তাফসীরুল কুরআন

সংখ্যা: ০১ম সংখ্যা | বিভাগ:

তাফসীরুল কুরআন

মুহম্মদ হাফিজুর রহমান


 يايها الذى ين امنوا ادخلو افى السلم كافة. ولا تتبعوا خطوت الشطن. انه لكم عدو مبين

অর্থ : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ ক’রো না; নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।”

শানে নুযুল : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আসাদ ইবনে উবাইদ সায়লাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমুখ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, উনারা ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ইহুদী পণ্ডিত ছিলেন, উনাদের সম্পর্কেই এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে বলে মুফাসসিরীনে কিরামগণ বর্ণনা করেছেন। ইহুদী ধর্মের বিধানানুসারে শনিবার ছিল সপ্তাহের পবিত্র দিন এবং এ দিনকে সম্মান করা ছিল ওয়াজিব। আর খাদ্য হিসাবে উটের গোশত ছিল হারাম। যেহেতু উনারা ইহুদী পণ্ডিত ছিলেন, ইহুদী থাকা অবস্থায় এ ধর্মের অনুশাসনগুলি ঠিকভাবেই মেনে চলতেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পর উনাদের মাঝে ইহুদী ধর্মের ঐ দু’টি অনুশাসনের প্রভাব রয়ে গিয়েছিল। (কেননা স্বাভাবিকভাবেই হঠাৎ করে কোন কঠিন বিষয়, যা বহুদিনের অভ্যাস তা পরিবর্তন করা যায় কঠিন, যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজে মদ একবারে হঠাৎ করে হারাম ঘোষণা করেন নি) উপরন্তু উনারা ধারণা করলেন দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে শনিবারকে অসম্মান করা ওয়াজিব নয়, কাজেই যদি যথারীতি শনিবারকে সম্মান প্রদর্শন করা হয় এবং উটের গোশত হালাল জেনেই তা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা যায় তবে একদিকে যেমন হযরত মুসা আলাইহিস সালাম উনার শরীয়তের প্রতিও সম্মান প্রদর্শন করা হবে তেমনি অপরদিকে ইসলাম ধর্মেরও। অধিকন্তু এতে মহান আল্লাহ পাক উনার অধিকতর আনুগত্য এবং বিনয় প্রকাশ পাবে বলে মনে হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন।

কোন কোন মুফাসসিরীনে কিরাম এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার ক্ষেত্রে একটি ঘটনার উল্লেখ করেন।

একদা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ বসা ছিলেন। এমন সময় উটের গোশতসহ কিছু খাদ্য হাজির করা হল। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন যে, তিনি পূরবে ইহুদী পণ্ডিত ছিলেন এবং সেই ধর্মে উটের গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ বিধায় তিনি তা গ্রহণ করতেন না। কাজেই এখনও তিনি উটের গোশত খাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট অনুমতি চাইলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ করে থাকলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার বিধানের অপেক্ষায় রইলেন। কেননা

وما ينطق عن الهوى. ان هو الاوحى يوحى

অর্থ : “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী ব্যতীত নিজের থেকে কোন কথা বলেন না। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করলেন।

বিশ্লেষণ: ফাওয়ায়েদে ওসমানী কিতাবে এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তফসীরে বলা হয়েছে, “এ পাবত্র আয়াত শরীফ উনার উদ্দেশ্য হলো বিদআতের দুর্গকে বিনষ্ট করা। কেননা বিদআত হলো কোন কাজকে উত্তম ভেবে ধর্মের অঙ্গস্বরূপ গ্রহণ করা। এমন কাজকে পূণ্য কাজ বা ধর্মীয় কাজ মনে করে তার প্রচলন করা।”

পরিপূর্ণভাবে ঈমান অর্জন এবং বিদআতকে বর্জনেরই নির্দেশ রয়েছে এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে। তাই ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “হে মুমিনগণ, তোমরা পরিপূর্ণভাবে দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে প্রবেশ করো।”

বয়ানুল কুরআন কিতাবে এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তফসীরে বলা হয়েছে, এতে বিদয়াতের প্রতি ভৎসনা ও তিরস্কার করা হয়েছে “এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সতর্কবাণী রয়েছে একদিকে সেসব লোকদের জন্য যারা মূর্খ বিদআত কাজে লিপ্ত আর অন্যদিকে যারা নিজেদেরকে আধুনিক মনে করে এবং আক্বীদা বিশ্বাসে কথায় ও কাজে দ্বীন ইসলাম উনাকে পরিপূর্ণ জীবন বিধানরূপে মেনে নেয়না। কেননা শয়তান তাদেরকে ইসলাম বিরোধী কাজে মুগ্ধ করে রাখে।

একবার হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি তাওরাত শরীফ উনার কয়েকটি পুরাতন পাতা নিয়ে হাজির হলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

لو كان موسى حياماو سعه الا اتباعى

অর্থ : “যদি মুসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম আজ যমীনে থাকতেন তবে আমার অনুসরণ ব্যতীত উনার গত্যন্তর থাকত না।” অতএব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আবির্ভাবের পর অন্য কারো অনুসরণ করার প্রশ্নই উঠেনা।(খোলাসাতুত্তাফসীর)

 

ইমাম রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ব্যাখ্যা:

(১) তোমরা যারা মৌখিক ইসলাম কবুল করেছ, পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো, আর শয়তানের অনুগামী হয়োনা।

(২) ইমাম রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় আরও বলেছেন- হে ওইসব লোক, তোমরা যারা পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছ তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর, ঈমানের ব্যাপারে তোমাদের আনুগত্যকে পরিপূর্ণ কর তথা সর্বশেষ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এবং উনার প্রতি অবতীর্ণ সবশেষ গ্রন্থ পবিত্র কুরআন শরীফ-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর আর শয়তানের অনুগামী হয়ো না।

আল্লামা আলুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ব্যাখ্যা।

(১) হে মোমেনগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করো গোপন ও প্রকাশ্যে ইসলামের কোন হুকুমের প্রতি অবহেলা করো না।

(২) হে মুমীনগণ! তোমরা এক ইসলামী শরীয়তের পূর্ণ অনুগত হও, এর মধ্যে পরস্পর বিভেদ বা দলাদলি সৃষ্টি করো না।

(৩) হে মুমীনগণ! তোমরা যারা আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ অনুসরণ করো উনার কোন বিধি নিষেধ বা সুন্নতের অনুসরণ থেকে বঞ্ছিত হয়োনা এবং এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদের ঈমানকে সুদৃঢ় করা অর্থাৎ হে মুসলমানগণ তোমরা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি যে বিশ্বাস স্থাপন করেছ তার প্রতি অটল অবিচল থাক। (তফসীরে রুহুল মাআনি)

 

দ্বীন ইসলাম উনার অর্থ

সলম (سلم) শব্দ থেকেই ইসলাম এসেছে। সলম অর্থ শান্তি। আর ইসলাম অর্থ كردان نها دن بطاعت অর্থাৎ কারো নিকট আনুগত্যের সাথে আত্মসমর্পন করা। শরীয়তে এর অর্থ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আনুগত্যের সাথে আত্মসমর্পণ করা। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ করেন-

بلى من اسلم وجهه لله وهو محسن فله اجره عند ربه. ولا خوف عليهم ولاهم يحزنون

অর্থ : “হাঁ, যে কেউ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পন করে এবং সৎ কর্মপরায়ন হয় তার ফল তার প্রতিপালকের নিকট রয়েছে এবং তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।”

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন,

اففير ديين الله بيغون وله اسلم من فى السموت والارض طرعا وكرها وليه يرجعون

অর্থ : “তারা কি চায় মহান আল্লাহ পাক তিনি দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন? যখন আকাশে ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে সমস্তই ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় উনার নিকট আত্মসমর্পন করেছে। আর উনার দিকেই তারা প্রত্যানীত হবে।”

মূলত আমাদের একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত দ্বীন ইসলাম উনাকেই একমাত্র অনুসরণ করতে হবে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন।

ومن يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخسرين

অর্থ : “কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনও কবুল করা হবেনা এবং সে হবে পরলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত।”

কাজেই দ্বীন ইসলামই আমাদের মুক্তির পথ এবং এ দ্বীন ইসলাম উনাকেই আমাদের পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে হবে। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

اليوم اكملت لكم دينكم واعمت عليكم نعمتى ورضيت لكم الاسلام دينا

অর্থ : “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলাম উনাকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম।”

এবং দ্বীন ইসলাম উনাকে কিভাবে অনুসরণ করতে হবে তাও মহান আল্লাহ পাক তিনি আলোচ্য আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন।

يايها الذين امنوا ادخلوا قى السلم كافة

অর্থ : “হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও।”

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈমানদারগণ উনাদেরকে সম্বোধন করেছেন যারা ইতিমধ্যেই দ্বীন ইসলাম উনার অন্তর্ভুক্ত। كافة শব্দ দ্বারা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হওয়ার আদেশ করা হয়েছে। ادخلوا فى السلم অর্থাৎ ইসলামে দাখিল হওয়া এখানে মূল নয় কেননা ঈমানদারগণ অবশ্যই দাখিল। বরং এখানে كافة শব্দটাই মূল এবং এর উপরই জোর দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ মুমিনদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ তারা যেন ইসলামে দাখিল হয় পরিপূর্ণভাবে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ জীবরিল নামে খ্যাত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যখন হযরত জীবরিল আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন ইসলাম কি? তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন।

الاسلام ان تشهد ان الا اله الا الله وان محمد ارسوالله وتقيم الصلوة وتؤتى الزكاة وتصوم رمضان وتحج البيت ان استطعت اليه سبيلا

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক ব্যতীত কোন মাবুদ নাই এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রসূল এ ঘোষণা দিবে, নামায কায়িম করবে, যাকাত দিবে, পবিত্র রমযান শরীফ উনার রোযা রাখবে এবং হজ করবে যদি তুমি সেখানে পৌঁছাতে সমর্থ হও। ইহাই হল ইসলাম।”

আবার জিজ্ঞেস করলেন ঈমান কি? উত্তর দিলেন।

ان تومن بالله ومالا ئكته وكتبه ورسله واليو الاخر وتؤكم تلقدر خيره وشره

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক উনাকে বিশ্বাস করবে এবং উনার হযরত ফেরেস্তা আলাইহিমুস সালামগণ ‍উনাদের প্রতি, উনার কিতাবসমূহের প্রতি, উনার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস করবে এবং তকদীরের ভাল ও মন্দতে বিশ্বাস করবে।”

আবার জিজ্ঞেস করলেন ইহসান কি? উত্তর দিলেন-

ان تعبد الله كانك تراه فان لم يكن تراه فانه يراك

অর্থ : মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত এরূপে করবে যেন তুমি উনাকে দেখছ। আর যদি তা না পার তবে মনে করবে যে তিনি তোমাকে দেখছেন।” (মুসলীম শরীফ)

ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি সহীহ মুসলিম শরীফ উনার টিকায় লিখেছেন, কাজি আয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন- এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ঈমান (নামায, রোযা ইত্যাদি) বাহ্যিক কার্যকলাপ, অন্তর বিশুদ্ধ করা, অন্তরকে দোষসমূহ হতে পরিষ্কার দকরা প্রভৃতি জাহিরী বাতিনী সমস্ত ইবাদতের কার্যগুলির ব্যাখ্যা বর্ণিত হয়েছে, এমনকি উক্ত কার্যগুলি শরীয়তের সমস্ত ইলমের মূল ও অন্যান্য বিষয় তৎসমস্ত হতে আবিষ্কৃত হয়েছে।

আশ আতুল লোময়াত কিতাবে উল্লেখ আছে, “দ্বীন ইসলামে সিদ্ধ (কামিল) হওয়া ফিকহ, আকাইদ ও তাসাউফের উপর নির্ভর করে। উক্ত সহীহ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উপরোক্ত তিনটি বিষয়ের উল্লেখ হয়েছে। প্রথম ইসলাম, ইহাকে ফিকাহের প্রতি লক্ষ্য করা হয়েছে যাতে শরীয়তের ফরুযাত মসলা ও আমলের উল্লেখ রয়েছে। দ্বিতীয় ঈমান, ইহাতে ইলিম-কালাম সংক্রান্ত আকাইদের প্রতি লক্ষ্য করা হয়েছে। তৃতীয় ইহ্সান, এতে মূল তাসাউফের প্রতি লক্ষ্য করা হয়েছে।”

ইরশাদুত্তালেবিন কিতাবে আছে- তরিকত ও বাতিনী কামালত শিক্ষার জন্য চেষ্টা করা ওয়াজিব। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেছেন “হে ঈমানদারগণ, তোমরা সম্পূর্ণরূপে পরহেজগারী কর,” অর্থাৎ জাহেরি ও বাতেনিভাবে কোন আকাইদ ও স্বভাব মহান আল্লাহ পাক উনার মর্জির খিলাফ না হয়। আদেশ সূচক শব্দে আদিষ্ট বিষয় ওয়াজিব হয়ে থাকে।

ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলিইহি তিনি বলেন- যে ইলমে ফিকাহ শিক্ষা করল কিন্তু ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করল না সে হল ফাসেক, আর যে তাসাউফের দাবীদার (আমি মারিফাত করি দাবি করে) অথচ ফিকাহ আমল করেনা সে হল কাফির আর যে উভয়টিই শিক্ষা করল সে হল মুহাক্কিক।

মূলত ইসলামের প্রতিটি বিষয় আমাদের পূর্ণাঙ্গরূপে অনুসরণ, অনুকরণ করতে হবে। মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত, হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াস উনাদের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। বিবাহ প্রণালী, তালাকের নিয়ম, হালাল কারবার, আদব-কায়দা, মোয়ামালাত (অর্থনীতি ও কায়কারবার), মোয়াশারাত (সমাজনীতি ও রাজনীতি), মোকামাত (আধ্যাত্মিক নীতি) ইত্যাদি সকল কিছু ইসলামের অন্তর্ভূক্ত। এমন কোন বিষয় পৃথিবীতে দৃষ্ট হবে না যার সমাধান দ্বীন ইসলামে দেয়া হয় নাই। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-

ولا تتبعوا خطوات الشيطن

অর্থ : “তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত কর এবং শয়তান যে সকল বিষয় পালনের আদেশ করে তা হতে আত্মরক্ষা কর কেননা সে অসৎ ও অন্যায়েরই আদেশ দিয়ে থাকে। সূরা ফাতিরে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরও ইরশাদ মুবারক করেছেন।

ان الشيطن اكم عدو فاتخذوه عدوا. انما يدعوا حزيه ليكونوا من اصحب السعير.

অর্থ : “শয়তান তোমাদের শত্রু সুতরাং তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ কর। সে তো তার দলবলকে আহ্বান করে কেবল এ জন্য যে, ওরা যেন জাহান্নামী হয়।”

সুতরাং আমাদের সবাইকে মহান আল্লাহ পাক তিনি শয়তানের ধোকা থেকে বাঁচিয়ে রেখে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ সম্মত পথে পরিপূর্ণ ইসলামে দাখিল হওয়ার তৌফিক প্রদান করুন আমীন। (সংক্ষিপ্ত)

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী