হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাক্বওয়া ও পরহেযগারী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ইমামুল মুহাদ্দিসীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র শরীয়ত উনার বিধি-বিধান পালনে অত্যান্ত সতর্ক ছিলেন। রাজা-বাদশা, আমির-উমারাদের দরবারে যাওয়া, তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা তিনি একেবারেই পছন্দ করতেন না। কেননা তাদের সাথে সম্পর্ক রাখলে, তাদের দরবারে গেলে পবিত্র ইলম মুবারক উনার মর্যাদার হানী ঘটে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিধি-বিধান সঠিকভাবে পালন করা যায় না। ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ অনুসরণে মুহতাজীভাব ছেড়ে দিয়ে স্বাধীনচেতা হওয়া। রাজা-বাদশাহ, আমির-উমারা কিংবা কোনো দল-মতের সাথে সম্পৃক্ত হলে দ্বীনের কার্জে ভাটা পড়ে যায়। মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আগত-অনাগত সকল ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সে শিক্ষাই দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ যে, তৎকালীন খলীফা আল মানছুর একদিন প্রধান কাজী ও অন্যান্য উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে ডেকে পাঠালেন। উনারা সবাই খলীফার দরবারে উপস্থিত হলেন।
অপরদিকে খলীফা উনার এক বিশেষ খাদিম বললেন, তুমি আমার সহচরদের নামে কিছু কিছু জমি লিখে দাও। খাদিম উনার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করলো। তারপর সাক্ষীস্বরূপ দস্তখত বা স্বাক্ষর নেয়ার জন্য খলীফা জনৈক সহচর মারফত দলীলগুলো প্রধান কাজী বা বিচারক হযরত শাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্য আলিমগণের কাছে পাঠালেন। প্রথমে প্রধান কাজী ছাহিব দস্তখত করলেন। কিন্তু ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দস্তখত করতে রাজী হলেন না। বরং উক্ত সহচরকে জিজ্ঞাসা করলেন, খলীফা এখন কোথায়?
তিনি বললেন, খলীফা এখন বালাখানায় আছেন। হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তুমি খলীফাকে আমার কাছে আসতে বলো নতুবা আমাকে তার কাছে নিয়ে চলো। তবেই আমার সাক্ষ্য দেয়া শুদ্ধ হবে। সহচর বললেন- স্বয়ং প্রধান কাজী ছাহেব ও অন্যান্য আলিমগণ যখন স্বাক্ষর করেছেন তখন আপনি অযাথা আপত্তি করছেন কেনো?
হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তাতে তোমার কোনো প্রয়োজন নেই। তোমাকে যা বলছি তুমি তাই করো। শেষ পর্যন্ত এ ঘটনা খলীফা মানছুর উনার কানে পৌছলো। খলীফা প্রধান কাজী হযরত শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি স্বাক্ষর করার সময় উপস্থিত থেকে শুনেছেন বা দেখেছেন?
কাজী সাহেব জাওয়াব দিলেন, আমি বুঝতে পেরেছি যে, উহা আপনার নির্দেশানুযায়ী হয়েছে। তাই উপস্থিতির প্রয়োজন বোধ করিনি।
খলীফা বললেন, আপনার এ কাজ ন্যায় সঙ্গত হয়নি। কাজেই, আপনাকে আপনার পদ থেকে বরখাস্ত করা হলো। অতঃপর প্রধান কাজীর পদে চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তির যে কোনো একজনকে নিযুক্ত করার বিষয় সাব্যস্ত হলো। সেই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব চারজন হচ্ছেন ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শরীহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনাদেরকে খলীফার দরবারে ডাকা হলো। খলীফার দরবারে আসার পথে উনাদের সবার সাক্ষত হলো। ইমামুল মুহাদ্দিসীন, ইমামুল মুসলিমীন, হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আপনারা আমার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করুন। আমি যে কোনোভাবেই হোক এ পদ গ্রহন করা থেকে বিরত থাকবো। হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি! উনাকে বললেন, আপনি সরে পড়বেন। হযরত ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললেন, আপনি খলীফার সাথে হিকমত করবেন। আর হযরত শরীহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললেন, আপনি পদটি গ্রহণ করবেন। উনার পরামর্শ অনুযায়ী সত্যি ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খলীফার দরবারে পৌঁছে সেখান থেকে সরে পড়লেন। বাকি তিনজন খলীফার সাথে সাক্ষাত করলেন।
প্রথমে খলীফা মানছুর তিনি ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ্ব দ্বীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কাজীর পদ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানালেন।
ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি আরব নই। আরব প্রধানগণ আমার হুকুম সহজে মানতে চাইবে না। কাজেই, আমি এ পদের উপযুক্ত নই। জাফর বারমাকী নামক একজন আমীর তথায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, গোত্রের সাথে এ পদের সম্পর্ক কি?
হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি এ পদের জন্য মোটেই যোগ্য নই। এ কথার প্রমাণ হলো- আমার এ বানী হয় সত্য নতুবা মিথ্যা। সত্য হলে, আমি এ পদের উপযুক্ত নই। আর যদি আমাকে এ ব্যাপারে মিথ্যাবাদী মনে করেন, তাহলে একজন মিথ্যাবাদীকে এরূপ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করা সঠিক নয়। এ কথা বলে ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রোখছত লাভ করলেন। (অসমাপ্ত)