সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ
মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।
সুওয়াল: ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খণ্ডন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-
….. ৩. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম একটি নিম্ন শ্রেণীর কাজকেও বর্ণনা করতে সংকোচবোধ করেননি। আর মুনাজাত এমন এক কাজ যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযান্তে প্রকাশ্যভাবে পাঁচবার যদি করতেন তবে কেন তার কোন বর্ণনা করা হয়নি। …….
এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।
জাওয়াব: “ফরয নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার স্বপক্ষে কোন বর্ণনা নেই” হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন।
(কারণ পূর্ববর্তী সংখ্যায় প্রদত্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমানিত হয়েছে যে, “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করার স্বপক্ষে একটি, দুটি নয় বরং অসংখ্য ফে’লী ও ক্বওলী হাদীছ শরীফ রয়েছে।)
যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজেও ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন। আর হাদীছ শরীফে রয়েছে বলেই অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ তথা ফক্বীহগণ নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে এমনকি হাটহাজারী মৌলভীদের মুরুব্বীরাও তাদের কিতাবে “ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব-সুন্নত বলে” ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন,
(ধারাবাহিক)
হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের মুরুব্বী দ্বারা লিখিত “ফতওয়ায়ে দেওবন্দ”-এর ৪র্থ খণ্ড, ১৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
امام جس وفت نماز سے فاغ ھو مع مقتدیوں کےسب اکھٹے دعا مانگیں.
অর্থঃ- “ইমাম ছাহেব যখন নামায শেষ করবেন, তখন মুক্তাদীগণকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করবেন।”
হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের আরেক গুরু থানভী ছাহেবের “আশ্রাফী বেহেশ্তী জিওর” কিতাবের ১১ খণ্ড, ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
بعد نماز ختم کر چکنے کے دونوں ھا تھ سینہ تک اٹھا کرپھیلا نے اور اللہ تعا لی سے اپنے لئے دعا ما نگے اور امام ھو تو تمام منتد یوں کے لنے بھی اور بعد دعا ما نگ چکنے کے دونون ھا تھ منہ پر پھیر لے-مقندی خواہ ا پنی دعا ما نگے یا امام کی دعا سنا ئی دسے تو خواہ سب امین کھتے رھیں.
অর্থঃ- “নামায শেষ করার পর উভয় হাত সীনা পর্যন্ত উঠাবে এবং আল্লাহ পাক-এর নিকট নিজের জন্য মুনাজাত করবে। আর ইমাম হলে সকলের জন্য মুনাজাত করবে, মুনাজাত শেষে উভয় হাত দ্বারা মুখ মাসেহ্ করবে। মুক্তাদীগণ নিজ নিজ দোয়া চাইবে অথবা ইমাম ছাহেবের মুনাজাত শোনা গেলে তার সাথে সকলে ‘আমীন, আমীন’ বলবে।”
দেওবন্দীদের আরেক মুরুব্বী মৌলভী আব্দুর রহীম লাচপূরী লিখিত “ফতওয়ায়ে রহীমিয়া”-এর ১ম খণ্ড, ২১৫-২১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
مسنون یہ ھے کہ جس طرح فرض نماز جعاعت سے پر ھی ھے دعا بھی جعا عت کے سا تھ کی جا ئے یعنی امام اور مقتدی ست مل کر دعا ما نگیں…. ان حضرت صلی اللہ علیہ وسلم، صحا بۂکر ام اور سلف صالحین ر ضی اللہ عنھم کا طر یقہ یہ تھا کہ فر ض نما ز جما عت سے ادا فر ما کر دعا بھی جماعت کے سا تھ (امامر اور مقتدی سب ملکر) ما نگا کر تے تھے.
অর্থঃ- “নামায যেভাবে জামায়াতের (সম্মিলিতভাবে) সাথে আদায় করা হয়, মুনাজাতও তদ্রুপ সম্মিলিতভাবে করা সুন্নত। অর্থাৎ ইমাম ও মুক্তাদী সকলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করবে ….। আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ও সল্ফে ছলিহীনগণের সুন্নত তরীক্বা এটাই ছিল যে, তাঁরা ফরয নামায জামায়াতে আদায় করার পর (ইমাম ও মুক্তাদী সকলে সম্মিলিতভাবে) মুনাজাত করতেন।”
উক্ত “ফতওয়ায়ে রহীমিয়া” ৪ খণ্ড, ২২৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
فر ض نما زو کے بعا زوکے بعد امامراور مقتدی کے ملکر دعا مانگنے کی بری فضیک ھے اور اسکا مسنون اور افضل طریقہ یہ ھے کہ ا مامراور مقتدی دونوں اھستہ اھستہ دعا ما نگیں
অর্থঃ- “ফরয নামাযের পর ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার মধ্যে বহু ফযীলত রয়েছে। আর এটার সুন্নতি পদ্ধতি হলো ইমাম ও মুক্তাদী অল্প আওয়াজে মুনাজাত করবে।”
দেওবন্দীদের আরেক গুরু দ্বারা লিখিত “ইখতিলাফে উম্মত আওর ছিরাতে মুস্তাকীম”-এর ১২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ثریعت کا حکمر یہ ھے کہ جو عبادت اجتما عی طور پر ادا کی گنی ھے اس کے بعد تو دعاء اجتما عی طور پر کی جا نے.
অর্থঃ- “শরীয়তের নির্দেশ হলো, যে সকল ইবাদত সম্মিলিতভাবে করা হয়, এরপর মুনাজাতও সম্মিলিতভাবে করবে।”
দেওবন্দী ও হাটহাজারী মৌলভীদের আরেক মুরুব্বী মৌলভী কিফায়াতুল্লাহ লিখিত “কিফায়াতুল মুফতী”-এর ৩য় খণ্ড ২৭৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
انفرادادعا مانگنا امام اور مقتدی یر ایک کیلئے سنتون اور نفلون کے بعد بھی جا نز ھے اور اجتما عی بھی بشر طیکہ التزام واعتقاد سنیت نہ ھواور اجتما عی دعا کا افضل طر یقہ یہ ھے کہ بعد فر انض اور قبل سنن ونوا فل ھو.
অর্থঃ- “সুন্নত এবং নফল নামাযের পরও একাকী বা সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা প্রত্যেকের জন্য জায়িয। তবে শর্ত হলো- জরুরী মনে করা ও খাছ সুন্নত মনে করা যাবেনা। আর সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার উত্তম পদ্ধতি হলো- ফরয নামাযের পর সুন্নত ও নফল নামাযের পূর্বে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা।” (নাফায়িসুল মারগুবা)
অতএব, অনুসরণীয় ফক্বীহগণের ফতওয়া দ্বারা এবং হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের দেওবন্দী মুরুব্বীদের বক্তব্য দ্বারাও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, ফরয নামাযের পর হাত উঠিয়ে ও সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার প্রমাণ অসংখ্য হাদীছ শরীফে রয়েছে। যার আলোকেই তারা “ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে ও সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব-সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
প্রদত্ত সুওয়াল-জাওয়াবের টীকা ভাষ্যঃ
ড পূর্ববর্তী সংখ্যায় ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করার পক্ষে অনেক ফে’লী ও ক্বওলী হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফসহ আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফের দলীল দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে হযরত আসওয়াদ আমেরী রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণিত হাদীছ শরীফের বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে।
ড আর গত সংখ্যায় প্রমান করা হয়েছে যে, অনুসরনীয় ইমাম, মুজতাহিদ এমনকি হাটহাজারী মৌলভীদের মুরুব্বীরাও উল্লিখিত হাদীছ শরীফসমূহের উপর ভিত্তি করেই ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
ড এ সংখ্যাতেও তার আরো কিছু প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। (চলবে)
খন্দকার সেলিম আহমদ, পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল।
সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত মীলাদ-ক্বিয়ামের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।
তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
…. ৫. “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, চার মাযহাবের ইমাম রহতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে নিয়ে শুরু করে ৭০০ (সাতশত) বছর পর্যন্ত কোন নবী প্রেমিক নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে বা মুহব্বতে ক্বিয়াম করেননি।” ….
এখন আমার সুওয়াল হলো, ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, চার মাযহাবের ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ সম্পর্কে হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ডাহামিথ্যা, জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন। কারণ সরাসরি খোদ হাদীছ শরীফেও উল্লেখ আছে যে, স্বয়ং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীমার্থে বা সম্মানে যথাযথ আদবের সহিত দাঁড়িয়েছেন বা ক্বিয়াম করেছেন।
যেমন, এ প্রসঙ্গে “শোয়াবুল ঈমান লিল্ বায়হাক্বী” কিতাবের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৪৬৭ পৃষ্ঠার ৮৯৩০ নং হাদীছ শরীফে এবং “মিশকাত শরীফ”-এর ৪০৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,
عن ابى هر يرة رضى الله تعا لى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يجلس معنا فى المسجد يحد ثنا فاذا قام قمنا قيا ما حتى نراه قد دخل بعض بيوت أزواجه.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে নববী শরীফে বসে আমাদেরকে নছীহত করতেন। অতঃপর নছীহত শেষে যখন তিনি দাঁড়াতেন, আমরাও উপস্থিত সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানে দাঁড়াতাম। ততক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতাম যতক্ষণ আমরা তাঁকে দেখতে পেতাম। এমনকি তাঁর আহ্লিয়াগণের কোন একজনের হুজরা শরীফে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আমরা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানে যথাযথ আদবের সহিত দাঁড়িয়ে থাকতাম।”
“ইরশাদুস্ সারী লি র্শাহি ছহীহিল বুখারী” কিতাবের ৯ম খণ্ডের ১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وفى حد يث أسا مة ابن شر بك رضى الله تعا لى تعالى عنه ….. قال قمنا الى النبى صلى الله عليه وسلم فقبلنا يده.
অর্থঃ- “হযরত উসামা ইবনে শারীক রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে। ….. তিনি বলেন, আমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীম-এর জন্যে উপস্থিত সকল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ দাঁড়াতাম। অতঃপর আমরা তাঁর হাত মুবারকে চুম্বন করতাম।”
“শোয়াবুল ঈমান লিল্ বায়হাক্বী” কিতাবের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৪৬৭ পৃষ্ঠার ৮৯২৯ নং হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
عن ا بى هر يرة رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا أراد ان يد خل بيتا قمنا له.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন;ঞ্জ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হুজরা শরীফে প্রবেশ করার ইচ্ছা পোষণ করতেন, তখন আমরা উপস্থিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানে যথাযথ আদবের সহিত দাঁড়াতাম।”
“মিশকাত শরীফের শরাহ্ মিরকাত শরীফ” কিতাবের ৯ম খণ্ডের ৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن أ بى أما مة رضى الله تعا لى عنه قال خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم متكيا أى معتمدا على عصا أى لمر ض كان به فقمنا له أى لتعظيمه صلى الله عليه وسلم
অর্থঃ- “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, একবার আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থতার কারণে লাঠির উপর ভর দিয়ে হুজরা শরীফ থেকে বের হয়ে আসলেন, অতঃপর আমরা উপস্থিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীমের জন্য বা সম্মানের জন্য যথাযথ আদবের সহিত দাঁড়িয়ে গেলাম।
“মিরকাত শরীফ”-এর ৯ম খন্ডের ৮৫ পৃষ্ঠায় আরো বলা হয়েছে,
ا شك انهم انما قا موا لله وتعظيما لر سول الله صلى الله عليه وسلم.
অর্থঃ- “কোন সন্দেহ নেই। নিশ্চয় তাঁরা (অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ) আল্লাহ্ পাক-এর জন্য এবং আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে দাঁড়িয়েছেন বা ক্বিয়াম করেছেন।
উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রমাণিত হলো যে, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীমার্থে বা সম্মানে ক্বিয়াম করার প্রমাণ সরাসরি খোদ হাদীছ শরীফেই উল্লেখ আছে। এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ একমাত্র নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানেই ক্বিয়াম করেছেন। শুধু তাই নয় ক্বিয়াম করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নির্দেশও দিয়েছেন। তাহলে এত দলীল-আদিল্লাহ্ থাকার পরও কি করে একথা বলা যেতে পারে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ….নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানে ক্বিয়াম করেননি।” (নাউযুবিল্লাহ)
কাজেই, ক্বিয়াম সম্পর্কিত হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ডাহামিথ্যা, মনগড়া, দলীলবিহীন, কারচুপি ও প্রতারণামূলক।
প্রদত্ত সুওয়াল-জাওয়াবের টীকা ভাষ্যঃ
(ক) বিগত সংখ্যায় মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীছ শরীফ দ্বারাই উল্লেখ করা হয়েছে, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সম্মানে দাঁড়ানোকে অপছন্দ করেননি। বরং মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীছ শরীফেই উল্লেখ আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেও দাঁড়িয়েছেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে দাঁড়ানো বা ক্বিয়াম করার ব্যাপারে নির্দেশও দিয়েছেন।
(খ) বর্তমান সংখ্যায় দেয়া জবাবের মূল কথা হলো, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুমগণ, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীমার্থে বা সম্মানে যথাযথ আদবের সহিত দাঁড়িয়েছেন বা ক্বিয়াম করেছেন।
(গ) হাটহাজারীর মৌলভীরা বলেছে,“হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে-তাবিয়ীন, চার মাযহাবের ইমাম রহতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে নিয়ে শুরু করে ৭০০ (সাতশত) বছর পর্যন্ত কোন নবী প্রেমিক নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে বা মুহববতে ক্বিয়াম করেননি।” তাদের উক্ত বক্তব্য যে ডাহামিথ্যা তা পরবর্তী সংখ্যায় ইন্শাআল্লাহ্ প্রমাণ করা হবে। (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই।
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
….. “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” ….
কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক)
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের’ প্রেক্ষিতে আপনার তৃতীয় সুওয়াল হলো- “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?”
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে, যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে।
তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।
প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ
বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ২০
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের অনেকেই মনে করে থাকে যে, “তাদের ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগের দাওয়াত মোতাবেক যাদের জীবন পরিবর্তিত হবে। শুধুমাত্র তাদের দ্বারাই আল্লাহ্ পাক হিদায়েত বা দ্বীনের কাজ নিবেন। যেমন, “হযরতজীর কয়েকটি স্বরণীয় বয়ান” নামক কিতাবের ২য় খণ্ড ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ‘যাদের জীবন দাওয়াত মোতাবেক পরিবর্তন অর্জিত হবে, তাদের দ্বারা আল্লাহ্ পাক হিদায়েত ছড়াবেন…। যাদের জীবনে দাওয়াত মোতাবেক পরিবর্তন আসবে না, তাদের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা দ্বীনের প্রকৃত কাজ নিবেন না।”
(পর্ব- ৩)
উল্লেখ্য, এ ব্যাপারে বিশিষ্ট ও প্রসিদ্ধ ছাহাবী হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হিদায়েত লাভ করার বা জীবনে পরিবর্তন আসার ঘটনাটিও বিশেষভাবে স্মরণীয়।
মুহাদ্দিসীনে কিরাম বা ঐতিহাসিকগণের মতে, হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পাঁচশ’ বৎসর হায়াত পেয়েছেন। অবশ্য কেউ কেউ কমও বলেছেন। তবে ঐক্যমতে কমপক্ষে দু’শত পঞ্চাশ বছর বলা হয়েছে। হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন মজুসী বা অগ্নি উপাসকের সন্তান। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি মজুসী ধর্ম পরিত্যাগ করে খৃস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং মুসেল, নসিবাইন ইত্যাদি নানা স্থান সফর করে পর্যায়ক্রমে এক পাদ্রী থেকে অপর পাদ্রীর নিকটে গিয়ে হক্ব তালাশ করতে লাগলেন। তিনি সর্বশেষ যে পাদ্রীর নিকট যান, সে পাদ্রী তাঁকে বললো- হে সালমান! তুমি আমার পর আর কোন হক্ব পাদ্রী পাবেনা, এরপর তুমি আখিরী নবী, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমনের জন্য অপেক্ষা করবে। পাদ্রী আরো বললো, তিনি আগমন করবেন মক্কা শরীফে, ওয়াদিউল কোরায়, আর হিজরত করবেন, মদীনা শরীফে।
সে স্থান হবে কঙ্করময় ও খেজুর বৃক্ষে পরিপূর্ণ। তাঁর পিঠ মোবারকে থাকবে, “মোহরে নুবুওওয়াত।” তিনি হাদিয়া গ্রহণ করবেন, কিন্তু যাকাত-ফিৎরা খাবেন না।’ উক্ত পাদ্রী ইন্তেকাল করার পর হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আখিরী নবী, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্ধানে, হক্ব তালাশের উদ্দেশ্যে আরবীয় এক কাফেলার সাথে মক্কা-মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। কিন্তু কাফেলার লোকেরা চক্রান্ত করে পথিমধ্যে তাঁকে এক ইহুদীর নিকট গোলাম হিসেবে বিক্রী করে দেয়। ইহুদী তাঁকে নিয়ে মদীনায় চলে যায়। তিনি মদীনায় গিয়েই বুঝতে পারলেন, এখানেই আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরত করবেন। কারণ তিনি দেখলেন যে, এ স্থানটির বর্ণনা পাদ্রীর কথার সাথে সম্পূর্ণ মিলে যায়। তাই তিনি সেখানে আখিরী নবী, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হিজরতের অপেক্ষায় রইলেন।
একদিন তিনি তাঁর মনীবের উপস্থিতিতে মনীবের খেজুর গাছ পরিস্কার করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে ইহুদী মনীবকে সংবাদ দিল যে, যিনি ‘আখিরী নবী’ তিনি ইয়াসরেব অর্থাৎ মদীনা শরীফে এসেছেন। একথা হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও শুনলেন। তাই তিনি একদিন গোপনে, কিছু খেজুর নিয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে আসলেন এবং খেজুরগুলো দিয়ে বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এগুলো ছদ্কা হিসেবে এনেছি। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুরগুলো হাতে নিয়ে গরীব ছাহাবীদের দিয়ে বললেন, “এগুলো তোমরা খেয়ে ফেল, আমার জন্য ছদ্কা খাওয়া জায়িয নেই।” অতঃপর আরেক দিন কিছু খেজুর নিয়ে দরবার শরীফে আসলেন এবং বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এগুলো হাদিয়া স্বরূপ এনেছি। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা গ্রহণ করলেন, নিজে খেলেন এবং সকলকে খাওয়ালেন।” (সুবহানাল্লাহ)
পূর্বোক্ত পাদ্রির ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জন্য এখন শুধু বাকী রইলো মোহরে নুবুওওয়াত দেখা। তিনি মোহরে নুবুওওয়াত দেখার জন্য সর্বদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিছনে হাঁটতেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে পিছন দিক থেকে চাদর মোবারক ফেলে দেন, এ সুযোগে হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মোহরে নুবুওওয়াত দেখার পরম সৌভাগ্য লাভ করেন এবং তাতে তিনি চুমু খান। অতঃপর তিনি নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে, ইনিই হচ্ছেন আখিরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর সাথে সাথে তিনি বাইয়াত গ্রহণ করে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। (সুবহানাল্লাহ্)
স্মরণযোগ্য যে, হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জীবনে যে বিরাট ও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, তা কখনোই দাওয়াতের কারণে হয়নি। অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সরাসরি দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে তাঁর নিকট যাননি।
কিন্তু তথাপিও তিনি একজন বিশিষ্ট ছাহাবী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন এবং তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ পাক ব্যাপকভাবে হিদায়েত ছড়ান এবং হাক্বীক্বী দ্বীনের কাজ নেন। তাঁর হিদায়েতের সিলসিলা যেমন- নক্শবন্দীয়া ও মুজাদ্দেদিয়া তরীক্বা এখনো পৃথিবীতে রয়েছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত ইন্শাআল্লাহ্ থাকবে। যার মাধ্যমে অসংখ্য অগণিত লোক হিদায়েত লাভ করে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী হাছিল করছে এবং করবে। এছাড়াও অনুরূপ আরো অসংখ্য মেছাল রয়েছে যে, যাঁদের জীবনে দাওয়াত মোতাবেক পরিবর্তন আসেনি। কিন্তু তাঁদের দ্বারাও পৃথিবীতে হাক্বীক্বী দ্বীনের কাজ হয়েছে।
অতএব, উপরোক্ত বিস্তারিত এবং দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, শুধুমাত্র দাওয়াতই জীবনে পরিবর্তন বা হিদায়েত আসার মাধ্যম নয়, এছাড়াও বহু মাধ্যম রয়েছে। আর দাওয়াত ছাড়া অন্য কোনভাবে জীবনে পরিবর্তন আসলে বা হিদায়েত লাভ করলেও তাঁদের দ্বারা ব্যাপকভাবে হিদায়েত ছড়ানো বা দ্বীনের হাক্বীক্বী খেদমত হওয়া সম্ভব।
সুতরাং প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে বলে থাকে, “যাদের জীবনে দাওয়াত মোতাবেক পরিবর্তন আসবে, তাদের মাধ্যমে হিদায়েত ছড়াবে বা হাক্বীক্বী দ্বীনের কাজ হবে অন্যথায় নয়”- তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই অশুদ্ধ, বিভ্রান্তিকর, অজ্ঞতাপ্রসূত ও কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী। এ ধরণের বক্তব্য থেকে পরহিজ করা তাদেরসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য ফরজ-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)
মুছাম্মত ফাতেমা আক্তার, মতিঝিল, ঢাকা।
সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী ২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-
প্রশ্নঃ হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে মাটি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে তার অবশিষ্ট মাটি দ্বারা মুজাদ্দেদ আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে তৈরী করা হয়েছে মর্মে একটা কথা শুনেছি এটা কতটুকু সত্য? কুরআন-হাদীছের আলোকে আলোচনা করলে উপকৃত হবো
উত্তরঃ কথাটা একেবারেই অবান্তর। এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
এখন আমার সুওয়াল হলো- (ক) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি মাটির তৈরী? (খ) যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটির তৈরী না হন, তাহলে হাদীছ শরীফ যে রয়েছে, “যে সন্তানকে যে স্থানের মাটি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে সে স্থানেই তাকে দাফন করা হবে।” তাহলে এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা কি?
(গ) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অবশিষ্ট মাটি দ্বারা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে তৈরী করা সম্পর্কিত মাসিক মদীনার উপরোক্ত বক্তব্যই বা কতটুকু দলীল ভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য?
বিস্তারিত জানিয়ে বিভ্রান্তি দুর করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ ইমামে রব্বানী, মাহ্বূবে সুবহানী, আফযালুল আউলিয়া, কাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কিত মাসিক মদীনা উপরোক্ত বক্তব্য সম্পুর্ণই ডাহা মিথ্যা, মনগড়া ও দলীল বিহীন। কারণ যাদের কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের ইল্ম নেই, তাদের পক্ষেই এ ধরনের ডাহা মিথ্যা, মনগড়া ও দলীলবিহীন বক্তব্য দেয়া সম্ভব। আমরা পর্যায়ক্রমে উক্ত তিনটি সুওয়ালেরই দলীলভিত্তিক আলোচনা করবো ইন্শাআল্লাহ্।
যেমন প্রথমতঃ বলা হয়েছে, (ক) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি মাটির তৈরী?
এর জবাবে বলতে হয় যে- না, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘মাটির তৈরী’ নন। তিনি ‘নূরের তৈরী।’ তাই বলা হয়, তিনি ‘নূরে মুজাস্সাম।’
(ধারাবাহিক)
“মাটির তৈরী বলতে কি বুঝায়?”
কুরআন শরীফে মাটির তৈরী বলতে একমাত্র হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে বুঝানো হয়েছে। কুরআন শরীফে কোথাও হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাটির তৈরী বলে উল্লেখ করা হয়নি। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফেও তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
فلما اراد الله تعا لى ان يخلق الخلق قسم ذالك النور اربعة اجزاء فخلق من الجزء الاول القلم ومن الثا نى اللوح ومن الثا لث العرش ثم قسم الرا بع اربعة اجزاء فخلق من الاول حملة العر ش ومن الثا نى الكر سى ومن الثا لث با قى الملا ئكة ثم قسم الرا بع اربعة اجزاء فخلق من الاول السموت ومن الثا نى الارضين.
অর্থঃ- “….. অতঃপর যখন মহান আল্লাহ্ পাক ‘মাখলুকাত’ সৃষ্টি করার ইচ্ছা পোষণ করলেন তখন সেই ‘নূর’ মুবারক (অর্থাৎ “নূরে মুহম্মদী থেকে একটি অংশ নিয়ে তাঁকে) চার ভাগ করলেন। প্রথম ভাগ দ্বারা ‘কলম’ দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা ‘লওহে মাহ্ফুজ’ তৃতীয় ভাগ দ্বারা ‘আরশে মুয়াল্লা’ সৃষ্টি করলেন। চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগ করেন। প্রথম ভাগ দ্বারা ‘আরশ বহনকারী ফেরেশ্তা, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা ‘কুরসী’ আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা অন্যান্য সব ফেরেশ্তাদেরকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর এ চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগ করেন। প্রথম ভাগ দ্বারা ‘আসমান’ আর দ্বিতীয় ভাগ যমীন অর্থাৎ মাটি সৃষ্টি করেন ….।”
উপরোক্ত ছহীহ্ হাদীছ শরীফের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মাটি মূলতঃ সমস্ত কায়িনাত অর্থাৎ মাটিসহ সমস্ত কিছু তাঁর নূর থেকে সৃষ্টি। এতে বুঝা যাচ্ছে মাটিও নূরের একটা অংশ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পানির তিনটি ছূরত। (১) পানির সাধারন অবস্থা তরল, (২) পানিকে তাপ দিলে তা বাতাস বা বায়বীয় পদার্থ হয়ে যায়, (৩) পানিকে ঠান্ডা করলে তা বরফ বা শক্ত পদার্থে পরিণত হয়ে যায়।
এখন যদি উক্ত বায়বীয় পদার্থকে ঠান্ডা করা হয় তাহলে তা পূর্বের মত তরল পদার্থ বা পানিতে পরিণত হবে।
একইভাবে যদি বরফকে তাপ দেয়া হয় তাহলে উক্ত বরফ বা শক্ত পদার্থটিও তরল পদার্থে বা পানিতে পরিণত হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, যেই পানি নূর থেকে সৃষ্টি সেই পানির যদি তিন তিনটি ছূরত হতে পারে তাহলে নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা থেকে সবকিছু সৃষ্টি তাঁর কত ছূরত হতে পারে সেটা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। অর্থাৎ মাটি নূরের একটা ছূরত ও তার অংশ।
দ্বিতীয়তঃ (খ) যদি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটির তৈরী না হন, তাহলে হাদীছ শরীফ যে রয়েছে, “যে সন্তানকে যে স্থানের মাটি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে সে স্থানেই তাকে দাফন করা হবে।” তাহলে এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা কি?
এর জবাবে বলতে হয় য়ে, হ্যাঁ, হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে যে,
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعا لى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما من مولود الا وفى سر ته من تربته التى خلق منها حتى يد فن فيها.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রত্যেক সন্তানের নাভীতে মাটির একটি অংশ রাখা হয়, যেখানকার মাটি তার নাভীতে রাখা হয়েছিল মৃত্যুর পর সে ঐ স্থানেই সমাধিস্থ হবে। (মাযহারী, আল মুত্তাফিক ওয়াল মুফতারিক)
এই হাদীছ শরীফে মাটি থেকে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। সুতরাং তার ব্যাখ্যা হবে কি?
এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, মাতৃগর্ভে সন্তানের বয়স যখন চার মাস হয়, তখন নিয়োজিত ফেরেশ্তা উক্ত সন্তানের হায়াত-মউত ও মৃত্যুস্থান সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক-এর নিকট জিজ্ঞাসা করেন, তখন আল্লাহ্ পাক লওহে মাহফুজ দেখে নিতে বলেন। নিয়োজিত ফেরেশ্তা লওহে মাহফুজ দেখে যেখানে তার কবর হবে সেখান থেকে সামান্য মাটি এনে সন্তানের নাভীতে দিয়ে দেন। এটা মূলতঃ প্রতিটি মানুষের “কবরের স্থান” নির্ধারণের জন্যে দেয়া হয়। দেহ সৃষ্টির জন্য নয়। নিম্নে এর কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো।
যেমন, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি “শরহুছ্ ছুদুর” নামক কিতাবে উল্লেখ করেন, হাদীছ শরীফে রয়েছে,
اخرج ابو نعيم عن ابى هر يرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما من مو لود الا وقد ذر عليه من تراب حفر ته.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আবূ নঈম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘এমন কোন সন্তান নেই যার উপর তার কবরের মাটি ছিটিয়ে দেয়া হয়না।”
আল্লামা শা’রানী রহমতুল্লাহি আলাইহি “তায্কিরায়ে কুরতুবী” কিতাবে উল্লেখ করেন,
روى الد يلمى مر فو عا كل مو لود ينشر على سر ته من تراب حفر ته فاذا مات. ردالى تربته.
অর্থঃ- “ইমাম দায়লামী হতে মরফু’ হিসেবে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুয়ুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রতিটি সন্তানের নাভীর উপর (মাতৃগর্ভে) তার কবরের মাটি ছিটিয়ে দেয়া হয় এবং মৃত্যুর পর তাকে উক্ত মাটিতেই ফিরিয়ে নেয়া হয়।”
হযরত আবূ আব্দুল্লাহ্ মুহম্মদ ইবনে আহ্মদ আল আনছারী আল কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “তাফসীরে কুরতুবী” কিতাবের ৩য় খণ্ডের ৩৮৭ পৃষ্ঠায় লিখেন,
عن ابن مسعود ان الملك المو كل با لر حم يأ خذ النطفة فيضعها على كفه ثم يقول يا رب مخلقة او غير مخلقة فان قال مخلقة قال يا رب ما الرز ق ما الاثر ما الا جل فيقول انسظر فى ام الكتاب فينظر فى اللوح المحفوظ فيجد فيه رز قه وأثره واجله وعمله ويا خذ التراب الذى يد فن فى بقعته ويعجن به نطفته.
অর্থঃ- “হযরত আবূ নঈম হাফিজ মুররা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই রেহেমের জন্য নির্ধারিত ফেরেশ্তা নুত্ফা নিজ হাতের তালুতে রাখেন। অতঃপর বলেন, হে প্রতিপালক! এই নুত্ফা দ্বারা সন্তান সৃষ্টি হবে কি হবেনা?’ যখন আল্লাহ পাক বলেন, ‘এটা দ্বারা সন্তান সৃষ্টি হবে। তখন ফেরেশ্তা বলেন- তার রিযিকের ব্যবস্থা, মৃত্যুর আলামত কি ও মৃত্যু কোথায় হবে? প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ পাক বলেন, লওহে মাহ্ফুযে দেখে নাও। ফেরেশ্তা লাওহে মাহ্ফুয দেখে সেখানে তার রিযিক, মৃত্যুর আলামত, মৃত্যুর স্থান ও আমল সম্পর্কে জেনে নেন। অতঃপর যেখানে তাকে দাফন করা হবে সেখান থেকে একটু মাটি নিয়ে তা নুত্ফার সঙ্গে মিশিয়ে দেন।”
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়, তাহলো- এক হাদীছ শরীফে যদিও বলা হয়েছে যে, কবরের মাটি নাভীমূলে রেখে দেয়া হয়, কিন্তু অন্য হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, নুতফার সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ সন্তানের বয়স যখন মাতৃগর্ভে চার মাস হয় তথা সন্তানের দেহ বা আকার-আকৃতি যখন সৃষ্টি হয়ে যায়, তখন রূহ ফুঁকে দেয়ার সময় ফেরেশ্তা তার কবরস্থান থেকে মাটি এনে নাভীমূলে রেখে দেন।
এতে বুঝা গেল যে, উক্ত মাটি মূলতঃ দেহ সৃষ্টির জন্যে নয় বরং কবরস্থান নির্ধারণের জন্যে। যদি দেহ সৃষ্টির জন্যই হতো তবে দেহ সৃষ্টির পরে উক্ত মাটি নাভীতে রাখা হলো কেন? উক্ত মাটি রাখার পূর্বেই তো দেহ সৃষ্টি হয়ে গেছে তাই এখন রূহ ফুঁকে দেয়া হবে।
সুতরাং বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, কবরের মাটি নাভীমূলে রেখে দেয়া হোক বা নুতফার সাথে মিশিয়ে দেয়া হোক তা দেহ সৃষ্টির জন্য নয় বরং কবরের স্থান নির্ধারণের জন্য।
এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের রওজা শরীফ চিহ্নিত করার জন্য নির্দিষ্ট স্থান থেকে মাটি যা তার হাক্বীক্বী ছূরতে এনে নূর বানিয়ে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের নাভী মুবারকের উপর রাখা হয়।
এর মেছালস্বরূপ বলা হয়, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম এবং হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম যারা বিনা নুত্ফাতে কুদরতীভাবে সৃষ্টি হয়েছেন। এছাড়াও হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালামও বিনা নুত্ফায় কুদরতীভাবে সৃষ্টি হয়েছেন।
আর আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সৃষ্টি মুবারক তাঁদের চাইতেও অনেক বেশী রহস্যময় ও কুদরতের অন্তর্ভূক্ত।
এছাড়াও আল্লাহ পাক-এর কিছু খাছ বান্দা বা বান্দী রয়েছেন যাদের কবরস্থান চিহ্নিত করার জন্য তাঁদেরও নাভীমূলে মাটি রাখা হয়েছে। আর আওয়ামুন্ নাস বা সাধারণ লোকদের কবরস্থান চিহ্নিত করার জন্য তাদের নির্দিষ্ট স্থান থেকে মাটি এনে নুত্ফার সাথে মিশ্রিত করা হয়।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, কবরের মাটি নাভীমূলে রেখে দেয়া হোক বা নুতফার সাথে মিশিয়ে দেয়া হোক মুলত তা দেহ সৃষ্টির জন্য নয় বরং কবরের স্থান নির্ধারণের জন্য। (চলবে)
মুহম্মদ রুহুল কুদুস ভূঁইয়া, মুহম্মদ মাবরুরুল হক (ফুয়াদ)
গুলবাগ, শান্তিবাগ, ঢাকা।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ফেব্রুয়ারী-মার্চ/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘‘মসজিদে জানাযার নামায পড়া সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের উত্তরে যা লিখেছে তাতে বুঝা যায় যে, লাশ বাইরে রেখে মসজিদের ভিতরে জানাযার নামায আদায় করা জায়িয।”…… তদুপরি বর্তমানে পবিত্র হারামাঈন শরীফাঈনসহ বিশ্বের অনেক স্থানে বাইরে লাশ রেখে মসজিদের ভিতর নামাযে জানাযা আদায় করা হচ্ছে। …. সুতরাং এ বিষয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা অনুচিত……।”
এখন আমার সুওয়াল হলো- তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু সঠিক? দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ লাশ বাইরে রেখে মসজিদের ভিতরে জানাযার নামায আদায় করা সম্পর্কে রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ হানাফী মাযহাব মতে বিনা ওজরে মসজিদের ভিতর জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। চাই লাশ মসজিদের ভিতরে থাকুক অথবা বাইরে। অধিকাংশ মুতাআখখিরীন আলিমগণের এটাই অভিমত এবং এ মতটিই ছহীহ্, গ্রহণযোগ্য, তরজীহ্প্রাপ্ত, ফতওয়াগ্রাহ্য বা মুখতার মত।
কেউ কেউ মাকরূহ্ তানযীহী বলেছেন তবে সেটা ফতওয়াগ্রাহ্য বা গ্রহণযোগ্য মত নয়। আবার কেউ কেউ লাশ বাইরে রাখলে মাকরূহ্ হবেনা বলে যে মত পেশ করেছেন সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়।
বরং গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত হলো, চাই লাশ ভিতরে থাকুক অথবা বাইরে থাকুক উভয় অবস্থাতেই জানাযার নামায মসজিদে আদায় করা মাকরূহ তাহরীমী।
এ প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফিক্বাহ্র কিতাব “খুলাছাতুল ফতওয়া” কিতাবের ১ম খণ্ড ২২২, ২২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
صلوة الجنازة فى المسجد الذى يقام فيه الجما عة مكروه سواء كان الميت والقوم فى المسجد او كان الميت خارج المسجد والقوم فى المسجد ……. هوالمختار.
অর্থঃ- “যে মসজিদে জামায়াত হয় সেই মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। চাই লাশ ও মুছল্লী মসজিদের ভিতরে হোক অথবা লাশ মসজিদের বাইরে ও মুছল্লী মসজিদের ভিতরে হোক। উভয় অবস্থায় একই হুকুম। ….. আর هوالمختارএটাই ফতওয়াগ্রাহ্য অভিমত।”
“ফতওয়ায়ে তাতারখানীয়া” কিতাবের ২য় খণ্ডের ১৭৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে
وإ نما تكره الصلاة على الجنازة فى المسجد الجا مع و مسجد الحى عند نا
অর্থঃ- “আমাদের হানাফী মাযহাবে জামে মসজিদে ও মহল্লার মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।”
“ফতওয়ায়ে আলমগীরী”-এর ১ম খণ্ড ১৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وصلاة الجنازة فى المسجد الذى تقام فيه الجما عة مكر وهة سواء كان الميت والقوم فى ا لمسجد أو كان الميت خارج المسجد والقوم فى المسجد …… هوالمختار.
অর্থঃ- “যে মসজিদে জামায়াত হয় সেই মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। চাই লাশ ও মুছল্লী মসজিদের ভিতরে হোক অথবা লাশ মসজিদের বাইরে ও মুছল্লী মসজিদের ভিতরে হোক। উভয় অবস্থাতেই একই হুকুম। ….. এটাই هوالمختارফতওয়াগ্রাহ্য অভিমত।”
পরিশেষে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের প্রথম গুরু স্বয়ং রেযা খাঁই তার রেজভীয়া কিতাবে মসজিদের ভিতরে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলে ফতওয়া দিয়েছে।
যেমন, “রেজভীয়া” -এর ৪র্থ খণ্ডের ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
نماز مذ ھب حنفی میں جنازہ مسجد میں رکہ کر اوس پر مکروہ تحر یمی بے. ننو یر الا بصار میں بے کر ھت تحر یما فی مسجد جما عۃ ھو فیہ واختلف فی الخار جۃ والمختار الکراھۃ.
অর্থঃ- “হানাফী মাযহাব মতে লাশ মসজিদে রেখে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। “তানবীরুল আবছার” কিতাবে উল্লেখ আছে, মসজিদের ভিতর জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। লাশ বাইরে রেখে পড়ার মধ্যে মতভেদ রয়েছে। মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতে তাও মাকরূহ্ তাহ্রীমী। অর্থাৎ والمختار বা ফতওয়াগ্রাহ্য মত হলো লাশ বাইরে রেখে মসজিদের ভিতর জানাযার নামায আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।” ঞ্জ
“রেজভীয়া” -এর ৪র্থ খণ্ডের ৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
فول راجح تر یہ بے کہ نما زمذ کور مکروہ بے. اور ایسا کر نا منع بے. تنو یر الا بصا رو در مختار میں بے کر ھت تحر یما فی مسجد جما عۃ ھو ای المیت فیہ وا ختلف فی الخارجۃ عن المسجد وحدہ اومع بعض القوم والمختار الکر اھۃ مطلقا.
অর্থঃ- “অধিক প্রাধান্য প্রাপ্ত কাউল এইযে, উল্লিখিত অবস্থায় অর্থাৎ লাশ মসজিদে রেখে জানাযার নামায আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী, এরূপ করা নিষেধ। “তানবীরুল আবছার” ও “দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে, মসজিদে লাশ রেখে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। আর লাশ বাইরে রেখে মসজিদের ভিতরে ইমাম একা দাঁড়ানো অথবা মুছল্লিদের কতককে সাথে নিয়ে দাঁড়ানোর ব্যাপারে মতভেদ আছে, তবে (والمختار) মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মত হলো তাও মাকরূহ্ তাহ্রীমী।”
“রেজভীয়া” কিতাবের ৪র্থ খণ্ডের ৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اور نماز جنازہ مسجد میں مکروہ بے کما فی التنویر والدر و غیر ھما.
অর্থঃ- “জানাযার নামায মসজিদে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। যেমন ‘তানবীরুল আবছার’ ও ‘দুররুল মুখতার’ এবং উহা ব্যতীত অন্যান্য বিশ্ব খ্যাত ফিকাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব সমুহেও উল্লেখ আছে যে, মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।” চাই লাশ বাইরে থাকুক অথবা ভিতরে থাকুক, সকল অবস্থাতেই মসজিদের ভিতরে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। আর هو المختارএটাই গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।”
“রেজভীয়া” কিতাবের ৪র্থ খণ্ডের ৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
صحیح یہ بے کہ مسجد میں نہ جنازہ ہو نہ امام جنا زہ نہ صف جنازہ یہ سب مکروہ بے.
অর্থঃ- “এটাই ছহীহ বা বিশুদ্ধমত যে, মসজিদে জানাযা হবে না। ইমামও মসজিদে জানাযা পড়বে না এবং মসজিদে জানাযার কোন কাতারও হবে না। এগুলো সবই মাকরূহ্ তাহ্রীমী। ”
তাছাড়া রেযাখানীদের দ্বিতীয় গুরু মৌলভী আমজাদ আলী সাহেবও তার “বাহারে শরীয়ত” কিতাবে মসজিদের ভিতরে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী বলে ফতওয়া দিয়েছে।
যেমন, মৌলভী আমজাদ আলী ছাহেব তার “বাহারে শরীয়ত” কিতাবের ৪র্থ খণ্ডের ১২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছে,
مسجد میں نماز جنازہ مطلقا مکروہ تحر یمی بے خواہ میت مسجد کہ اندر ہو یا با ہر سب نمازی مسجں میں ہوں یا پڑھنے کی بعض کہ حدیث میں نماز جنازہ مسجد میں مما نعت انی.
অর্থঃ- “মসজিদের ভিতরে জানাযার নামায পড়া, চাই লাশ মসজিদের ভিতরে হোক অথবা বাইরে হোক। সব মুছল্লী মসজিদের ভিতরে হোক অথবা কিছু মুছল্লী। সব অবস্থাতেই সাধারণভাবে (مطلقا) মাকরূহ্ তাহ্রীমী। (কেননা) হাদীছ শরীফে জানাযার নামায মসজিদের ভিতরে পড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।”
সুতরাং ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহের ভাষ্য মতে “যে মসজিদে জামায়াত হয় সেই মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। চাই লাশ ও মুছল্লী মসজিদের ভিতরে হোক অথবা লাশ মসজিদের বাইরে ও মুছল্লী মসজিদের ভিতরে হোক। উভয়ের একই হুকুম। ঞ্জঅর্থাৎ লাশ বাইরে থাকুক অথবা ভিতরে থাকুক উভয় অবস্থাতেই মসজিদের ভিতরে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। আর هو المختار এটাই ফতওয়াগ্রাহ্য অভিমত।”
অনুরূপ ফিক্বাহ্র বিখ্যাত কিতাব- “তানবীরুর আবছার, দুররুল মুখতার, বাহরুর রায়িক, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, গায়াতুল আওতার, খুলাছাতুল ফতওয়া, জাওহারাতুন নাইয়ারাহ, ফতওয়ায়ে শামী, আল লুবাব লিল মায়দানী, নুযহাতুল ওয়াজিদ, মুখতারাতুন নাওয়াযিল, ফতওয়ায়ে ছোগরা, ফতওয়ায়ে কাসিমিয়া” ইত্যাদি কিতাবেও উল্লেখ আছে।
তবে শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের মত এর সম্পূর্ণ বিপরীত। অর্থাৎ তাদের মতে সর্বাবস্থায়ই মসজিদের ভিতর জানাযা পড়া জায়িয। তবে আমাদের হানাফী মাযহাবে সে মত মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, পবিত্র হারামাঈন শরীফাঈনসহ বিশ্বের অনেক স্থানে বাইরে লাশ রেখে মসজিদের ভিতর নামাযে জানাযা আদায় করা হচ্ছে।ঞ্জতা মূলতঃ শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাব মুতাবিক আদায় করে থাকে। কেননা, সেখানে শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী অনেক রয়েছে।
আর হানাফী ও মালিকী মাযহাব মতে মসজিদের ভিতরে জানাযা পড়া মাকরূহ তাহ্রীমী। কিন্তু শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাব মতে বিনা ওজরেও মসজিদে জানাযা পড়া জায়িয।
কাজেই তারা যদি শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাব অনুসারী হিসেবে তা করে থাকে তাহলে তাদের জন্য জায়িয রয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে রেযাখানীদের প্রথম গুরু স্বয়ং রেযা খাঁই তাঁর “রেজভীয়া” কিতাবের ৪র্থ খণ্ডের ৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছে যে,
مسنلہ. … (২) خانہ کعبہ اور مسجد اقد س نبوی میں نما ز جنازہ کیوں ہو تی بے اور جب کعبہ شریف میں نماز پڑھتے بیس تو مسجد میں کیا حرج بے لجواب: ….(২) وباں شافعیہ کہ طور پر ہو نی بے. حنفیہ کے نزدیک جانز نھیں.
অর্থঃ- “মাসয়ালাঃ ……… খানায়ে কা’বা এবং মসজিদে নববী শরীফে জানাযা কেন হয়? আর কা’বা শরীফে যখন নামাযে জানাযা হচ্ছে বা হয় তখন মসজিদে পড়লে ক্ষতি কি?
জাওয়াবঃ……. “খানায়ে কা’বা এবং মসজিদে নববীতে শাফিয়ী মাযহাব অনুযায়ী জানাযা পড়া হয়। হানাফীদের নিকট তা জায়িয নেই।”
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, আমাদের হানাফী মাযহাব মতে মুখতার, ছহীহ, তরজীহ্প্রাপ্ত, গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত হলো, “মসজিদের ভিতরে জানাযার নামায পড়া চাই লাশ বাইরে থাকুক অথবা ভিতরে থাকুক সকল অবস্থাতেই তা মাকরূহ তাহরীমীর অন্তর্ভূক্ত। তবে শাফিয়ী ও হাম্বলী মাযহাব মুতাবিক মসজিদের ভিতরে জানাযা পড়া জায়িয। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া। এর বিপরীত মত পোষণকারী ও আমলকারী বিদয়াতী ও গোমরাহ।.
সুতরাং রেযাখানীদের মতে তাদের গুরু রেযা খাঁই এ বিষয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেছে। তাই রেযাখানীদের উচিত প্রথমেই নিজেদের ঘর সামলানো।
{দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) আবূ দাউদ, (৪) ইবনে মাজাহ্, (৫) নাসায়ী, (৬) ইবনে আবী শায়বা, (৭) বাইহাক্বী, (৮) মুসনাদে আহমদ, (৯) শরহে মা’য়ানিল আছার, (১০) ফতহুল বারী, (১১) উমদাতুল ক্বারী, (১২) ইরশাদুস্ সারী, (১৩) শরহে নববী, (১৪) বযলুল মাযহুদ, (১৫) জামিউছ ছগীর, (১৬) হিদায়া, (১৭) আল মুখতাছারুল কুদূরী, (১৮) তানবীরুর আবছার, (১৯) দুররুল মুখতার, (২০) বাহরুর রায়িক, (২১) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (২২) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া, (২৩) গায়াতুল আওতার, (২৪) খুলাছাতুল ফতওয়া, (২৫) জাওহারাতুন নাইয়ারাহ, (২৬) শরহে বিক্বায়া, (২৭) মারাকিউল ফালাহ, (২৮) ফতওয়ায়ে শামী, (২৯) শরহুন্ নিকায়া, (৩০) ইনায়া, (৩১) ফিকায়া, (৩২) উমদাতুর রিয়ায়া, (৩৩) ফতওয়ায়ে কাসিমিয়া, (৩৪) ফতওয়ায়ে ছোগরা, (৩৫) আল লুবাব লিল মায়দানী, (৩৬) নুযহাতুল ওয়াজিদ, (৩৭) মুখতারাতুন নাওয়াযিল, (৩৮) কাফী, (৩৯) বাহারে শরীয়ত, (৪০) রেজভীয়া ইত্যাদি}
(বিঃ দ্রঃ- এ সম্পর্কে আরো জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ৮৯ ও ১১৪তম সংখ্যা পাঠ করুন। এর পরেও প্রয়োজন হলে আমরা পরবর্তীতে বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করবো ইন্শাআল্লাহ্।)
নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক
ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।
সুওয়াল: হানাফী মাযহাবে –
(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।
(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।
(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।
(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।
(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।
(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।
(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।
(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।
(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।
(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।
(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।
(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।
কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।
অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: সুওয়ালে উল্লিখিত হানাফী মাযহাবের মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে তার পূর্বে মাযহাব মানা ফরয, মাযহাব না মানা বিদ্য়াত ও গোমরাহী, মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী- সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ।
(ধারাবাহিক)
মাযহাব মানা ফরয-ওয়াজিব। কেননা মাযহাব না মানার অর্থ হচ্ছে শরীয়তের দু’টি দলীল- ইজমা ও কিয়াস অস্বীকার করা
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া হলো, শরীয়তের কোন বিষয়ের মীমাংসা বা ফায়সালা করতে হলে তা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াসের দৃষ্টিতেই করতে হবে। এর বাইরে কোন কথা বা কাজ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, শরীয়তের ভিত্তি বা দলীলই হলো উপরোক্ত চারটি।
এ প্রসঙ্গে উজ্জ্বলের কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
أصول الشرْعِ خَلْقَهُ الْقُرْآنُ وَالْحَدِيثُ وَالْإِجْمَاعُ وَرَابِعُهَا الْقِيَاسُ.
অর্থঃ- “মূলতঃ শরীয়তের ভিত্তি হলো তিনটি। কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা এবং চতুর্থ হলো- কিয়াস।” (নূরুল আনওয়ার)
ইজমা
যে বিষয়ে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে স্পষ্ট কোন কিছু বলা হয়নি, সে বিষয়ে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করতঃ হুকুম ছাবিত করতে হবে। অবস্থার প্রেক্ষিতে ও প্রয়োজনীয়তায় এ ধরণের ইজতিহাদ করা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরই নির্দেশ।
যেমন, কালামে পাকে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
فَاعْتَبِرُوا يَأْولِي الْأَبْصَارِ.
অর্থঃ- “হে চক্ষুম্মান ব্যক্তিগণ। তোমরা গবেষণা কর।” (সূরা হাশর-২)
আর হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনছকে ইয়েমেনের গভর্নর করে পাঠানোর প্রাক্কালে বলেছিলেন-
بِمَ تَقْضِي يَا مُعَادُ فَقَالَ بِكِتَابِ اللَّهِ فَإِنْ لَمْ تَجِدُ قَالَ بِسْتَةِ رَسُولِ اللَّهِ فَإِنْ لَمْ تَجِدْ قَالَ اجْتَهِدُ بِرَانِي فَقَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي وَفَقَ .رَسُولَ رَسُولِ اللَّهِ بِمَا يَرْضَى بِهِ رَسُوْلُهُ
অর্থঃ- “হে মুয়াষ! তোমার নিকট কোন মুকাদ্দমা আসলে কিভাবে তা ফায়সালা করবে? হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আল্লাহ পাক-এর কিতাবের দ্বারা। যদি তাতে না পাও তাহলে? আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ দ্বারা। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, যদি তাতেও না পাও তাহলে? আমি কিতাব ও সুন্নাহর ভিত্তিতে ইজতিহাদ করে রায় দিবো। এ উত্তর শুনে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহ পাক-এর, যিনি তাঁর রসূলের দূতকে এ যোগ্যতা দান করেছেন, যাতে তাঁর রসূল সন্তুষ্ট হন।” (মিশকাত, মিরকাত, শরহুত ত্বীবী)
সুতরাং স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে যে, মুসলমানদের কল্যণার্থে ও কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফেরই নির্দেশ।
উল্লেখ্য, যে ইঞ্জতিহাদকৃত মাসয়ালা এককভাবে রয়েছে, সেটাকে বলা হয় কিয়াস। আর ইজতিহাদকৃত মাসয়ালার মধ্যে যেগুলোর উপর মুজতাহিদগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন, শরীয়তে তাকেই ইজমা বলা হয়।
ইজমা-এর দলীল সম্পর্কে শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম, ইমামুল আইমা, হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘কুরআন শরীফ থেকে ইজমার দলীল বের করার উদ্দেশ্যে আমি তিন দিনে নয় বার কুরআন শরীফ খতম করি।” অন্য বর্ণনায় এসেছে, “তিনশ’বার কুরআন শরীফ খতম করি। অতঃপর আমি নিশ্চিত হই যে, নিম্নোক্ত আয়াত শরীফখানাই ‘ইজমা-এর’ দলীল। যেমন, ইরশাদ হয়েছে,
وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَله مَا تَوَلَى
অর্থঃ- “কারো নিকট হিদায়েত বিকশিত হওয়ার পরও যদি সে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরূদ্ধাচরণ করে, আর মু’মিনগণের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথের অনুসরণ করে, আমি তাকে সে দিকেই ফিরাবো, যে দিকে সে ফিরেছে।” (সূরা নিসা-১১৫)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ইজমা শরীয়তের অকাট্য দলীল এবং তা অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য অবশ্যই কর্তব্য।
ইজমা-এর প্রকারভেদ ও আহকাম
ইজমার প্রকারভেদ ও আহকাম সম্পর্কে প্রখ্যাত আলিমে দ্বীন, ইমামুল উদ্ধৃলিয়্যীন হযরত আবূ সাঈদ মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব “নূরুল আনওয়ারে” লিখেন, “ইজমা” শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ঐক্যমত।
আর শরীয়তে “ইজমা” বলা হয়, এক যামানায় উম্মতে মুহম্মদির সকল নেককার মুজতাহিদগণের কোন কুণ্ডল (কথা) ফে’ল (কাজ)-এর উপর ঐক্যমত পোষণ করাকে। “ইজ্যা” দু’প্রকার-
১. ইজমায়ে আযীমত
সকল মুজতাহিদগণ কোন বিষয়ে এমন শব্দ ব্যবহার করা যদ্বারা ঐক্যমত প্রমাণিত হয়। যেমন সকলেই বললো এ এ অর্থাৎ আমরা সকলেই এ ব্যাপারে একমত। এরূপ ইজমা কুণ্ডলী বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অথবা উক্ত বিষয়টি যদি হয়। আর সকলেই তা আমল করা শুরু করে দেয়, তবে এরূপ ইজমাকেই “ইজমায়ে আযীমত” বলে।
২. ইজমায়ে রুখছত
ইজতিহাদকৃত কৃওল বা ফে’ল এর উপর কেউ কেউ ঐক্যমত পোষণ করা আর কেউ কেউ পোষণ না করা। অর্থাৎ ইজতিহাদকৃত বিষয়ে কেউ কেউ ঐক্যমত পোষণ করেছে আর বাকী সকলে নিশ্চুপ রয়েছে। সংবাদ পৌঁছার তিন দিনের মধ্যে প্রতিবাদ করেনি। এরূপ ইজমাকেই “ইজমায়ে রুদ্ভুত” বলে। এর অপর নাম হচ্ছে “সুকুতী”। (নূরুল আনওয়ার মাআ আষছরিল আযহার ৩১৬ পৃষ্ঠা)
ইজ্যা-এর আহকাম
ইজমা-এর অনুসরণ করা প্রত্যেকের জন্য অবশ্যই কর্তব্য। যে ব্যক্তি ইজমাকে (ইজমায়ে আযীমতকে) অস্বীকার করলো, সে কুফরী করলো।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
فَيَكُونُ الإِجْمَاعُ حُجَّةٌ يَكْفُرُ جَاحِدُهُ كَالْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ .
অর্থঃ- “ইজমায়ে আযীমত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের মতই একটি অকাট্য দলীল। যে তা অস্বীকার করলো, মূলতঃ সে কুফরী করলো।” (তাফসীরে আহমদী)
এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, মুজতাহিদ অর্থাৎ যিনি ইজতিহাদ করবেন, তাঁকে অবশ্যই ছালিহীনগণের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে, আদিল হতে হবে, সুন্নতের পূর্ণ পাবন্দ হতে হবে, ছগীরাহ গুণাহও তাকে পরহেয করতে হবে। কোন বিদয়াতী ও হারাম কাজে লিপ্ত ব্যক্তির ইজতিহাদ শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।
যেমন, বর্তমানে অনেক ওলামায়ে “ছু” বা দুনিয়াদার, তথাকথিত মাওলানারা আধুনিকতার দোহাই দিয়ে ছবি তোলার কাজে লিপ্ত। অথচ শরীয়তে ছবি তোলা সম্পূর্ণ হারাম।
তারা ইসলামী হুকুমত জারী করার দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র ভিত্তিক আন্দোলন, নির্বাচন, ভোট, বে-পর্দা, হরতাল, কুশপুত্তলিকাদাহসহ আরো বহু কাজে জড়িত। অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সমস্ত কাজগুলো সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়েয।
সুতরাং এ ধরণের কোন তথাকথিত মাওলানা বাহ্যিক দৃষ্টিতে যতই ইলমের দাবীদার হোক না কেন, হাকীকৃতে সে মুজতাহিদ হওয়ার আদৌ উপযুক্ত নয়। এরূপ ব্যক্তির দ্বারা ইজতিহাদের প্রশ্নই উঠেনা। তা সত্ত্বেও যদি সে মুজতাহিদ দাবী করে বা কোন প্রকার ইজতিহাদ করে তবে তার মেছাল হবে ইবলীসের মতই। কারণ ইবলীসই সর্ব প্রথম মনগড়া ও গোমরাহীমূলক ইজতিহাদ করেছিল। যার ফলে সে চির লা’নতী ও জাহান্নামী হয়ে যায়।
যেমন, এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে,
فَسَجَدُوا إِلَّا وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَئِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ .
অর্থঃ- “আর যখন আপনার রব (ইবলীসসহ) সকল ফেরেস্তাদের প্রতি হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা করার নির্দেশ দিলেন; তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই তাঁকে সিজদা করলো।” (সূরা বাক্বারা-৩৪) হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা না করার কারণে মহান
আল্লাহ পাক ইবলীসকে জিজ্ঞাসা করলেন,
ما مَنَعَكَ الأَتَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ .
অর্থঃ- “(হে ইবলীস)। আমি আদেশ করার পর কোন্ জিনিস (আদম
আলাইহিস সালামকে) সিজদা করা থেকে তোকে বিরত রাখলো?”
(সূরা আ’রাফ-১২)
ইবলীস তখন (মনগড়া) ইজতিহাদ করে বললো,
أَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طين.
অর্থঃ- “(আয় আল্লাহ পাক)। আমি তাঁর থেকে উত্তম। কারণ আপনি আমাকে আগুন থেকে তৈরী করেছেন, আর তাঁকে (আদম আলাইহিস্ সালামকে) মাটি থেকে তৈরী করেছেন।” (সূরা আ’রাফ-১২)
কাজেই, আগুনের স্বভাব হলো উপরে থাকা, আর মাটির স্বভাব হলো নীচে থাকা, তাই আমি আগুন হয়ে মাটিকে সিজদা করতে পারিনা।”
উল্লেখ্য, ইবলীসের উক্ত ইজতিহাদ ছিল মনগড়া ও মহান আল্লাহ পাক-এর হুকুমের সম্পূর্ণই খিলাফ। যার ফলে তার সে ইজতিহাদই তাকে চির জাহান্নামী, লা’নতী ও চরম গোমরাহীতে নিপতিত করেছে।
যে সম্পর্কে কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে,
ابي واسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَفِرِينَ.
অর্থঃ- “(ইবলীস) সিজদা করতে অস্বীকার করলো এবং অহংকার করে (মনগড়া ইজতিহাদ করলো)। তাই সে কাফিরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।” (সূরা বাক্বারা-৩৪)
তদ্রুপ বলতে হয়, যারা শরীয়তের খিলাফ প্রকাশ্য হারামগুলোকে মনগড়া ও শরীয়ত বিরোধী ইজতিহাদ করতঃ হালাল করতে চায়, তারাও ইবলীসের খাছ অনুসারী এবং গোমরাহ্ রূপেই সাব্যস্ত।
এখানে আরো উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত হারাম বিষয়গুলোকে মা’জুর হিসেবে গণ্য করার কোন অবকাশ নেই। আর মা’জুরের ক্ষেত্রে নতুন করে ইজতিহাদ করারও কোন সুযোগ নেই। কারণ এ সম্পর্কিত ইজতিহাদ পূর্ব থেকেই হয়ে আছে।
“مُجْتَهِدِينَ صَالِحِينَ” )মুজতাহিদীনা ছলিহীনা( “নেককার মুজতাহিদ” বাক্য দ্বারা বিদয়াতী ও ফাসিক তথা ওলামায়ে “হ্’দের মনগড়া ইজতিহাদ বাতিল বলে গণ্য।
অতএব, কোন বেশরা, বিদয়াতী ও গোমরাহ লোক যারা বিদয়াত, বেশরা, কুফরী, শেরেকী, বেদ্বীনী, বদদ্বীনি, বেশরা ইত্যাদি হারাম কাজে মশগুল। যেমন, বর্তমানে যারা ছবি তোলে, বেপর্দা হয়, ইসলামের নামে গণতন্ত্র করে, ভোট চায় ও নির্বাচন করে, হরতাল করে, লংমার্চ করে, ব্লাসফেমী আইন তলব করে, মৌলবাদী দাবী করে, নারী নেতৃত্ব সমর্থন করে- এই শ্রেণীর বাতিল আক্বীদা ও বদ মাযহাবের লোকদের ইজমা ও কিয়াস শরীয়তে কখনই
গ্রহণযোগ্য নয়।
(চলবে)
মুহম্মদ আব্দুল্লাহিল বাকী, ধামুইরহাট, নওগাঁ
সুওয়ালঃ ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’ ১৫৩তম সংখ্যার ১১ পৃষ্ঠায় ‘মাহে রবিউস্ সানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা’ প্রবন্ধে নিম্নবর্ণিত লিখাটির ব্যাখ্যা জানতে চাই।
“আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী ও রসূল বিধায় তাঁর উম্মতের আলিমগণকে বণী ইসরাঈল বংশীয় নবীগণের মর্তবা দান করা হয়েছে এবং তাঁদের দ্বারা পয়গম্বর প্রেরণের আবশ্যকতা পূর্ণ করা হয়েছে।”
“আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নায়িব বা ওয়ারিছগণের মধ্যে শতাব্দীর মুজাদ্দিদগণের মর্যাদা পূর্ব যামানার রসূলগণের ন্যায়। আর পাঁচশ’ বা হাজার বছর পরে প্রেরিত মুজাদ্দিদগণ পূর্ব যামানার উলুল আযম্ রসূলগণের মর্যাদা রাখেন।”
জাওয়াবঃ উল্লিখিত প্রবন্ধে যা লিখা হয়েছে তা মূলতঃ কুরআন-সুন্নাহর আলোকেই লিখা হয়েছে। যেমন, তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ পাক সমস্ত রূহকে একসাথে সৃষ্টি করে জিজ্ঞাসা করলেন,
الست بر بكم قالوا بلى.
অর্থঃ- “হে রূহ সম্প্রদায়! আমি কি তোমাদের রব নই? তখন সমস্ত রূহ বলে উঠলেন, জী হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি আমাদের রব।” (সূরা আ’রাফ-১৭২)
অতঃপর আল্লাহ পাক বললেন, হে রূহ সম্প্রদায়! আমি তোমাদেরকে রূহ জগতে থাকার জন্য সৃষ্টি করিনি। বরং আমি পর্যায়ক্রমে তোমাদেরকে যমীনে প্রেরণ করবো। সেখানে গিয়ে কিন্তু আমার রুবুবিয়াতের এই ওয়াদার কথা ভুলে যেওনা।
রূহ সম্প্রদায় বললেন, আল্লাহ পাক! এখন থেকে হাজার হাজার বছর পর আমরা যমীনে যাব, সেখানে গিয়ে এ ওয়াদার কথা হয়ত আমাদের স্মরণ নাও থাকতে পারে? আল্লাহ পাক বললেন, চিন্তার কোন কারণ নেই। তা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য আমি যুগে যুগে নবী-রসূল পাঠাবো এবং নবী-রসূল পাঠানোর দরজা যখন বন্ধ হয়ে যাবে অর্থাৎ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ আনয়নের পর আর কোন নবী-রসূল আগমন করবেন না তখন যুগে যুগে তাঁর নায়িব বা ওয়ারিছগণকে যমীনে পাঠাবো। তাঁরাই আমার এ রুবুবিয়াতের কথা, এ ওয়াদার কথা তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন।
সত্যিই আল্লাহ পাক সেই কথা মুতাবিক এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকে যমীনে পাঠিয়েছেন এবং সর্বশেষ নবী ও রসূল হিসেবে আল্লাহ পাক-এর হাবীব, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়েছেন। এবং তাঁর বিছাল শরীফের পর তাঁর নায়িব বা ওয়ারিছগণকে পাঠাচ্ছেন।
সেই নায়িব বা ওয়ারিছগণের মর্যাদা প্রসঙ্গে উল্লিখিত প্রবন্ধটিতে আলোকপাত করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নায়িবে নবী ও নায়িবে রসূলগণের যে মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করেছেন উক্ত প্রবন্ধটিতে সে বিষয়টিই বর্ণনা করা উদ্দেশ্য। তাঁদেরকে নবী কিংবা রসূল বানানো উদ্দেশ্য মোটেই নয়। যেমন নায়িবে নবীগণের মর্যাদা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ير فع الله الذ ين امنوا منكم وا لذين. اوتوا العلم درجت.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক তোমাদের মধ্যে তাঁদেরকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেছেন, ঈমান আনার পর যাদেরকে ইলম্ দান করা হয়েছে।” (সূরা মুজাদালাহ-১১)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
فضل العا لم على العا بد كفضلى على ادناكم.
অর্থঃ- “আলিমের মর্যাদা আবিদের উপর এমন, যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের সাধারণ ব্যক্তির উপর।” (তিরমিযী, দারিমী, মিশকাত)
তিনি আরো ইরশাদ করেন,
من جاءه السموت وهو يطلب العلم ليحيى به الا سلام فبينه وبين النبيين درجة واحدة فى الجنة.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইলম্ অন্বেষণ করা অবস্থায় ইন্তেকাল করলো, তাঁর ইলম অর্জনের উদ্দেশ্য ছিলো দ্বীন যিন্দা করা সে ব্যক্তির ও নবীগণের মাঝে জান্নাতে একটিমাত্র মর্যাদার পার্থক্য থাকবে। অর্থাৎ তাঁকে নুবুওওয়াত বা রিসালত ব্যতীত সমস্ত মর্যাদার অধিকারী করা হবে।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত)
অর্থাৎ আলিমগণ হচ্ছেন নবী-রসূল তথা আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়ারিছ, নায়িব ক্বায়িম-মক্বাম, স্থলাভিষিক্ত। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
العلماء ورثة الا نبياء.
অর্থঃ- “আলিমগণ নবীগণের ওয়ারিছ বা প্রতিনিধি।” (আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারিমী, মিশকাত)
আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দায়িত্ব নিয়ে যমীনে আগমন করেছেন সে দায়িত্ব তিনি তাঁর ক্বায়িম-মক্বাম, ওয়ারিছ বা নায়িবগণের উপর ন্যাস্ত করে গেছেন। তাঁরা সে দায়িত্ব পালনের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
সুতরাং আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর আর কোন নবী ও রসূল প্রেরণের আবশ্যকতা নেই।
তাই আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যারা নায়িব বা ওয়ারিছ তাঁদের শানে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশা করেন,
علماء امتى كا نبياء بنى اسرا ئيل.
অর্থঃ- “আমার উম্মতের আলিমগণ বণী ইসরাঈলের নবীগণের মতো।” (কানযুল উম্মাল)
অর্থাৎ বণী ইসরাঈল যুগে একই সময় একাধিক পয়গম্বর প্রেরণ করা হতো। তাঁদের মধ্যে কেউ শরীয়ত প্রবর্তনকারী রসূল হিসেবে আর কেউ নবী হিসেবে। তবে নবীগণ উক্ত রসূলগণের শরীয়তেরই অনুসারী ছিলেন এবং সে অনুযায়ী আদেশ-নির্দেশ করতেন।
যেমন হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম, হযরত হারূন আলাইহিস্ সালাম, হযরত ইউশা বিন নূন আলাইহিস্ সালাম একই যামানায় প্রেরিত হয়েছেন কিন্তু উলুল আ’যম রসূল হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম-এর প্রবর্তিত শরীয়ত অনুযায়ী হযরত হারূন আলাইহিস্ সালাম এবং হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস্ সালাম চলতেন এবং চলার জন্য আদেশ-নির্দেশ করতেন।
এই দিক থেকে বলা হয়েছে যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতের আলিমগণকে তথা তাঁর নায়িব বা ওয়ারিছগণকে বনী ইসলাঈল বংশীয় নবীগণের মর্তবা দান করা হয়েছে। এবং বলা হয়েছে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নায়িব বা ওয়ারিছগণের মধ্যে শতাব্দীর মুজাদ্দিদগণের মর্যাদা পূর্ব যামানার রসূলগণের ন্যায়। আর পাঁচশ বা হাজার বছর পরে প্রেরিত মুজাদ্দিদগণ পূর্ব যামানার উলুল আযম রসূলগণের মর্যাদা রাখেন। অর্থাৎ তাঁদের মর্যাদার ন্যায় মর্যাদা রাখেন। কিন্তু একথা বলা হয়নি যে, তাঁদেরকে নুবুওওয়াত কিংবা রিসালত দেয়া হয়েছে অর্থাৎ তাঁরা নবী, রসূল কিংবা উলুল আযম্ রসূল হয়ে গেছেন। বরং একাধিকবার উল্লেখ রয়েছে যে, তাঁরা আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নায়িব ও ওয়ারিছ। তাঁরা নবীও নন, রসূলও নন কিংবা উলুল আযম্ রসূলও নন।
উল্লেখ্য, যেখানে ইলম অন্বেষণ করা অবস্থায় কেউ ইন্তিকাল করলে তাকে নুবুওওয়াত ও রিসালত ব্যতীত নবীগণের সমস্ত মর্যাদা দেয়া কথা বলা হয়েছে তাহলে যারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ক্বায়িম-মক্বাম খাছ নায়িব ও ওয়ারিছ যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম, যারা দ্বীনকে পুনরুজ্জীবিত করেন তাঁদের মর্যাদা কি হবে?
আসলে সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়টি বুঝার জন্য ইলমে বালাগাতের তাশবীহ (তুলনা)-এর জ্ঞান থাকলে সহজে বুঝা সম্ভব হতো। যেমন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
وجعلنا اليل لبا سا.
অর্থঃ- “আমি রাতকে পোশাক করেছি।” (সূরা আন্ নাবা-১০)
আসলে রাত কিন্তু পোশাক নয়। মূলতঃ এখানে রাতকে পোশাকের সাথে তুলনা বা সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে। পোশাকের মাধ্যমে মানুষ যেমন দেহ আচ্ছাদিত করে থাকে তদ্রুপ রাত অন্ধকারের দ্বারা সবকিছুকে আচ্ছাদিত করে ফেলে।
আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ক্বায়িম-মক্বাম নায়িবগণের কিরূপ মর্যাদা তা বর্ণনা করার জন্যই পূর্ববর্তী রসূলগণের সাথে তাশবীহ বা তুলনা করা হয়েছে মাত্র।
যেমন এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, আফযালুল আওলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “মাকতুবাত শরীফে” যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম, ইমামে আ’যম ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মর্যাদা-মর্তবা উল্লেখ করে বলেন, “যখন ইমাম মাহদী আলাইহিস্ সালাম প্রকাশ হবেন তাঁর হিদায়েতের কাজে সহায়তা করার জন্য জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে পাঠানো হবে। তিনি যেহেতু জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল যার কারণে তিনি কোন মাযহাব অনুসরণ করে চলবেন না বরং নিজে ইজতিহাদ করে চলবেন।
কিন্তু দেখা যাবে, তাঁর ইজতিহাদ আর ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ইজতিহাদ এক হয়ে যাবে, যার ফলে লোকজন তাঁকে হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ মনে করবে।” (সুবহানাল্লাহ)
মূলতঃ যারা আখাচ্ছুল খাছ আওলিয়া, উলুল আযম্ মিনাল আওলিয়া অর্থাৎ যারা শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, অর্ধ সহস্র ও সহস্রাব্দের মুজাদ্দিদ তাঁরা নুবুওওয়াত ও রিসালত এ মাক্বামাত দু’টি ব্যতীত সমস্ত মাক্বামাত বা মর্যাদারই অধিকারী।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى انت منى بمنز لة هرون من مو سى الا انه لا نبى بعدى.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম-এর নিকট হযরত হারূন আলাইহিস্ সালাম-এর যেরূপ মর্যাদা তদ্রুপ আমার নিকট তোমার মর্যাদা। তবে পার্থক্য হচ্ছে, আমার পর কোন নবী নেই।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
এ হাদীছ শরীফ থেকে সাব্যস্ত হয়, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় তাঁর সঙ্গী হিসেবে কেউ নবী থাকলে সে ব্যক্তি হতেন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
لو كان بعدى نبى لكان عمر بن الخطاب رضى الله تعا لى عنه.
অর্থঃ- “আমার পর যদি কেউ নবী হতেন তাহলে অবশ্যই সে ব্যক্তি হতেন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।” (তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত)
এ হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণিত হয় যে, নবী হওয়ার যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্য হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মধ্যে ছিলো। তবে যেহেতু আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবী ও রসূল সেহেতু তাঁর পর আর কেউ নবী ও রসূল হিসেবে যমীনে আগমন করবেন না।
এই হাদীছ শরীফের উছূল অনুযায়ী একথা বলা হয় যে, যদি নবী-রসূল আগমনের ধারাবাহিকতা জারী থাকতো তাহলে তাঁদের ক্বায়িম-মক্বাম হিসেবে যামানার মুজাদ্দিদগণ অবশ্যই নবী ও রসূল হয়ে আসতেন। আর অর্ধ সহস্র ও সহস্রাব্দের মুজাদ্দিদগণ উলুল আযম্ রসূলগণের ক্বায়িম-মক্বাম হিসেবে উলুল আযম রসূল হয়ে আসতেন। কিন্তু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর আর কোন নবী-রসূল আসবেন না। যদি কেউ নবী-রসূল দাবী করে তবে সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে।
অতএব, এ লেখা থেকে আশা করা যায় সুওয়ালে উল্লিখিত বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।