পবিত্র মাহে শা’বান শরীফ ও উনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২৩৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

‘শা’বান’ আরবী মাসসমূহের মধ্যে অষ্টম মাস। এ মাসটিও ফযীলতপূর্ণ হওয়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে দুটি বিশেষ এবং উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, এ মাসের পাঁচ তারিখ ৪র্থ হিজরী সনে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন যিনি ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, শহীদে কারবালা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! আবার এ মাসেরই পনের তারিখ তৃতীয় হিজরী সনে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন যিনি ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!

প্রকাশ থাকে যে, বছরের যে পাঁচটি রাতে নিশ্চিতভাবে দুআ কবুল হয় তন্মধ্যে শা’বান মাসের মধ্য রাতটি অন্যতম। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নিশ্চয়ই দুআ পাঁচ রাত্রিতে কবুল করা হয়। রজব মাসের প্রথম রাত, শা’বান মাসের মধ্য রাত অর্থাৎ ১৫ তারিখ রাত, ক্বদরের রাত এবং দুই ঈদের রাত। (আল বাইয়্যিনাত শরীফ)

অপর এক বর্ণনায় এসেছে, পাঁচটি রাত এমন রয়েছে উক্ত রাতে দুআ করা হলে ফিরিয়ে দেয়া হয় না অর্থাৎ নিশ্চিতরূপে কবুল করা হয়। রজব মাসের প্রথম রাত, শা’বান মাসের মধ্য রাত, জুমুআর রাত, দুই ঈদের দু’ রাত। (দায়লামী শরীফ)

উল্লেখ্য, যেসকল দিনসমূহ ফযীলতপূর্ণ বলে ঘোষিত হয়েছে তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার পুত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম কিংবা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম অথবা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম অথবা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কারো না কারো ঘটনা মুবারকের সাথে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার কারণে হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

উদাহরণস্বরূপ রজব মাসের পহেলা রাতটি দুআ কবুলের বিশেষ রাত হিসেবে নির্ধারিত হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে, এ মহিমান্বিত রাতটিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ওজূদ পাক “নূর মুবারক” উনার মহাসম্মানিত আব্বা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র জিসিম মুবারক থেকে উনার মহাসম্মানিতা আম্মা হযরত আমিনাহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র জিসিম মুবারকে তাশরীফ মুবারক গ্রহন করেন এবং সে দিনটি ছিল ইয়াওমুল জুমুআ। সুবহানাল্লাহ!

তদ্রুপ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায় “লাইলাতুম মুবারাকাহ” এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভাষায় “লাইলাতুন নিছফি মিং শা’বান” অর্থাৎ শা’বানের মধ্য রাতটি দুআ কবুলের বিশেষ রাত হিসেবে নির্ধারিত হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে, এ বরকতপূর্ণ দিনটিতে যমীনে তাশরীফ গ্রহণ করেন ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!

আরো উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার পূতঃপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কিংবা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অথবা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অথবা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের বিলাদত শরীফ, বিছাল শরীফ ও বিশেষ বিশেষ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার দিনসমূহকে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে “আইয়্যামুল্লাহ” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার দিন বা দিবস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وذكرهم بايام الله ان فى ذالك لايات لكل صبار شكور

অর্থ: (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি তাদেরকে (উম্মতদেরকে) মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দিনসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। নিশ্চয়ই এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল ও শোকরকারী ব্যক্তিদের জন্য নিদর্শনাবালী রয়েছে। (পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)

সত্যি সত্যি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দিনসমূহের কথা স্বীয় উম্মতকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। যেমন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন শা’বান মাসের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

অতএব, প্রত্যেক মুসলমানদের উচিত কাফির মুশরিকদের তথাকথিত বাবা দিবস, বন্ধু দিবস, ভালবাসা দিবস, হাত দোয়া দিবস, শ্রমিক দিবস, পহেলা বৈশাখ, থার্টি ফার্স্ট নাইট ইত্যাদি কুফরী দিবস পরিহার করে মহান আল্লাহ পাক উনার দিবসসমুহ পালন করা। আর এ লক্ষ্যে ১৫ই শা’বান পবিত্র শবে বরাত রাতটি সজাগ থেকে সারারাত ইবাদত বন্দেগী করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দিনের বেলায় রোযা রেখে ইফতার করার সময় তিনবার দুরূদ শরীফ পাঠ করে ইফতার করা। আমীন।

মাহে রবীউছ্ ছানী ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে জুমাদাল উখরা ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা