পবিত্র ১৯শে রমাদ্বান শরীফ একটি ঐতিহাসিক দিন। ৬০১ হিজরী সনের পবিত্র ১৯শে রমাদ্বান শরীফ তারিখে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী রহমতুল্লাহি আলাইহি বঙ্গ বিজয় করেন। (তাবাকাতে নাসেরী, কাজী মিনহাজ ই সিরাজ, অনুবাদঃ আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, পৃষ্ঠা: ৪৪)
অনেকে পবিত্র ১৯শে রমাদ্বান শরীফ তারিখ বঙ্গ বিজয় দিবস হিসেবে পালন করেন, কিন্তু শুধু বঙ্গ বিজয় না বলে দিবসটির আরেকটি নাম দেয়া উচিত। নামটি হতে পারে- বাংলা ভাষার স্বাধীনতা দিবস বা বাংলা ভাষার আজাদী দিবস।
‘বাংলা ভাষার আজাদী দিবস’ এটা আবার কী?
প্রাচীনকালে বাংলা ভাষা ছিলো একটি প্রাকৃত ভাষা। বাংলার সাধারণ মানুষ সেই ভাষায় কথা বলতেন। সাধারণ মানুষ সেই ভাষায় পরস্পরের সাথে মনের কথা বিনিময় করতে পারতেন। কিন্তু হিন্দু সেন রাজারা এ অঞ্চলে ক্ষমতা দখলের পর সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা বাংলাকে নিষিদ্ধ করে দেয়। তাদের ধর্মগুরুরা ঘোষণা দেয়, “যে বাংলা ভাষায় কথা বলবে, সে নরকে যাবে। সবাইকে দেবতাদের ভাষা সংষ্কৃতিতে কথা বলতে হবে।” সোজা ভাষায় বললে- বাংলা ভাষাকে বন্দি বা পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ করে হিন্দু সেন রাজারা।
ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৬০১ হিজরী সনের পবিত্র ১৯শে রমাদ্বান শরীফ লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে বঙ্গ বিজয় করেন। বঙ্গ বিজয়ের মাধ্যম দিয়ে তিনি বাংলা ভাষা চর্চার উপর নিষেধাজ্ঞাও তুলে দেন। অর্থাৎ বঙ্গ বিজয়ের মাধ্যমে তিনি শুধু সেন রাজাদের কবল থেকে বঙ্গকে মুক্ত করেননি, বাংলা ভাষার যে বন্দি দশা চলছিলো, তাও মুক্ত করেন। পরবর্তীতে মুসলিম শাসকদের তত্ত্বাবধানে বাংলা ভাষার ব্যাপক চর্চা হয় এবং বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হয়ে তা একটি পরিপূর্ণ ভাষায় রূপ নেয়।
এখানে সমীকরণ বলছে- বাংলা ভাষাকে পরাধীন করে হিন্দু শাসকরা। কিন্তু বাংলা ভাষাকে স্বাধীন করেন মুসলিম শাসকরা। তাহলে বাংলা ভাষা মুসলমানদের ভাষা। আর ভাষা যাদের সংস্কৃতিও তাদের। অর্থাৎ বাংলা সংস্কৃতি মানেই মুসলিম সংস্কৃতি।
কিন্তু অতি দুঃখের বিষয়, আজকাল অনেকেই প্রচার করে, বাংলা ভাষা হচ্ছে হিন্দুদের ভাষা। তাই বাংলা সংস্কৃতি বলতে হিন্দু সংস্কৃতি বলে প্রচার করে এবং বাংলা ভাষাভাষি মুসলমানদের উপরে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল কাজ। হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি কখনো বাংলা সংস্কৃতি নয়, বরং মুসলমানদের সংস্কৃতি হচ্ছে আসল বাঙালী সংস্কৃতি। ইতিহাস তাই স্বাক্ষ্য দেয়।
এই নৃতাত্ত্বিক সত্যটা অনেক গুরুত্ব বহন করে। এজন্য দেখবেন ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষীরা এই জায়গাটাতেই সব সময় আঘাত করে। অর্থাৎ ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে খলনায়ক বানানোর চেষ্টা করে। উনার সম্পর্কে ভুল-ভাল ইতিহাস বর্ণনা করে। এটা হিন্দুত্ববাদীদের গভীর ষড়যন্ত্র। তাদের প্রচারিত ইতিহাসে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে লোভী, লুটপাটকারী ও বৌদ্ধদের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসকারী হিসেবে প্রচার করা হয়। অথচ সেন রাজাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে স্থানীয় বৌদ্ধরাও ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী রহমতুল্লাহি আলাইহির পক্ষ নিয়েছিলো, এমন ইতিহাস পাওয়া যায়। তিনি যদি বৌদ্ধ বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসই করতেন, তবে বৌদ্ধরা কেন উনার পক্ষ নিয়েছিলো? সেই কথার উত্তর হিন্দুত্ববাদীরা দিতে পারে না।
ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী রহমতুল্লাহি আলাইহির প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণ করা অতীব জরুরী। এই ইতিহাস বিকৃত করার প্রতি যে শকুনীদের চোখ পড়েছে, সেটা ২০২৩ সালের ৬ষ্ঠ শ্রেণী পাঠ্যবই বলে দেয়। ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বিকৃত ইতিহাস লেখা হয় এবং উনার নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়। পরবর্তীকালে ব্যাপক প্রতিবাদ ও সমালোচনার মুখে সরকার বইটি প্রত্যাহার করে নেয়। তার মানে মুসলমানদের পক্ষ থেকে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইতিহাসের সংরক্ষণের শক্ত কোন উদ্যোগ না নিলে বিরুদ্ধ গোষ্ঠী যে কোন সময় উনার ইতিহাসকে বিকৃত করে ফেলবে।
এজন্যই পবিত্র ১৯শে রমাদ্বান শরীফ তারিখে- বাংলা ভাষার আজাদী দিবস পালন করা একান্ত জরুরী। এতে একদিকে যেমন- বাংলা ভাষা কাদের ভাষা এবং বাংলা সংস্কৃতি দকাদের সংস্কৃতি সে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। অন্যদিকে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে যে ভুলভাল ইতিহাস প্রচার করা হয়, সেটাও রুখে দেয়া হবে।
তাই প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পবিত্র ১৯শে রমাদ্বান শরীফ উপলক্ষে মাহফিল সভা, আলোচনা সভা করার কথা গুরুত্বসহকারে চিন্তা করতে হবে।
-মুহম্মদ মুহিউদ্দিন রাহাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।