সর্বকাজে আজল বা তাড়াহুড়া না করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত

সংখ্যা: ২২৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় পবিত্র কালাম পাক উনার অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে বান্দা-বান্দীদের কাজ-কর্ম সম্পাদন করার ব্যাপার তাড়াহুড়া করতে নিষেধ করেছেন। বরং চিন্তা-ভাবনা করে ধীরস্থিরতা ও সাবধানতা অবলম্বন করে কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ মুবারক করেছেন।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ولا تعجل بالقران

অর্থাৎ “পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করো না।” (পবিত্র সূরা ত্বহা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)

স্মরণীয় যে, পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ উনাদের নুযূল খাছ কিন্তু হুকুম ‘আম (ব্যাপক) অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত। এছাড়া এমন অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ রয়েছে যা সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন করে নাযিল হলেও সেসবের হুকুম প্রকৃতপক্ষে উম্মতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মূল কথা হলো, উম্মতকে সর্বকাজে তাড়াহুড়া না করে বরং সাবধানতা বা সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

خذوا حذركم

অর্থ: “তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০২)

এখানে যদিও শত্রুদের থেকে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য বলা হয়েছে; কিন্তু প্রতিক্ষেত্রেই সতর্কতা অবলম্বন করা দায়িত্ব-কর্তব্য। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لا يلدع الـمؤمن من جحر واحد مرتين

অর্থাৎ “মু’মিন ব্যক্তি একই গর্তে দু’বার দংশিত হয় না।” (বুখারী শরীফ)

হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আব্দুল কায়িস গোত্রপতি ‘আশাজ্জ’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনার মধ্যে এমন দু’টি গুণ বিদ্যমান রয়েছে যা মহান আল্লাহ পাক তিনি পছন্দ করেন- সহনশীলতা এবং গাম্ভীর্য।” (মুসলিম শরীফ)

বর্ণিত রয়েছে, আব্দুল কায়েস আরবের একটি প্রসিদ্ধ গোত্রের নাম। একবার সেই গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল গোত্রপতি হযরত মুনযির ইবনে আয়ায উরফে আশাজ্জ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে পবিত্র মদীনা শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে উপস্থিত হলেন। পবিত্র মদীনা শরীফ-এ পৌঁছেই হযরত মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ব্যতীত অন্যান্য সকলেই তাড়াহুড়া করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে হাযির হলেন। সফরের ধুলাবালি ও ময়লাযুক্ত জামা-কাপড় ইত্যাদি কিছুই পরিবর্তন করেননি। কিন্তু হযরত মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এরূপ করলেন না, বরং তিনি প্রথমে হাত-মুখ ধুলেন, সফরের জামা-কাপড় পাল্টালেন এবং উত্তম পোশাক পরিধান করে খুব ধীরস্থিরভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত হলেন।

হযরত সাহল ইবনে সা’দ আসসায়িদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ধিরস্থীরতা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ হতে হয়ে থাকে। (তিরমিযী শরীফ)

হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে হাযির হয়ে বললেন, আমাকে উপদেশ দিন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বললেন, চিন্তা-ফিকির করে কোন কাজ করুন। যদি উহার পরিণাম উত্তম বলে বিবেচিত হয়, তাহলে উহা সম্পাদন করুন আর যদি মন্দের আশঙ্কা থাকে, তাহলে উহা হতে বিরত থাকুন। (শরহে সুন্নাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সারজাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উত্তম চাল-চলন, ধীরস্থিরতা এবং মধ্যমপন্থা অবলম্বন নুবুওওয়াতের চব্বিশ ভাগের একভাগ।

এখানে নুবুওওয়াতের বিভাজ্য বলতে নুবুওওয়াতের অংশ নয়। কেননা, উহাকে বিভক্ত করা যায় না। বরং উহার অর্থ হলো উক্ত স্বভাবগুলো হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের স্বভাব-চরিত্র মুবারক উনার অংশ বিশেষ।

অপর এক হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, প্রত্যেক কাজই ধীরেসুস্থে করার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। তবে আখিরাতের আমল ইহার ব্যতিক্রম। (আবু দাউদ শরীফ)

অর্থাৎ আখিরাতের কাজে দেরী করা উচিত নয়। তাই বলা হয়, দুনিয়ার কাজ এরূপভাবে করো যেন তুমি সর্বদা বেঁচে থাকবে। আর আখিরাতের কাজ এভাবে করো যেন তুমি কালই ইনতিকাল করবে।

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী