সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে ‘ইয়াতীম’ একটি সংবেদনশীল ও মর্যাদাশীল সম্বোধন। ইয়াতীমদের জন্য যথাযথ সরকারি বরাদ্দ শুধু অপ্রতুলই নয়; ইয়াতীমের যৎসামান্য সাহায্যও ব্যাপক লুটপাট হয়। দুর্নীতিবাজদের দুষ্ট চক্র থেকে রক্ষা করা ও ইয়াতীমদের যথাযথ হক্ব আদায় করা সরকারের বিশেষ সাংবিধানিক কর্তব্য

সংখ্যা: ২৩৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত ছলাত শরীফ ও সালাম মুবারক।

‘ইয়াতীম’ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে অত্যন্ত স্পর্শকাতর, সংবেদনশীল একটা শব্দ।

‘ইয়াতীম’ শব্দটি আরবী, যার অর্থ নিঃসঙ্গ। একটি ঝিনুকের মধ্যে যদি একটি মাত্র মুক্তা জন্ম নেয়, তখন একে দুররে ইয়াতীম বা নিঃসঙ্গ মুক্তা বলা হয়।

‘ইয়াতীম’ এমন নাবালেগ ছেলে-মেয়েকে বলা হয়; যার পিতা মারা গিয়েছে, বালেগ হওয়া অবধি সে ইয়াতীম হিসাবে গণ্য হবে, বালেগ হবার পর ইয়াতীম নামটি তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফ উনার মধ্যে থাকা অবস্থায় উনার পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা আব্দুল্লাহ যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন এবং ছয় বছর বয়স মুবারকে উনার সম্মানিতা আম্মাজান সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনিও পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। তারপর উনার খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দেন উনার দাদা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম তিনি। কিন্তু তিনিও মাত্র দুই বছর পর এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। সে হিসাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইয়াতীম অবস্থা গ্রহণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং ইয়াতীম মাত্রই সমাজ ও সরকারের কাছে বিশেষ সমাদৃত থাকা উচিত।

বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মুসলিমদের ওই বাড়িই সর্বোত্তম, যে বাড়িতে ইয়াতীম রয়েছে এবং তার সাথে ভালো ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে নিকৃষ্ট ওই বাড়ি যে বাড়িতে ইয়াতীম আছে, অথচ তার সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়। অতঃপর তিনি উনার আঙ্গুলি মুবারক উনার মাধ্যমে বললেন, আমি এবং ইয়াতীম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এমনভাবে অবস্থান করবো।” (ইবনে মাজাহ শরীফ)

হযরত আমর বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মাতা-পিতা মারা যাওয়া কোনো মুসলিম ইয়াতীমকে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বাবলম্বী করা অবধি নিজ পানাহারে শামিল করে। ওই ব্যক্তির জন্য অবশ্যই জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।” (মুসনাদ আহমদ)

কিন্তু আমাদের সমাজে যেমন ইয়াতীমের প্রতি মমত্ববোধ নেই, তেমনি সরকারেরও নেই কোনো দায়িত্ববোধ। বরং ইয়াতীমের অভিভাবক যারা রয়েছে তারা নির্দ্বিধায় ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করে চলেছে। পত্রিকান্তরে এ ধরনের খবর বিস্তর। নাঊযুবিল্লাহ! সম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা গেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার ১৬টি ইয়াতীমখানা ও মাদরাসায় ইয়াতীমদের জন্য সরকারের বরাদ্দ ৪৮ টন চাল বুঝে পায়নি ওই ইয়াতীমখানাগুলো। প্রকাশিত সংবাদে বণ্টন কাজে নিয়োজিত চক্রটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তারা চালের বদলে প্রতিটি ইয়াতীমখানার জন্য ৩ টন করে চাল বাবদ মাত্র ৪০ হাজার করে টাকা দিয়ে চাহিদাপত্র (ডিও) আদায় করে নেয়। এই প্রক্রিয়ায় জিআর বাবদপ্রাপ্ত চাল আত্মসাতের মধ্য দিয়ে চক্রটি হাতিয়ে নেয় মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। যেখানে ইয়াতীমদের চাল আত্মসাতের ঘটনাটি সবাইকে হতবাক করেছে। মহলটি ইয়াতীমখানা কর্তৃপক্ষকে জানায়, তারা যদি এর প্রতিবাদ করে, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের আর কোনো সাহায্য দেয়া হবে না। উল্লেখ্য, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং এটা অব্যাহতভাবে চলে আসছে। এমনকি ক্ষমতাসীনরা ইয়াতীমের মাল নির্বিচারে আত্মসাৎ করছে। নাঊযুবিল্লাহ!

পত্রিকান্তরে খবর হেডিং হয়েছে, “হুইপের এপিএসের ভাইয়ের বিরুদ্ধে ইয়াতীমের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ”

এমনকি বর্তমানে সাবেক দু’বারের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তার স্বামীর ইয়াতীমখানার অর্থ আত্মসাতের মামলাও চলছে।

জানা গেছে, অনেক মাদরাসা ও ইয়াতীমখানার সভাপতি ও মালানা নামধারী অধ্যক্ষ ও তত্ত্বাবধায়করা অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত। অর্থাৎ তাদের মধ্যে নেই ইয়াতীমের অর্থ আত্মসাতের ভয়াবহ পরিণতির ইসলামী চেতনা।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “নিশ্চয়ই যারা ইয়াতীমদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে তারা তো তাদের পেটে আগুন খাচ্ছে, আর অচিরেই তারা প্রজ্জ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০)

এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ক্বিয়ামতের দিন এক সম্প্রদায় নিজ নিজ কবর হতে এমতাবস্থায় উত্থিত হবে যে, তাদের মুখ থেকে আগুনে উদগীরণ হতে থাকবে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এরা কারা? তিনি বললেন: আপনারা কি লক্ষ্য করেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যারা ইয়াতীমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে তারা তাদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছুই ভক্ষণ করে না।” (ইবনে কাসীর)

প্রসঙ্গত, সরকারকে ইয়াতীমের হক্ব নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্রভাবে চিরুনী অভিযান চালাতে হবে। ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

২০১৩ সালের এক তথ্যে সারাদেশে সরকারি ৮৫টি ইয়াতীমখানা ও বেসরকারি ৩ হাজার ৩৭০টি ইয়াতীমখানায় মোট ইয়াতীম শিশুর সংখ্যা ৬৫ হাজার ৩৬৫। এর মধ্যে সরকারি ইয়াতীমখানায় ১০ হাজার ৩০০ জন এবং বেসরকারি ইয়াতীমখানায় ৫৫ হাজার ৫৬ জন। তবে এ হিসেবের বাইরেও হাজার হাজার ইয়াতীম আছে যাদের স্থান সরকারি ও বেসরকারি কোনো ইয়াতীমখানায়ই হয় না।

পাশাপাশি উল্লেখ্য, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬৪টি জেলার ৩৪৩৫টি বেসরকারি ইয়াতীমখানার ৫৯৩০০ জন ইয়াতীম শিশুর অনুকুলে মাসিক ১ হাজার টাকা হারে ৭১.৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের সরকারি মঞ্জুরী জ্ঞপন করা হয়। অথচ সরকার হারাম খেলাধুলার পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে। সেক্ষেত্রে অসহায় ইয়াতীমদের জন্য সরকারের মাত্র ৭৪.৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ খুবই উপহাসমূলক ও অবমাননাকর।

বলাবাহুল্য, সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম উনার দেশে ইয়াতীমদের এরূপ অবস্থা রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারকে অবশ্যই সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মাঝে বিশেষভাবে মূল্যায়নকৃত ইয়াতীমদের যাবতীয় হক্ব আদায়ে যথাযথ ভূমিকা নিতে হবে।

মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই কেবলমাত্র সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

-আল্লামা ¬মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৬১

ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদ প্রচারের নেপথ্যে-১০

চাঁদ দেখা ও নতুন চন্দ্রতারিখ নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-২৯

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-১৯ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস ওহাবী ফিরক্বাসহ সবগুলো বাতিল ফিরক্বা ইহুদী-নাছারাদের আবিষ্কার! তাদের এক নম্বর দালাল

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,       ব্যক্তি ইফা’র ডিজিকে রক্ষার জন্য নয়-       বরং ‘মীলাদ ক্বিয়াম ও মাজার শরীফ ভক্ত হওয়ার জন্য যে সব জামাতে মওদুদী এবং কওমী ফিরক্বারা’ ইফা’র ডিজি’র বিরোধিতা করছে       ‘তারা শুধু মীলাদ ক্বিয়াম বা মাজার শরীফ বিরোধী নয়       মূলতঃ তারা স্বয়ং আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিরোধী।       তারা মওদুদী এবং দেওবন্দী মুরুব্বীদের পূজারী।       মূলতঃ তারা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী।’       কাজেই ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ হবে না’- এ প্রতিশ্রুতির আলোকে গোটা দেশের মীলাদ ক্বিয়াম ও মাজার শরীফ বিরোধী       সব জামাতে মওদুদী ও কওমীওয়ালাদের ‘কুরআন-সুন্নাহ’ তথা       ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’-এর অবমাননার বিচারের আওতাভুক্ত করুন।       দেখা যাবে এরাই যুগপৎভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচারেরও আসামী।       মীলাদ ও মাজার শরীফ-এর বিরোধিতার গযবে পড়েই তারা যুদ্ধাপরাধের মত অপরাধ করেছে।