ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-২৮

সংখ্যা: ২৪১তম সংখ্যা | বিভাগ:

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ

ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-২৮

(বিলাদাত শরীফ- ৮০ হিজরী, বিছাল শরীফ- ১৫০ হিজরী)


 সমঝ ও বিচক্ষণতা (৫)

 পূর্ব প্রকাশিতের পর

* হযরত লাইস ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মিশরের প্রসিদ্ধ আলিম ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন, আমি ইমামুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অনেক সুনাম, সুখ্যাতি শুনেছি। উনাকে দেখার জন্য অত্যন্ত আগ্রহী ছিলাম। একবার পবিত্র হজ্জের মৌসুমে পবিত্র মক্কা শরীফ গেলাম। এক স্থানে অনেক লোকের সমাগম দেখতে পেলাম। সেখানে এক ব্যক্তির নিকট অনেকেই প্রশ্ন করছেন। আর তিনি খুবই সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় তার জওয়াব দিচ্ছেন। এরই মধ্যে এক ব্যক্তি “ইয়া আবা হানিফা” নামে ডাকতেই আমি বুঝতে পারলাম ইনিই আমার কাঙ্খিত ব্যক্তি, ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি।

সেই লোকটি বললো, হে ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমার একটি বদ মেজাজী ছেলে আছে। আমি যদি তাকে বিয়ে দেই সে তার বউকে তালাক দিয়ে দেয়। আর যদি তাকে বাঁদী কিনে দেই, তবে সে তাকেও আযাদ বা স্বাধীন করে দেয়। আমি এখন কি করতে পারি?

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তুমি তোমার ছেলেকে নিয়ে বাজারে যাবে। গোলাম-বাঁদী যেখানে বিক্রি করে সেখানে যাবে। তার পর তার পছন্দমত একটি বাঁদী কিনে তার সাথে তোমার ছেলের বিয়ে দিয়ে দিবে। যদি সেই বাঁদীকে সে আযাদ করে দেয় তাহলে আযাদ হবে না। কারণ, বাঁদী তো তার সম্পত্তি নয় যে, আযাদ হবে। আর যদি সে তালাকও দেয়, তাতেও তোমার কোন ক্ষতি হবে না। তোমার বাঁদী কোথাও যেতে পারবে না। সে তোমরই থাকবে। হযরত লাইস ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি এই জাওয়াব শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপস্থিত বুদ্ধি দেখে অভিভুত হলাম এবং উনার অনেক তা’রীফ বা প্রশংসা করলাম। (সীরাতে নু’মান-৬৮)

* খলীফা মানসুরের মোসাহেব রাবী, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে শত্রুতা পোষণ করতো। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ঘটনাক্রমে একদিন খলীফার দরবারে উপস্থিত হতে হলো। বিদ্বেষী রাবীও সুযোগ পেয়ে গেলো। রাবী বললেন, আমীরুল মু’মিনীন! এই ব্যক্তি আপনার মহান পিতামহ সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিরোধিতা করে থাকেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “যদি কোন ব্যক্তি কোনো কথার উপর কসম করে দু’একদিন পর ইনশাআল্লাহ বলে, তবে তা কসমের অংশ হিসেবে গণ্য হবে। আর সেই কসম পুরো করা তার জন্য জরুরী বলে গণ্য হবে না।”

অথচ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তার বিপরীত ফতওয়া দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন যে, “যদি কেউ কসম করার সাথে সাথে ইনশাআল্লাহ শব্দ উচ্চারণ করে তবেই তা কসমের অংশ বলে গণ্য হবে এবং সেই কসম পূর্ণ করতে হবে না। কিন্তু দেরীতে বললে ইনশাআল্লাহ শব্দটি বাতিল বলে গণ্য হবে। আর সেই কসম তাকে অবশ্যই পুরো করতে হবে।

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহা শুনে বললেন, আমীরুল মু’মিনীন! রাবীর ধারণা- লোকে যে আপনার প্রতি বাইয়াত বা আনুগত্য প্রকাশ করে তার কোনো বাধ্য বাধকতা নেই। মানসুর বললো, কেন?

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন- রাবীর কথা অনুযায়ী যে সকল লোক খলীফার দরবারে খলীফার হাতে খিলাফতের বাইয়াত গ্রহণকালে কসম করে, ঘরে ফিরে তারা ইনশাআল্লাহ বললে তাদের কসম মূল্যহীন হয়ে পড়ে। আর শরীয়ত অনুযায়ী কোনো জবাবদিহি করারও আর প্রয়োজন থাকেনা। এ কথা শুনার পর মানসুর হেসে উঠলেন এবং রাবীকে বললেন- আপনি উনাকে খোঁচা দেন কেন? আপনি কোনভাবে উনার উপর বিজয়ী হতে পারবেন না।

সাইয়্যিদুনা ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খলীফার দরবার হতে বের হলেন। রাবী উনাকে বললেন, আজ আপনিতো আমার জানটাকে প্রায় শেষ করেছিলেন। তিনি বললেন- আপনার মতলব ছিলো আমাকে জানে মারার। তাই আমি শুধু নিজেকে রক্ষা করেছি। (সীরাতে নু’মান-৬৮)

* খলীফা মানসূরের দরবারে আবুল আব্বাস নামক একজন প্রভাবশালী অমাত্য ছিলো। সে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন ছিলো। উনার অনিষ্ট, ক্ষতি সাধনের জন্য সে সবসময় তৎপর ছিলো। একদিন সাইয়্যিদুনা ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কোন প্রয়োজনে খলীফার দরবারে গেলেন। আব্দুল আব্বাস সেখানে উপস্থিত ছিল। সে মনে মনে ভাবলো, আজ ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন না। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বিপাকে ফেলার জন্য সে বললো, হে ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমীরুল মু’মিনীন আমাদেরকে অনেক সময়ই আদেশ দেন, “অমুককে হত্যা করো।” আমরা জানিনা, সে ব্যক্তি আদৌ অপরাধী কিনা। এ অবস্থায় আমাদের পক্ষে খলীফার আদেশ পালন করা উচিত কিনা?

সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উত্তরে বললেন, তোমাদের বিবেচনায় খলীফার আদেশ ন্যায়, নাকি অন্যায়?

খলীফা মানসূরের সামনে তার আদেশ অন্যায় বলার সাহস কারো নেই। কাজেই, আবুল আব্বাসকে বাধ্য হয়ে বলতে হলো, খলীফার আদেশ সর্বদাই ন্যায়। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “তাহলে ন্যায় সঙ্গত হুকুম তামিল করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসার কি প্রয়োজন থাকতে পারে?” (সীরাতে নু’মান-৭০)

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-৩১

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-৩৫

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-৩৬

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-১৫ (বিলাদাত শরীফ- ৮০ হিজরী, বিছাল শরীফ- ১৫০ হিজরী)

ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-১৩ (বিলাদাত শরীফ- ৮০ হিজরী, বিছাল শরীফ- ১৫০ হিজরী)