জাহান্নামের আগুনের তীব্রতা এতই বেশী যে বলা হয়েছে কোন জাহান্নামীকে যদি দুনিয়ার সর্বোচ্চ আগুনেও পোড়ানো হয়, তবে সে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়বে। আর কিছু লোক থাকবে যারা সে আযাব ভোগ করার পরও তাদের গুণাহর কাফফারা আদায়ের পর জান্নাতে যাবার অনুমতি পাবে। ভয়াবহ জাহান্নাম থেকে মুক্তির পর এ যে কি ভীষণ পাওয়া তা ভাষায় বর্ণিনাতীত। কিন্তু তারপরেও কথা থেকে যাবে। জাহান্নাম থেকে খালাস প্রাপ্ত হিসেবে তার কপালে একটা চিহ্ন থাকবে। সব জান্নাতীর সাথে সে সহজেই চিহ্নিত হয়ে যাবে। এ চিহ্ন লজ্জার, অপমানের। সুতরাং জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরও এ চিহ্ন তাকে পীড়া দিবে। অবশেষে আরো দোয়া মিনতির পর আল্লাহ্ পাক এক সময় তার সে চিহ্নও মুছে দিবেন।
পাঠক এটাই যখন তবিয়ত তখন জাতি হিসেবে, দেশ হিসেবে মুসলমান হিসেবে আমরা কি করছি?
মুসলমানদের আল্লাহ্ পাক খলীফা হিসেবে তৈরী করেছেন। সমস্ত পৃথিবী শাসন করার, শৌর্য-বীর্য প্রকাশ করার একমাত্র অধিকার মুসলমানের। কিন্তু কুরআন সুন্নাহর খিলাফ চলার কারণে মুসলমান সে গৌরব হারিয়ে ফেলেছে। সারা বিশ্বে বিভিন্ন মুসলিম দেশে বিধর্মী বৃটিশরা উপনিবেশ করেছে তথা শত শত বছর শাসন করেছে। এবং এক্ষেত্রে বৃটিশরা মুসলমানদের ব্যঙ্গ করে বলত- বৃটিশ সাম্রাজ্যে কখনও সূর্য অস্ত যায়না।”
অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে দু’শ বছরের সে গোলামীর জিঞ্জির থেকে এ দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। কিন্তু বৃটিশ উপনিবেশনকালীন যে ইতিহাস সে ইতিহাস যে লজ্জার, সে ইতিহাস যে অপমানের, সে ইতিহাস যে শোষণের, সে ইতিহাস যে বঞ্চনার, সে ইতিহাস যে নিগৃহীত হওয়ার, সে ইতিহাস যে নির্যাতনের তা আমরা ভুলে যাই কি করে? মূলতঃ আমাদের এই বোধহীনতা, আমাদের এ অবিমৃষ্যকারীতা বেনিয়া বৃটিশদের আবার সুযোগ সন্ধানী করে তুলেছে।
মাত্র কিছুদিন পূর্বে ওরাই যে আমাদের মনিব ছিল বা এখনও আমরা যে ওদের ভদ্রবেশী গোলাম সে নিদর্শনই জ্বলজ্বল করে অক্ষুন্ন রাখতে চাইছে।
কুশলী ভাষায় তারা এর নাম দিয়েছে কমনওয়েলথ। কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশসমূহ সম্পর্কে বলা হয় যে, বর্তমানে যদিও তারা স্বাধীন কিন্তু তারা কিছু দিন পূর্বে ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল। ডমিনিয়নের মর্যাদা পাওয়ার পর তারা ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্য’-এর অধীন শিরোনামায় আপত্তি জানায়। তখন ‘সাম্রাজ্য’-এর পরিবর্তে ‘কমনওয়েলথ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ১৯২৬ ঈসায়ী ইম্পিরিয়াল কনফারেন্স-এ কমনওয়েলথ-এর প্রকৃতি সম্পর্কে বলা হয় যে, এটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন স্ব-শাসিত জনসমষ্টির একটি গোষ্ঠী, যারা মর্যাদাসম্পন্ন এবং আভ্যন্তরীন আর বৈদেশিক বিষয়ে যদিও তারা স্বাধীন তবে ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রতি সাধারণ আনুগত্যের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ এবং স্বাধীনভাবে সংঘবদ্ধ।
প্রসঙ্গে LEXICON ENCYCLOPEDIA 5:141 commonwealth of Nations, usually called simply the commonwealth, is an association of Great Britain and independent countries that were formerly part of the BRITISH EMPIRE, together with their dependencies.
WRIT ENCYCLOPEDIA AMERICANA 7:401, an association of independent countries and their dependencies, linked by a common acknowledgment of the british monarch as Head of the Commonwealth.
উদ্ধৃত রেফারেন্সদ্বয় থেকে বলা যায়, স্বাধীন দেশসমূহ এবং তাদের উপনিবেশ/শাসিত বা নিয়ন্ত্রিত দেশসমূহের সমন্বয়ে গড়ে উঠা একট মৈত্রীজোট হলো কমনওয়েলথ। কমনওয়েলথের প্রধান হিসেবে ব্রিটিশ অধিরাজকে সার্বজনীন স্বীকৃতি দানের ভিত্তিতে এই মৈত্রীজোট গঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালে ‘ব্রিটিশ কমনওয়েলথ অব নেশন্স’ পরিবর্তিত হয়ে ‘কমনওয়েলথ অব নেশন্স’ নাম ধারণ করে। ১৬০০ সাল থেকে শুরু করে ১৯০০ সালের গোড়ার দিক পর্যন্ত ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্য’ আখ্যাটি সাধারণভাবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এর পরিবর্তে ক্রমান্বয়ে ‘ব্রিটিশ কমনওয়েলথ অব নেশন্স’ ব্যবহৃত হতে থাকে।
অতএব, প্রতীয়মান হয় যে, কমনওয়েলথ কনসেপ্ট মূলতঃ ঐতিহ্যগত ভাবে বৃটিশ রাজশক্তির প্রতি বিশেষতঃ বর্তমানে বৃটিশ রানীর প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান ও আনুগত্যতা প্রদর্শনের এক প্রক্রিয়া। অর্থাৎ সাম্রাজ্য হারালেও কমনওয়েলথের স্রষ্টা ও নেতা দেশ হিসেবে বিশ্ব রাজনীতিতে বৃটেন একটি প্রাধান্যমূলক অবস্থান বজায় রাখতে চাইছে।
অথচ এখানে উল্লেখ্য, সারা মুসলিম বিশ্ব থেকে খিলাফত উচ্ছেদ করার পর তুরস্কে যখন নামমাত্র খিলাফতের ঐতিহ্য অবশিষ্ট ছিল তখন সেই শেষ ঐতিহ্যটুকু ধরে রাখার জন্য সারা মুসলিম বিশ্ব থেকে করুন আকুতি জানানোর পরও ইহুদীরা অত্যন্ত নির্মম ও নির্দয়ভাবে কামাল পাশাকে দিয়ে খিলাফতের সে দুর্বল এবং শেষ চিহ্নটুকুও নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল।
কিন্তু সেই বঞ্চিত মুসলমান নিজেদের ঐতিহ্য হারিয়ে এতটুকু গ্লানি বোধ না করে, এতটুকু সচকিত না হয়ে চরম নির্বোধের মত আত্মবিস্মৃত হয়ে বৃটিশ রাজশক্তির প্রতি আনুগত্যতা প্রদর্শন করছে। নিজেদের গোলামীর কথা, নিজেদের নিগৃহীত হওয়ার কথা সুবেশী পোশাকে স্বীকার করছে।
হায় আফসোস! এদেশবাসীর জন্য, মুসলমানদের জন্য। জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও শুধুমাত্র কপালের বিন্দু চিহ্নই যেখানে জান্নাতের স্বাদ আস্বাদনে বাধা দেয় সেখানে মুসলমান কি করে কমনওয়েলথের সদস্যভুক্ত হয়ে এখনও বৃটিশের গোলামীর স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশ সরকার কি করে তার জন্য সক্রিয় হয়?
মুলতঃ বাংলাদেশ সহ কমনওয়েলথভুক্ত সব মুসলমান দেশ সমূহের উচিৎ হবে কমনওয়েলথ সদস্য পদ প্রত্যাহার করা তথা বৃটিশ রাজশক্তির প্রতি আনুগত্যতা, প্রত্যাখ্যান করা এবং নিজেদের গোলামীর চিহ্ন অবলুপ্ত করা।
-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান, ঢাকা।
ইরাকের মীরজাফর সাদ্দাম রাশিয়ার বেলারুশ যেতে চায় কেন?
প্রসঙ্গঃ ছবি, অশ্লীল ছবি ইনকিলাব ও হাটহাজারীর আহমক শাফী উপাখ্যান