মুহম্মদ আসিফ মহিউদ্দীন, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
মুহম্মদ জাহিদ হুসাইন, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, ঢাকা।
সুওয়াল: ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ জুলাই-২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় আজ থেকে প্রায় দীর্ঘ তিন বৎসর পূর্বে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলামের মুনাজাত সম্পর্কে বক্তব্য খণ্ডন করতে গিয়ে যে জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে তার জবাবে ‘মাসিক মুঈনুল ইসলাম’ জুন-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যার ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগে যা লিখেছে তার মূল বিষয়বস্তু হলো-
….. ৩. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম একটি নিম্ন শ্রেণীর কাজকেও বর্ণনা করতে সংকোচবোধ করেননি। আর মুনাজাত এমন এক কাজ যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযান্তে প্রকাশ্যভাবে পাঁচবার যদি করতেন তবে কেন তার কোন বর্ণনা করা হয়নি। …….
এখন সুওয়াল হলো- “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করা” সম্পর্কিত হাটহাজারীর খারিজী-ওহাবী মৌলবীদের উল্লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্যসমূহ কতটুকু সঠিক, দলীলভিত্তিক ও গ্রহণযোগ্য? প্রতিটি বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জবাব দিয়ে মুনাজাত বিরোধী বাতিল ফিরক্বার খপ্পর থেকে আমাদের ঈমান-আমল হিফাজত করবেন বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি।
জাওয়াব: “ফরয নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার স্বপক্ষে কোন বর্ণনা নেই” হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও দলীলবিহীন। কারণ পূর্ববর্তী সংখ্যায় প্রদত্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমানিত হয়েছে যে, “ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করার স্বপক্ষে একটি, দুটি নয় বরং অসংখ্য ফে’লী ও ক্বওলী হাদীছ শরীফ রয়েছে। যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজেও ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন। আর হাদীছ শরীফে রয়েছে বলেই অনুসরনীয় ইমাম, মুজতাহিদ তথা ফক্বীহগণ নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে এমনকি হাটহাজারী মৌলভীদের মুরুব্বীরা তাদের কিতাবে “ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব-সুন্নত বলে” ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন,
(ধারাবাহিক)
হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের মুরুব্বী দ্বারা লিখিত “ফতওয়ায়ে দেওবন্দ” ২য় জিঃ ২১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
سوال- فرضرں کے بعد دعاء مانگنا جاتزھیں ؟ جواب :- دعاء ما نگنا تمامر فر ضوں اور نما زوں کے بعد جا تر و مسنحب ھے.
অর্থঃ-“সুওয়াল- ফরজ নামাজের পর মুনাজাত করা জায়েয আছে কি?
জাওয়াব- সকল ফরজ নামায ও অন্যান্য নামাযের পর মুনাজাত করা জায়িয ও মুস্তাহাব।”
হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের আরেক গুরু থানভী ছাহেবের ইমদাদুল আহকাম-এর ১ম জিঃ ২২৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
سوال:- بعد نماز سنت و نفل بھی دعا ھا تھ اٹھا کر ما ںگںا چا ھنے یا صر ف بعد فرض هى دعا ضروری ھے؟
جواب:-فرض نمازون کے بعد دعاما مانگنا اکد ھے کیو نکھ حایثون مین اسکی تر تبب زیاده ھے. با فی سنن و نو افل کے بعد دعا ما ںگنا ضرورى ںھین ا گر مانگ لیاکر ے تو اجھا ھے.
অর্থঃ- “সুওয়াল- সুন্নত ও নফল নামাযের পরও কি হাত উঠায়ে মুনাজাত করতে হবে, না শুধু ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করাই জরুরী?
জাওয়াব- ফরজ নামাযসমূহের পর মুনাজাত করাই অধিক তাকীদপূর্ণ। কেননা ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করার জন্যই হাদীছ শরীফে বেশী উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। সুন্নত ও নফলের পর মুনাজাত করা অত্যাবশ্যকীয় নয়, যদি মুনাজাত করে, তবে উত্তম হবে।”
اں حضر ت صلی اللہ علیہ و سلر ے ير جها گیا كه کو نسی د عا منبو لہو تی؟ اب نے فر ما یا رات کے اخری حصه کی اور فر ض نماز کے بعد کی دعا- درسرى حلبث میں ھے کھ اں حضر ت صلی الله عليه و سلر ںے حصر ت معا ذ بن جبل رضى الله عنه سے نر ما يا كه تم کسے بهی نما ز کے بعد اس د عا كو نه جور نا….. كناب د ليل
الطا لب على ار جح المطلوب” ميں يه دو حليثیں بيان فر ما نے کے بعد لكها ھے- وایں هر در حديث د لالت داردبران كه دغا بعد فريضه مى يا بد. يعنى يه در حديث نمز فر ض کے بعد دعامسنون هر ںے بر دلالت كر تے ھے.
অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো কোন্ দোয়া কবূলযোগ্য? তিনি বলেন, শেষ রাত্রের দোয়া এবং ফরজ নামাযের পরের দোয়া।
অন্য হাদীছ শরীফে আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কে বললেন যে, তুমি কোন নামাযের পরেই এ দোয়া করতে ছেড়ে দিওনা …। “দলীলত্ তালিব্ আলা আরজিহিল মাত্লূব” কিতাবে উপরোক্ত দু’টি হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে লিখেন যে, এ হাদীছ শরীফদ্বয় এটাই প্রমাণ করে যে, ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করা উচিৎ। অর্থাৎ এ হাদীছ শরীফদ্বয় ফরজ নামাযের পর মুনাজাত সুন্নত হওয়ারই প্রমাণ বহন করে।” (ফতওয়ায়ে রহীমিয়া ১ম জিঃ পৃঃ-২০৪)
فرانض کے بعد دعا حضور صلى الله عليه و سلر سے ثابت ھے-اور فقه میس اسكا جو ازمصرح- فنط فرق يه ھے كه جن فرانض کے بعد سنستیں ھیں انکے بعد دعانے طر يل نه جاھنے.
অর্থঃ- “ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে প্রমাণিত আছে। তবে পার্থক্য এতটুকুই যে, যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নত নামায রয়েছে, উহার পর মুনাজাত দীর্ঘ করা যাবেনা।” (আহ্সানুল ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ-৩৪৬)
فر ض نما زوں کے بعا منبرل هو تى ھے اس وقت دعا كرنا حديث و نته سے ثا بت ھے.
অর্থঃ- “ফরজ নামাযের পর মুনাজাত কবূল হয়, ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করা হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের কিতাব দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে।” (ফতওয়ায়ে মাহ্মুদিয়া ২য় জিঃ পৃঃ-৫০)
فتحصل من هذا كله ان الد عاء د برالصلوة مسنون ومشروع فى المذاهبب الاربعة لم ينكره الانا هق مجنون قد ضل فى سبيل هواه وو سو س له الشيطان واغواه.
অর্থঃ- “উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হয় যে, চার মায্হাবের প্রত্যেকের মতানুসারে (ফরজ) নামাযের পর মুনাজাত করা অবশ্যই সুন্নত ও শরীয়তসম্মত। যে ব্যক্তি এটা অস্বীকার করবে, সে নিশ্চিত মতিভ্রম ও নফ্সের তাড়নায় পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সে শয়তানী ওয়াস্ওয়াসা ও ধোকায় পড়েছে।” (ইস্তিহবাবুদ্ দাওয়াত আক্বিবুছ ছালাওয়াত)
احاديث و ففه سے اس امر كى شهادت مليى ھے كه فر انض کے بعد دعا ما ںگںے كا طر يقه نه صر ف جانز بلكه افضا ھے.
অর্থঃ- “হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের আলোচনা দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, সকল ফরজ নামাযের পরে মুনাজাত করার পদ্ধতি জায়িযই নয় বরং সর্বোত্তম।” (কিফায়াতুল মুফ্তী ৩য় জিঃ পৃঃ-২৯১)
الحاصل ان تما م رو ايات سے يه بات نها يت صراحت کے سا تهد ثا بت هر گی كه فرانض کے بعد د عا ما نگںا ا نحضرت صلى الله عليه و سلر كا طريته اوراب كى سنبت ھے اور اسكى منبرليت كى اميد بهى زياده ھے.
অর্থঃ- “মোটকথা হলো- (এ কিতাবে উল্লিখিত) সকল বর্ণনা দ্বারা এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ফরজ নামাযসমূহের পরে মুনাজাত করা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরীক্বা ও সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত এবং ফরজ নামাযের পরে মুনাজাত কবূল হওয়ারও অধিক নিশ্চয়তা রয়েছে।” (কিফায়াতুল মুফতী ৩য় জিঃ পৃঃ-২৯৫)
احاديث صحيحه اورروايات فقهيه سے نهايت راضح طور ير يه بات ثا بت هر گی ھے كه فرانض کے بعد سںںرں سے بھلےدعا مانگنا اور ادعيئ ما ئوره کی مقدارتك د عاںیں ير هنا اور ذ كر كر نا بلاكراهت جا تر ھے بلكه اس و فت دعا ماںگںا افضد ھے اور اس دعاميى مقير ليت کی ذياده اميد ھے.
অর্থঃ- “সহীহ্ হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহের বর্ণনাসমূহ দ্বারা একথা অত্যান্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ফরজ নামাযের পর সুন্নত নামাযের পূর্বে মুনাজাত করা এবং দোয়ায়ে মাসূরার সমপরিমাণ দোয়া-দুরূদ পাঠ ও যিকির-আয্কার করা, বিনা মাকরূহে জায়িয বরং ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করা সর্বোত্তম এবং ঐ সময় মুনাজাত কবূল হওয়ার অধিক নিশ্চয়তা রয়েছে।” (কিফায়াতুল মুফতী ৩য় জিঃ পৃঃ৩০৭)
প্রদত্ত সুওয়াল-জাওয়াবের টীকা ভাষ্যঃ
ড পূর্ববর্তী সংখ্যায় ফরজ নামাযের পর মুনাজাত করার স্বপক্ষে অনেক ফে’লী ও ক্বওলী হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, নাসাঈ শরীফসহ আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফের দলীল দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে হযরত আসওয়াদ আমেরী রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণিত হাদীছ শরীফের বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে।
ড আর গত সংখ্যায় প্রমান করা হয়েছে যে, অনুসরনীয় ইমাম, মুজতাহিদ ও হাটহাজারী মৌলভীদের মুরুব্বীরাও উল্লিখিত হাদীছ শরীফসমূহের উপর ভিত্তি করেই ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করাকে মুস্তাহাব সুন্নত বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
ডএ সংখ্যাতেও তার আরো কিছু প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে এবং আগামী সংখ্যাতে আরো উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ। (চলবে)
খন্দকার সেলিম আহমদ, পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল।
সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত মীলাদ-ক্বিয়ামের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।
তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
……. ৪. বরং মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সম্মানে দাঁড়ানোকে অপছন্দ করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ) ………
এখন আমার সুওয়াল হলো, মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীল সম্মত? কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
((পূর্ব প্রকাশিতের পর)
জাওয়াবঃ ‘মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম’ সম্পর্কে হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য জিহালতপূর্ণ ও দলীলবিহীন। কারণ তারা মিশকাত শরীফের বরাত দিয়ে যে হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছে তা মোটেও সঠিক হয়নি বরং ভূল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ “মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম”-এর সাথে উক্ত হাদীছ শরীফ-এর কোনই সম্পর্ক নেই। কেননা, মীলাদ শরীফ-এর যে ক্বিয়াম করা হয়, সেই ক্বিয়ামের অর্থ হলো, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতময় বিলাদত শরীফ শ্রবণ করতঃ দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করা।”
অথচ মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীছ শরীফে সে উদ্দেশ্যে দাঁড়াতে নিষেধ করা হয়নি বা দাঁড়িয়ে সালাম করতে নিষেধ করা হয়নি। শুধু তাই নয় বরং আমভাবে সমস্ত ক্বিয়ামকেও নিষেধ করা হয়নি।
আমরা পর্যায়ক্রমে মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীছ শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা দলীল-আদিল্লাহ ্সহ বর্ণনা করবো ইনশাআল্লাহ্। আর সেই সাথে আমরা এটাও প্রমাণ করবো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে আমভাবে সমস্ত ক্বিয়ামকে বা দাঁড়ানোকে নিষেধ করেননি বরং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেও দাঁড়িয়েছেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে দাঁড়ানো বা ক্বিয়াম করার ব্যাপারে নির্দেশও দিয়েছেন। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও একে অপরের জন্যও দাঁড়িয়েছেন।
এখানে আরো বিশেষভাবে উল্লেখ্য, তারা বলে থাকে যে, “প্রচলিত মীলাদ শরীফ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় ছিলনা।” এখানে বলতে হয় যে, যদি মীলাদই না থাকে তাহলে মীলাদের মাঝে না দাড়ানোর ব্যাপারে তাদের উল্লিখিত দলীলও তো তবে প্রযোজ্য হতে পারে না। আর যদি তারপরেও তারা না দাড়ানোর ব্যাপারে এই হাদীছ শরীফ সংযুক্ত করতে চায় তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়ও যে মিলাদ মীলাদ শরীফ ছিল সেটা তারাও তহলে স্বীকার করে নেয়।
নিম্নে মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীছ শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো-
এর জবাবে বলতে হয় যে, মিশকাত শরীফের ৪০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফেও “মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়ামকে” নিষেধ করা হয়নি এবং সাধারণ ক্বিয়ামকেও নিষেধ করা হয়নি।
বরং এ হাদীছ শরীফ দ্বারা ক্বিয়াম করার পদ্ধতি, নিয়ম, তর্জ-ত্বরীকা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে,
لاتقوموا كما يقو م الاعاجم.
অর্থঃ- “তোমরা আজমীদের মত (মাথা নিচু করে নমস্কারের ছুরতে) দাঁড়িয়ো না।” অর্থাৎ এ হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে, তোমরা সম্মানার্থে দাঁড়াবে তবে আজমীদের মত নমস্কারের ছুরতে নয়। আমরাও উক্ত হাদীছ শরীফের ভিত্তিতে বলে থাকি যে, আজমীদের মত নমস্কারের ছুরতে দাঁড়ানো বা ক্বিয়াম করা শরীয়তে হারাম ও নাজায়িয।
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় “মিরকাত শরীফ”-এর ৯ম খন্ডের ৮৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,
لاشكى انهم ا نما قا موا لله وتعظيمالرسول الله و لعل الوجه ان يقال انهم قا موا متمثين فنها هم عن ذلك.
অর্থঃ- “কোন সন্দেহ নেই। নিশ্চয় তাঁরা (অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ) আল্লাহ্ পাক-এর জন্য এবং আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে দাঁড়িয়েছেন।”
তবে আজমীদের মত দাঁড়ানোকে নিষেধ করার কারণ হলো, নিশ্চয়ই তারা আজমীদের মত দাঁড়িয়েছিলেন। তাই তাঁদেরকে আজমীদের মত দাঁড়াতে নিষেধ করেছেন।
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় “মুযাহিরে হক্ব” কিতাবের ৪র্থ খন্ডের ৬৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,
اس نوجیہ سے اصل قیام منوع ناوا جیسے کہ بعضی حد یثوں میں ایا هى بلکہ جو کہ بطر یق تکبر اور عظر شان کے و.
অর্থঃ- “উক্ত হাদীছ শরীফে ক্বিয়াম নিষেধ করার কারণে মুল ক্বিয়াম নিষিদ্ধ নয়। যেমন, অন্যান্য হাদীছ শরীফে ক্বিয়াম করার ব্যাপারে বর্ণনা এসেছে। বরং যে ক্বিয়াম তাকাববুরী তথা বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য করা হয় উক্ত হাদীছ শরীফে সেই ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়েছে।”
কিন্তু “মীলাদ শরীফের ক্বিয়াম” আজমীদের মত নমস্কারের ছুরতে নয়। বরং “মীলাদ শরীফে সালাম পেশ করার জন্যই ক্বিয়াম করা হয়, তাহলে মীলাদ শরীফের ক্বিয়াম কি করে নাজায়েয হতে পারে। সুতরাং উক্ত হাদীছ শরীফে মীলাদ শরীফের ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়নি এবং আমভাবে সমস্ত ক্বিয়ামকেও নিষেধ করা হয়নি।
বরং ক্বিয়ামে তাকাবব্রুীকে নিষেধ করা হয়েছে যা বিধর্মী আজমীরা করে থাকে।
তৃতীয়তঃ হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা এবং তাদের সমজাতীয়রা মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়ামকে নাজায়েয বলে যে হাদীছ শরীফ খানা দলীল হিসেবে পেশ করে তা হলো-
“হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এ কথার উপর খুশী হয় যে, লোকেরা তাকে দাঁড়িয়ে সম্মান করে সে যেন তার ঠিকানা দোযখে বানিয়ে নেয়।”
এর জবাব হলো, উক্ত হাদীছ শরীফেও “মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়ামকে” এবং সাধারণভাবে সমস্ত ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে,
من سره ان يتمثل له الر جال قيا ما.
অর্থাৎ- “মানুষ তার সামনে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকুক এটাই যদি সে পছন্দ করে তাহলে সে জাহান্নামী।”
মূলতঃ এ হাদীছ শরীফ দ্বারাও ক্বিয়ামে তাকাববুরীকে বুঝানো হয়েছে যা মুতাকাব্বির ও মুতাজাবিবর (গর্বকারী ও অহংকারী) লোকদের স্বভাবগত অভ্যাস। এধরণের ক্বিয়ামও শরীয়তে হারাম।
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় “মিশকাত শরীফের” ৪০৩ পৃষ্ঠায় ৭নং হাশিয়ায় “মিরকাত শরীফের” ৯ম খন্ডের ৮৫ পৃষ্ঠায় এবং “তা’লীকুছ ছবীহ” কিতাবের ৫ম খন্ডের ১২৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,
واما اذا لم يطلب ذلكى و قا موا من تلقاء انفسهم طلبا للثواب اولارادةا لتواضع فلا باس به.
অর্থাৎ- “মানুষ তার সামনে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকুক এটা যদি পছন্দ না করে বা এটা তার উদ্দেশ্য না হয় এবং পরস্পরের সাক্ষাতে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে অথবা বিনয়ের উদ্দেশ্যে দাঁড়ায় তাহলে এতে কোন অসুবিধা নেই।”
“মিশকাত শরীফের” উক্ত হাশিয়ায়, “মিরকাত শরীফ”-এর উক্ত পৃষ্ঠায় এবং “শরহুত ত্বীবী” কিতাবের ৯ম খন্ডের ৪৫ পৃষ্ঠায় আরো বলা হয়েছে,
ان قيام المرء بين يدى الرئيس الفا ضل وا لوا لى العادل وقيام المتعلم للمعلم مستحب.
অর্থাৎ- “নিশ্চয় নেতৃস্থানীয় মর্যাদাবান ব্যক্তির ও ন্যায় পরায়ন শাসকের সামনে দাঁড়ানো এবং উস্তাদ, শিক্ষকের জন্য ছাত্রদের দাঁড়ানো মুস্তাহাব।”
সুতরাং উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, আলিম, ফাজিল, উস্তাদ, ন্যায় বিচারক, সম্মানিত ব্যক্তি, পিতা-মাতা, পরহেযগার আল্লাহ্ওয়ালা ব্যক্তির আগমন এবং সম্মানে দাঁড়ানো বা ক্বিয়াম করা মুস্তাহাব ও ছওয়াবের কাজ। যদি তাই হয় তাহলে “মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম” করতে নিষেধ কোথায়? বরং “মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম খাছ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত।
অতএব, প্রমাণিত হলো মিশকাত শরীফের ৪০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফে সমস্ত ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়নি। বরং মিশকাত শরীফের ৪০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় “মিশকাত শরীফের” ৪০৩ পৃষ্ঠায় ৭নং হাশিয়ায় “মিরকাত শরীফের” ৯ম খন্ডের ৮৫ পৃষ্ঠায় এবং “তা’লিকুছ ছবীহ” কিতাবের ৫ম খন্ডের ১২৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, “মানুষ তার সামনে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকুক এটা যদি পছন্দ না করে বা এটা তার উদ্দেশ্য না হয় বরং পরস্পরের সাক্ষাতে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে অথবা বিনয়ের উদ্দেশ্যে দাঁড়ায় তাহলে এতে কোন অসুবিধা নেই।
শুধু তাই নয়, মিশকাত শরীফের ৪০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফেও “মীলাদ শরীফের ক্বিয়ামকে” নিষেধ করা হয়নি। বরং মিশকাত শরীফের ৪০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায়ও ক্বিয়াম করাকে মুস্তাহাব ও ছওয়াবের কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অতএব প্রমাণিত হলো যে, হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা মিশকাত শরীফের বরাত দিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।
প্রদত্ত সুওয়াল-জাওয়াবের টীকা ভাষ্যঃ
(ক) বিগত সংখ্যায় প্রমাণ করা হয়েছে, “আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাধারণ অবস্থায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর জন্যে কষ্টকর মনে করে বা বিনয় প্রকাশ করার লক্ষ্যে বা বিনয় শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে বা মুহব্বতের কারণে দাঁড়ানোকে অপছন্দ করছেন। ”
(খ) বর্তমান সংখ্যায় দেয় জাওয়াবের মূল কথা হলো, “মিশকাত শরীফের ৪০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফে আযমীদের ন্যায় মাথা ঝুকিয়ে দাড়িয়ে সম্মান করাকে নিষেধ করা হয়েছে কিন্তু “মীলাদ শরীফের ক্বিয়ামকে” নিষেধ করা হয়নি। ববং মিশকাত শরীফের ৪০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায়ও ক্বিয়াম করাকেই মুস্তাহাব ও ছওয়াবের কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।”
(গ) পরবর্তী সংখ্যায়ও প্রমাণ করা হবে যে, মিশকাত শরীফে বর্ণিত হাদীছ শরীফে দাঁড়িয়ে সালাম করতে নিষেধ করা হয়নি। (চলবে)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭নং জিজ্ঞাসার-জবাব ছাপা হয়-
জিজ্ঞাসা ঃ সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …….. তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো।
উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও জবাব দিয়েছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
….. “(৩) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের মধ্যে শরীয়ত বিরোধী বা ইসলাম পরিপন্থী কোন নিয়মনীতি বা আক্বীদা, আমল নেই, এটা কতটুকু সত্য?” ….
কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে। তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
(ধারাবাহিক)
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, অখ্যাত পত্রিকার উক্ত বক্তব্য মোটেও সত্য নয়, কেননা প্রচলিত ছয় উছূলীদের মধ্যে একটি দু’টি নয়, বরং অসংখ্য কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নিয়মনীতি বা আক্বীদা-আমল ও বক্তব্য রয়েছে,
যা তাদের মুরুব্বীদের লিখা কিতাবাদিতেই বিদ্যমান রয়েছে। তাই নিম্নে ধারাবাহিকভাবে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ও কুফরীমূলক বক্তব্যগুলোর সাথে সাথে কুরআন-সুন্নাহ্র দৃষ্টিতে তার সঠিক ফায়সালা তুলে ধরা হলো।
প্রচলিত ছয় উছূলীদের কুরআন-সুন্নাহ
বিরোধী কুফরীমূলক বক্তব্য- ১৯
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, “মসজিদে নববী ছাড়া বিশ্বের যে তিনটি দেশে, তিনটি মসজিদে প্রচলিত তাবলীগের বিশেষ মারকায, সেখানেই চব্বিশ ঘন্টা আমল জারী থাকে। যেমন- প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা লিখিত “এক মুবাল্লিগের পয়লা নোট বই” (সংকলক- এঞ্জিনীয়ার মু.জা.আ. মজুমদার) নামক কিতাবের ৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “সারা বিশ্বে মাত্র ৪টি মসজিদে ২৪ঘন্টা আমল চালু থাকে। যথা- (১) কাকরাইল, ঢাকা (২) নিজামুদ্দীন বস্তী, দিল্লী (৩) রায়বন্দ, লাহোর। (৪) মসজিদে নববী, মদীনা শরীফ।”
এর জবাবে বলতে হয়, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও বেয়াদবীমূলক। আর তা মিথ্যা হওয়ার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কারণ তাদের উল্লিখিত তিন মসজিদ ছাড়াও পৃথিবীতে অসংখ্য অগণিত মসজিদ রয়েছে, যেখানে সর্বদাই দ্বীনের আমল হচ্ছে। তম্মধ্যে প্রথমেই বলতে হয়, বাইতুল্লাহ্ শরীফের হেরেম শরীফের কথা। যেখানে সর্বদাই নামায-কালাম, যিকির-ফিকির, দোয়া-দুরূদ, তাওয়াফ ইত্যাদি নেক আমলসমূহ চালু রয়েছে।
অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাদের কিতাবে বাইতুল্লাহ্ শরীফের কথা উল্লেখ করেনি। শুধু তাই নয়, আমাদের বাংলাদেশ ও পাক-ভারতেও এমন অনেক মসজিদ রয়েছে যেখানে ২৪ ঘন্টাই আমল চালু রয়েছে। যেমন, সিলেটের হযরত শাহজালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি মসজিদ, হযরত শাহ্ মখদুম রূপোশ রহমতুল্লাহি আলাইহি মসজিদ, বগুড়ার হযরত মাহী সাওয়ার বল্খী রহমতুল্লাহি আলাইহি মসজিদ, চিটাগাং-এর হযরত শাহ্ আমানত রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শাহ্ গরীবুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মোহ্সেন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি মসজিদসমূহ।
ঢাকার হাইকোর্ট মসজিদ, মীরপুরে শাহ্ আলী বোগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি মসজিদ। তাছাড়া ভারতের আজমীর শরীফে, ইরাকের বাগদাদ শরীফে, পাকিস্তানের হযরত ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি মসজিদসহ পৃথিবীতে আরো অসংখ্য-অগণিত মসজিদ রয়েছে, যেখানে ২৪ ঘন্টাই নামায-কালাম, যিকির-ফিকির, দোয়া-দুরুদ, ওয়াজ-নছীহত ও যিয়ারত ইত্যাদি নেক আমল সমূহ চালু রয়েছে।
বিশেষতঃ যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতিষ্ঠিত সুন্নতি জামে মসজিদ। যেখানে সব সময় সুন্নতের বয়ান হয়, সুন্নতি কায়দায় আমল হয় এবং যে মসজিদের গেট কখনো বন্ধ হয় না এবং আমলও চব্বিশ ঘন্টা জারী থাকে।
এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, উল্লিখিত মসজিদসমূহে অন্যান্য নেক আমল সমূহের সাথে সাথে আরো একটি বিশেষ সুন্নত চালু রয়েছে, যা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উক্ত তিন মসজিদে চিন্তাও করা যায়না। তাহলো- মাজার শরীফ যিয়ারত করা। অর্থাৎ মসজিদে নববীতে যেরূপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র রওজা শরীফ রয়েছে এবং আশেকে রসূলগণ সর্বদা সেখানে যিয়ারত করছেন ও অশেষ ফয়েয, বরকত ও রহ্মত হাছিল করছেন। তদ্রুপ উল্লিখিত মসজিদ সমূহেও সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত, বিশ্ব সমাদৃত, নায়েবে রসূল বা ওলী আল্লাহগণের মাজার শরীফ রয়েছে, সেখানে আশেকে ওলী আল্লাহ্গণ, সর্বদাই যিয়ারত করছেন এবং লাভ করছেন অশেষ রহ্মত-বরকত ও ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ্। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, উল্লিখিত মসজিদ সমূহে মসজিদে নববীর সুন্নাত অনুসরণে যেরূপ সর্বদা আমল চালু রয়েছে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উক্ত তিন মসজিদে তদ্রুপ নেই।
তাছাড়া ছয় উছূলী তাবলীগের উল্লিখিত মসজিদগুলোতে যে দায়েমীভাবে আমল বা ইবাদত হয় না তার আরেকটি প্রমাণ হলো শবে বরাত ও শবে ক্বদর। ছয় উছূলীরা যেহেতু উক্ত রাত্রিতে ইবাদত করা ও জাগ্রত থাকাকে বিদয়াত মনে করে। তাই ছয় উছূলী তাবলীগীদের প্রায় সব মসজিদগুলোই সে রাত্রিতে বন্ধ থাকে এবং তারা সকলেই উক্ত বরকতপূর্ণ রাত্রিতে আমল বা ইবাদত না করে ঘুমিয়ে থাকে। যদি তাই হয়, তাহলে তাদের মসজিদগুলোতে ২৪ ঘন্টা আমল জারী থাকলো কিভাবে?
তদুপরি বিশেষভাবে আরো উল্লেখ্য যে, প্রচলিত তাবলীগী মারকাজ ভিত্তিক মসজিদগুলোতে যেসব কুফরী আক্বীদা ভিত্তিক বয়ান করা হয় এবং তারা যেসব কুফরী আক্বীদা পোষণ ও ধারণ করে তাতে তাদের ইবাদত আদৌ কবুল হবে কিনা তা গভীর সন্দেহের বিষয়।
কাজেই শুধুমাত্র প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উক্ত তিন মসজিদেই চব্বিশ ঘন্টা আমল চালু থাকে, অন্য কোন মসজিদে থাকেনা, তাদের একথা ডাহা মিথ্যা, মনগড়া, বিভ্রান্তিমূলক ও অন্যান্য মসজিদ সমূহের প্রতি অবজ্ঞা স্বরূপ।
দ্বিতীয়তঃ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাদের মসজিদ সমূহের বর্ণনা দিতে গিয়ে তাদের মসজিদগুলোর নাম প্রথমে উল্লেখ করেছে আর মসজিদে নববী শরীফের নাম সর্বশেষে উল্লেখ করেছে। এটি অত্যন্ত বেয়াদবীমূলক ও চরম ধৃষ্টতার শামিল। এ ধরণের বেয়াদবী যারা করে, তাদের সম্পর্কে মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
بے ادب محرومر گشت از لطف رب.
অর্থঃ- “বেয়াদব আল্লাহ পাক-এর রহ্মত থেকে বঞ্চিত।” (মছনবী শরীফ)
কাজেই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উচিৎ ছিল, তাদের উল্লিখিত মসজিদসমূহের মধ্যে, মসজিদে নববী শরীফের নাম সর্বপ্রথমে উল্লেখ করা।
অতএব, একথাই প্রমাণিত হলো যে, মসজিদে আমল চালু থাকা সম্পর্কিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও কুরআন, সুন্নাহ বিরোধী।
কাজেই এ ধরণের মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকা তাদের সহ সকলের জন্যেই ফরজ/ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)
প্রদত্ত সুওয়াল-জাওয়াবের টীকা ভাষ্যঃ
ড বিগত সংখ্যাগুলোতে প্রচলিত তাবলীগ ওয়ালাদের বিভিন্ন কুফরী আক্বীদার ১৮টি জবাব দেয়া হয়েছে। এ সংখ্যায় তাদের একটি মিথ্যাচারীতার নমুনা দেয়া হলো মাত্র।
মুহম্মদ সুলতান মাহমুদ, মিরপুর, ঢাকা।
মুহম্মদ আহমদুল্লাহ কামালী, নরসিংদী।
সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী ২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-
প্রশ্নঃ চুল…রাখার সুন্নত কি?……
উত্তরঃ…চুল রাখার দুই তরীকা, এক বাবরি রাখা, দুই মুণ্ডানো।….(শামী, আলমগীরী, বুখারী, মুসলিম)
আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা এপ্রিল/২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “মাথা মুন্ডানো যদিও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হজ্বের মৌসুম ব্যতীত পাওয়া যায় না, কিন্তু হযরত আলী (রাযি.) থেকে মাথা মুন্ডানোর বর্ণনা পাওয়া যায় এবং হযরত আলী (রাযি.)-এর এই আমলের উপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্বীকৃতি পাওয়া যায়। তাই সাহাবীর আমল হিসেবে মাথা মুন্ডানো সুন্নাত।
অন্য এক রেওয়ায়াতে আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাথা মুন্ডন কারীদের জন্য তিন বার রহমতের দোয়া করেছিলেন। আর হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদিতেও মাথা মুন্ডানোকে সুন্নাত বলা হয়েছে। (ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরি ও শামী)
এখন আমার সুওয়াল হলো- মাথা মুণ্ডন করা সম্পর্কে মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত বা চুল রাখার দুই তরীকার, এক তরীকা? দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দিয়ে, আমাদের আক্বীদা আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ মাথার চুল মুণ্ডন করা সম্পর্কে মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে।
কারণ, মাসিক মদীনা ও হাটহাজারী মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সমজাতীয়রা এমন একটি হাদীছ শরীফও উল্লেখ করতে পারবে না, যেখানে উল্লেখ আছে যে, “আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নুরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ও ওমরাহ ব্যতীত অন্য সময় নিজ মাথার চুল মুবারক মুণ্ডন করেছেন।” বরং অসংখ্য ছহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, “আল্লাহ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় বাবরী চুল মুবারক রাখতেন। সেহেতু সকল উম্মতে মুহম্মদীর জন্য সর্বদা বাবরী চুল রাখাই দায়িমী সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
(ধারাবাহিক)
চুল রাখা সম্পর্কে হাটহাজারীর জিহালতপূর্ণ বক্তব্যের খণ্ডন মুলক জবাব-৭
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা বলেছে, “আর হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য কিতাবাদিতেও মাথা মুন্ডানোকে সুন্নাত বলা হয়েছে। (ফাত্ওয়ায়ে আলমগীরি ও শামী) ….।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্যও চরম জিহালতপূর্ণ হয়েছে।
কারণ হানাফী মাযহাবের যে সকল কিতাবাদিতে মাথা মুন্ডানোকে সুন্নাত বলা হয়েছে তা ছহীহ নয় বরং ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য মতে সিঁথি বিশিষ্ট বাবরী চুল রাখাই খাছ সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত। যেমন, “ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ৯ম খণ্ডের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
سنت فنط يهى مى كه بال در ميان سے ما ںگ كر کے ر کے.
অর্থাৎ- “চুল রাখার একমাত্র সুন্নত তরীক্বা এটাই যে, চুল মাথার মধ্যখান থেকে সিঁথি করে রাখবে।” অর্থাৎ বাবরী রাখবে। এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,
وانما صح عند المترجم الفرق فقط ولم يصح ان الحلق سنة.
অর্থঃ- “আর মুতারজিম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট নিশ্চয়ই ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো এই যে, শুধু মাত্র সিঁথি বিশিষ্ট বাবরী চুল রাখাই সুন্নত। (হজ্জ ও ওমরাহ্ ব্যতীত) মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত, এ মতটি ছহীহ্ বা গ্রহণযোগ্য নয়”। (ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া)
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, মাথা মুণ্ডন করা সম্পর্কিত হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবদের উক্ত বক্তব্য ছহীহ্ নয়। বরং হানাফী মাযহাবের ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য মত হলো, “শুধু মাত্র বাবরী চুল রাখাই সুন্নত।”
হাটহাজারীর দলীলের ভুল ব্যাখ্যা উদঘাটন
উল্লেখ্য, হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা মাথা মুণ্ডন করা সুন্নত বলে তাদের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে ফতওয়ায়ে আলমগীরী ও শামী, কিতাবের বরাত দিয়েছে। আর উক্ত কিতাবগুলোতে হযরত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতটিই উল্লেখ করা হয়েছে। আর ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হজ্বের উপর ক্বিয়াস করে মাথা মুন্ডন করাকে সুন্নত বলেছেন। মূলতঃ হযরত ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্ত ক্বিয়াস সঠিক নয়, কারণ, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হজ্জ ও ওমরাহ ব্যতীত) অন্য সময় মাথা মুণ্ডন করেছেন এ ধরনের একটি দলীলও তিনি পেশ করেননি। মূলত: কারো পক্ষে পেশ করাও সম্ভব নয়। যদি তাই হয়ে থাকে তবে হজ্ব ও ওমরাহ ব্যতীত অন্য সময় মাথা মুণ্ডন করা কি করে সুন্নতে রসূল হতে পারে?
তাছাড়া হজ্বের হুকুম-আহ্কাম সম্পূর্ণই ভিন্ন ও আলাদা। হজ্বের সময় চুল মুন্ডন করা খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু হজ্জ ও ওমরাহ্ ব্যতীত অন্য সময় চুল মুন্ডন করা সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিলাফ। কারণ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব ও ওমরাহ্ ব্যতীত কখনো চুল মুবারক মুন্ডন করেননি বরং সর্বদাই বাবরী চুল মুবারক রেখেছেন।
মূলত: হাটহাজারীর মৌলভী সাহেবরা উল্লিখিত কিতাবের ইবারতের সঠিক ব্যাখ্যা বুঝতে না পারার কারণেই বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্ ইত্যাদি ছিহাহ্ সিত্তাহ্সহ অনেক হাদীছ শরীফের অসংখ্য ছহীহ্ হাদীছ শরীফকে উপেক্ষা করে এ ব্যাপারে ভুল সিদ্ধান্ত পেশ করে মুর্খতার পরিচয় দিয়েছে।
মাথা মুণ্ডন করা খারিজীদের আলামত
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, অধিক মাত্রায় মাথা মুণ্ডন করা খারিজীদের আলামত। এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن شريكى بن شهاب قال كنت اتمنى ان القى رجلا من اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم اسئله عن الخوارج فلقيت ابا برزة فى يوم عيد فى نفر من ا صحا به فقلت له هل سمعت ر سول الله صلى الله عليه وسلم يذ كر الخوارج قال نعم سمعت ر سول الله صلى الله عليه وسلم با ذنى ورا يته بعينى اتى رسول الله صلى الله عليه وسلم بمال فقسمه فا عطى من عن يمينه ومن عن شما له ولم يعط من ورا ئه شيا فقام ر جل من ورائه فقال يا محمد ما عد لت فى القسمة رجل اسود مطموم الشعر عليه ثو بان ابيضان فغضب رسول الله صلى الله عليه و سلم غضبا شد يدا و قال والله لا تجدون بعدى رجلا هو اعدل منى ثم قال يخرج فى اخر الز مان قوم كان هذا منهم يقرءون القر ان لا يجا وز ترا قيهم يمر قون من الاسلام كما يمرق السهم من الر مية سيماهم التحليق.
অর্থঃ- “হযরত শারীক ইবনে শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমার প্রবল ইচ্ছে ছিল যে, যদি আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জনৈক ছাহাবীর সাক্ষাৎ পাই তবে তাঁকে ‘খারিজীদের’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব। সৌভাগ্যবশতঃ এক ঈদের দিন হযরত আবু বারযাতুল আসলামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সাথে তাঁর কতেক বন্ধু সমেত আমার সাক্ষাৎ হলো। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কখনো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘খারিজীদের’ সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছেন কি?
তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি আমার দু’কানে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি এবং নিজ চোখে তাঁকে দেখেছি যে, একদা রসূলুল্লাহ্ ছল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে কিছু মাল-সম্পদ এসেছিল। তিনি তা বন্টন করে দিলেন। যে তাঁর ডানে ছিল তাঁকেও দিলেন এবং যে তাঁর বামে ছিলেন তাঁকেও দিলেন। কিন্তু যে তাঁর পিছনে ছিল তাকে কিছুই দিলেন না। তখন এক ব্যক্তি পিছন থেকে দাঁড়িয়ে বললো, ‘হে মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মাল বন্টনে আপনি ইনছাফ করছেননা। “লোকটি ছিল কালো বর্ণের নেড়ে মাথা, গায়ে ছিল সাদা রংয়ের দু’খানা কাপড়।” তার কথা শুনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভীষণ রাগান্বিত হলেন এবং বললেন, আল্লাহ্ পাক-এর কসম! তোমরা আমার পরে আর কোন ব্যক্তিকেই আমার চেয়ে অধিক ইনছাফকারী পাবেনা। অতঃপর বললেন, ‘শেষ যামানায় এমন একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে এ লোকটিও তাদেরই একজন। তারা কুরআন শরীফ পড়বে ঠিকই কিন্তু কুরআন শরীফ তাদের কণ্ঠনালীর নীচে নামবেনা।’ অর্থাৎ অন্তরে বসবে না। তারা ইসলাম থেকে এরূপভাবে বের হয়ে যাবে যেরূপ নিক্ষিপ্ত তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়। তাদের পরিচয় হলো তারা হবে ন্যাড়া মাথা। অর্থাৎ তারা সর্বদা মাথা মুণ্ডন করবে।” (নাসাঈ, মিশকাত)
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে যে,
عن ابى سعيد الخد رى وانس بن ما لكى عن ر سول الله صلى الله عليه وسلم قال سيكون فى امتى اختلاف وفر قة قوم يحسنون القيل ويسيئون الفعل يقر ئون القران لايجاوز تراقيهم… قالوا يا رسول الله ما سيما هم قال التحليق.
অর্থঃ- “হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হতে বর্ণিত। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতি শীঘ্রই আমার উম্মতের মতবিরোধ ও দলাদলি দেখা দেবে। তাদের মধ্যে একদল এরূপ বের হবে যে, তাদের বক্তব্য বা বয়ান হবে খুব সুন্দর বা চমকপ্রদ। কিন্তু আমল হবে খারাপ। তারা কুরআন শরীফ পাঠ করবে ঠিকই তবে তা তাদের কণ্ঠনালীর নীচে প্রবেশ করবে না। (অর্থাৎ তাদের ঈমান থাকবেনা) …. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাদের পরিচয় বা আলামত কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাদের আলামত হলো মাথা মুণ্ডন করা। অর্থাৎ তারা সর্বদা মাথা মুণ্ডন করে থাকবে।” (আবু দাউদ, মিশকাত)
غن ابى سعيدن الخدرى رضى الله تعا لى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال يخرلج نا س من قبل المشرق ويقرءون القران لايجاوز تراقيهم يمر قون من الد ين كما يمر ق السهم من الر مية ثم لايعودون فيه حتى يعود السهم الى فو قه قيل ما سيما هم قال سيما هم التحليق.
وفى قوله صلى الله عليه وسلم سيما هم التحليق تنصسيص على هؤلاء القوم الخار جين من المشرق.
অর্থঃ- “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, পূর্ব এলাকা থেকে একদল লোক আত্মপ্রকাশ করবে তারা কুরআন শরীফ পড়বে কিন্তু তাদের পাঠ তাদের গলার নিচে নামবে না। তারা তাদের দ্বীনকে এমনভাবে উপেক্ষা করবে যেভাবে তীর শিকার অতিক্রম করে যায়। তীর যেমন স্বস্থানে ফিরে আসেনা তদ্রুপ তারাও দ্বীনের দিকে ফিরে আসবেনা। জিজ্ঞাসা করা হলো, তাদের চেনার চিহ্ন কি? তিনি বললেন, তাদের চিহ্ন হলো, তারা মাথা মুণ্ডন করবে। তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন, তাদের পরিচয় হলো, তারা মাথা মুণ্ডন করবে। মূলতঃ তারা হচ্ছে পূর্ব এলাকার খারিজী সম্প্রদায়।” বুখারী শরীফ, খুলাছাতুল কালাম ফি বয়ানি ইমরাইল বালাদিল হারাম, তারিখে নজ্দ ওয়া হিজায)
অতএব, খারিজীদের পরিচয় হলো, তারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত বাবরী চুলের বিরোধিতা করে সর্বদা মাথা মুণ্ডন করবে। অর্থাৎ খারিজীরা সর্বদাই মাথা মুণ্ডন করাকে পছন্দ করে থাকে।
প্রদত্ত সুওয়াল-জাওয়াবের টীকা ভাষ্যঃ
(ক) বিগত সংখ্যায় বলা হয়েছে,“আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদাই ‘বাবরী চুল মুবারক’ রেখেছেন। এবং হজ্জ ও ওমরাহ্ ব্যতীত অন্য সময় কখনোই মাথা মুবারক মুণ্ডন করেননি। ”
(খ) বর্তমান সংখ্যায় দলীল-আদিল্লাহ্ সহ প্রমাণ করা হলো যে, সর্বদা “মাথা মুণ্ডন করা খারিজীদের আলামত।” (চলবে)
মুহম্মদ মুহিউদ্দীন
সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত, সন্দ্বীপ শাখা, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানী মাযহাবের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারী/২০০৩-০৪ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ‘‘বিতিরের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম এবং বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব পাবে বলে উল্লেখ করেছে।’’ তারা তাদের উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ্, নাসায়ী থেকে দলীল হিসেবে কয়েকখানা হাদীছ শরীফও উল্লেখ করেছে।
আর হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ডিসেম্বর/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, ‘‘বিতির নামাযের পর দুই রাক্আত নফল নামায… দাঁড়িয়ে পড়া ভাল। কারণ, নফল নামায বিনা কারণে বসে পড়লে অর্ধেক সাওয়াব হয়।”
এখন আমার সুওয়াল হলো- তারা হালকী নফল নামায সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা কতটুকু সঠিক? এবং এ সম্পর্কে যে হাদীছ শরীফগুলো উল্লেখ করেছে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য।
তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ হালকী নফল সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াবঃ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায যাকে “হালকী নফল” বলা হয়, তা দাঁড়িয়ে পড়া সম্পর্কে অখ্যাত মাসিক পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন এবং কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ হয়েছে। এবং ক্ষেত্রবিশেষে কুফরীমূলক হয়েছে।
স্মর্তব্য যে, সাধারণতঃ নফল নামায বসে পড়লে অর্ধেক ছওয়াব হলেও বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াই মুস্তাহাব-সুন্নত, যা উত্তম ও পূর্ণ ছওয়াব এবং অধিক ফযীলতের কারণ।
কেননা আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায কখনও দাঁড়িয়ে আদায় করেননি। বরং বসেই আদায় করেছেন। যা সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।
(ধারাবাহিক)
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা ‘বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও নাসায়ী শরীফ’ ইত্যাদি কিতাব থেকে দলীল হিসেবে যে বক্তব্য উল্লেখ করেছে, আসলে উক্ত কিতাবসমূহের বক্তব্য মোটেও সে রকম নয়। উল্লিখিত কিতাবসমূহের কোন কোন ইবারত কারচুপি করে নিজেদের বাতিল মতকে ছাবিত করার ব্যর্থ কোশেশ করেছে। তারা উল্লিখিত কিতাবের বরাত দিয়ে যে সকল মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা ও কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা ও ফায়সালা তুলে ধরে তার খণ্ডনমূলক আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ্।
নিম্নে “রেজভীয়া”-কিতাবের
বক্তব্য পর্যালোচনা করা হলো
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা বলেছে, “আহমদ রেজা খান ব্রেলভী রচিত “ফতওয়ায়ে রেজভীয়া”-এর ৩য় খণ্ডে ……অন্যান্য নফল নামাযের ন্যায় বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযও দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীরা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম বলে প্রথমতঃ “রেজভীয়া” কিতারের ৩য় খণ্ডের বরাত দিয়েছে। অথচ রেজভীয়া কিতাবের ৩য় খণ্ডে এ ব্যাপারে দু’টি বক্তব্য বর্ণনা করা হয়েছে। একটি হলো ১৩২৫ হিজরীর এবং অপরটি হলো ১৩২৬ হিজরীর।
আর তরতীব অনুযায়ী ১৩২৫ হিজরীর বক্তব্যটি কিতাবে আগে আসার কথা এবং ১৩২৬ হিজরীর বক্তব্যটি কিতাবে পরে আসার কথা। কিন্তু আফসুস্ রেযা খাঁর জন্য যে, সে ১৩২৫ হিজরীর বক্তব্যটি লিখেছে পরে কিতাবের ৪৬৭-৪৬৮ পৃষ্ঠায় এবং ১৩২৬ হিজরীর বক্তব্যটি লিখেছে আগে কিতাবের ৪৬০-৪৬১ পৃষ্ঠায়। অথচ তরতীব অনুযায়ী ১৩২৫ হিজরীর বক্তব্যটি কিতাবের ৪৬০-৪৬১ পৃষ্ঠায় এবং ১৩২৬ হিজরীর বক্তব্যটি কিতাবের ৪৬৭-৪৬৮ পৃষ্ঠায় লেখা উচিত ছিল। কিন্তু রেযা খাঁ তরতীব ভঙ্গ করে আগের বক্তব্যটি পরে এবং পরের বক্তব্যটি আগে লিখে প্রতারণা করেছে। আর যারা প্রতারণা করে, তাদের লিখুনি বা বক্তব্য কি করে গ্রহণ যোগ্য হতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ “আহমদ রেজা খান ব্রেলভী রচিত “ফতওয়ায়ে রেজভীয়া”-এর ৩য় খণ্ডে …… অন্যান্য নফল নামাযের ন্যায় বিত্রের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযও দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে।” এ ধরণের সরাসরি কোন বক্তব্যও “রেজভীয়া” কিতারের ৩য় খণ্ডের ৪৬০-৪৬১ পৃষ্ঠায় এবং ৪৬৭-৪৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ নেই। সুতরাং রেযাখানীরা এখানেও কিতাবের ৩য় খণ্ডের বরাত দিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।
নিম্নে “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খণ্ডের ১৩২৫ হিজরীর বক্তব্যটির হুবহু ইবারত তুলে ধরা হলো।
যেমন “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খণ্ডের ৪৬৭-৪৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
مسنلہ-…… کیا فر ما تے بس علما ںے دین کہ بعد وتر کے نفل جو پڑھےجا تے بیں ان کا بیٹھ کر پڑ ھنا بھتر بے یا کھڑ مےو کر کئاب ما لا بدی منه بنلس ی میں ص 45 س5 میں نحر ير بے كة بعد ونر کے دو ر كعن بیٹھ پڑھنا مستحب ہے.
الجو اب- کھڑ ے هو کر پڑھنا افضل ہے بیٹھ کر پڑھنے میں ادهاثو اب ہے ر سرل الله صلى الله تعالى عليه وسلم فرماتے بیں ان صلى قا نعا فهو افضل و من صلى قا عدا فله نصف اجر القانم. ……رواه البخارى
অর্থঃ-“মাসয়ালাঃ……বিতির নামাযের পর যে নফল নামায পড়া হয় তা বসে পড়া উত্তম না দাঁড়িয়ে, মালা বুদ্দা মিনহু কিতাবে লিখিত আছে বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসে পড়াঞ্জমুস্তাহাব।
জাওয়াবঃ দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম, বসে পড়ায় অর্ধেক ছওয়াব। রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, দাঁড়িয়ে নামায পড়া আফযল, যে ব্যাক্তি বসে নামায আদায় করে, সে দাঁড়ানো ব্যাক্তির তুলনায় অর্ধেক ছওয়াব পাবে।” … ইহা বর্ণিত আছে বুখারীতে।
“রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খণ্ডে উল্লিখিত উক্ত ইবারতে প্রথমতঃ এটাই প্রমাণিত হলো যে, রেযাখানীদের গুরু মৌলভী রেযা খাঁ সাহেব উল্লিখিত ইবারতে যে জাওয়াব দিয়েছে,ঞ্জতার উক্ত জাওয়াবের মধ্যে
بعد وتر کے دورکعت.
অর্থাৎ- “বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযের ইবারতটি তার জাওয়াবে সরাসরি উল্লেখ নেই।”
অথচ আমাদের বক্তব্য হলো-
بعد وتر کے دورکعت.
অর্থাৎ- বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সম্পর্কে।
দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীদের গুরু মৌলভী রেযা খাঁ ছাহেবকে মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করা হয়েছেঞ্জখাছ করে
بعد وتر کے دور كعت
অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায সম্পর্কে।
অথচ রেযা খাঁ কুটকৌশলে
بعد وتر کے دور کعت
অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযের প্রসঙ্গটি কুটকৌশলে এড়িয়ে গিয়ে আমভাবে অন্যান্য নফল নামাযের কথা বলেছে, সেহেতু সে بعد وتر کے دور کعت
অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযের ইবারতটি তার জাওয়াবে সরাসরি উল্লেখ করেনি।
তৃতীয়তঃ রেযাখানীদের গুরু মৌলভী রেযা খাঁ ছাহেব
بعد وتر کے دورکعت
অর্থাৎ বিতির নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযের ইবারতটি তার জাওয়াবে সরাসরি উল্লেখ না করে ধোকা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়েছে।
চতুর্থতঃ রেযাখানীদের গুরু মৌলভী রেযা খাঁ সাহেব তার মাসয়ালার জাওয়াবে দলীল হিসেবে বুখারী শরীফের বরাত দিয়ে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ খানা উল্লেখ করেছে,
যেমন, রেযাখাঁর দলীলের হুবহু ইবারত খানা হলো
ان صلى قا ئما فهو افضل ومن صلى قا عدافله نصف اجر القائم- رو51 البخارى-
অর্থঃ- ‘(নফল) নামায দাঁড়িয়ে পড়া উত্তম। আর যে বসে পড়ে তার জন্য দাঁড়িয়ে আদায়কারীর চেয়ে অর্থেক সাওয়াব রয়েছে।’
এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখা বুখারী শরীফের বরাত দিয়ে যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, সেই ইবারতের মধ্যে যেহেতু بعد الوتر ركعتين (বা’দাল বিত্রি রাকয়াতাইনি)
অর্থাৎ বিতরের পর দু’রাকায়াত (নফল) নামায যাকে হালকী নফল বলা হয় তার উল্লেখ নেই, সেহেতু বুখারী শরীফের সেই ইবারতের দ্বারা বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামাযের প্রশ্ন আসে কি করে?
মুলতঃ উল্লিখিত হাদীছ শরীফে বিতরের পর দু’রাকায়াত নফল ব্যতীত অন্য সকল নফল নামাযের কথা বলা হয়েছে। বিতরের পর দু’রাকায়ত নফলের কথা বলা হয়নি।
আর আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মধ্যে হাদীছ শরীফের সুস্পষ্ট ইবারতের দ্বারা প্রমাণ করেছি যে, বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করা সুন্নত ও পূর্ণ ছওয়াব। কারণ হাদীছ শরীফের ইবারতের মধ্যে
يصلى بعد الو تر ر كعتين خفيفتين وهو جا لس
বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায বসেই আদায় করার বর্র্ণনা সুস্পষ্টভাবে হুবহু উল্লেখ আছে।
অতএব, রেযাখাঁ তার “রেজভীয়া” কিতাবে বিত্র নামাযের পর দু’রাকায়াত নফল নামায দাঁড়িয়ে পড়াই উত্তম বলে বুখারী শরীফের বরাত দিয়ে সাধারণ মানুষকে চরমভাবে ধোকা দিয়েছে। অথচ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে- من غش فليس منا
অর্থাৎঃ- যে ব্যক্তি ধোকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। সুতরাং চিন্তার বিষয় তাদের ফতওয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য।
প্রদত্ত সুওয়াল-জাওয়াবের টীকা ভাষ্যঃ
(ক) বিগত সংখ্যায় বলা হয়েছে, “রেযা খাঁ তার লিখিত “রেজভীয়া” কিতাবের ৩য় খণ্ডে ৪৬৮ পৃষ্ঠায়, ইবনে মাজাহ্ শরীফের বরাতে দু’জন রাবী থেকে বর্ণিত পৃথক পৃথক দু’ খানা হাদীছ শরীফ একত্রে একখানা করে একজনের নামে চালিয়ে দিয়ে হাদীছ জালিয়াতি করেছে।
(খ) পরবর্তী সংখ্যায় ইন্শাআল্লাহ রেজভীয়া কিতাবের বক্তব্য পর্যালোচনা করা হবে। (চলবে)
নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক
ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।
সুওয়াল: হানাফী মাযহাবে –
(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।
(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।
(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।
(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।
(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।
(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।
(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।
(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো জোড়া জোড়া এবং আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।
(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।
(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।
(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।
(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।
কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।
অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: সুওয়ালে উল্লিখিত হানাফী মাযহাবের মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব ধারাবাহিকভাবে পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে তার পূর্বে মাযহাব মানা ফরয, মাযহাব না মানা বিদ্য়াত ও গোমরাহী, মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী- সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে প্রদান করা হবে ইনশাআল্লাহ।
(ধারাবাহিক)
কুরআন শরীফের দৃষ্টিতে
মাযহাব গ্রহণ করা ফরয-ওয়াজিব
আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
يايها الذين امنوا اطيعوا الله واطيعوا الر سول واولى الامر منكم فان تنا ز عتم فى شىء فر دوه الى الله والر سول ان كنتم تؤ منون با لله واليوم الاخر ذلكى خير واحسن تا ويلا.
অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক-এর ইতায়াত করো এবং আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত করো এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর রয়েছেন তাঁদের ইতায়াত করো। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয় তাহলে তা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিকে প্রত্যাবর্তন করো। অর্থাৎ যেই উলিল আমর আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেশী অনুগত ও নৈকট্যশীল বা যার মতের স্বপক্ষে কুরআন ও সুন্নাহর দলীল-আদিল্লাহ বেশী রয়েছে তাঁকে বা তাঁর মতকে অনুসরণ করবে। যদি তোমরা আল্লাহ পাক ও ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। এটাই কল্যাণকর এবং তা’বিল বা ব্যাখ্যার দিক দিয়ে উত্তম।” (সূরা নিসা-৫৯)
কুরআন শরীফের এ আয়াত শরীফের মধ্যে আল্লাহ পাক বান্দার জন্য ইতায়াত বা অনুসরণের কাইফিয়াত ও তরতীব বর্ণনা করে দিয়েছেন। প্রথমত: আল্লাহ পাক-এর ইতায়াত। দ্বিতীয়ত: আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত। তৃতীয়ত: উলিল আমরের ইতায়াত।
প্রথমত: আল্লাহ পাক-এর ইতায়াতের কথা বলা হয়েছে। তা তো কেবল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পক্ষেই সম্ভব। কারণ তাঁদেরকেই আল্লাহ পাক ওহী নাযিলের মাধ্যমে সবকিছু জানিয়েছেন। আবার তাঁদের মধ্যে কারো সাথে কথা বলেছেন, কাউকে বিশেষ বিশেষ ফযীলত ও মর্যাদা দান করেছেন।
এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
نوحى الهم.
অর্থঃ- “আমি তাঁদের প্রতি ওহী নাযিল করতাম।” (সূরা ইউসুফ-১০৯, নহল-৭৪, আম্বিয়া-৭)
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
تلكى الر سل فضلنابعضهم على بعض منهم من كلم الله ور فع بعضهم در جت.
অর্থঃ- “আমি রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের একেকজনকে একেকজনের উপর ফযীলত দান করেছি। তাঁদের কারো কারো সাথে আল্লাহ পাক (সরাসরি) কথা বলেছেন এবং কাউকে কাউকে উচ্চতর মর্যাদা-মর্তবা দান করেছেন।” (সূরা বাক্বারা-২৫৩)
দ্বিতীয়ত: আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াতের কথা বলা হয়েছে। এটা তো হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের জন্যই খাছ।
কারণ, আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁরাই দেখেছেন এবং তাঁর কাছ থেকে ওহীর ইলম জেনে, শুনে, বুঝে আমল করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে,
من يطع الر سول فقد اطاع الله.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইতায়াত করলো সে মূলত: আল্লাহ পাক-এরই ইতায়াত করলো।” (সূরা নিসা-৮০)
তৃতীয়ত: উলিল আমরগণের ইতায়াতের কথা বলা হয়েছে। এটাই মূলত: পরবর্তীকালের উম্মতের জন্য নির্ধারিত বিধান।
এ প্রসঙ্গে কুরআন শরীফের উল্লিখিত আয়াত শরীফসহ আরো বহু আয়াত শরীফ ইরশাদ হয়েছে। যেমন কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
امنوا كما امن الناس.
অর্থঃ- “তোমরা ঈমান আন যেরূপ হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণ ঈমান এনেছেন।” (সূরা বাক্বারা-১৩)
السبقو ن الاولون من المها جر ين والانصار والذين اتبعو هم باحسان رضى الله عنهم ورضوا عنه واعد لهم جنت تجرى تحتها الانهر خلد ين فيها ابدا ذلكى الفوز العظيم.
অর্থঃ- “ঈমান ও আমলে অগ্রগামী, সর্বপ্রথম স্থান অধিকারী মুহাজির ও আনছার ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের প্রতি আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট। এবং যারা তাঁদেরকে অর্থাৎ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে উত্তমভাবে ইত্তিবা বা অনুসরণ করবে আল্লাহ পাক তাঁদের প্রতিও সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহ পাক-এর প্রতি সন্তুষ্ট। আল্লাহ পাক তাঁদের জন্য এমন জান্নাত নির্ধারণ করে রেখেছেন যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত থাকবে। এটা আল্লাহ পাক-এর পক্ষ হতে তাঁদের প্রতি মহান প্রতিদান।” (সূরা তওবা-১০০)
من يشاقق الر سول من م بعدماتبين له الهدى ويتبع غيرسبيل المؤمنين نو له ماتو لى ونصله جهنم و سا ئت مصيرا.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কাছে সঠিক পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং মু’মিনগণের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐদিকেই ফেরাব যে দিক সে রুজু হয় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। আর জাহান্নাম নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।” (সূরা নিসা-১১৫)
এখানে سبيل المؤ منين অর্থাৎ মু’মিনগণের পথ বলতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পথ অতঃপর তাবিয়ীন, তাবি তাবিয়ীন ও মুজতাহিদ ইমাম ও আওলিয়ায়ে কিরামগণের পথকে বুঝানো হয়েছে।
আল্লাহ পাক সূরা ফাতিহার মধ্যে সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দান করে সে পথে চলার জন্য দু’য়া শিক্ষা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে,
اهدنااصراط المستقيم صراط الذين انعمت عليهم.
অর্থঃ- “আয় বারে ইলাহী! আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শণ করুন। তাঁদের পথ যাদেরকে আপনি নিয়ামত দান করেছেন।” (সূরা ফাতিহা-৫, ৬)
কাদেরকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে সে প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে,
انعم الله عليهم من النبين والصد قين واشهداء والصلحين و حسن اولئكى رفيقا.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক নিয়ামত দান করেছেন- নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও ছালিহগণকে এবং তাঁরাই উত্তম বন্ধু বা সঙ্গী।” (সূরা নিসা-৬৯)
আল্লাহ পাক সূরা ফাতিহার মধ্যে নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও ছালিহগণের পথ তলব করতে বলেছেন এবং তাঁদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে বলেছেন। অর্থাৎ এখানে দেখা যাচ্ছে, পথ হচ্ছে দু’টা। প্রথমত: নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথ। দ্বিতীয়ত: ছিদ্দীক, শহীদ ও ছালিহগণের পথ তথা উলিল আমরগণের পথ।
উল্লেখ্য, উলিল আমরগণের মধ্যে প্রথমস্তরের উলিল আমর হচ্ছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ। তাঁরা প্রত্যেকেই উম্মাহ্র জন্য অনুসরণীয়, অনুকরণীয় ও পথপ্রদর্শক ছিলেন।
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
فا سئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.
অর্থঃ- “যদি তোমরা না জান তাহলে আহলে যিকিরগণের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।” (সূরা আম্বিয়া-৭)
অত্র আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
نحن اهل الذ كر.
অর্থঃ- আমরা ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণই আহলে যিকিরের অন্তর্ভুক্ত।” (তাফসীরে কুরতুবী)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক নিজেই উম্মাহর জন্য কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ বুঝতে ও আমল করতে উলিল আমরগণের অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং মুজতাহিদ ইমাম ও আওলিয়া কিরামগণের ইতায়াত ও পায়রবি করাকে ফরয-ওয়াজিব সাব্যস্ত করেছেন।
বিশেষ করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানা অতীত হওয়ার পর উম্মাহর জন্য মাযহাব চতুষ্ঠয়ের ইমামগণের অনুসরণ ব্যতীত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ মুতাবিক আমল করা সম্ভব নয়। কারণ, এই চার ইমাম ব্যতীত আর কেউই শরীয়তের যাবতীয় মাসয়ালা-মাসায়িল লিপিবদ্ধ করেননি।
কাজেই, শরীয়তের প্রতি আমল করতে গেলে এই চার ইমামের একজনকে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এটা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। যদি কোন মাযহাব মান্য করা না হয় তাহলে শরীয়ত থেকে খারিজ হয়ে যাবে। (চলবে)
মুহম্মদ ওয়াদুদ পাটওয়ারী, গণপূর্ত বিভাগ, কুড়িগ্রাম।
সুওয়ালঃ চান্দিনা আল আমিন কামিল মাদ্রাসার জনৈক মুহাদ্দিছ তার এক বয়ানে বলেছে যে, ‘আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চল্লিশ বছর বয়স মুবারকের পূর্বে নুবুওওয়াত দেননি। কারণ, চল্লিশ বছর বয়স মুবারকের পূর্বে নাকি তাঁর চরিত্র মুবারকে দোষত্রুটির সম্ভাবনা ছিলো।”
সঠিক সমাধান জানতে বাসনা রাখছি।
জাওয়াবঃ উক্ত মুহাদ্দিছ উরফে মুহদিছ ব্যক্তির বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ ও কুফরী হয়েছে। মুসলমান হয়ে কেউ কুফরী করলে সে মুরতাদ ও কাফির হয়ে যায়। সুতরাং তার এ কুফরীমূলক বক্তব্য থেকে সত্ত্বর খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা উচিত।
আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয়তম হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী, রসূল ও হাবীব হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ নুবুওওয়াত-রিসালতের অধিকারী করেই সৃষ্টি করেছেন।
তবে চল্লিশ বছর বয়স মুবারকে নুবুওওয়াত-রিসালতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়েছে মাত্র। প্রকৃতপক্ষে তিনি পূর্ব থেকেই নবী ছিলেন। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن مطر ف بن عبد الله بن الشخير قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كنت نبيا بين الروح وا لطين من ادم.
অর্থঃ- “হযরত মুতররফ বিন আব্দুল্লাহ্ ইবনিশ শিখখির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমি তখনো নবী, যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম রূহ ও মাটিতে ছিলেন।” (ইবনে সা’দ, কানযুল উম্মাল)
عن ا بى هريرة رضى الله تعا لى عنه قال قا لوا يا ر سول الله صلى الله عليه وسلم متى وجبت لكى النبوة قال وادم بين الروح والجسد.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ছাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে কখন নুবুওওয়ত দেয়া হয়েছে, অর্থাৎ আপনি কখন থেকে নবী? তিনি বললেন, আমি তখনো নবী ছিলাম যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম রূহে এবং শরীরে অবস্থান করছিলেন। অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম সৃষ্টির পূর্ব থেকেই আমি নবী।” (তিরমীযী, মিশকাত)
عن العسر با ض بن سا ر ية عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قا ل انى عند الله مكتوب خاتم النبيين وان ادم لمنجدل فى طينته و ساخبر كم باول امرى دعوة ابراهيم وبشارةعيسى ورؤياامى التى رات حين وضعتنى و قد خرج لهانور اضاء لها منه قصورالشام.
অর্থঃ- “হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ পাক-এর নিকটে তখনও ‘খাতামুন্ নাবিয়্যীন’রূপে লিপিবদ্ধ ছিলাম যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম ছিলেন মাটির খামিরের মধ্যে। আমি তোমাদের আরো জানাচ্ছি যে, আমার নুবুওওয়াতের প্রথম প্রকাশ হলো হযরত ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর দু’য়া এবং হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর ভবিষ্যত সুসংবাদ, আর আমার মায়ের প্রত্যক্ষ স্বপ্ন, যা তিনি আমার আগমনকালে দেখেছিলেন যে, তাঁর সম্মুখে একটি নূর উদ্ভাসিত হয়েছে যার রৌশনীতে তিনি সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত দেখতে পান। (শরহুস্ সুন্নাহ, আহমদ, মিশকাত) অর্থাৎ আল্লাহ পাক আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সৃষ্টি করার পূর্বেই নবী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।
কাজেই, যখন প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টির শুরু থেকেই নবী, রসূল ও হাবীব তখন তাঁর চরিত্র মুবারকে দোষত্রুটি থাকার সম্ভাবনাজনিত বক্তব্যটিও সম্পূর্ণরূপে ভুল ও কাট্টা কুফরী বলে প্রমাণিত হলো।
এছাড়া কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে সরাসরিভাবে বর্ণনা এসেছে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম-এর চরিত্র মুবারকে কোন সময়েই দোষত্রুটির সম্ভাবনা ছিলোনা। আল্লাহ পাক তাঁকে সৃষ্টিকাল থেকেই সর্বোত্তম আদর্শ ও উত্তম চরিত্র মুবারকের অধিকারী করেই যমীনে পাঠিয়েছেন। এমনকি উত্তম চরিত্রসমূহকেও পরিপূর্ণ করার জন্য পাঠিয়েছেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
انكى لعلى خلق عظيم.
অর্থঃ “নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্র মুবারকের অধিকারী।” (সুরা ক্বলম-৪)
আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن جا بر رضى الله تعا لى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال ان الله بعثنى لتمام مكارم الاخلاق وكمال محا سن الافعال.
অর্থঃ- “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যাবতীয় উত্তম চরিত্র ও উত্তম কার্যাবলী পরিপূর্ণ করার জন্যই আল্লাহ পাক আমাকে প্রেরণ করেছেন।” (শরহুস্ সুন্নাহ, মিশকাত)
কাজেই আল্লাহ পাক যাকে কেবল সর্বোত্তম চরিত্র মুবারক দিয়েই নয় বরং উত্তম চরিত্রসমূহকেও পরিপূর্ণ করার জন্য যমীনে প্রেরণ করেছেন; তাহলে এমন মহান চরিত্র মুবারকের মধ্যে দোষত্রুটির সম্ভাবনা থাকার চিন্তা কি করে করা যেতে পারে?
মূলত: আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুশমন ছাড়া এরূপ চিন্তা কেউ করতে পারেনা।
নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ যে সম্পূর্ণরূপে ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং তাঁরা যে সর্বপ্রকার গুণাহখতা, ভুলভ্রান্তি, দোষত্রুটি ও লগজেস ইত্যাদি থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র এবং তাঁরা যে কতটুকু মাছূম সে সম্পর্কে উক্ত মুহদিছ ছাহেব নিতান্তই বেখবর।
এ সম্পর্কে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর বহু সংখ্যায় আলোকপাত করা হয়েছে।
গত ১৫০তম সংখ্যাতেও এ সম্পর্কে বিস্তারিত সুওয়ালের জাওয়াব পেশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত আদম আলাইহিস্ সালামসহ সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ছিলেন সম্পূর্ণরূপে মা’ছূম। তাঁদের শান বা মর্যাদার খিলাফ কথাবার্তা ঈমান নষ্ট হওয়ার কারণ তথা কুফরীর শামীল।
{দলীলসমূহঃ তিরমিযী, আহমদ, কানযুল উম্মাল, দাইলামী, তবারানী, মিশকাত, মিরকাত, তারীখে বুখারী, শরহুস্ সুন্নাহ, ইবনে সা’দ, শরহে আক্বাইদে নছফী, আক্বাইদে হাক্কাহ, তাকমীলুল ঈমান, আলফিক্বহুল আকবার ইত্যাদি।}
মুছাম্মত সাদীয়া পারভীন, তাহেরপুর, সুনামগঞ্জ।
সুওয়ালঃ আক্বীকা করা কি? কত দিনের মধ্যে আক্বীকা দেয়ার নিময়? ছোট থাকতে কারো আক্বীকা দেয়া না হলে বড় হওয়ার পর আক্বীকা দেয়া যায় কিনা?
জাওয়াবঃ আক্বীকা করা সুন্নত। সন্তান জন্মের সাত দিনের মধ্যে নখ-চুল কেটে ফেলা, সুন্দর অর্থবহ একটা নাম রাখা এবং আক্বীকা দেয়া সুন্নত-মুস্তাহাব। কারো আক্বীকা না হয়ে থাকলে বড় হওয়ার পরও আক্বীকা করতে পারে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাদানী যিন্দিগী মুবারকে পুনরায় নিজের আক্বীকা নিজেই দিয়েছিলেন।
আক্বীকার জন্য ছেলে সন্তানের জন্য দুই খাসি আর মেয়ে সন্তানের জন্য এক খাসি।
{দলীলসমূহঃ তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত, মাদারিজুন নুবুওওয়াত, সীরতে হালবী, আখলাকুন্ নবী, সীরাতে ইবনে হিশাম, সীরতে ইবনে সাদ, ফতওয়ায়ে আমীনিয়া ইত্যাদি।}
মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম, পাইকগাছা, খুলনা।
সুওয়ালঃ সেন্ডেল বা জুতা ও মোজা পরিধান করার সুন্নতী নিয়ম কি?
জাওয়াবঃ সেন্ডেল বা জুতা বা মোজা পরিধানের সময় ডান পা আগে এরপর বাম পা। আর খোলার সময় বাম পা আগে এরপর ডান পা। একই নিয়মে কোর্তা, লুঙ্গি, সেলোয়ার ইত্যাদি পরিধান করাও সুন্নত।
{দলীলসমূহঃ তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, শামী, দুররুল মুখতার ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম (বাবু), নূরপুর, রংপুর।
সুওয়ালঃ বিতির নামাযে দু’য়া কুনূত পাঠ করার পর দুরূদ শরীফ পাঠ করা নাকি সুন্নত?
জাওয়াবঃ হ্যাঁ, বিতির নামাযে দু’য়া কুনূত পাঠ করার পর দুরূদ শরীফ পাঠ করা সুন্নত। যে কোন দুরূদ শরীফ পাঠ করলেই সে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। শুধু ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’- এ সংক্ষিপ্ত দুরূদ শরীফ পাঠ করাও যেতে পারে।
{দলীলসমূহঃ তরীকুল ইসলাম, আল বাইয়্যিনাত শরীফ ইত্যাদি।}
মোল্লা মুহম্মদ আলী আকবর, মানিকগঞ্জ।
সুওয়ালঃ অনেককে দেখা যায়, দাড়ি ও মোচ কেটে ছোট করে রাখে। অনেকে দু’দিকে চেছে মাঝখানে একমুষ্ঠি রাখে।
এখন আমার সুওয়াল হলো- দাড়ি ও মোচ রাখার সঠিক নিয়ম কি? কেউ যদি একমুষ্ঠির নিচে দাড়ি রাখে তার পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা?
জাওয়াবঃ চেহারা বা থুতনীর মধ্যে যে দাড়ি উৎপন্ন হয় তা একমুষ্ঠি রাখা ফরয। এক মুষ্ঠির নিচে দাড়ি কাটা, ছাটা, মুন্ডন করা হারাম ও কবীরা গুণাহ। আর মোচ কেটে বা ছেটে ছোট করে রাখা সুন্নত। মুন্ডন করা সুন্নতের খিলাফ এবং মাকরূহ তাহরীমীর অন্তর্ভুক্ত।
যে ব্যক্তি একমুষ্ঠির নিচে দাড়ি কাটে ও মুন্ডন করে সে ব্যক্তি ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত। ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। নামায মাকরূহ তাহরীমী হলে সে নামায দোহরানো ওয়াজিব।
{দলীলসমূহঃ আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার ইত্যাদি।}
মুহম্মদ নূরুন্ নবী, মেহেন্দীগঞ্জ, বরিশাল।
সুওয়ালঃ ইক্বামতের সময় হাত কিভাবে রাখার নিয়ম?
জাওয়াবঃ ইক্বামতের সময় ইমাম-মুক্তাদী সকলেরই হাত ছেড়ে রাখতে হবে। হাত বেঁধে রাখা মাকরূহ।
{দলীলসমূহঃ সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব।{
মুছাম্মত রাবেয়া আক্তার (লোবা), রাউজান, চট্টগ্রাম।
সুওয়ালঃ ইশার ফরয নামায রাত বারোটার পর আদায় করলে কোন্ নিয়মে আদায় করতে হবে?
জাওয়াবঃ রাত বারোটার পর ইশার নামায আদায় করার জন্য আলাদা কোন নিয়ম নেই। রাত বারোটার পূর্বে যে নিয়মে পড়তে হয় রাত বারোটার পরে সেই একই নিয়মে পড়তে হয়।
কেননা, ইশার নামাযের ওয়াক্ত রাত বারোটা পর্যন্ত নয়। ইশার ওয়াক্ত হলো সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। তবে মধ্য রাতের পূর্বে আদায় করার জন্য হাদীছ শরীফের নির্দেশ এবং তা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
তাই মাসয়ালা দেয়া হয়েছে যে, ইচ্ছাকৃত মধ্য রাতের পর নামায আদায় করা সুন্নতের খিলাফ। তবে মাজুরের হুকুম আলাদা।
{দলীলসমূহঃ মুসলিম, তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত, আলমগীরী, শামী, আইনুল হিদায়া ইত্যাদি।}
মুছাম্মত হাবিবা কুলসুম, গাবতলী, বগুড়া।
সুওয়ালঃ ইশার নামাযের পরে বিতির ওয়াজিব নামায কাযা হলে কি উপায়ে আদায় করতে হবে?
জাওয়াবঃ বিতির নামায কাযা হলে তা ফজর নামাযের পূর্বেই আদায় করতে হবে।
{দলীলসমূহঃ শামী, দুররুল মুখতার, ফতওয়ায়ে আমীনিয়া ইত্যাদি।}
মুহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান (রুসেল), পলাশবাড়ি, গাইবান্ধা।
সুওয়ালঃ ঈদুল ফিতর ও ঈদুর আদ্বহার নামায জামায়াতে আদায় করতে না পারলে একা একা আদায় করতে হবে কিনা? একা অথবা কাযা আদায় করতে হলে কোন্ নিয়মে আদায় করতে হবে?
জাওয়াবঃ ঈদের নামাযের জন্য জামায়াত শর্ত। সুতরাং কেউ ঈদের নামায জামায়াতের সাথে আদায় করতে পারলো না। অর্থাৎ ফউত হয়ে গেলো সে এখন খালিছ তওবা-ইস্তিগ্ফার করবে যাতে কখনও আর এরকম না হয়।
ঈদের নামাযের ক্বাযা নেই। এমনকি ঈদের নামাযের মধ্যে সিজদা সাহুরও নিয়ম নেই। আর একা ব্যক্তির জন্য ঈদ ও জুমুয়া ওয়াজিব নয়।
{দলীলসমূহঃ আলমগীরী, শামী, গায়াতুল আওতার, বাহরুর রায়িক, তরীকুল ইসলাম ইত্যাদি।}
মুহম্মদ আব্দুল্লাহ, খুলনা।
সুওয়ালঃ একা একা নামায আদায় করলে ইক্বামত দেয়া ও সূরা-ক্বিরায়াত স্বশব্দে পড়তে হবে কিনা?
জাওয়াবঃ হ্যাঁ, একা একা নামায কালে ইক্বামত দিতে হবে। আর একা নামায আদায়কালে সূরা-ক্বিারয়াত স্বশব্দেও পড়তে পারে, চুপে চুপেও পড়তে পারে।
{দলীলসমূহঃ সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব।}
মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ।
সুওয়ালঃ ফজরের সুন্নত নামায ফরয নামাযের পরে পড়লে কি নিয়ত করতে হবে?
জাওয়াবঃ কোন কারণবশত: ফজরের সুন্নত ফরযের পূর্বে আদায় করতে না পারলে সূর্য উদয়ের পর আদায় করতে হবে এবং তা নফলের নিয়তে আদায় করতে হবে।
{দলীলসমূহঃ সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব।}
মুহম্মদ মাবরুরুল হক , গুলবাগ, ঢাকা।
সুওয়ালঃ জুমুয়ার ফরয নামায আদায় করার পর ক্বাবলাল জুমুয়া’র সুন্নত নামায আদায়ের নিয়ম ও নিয়ত কি?
জাওয়াবঃ জুমুয়ার ফরয নামাযের পূর্বে ক্বাবলাল জুমুয়ার চার রাকায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ নামায না পড়ে থাকলে তা ফরযের পর চার রাকায়াত বা’দাল জুমুয়া অতঃপর দু’রাকায়াত ুসুন্নাতুল ওয়াক্ত যা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এ ছয় রাকায়াত সুন্নত পড়ার পর ক্বাবলাল জুমুয়ার চার রাকায়াত সুন্নত নামায পড়তে হবে। আর তা যথা নিয়মেই পড়তে হবে। ক্বাযার নিয়তে বা অন্য কোন নিয়তে আদায় করতে হবে না।
নামাযের নিয়তগুলো নিজ ভাষায় করা যায়। তবে আরবী ভাষায় করাটা ইমাম-মুজতাহিদগণ মুস্তাহসান বা উত্তম বলেছেন। সে হিসেবে আরবী নিয়ত হলোঃ
نويت ان اصلى لله تعا لى ار بع ر كعات صلاة قبل الجمعة سنة رسول الله تعا لى متو حها الى حهة الكعبة الشر يفة الله اكبر.
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকায়াতি ছলাতি ক্ববলাল জুমুয়াতি সুন্নাতু রসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। (সমূহ ফিকাহর কিতাব)
মুছাম্মত ফারজানা আক্তার (লুকি), হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।
সুওয়ালঃ স্ত্রী লোকদের জন্য ঈদের নামায পড়তে হবে কিনা?
জাওয়াবঃ না, স্ত্রী লোকদের জন্য জুমুয়ার নামায ও ঈদের নামায রহিত বা মানসূখ হয়ে গেছে। কাজেই, তাদেরকে উক্ত নামায পড়তে হবেনা। (উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, দূররুল মুখতার, শামী, তাতারখানিয়া, খুলাছাতুল ফতওয়া, ফতহুল ক্বাদীর, আলমগীরী ইত্যাদি}
(বিঃ দ্রঃ বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ১১তম সংখ্যা পাঠ করুন।)