মুহম্মদ রমজান আলী রেযা, ডি সি অফিস, বান্দরবান
সুওয়াল: আমাদের এলাকার এক মসজিদের ইমামের বক্তব্য হচ্ছে পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস তা নাকি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত নয়। উক্ত ইমাম তার বক্তব্যের সমর্থনে বিভিন্ন সীরাত গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকে। এ ব্যাপারে সঠিক সমাধান প্রত্যাশা করছি।
জাওয়াব: সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ সম্পর্কে উক্ত ইমামের বক্তব্য চরম অজ্ঞতা ও মূর্খতাসূচক, সেই সাথে ডাহা মিথ্যা, মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার)। আর যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত তা সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণিত। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বর্ণনার ন্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনাও পবিত্র ওহী মুবারকের অন্তর্ভুক্ত। উক্ত বর্ণনাসমূহের প্রতি সন্দেহ করা, ইহানত বা অবজ্ঞা করা, অস্বীকার করা সবই কুফরী।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَفَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَلِيْمِ بْنِ حَيَّانَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ سَعِيْدِ بْنِ مِيْنَا رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ حَضْرَتْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْأَنْصَارِيّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَحَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ الثَّانِـيْ عَشَرَ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعٍ الْاَوَّلِ.
অর্থ : “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত সালিম বিন হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন হস্তি বাহিনী বর্ষের মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ।” সুবহানাল্লাহ! (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আছ ছিহ্হাহ্ ওয়াল মাশাহীর ১ম খণ্ড ২৬৭ পৃষ্ঠা)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনার সনদের মধ্যে প্রথম বর্ণনাকারী হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণ উনারা বলেছেন, “তিনি একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ইমাম, প্রবল স্মরণশক্তি ও দৃঢ়প্রত্যয় সম্পন্ন ব্যক্তি।” (খুলাছাতুত তাহযীব শরীফ)
“দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ণনাকারী যথাক্রমে হযরত সালিম বিন হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।” (খুলাছাহ শরীফ, তাক্বরীব শরীফ)
সনদের উপরের দুজন তো ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের তো কোন তুলনাই নেই। অপর তিন জন রাবী হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সালিম ইবনে হাইয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের সম্পর্কে রেজালের কিতাবে বলা হয়েছে উনারা উচ্চ পর্যায়ের নির্ভযোগ্য ইমাম, ছিক্বাহ, তীক্ষè স্মরণশক্তিসম্পন্ন, বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য, দৃঢ় প্রত্যয়সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব।’’ (খুলাছাতুত তাহযীব ২৬৮ পৃষ্ঠা, ত্বাকরীবুত তাহযীব ২য় খন্ড ১২৬ পৃষ্ঠা, সমূহ রেজালের কিতাব)
আর হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা দু’জন উচ্চ পর্যায়ের ফক্বীহ ছাহাবী। উনাদের বিশুদ্ধ সনদ সহকারে বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, “মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস।”
এ ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার উপর কোন কোন হযরত ইমাম উনাদের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (সীরাত-ই-হালবিয়াহ শরীফ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব শরীফ, মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ শরীফ ইত্যাদি)
শুধু তাই নয়, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্য সনদেও এ বিষয়ে আরো উল্লেখ আছে। ইমাম হযরত হাকিম নিশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ প্রসঙ্গে উনার কিতাবে উল্লেখ করেন-
عَنْ حَضْرَتْ مُـحَمَّدِ بْنِ اِسْحَاقَ رَحـْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاِثْنَتَـيْ عَشَرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ
অর্থ : “হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার বারো রাত অতিবাহিত হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” (মুস্তাদরাক লিল হাকিম শরীফ ৪র্থ খণ্ড, ১৫৬৮ পৃষ্ঠা, হাদীছ শরীফ নং ৪১৮২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
قَالَ مُـحَمَّدُ بْنُ اِسْحَاقَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَتَـيْ عَشَرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعٍ الْاَوَّلِ
অর্থ : “হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ, হস্তীর বছর, রাত্রির শেষভাগে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” (দালায়িলুন নুবুওওয়াত লি ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি : হাদীছ শরীফ নং ২৩; কিতাবুল ওয়াফা লি আহওয়ালিল মুস্তফা লি আল্লামা ইবনে জাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি, পৃষ্ঠা ৮৭; প্রকাশনা : দারূল কুতুব ইসলামিয়া, বৈরূত, লেবানন)
উপরোক্ত বিশুদ্ধ বর্ণনা মুতাবিক পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফই হচ্ছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস। এটাই সর্বাধিক ছহীহ ও মশহূর মত। এর বিপরীতে যেসব মত ঐতিহাসিকদের থেকে বর্ণিত হয়েছে তা অনুমানভিত্তিক ও দূর্বল। অতএব তা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
এ প্রসঙ্গে হাফিজুল হাদীছ ইমাম হযরত কুস্তালানি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
هُوَ الْـمَشْهُوْرُ اَنَّهٗ وُلِدَ ثَانِـيْ عَشَرَ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ وَهُوَ قَوْلُ اِبْنِ اِسْحَاقَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَغَيْرِهٖ
অর্থ : “প্রসিদ্ধ মত অনুসারে নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। এটাই হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যদের মত।” (শরহুল মাওয়াহিব ১ম খণ্ড ২৪৮ পৃষ্ঠা)
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-
وَعَلَيْهِ عَمَلُ اَهْلِ مَكَّةَ فِـيْ زِيَارَتِـهِمْ مَوْضِعَ مَوْلِدِهٖ فِـيْ هٰذَا الْوَقْتِ
অর্থ : “মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখে সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদের মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের স্থান মুবারক যিয়ারত করার আমল বর্তমান অবধি জারী রয়েছে।’’ (শরহুল মাওয়াহিব ১ম খণ্ড ২৪৮ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইমাম হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ لِاِثْنَتَـيْ عَشَرَةَ لَيْلَةٍ خَلَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ عَامَ الْفِيْلِ
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতের শেষ ভাগে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন।” (সীরাতে ইবনে হিশাম ১ম খণ্ড ১৫৮ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَتَـيْ عَشَرَةَ لَيْلَةٍ خَلَتْ مِنْ رَّبِيْعِ الْاَوَّلِ لِاَرْبَعِيْنَ سَنَةً مِّنْ مُلْكِ كِسْرٰي نَوْشِيْرَوَان
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। তখন ছিলো শাসক নাওশেরাওয়ার শাসনকালের ৪০তম বছর।” (তারীখে ইবনে খালদুন ২য় খণ্ড ৩৯৪ পৃষ্ঠা)
ইমাম হযরত জারির তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
وُلِدَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ عَامَ الْفِيْلِ لِاِثْنَتَـيْ عَشَرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, আমুল ফিল বা হস্তী বাহিনীর বছর রাতের শেষ ভাগে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন।’’ (তারীখে ওমুম ওয়াল মূলক ২য় খণ্ড ১২৫ পৃষ্ঠা)
ইমাম হযরত ইবনে কাছীর ও ইমাম হযরত যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা বলেন-
وَهُوَ الْـمَشْهُوْرُ عِنْدَ الْـجُمْهُوْرِ .. هُوَ الَّذِيْ عَلَيْهِ الْعَمَلُ
অর্থ : “মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের) তারিখ হিসাবে জমহুর উলামায়ে কিরামের নিকট প্রসিদ্ধ। উক্ত মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক গ্রহণ দিবস হিসেবে সবাই পালন করে আসছেন।” (শরহুল মাওয়াহিব ২য় খণ্ড ২৪৮ পৃষ্ঠা)
হাফিজুল হাদীছ হযরত আবুল ফাত্তাহ আন্দালুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وُلِدَ سَيِّدُنَا وَنَبِيُّنَا مُـحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْاِثْنَيْنِ لِاِثْنَتَـيْ عَشَرَةَ لَيْلَةٍ مَضَتْ مِنْ شَهْرِ رَبِيْعِ الْاَوَّلِ عَامَ الْفِيْلِ قِيْلَ بَعْدَ الْفِيْلِ بِـخَمْسِيْنَ يَوْمًا
অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, রাতের শেষ ভাগে হস্তী বাহিনীর বছর দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন। বলা হয়, হস্তী বাহিনীর ঘটনার ৫০ দিন পরে তিনি দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেন।” (আইনুল আছার ১ম খণ্ড ৩৩ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, উপমহাদেশের যুগশ্রেষ্ঠ আলিম, শায়েখ হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ হিসাবে মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তারিখই মশহূর। সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী উনাদের আমল হলো উক্ত মুবারক তারিখে উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মুবারক স্থান যিয়ারত করতেন।’’ (মা-ছাবাতা বিস সুন্নাহ ৮১ পৃষ্ঠা)
উক্ত কিতাবে আরো বর্ণিত আছে, “সমস্ত মুসলমান এ বিষয়ের উপর ইজমা করেছেন বা একমত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন।” (মা-ছাবাতা বিস সুন্নাহ ৮২ পৃষ্ঠা)
দেওবন্দী ওহাবীদের মুরুব্বীদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে- “সারকথা যে বছর আছহাবে ফীল পবিত্র কা’বা শরীফ আক্রমন করে, সেই বছর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে মহাসম্মানিত ১২ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) ছিলো পৃথিবীর জীবনে এক অনন্য বিশেষ দিবস। যেদিন নিখিল ভূবন সৃষ্টির মূল লক্ষ্য, দিবস রজনী পরিবর্তনের মূখ্য উদ্দেশ্য, হযরত ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম ও বনী আদমের গৌরব, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিস্তির নিরাপত্তার নিগূঢ় তাৎপর্য, হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দুআ ও হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ভবিষ্যদ্বাণীসমূহের উদ্দিষ্ট ব্যক্তিত্ব অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক নেন।” (সীরাতে খতিমুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা ৪, প্রকাশনা : এমদাদিয়া লাইব্রেরি)
উক্ত কিতাবে একটি টীকা সংযোজন করা হয়েছে, “সর্বসম্মত মতানুসারে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ হয়েছিল পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ মাস উনার ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ। কিন্তু তারিখ নির্ধারণের জন্য ৪টি রেওয়ায়েত উল্লেখ রয়েছে। যথা- দ্বিতীয়, অষ্টম, দশম, দ্বাদশ। হাফিজ মোগলতাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (৬৮৯-৭৬২ হিজরী) ২য় তারিখের রেওয়ায়েত গ্রহণ করে অন্যান্য রেওয়ায়েতকে দূর্বল বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু প্রসিদ্ধ রেওয়ায়েত হচ্ছে দ্বাদশ তারিখের রেওয়ায়েত। এমনকি হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এমতের উপর ইজমার দাবী বর্ণনা করেছেন। এমতকে কামেলে ইবনে আছীরে গ্রহণ করা হয়েছে।”
অথচ উনবিংশ শতাব্দীতে মাহমুদ পাশা আল ফালাকি (১৮১৫-১৮৮৫ ঈসায়ী) নামক একজন মিশরীয় জ্যোতির্বিদ দাবী করেছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস হচ্ছে পবিত্র ৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ। নাঊযুবিল্লাহ! আর তার দাবীকৃত এই বিভ্রান্তিমূলক তারিখটিই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দুশমনরা ব্যবহার করে থাকে। তাদের কাছে ছহীহ হাদীছ শরীফ অপেক্ষা একজন নাস্তিকের দাবী বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নাঊযুবিল্লাহ!
তাছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সুস্পষ্ট বর্ণনার বিপরীতে ঐতিহাসিকদের বর্ণনা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ হচ্ছেন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দলীল। কিন্তু ঐতিহাসিকদের বর্ণনা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দলীল নয়। তাই ঐতিহাসিকদের যে বর্ণনা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনার খিলাফ বা বিরোধী হবে তা সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের মুবারক তারিখ নির্ণয় করতে গিয়ে ঈসায়ী তারিখকে হিজরী তারিখে রূপান্তর করে পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার ৯ তারিখ প্রমাণের ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন প্রতি বছরে ১০/১১ দিনের পার্থক্য রয়েছে, যার ফলে প্রতি ৩৩ বছরে ১ বছরের পার্থক্য তৈরী হয়েছে। অন্যদিকে তৎকালীন আরবে যে নাসী (মাস আগে-পিছে) করা হতো তা ধর্তব্যেই আনা হয়নি। আরবের কাফির-মুশরিকরা তাদের নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কখনো কখনো ১৭ মাসে বছর গণনা করতো আবার কখনো ১০ মাসেও বছর গণনা করতো। কোন সময়ে এই অতিরিক্ত মাসগুলো সংযোজন করতো বা মাসগুলো বিয়োজন করতো। এমনকি যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য পবিত্র ছফর শরীফ মাসকে পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাসের আগে গণনা করতো। এমন পরিস্থিতিতে ক্যালকুলেশন বা গণনা পদ্ধতি অবলম্বন করে হিসাব মিলানো কখনোই সম্ভব নয়। আর তাই নাস্তিক মাহমুদের হিসাব অনুযায়ী আমুল ফীল বা হস্তির বছর ৫৭১ ঈসায়ী হচ্ছে। অথচ বছরটি হচ্ছে ৫৭০ ঈসায়ী। অর্থাৎ ১ বছরের তারতম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে।
তাহলে যেখানে ঈসায়ী সন হিসেবে ১ বছরের তারতম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে সেখানে এটা কি করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে যে, আমুল ফীল বা হস্তির বছর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার ১২ তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ছিল না। নাঊযুবিল্লাহ!
তাই এই বিষয়ে একমাত্র সমাধান হচ্ছে পবিত্র হাদীছ শরীফ ও হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইজমা’। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সম্মানিত তারিখ হচ্ছেন পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, সেদিনটি ছিল- ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার)।
অতএব, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস হচ্ছেন মহাসম্মানিত ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ। কিন্তু এর বিপরীতে নাস্তিক মাহমুদ পাশার বর্ণনাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা পবিত্র হাদীছ শরীফ অবজ্ঞা ও অমান্য করার কারণে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য যামানার তাজদীদ মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৬৪তম (বিশেষ) সংখ্যা এবং সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ সংশ্লিষ্ট সুওয়াল-জওয়াব ১ম খণ্ড কিতাব পাঠ করুন।
মুহম্মদ তাজুল ইসলাম, জুরি, মৌলভীবাজার
সুওয়াল: “ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” এই সম্মানিত দুরুদ শরীফ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত অন্য কারো শানে তথা উনার সম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকে ব্যবহার করা যাবে কিনা? জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: হ্যাঁ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে ব্যবহৃত দুরূদ শরীফ তথা ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকেও ব্যবহার করা যাবে বা জায়িয রয়েছে।
স্মরণীয় যে, সুওয়ালে উল্লেখিত দুরূদ শরীফখানা উনার অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি তথা উনার সুমহান শানে ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করেন।
এখন উক্ত দুরূদ শরীফ বা দুআ মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য করা হলেও তা জায়িয হবে। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা আলাদা নন। মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই অন্তর্ভুক্ত। যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমে যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। আবার উনার সাথে যাঁদের নিসবতে আযীমাহ (নিকাহ) মুবারক সংঘটিত হয়েছে উনারাও মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ হিসেবে গণ্য। আর উনার মাধ্যমে যে সকল সম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং উনাদের বংশদ্ভূত যে সকল আওলাদ আলাইহিমুস সালাম হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদের নিছবত নিয়ে যমীনে তাশরীফ আনবেন উনারাও মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মনে রাখতে হবে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়সমূহ উনার মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিষয়সমূহের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সুবহানাল্লাহ!
তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারকে ব্যবহৃত দুরূদ শরীফ উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুমহান শান মুবারকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র সংশয় সন্দেহের অবকাশ নেই। উপরন্তু আদেশ মুবারক রয়েছে। যার প্রকৃষ্ট দলীল পবিত্র নামায উনার মধ্যে পঠিত দুরূদে ইবরাহীম শরীফ।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى سَيِّدِنَا اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ سَيِّدِنَا اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَـمِيْدٌ مَّـجِيْدٌ.
উল্লেখিত দুরূদ শরীফ উনার মধ্যে-
اٰلِ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ )صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ(
বাক্য মুবারক দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বুঝানো হয়েছে।
অনুরূপভাবে পবিত্র নামায উনার মধ্যে পঠিত তাশাহ্হুদ শরীফ উনার মধ্যে সালাম মুবারক উনার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلسَّلَامُ عَلَينَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِـحِيْنَ
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার পেশকৃত সালাম মুবারক মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম ও হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি এবং ছলিহীন বা নেককার বান্দাগণ উনাদেরও প্রতি।
মূল বিষয় হচ্ছে, পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ উনার ৫৬ নং পবিত্র আয়াত শরীফ:
إِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهٗ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বা উনার সুমহান শান মুবারকে ছলাত শরীফ পেশ করেন। হে ঈমানদারগণ! উনার সুমহান শান মুবারকে আপনারাও ছলাত শরীফ পেশ করুন এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সালাম মুবারক পেশ করুন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, হযরত কা’ব ইবনে উজরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দরবারে আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি আমরা কিভাবে সালাম মুবারক পেশ করবো তা মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। বলুন, আপনার প্রতি ও আপনার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি আমরা কিভাবে ছলাত শরীফ পেশ করবো? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা বলুন-
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি ছলাত শরীফ পেশ করুন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এবং উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সালাম শরীফ অপেক্ষা ছলাত শরীফ উনার অর্থ ব্যাপক।
অতএব, মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সুমহান শান মুবারকে ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করার বিষয়টি যেখানে পবিত্র নামায উনার মধ্যে ধার্যকৃত ও বিধানসম্মত হয়েছে সেখানে অন্য সময়ে উনাদের সুমহান শান মুবারকে ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করার বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করাটা চরম জিহালতী ও বাতুলতা ছাড়া কিছু নয়।
কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুমহান শান মুবারকে ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ একসাথেও পেশ করা যাবে। আবার আলাদাভাবেও পেশ করা যাবে। যেমন একসাথে পেশ করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ ও তাফসীর শরীফ উনাদের কিতাবসমূহে এভাবে উল্লেখ রয়েছে-
) ۱ (اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا مُـحَمَّدِنِ النَّبِـىِّ الْاُمِّىِّ وَاَهْلِ بَيْتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
(۲) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا مُـحَمَّدٍ وَّسِيْلَتِـىْ اِلَيْكَ وَاٰلِهٖ وَسَلِّمِ
(۳) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا مُـحَمَّدِ مَّعْدَنِ الْـجُوْدِ وَالْكَرَمِ وَاٰلِهٖ وَسَلِّمِ
(۴) اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا مُـحَمَّدِنِ النَّبِـىِّ الْاُمِّىِّ وَاٰلِهٖ وَسَلِّمِ
(۵) صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّمَ
আর আলাদাভাবে পেশ করার ক্ষেত্রে এভাবে উল্লেখ রয়েছে-
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অতএব, উক্ত নিয়মে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারকে ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করা ওয়াজিব বা অপরিহার্য কর্তব্য।
আর হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুমহান শান মুবারকে ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করার বিষয়টি যদিও আলাদাভাবে ওয়াজিব বা অপরিহার্য কর্তব্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি, তবে জায়িয হওয়ার ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই।
সুতরাং, মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুমহান শানে ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করার বিষয়ে যারা আপত্তি করে থাকে তারা আসলে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ। কেননা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করার বিষয়টি সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও উল্লেখ রয়েছে। যদিও তাদের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য ভিন্ন রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ ৪৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
هُوَ الَّذِيْ يُصَلِّي عَلَيْكُمْ وَمَلَائِكَتُهٗ لِيُخْرِجَكُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّوْرِ ۚ وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَحِيْمًا
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের প্রতি রহমত করেন এবং উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও মাগফিরাতের দোয়া করেন, তোমাদেরকে গোমরাহী থেকে বের করে হিদায়েতের দিকে আনয়নের জন্য। মহান আল্লাহ পাক তিনি মু’মিনদের জন্য অতিশয় দয়ালু। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)
আর সালাম শরীফ পেশ করার বিষয়ে পবিত্র সূরা আনআম শরীফ ৫৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَإِذَا جَاءَكَ الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِاٰيَاتِنَا فَقُلْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ ۖ
অর্থ: আর যখন ঐ সমস্ত লোক আপনার নিকট আসে যারা আমার আয়াত সমূহের প্রতি ঈমান রাখে, তখন বলে দিন যে, তোমাদের উপর সালাম বা শান্তি বর্ষিক হোক। (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৪)
অতএব, কারো ক্ষেত্রেই ছলাত শরীফ ও সালাম শরীফ পেশ করার বিষয়ে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে কোনরূপ নিষেধ নেই। বরং আদেশ মুবারক রয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَصَلِّ عَلَيْهِمْ ۖ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّـهُمْ
অর্থ: “(আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি তাদের জন্য অর্থাৎ উম্মতের জন্য ছলাত শরীফ পেশ করুন অর্থাৎ দুআ মুবারক করুন। নিশ্চয়ই আপনার দুআ মুবারক তাদের জন্যে প্রশান্তির কারণ হবে। (পবিত্র সুরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ اَبِـي اَوْفٰـى رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا اَتَاهُ قَوْمٌ بِصَدَقَتِهِمْ قَالَ اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى اٰلِ فُلَانٍ. فَاَتَاهُ اَبِـىْ بِصَدَقَتِهٖ فَقَالَ اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى اٰلِ اَبِـىْ اَوْفٰـى رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ. وَفِىْ رِوَايَةٍ اِذَا اَتَى الرَّجُلُ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِصَدَقَتِهٖ قَالَ اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ আওফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, কোন সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট তাদের সম্মানিত যাকাত নিয়ে আসতেন, তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করতেন তথা দুআ মুবারক করতেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি অমুক পরিবারের প্রতি ছলাত অর্থাৎ রহমত, বরকত, সাকীনা বর্ষণ করুন। হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদা আমার পিতা তিনি উনার সম্মানিত যাকাত নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আসলেন তখন তিনি দুআ মুবারক করেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি ছলাত অর্থাৎ রহমত, বরকত, সাকীনা বর্ষণ করুন হযরত আবূ আওফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পরিবারের প্রতি। অপর বর্ণনায় রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কোন ব্যক্তি যাকাত নিয়ে আসলে তিনি ইরশাদ মুবারক করতেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি উনার প্রতি ছলাত অর্থাৎ রহমত, বরকত, সাকীনা বর্ষণ করুন।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ১৪৯৭; মুসলিম শরীফ : কিতাবুয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ১০৭৮; নাসায়ী শরীফ : কিতাবুয যাকাত : হাদীছ শরীফ নং ২৪৫৯)
অতএব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে ব্যবহৃত দুরূদ শরীফ উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদের শান মুবারকে ব্যবহার করা অবশ্যই জায়িয রয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, পবিত্র রাজারবাগ শরীফ থেকে প্রকাশিত যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ১২তম সংখ্যার ৩৪ নং সুওয়ালের জাওয়াব এবং ২৩৯তম সংখ্যার ২৬ পৃষ্ঠার সুওয়ালের আংশিক জাওয়াব তুলে ধরে বিভ্রান্তি ছড়ানোর মানসে বলা হয়, পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার মহাসম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি নাকি মনে করেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত অন্য কারো ক্ষেত্রে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা নাজায়িয ও বেয়াদবী।” নাঊযুবিল্লাহ! অথচ উক্ত সংখ্যাদ্বয়ে উল্লেখিত সুওয়ালের জাওয়াবে মোটেও তা বলা হয়নি বরং অন্যদের ক্ষেত্রেও ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলা জায়িয, সেটাই বলা হয়েছে। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উল্লেখ করার পর ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ অবশ্যই খাছভাবে বলতে হবে বা লিখতে হবে এবং এটিই আদব, সেটাই বুঝানো হয়েছে বা বলা হয়েছে।
এটা দিবালকের ন্যায় স্পষ্ট যে, পবিত্র রাজারবাগ শরীফ থেকে প্রকাশিত যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ তথা সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ কোনো লিখনী বা বক্তব্য কখনোই প্রকাশিত হয় না। আর পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কোথাও নেই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক ব্যতীত অন্য কারো ক্ষেত্রে “ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” ব্যবহার করা নাজায়িয। বরং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে এটাই উল্লেখ রয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত অন্যদের ক্ষেত্রেও “ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” ব্যবহার করা যাবে। মূলতঃ সেটাই মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ১২তম এবং ২৩৯তম সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে।
যেমন, ২৩৯তম সংখ্যার ৩১তম পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অন্যদের জন্য ব্যবহার জায়িয থাকলেও….’, এর অর্থ অন্যদের ক্ষেত্রে “ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” বলা বা ব্যবহার করা জায়িয রয়েছে।
অনুরূপভাবে ১২তম সংখ্যার ৪৯তম পৃষ্ঠার ৩৪নং সুওয়ালের জাওয়াবে উল্লেখ রয়েছে- “তবে জায়গা বিশেষে ব্যতিক্রম জায়িয হলেও ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকের জন্যই খাছ।”
এখানেও স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে ‘ব্যতিক্রম জায়িয হলেও…।’ এর অর্থ অন্যদের ক্ষেত্রে বলা জায়িয রয়েছে। নাজায়িয বলা হয়নি।
আর “ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” বাক্য মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যই খাছ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- যখনই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করা হবে তখনই অবশ্য অবশ্যই ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ খাছ বা বিশেষভাবে বলতে হবে বা লিখতে হবে। তথা পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ উভয়ই একইসাথে মিলিয়ে বলতে হবে এবং লিখতে হবে। শুধু পবিত্র ছলাত শরীফ উল্লেখ করে পবিত্র সালাম শরীফ বাদ দেয়া অথবা শুধু পবিত্র সালাম শরীফ উল্লেখ করে পবিত্র ছলাত শরীফ বাদ দেয়া পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উছূলের খিলাফ। তবে অন্যদের নাম মুবারক বলতে বা লিখতে পবিত্র ছলাত শরীফ এবং পবিত্র সালাম শরীফ উভয়টি উল্লেখ করা খাছ নয়। বরং পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ উভয়ই অথবা উভয়ের যে কোনো একটি তথা শুধু পবিত্র ছলাত শরীফ বা পবিত্র সালাম শরীফ বলা ও লেখা যাবে।
আর ২৩৯তম সংখ্যায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক বললে বা লিখলে সেখানে অবশ্যই “ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” খাছভাবে বলতে হবে বা লিখতে হবে। যদি না বলা হয় কিংবা না লিখা হয় তা বেয়াদবী হবে- সেটাই বুঝানো হয়েছে। আর এটাই সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়ছালা।
কিন্তু মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার কোথাও বলা হয়নি যে, অন্যদের ক্ষেত্রে “ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” বলা যাবে না বা অন্যদের ক্ষেত্রে বলা বেয়াদবী হবে। বরং অন্যদের ক্ষেত্রে জায়িয বলা হয়েছে। আর সম্মানিত শরীয়ত মুতাবিক যা জায়িয; তা কখনোই বেয়াদবীর অন্তর্ভুক্ত নয়।
এখন কেউ যদি নূরে মুজাসাসম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতিত অন্য কারো ক্ষেত্রে “ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” বলা নাজায়িয বা বেয়াদবী বলতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের থেকে দলীল-প্রমাণ পেশ করতে হবে। বিনা দলীলে কারো বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ
অর্থ: যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে দলীল পেশ করো। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১)
যদি দলীল পেশ করতে না পারে, তাহলে পবিত্র আয়াত শরীফ অনুযায়ী সে চরম মিথ্যাবাদী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। আর মিথ্যাবাদীদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَّعْنَةَ اللهِ عَلَى الْكَاذِبِيْنَ
অর্থ: মিথ্যাবাদীদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত। (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)
অর্থাৎ সে লা’নাতুল্লাহি আলাইহি হিসেবে সাব্যস্ত হবে। নাউযুবিল্লাহ!
প্রসঙ্গতঃ আরো উল্লেখ্য, রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি নাকি বাইয়াত মুবারক করানোর সময় নিজ নাম মুবারকের সাথে “ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” বাক্য মুবারক ব্যবহার করেছেন বা বলেছেন। প্রমাণ হিসেবে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ২৭৬তম সংখ্যায় প্রকাশিত একটি আর্টিকেলের বক্তব্য পেশ করা হয়।
অথচ উক্ত আর্টিকেলটির লেখক হচ্ছেন উনার একজন মুরীদ। যিনি মুহব্বত ও আদবের জন্য সম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নাম মুবারকের পরে “ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” উল্লেখ করেছেন। মুরীদের বক্তব্যকে রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নামে চালিয়ে দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!
এ বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পবিত্র রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বাইয়াত মুবারকের অডিও শুনলে অথবা সরাসরি দরবার শরীফ এসে তিনি কিভাবে বাইয়াত করান তা দেখলে ও শুনলে চিরতরের জন্য বিভ্রান্তির অবসান ঘটবে ইনশাআল্লাহ!
উম্মু আব্দুল্লাহ মুবাশ্শির, মুহব্বতপুর, দাড়িদহ, শিবগঞ্জ, বগুড়া
সুওয়াল: ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ ((Human Milk Bank)) কি? আর এটা সম্মানিত শরীয়তসম্মত কিনা? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ বলতে বুঝায় কাফেরদের কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মানবীয় দুধ সংরক্ষণের একটি ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে কাফেরেরা মহিলাদের দুগ্ধ সংরক্ষণের মাধ্যমে ব্যবসা করবে। প্রকৃতপক্ষে এটা সম্মানিত মুসলমান ও দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী ও বিরোধী একটি সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। যা কাফেরদের কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি বিষয় আলোচনা প্রয়োজন।
(১) ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ কি?
(২) ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ কারা করেছে?
(৩) ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ কেন করা হয়েছে?
(৪) ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ সম্পর্কে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা কি?
(১) হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক হলো মহিলাদের বা ‘মা’দের দুধ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিতরণের প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন। (২) ইহুদী নাছারাদের কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। (৩) মুসলমানদের ঈমান, আমল, আক্বীদা ও আত্মীয়তার বন্ধন বিনষ্ট করার জন্য। (৪) সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ফায়সালা ও ফতওয়া অনুযায়ী এই হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক এবং তার যাবতীয় কার্যক্রম হারাম, নাজায়িয এবং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
এখন পর্যায়ক্রমে বিষয়গুলো আমরা নিম্নে আলোচনা করবো। ইনশাআল্লাহ।
(১) ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ কি?
‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ এর পরিচিতি সম্পর্কে চিকিৎসাবিদদের বক্তব্য হলো, ÒA human milk bank is a service established for collecting, screening, processing, storing and distributing donated human milk.”
হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক বা মাতৃ দুধের ব্যাংক হল এমন একটি পরিসেবা যা নার্সিং মা গণের দ্বারা দান করা মানব দুধ সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং সংরক্ষণের পর তা সরবরাহকারীর সাথে জৈবিকভাবে সম্পর্কিত নয় এমন নবজাতক শিশুকে সরবরাহ করা হয়।
অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো নেকীর ছূরতে পাপের প্রচলন করা। তাহলো যে মায়েদের সন্তান জন্মের পর মারা গেছে বা নিজের সন্তানকে খাওয়ানোর পরও মায়ের বুকে অতিরিক্ত দুধ আছে, সেই মায়েরা হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকে দুধ সংরক্ষণ করবে বা করে রাখতে পারে। যে নবজাতকের জন্মের পরই মা মারা গেছেন বা যাদের মা অসুস্থতার জন্য দুধ খাওয়াতে পারছেন না, সেই নবজাতকের জন্য এখান থেকে দুধ নিয়ে সন্তান প্রতিপালন করতে পারবে।
এখানে প্রকাশ্য বা বাহ্যিকভাবে কিছু উপকার দেখিয়ে এর নেপথ্যে মুসলমানদের ঈমান ও আমল ও আক্বীদা নষ্ট করার অনেকগুলো সর্বনাশী ষড়যন্ত্র রয়েছে।
(২) ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ কারা করেছে?
১৯০৯ সালে আমেরিকান ঊংপযবৎরপয প্রথম হিউম্যান মিল্ক চালু করে।
ডব্লিউএইচও ও ইউনিসেফের উদ্যোগে ১৯৮০ সালে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কথা বলে।
কারো কারো মতে, মায়ের বুকের দুধ বোতলজাত বা বিক্রয় করার মত জঘন্য এই ঘটনাটির সূত্রপাত হয় চীনে এক বিধর্মী দম্পত্তির মাধ্যমে। সেই দম্পতি সংসার পরিচালনা করার জন্য এই ব্যবসা প্রচলন করেছিলো। পরবর্তীতে অনেক দম্পতি এ পদ্ধতিতে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
এ কথা দিবালোকের চেয়েও সুস্পষ্ট যে, বিধর্মীদের কর্তৃক প্রতিটি বিষয়ই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমান উনাদের বিরোধিতা করার জন্যই প্রবর্তন করা হয়েছে ও হচ্ছে। যার একটি বাস্তব প্রমাণ এই ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’।
(৩) ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ কেন করা হয়েছে?
বর্তমান সময়ে ইউরোপ, আমেরিকা, চীনসহ বিধর্মী অধিকাংশ রাষ্ট্রে এই ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ এর প্রচলন রয়েছে। নবজাতক সন্তানের সঠিক পরিচর্যাকে তারা এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করে। কিন্তু নবজাতকের পরিচর্যাই শুধু এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য নয়। এর নেপথ্যে রয়েছে আরো অনেকগুলো বিষয়। যার কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
প্রথমত: বিধর্মীদের দেশে বিবাহ বহির্ভূত সন্তানের হার অনেক। এসব অবৈধ সন্তানদের পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ এর প্রয়োজনীয়তা সুস্পষ্ট। অর্থাৎ, অবৈধ সন্তানদের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার জন্যই ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: বিধর্মীরা মহিলাদেরকে কর্মক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে চায়। তাই, সন্তান প্রসবকারী মহিলারা সন্তানের প্রতিপালনের জন্য কর্মক্ষেত্র হতে সরে মাতৃ দায়িত্বে যেন পূর্ণরূপে মনোনিবেশ করতে না পারে, সে জন্য এ ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ এর প্রচলন করা হয়েছে।
তৃতীয়ত: বিধর্মীদের দেশে সন্তান জন্মহার ঋণাত্বক। এহেন পরিস্থিতিতে তারা সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে মায়ের যে গুরু দায়িত্ব তা বাহ্যিকভাবে হালকা করে দেখানোর জন্য এ ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ এর ব্যবস্থা করেছে।
মূলকথা হলো, ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার কারণ হিসেবে নবজাতকের পরিচর্যার কথা ফলাও করে বলা হলেও সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার বিরোধী কার্যক্রমের পৃষ্ঠপোষকতা করাই হচ্ছে ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য।
(৪) কাফির-মুশরিকদের অনুসরন করা হারাম
পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে যে, ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ এ রীতির আবিস্কারক কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীনরা। আর তা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যই হচ্ছে নেক ছুরতে মানুষকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম হতে সরিয়ে দেয়া। তাই, এ ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ এর সেবা নেয়া বা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সাহায্য-সহযোগিতা করা সবই হারাম ও নাজায়িজ। কারণ, ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার অর্থ হচ্ছে কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের অনুসরন ও অনুকরন করা। যা সম্মানিত ইসলামী শরীয়তে সুস্পষ্টভাবেই হারাম ও নাজায়িজ। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ
অর্থ: তোমরা কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরন করোনা। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৮)
অন্যত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِيْنَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! মু’মিন ব্যতিত কাফিরদেরকে তোমরা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করোনা। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৪)
অতএব, কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের অনুসরন হতে বিরত থাকা ফরয। তাই, ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ ব্যবস্থাটাই হারাম। তা হতে বেঁচে থাকা ফরয।
(৫) ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ ব্যবস্থার বিকল্প
সম্মানিত দ্বীন ইসলামে মায়ের দুধের প্রথম হকদার তার নিজের সন্তান। অবশ্য মা তার দুধ পান করাতে বাধ্য নয়। যদি মা তার শিশুকে দুধ না দিতে পারে কোনো কারণে, তাহলে অন্য দুধ মা রেখে আহাল তার সন্তানকে দুধ পান করাতে হবে। আমাদের সমাজে এ নীতির উর্ধ্বে থেকে মায়েরা স্নেহকে প্রাধান্য দিয়ে দুধ পান করিয়ে থাকেন। এটি তার নিজেরও তৃপ্তি, সন্তানের প্রতি মায়া এবং পাশাপাশি আহালের প্রতি ভালোবাসাপূর্ণ অনুগ্রহ বা ইহসান।
দুধ মা রাখা বা দুধ মাতার দুধ পান করা খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভূক্ত। সম্মানিত দ্বীন ইসলামে দুধ মাতাকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। কাজেই, ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে দুধ মাতা রাখার প্রচলন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুধ মাতা এবং তার পরিবার যেমন সম্মান পাবেন। একইভাবে দুধমাতা, দুধের বিনিময় নয় বরং সন্তান লালন পালনের কারণে পাবেন সম্মানী ভাতা। যা দ্বারা একদিকে মহিলাদের সম্মানিত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে অপরদিকে মুসলিম সমাজে আত্মীয়তার সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। মানুষ বহু সংখ্যক হারাম হতে বেচে হালাল এবং সুন্নত পালনের সুযোগ লাভ করবে।
সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব-কর্তব্য হলো, ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটানো এবং দুধ মাতাদের সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে তাদের সংগঠিত এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ করা।
(৬) ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ সম্পর্কে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালা ও ফতওয়া
মহাসম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ফায়সালা অনুযায়ী ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ স্থাপন করা, তাতে দুধ দান করা, সেখান থেকে দুধ পান করানো সবই কাট্টা হারাম, নাজায়িয এবং ক্ষেত্র বিশেষ কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।
যা অনেক আগেই ওআইসি এর ইসলামী বিধান বিষয়ক বোর্ড ‘মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী’ (International Islamic jurist of OIC) সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে।
মহাসম্মানিত ইসলামী শরীয়তে ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ হারাম হওয়ার অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য কারণ রয়েছে। যা সংক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি আলোচনা করা হলো।
মানব দেহের কোন কিছু ক্রয়, বিক্রয় এবং দান করা সবই হারাম ও নাজায়িজ
‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ এর দ্বারা মায়ের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে তার সন্তানের জন্য রিজিকের যে বিশেষ ব্যবস্থা, তা ক্রয়, বিক্রয় এবং দানের ব্যবস্থা করা হয়। অথচ মহাসম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার ফায়সালা অনুযায়ী মানব দেহের কোন কিছু ক্রয়, বিক্রয় এবং দান করা সবই হারাম ও নাজায়িজ। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّ اللهَ اشْتَرٰى مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَـهُم بِأَنَّ لَـهُمُ الْـجَنَّةَ
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি মু’মিনদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে খরীদ করেছেন”।(পবিত্র সূরা তওবা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১)
আর মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিদায় হজ্জের দিন ইরশাদ মুবারক করেছেন, “একজনের জান-মাল, রক্ত আরেকজনের জন্য হারাম”। অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের জান-মাল এবং সমস্ত কিছুর মালিক আল্লাহ পাক।
ফিক্বহর বিশ্বখ্যাত কিতাব ফতওয়ায়ে আলমগীরী, কাজীখান, বায্যাযীয়া, খোলাছাতুল ফতওয়া, নেহায়া, এনায়া, বাহ্রুর রায়িক, দুররুল মুখতার ইত্যাদি কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ীও কোন মানুষের পক্ষেই তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, রক্ত, দুধ বেচা-কেনা কখনই জায়েয নয় বরং এটা শক্ত হারাম এবং এর মাধ্যমে যে পয়সা উপার্জিত হবে, সেটা ভোগ করাও হারাম।
মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِـىْ اٰدَمَ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি বণি আদমকে সন্মানিত করেছি”। (পবিত্র সূরা ইসরা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭০)
তাই, মানুষ আশরাফুল মখলূকাত। মানুষের আশরাফিয়াতের কারণে তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করা নাজায়িয ও হারাম। যার কারণে মানুষ মারা গেলে তাকে সুন্দরভাবে গোসল, কাফন ও দাফন করার কথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াসে উল্লেখ করা হয়েছে।
শুধু এতটুকুই নয়, মানুষ তার নখ, চুল ইত্যাদি কেটে ফেলার পরে সেটাও সুষ্ঠুভাবে মাটিতে পুঁতে ফেলার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর এটা বলা হয়েছে, একমাত্র তার আশরাফিয়াতের কারণে।
অতএব, ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ এর মাধ্যমে যেহেতু ‘হিউম্যান মিল্ক’ ক্রয়-বিক্রয় করা এবং আদান-প্রদান করা হয়, তাই, এ ব্যবস্থাটাই সম্মানিত শরীয়তে সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম।
দুধ সম্পর্ক রক্ষা করা ফরয। ব্যতিক্রম করা
কাট্টা হারাম ও কুফরী
মানুষের সাথে মানুষের আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হয় তিনভাবে।। প্রথমত, রক্ত সম্পর্ক। যেমন, পিতা-পুত্র, ভাই-বোন। দ্বিতীয়ত, বৈবাহিক সম্পর্ক। যেমন, স্ত্রী, শ্বশুড়, শ্বাশুড়ী। তৃতীয়ত, দুধ সম্পর্ক। যেমন, দুধ মাতা, দুধ পিতা, দুধ ভাই, দুধ বোন।
এখানে আত্মীয়তার সম্পর্ক তিনভাবে স্থাপিত হলেও দুধ সম্পর্কটা সার্বিকভাবে জড়িত। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেছেন-
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِـيْ أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِـيْ فِيْ حُجُوْرِكُمْ مِّنْ نِّسَائِكُمُ اللَّاتِـيْ دَخَلْتُمْ بِـهِنَّ فَإِنْ لَّـمْ تَكُوْنُوْا دَخَلْتُمْ بـِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِيْنَ مِنْ أَصْلابِكُمْ وَأَنْ تَـجْمَعُوْا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّ اللهَ كَانَ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا.
অর্থ: “তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের মেয়ে, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, তোমাদের সে মাতা যাঁরা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছেন, তোমাদের দুধ বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে নিরিবিলি অবস্থান করেছ সে স্ত্রীদের মেয়ে যারা তোমাদের লালন পালনে আছে, যদি তাদের সাথে নিরিবিলি অবস্থান না করে থাক তবে তাদের মেয়েকে বিবাহ করতে গুনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত ছেলেদের স্ত্রীদেরকে এবং দু’বোনকে একত্রে বিবাহ করা (হারাম)। কিন্তু যা পূর্বে হয়েছে তাতো হয়েছেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيِّ بْنِ أَبِيْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللّٰهَ حَرَّمَ مِنَ الرَّضَاعِ مَا حَرَّمَ مِنَ النَّسَبِ
অর্থ: হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি দুধ পানের কারণেও হারাম করেছেন, যা নসবগত কারণে হারাম করেছেন। (তিরমিযী শরীফ)
অর্থাৎ, রক্তের সম্পর্কের কারণে মায়ের যেসব আত্মীয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া নিষেধ, দুধ সম্পর্কের কারণেও দুধ মায়ের সেসব আত্মীয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া নিষিদ্ধ।
‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ এর কারণে দুধ সম্পর্কীয় পুরো ব্যবস্থাপনা এলোমেলো হয়ে যাবে। এই পদ্ধতি অবলম্বনে কারা কারা মিল্ক ব্যাংকে দুধ জমা দিচ্ছে তা বুঝা যাবে না। যেমন, একই মায়ের দুধ দুই এলাকার দু’জন শিশু গ্রহণ করল। কিন্তু ওরা জানলও না যে, ওরা দুধভাই এবং দুধ বোন হয়ে গেছে। ঘটনাক্রমে ওদের দুই জনের মধ্যে বিবাহ ঠিক হল!! তখন কি হবে? অথচ পবিত্র দ্বীন ইসলামে দুধ ভাইয়ের সাথে দুধ বোনের বিবাহ নাজায়িয এবং হারাম।
‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ থেকে দুধ সংগ্রহ করে পান করবে, সে কিভাবে শনাক্ত করবে, তার দুধ মা কে? এবং কতজন? এবং সে এটাও শনাক্ত করতে পারবে না, কার কার সঙ্গে তার হুরমতের সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে বিবাহ অবৈধ হয়ে রয়েছে। ফলে সে বড় হয়ে যদি এমন কোনো আত্মীয়কে বিবাহ করে বসে, যার সঙ্গে তার বিবাহ সম্পূর্ণ হারাম, তবে তার সমাধান কী হবে? নিঃসন্দেহে তাকে হারামের কুফল ভোগ করতে হবে। নাউযুবিল্লাহ!
আরো উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, একজন সন্তান ৩০ মাস বা আড়াই বছর বয়সের পর কোন মায়ের দুধ পান করা তার জন্য হারাম। ‘হিউম্যান মিল্ক’ যখন বাজারে সহজলভ্য হয়ে যাবে, তখন আড়াই বছর বয়সের বেশি বয়সীরা এ দুধ পান করবেনা, তার নিশ্চয়তা কোথায়? তখন সবাইকে গণহারে এ দুধ পান করানোটাই স্বাভাবিক। বর্তমান সময়ে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে ‘হিউম্যান মিল্ক’ দ্বারা তৈরী খাদ্য সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের দ্বারা তা সুস্পষ্ট।
কাজেই, দুধ সম্পর্ক রক্ষার জন্য ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ ব্যবস্থা মহাসম্মানিত শরীয়তে নিষিদ্ধ।
বেপর্দা হওয়া হারাম
‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ এর কার্যক্রম দ্বারা শরয়ী পর্দা বিনষ্ট হয়। একজন মায়ের দুধ গাইরে মাহরাম পুরুষের জন্য দেখা সুস্পষ্ট বেপর্দা-বেহায়াপনা। অথচ বেপর্দা হওয়া শক্ত কবীরা গুনাহ এবং মালউন ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। নাউযুবিল্লাহ! কেননা, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে পর্দা পালন করার ব্যাপারে কঠোরভাবে আদেশ করা হয়েছে।
যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَقَرْنَ فِـيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْـجَاهِلِيَّةِ الْأُوْلٰى
অর্থ: তোমরা (মহিলারা) তোমাদের গৃহে অবস্থান করো। এবং জাহিলী যুগের ন্যায় বেপর্দাভাবে বাইরে বের হয়ো না। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
অন্যত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِذَا سَأَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوْهُنَّ مِنْ وَّرَاءِ حِجَابٍ
অর্থ: যখন তোমরা (মহিলারা) পুরুষদের নিকট কোন কিছু চাও, পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৩)
পবিত্র হাদীছ শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَعَنَ اللهُ الْنَاظِرَ وَالْـمَنْظُوْرَ اِلَيْهِ.
অর্থ: যে দেখে এবং যে দেখায় তার প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি লা’নত বর্ষণ করেন।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلدَّيُوْثُ لَايَدْخُلُ الْـجَنَّةَ.
অর্থ: “দাইয়্যূছ বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবে না।” দাইয়্যূছ ঐ ব্যক্তি যে নিজে পর্দা করে না এবং তার অধীনস্ত মহিলাদের পর্দা করায়না।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক উনার দ্বারা এবং উনার মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা সরাসরি পর্দাকে ফরয করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বরং চোখের দৃষ্টিসহ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হিফাযত করে পর্দা করতে বলেছেন। এ জন্য কিতাবে উল্লেখ করা হয়, মহিলাদের সমস্ত শরীর তো অবশ্যই পর্দার অন্তর্ভূক্ত এমনকি তাদের ব্যবহৃত পোষাক-পরিচ্ছেদও পর্দার অন্তর্ভূক্ত। একইভাবে তাদের কন্ঠ ধ্বনিও পর্দার অন্তর্ভূক্ত।
তাহলে যেখানে একজন মহিলার পোষাক-পরিচ্ছেদ গাইরে মাহরামকে দেখানো নিষেধ, তার কন্ঠ ধ্বনি গাইরে মাহরামকে শুনানো নিষেধ। সেখানে একজন মহিলার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে তার সন্তানের জন্য রিজিকের যে বিশেষ ব্যবস্থা, তা ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ এর নামে পাত্রস্থ করা এবং অন্য কাউকে দেখানো কখনোই শরীয়ত সম্মত হতে পারেনা।
কাজেই, বেপর্দা-বেহায়াপনার অন্যতম উৎস হিসেবে ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ ব্যবস্থা হারাম ও নাজায়িয।
মূলকথা হলো, মহিলাদের দুধ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের নামে মুসলমানদের ঈমান, আমল, পারিবারিক বন্ধন এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়ে মুসলমানদেরকে হারাম ও নাজায়িয কাজে মশগুল করে দিতে বিধর্মী বেদ্বীন-বদদ্বীনরা ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ যাবতীয় কার্যক্রম সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ। তা হতে বেঁচে থাকা পুরুষ-মহিলা প্রত্যেকের জন্যই ফরযের অন্তর্ভুক্ত। একইভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এবং তাদেরকে প্রতিরোধ করাও আবশ্যক।
(এবারে সংক্ষিপ্তাকারে জাওয়াব দেয়া হলো। প্রয়োজনে এ বিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত ফতওয়া দেয়া হবে। ইনশাআল্লাহ)
মুহম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ, মুন্সিগঞ্জ
সুওয়াল: কথিত এক মুফতী ইমাম মাগরিবের নামায তিন রাকায়াত পড়ে ভুল বশতঃ দাঁড়িয়ে গেলে পিছনে মুছল্লিরা লোকমা দেয়। উক্ত ইমাম লোকমা না নিয়ে মাগরিবের নামায ৪ রাকায়াত পড়ে সিজদা সাহূ দিয়ে নামায শেষ করে। উক্ত ইমামের সিজদায়ে সাহূ দিয়ে নামায শেষ করাটা সঠিক হয়েছে কি না?
জাওয়াব: না, উক্ত ইমামের সিজদায়ে সাহূ দিয়ে নামায শেষ করাটা সঠিক হয়নি। নামাযের মধ্যে কোন ওয়াজিব ছুটে গেলে সেক্ষেত্রে সিজদায়ে সাহূ দিয়ে নামায শেষ করতে হয়। কিন্তু কোন ফরয ছুটে গেলে নামায পুনরায় দোহরায়ে পড়তে হবে।
উল্লেখ্য, ছলাতুল মাগরিব ৩ রাকায়াত ফরয। তাই ৩ রাকায়াতের পর বসাটা হচ্ছে ফরয। যাকে আখিরী বৈঠক বা শেষ বৈঠক বলা হয়। শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পরিমাণ সময় বসাটা ফরয। ইমাম যেহেতু শেষ বৈঠকে না বসে দাঁড়িয়ে গেছেন তাই উনার কর্তব্য ছিল মুক্তাদীর লোকমা গ্রহণ করে বসে তাশাহহুদ পড়ার পর সিজদায়ে সাহূ দিয়ে নামায শেষ করা। অথবা ইমামের নিকট নামায ২ রাকায়াত হয়েছে বলে মনে হলে তাশাহহুদ পড়ার পর দাঁড়িয়ে আরেক রাকায়াত পড়ে সিজদায়ে সাহূ দিয়ে নামায শেষ করা।
কিন্তু ইমাম উক্ত দু’ নিয়মের কোন একটি নিয়ম অনুসরণ না করে নামাযের শেষ বৈঠক যা ফরয তা বাদ দিয়ে চতুর্থ রাকায়াত পড়ে সিজদায়ে সাহূ দিয়ে নামায শেষে করেছেন; ফলে উনার নামায শুদ্ধ হয়নি।
এখন উক্ত ইমাম ও মুছল্লী সকলের জন্য ফরয হচ্ছে, উক্ত ছলাতুল মাগরিবের ৩ রাকায়াত ফরয নামায ক্বাযা আদায় করা। যদি সম্ভব হয় ইমাম সকল মুছল্লীকে নিয়ে জামায়াতে আদায় করবেন। অন্যথায় সকল মুছল্লীকে আলাদাভাবে উক্ত নামায ক্বাযা আদায় করতে হবে। নচেৎ ফরয তরক করার কারণে কঠিন কবীরা গুনাহে গুনাহগার হতে হবে। (আলমগীরী, শামী, আইনুল হিদায়া ইত্যাদি)