সম্মানিত মাহে শা’বান শরীফ এবং উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা -আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

সংখ্যা: ২৫২তম সংখ্যা | বিভাগ:

‘শা’বান’ শরীফ হিজরী সনের অষ্টম মাস। এ মাসটিও ফযীলতপূর্ণ হওয়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে বিশেষ এবং উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, এ মাসের পাঁচ তারিখ হিজরী ৪র্থ সনে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন যিনি ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শহীদে কারবালা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি এবং ইমামুর রাবি’ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম যাইনুল আবিদীন আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! আবার এ মাসেরই পনের তারিখ হিজরী তৃতীয় সনে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন যিনি ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!

এছাড়া আরো একটি উল্লেখযোগ্য দিন হচ্ছে, ২৯ শে শা’বান শরীফ। এ ফযীলতপূর্ণ দিনটিতে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন ত্বাহিরাহ, ত্বইয়্যিবাহ, আশিকাহ, মা’শূক্বাহ, হাবীবাতুল্লাহ, সাইয়্যিদাতুন নিসা, আওলাদে রসূল হযরত সাইয়্যিদাতাল উমাম আলাইহিমাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, প্রত্যেক মাসেই আইয়্যামুল্লাহ অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার দিনসমূহ নামে স্বরণীয় কতক দিন নির্দিষ্ট রয়েছে। এ মাসে স্মরণীয় সেই দিনসমূহ হচ্ছে, যথাক্রমে ৫ তারিখ, ১৫ তারিখ এবং ২৯ তারিখ। এসকল সম্মানিত ও স্মরণীয় দিনসমূহ উম্মতের জন্য একমাত্র পালনীয়। কিন্তু এসকল দিন পালনের বিপরীতে মুসলমানরা আজ ইহুদী, নাছারা, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজূসীদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে পহেলা বৈশাখ, থার্টিফার্স্ট নাইট, বাবা দিবস, মা দিবস, বন্ধু দিবস, ভালোবাসা দিবস ইত্যাদি কুফরী দিবস পালন করছে। নাউযুবিল্লাহ! যা পালনে ঈমান ও আমল নষ্ট হয়ে তারা জাহান্নামের দিকে ধাবিত হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

স্মরণীয় যে, এ মাস অতিশয় কল্যাণ ও নেকীর মাস। হযরত আবূ উমামা বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, যখন শা’বান মাস উপস্থিত হতো তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করতেন, “এ মাসে তোমরা তোমাদের অন্তরকে পাক-পবিত্র করে নাও এবং নিয়তকে বিশুদ্ধ করে নাও।” সুবহানাল্লাহ! (তবারানী শরীফ)

হযরত উসামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম: ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শা’বান মাসে আপনাকে যত বেশি রোযা রাখতে দেখি অন্য কোনো মাসে তদ্রূপ দেখি না, এর কি কারণ? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “এ মাসটি রজবুল হারাম ও রমাদ্বান শরীফ মাসের মধ্যবর্তী অতীব ফযীলতপূর্ণ মাস; অথচ লোকেরা এ মাসটির ব্যাপারে উদাসীন। এ মাসে মানুষের আমলসমূহ মহান রব্বুল আলামীন উনার দরবারে পেশ করা হয়। আমার আমলসমূহ পেশ করা কালে আমি রোযাদার অবস্থায় থাকা পছন্দ করি।” সুবহানাল্লাহ! (নাসায়ী শরীফ)

বস্তুত শা’বান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতটিই হচ্ছে সেই বরকতপূর্ণ রাত যেই রাতটিতে কেবল আমলনামা মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে  পেশ করা হয় না বরং বান্দার রুযী-রোযগার, হায়াত-মউত ইত্যাদি সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়। সুবহানাল্লাহ!

যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র সূরা দুখান শরীফ উনার ৪নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

فيها يفرق كل امر حكيم

“এটি এমন এক রাত, যে রাতে সমস্ত প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়।”

হযরত ইমাম সুবুকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার তাফসীরগ্রন্থে শবে বরাত গুনাহ মাফীর রাত হওয়ার ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন যে, শা’বানের মধ্যরাত অর্থাৎ শবে বরাতে ইবাদত করার ওসীলায় বিগত বছরের গুনাহ মাফ হয়। আর জুমুয়ার রাতে ইবাদতের ওসীলায় বিগত সপ্তাহের গুনাহ মাফ হয়। আর শবে ক্বদরে ইবাদতের ওসীলায় বিগত জীবনের গুনাহ মাফ হয়। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যখন শা’বান মাসের ১৫ই তারিখ উপস্থিত হয় তখন ওই রাতে তোমরা সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী করো এবং দিনে রোযা রাখো। কারণ ওই দিন মহান আল্লাহ পাক তিনি সূর্যাস্তের পর থেকে পৃথিবীর আসমানে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করে ঘোষণা করতে থাকেন, কেউ ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কেউ রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক প্রদান করবো। কেউ বিপদগ্রস্ত আছ কি? আমি তার বিপদ দূর করে দিব। কেউ তওবাকারী রয়েছ? তার তওবা কবুল করবো। কোনো প্রার্থনাকারী আছ? যার প্রার্থিত বিষয় দিয়ে দিব। এভাবে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত প্রত্যেক হাজতমান্দকে সম্বোধন করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঘোষণা দিতে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ!

কাজেই, প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ মহিলা, জিন-ইনসানের কর্তব্য হলো, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদকৃত “লাইলাতুম মুবারকাহ” এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদকৃত লাইলাতুন নিছফি মিং শা’বান তথা পবিত্র শবে বরাত রাতটিতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী করা, জীবনের গুনাহখতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা, ইসতিগ্ফার তওবা করা এবং যার যা নেক দোয়া ও নেক মকছূদ রয়েছে তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওসীলায় খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার নিকট পরিপূর্ণ ইয়াক্বীনের সাথে আরজু করা বা দুআ- মুনাজাত করা।

মাহে শাওওয়াল-যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে মুহররমুল হারাম ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউল আউয়াল শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রবীউছ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা