ইলমে তাছাওউফ হাছিল
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
العلمعلمانعلمفىالقلبفذاكالعلمالنافعوعلمعلىاللسانفذالكحجةاللهعزوجلعلىابنادم
অর্থ : “ইলম দু’প্রকার। (১) ক্বলবী ইলম, যা উপকারী ইলম। (আর এটাই ইলমে তাছাওউফ নামে খ্যাত) (২) লিসানী ইলম, যেটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আদম সন্তানের জন্য দলীল স্বরূপ।” (যাকে ইলমে ফিক্বাহ বলা হয়) (মিশকাত শরীফ, মুকাশাফাতুল কুলূব)
ইমামুল মুসলিমীন, শায়খুল মুহাদ্দিছীন, হাকিমুল হাদীছ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত দু’প্রকার ইলিমই হাছিল করেছেন এবং প্রচার-প্রসার করেছেন। অবশ্য সেকালে বর্তমানের ন্যায় দু’প্রকর ইলিম হাছিলের জন্য পৃথক পৃথক ব্যবস্থা ছিল না। আর জরুরতও হয়নি। কারণ, সেকালে প্রায় সবাই আমলের জন্য, মা’রিফাত-মুহব্বত-সন্তুষ্টি হাছিলের জন্যই ইলিম হাছিল করতেন। সকলেই ইলিম অনুযায়ী আমল করতেন। সবাই ছিলেন তাক্বওয়া বা পরহেযগারীতার অধিকারী। বর্তমানের ন্যায় গাইরুল্লাহ উদ্দেশ্যে, দুনিয়াবী ফায়দা লাভের জন্য খুব কম লোকেই ইলিম হাছিল করতেন। তারপরেও মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফাত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি- রেজামন্দি মুবারক লাভের লক্ষ্যস্থল হিসেবে মাশহুর ছিলেন আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ইমামগণ। সে সময় যারা ইমামুল খামিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইমামুল মুত্তাক্বীন, আওলাদে রসূল ইমাম মুহম্মদ বাকির আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার না করেছেন, উনার কাছ থেকে ইলিম হাছিল না করেছেন তারা কামালিয়তে বা পূর্ণতায় পৌঁছতে পারতেন না। সবাই ছিলেন উনার ইলিম ও মুবারক ছোহবতের মুহতাজ। আর আহলে বাইত শরীফ উনার ইমামগণই ছিলেন ইলমে তাছাওউফ উনার ধারক-বাহক।
ইমামুল মুসলিমীন, শায়খুল মুহাদ্দিসীন, হাকিমুল হাদীছ, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করেছেন। সেই ছোহবত মুবারক উনার গুরুত্বও তাৎপর্য্য সম্পর্কে বলেছেন-
لولاسنتانلهلكابونعمان
অর্থ : “আবু নু’মান (ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি) যদি দুটি বৎসর না পেতেন তাহলে তিনি হালাক বা ধ্বংস হতেন।” (সাইফুল মুকাল্লিদীন, তোহফাতে ইছনা আশারিয়া)
তিনি ইমামুল মুত্তাকীন, শায়খুল মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম বাকির আলাইহিস সালাম উনার মুবারক সাক্ষাত লাভের উদ্দেশ্যে তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে গেলেন। উনাকে দূর থেকে এক ব্যক্তি আসতে দেখে ইমামুল মুত্তাকীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম বাকির আলাইহিস সালাম উনার নিকটবর্তী হলেন। ইমাম আ’যম রহমাতুল্লাহি উনার দিকে তাকিয়ে কি যেন বললো। তীক্ষমেধা সম্পন্ন, খাছ ইলম লাদুন্নীপ্রাপ্ত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বুঝতে বাকী রইল না যে, উনারই বিরুদ্ধে বলা হয়েছে। তিনি উনার নিকটবর্তী হয়ে সালাম দিলেন। কিন্তু ইমামুল মুত্তাকীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম বাকির আলাইহিস সালাম সালামের জওয়াব দিলেন না। বরং উনার চেহারা মুবারক ডানদিকে ফিরিয়ে নিলেন। তিনি আবার ডান দিকে গিয়ে সালাম দিলেন। উনি বাম দিকে চেহারা মুবারক ফিরে নিলেন। উনি আবার বাম দিকে গিয়ে সালাম দিলেন।
তখন উনি বললেন, আপনি না সেই ব্যক্তি যিনি আমার সম্মানিত নানাজান নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপর নিজের ক্বিয়াসকে প্রাধান্য দিয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার খিলাফ আমল করে থাকেন?
হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পানাহ চাচ্ছি! আপনি তাশরীফ রাখুন, আমি আপনার ক্বদম মুবারকে আরয করি, আপনার ইজ্জত ও হুরমাত বজায় রাখা আমাদের উপর এত জরুরী, যে রকম আপনার নানাজান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আদব-ইতিহরাম, ইজ্জত রক্ষা করা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের উপর জরুরী ছিল। তখন হযরত ইমাম বাকির আলাইহিস সালাম তিনি তাশরীফ রাখলেন এবং হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উনার সামনে বসলেন এবং আরয করলেন, আমি আপনার থেকে তিনটি বিষয় জানতে চাই, আপনি এর সমাধান দিলে অত্যান্ত খুশি হবো।
প্রথম প্রশ্ন হল-
–পুরুষ দুর্বল না মহিলা দুর্বল?
তিনি বললেন, মহিলা।