবে উল্লেখ করা, তা পালনে কোন প্রকার খায়ের-বরকত হাছিল হবেনা, কোন কল্যাণ বয়ে আনেনা, শরীয়তে এর কোন গুরুত্ব নেই, কোন স্থান নেই, ইত্যাদি বক্তব্য সবই কাট্টা গোমরাহী ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ, এসব বক্তব্যে একদিক থেকে সুন্নতের প্রতি ইহানত করা হয়েছে ও অপরদিকে সুন্নতকে অস্বীকার করা হয়েছে। অথচ সুন্নতকে ইহানত ও অস্বীকার করা হচ্ছে কুফরী। আর যে বা যারা কুফরী করে সে বা তারা কাট্টা কাফির হয়ে যায়।

যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لو تر كتم سنة نبيكم لكفر تم.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি তোমরা তোমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতকে তরক বা ইহানত অথবা  অস্বীকার করো তাহলে অবশ্যই তোমরা কুফরী করলে যার কারণে কাফির হয়ে যাবে।” (আবু দাউদ, মিশকাত, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ)

عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعا لى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لو تر كتم سنة نبيكم لضللتم.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যদি তোমরা তোমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতকে তরক  বা অস্বীকার অথবা ইহানত করো তাহলে তোমরা অবশ্যই গোমরাহ হয়ে যাবে।” (মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসায়ী, আহমদ, মিশকাত, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ)

আর আকাঈদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

اهانة السنة كفر.  “সুন্নতকে ইহানত করা কুফরী।”

উল্লিখিত হাদীছ শরীফ এবং আকাঈদের বর্ণনা দ্বারা সউদী আরবের দারুল ইফতার সাবেক প্রধান আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ ইবনে বা’য, বাইতুল মোর্কারমের খতীব উবাদয়দুল হক, জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের উপনেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর উপর উপরোক্ত ফতওয়া বর্তাবে।

শরীয়তের ফতওয়া হলোঃ কোন মুসলমান কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়ে যায়।  মুরতাদের শাস্তি হচ্ছে- তার যিন্দিগীর সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। বিয়ে করে থাকলে তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। হজ্জ করে থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তার ওয়ারিছ সত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে। তার তওবার জন্য সময়সীমা হচ্ছে তিনদিন। এর মধ্যে তওবা না করলে ইসলামী খিলাফতের তরফ থেকে তার একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। সে মারা গেলে তার জানাযা, দাফন, কাফন কোনটিই জায়িয নেই। বরং তাকে কুকুর-শৃগালের মত গর্তে পুঁতে রাখতে হবে।

উল্লেখ্য, ইবনে বা’য সে যেহেতু মৃত্যুবরণ করেছে সুতরাং তার আর কুফরী থেকে তওবা করার সুযোগ নেই। আর বাইতুল মোর্কারমের খতীব ও সাঈদী যেহেতু এখনো জীবিত আছে সুতরাং তাদের উচিত কুফরী বক্তব্য থেকে খালিছ তওবা-ইস্তিগ্ফার করা।

(‘শবে বরাত’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে পড়ূন ‘সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ’ মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১৩৫ থেকে ১৪৬তম সংখ্যা।)

[বি: দ্র:- অতি সত্ত্বর ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া আসবে ইনশাআল্লাহ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে।]

মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।

মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।

সুওয়াল: ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খণ্ডন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-

….. ৩. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম একটি নিম্ন শ্রেণীর কাজকেও বর্ণনা করতে সংকোচবোধ করেননি। আর মুনাজাত এমন এক কাজ যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযান্তে প্রকাশ্যভাবে পাঁচবার যদি করতেন তবে কেন তার কোন বর্ণনা করা হয়নি। …….

এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।

জাওয়াব: “ফরয নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার সপক্ষে কোন বর্ণনা নেই” হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন। কারণ পূর্ববর্তী সংখ্যায় প্রদত্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমানিত হয়েছে যে, “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করার স্বপক্ষে একটি, দুটি নয় বরং অসংখ্য ফে’লী ও ক্বওলী হাদীছ শরীফ রয়েছে।

          যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজেও ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন।

আর হাদীছ শরীফে রয়েছে বলেই অনুসরনীয় ইমাম, মুজতাহিদ তথা ফক্বীহগণ নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে এমনকি হাটহাজারী মৌলভীদের মুরুব্বীরা তাদের কিতাবে “ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব-সুন্নত বলে” ফতওয়া দিয়েছেন।

(ধারাবাহিক)

উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরাসহ সমস্ত দেওবন্দী মৌলভীরা যাকে হক্কানী আলিম, উস্তাজুল আসাতেযা, মুহাদ্দিছগণের মাথার তাজ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ বলে মুখে ফেনা তুলে তাদের সেই কথিত শায়খুল হাদীছ আযীযুল হক্ব তার লিখিত “মোসলেম শরীফ ও অন্যান্য হাদীছের ছয় কিতাব” নামক গ্রন্থের ২৭১-২৯০ পৃষ্ঠায় ফরজ নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা যে খাছ সুন্নত ও ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত তা ছাবেত করেছেন।

 নিম্নে ‘মুনাজাত’ সম্পর্কিত তার সম্পূর্ণ বক্তব্যটি উল্লেখ করা হলোঃ

(দ্বিতীয় অংশ)

প্রসিদ্ধ হাদীছ সঙ্কলক মাওলানা জাফর আহমদ ওসমানী তার ১৬ খণ্ডের হাদীছ গ্রন্থ এলাউছ ছুনানে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন যে- ফরয নামাযান্তে মুনাজাত করা নফল নামায অপেক্ষা অধিক উত্তম, যেরূপ নফল নামায অপেক্ষা ফরয নামায নিশ্চয়ই অধিক উত্তম (৩-৩১৭)। এই  সত্যটি নিতান্তই প্রমাণিক সত্য; এই মাত্র ৯২১ নং হাদীছ শরীফে পাঠক দেখিয়াছেন, দুয়া কবুল হওয়ার বিশেষ স্থানরূপে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্ধারিত করে বলেছেন “ফরয নামাযের পর যে দুয়া করা হয়” মুনাজাত অর্থ দুয়া করাই বটে।

মুনাজাত বিরোধীরা আলোচ্য হাদীছ শরীফকে নফলে সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষে একটি অলীক কথা বলেন যে, হাদীছ শরীফটিতে  নামায দুই রাকায়াত বলা হয়েছে, অতএব এ স্থানে নফল নামাযই উদ্দেশ্য হবে। কারণ, ফরয নামায বেশীর ভাগই চার চার রাকায়াত। তাদের এই কথায় এ সত্যই ফুটে উঠে যে, একটি অমুলক কথা বলিয়া ফেলিলে উহাকে দাঁড় করাতে আরও অমুলক কথা বলার ফাঁদে পড়িতে হয়। এখানে মুনাজাত বিরোধীদের অবস্থা তাই ঘটেছে-তারা হাদীছ শরীফকে নফল নামাযে সীমাবদ্ধ করার অমুলক কথা দাড় করাবার জন্য হাদীছ শরীফটির বাক্য “ নামায দুই দুই রাকায়াত” এর অর্থ বলতে চান যে, প্রতি দুই রাকায়াতের উপর নামায সমাপ্তির সালাম ফিরিবে; সুতরাং এখানে ফরয নামায উদ্দেশ্য হবে না, যেহেতু উহা চার ও তিন রাকায়াতে হয়।

ইহা মুনাজাত বিরোধীদের আরেকটি অলিক কথা। বরং স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দেয়া ব্যাখ্যার বিপরীত ব্যাখ্যা। পাঠক নিজেই দেখেছেন, “নামায দুই দুই রাকায়াত” বলার সাথে স্বয়ং নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহার উদ্দেশ্য বলে দিয়েছেন যে, “প্রতি দুই রাকায়াতে বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে।” চার রাকায়াত, তিন রাকায়াত নামাযের মধ্যেও দুই রাকায়াতের উপর অবশ্যই বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়তে হয়; ভুলে গেলে সিজদায়ে সাহু না করার ক্ষেত্রে নামায দোহরাইতে হয়।

অতএব সব রকম ফরয নামায আলোচ্য হাদীছ শরীফে শামিল থাকায় কোনই বাধা নেই। প্রতি দুই রাকায়াতের উপর সালাম ফেরার অর্থ করা ইহা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যাখ্যার বিপরীত।

কেউ কেউ এও বলে থাকেন যে, এক হাদীছ শরীফে রাত্রের নামাযকে দুই দুই রাকায়াত বলা হয়েছে এবং রাত্রের নামাযতো তাহাজ্জুদকে বলা হয়। অতএব আলোচ্য হাদীছ শরীফ তাহাজ্জুদ সম্পর্কে।

তাদের অলিক কথার পেছনে কত দৌড়িব? তাদের জানা উচিৎ যে, রাত্রের নামায তথা তাহাজ্জুদ নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চার চার রাকায়াতও পড়েছেন বলে হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা  রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা  হতে ‘বুখারী শরীফে’ হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। দুই দুই রাকায়াত পড়ার বর্ণনাও আছে। বিশেষত উহার উল্লেখ বিতর পড়ার কৌশলরূপে হইয়াছে।

যারা তাহাজ্জুদ পড়ায় অভ্যস্ত তাদের জন্য বিত্র নামায তাহাজ্জুদের পরে পড়ার নিয়ম। সেই সম্পর্কেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রাত্রের নামায তথা তাহাজ্জুদ নামায দুই দুই রাকায়াত পড়া হয়,

فاذا خشيت الصبح فاوتر بواحدة.

সেমতে যখন রাত্র শেষ হওয়ার আশঙ্কা কর তখন দুই রাকায়াতের সাথে এক রাকায়াত অধিক মিলিয়ে বিত্র পড়ে নিও। দুই দুই রাকায়াত বললেই উহা তাহাজ্জুদ নামাযের অর্থ হবে এই দাবী অজ্ঞতারই প্রমাণ। কারণ, এক হাদীছ শরীফে স্পষ্ট বর্ণিত আছে- “রাত্র এবং দিন উভয়ের নামাযই দুই দুই রাকয়াত (আবু দাউদ শরীফ ১৮৩ পৃঃ) হাদীছ শরীফখানা শুদ্ধতার প্রমাণ (এ’লাউছ ছুনান ৭-৪৩)। দিনের নামাযত তাহাজ্জুদ হয় না, সুতরাং দুই দুই রাকায়াত বললেই তাহাজ্জুদ নামায হবে এরূপ উক্তি নিছক বাতুলতা। আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি মুনাজাতের মূল আলোচ্য হাদীছ শরীফটিকে দিনের নামায পরিচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন।

পাঠক! মূল আলোচ্য হাদীছ শরীফটির সরল অনুবাদ এং উহার বাক্যাবলী ও সরাসরি আলোচনার দ্বারা প্রতিপন্ন করে দেখানো হলো যে, এই হাদীছ শরীফ দ্বারা নফল ফরজ সবরকম নামাযেই ইমাম মুক্তাদী সকলের পক্ষেই মুনাজাত করার প্রয়োজনীয়তা প্রমাণিত হয়। কারণ, হাদীছ শরীফটির শব্দাবলী ও বাক্যাবলী সবই ব্যাপক আকারের, কোন প্রকার সীমাবদ্ধতার বা নির্ধারনের লেশমাত্র হাদীছ শরীফটিতে নেই। হাদীছ শরীফটির ব্যাপকতা খর্ব করায় যদি কোন মুহাদ্দিছ আলিম বিশিষ্ট ব্যাখ্যাকারের উক্তি বা বক্তব্য কাজে লাগানো হয় তবেতো আমরা অতি প্রশস্ত ময়দান পাইয়া যাইব শত শত নয়, হাজার হাজার মুহাদ্দিছ, আলিম বুজুর্গের আমল উক্তি ও বক্তব্য ফরয নামাযে প্রচলিত আকারে মুনাজাতের পক্ষে দেখাইতে ইনশাআল্লাহ তায়ালা সক্ষম হইবো। শুধুমাত্র একটি নমুনা পেশ করিতেছি বড় বড় ১৬ খণ্ডের হাদীছ গ্রন্থ ‘এলাউছ ছুনান’ কিতাবের সঙ্কলক ফিকাহ শাস্ত্রজ্ঞ বুযুর্গ মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী মুনাজাতের পক্ষে আমাদের উত্থাপিত মূল আলোচ্য হাদীছ শরীফখানার উপর দীর্ঘ পাঁচ পৃষ্ঠা ব্যাপী আলোচনার পর হাদীছ শরীফটির বিষয়বস্তুর উপর মন্তব্য প্রকাশে লিখিয়াছেন-

فثبت ان الد عاء مستحبا بعد كل صلوة مكتو بة بر فع اليدين كما هو شا ئع فى ديارنا.

 “ইহা সঠিকরূপে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, দুয়া করা মুস্তাহাব প্রত্যেক ফরয নামাযের পরে, হস্তদ্বয় উত্তোলনের সহিত যেরূপ আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে।” তিনি এই হাদীছ শরীফকে সকল প্রকার নামাযে মুনাজাত করা পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন। (৩-১৬৭)

(চলবে)

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল।

সুওয়াল:  হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় “মীলাদ-ক্বিয়ামের” সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

৫. “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, চার মাযহাবের ইমাম রহতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে নিয়ে শুরু করে ৭০০ (সাতশত) বছর পর্যন্ত কোন নবী প্রেমিক নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে বা মুহববতে ক্বিয়াম করেননি।”

এখন আমার সুওয়াল হলো, মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব:   “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, চার মাযহাবের ইমাম রহতুল্লাহি আলাইহিমগণ সম্পর্কে হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ডাহামিথ্যা, জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন। কারণ মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর বিগত সংখ্যায় প্রমাণ করা হয়েছে যে, সরাসরি হাদীছ শরীফেই উল্লেখ আছে যে, স্বয়ং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর  তা’যীমার্থে বা সম্মানে যথাযথ আদবের সহিত  দাঁড়িয়েছেন বা ক্বিয়াম করেছেন।

সুতরাং যেখানে হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত আছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর  তা’যীমার্থে বা সম্মানে যথাযথ আদবের সহিত  দাঁড়িয়েছেন বা ক্বিয়াম করেছেন। সেখানে আর কোন দলীলের অপেক্ষা রাখেনা।

তারপরেও কম আক্বল ও কম বুঝদের জন্য উল্লেখ্য যে, এরপরেও অনেক দলীল-আদিল্লাহ্ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, মাযহাবের ইমাম, মুজতাহিদীন, সলফে-ছালিহীন, বুযুর্গানেদ্বীন, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ  নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে বা মুহববতে মীলাদ-ক্বিয়াম করেছেন।” যা মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর বিগত সংখ্যায় প্রমাণ করা হয়েছে। এ সংখ্যায় আরো কিছু দলীল আদিল্লাহ্ নিম্নে পেশ করা হলো-

ইজমা, ক্বিয়াস তথা ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার  কিতাব থেকেও মীলাদ-ক্বিয়ামের

অনেক প্রমাণ রয়েছে

যেমন, বিখ্যাত মুহাদ্দিছ  ও মুহাক্কিক, হযরত আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাবে লিখেন,

من عظم ليلة مولده بما امكنه من التعظيم والاكرام كان من الفائزين بدار السلام.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি তার সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ শরীফকে ইজ্জত ও সম্মান করলো তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে সম্মানিত করা হবে।

বিখ্যাত মুহাদ্দিস, শায়খ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “কারামাতে আযীযিয়াহ্” নামক কিতাবে উল্লেখ করেন,

در     تمام سال دو مجلس در خانہ منعقد شوند اول کہ مرد م روز عاشورایا دویک روز پین ازیس قر یب جھار صد کس یا پنج صد کس بلکہ ھزار فراھم می ایندہ وذکر فضا ئل حسنین کہ در حدیث واردشدہ دربیان می اید ….. با قی ما نند مجلس مولود شریف پس حالش اینسب کہ بتاریخ دوازدھم شھر ربیع الا ول میں ھمیں کہ مردم موافق معمول سابق فراھم شدند ودر خواندان درودشریف مشغول گشتند وفقیر می اید ……

 অর্থঃ- “সারা বৎসরে এই ফকীরের ঘরে দুই বার মাহ্ফিল হয়ে থাকে। প্রথমটি আশুরা অথবা তার দুই/এক দিন পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মাহ্ফিলে চারশ’ থেকে পাঁচশ’, কখনো হাজার লোকও সমবেত হয়ে থাকে। উক্ত মাহ্ফিলে ইমাম হাসান, হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমা-এর জীবনী হাদীছ শরীফ হতে আলোচনা করা হতো। ….

দ্বিতীয় মাহ্ফিলটি হতো মীলাদ শরীফের মাহ্ফিল। এতে রবিউল আউয়াল মাসের বার তারিখে পূর্ব নিয়ম অনুযায়ী (হাজার) লোক উপস্থিত হতো এবং দুরূদ শরীফ পাঠে মশগুল হতো। অতঃপর আমি নিজেই সেখানে উপস্থিত হতাম।”

বাংলার মূলুকে প্রায়  পঞ্চান্ন বৎসর দ্বীনের তথা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফের প্রচার-প্রসারকারী, হযরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর তদ্বীয় “রিসালাতুল ফায়সালা” কিতাবে উল্লেখ করেন যে,

ھمنے رسالہ ملخص میں  مولود شریف کوپچیس عا لموں اور اماموں کے قول وفعل سے اور اپنے طریقے کے پیشواووں کے قولسے اور توارث مے ثا بت  کیا ھے اور مولد کا منع کر نیوالا فقط شخص فاکھانی مالکی ھے سو جماعت کی مقابلہ میں انکے دھکے کا کیا اعتبار ھے اورقیام کو ایک مجتھد اور مکہ معظمہ کے دومعتمد اور نامی عالم قد یم کے فتاوی سے اوربری بری معتبر کتا بوں سے اورتوارث سے نابت کیا ھے اوریہ قیام چونکہ قیام تعظمی ھے اسواسطے اسکی اصل حضرت عانٹہ کی حدیث سے ثابت کیا ھے.

অর্থঃ- “আমি ‘মুলাখ্খাছ’ কিতাবে পঁচিশজন আলিম ও ইমামের (قول) বাণী ও (فعل) কর্ম দ্বারা এবং নিজ তরীক্বার বুযুর্গদের বাণী ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দলীলের ভিত্তিতে মীলাদ শরীফকে যথার্থভাবেই (জায়েয) সাব্যস্ত করেছি। মীলাদ নিষেধকারী ব্যক্তি হলেন মাত্র ফাকেহানী মালেকী। সুতরাং (মীলাদ জায়েয বলে ফতওয়া দানকারী) বৃহৎ জামায়াতের মতের বিরুদ্ধে তার এ ধোকাবাজী মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। আর একজন মুজ্তাহিদ ও মক্কা শরীফের দু’জন বিশ্বস্ত ও প্রসিদ্ধ প্রাচীন আলিমের ফতওয়া ও বিখ্যাত কিতাবসমূহ এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দলীলের ভিত্তিতে মীলাদ শরীফে “ক্বিয়াম” করা জায়িয প্রমাণ করেছি। আর উক্ত ক্বিয়াম, ক্বিয়ামে তা’যীমী বিধায় এটাকে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু-এর থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারা (জায়িয) প্রমাণ করেছি।” (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়াল:   অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-

জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না।  …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো।  উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

….. “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” ….

কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব:  প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

(ধারাবাহিক)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।

প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ

বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ২২

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রচার করে থাকে যে, “পীর ছাহেবদের দ্বারা দ্বীনের ব্যাপক খেদমত কখনোই সম্ভব নয়। তাই তারা পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া বা ইল্মে তাছাউফ চর্চা করাকে মোটেও গুরুত্ব দেয় না। একথার সত্যতা তাদেরই লোক দ্বারা লিখিত “আয়নায়ে তাবলীগ” নামক কিতাবের (লেখক- মুহম্মদ দাউদ আলী) নিম্নোক্ত বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হয়। তারা লিখেছে- “তাবলীগের মধ্যে পীর-মুরীদীর প্রচলন সম্ভব নহে, কেননা পীর-মুরীদীর দ্বারা সাধারণতঃ গন্ডিবদ্ধ একটা দলের সৃষ্টি হইয়া থাকে। ….. এইরূপ একটা দলের দ্বারা ব্যাপক কোন কাজ করা সম্ভব নহে। …. তাই বাধ্য হইয়া তাবলীগ এই পথ এড়াইয়া চলিয়া থাকে।”

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য ও প্রচারণা, মারাত্মক আপত্তিকর, জেহালতপূর্ণ ও সম্পূর্ণ অবান্তর এবং ক্ষেত্র বিশেষে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

কেননা প্রথমতঃ পীর-মুরীদীর পথকে বা ইল্মে তাছাউফকে এড়িয়ে চলার অর্থই হচ্ছে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফকে এড়িয়ে চলা। কারণ পীর-মুরীদীর কথা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের অসংখ্য স্থানে বর্ণিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ্ শরীফে ‘সূরা তওবার’ ১১৯ নং আয়াত শরীফে বলেন,

يا يها الدين امنوا اتقوا الله وكونوا مع الصد قين.

অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় কর এবং ছদিক্বীন অর্র্থাৎ ওলী আল্লাহ্গণের সঙ্গী হও।”

আর এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, ছদিক্বীন হলেন তাঁরাই, যাঁরা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফে পূর্ণতাপ্রাপ্ত, যাদের অন্তর সর্বদা আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরে মশগুল ও যাদের আক্বীদা ও আমলগুলো সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহ্ সম্মত।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হক্কানী পীর ছাহেবগণই একমাত্র ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফে পূর্ণতাপ্রাপ্ত এবং তাঁদের অন্তরই সর্বদা আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরে মশগুল।

উল্লেখ্য, আল্লাহ পাক পীর-মুরীদী সম্পর্কে পবিত্র কালামে পাকের ‘সূরা কাহ্ফের’ ১৭নং আয়াত শরীফে আরো বলেন,

من يهد الله فهو المهتد ومن يضلل فلن تجد له وليا مر شدا.

অর্থঃ- “মহান আল্লাহ পাক যাকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত প্রাপ্ত হয়। আর যাকে গোমরাহ্ করেন  অর্থাৎ যে ব্যক্তি গোমরাহীতে দৃঢ় থাকে, তার জন্য আপনি কোন ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল পীর) পাবেন না।”

এ আয়াত শরীফ দ্বারা বুঝা গেল যে, যারা পীর বা ওলীয়ে মুর্শিদ এড়িয়ে চলে, তারা গোমরাহ্ বা পথভ্রষ্ট।

আর হাদীছ শরীফে পীর-মুরীদী প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে,

الشيخ لقومه كا لنبى فى امته.

 অর্থঃ- “শায়খ (পীর ছাহেব) তাঁর ক্বওমের মধ্যে তদ্রুপ, যেরূপ নবী তাঁর উম্মতের মধ্যে।” (দাইলামী শরীফ)

অর্থাৎ নবীর দ্বারা যেরূপ উম্মতের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সবক্ষেত্রে ইছলাহ্ লাভ হয়, সেরূপ শায়খ বা পীর ছাহেবের দ্বারাও সকলের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সবক্ষেত্রে ইছলাহ্ লাভ হয়।

অতএব, উম্মত যেরূপ নবীকে এড়িয়ে চললে হিদায়েত লাভ করা সম্ভব নয়। তদ্রুপ শায়খ বা পীর ছাহেবকে এড়িয়ে চললেও কোন ব্যক্তির পক্ষে ইছলাহ্ লাভ করা সম্ভব নয়। বরং শয়তানী প্রবঞ্চনায় পড়ে গোমরাহীতে নিপতিত হওয়াই তার জন্য স্বাভাবিক।

আর তাই সুলতানুল আরিফীন, হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত্ ত্বাইফা, হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই বলেন যে,

من ليس له شيخ فشيخه شيطان.

অর্থঃ- “যার কোন পীর বা শায়খ নেই, তার পীর বা শায়খ হলো শয়তান।” (ক্বওলুল জামীল, নূরুন আলা নূর, তাসাউফ তত্ত্ব)

অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন কামিল পীরের নিকট বাইয়াত না হবে, তাকে শয়তান ওয়াস্ওয়াসা দিয়ে বিভ্রান্ত করে দিবে।

এ কারণে শ্রেষ্ঠতম মায্হাব, হানাফী মায্হাবের প্রতিষ্ঠাতা, ইমামুল আইম্মা, ইমামুল আ’যম, হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি  বলেন,

لولا سنتان لهلك ابو نعمان.

অর্থঃ- “আমার জীবনে যদি দু’টি বৎসর না হতো, তবে আবূ নোমান (আবু হানীফা) ধ্বংস হয়ে যেত।”  অর্থাৎ আমি ইমামে আ’যম, যদি দু’বৎসর আমার দ্বিতীয় পীর ছাহেব, ইমাম জাফর ছাদিক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ছোহবত লাভ না করতাম, তবে (শয়তানী প্রবঞ্চনায়) ধ্বংস বা বিভ্রান্ত হয়ে যেতাম।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এ কথাই প্রমাণিত হলো যে, যারা পীর-মুরীদীকে এড়িয়ে চলে বা পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়াকে মোটেও গুরুত্ব দেয়না, তারা মুলতঃ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফকেই এড়িয়ে চলে বা গুরুত্ব দেয়না।

আর কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফকে এড়িয়ে চলা বা গুরুত্ব না দেয়া স্পষ্টতঃ গোমরাহী। তাছাড়া শয়তান তাদের পথ প্রদর্শক হওয়ার কারণে তারা চরম বিভ্রান্ত।  (চলবে)

মুহম্মদ মঞ্জুরুল হক্ব

গুলবাগ, ঢাকা।

সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা মার্চ/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে,

“আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করাকে ফেকাহ্ শাস্ত্রের পরিভাষায় তাসবীব বলা হয়, ইসলামের সোনালী যুগে এর প্রচলন থাকলেও  ফেকাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ। (ফতোয়া দারুল উলুম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮০)

          এখন আমার সুওয়াল হলো- “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা  তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ? দয়া করে দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ “আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা  তাছবীব করা সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। আর তার এ ফতওয়া গোমরাহীমূলক হয়েছে। যা মানুষকে গোমরাহ করার  জন্য যথেষ্ট। কারণ আযান ও ইক্বামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়নি। বরং আযান ও ইকামতের মাঝে তাছবীব করাকে ফিক্বাহ্বিদগণের সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমানে তা উত্তম বলা হয়েছে। অর্থাৎ আযানের পর পুনরায় মুসল্লিদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা  তাছবীব করার জন্য  বা  التنحنح (গলা খাকড়ানো), الصلاة الصلاة  (নামায! নামায!) ও قامت قامت (ক্বামাত ! কা¡মাত!) ইত্যাদি শব্দ দিয়ে আহবান করা বা তাছবীব করা উত্তম।

          যেমন “ফতওয়ায়ে আলমগীরীর” ১ম খন্ডের ৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

والتثويب حسن عند المتأ خرين فى كل صلاةالا فى المغرب هكذ فى شرح النقا ية للشيخ أ بى المكارم و هو رجوع الموذن الى الاعلام بالصلاة بين الاذان والاقامة وتثويب كل بلدة على ما تعارفوه اما بالتنحنح او بالصلاة الصلاة اوقامت قامت لانه للمبا لغة فى الاعلام وانما ثحصل ذلك بما تعار فوه كذا فى الكافى-

অর্থঃ-  “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের নিকট মাগরিব ব্যতীত প্রত্যেক (ফজর, যোহর, আছর ও এশার) নামাযের “তাছবীব” করা উত্তম। ইহা শায়েখ আবূ মাকারিম শরহে নেক্বায়ার মধ্যে উল্লেখ করেছেন। “তাছবীব” উহাকে বলা হয় যে, মুয়াজ্জিন আযান ও ইক্বামতের মাঝে পূনরায় (মানুষকে) নামাজের কথা জানিয়ে দেয়া। প্রত্যেক শহরের তাছবীব ঐ জায়গার পদ্ধতি অনুযায়ী হয়। যেমন গলা খাকড়ানোর মাধ্যমে, অথবা আস্ সালাত! আস্ সালাত! অথবা ক্বামাত! ক্বামাত! বলে তাছবীব দেয়া হয়। তাছবীবের উদ্দেশ্য হলো ভাল করে জানিয়ে দেয়া। এবং ইহা যে স্থানে যেভাবে নিয়ম সেভাবে দেয়াই যথেষ্ট।” ইহা কাফীতে উল্লেখ আছে।

“ শরহে বিকায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

واستحسن المتا خرون تثويب الصلوة كلها… الا المغرب.

অর্থঃ- “মাগরিব ব্যতীত সকল নামাযেই তাছবীব করাকে  “উলামায়ে মুতাআখ্খেরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ  মুস্তাহ্সান বলেছেন।”

“উমদাতুর রিয়ায়া” কিতাবে উল্লেখ আছেব্জ

ما احختاره المتأ خرون ان التثويب مستحسن فى جميع الصلوات لجميع الناس لظهور التكاسل فى امورالد ين لا سيما فى الصلوة ويستثنى منه  المغرب.

অর্থঃ- “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের গ্রহনীয় মত এই যে, মাগরিব ব্যতীত সকল নামাযে সমস্ত মানুষের জন্য  তাছবীব করা মুস্তাহ্সান।” কারণ  দ্বীনী কাজে তথা বিশেষ করে নামাযে মানুষের অলসতা বা গাফলতী  প্রকাশের কারণেই   প্রত্যেক  নামাজেই  “তাছবীব” করা হয়। ”

“শরহে বিকায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৩৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

واختاره قاضى خان انه يجوز التثويب

অর্থঃ- “ঞ্জআল্লামা কাযী খান রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর গ্রহনীয় মত এই যে, সকল নামাযেই   তাছবীব করা জায়িয। ”

“জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ্” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

والتثويب فى الفجر حسن لانه وقت نوم وغفلة… والمتأ خرون استحسنوه فى الصلوات كلها لظهوره التوانى فى الامور الدينة وصفته فى كل بلد على ما يتعارفونه اما بقوله الصلاة الصلاة او حى على الصلاة وما اشبه ذلك.

 অর্থঃ- “ফজর নামাযে তাছবীব করা উত্তম, কেননা ফজরের ওয়াক্তটা হলো ঘুম ও গাফলতির ওয়াক্ত। …  আর  “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ বলেন, দ্বীনী কাজে মানুষের গাফলতী তথা শিথিলতা প্রকাশের কারণে   প্রত্যেক  নামাজেই  “তাছবীব” করা মুস্তাহ্সান বা উত্তম। আর “তাছবীব” করার নিয়ম হচ্ছে  প্রত্যেক শহরের  তার পরিচিত শব্দ দিয়ে তাছবীব করবে। যেমন  (আছ্ ছলাত! আছ্ ছলাত!) নামায, নামায অথবা   (হাইয়া আলাছ্ ছলাত) নামাযের জন্য আসুন অথবা অনুরূপ  শব্দ দিয়ে তাছবীব করবে।

“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

ويثوب بين الاذان والا قا مة فى الكل للكل بما تعرفوه

অর্থঃ-“ আযান ও ইক্বামতের মাঝে প্রত্যেক নামাযের জন্যই তাছবীব করবে। আর তাছবীব প্রত্যেকেই ঐ শব্দ দিয়ে করবে যা তাদের পরিচিত শব্দ।”

“নিকায়া” কিতাবের  উল্লেখ আছে,

التثويب حسن الا فى المغرب

অর্থঃ- “মাগরিব ব্যাতীত সকল নামাযেই আযানের পর পুনরায় মানুষদেরকে নামাযের জন্য আহবান করা বা তাছবীব করা উত্তম।” (চলবে)

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

টাইগার পাস রোড, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ  চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার উল্লেখ করে আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার  কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব” …।

এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা ‘‘আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য।

তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের আক্বীদা-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে  এবং ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে।

আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডন সহ সঠিক ও গ্রহনযোগ্য ফতওয়া পেশ করবো ইন্শাআল্লাহ্।

(ধারাবাহিক)

আযানের মৌখিক জবাব দেয়া যে ওয়াজিব এবং এটা যে প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত তার প্রমাণ

উল্লেখ্য,  মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফের বিগত সংখ্যায়  আযানের মৌখিক জবাব দেয়া যে ওয়াজিব তা “বুখারী শরীফের” ১ম খণ্ডের ৮৬ পৃষ্ঠায়,  মুসলিম শরীফের ১ম খণ্ডের ১৬৬ পৃষ্ঠায়, “তিরমিযী শরীফের” ১ম খণ্ডের ২৯ পৃষ্ঠায়, “আবূ দাউদ শরীফ” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৯৩ পৃষ্ঠায়, “ইবনে মাজাহ্ শরীফের” ৫৩ পৃষ্ঠায়,  “নাসাঈ শরীফের” ১ম খণ্ডের ১১০ পৃষ্ঠায়, “মিশকাত শরীফের” ৬৪ পৃষ্ঠায়, মুয়াত্তা ইবনে মালিক-এর ২৩ পৃষ্ঠায়, মুয়াত্তা ইমাম মুহম্মদ, মুসনাদুল ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, শরহু মা’য়ানীল আছার” কিতাবে উল্লেখিত ছহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণ করা হয়েছে।

 উক্ত হাদীছ শরীফের বর্ণনা অনুসারে  আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি  ও আছহাবে জাওয়াহিরের মত হচ্ছে- মৌখিকভাবে আযানের জাওয়াব দেয়া  আযান শ্রোতাদের সকলের জন্যই ওয়াজিব।

কারণ ছহীহ্ হাদীছ শরীফে  স্বয়ং  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ করেন যে,

فقولوا مثل مايقول المؤذن.

সুতরাং হাদীছ শরীফে বর্ণিত ইবারতে فقولوا “তোমরা বল” শব্দটি امر  (আমর) এর ছিগাহ। আর আমাদের  হানাফীগণের নিকট উছূল হলো- امر  (আমর) এর হুকুম হচ্ছে-  وجوب (উজুব) অর্থাৎ ওয়াজিব। তাই যে পর্যন্ত এর বিপরীত কোন দলীল পাওয়া না যাবে, সে পর্যন্ত مطلقا (সাধারণভাবে) امر (আমর) -এর হুকুম وجوب  বা (ওয়াজিব) হিসেবে থাকবে।

যেমন এ প্রসঙ্গে “বাদায়েউস্ সানায়ে” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ومطلق الا مر لوجوب العمل.

অর্থাৎ “সাধারণভাবে امر (আমর) আমলকে ওয়াজিব করে দেয়।”

সুতরাং সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই মৌখিক আযানের জাওয়াব দেয়া আযান শ্রোতাদের সকলের জন্যেই ওয়াজিব সাব্যস্ত হলো।

আর অনুসরনীয় ইমাম মুজতাহিদগণও উল্লিখিত হাদীছ শরীফ সমূহের  فقولوا শব্দের   উপর ভিত্তি করে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়াকে ওয়াজিব বলে ফতওয়া দেন।

যেমন, এ প্রসঙ্গে “মুয়াত্তা ইমাম মুহম্মদ” কিতাবের ৮৫ পৃষ্ঠার ৪ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

قوله ففولوا استدل به على وجوب اجابة المؤذن حكاه الطحاوى عن قوم من السلف وبه قال الحنفية

অর্থঃ- “হাদীছ শরীফের ইবারতে  উল্লিখিত فقولوا শব্দটির ভিত্তিতে দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যে, মৌখিকভাবে মুয়াজ্জিনের আযানের জাওয়াব দেয়া  ওয়াজিব।  এটা ইমাম ত¦হাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি সলফে-ছালিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের এক জামায়াত থেকেও বর্ণনা করেছেন। আর হাদীছ শরীফের ইবারতে  উল্লিখিত فقولوا শব্দটির ভিত্তিতে দলীল গ্রহন করে  হানাফীগণ  বলেন,  মৌখিকভাবে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।

“মুয়াত্তা ইমাম মালিক” কিতাবের ২৩ পৃষ্ঠার ৪ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

قوله فقولوا مثل ما يعول اى وجوبا عند ابى حنيفة وند با عند الشا فعى.

অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  হাদীছ শরীফে বলেছেন, যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে তোমরাও অনুরূপ বল।” অর্থাৎ এই হাদীছ শরীফের ভিত্তিতে  আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহিদ্ধএর নিকট মৌখিকভাবে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। আর শাফিয়ী মাযহাবে মুস্তাহাব।

 (চলবে)

নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক

ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

সুওয়াল:   হানাফী মাযহাবে –

(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।

(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।

(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।

(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।

(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।

(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।

(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।

(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।

(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।

(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।

কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: সুওয়ালে উল্লিখিত হানাফী মাযহাবের মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে তার পূর্বে মাযহাব মানা ফরয, মাযহাব না মানা বিদ্য়াত ও গোমরাহী, মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী- সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ।

(ধারাবাহিক)

মাযহাব মানা ফরয-ওয়াজিব। কেননা

মাযহাব না মানার অর্থ হচ্ছে শরীয়তের দু’টি দলীল- ইজমা ও ক্বিয়াস অস্বীকার করা

ক্বিয়াস-এর প্রকারভেদ

          ক্বিয়াস দু’প্রকার- (১) হক্ব ক্বিয়াস, (২) বাতিল ক্বিয়াস।

হক্ব ক্বিয়াসের সংজ্ঞা- মুজ্তাহিদ ক্বিয়াস করার সময় যদি কুরআন ও সুন্নাহ্ অনুযায়ী ক্বিয়াস করেন, তাহলে তাকে হক্ব ক্বিয়াস বলে।

হক্ব ক্বিয়াস-এর উদাহরণ

(১) মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেছেন, حرمت عليكم امهتكم وبنتكم.

অর্থঃ- “তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে, তোমাদের মাতা ও কন্যাদেরকে।” (সূরা নিসা-২৩)

এখানে امهات শব্দের দ্বারা মাতাকে বিবাহ করা হারাম বুঝায়। শরীয়তে নানী, দাদী বা নাতনীকে বিবাহ করা হারাম, কিন্তু কুরআন শরীফ বা হাদীস শরীফের কোথাও নানী, দাদী বা নাতনীকে বিবাহ করা হারাম তার প্রকাশ্য কোন ইবারত নেই।

সুতরাং যারা ক্বিয়াসকে অস্বীকার করে বা কুরআন-হাদীছ ব্যতীত অন্য কোন ইজ্তিহাদী কওল গ্রহণ করতে নারাজ, তারা এ ব্যাপারে কি মত গ্রহণ করবে? ক্বিয়াস অস্বীকার করে নানী, দাদী ও নাতনীকে বিবাহ করবে? নাকি ক্বিয়াস স্বীকার করে হারাম হতে নিজেকে রক্ষা করবে?

স্মর্তব্য যে, উক্ত আয়াতের امهات শব্দটি  ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত, তাই মুজ্তাহিদ তথা আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ মাতার সাথে ক্বিয়াস করে উর্ধ্বতন যত নারী রয়েছে। যেমন- নানী, দাদী, তার মা, তার মা প্রমূখ সকলেই। আর بناتكم দিয়ে নিম্ন সারীর যত নারী রয়েছে, যেমন- মেয়ে, তার মেয়ে (নাতনী) তার মেয়ে (প্রো নাতনী) প্রমূখ সকলকেই বিবাহ করা হারাম সাব্যস্ত করেছেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, যারা মায্হাব মানে না, তারা নিশ্চয়ই এই রায় মেনে নিয়ে মায্হাবী হয়ে আছে। কেননা এটা হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী চার মাযহ্াবেরই রায়। তাই এখন যদি কেউ ক্বিয়াসকে অস্বীকার করে ও মায্হাবের বিরুদ্ধে মত পোষণ করে, তা গোমরাহীর বৈ আর কিছুই নয়। (চলবে)

মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান

ভোলাহাট, চাপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়ালঃ  রমযান মাস আসলেই কেউ কেউ পেপার-পত্রিকায় ও প্রচার মাধ্যমে প্রচার করে থাকে যে, “রোযা অবস্থায় ইন্জেকশন এমনকি স্যালাইন ইন্জেকশন নিলেও রোযা ভঙ্গ হয়না।”

          এখন আমার সুওয়াল হলো- তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোন দলীল আছে কি?

জাওয়াবঃ   যারা বলে থাকে যে, “রোযা অবস্থায় ইনজেকশন বা স্যালাইন ইনজেকশন নিলেও রোযা ভঙ্গ হয়না” তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল ও জিহালতপূর্ণ। কেননা, তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে নির্ভরযোগ্য একটি দলীলও পেশ করতে পারবেনা। পক্ষান্তরে রোযা অবস্থায় যে কোন ইনজেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে এ ফতওয়াটিই ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য। কারণ এর স্বপক্ষে ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের অসংখ্য দলীল বিদ্যমান রয়েছে।

যেমন, “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খন্ডের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ومن احتقن … افطر لقوله صلى الله عليه وسلم الفطر مما دخل.

অর্থঃ- “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইন্জেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , “কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে।”

          “বাহরুর রায়িক” কিতাবের ২য় খন্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

واذا احتقن … افطر لقوله عليه السلام الفطر مما دخل وليس مما خرج.

অর্থঃ- “যদি কোন ব্যক্তি ইন্জেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভঙ্গ হবে এবং বের হলে রোযা ভঙ্গ হবেনা।”

 “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

و من احتقن ….. افطر.

অর্থঃ- “এবং যদি কোন ব্যক্তি ইন্জেকশন নেয় … তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে।”  অনুরূপ “ফতওয়ায়ে শামীতে”ও উল্লেখ আছে।

          অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, ইন্জেকশন নিলে রোযা ভঙ্গ হবে।

          {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) মিশকাত, (৪) আলমগীরী, (৫) ফতহুল ক্বাদীর, (৬) হিদায়া মায়াদ দিরায়া, (৭) শামী ইত্যাদি।}

          {বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২১, ২২, ৪৬ ও ৪৭তম সংখ্যা পাঠ করুন।}

হাফিয মুহম্মদ আবূ হানীফা

দাউদকান্দি, কুমিল্লা।

সুওয়ালঃ  অনেকে বলে থাকে ‘খত্মে তারাবীহ্ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?

জাওয়াবঃ “যারা বলে, ‘খত্মে তারাবীহ্ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ’ তাদের সে বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ নয়। কারণ, খত্মে তারাবীহ্ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ হলে প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলাকে তা পড়তে হবে। অন্যথায় সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরকের গুনাহে গুনাহ্গার হবে।

আর খত্মে তারাবীহ্ পড়তে হলে প্রত্যেককে হাফিযে কুরআন হতে হবে। চাই জামায়াতে পড়ুক অথবা একা পড়ুক। অথচ শরীয়তে হাফিয হওয়া ফরযে কিফায়া।

আর তারাবীহর জামায়াত যেহেতু সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া সেহেতু কিছু লোক একাও তারাবীহ পড়তে পারে। এছাড়া অসুস্থ ব্যক্তির জন্য একা পড়ার হুকুমই রয়েছে। আর মহিলাদের জন্য তো তারাবীহ্সহ সকল প্রকার নামাযের জামায়াতে যাওয়া আম ফতওয়া মতে মাকরূহ তাহ্রীমী আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী।

কাজেই, যারা একা নামায পড়বে, তারা যদি হাফিযে কুরআন না হয়, তবে খত্মে তারাবীহ্ কি করে পড়বে?

যে ব্যক্তি হাফিয নয় সে খত্মে তারাবীহ্র জামায়াতে নামায পড়া শুরু করলো হঠাৎ কোন কারণবশতঃ সে ২ বা ৪ রাকায়াত বা তার চেয়ে কম-বেশী রাকায়াত পড়তে পারলনা। এখন সে যে কয় রাকায়াত পড়তে পারলনা তা কিভাবে পড়বে?

খত্মে তারাবীহ্ যদি সুন্নতে মুয়াক্কাদা হয়, তাহলে পৃথিবীর প্রতিটি মসজিদে তারাবীহ্ নামাযে অবশ্যই কুরআন শরীফ খতম করতে হবে। অথচ পৃথিবীতে এমন অনেক স্থান, গ্রাম-গঞ্জ রয়েছে, যেখানে কুরআন শরীফের হাফিয পাওয়া অসম্ভব, সেখানে কি করে কুরআন শরীফ খতম করা হবে?

সঙ্গতকারণে বিশ্বখ্যাত ফতওয়ার কিতাবসমূহে ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, খত্মে তারাবীহ্ ও সূরা তারাবীহ্ কোনটিই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নয়। বরং উভয়টি সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া।

অএতব, কেউ ইচ্ছা করলে খতম তারাবীহ্ পড়তে পারে। আবার কেউ ইচ্ছা করলে সূরা তারাবীহ্ পড়তে পারে।

          {দলীলসমূহ :  (১) বাহরুর রায়িক, (২) হিদায়া, (৩) আলমগীরী, (৪) ফতহুল ক্বাদীর, (৫) ইনায়া  ইত্যাদি।}

(এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১০০তম সংখ্যা পাঠ করুন।)

মুহম্মদ আব্দুল জব্বার

সাভার, ঢাকা।

সুওয়াল:  অনেকে মনে করে যে, ‘তারাবীহ্’ অর্থ তাড়াতাড়ি। তাই তারাবীহ্র নামায তাড়াতাড়ি পড়তে হয়। বাস্তবিক সমাজে এটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, সূরা তারাবীহ্ হোক আর খতম তারাবীহ্ হোক উভয় প্রকার জামায়াতে ইমাম বা হাফিয ছাহেবরা দ্রুত সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করে নামায শেষ করেন। বিশেষ করে খতম তারাবীহ্র ক্ষেত্রে অধিকাংশ হাফিয ছাহেবকে দেখা যায়, তারা এত দ্রুতগতিতে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করেন মুছল্লীরা তা স্পষ্ট শুনতে বা বুঝতে পারেন না। অথচ খতম তারাবীহ্ সম্পন্ন করার জন্য হাফিয ছাহেবরা মুছল্লীদেরকে একবার ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ স্পষ্ট করে শুনিয়ে দেন।

এ বিষয়ে সঠিক মাসয়ালা জানার বাসনা রাখি।

জাওয়াব:  আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

قوموالله قنتين.

অর্থঃ- “তোমরা আল্লাহ পাক-এর উদ্দেশ্যে (নামাযে) বিনয়-নম্র সহকারে দণ্ডায়মান হও।” অর্থাৎ হুযূরীর সহিত (ধীরস্থিরভাবে নামাযের ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব যথাযথ পালন করে) আদায় করেতে হবে।” (সূরা বাক্বারা-২৩৮)

‘তারাবীহ্’ অর্থ তাড়াতাড়ি এটা ভুল ধারণা। সঠিক বর্ণনা হচ্ছে تراويح ‘তারাবীহ্’ শব্দটি বহুবচন। এর একবচন হচ্ছে ترويحة   ‘তারবীহাতুন’। এর অর্থ বিশ্রাম নেয়া, আরাম করা। পাঁচ তারবীহাতুন মিলে এক তারাবীহ। অর্থাৎ চার রাকায়াতের পর বসে দুয়া-দুরূদ, তাসবীহ পাঠের মাধ্যমে বিরতি বা বিশ্রাম নিয়ে বিশ রাকায়াত নামায আদায় করা।

শরীয়তের মাসয়ালা হলো- পাঞ্জেগানা, জুমুয়া, ঈদ ইত্যাদি জামায়াতে যেভাবে আদায় করা হয় তারাবীহও সেভাবেই আদায় করতে হবে। কোনরূপ পার্থক্য করা যাবে না।

স্মরণীয় যে, নামাযের মধ্যে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করা হচ্ছে একটি ফরয। কাজেই ইমাম ছাহেবকে তারতীলের সাথে স্পষ্ট করে সূরা-ক্বিরায়াত পড়তে হবে।

এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ورتل القران ترتيلا.

অর্থঃ- “সঠিক ও স্পষ্টভাবে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করো।” (সূরা মুয্যাম্মিল-৪)

এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

سئل عليه الصلوة والسلام عن قول الله تعالى “ورتل القران تر تيلا” قال بينه تبيينا ولا تنثره نثر الد قل ولا تهذه هذ الشعر ويكن حم احد كم اخر سورته

অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আল্লাহ পাক-এর কথা

ور تل القران ترتيلا

 (তারতীলের সাথে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত কর) সম্বন্ধে। তিনি বললেন, তা স্পষ্ট করে তিলাওয়াত করো। খেজুরের বিচির মত বিক্ষিপ্তভাবে কিংবা কবিতার ছন্দাকারে তিলাওয়াত করোনা। এবং তিলাওয়াত শুরু করার পর তা কখন শেষ হবে এ চিন্তা-খেয়াল নিয়ে তিলাওয়াত করোনা।”

নামাযে কিভাবে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করতে হবে সে প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ام سلمة رضى الله تعالى عنها قالت كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقطع قراء ته يقول الحمد لله رب العلمين ثم  يقف ثم يقول الر حمن الر حيم ثم يقف.

অর্থঃ- “উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাক্যে পূর্ণ বিরতি দিয়ে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতেন। তিনি বলতেন, ‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন।’ অতঃপর বিরতি দিতেন। তৎপর বলতেন, ‘র্আ রহমানির রহীম।’ অতঃপর বিরতি দিতেন।” (তিরমিযী, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ, মিশকাত)

অর্থাৎ ওয়াক্ফ, মাদ, মাখরাজ, গুন্নাহ ইত্যাদি সঠিকভাবে আদায় করে সূরা-ক্বিরায়াত পাঠ করতে হবে।

কাজেই, হাফিয ছাহেব খতম সম্পন্ন করার জন্য যেমন একবার ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ স্পষ্ট করে সুন্দর করে মুক্তাদীকে শুনিয়ে দেন ঠিক পুরো কুরআন শরীফই স্পষ্ট করে শুনাতে হবে। এর ব্যতিক্রম করলে খতম ও নামায কোনটিই শুদ্ধ হবে না।

অতএব, যাচাই-বাছাই করে ইমাম বা হাফিয ছাহেব নিয়োগ করতে হবে।

লক্ষ্যণীয় যে, আজকাল মানুষ দ্বীনি ক্ষেত্রে যত রকম অজুহাত, অপারগতা ও অলসতা দেখিয়ে থাকে কিন্তু দুনিয়াবী ক্ষেত্রে তা নেই। এসব লোকদের সম্পর্কেই আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,

واذا قاموا الى الصلوة قا موا كسا لى يراءون الناس.

অর্থঃ- “যখন তারা নামাযে দাঁড়ায় গাফলতির সাথে দাঁড়ায়। উদ্দেশ্য কেবল লোকদেরকে দেখানো।” (সূরা নিসা-১৪২)

আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كم من صائم ليس له من صيا مه الا الظمأ وكم من قائم ليس له من قيا مه الا السهر.

অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, কতক রোযাদার এরূপ আছে যাদের রোযা দ্বারা ক্ষুধার্ত থাকা ব্যতীত কিছুই লাভ হয়না এবং কতক রাতে নামায আদায়কারী আছে যাদের রাতে জাগরণ ব্যতীত কিছুই লাভ হয়না।” (দারিমী, মিশকাত)

আল্লাহ পাক এ রকম ইবাদতগোযার হওয়া থেকে প্রত্যেককে হিফাযত করুন।

{দলীলসমূহ: তাফসীরে মাযহারী, কুরতুবী, তিরমিযী, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ, দারিমী, মিশকাত, মিরকাত, আলমগীরী, শামী, বাহরুর রায়িক ইত্যাদি।

 সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল জাওয়াব