আশ শাহিদ, আল বাশীর, আন নাযীর, আল মুবাশশির, আল মুনীর, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাতের সর্বত্র হাযির-নাযির। কোনো সময় ও স্থান উনার সম্মানিত উপস্থিতি মুবারক থেকে খালি নয়

সংখ্যা: ২৬৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

যিনি খ্বাালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اِنَّــاۤ اَرْسَلْنٰكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا.

অর্থ: “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি, সৃষ্টি মুবারক করেছি শাহিদ তথা সাক্ষ্যদাতা, উপস্থিত, হাযির-নাযির হিসেবে, সুসংবাদদানকারী এবং সতর্ককারীরূপে।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ফাত্হ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)

আলোচ্য সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত شَاهِدٌ (শাহিদ) শব্দ মুবারক উনার অর্থ মুবারকই হচ্ছেন ‘হাযির-নাযির’। সুবহানাল্লাহ! নিম্নে বিভিন্ন লুগাত বা অভিধান থেকে বর্ণনা তুলে ধরা হলো-

১. আল কাওছার প্রকাশনীর ‘জাদীদ লুগাতুল ক্বুরআন’ নামক অভিধানে উল্লেখ রয়েছে- সাক্ষী, উপস্থিত, উক্তিকারী।

২. দারুল মাশরিক্ব থেকে প্রকাশিত ‘আল মুনজিদ ফিল লুগাতিল ‘আরাবিয়্যাতিল মু‘য়াছিরাহ’ নামক (আরবী)অভিধানে উল্লেখ রয়েছে-  مَنْ يُّشَاهِدُ شَيْئًا وَّيَرَاهُ بَعَيْنَيْهِ যিনি উনার দুই চোখে দেখে কোন বিষয়ে সাক্ষী প্রদান করেন।

৩. ‘জামি‘উ ফীরূযুল লুগাত’ নামক (আরবী) অভিধানে উল্লেখ রয়েছে- সাক্ষী, সুন্দর, মা’শূক্ব (প্রেমাস্পদ), মাহবূব (প্রিয়জন)।

৪. ‘আল মু’জামুল ওয়াফী’ নামক(আরবী-বাংলা) অভিধানে উল্লেখ রয়েছে- সাক্ষী, প্রত্যক্ষদর্শী, উপস্থিত।

৫. ‘আল-কাওসার’ নামক(আধুনিক আরবী-বাংলা) অভিধানে উল্লেখ রয়েছে- উপস্থিত, স্থায়ী, সাক্ষী, প্রত্যক্ষকারী।

৬. ‘আল মুনীর’ নামক (আরবী-বাংলা) অভিধানে উল্লেখ রয়েছে- সাক্ষী, প্রত্যক্ষদর্শী।

৭. ‘আল ক্বামূসুল ওয়াজীয’ নামক আরবী-বাংলা ব্যবহারিক অভিধানে উল্লেখ রয়েছে- সাক্ষী, প্রত্যক্ষদর্শী, উপস্থিত।

৮. ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত ‘আরবী-বাংলা অভিধানে’ উল্লেখ রয়েছে- সাক্ষী, প্রত্যক্ষদর্শী, উপস্থিত।

৯. ‘আল ক্বমূসুল জাদীদ’ নামক (আরবী-বাংলা) অভিধানে উল্লেখ রয়েছে- সাক্ষী, স্থায়ী, উপস্থিত।

১০. ‘বায়ানুল লিসান’ নামক (আরবী-উর্দূ) অভিধানে উল্লেখ রয়েছে- حَاضِرٌ (হাযির বা উপস্থিত), مُقِيْمٌ (মুক্বীম বা স্থায়ী)।

১১. ‘ফর্’হঙ্গ -ই- রব্বানী’ নামক অভিধানে উল্লেখ রয়েছে-সাক্ষী।

১২. ‘ফার্সী-বাংলা-ইংরেজী’ নামক অভিধানে উল্লেখ রয়েছে- সাক্ষী, প্রত্যক্ষদর্শী।

১৩. ‘ফারহাঙ্গে জাদীদ’ নামক (উর্দূ-বাংলা) অভিধানে উল্লেখ রয়েছে- সাক্ষী, সুন্দর, মা’শূক্ব (প্রেমাস্পদ), মাহবূব (প্রিয়জন)।

উপরোক্ত অভিধান থেকেشَاهِدٌ  (শাহিদ)শব্দ মুবারক উনার যেই অর্থ মুবারকসমূহ পাওয়া গেলো সেগুলো হচ্ছেন-

১. হাযির, ২. নাযির, ৩. উপস্থিত, ৪. সাক্ষী, ৫. প্রত্যক্ষদর্শী, ৬. প্রত্যক্ষকারী, ৭. যিনি উনার দুই চোখে দেখে কোন বিষয়ে সাক্ষী প্রদান করেন, ৮. স্থায়ী, ৯. সুন্দর, ১০. মা’শূক্ব, ১১. মাহবূব, ১২. প্রিয়জন, ১৩. প্রেমাষ্পদ, ১৪. উক্তিকারী ইত্যাদি।

আর ‘উপস্থিত’ শব্দের আরবী হচ্ছে ‘হাযির’

১. ‘আল মু’জামুল ওয়াফী’ নামক (আধুনিক বাংলা-ইংরেজী-আরবী) অভিধানে উল্লেখ রয়েছে- شَاهِدٌ (শাহিদ), حَاضِرٌ (হাযির)।

২. ‘আল মানার’ নামক (বাংলা-আরবী) অভিধানে উল্লেখ রয়েছে- حَاضِرٌ (হাযির), مَوْجُوْدٌ (মাওজূদ)।

বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত ‘সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধানের ৮৫ পৃষ্ঠায়’ উল্লেখ রয়েছে- সমাগত, আগত, হাযির।

আবার ‘হাযির’ শব্দ মুবারক উনার অর্থ মুবারক হচ্ছেন ‘উপস্থিত’

১. ‘আল মু’জামুল ওয়াফী’ নামক (আরবী-বাংলা) অভিধানে উল্লেখ রযেছে- উপস্থিত, বর্তমান।

২. ‘আল-কাওসার’ নামক (আধুনিক আরবী-বাংলা) অভিধানে উল্লেখ রয়েছে- উপস্থিত।

৩. বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত ‘সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান’ এর৬৬২ পৃষ্ঠায়’ উল্লেখ রয়েছে-উপস্থিত, আগত, বর্তমান।

৪. ‘ফর্’হঙ্গ -ই- রব্বানী’ নামক অভিধানে উল্লেখ রয়েছে- বর্তমান, উপস্থিত।

৫. ‘ফার্সী-বাংলা-ইংরেজী’ নামক অভিধানে উল্লেখ রয়েছে- উপস্থিত।

আর এটা সকলের জানা রয়েছে যে, যিনি হাযির বা উপস্থিত তিনি নাযির বা প্রত্যক্ষকারী, প্রত্যক্ষদর্শী। অর্থাৎ যিনি হাযির তিনিই নাযির আবার যিনি নাযির তিনিই হাযির। সুবহানাল্লাহ!

আবার ‘প্রত্যক্ষদর্শী, প্রত্যক্ষকারী’ অর্থ নাযির

নাযির  (نَاظِرٌ) শব্দ মুবারকখানা আরবী। বাংলা অর্থ- প্রত্যক্ষদর্শী, প্রত্যক্ষকারী, স্বচক্ষে দর্শনকারী, দর্শনকারী, অবলোকনকারী, দেখনেওয়ালা ইত্যাদি। যেমন- এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,

عَلَى الْاَرَائِكِ يَنْظُرُوْنَ

অর্থ: “তারা সুউচ্চ আসনে বসে প্রত্যক্ষ করবে।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা মুত্বফফিফীন শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-২৩)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-

فَنَظَرَ نَظْرَةً فِى النُّجُوْمِ

অর্থ: “তখন তিনি নক্ষত্ররাজিকে পূর্ণদৃষ্টিতে দেখলেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আছ ছফ্ফাত শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ-৮৮)

আর সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

كَاَنَّـمَا اَنْظُرُ اِلـٰى كَفِّىْ هٰذِه

অর্থ: “যেমন আমি আমার এই সম্মানিত হাত মুবারক উনার সম্মানিত তালু মুবারক দেখছি।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ১৩/৩১৮, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৬/১০১, আল ফাতহুল কাবীর লিস সুয়ূত্বী ১/৩১৬ ইত্যাদি)

সুতরাং উপরোক্ত দলীল-আদিল্লাহভিত্তিক আলোচনা থেকে চির অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, شَاهِدٌ (শাহিদ) শব্দ মুবারক উনার অর্থ মুবারকই হচ্ছেন, হাযির-নাযির। সুবহানাল্লাহ!

সুতরাং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে কায়িনাতের সর্বত্র হাযির-নাযির এবং কোনো সময় ও স্থান উনার সম্মানিত উপস্থিতি মুবারক থেকে খালি নয়। এই বিষয়টি সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দ্বারাই চির অকাট্যভাবে প্রমাণিত। সুবহানাল্লাহ!

এছাড়াও এই সম্পর্কে সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللَّهُ تَعَالـٰى عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ عَزَّ وجَلَّ قَدْ رَفَعَ لِـىَ الدُّنْيَا فَاَنَا اَنْظُرُ اِلَيْهَا وَاِلـٰى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيْهَا اِلـٰى يَوْمِ القِيَامَةِ كَاَنَّـمَا اَنْظُرُ اِلـٰى كَفِّـىْ هٰذِه جِلِّيَانٌ مِّنَ اللهِ جَلَاهُ لِنَبِيِّه.

অর্থ: “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমগ্র কায়িনাতকে আমার সামনে এমনভাবে রেখেছেন যে, আমি সমগ্র কায়িনাত এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে ও ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার মধ্যে যা কিছু হবে ওই সমস্ত কিছু এমনভাবে দেখি, যেমন আমি আমার এই হাতের তালু মুবারক দেখছি। সুবহানাল্লাহ! এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে কুদরতী উন্মোচন; যা তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ১৩/৩১৮, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৬/১০১, আল ফাতহুল কাবীর লিস সুয়ূত্বী ১/৩১৬ ইত্যাদি)

সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো- মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ইলম মুবারক ও সম্মানিত কুদরত মুবারক দ্বারা সর্বত্র হাযির-নাযির। জাত হিসেবে নয়। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত ক্ষমতা মুবারক-এ ছিফত হিসেবে (সম্মানিত নূর মুবারক ও সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে সম্মানিত মু’জিযা শরীফ উনার মাধ্যমে) কায়িনাতের সর্বত্র হাযির-নাযির এবং জাত হিসেবে যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে স্ব-শরীর মুবারক তথা হাক্বীক্বী ছূরত মুবারক-এ বা মেছালী শরীর মুবারক-এ হাযির ও নাযির হতে পারেন ও হয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ এবং সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরই ব্যাখ্যায় হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাদের লিখিত কিতাব মুবারকসমূহে এ বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা মুবারক উল্লেখ করেছেন। যেমন, ১০ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-

فَحَصَلَ مِنْ مَّـجْمُوْعِ هٰذِهِ النُّقُوْلِ وَالْاَحَادِيْثِ اَنَّ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَـىٌّ بِـجَسَدِه وَرُوْحِه وَاَنَّه يَتَصَرَّفُ وَيَسِيْرُ حَيْثُ شَاءَ فِـىْ اَقْطَارِ الْاَرْضِ وَفِـى الْمَلَكُوْتِ وَهُوَ بِـهَيْئَتِهِ الَّتِـىْ كَانَ عَلَيْهَا قَبْلَ وَفَاتِه لَـمْ يَتَبَدَّلْ مِنْهُ شَـىْءٌ وَّاَنَّه مُغَيَّبٌ عَنِ الْاَبْصَارِ كَمَا غُيِّبَتِ الْمَلَائِكَةُ مَعَ كَوْنِـهِمْ اَحْيَاءً بِاَجْسَادِهِمْ فَاِذَا اَرَادَ اللهُ رَفْعَ الْـحِجَابِ عَمَّنْ اَرَادَ اِكْرَامَه بِرُؤْيَتِه رَاٰهُ عَلـٰى هَيْئَتِهِ الَّتِـىْ هُوَ عَلَيْهَا لَا مَانِعَ مِنْ ذٰلِكَ وَلَا دَاعِـىَ اِلَـى التَّخْصِيْصِ بِرُؤْيَةِ الْمِثَالِ.

অর্থ: “এই সমস্ত উদ্ধৃতি-বর্ণনা, দলীল-প্রমাণ এবং সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উনাদের দ্বারা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত জিসম মুবারক ও রূহ মুবারকসহ জীবিত আছেন (অর্থাৎ তিনি হায়াতুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তিনি সমগ্র পৃথিবীর, সমগ্র কায়িনাতের যেকোনো প্রান্তে ও আলমে মালাকুতের মধ্যে যেখানে ইচ্ছা সেখানে সায়ের মুবারক তথা পরিভ্রমণ মুবারক করে থাকেন এবং স্বাধীনভাবে সমস্ত কিছু পরিচালনা করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্বে যে সম্মানিত অবস্থা মুবারক-এ, সম্মানিত আকার-আকৃতি ও সম্মানিত ছূরত মুবারক-এ ছিলেন এখনও ঠিক হুবহু সেই সম্মানিত অবস্থা মুবারক-এ, সম্মানিত আকার-আকৃতি ও সম্মানিত ছূরত মুবারকেই আছেন; উনার এই সম্মানিত অবস্থা মুবারক, সম্মানিত আকার-আকৃতি ও সম্মানিত ছূরত মুবারক উনার বিন্দুমাত্র কোনো রূপ পরিবর্তন ঘটেনি। সুবহানাল্লাহ! তিনি শুধু চোখের অন্তরালে আছেন। সুবহানাল্লাহ! (এই সম্মানিত বিষয় মুবারক সাধারণভাবে বুঝার জন্য সহজ) উদাহরণ হচ্ছে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা স্ব-শরীরে জীবিত থাকা সত্ত্বেও মানব চক্ষুর অন্তরালে আছেন। যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি কোনো ব্যক্তিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জিয়ারত মুবারক দানে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করতে চান, তখন তার চোখের পর্দা তুলে দেন, সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সেই সম্মানিত অবস্থা মুবারক-এ, সেই সম্মানিত আকার-আকৃতি ও ছূরত মুবারক-এ দেখতে পান যেই সম্মানিত অবস্থা মুবারক-এ, যেই সম্মানিত আকার-আকৃতি ও ছূরত মুবারক-এ তিনি আছেন। (অর্থাৎ অবস্থাবিশেষ প্রত্যেকে নিজ নিজ মাক্বাম অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাক্বীক্বী ছূরত মুবারকেই দেখতে পান।) এতে নিষেধেরও কিছু নেই এবং এটাকে মেছালী যিয়ারত বলে সীমাবদ্ধ করারও কোনো আবশ্যকতা নেই।” সুবহানাল্লাহ! (তানওইরুল হালাক ফী ইমকানি রু’ইয়াতিন নাবী ওয়াল মালাক লিস সুয়ূত্বী ১২ নং পৃষ্ঠা, আল হাওই লিল ফাতাওই ফিল ফিক্বহি ওয়া ‘উলূমিত তাফসীরি ওয়াল হাদীছি ওয়াল উছুলি ওয়ান নাহওই ওয়াল ই’রাবি ওয়া সায়িরিল ফুনূন লিস সুয়ূত্বী ২/৩০৭, তা’রীফু আহলিল ইসলামি ওয়াল ঈমান বিআন্না মুহম্মদান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা ইয়াখলূ মিনহু যামানুন ওয়ালা মাকান লিলহালাবী, মুন্তাহাস সূল ‘আলা ওয়াসায়িলিল উছূল ইলা শামায়িলির রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪/৩৬১ ইত্যাদি)

হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন-

وَفِـىْ مَنَاقِبِ الشَّيْخِ تَاجِ الدِّيْنِ بْنِ عَطَاءِ اللهِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ بَعْضِ تَلَامِذَتِه قَالَ حَجَجْتُ فَلَمَّا كُنْتُ فِـى الطَّوَافِ رَاَيْتُ الشَّيْخَ تَاجَ الدِّيْنِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِـى الطَّوَافِ فَنَوَيْتُ اَنْ اُسَلِّمَ عَلَيْهِ اِذَا فَرَغَ مِنْ طَوَافِه فَلَمَّا فَرَغَ مِنَ الطَّوَافِ جِئْتُ فَلَمْ اَرَهُ ثُـمَّ رَاَيْتُه فِـىْ عَرَفَةَ كَذٰلِكَ وَفِـىْ سَائِرِ الْمَشَاهِدِ كَذٰلِكَ فَلَمَّا رَجَعْتُ اِلَـى الْقَاهِرَةِ سَاَلْتُ عَنِ الشَّيْخِ فَقِيْلَ لِـىْ طَيِّبٌ فَقُلْتُ هَلْ سَافَرَ قَالُوْا لَا فَجِئْتُ اِلَـى الشَّيْخِ وَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَقَالَ لِـىْ مَنْ رَاَيْتَ فَقُلْتُ يَا سَيِّدِىْ رَاَيْتُكَ فَقَالَ يَا فُلَانُ الرَّجُلُ الْكَبِيْرُ يَـمْلَاُ الْكَوْنَ لَوْ دُعِىَ الْقُطْبُ مِنْ حَجَرٍ لَّاَجَابَ فَاِذَا كَانَ الْقُطْبُ يَـمْلَاُ الْكَوْنَ فَسَيِّدُ الْمُرْسَلِيْنَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْۢ بَابِ اَوْلـٰى وَقَدْ تَقَدَّمَ عَنِ الشَّيْخِ اَبِـى الْعَبَّاسِ الطَّــنْجِـىُّ اَنَّه قَالَ وَاِذَا بِالسَّمَاءِ وَالْاَرْضِ وَالْعَرْشِ وَالْكُرْسِىِّ مَـمْلُوْءَةٌ مِّنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.

অর্থ: “হযরত আবুল আব্বাস মারাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খলীফ, আষ্টম হিজরী সনের বিশিষ্ট বুযূর্গ,ি যুগশ্রেষ্ঠ ইমাম, যুগশ্রেষ্ঠ ওলী, আস সাইয়্যিদুল কাবীর, আল ফক্বীহ, আরিফ বিল্লাহ হযরত শায়েখ তাজুদ্দীন ইবনে ‘আত্বাউল্লাহ শাযালী মালিকী  রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফাযায়িল-ফযীলত সম্পর্কে উনার কতিপয় মুরীদ থেকে বর্ণিত রয়েছে। উনার একজন বিশিষ্ট মুরীদ বলেন, আমি একবার হজ্জে যাই। আমি যখন সম্মানিত তাওয়াফ মুবারক করছিলাম, তখন দেখতে পেলাম হযরত শায়েখ তাজুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও তাওয়াফ করছেন। সুবহানাল্লাহ! আমি নিয়ত করলাম, হযরত শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্মানিত তাওয়াফ মুবারক শেষ করলেই আমি গিয়ে উনাকে সালাম দিবো। তাই তিনি যখন সম্মানিত তাওয়াফ মুবারক শেষ করলেন, তখন আমি এগিয়ে যাই। কিন্তু আমি উনাকে দেখতে পেলেম না। তারপর ঠিক একইভাবে আমি উনাকে সম্মানিত আরাফার ময়দানে ও অন্য সকল সম্মানিত স্থান মুবারক-এ (সম্মানিত হজ্জ মুবারক উনার যাবতীয় কাজ সমাধা করতে) দেখি। সুবহানাল্লাহ! তারপর (সম্মানিত হজ্জ মুবারক শেষে) আমি যখন কায়রো ফিরে আসি, তখন আমি লোকজনকে হযরত শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। আমাকে বলা হয় যে, তিনি ভালো আছেন। আমি বললাম, তিনি কি সম্মানিত হজ্জ মুবারক করতে গিয়েছিলেন? সকলে বললো যে, না। তারপর আমি নিজেই হযরত শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট গেলাম এবং উনাকে সালাম দিলাম। অতঃপর হযরত শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (আমি কিছু বলার আগেই নিজ থেকেই) আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি কাকে দেখেছো? সুবহানাল্লাহ! আমি বললাম, হে আমার সম্মানিত শায়েখ! আমি আপনাকেই দেখেছি। সুবহানাল্লাহ! তারপর হযরত শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হে অমুক! মহান ব্যক্তিগণ তথা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা সমগ্র কায়িনাত, সমগ্র সৃষ্টিজগৎ পূর্ণ করে থাকেন, সমস্ত কায়িনাতে বিরাজমান থাকেন। সুবহানাল্লাহ! কোনো কুতুবকে ডাকা হলে, অবশ্যই তিনি পাথরের ভিতর হতেও সাড়া প্রদান করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! (হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) সুতরাং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদনা উম্মত একজন সম্মানিত কুতুব তিনি যদি সমগ্র সৃষ্টি জগৎ ঘিরে থাকেন, সমস্ত কায়িনাতে বিরাজমান থাকেন, তাহলে যিনি সমস্ত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাইয়্যিদ, সাইয়্যিদুল মুরসালন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাাতামুন নাবিইয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বাভাবিকভাবেই সম্মানিত কুতুব উনাদের চেয়ে এই বিষয়ে অধিকতর যোগ্য, অগ্রাধিকার প্রাপ্ত। সুবহানাল্লাহ! (অর্থাৎ নিঃসন্দেহে অবশ্যই অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দ্বারা সমগ্র সৃষ্টি জগত, সমস্ত কায়িনাত পরিপূর্ণ। সুবহানাল্লাহ! অবশ্যই অবশ্যই তিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতে, সমস্ত কায়িনাতে বিরাজমান, হাযির-নাযির। সুবহানাল্লাহ!) আর আগেই হযরত শায়েখ আবুল আব্বাস ত্বন্জী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, হঠাৎ দেখি- আসমান, যমীন, আরশ ও কুর্সী সবকিছুই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বারা পরিপূর্ণ। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ নিঃসন্দেহে অবশ্যই অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাতের সর্বত্র হাযির-নাযির; কোনো সময় ও স্থান উনার সম্মানিত উপস্থিতি মুবারক থেকে খালি নয়।” সুবহানাল্লাহ! (তানওইরুল হালাক লিস সুয়ূত্বী ১২ নং পৃষ্ঠা, আল হাওই লিস সুয়ূত্বী ২/৩০৭ ইত্যাদি)

১০ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন-

وَقَالَ الشَّيْخُ صَفِىُّ الدِّيْنِ بْنُ اَبِى الْـمَنْصُوْرِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِىْ رِسَالَتِه وَالشَّيْخُ عَبْدُ الْغَفَّارِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِى الْوَحِيْدِ حُكِىَ عَنِ الشَّيْخِ اَبِى الْـحَسَنِ الْوِنَانِـىِّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ اَخْبَرَنِـىَ الشَّيْخُ اَبُو الْعَبَّاسِ الطَّـنْجِىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ وَرَدْتُّ عَلـٰى سَيِّدِىْ اَحْمَدَ بْنِ الرِّفَاعِـىِّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَقَالَ لِـىْ مَا اَنَا شَيْخُكَ شَيْخُكَ عَبْدُ الرَّحِيْمِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ بِقِنَا فَسَافَرْتُ اِلـٰى قِنَا فَدَخَلْتُ عَلَى الشَّيْخِ عَبْدِ الرَّحِيْمِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فَقَالَ لِـىْ عَرَفْتَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ لَا قَالَ رُحْ اِلـٰى بَيْتِ الْمَقْدِسِ حَتّٰى تَعْرِفَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحِيْنَ وَضَعْتُ رِجْلِـىْ وَاِذَا بِالسَّمَاءِ وَالْاَرْضِ وَالْعَرْشِ وَالْكُرْسِـىِّ مَـمْلُوْءَةٌ مِّنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَجَعْتُ اِلَى الشَّيْخِ

 রু’ইয়াতিন নাবী ওয়াল মালাক এবং আল হাওই লিল ফাতাওই ফিল ফিক্বহি ওয়া ‘উলূমিত তাফসীরি ওয়াল হাদীছি ওয়াল উছূলি ওয়ান নাহওই ওয়াল ই’রাবি ওয়া সায়িরিল ফুনূন শরীফ’ থেকে অনেক বক্তব্য উল্লেখ করার পর বলেন-

قُلْتُ وَاَمَّا كَلَامُنَا وَالَّذِىْ نَقُوْلُه اِنْ شَاءَ اللهُ تَعَالـٰى اِنَّ الْاَمْرَ كَمَا قَالَهُ الْـجَلَالُ السُّيُوْطِـىُّ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَاَخَصُّ مِنْ ذٰلِكَ اَنَّ الَّذِىْ اَرَاهُ اَنَّ جَسَدَهُ الشَّرِيْفَ لَا يـَخْلُوْ مِنْهُ زَمَانٌ وَّلَا مَكَانٌ وَّلَا مَـحَلٌّ وَّلَا اِمْكَانٌ وَّلَا عَرْشٌ وَّلَا لَوْحٌ وَّلَا كُرْسِـىٌّ وَّلَا قَلَمٌ وَّلَا بَـحْرٌ وَّلَا بَرٌّ وَّلَا سَهْلٌ وَّلَا وَعْرٌ وَّلَا بَرْزَخٌ وَّلَا قَبْرٌ كَمَا اَشَرْنَا اِلَيْهِ اَيْضًا. وَاَنَّهُ امْتَلَاَ الْكَوْنُ الْاَعْلـٰى بِه كَامْتِلَاءِ الْكَوْنِ الْاَسْفَلِ بِه وَكَامْتِلَاءِ قَبْرِه بِه فَتَجِدُه مُقِيْمًا فِـىْ قَبْرِه طَائِفًا حَوْلَ الْبَيْتِ قَائِمًاۢ بَيْنَ يَدَىْ رَبِّه لِاَدَاءِ الْـخِدْمَةِ تَامَّ الْاِنْبِسَاطِ بِــاِقَامَتِه فِـىْ دَرَجَةِ الْوَسِيْلَةِ اَلَا تَرٰى اَنَّ الرَّائِيْنَ لَه يَقَظَةً اَوْ مَنَامًا فِـىْ اَقْصَى الْـمَغْرِبِ يُوَافِقُوْنَ فِـىْ ذٰلِكَ الرَّائِيْنَ لَه كَذٰلِكَ فِـىْ تِلْكَ السَّاعَةِ بِعَيْنِهَا فِـىْ اَقْصَى الْـمَشْرِقِ فَمَتٰى كَانَ كَذٰلِكَ مَنَامًا كَانَ فِـىْ عَالَـمِ الْـخَيَالِ وَالْـمِثَالِ وَمَتٰى كَانَ يَقَظَةً كَانَ بِصِفَتَـىِ الْـجَمَالِ وَالْاِجْلَالِ وَعَلـٰى غَايَةِ الْكَمَالِ كَمَا قَالَ الْقَائِلُ

لَيْسَ عَلَى اللهِ بـِمُسْتَنْكَرٍ..

اَنْ يَّـجْمَعَ الْعَالَـمَ فِـىْ وَاحِد

অর্থ: “আমি বলি, আমার যে বক্তব্য ইনশাআল্লাহ আমি তা ব্যক্ত করছি- নিশ্চয়ই আমার কথাও হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার অনুরূপ। তবে উনার কথার উপর আমার বিশেষ বক্তব্য এই যে- আমি এটা দেখতে পাচ্ছি যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র জিসম মুবারক থেকে কোনো সময় ও স্থান, কোনো আশ্রয় ও স্থিতি, সম্মানিত আরশে আযীম মুবারক ও সম্মানিত লাওহ মুবারক, সম্মানিত কুরসী মুবারক ও সম্মানিত কলম মুবারক, পানি ও স্থল, যমীন ও আসমান, বারজাখ ও কবর কোন কিছুই খালি নেই। সুবহানাল্লাহ! এ বিষয়ের দিকে আমি আগেই ইশারা করেছি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনাকে দিয়ে যেরূপ পরিপূর্ণ, নিশ্চয়ই ঠিক একইভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দিয়ে পরিপূর্ণ আছে সৃষ্টির সর্বোচ্চভাগ ও সর্বনিম্নভাগ। সুবহানাল্লাহ! আপনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ-এ অবস্থানকারীরূপে যেমন পাবেন অনুরূপ পাবেন সম্মানিত বাইতুল্লাহ শরীফ উনার চারিদিকে তাওয়াফকারীরূপে, তেমনি পাবেন আবার মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মুখে ছানা-ছিফত মুবারক করা অবস্থায় উপস্থিত থাকতে, আবার সম্মানিত দরজায়ে উসীলা মুবারক-এ পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি মুবারক উনার সাথে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করতে। সুবহানাল্লাহ!

আপনি কি একথা জানেন না যে, ঠিক একই সময়ে একই সাথে পৃথিবীর সুদূর পশ্চিমপ্রান্তের কতক লোক এবং সুদূর পূর্বপ্রান্তের কতক লোক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় দেখে থাকেন? সুবহানাল্লাহ! স্বপ্নের দ্বারা এরূপ হলে আলমে খেয়াল ও আলমে মেছালের মাধ্যমেই হয় থাকে। আর জাগ্রত অবস্থায় হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত জামালী ও সম্মানিত জালালী সিফত মুবারকসহ হয়ে থাকে। এটা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত চূড়ান্ত কামালিয়াত মুবারক উনার সম্মানিত বহিঃপ্রকাশ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! যেমন একজন বুযূর্গ ব্যক্তি বলেন-

لَيْسَ عَلَى اللهِ بـِمُسْتَنْكَرٍ…

اَنْ يَّـجْمَعَ الْعَالَـمَ فِـىْ وَاحِد.

“মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি একের মধ্যে সারা বিশ্বকে জমা করেন, উনার অসীম শক্তি মুবারক উনার তুলনায় তা আদৌ বিস্ময়কর ব্যাপার নয়।” সুবহানাল্লাহ! (তা’রীফু আহলিল ইসলামি ওয়াল ঈমান বিআন্না মুহম্মদান ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা ইয়াখলূ মিনহু যামানুন ওয়ালা মাকান, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী ১৪০-১৪১, মুন্তাহাস সূল ‘আলা ওয়াসায়িলিল উছূল ইলা শামায়িলির রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪/৩৬১)

ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘আম্বাউল আযকিয়া বিহায়াতিল

আম্বিয়া শরীফ উনার ১ম পৃষ্ঠায় এবং হাওই শরীফ’ উনার মধ্যে বলেন-

فَاَقُوْلُ حَيَاةُ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِـىْ قَبْرِه هُوَ وَسَائِرِ الْاَنْۢبِيَاءِ مَعْلُوْمَةٌ عِنْدَنَا عِلْمًا قَطْعِيًّا لِمَا قَامَ عِنْدَنَا مِنَ الْاَدِلَّةِ فِـىْ ذٰلِكَ وَتَوَاتَرَتْ بِهِ الْاَخْبَارُ.

অর্থ: “আমি বলি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে জীবিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সম্মানিত রওযা শরীফ-এ জীবিত অর্থাৎ উনারা হায়াতুল আম্বিয়া এই বিষয়টি আমাদের নিকট সম্মানিত ক্বিতয়ী ইলম তথা অকাট্য ইলম (সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ এবং সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ) দ্বারা সাব্যস্ত, যা আমাদের নিকট এ ব্যাপারে অনেক দলীল-আদিল্লাহ মুবারক এবং মুতাওয়াতির খবরসমূহ দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ!

আর এই কথা সকলেরই জানা যে, মুতাওয়াতির খবরকে অস্বীকারকারীরা কাফির।

তিনি আরো বলেন-

وَقَدْ صَحَّ اَنَّ الْاَرْضَ لَا تَاْكُلُ اَجْسَادَ الْاَنْۢبِيَاءِ وَاَنَّه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اجْتَمَعَ بِالْاَنْۢبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ لَيْلَةَ الْاِسْرَاءِ فِـىْ بَيْتِ الْمَقْدِسِ وَفِـى السَّمَاءِ وَرَاٰى مُوْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ قَائِمًا يُّصَلِّـىْ فِـىْ قَبْرِه

অর্থ: “আর অবশ্যই এটা সম্মানিত ও পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বরাই প্রমাণিত যে, নিশ্চয়ই যমীন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত জিসম মুবারক (শরীর মুবারক) ভক্ষণ করে না। আর নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মি’রাজ শরীফ উনার রাতে সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে সম্মানিত বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফ-এ একত্রিত হয়েছেন এবং আসমানে বিভিন্ন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে সাক্ষাত মুবারক করেছেন। অর্থাৎ উনার সম্মানিত দীদার মুবারক সবাইকে হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! আর (সম্মানিত মি’রাজ শরীফ গমনকালে) হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার সম্মানিত রওযা শরীফ-এ নামাযরত অবস্থায় দেখেছেন।” সুবহানাল্লাহ!

যদি অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের এই অবস্থা হয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে নিয়ে সম্মানিত বাইতুল মুক্বাদ্দাস শরীফ-এ সম্মানিত নামায মুবারক আদায় করেন আবার তিনি উনাদের সাথে বিভিন্ন আসমানে সাক্ষাত করলেন, তাহলে যিনি সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও নবী-রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত অবস্থা মুবারক কি হবে, তা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা-কল্পনার উর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! একই সময়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ উনার মধ্যে থাকা, আবার সারা কায়িনাতের প্রতিটি স্থানে হাযির থাকা এবং সমস্ত কিছু দেখা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য কস্মিনকালেও অস¦াভাবিক কিছু না বরং এটা উনার জন্য অত্যন্ত স¦াভাবিক বিষয়। সুবহানাল্লাহ!

কাজেই উপরোক্ত বাস্তবসম্মত বিস্তারিত দলীলভিত্তিক বর্ণনাসমূহ দ্বারা দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, আশ শাহিদ, আল বাশীর, আন নাযীর, আল মুবাশশির, আল মুনীর, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাতের সর্বত্র হাযির-নাযির। কোনো সময় ও স্থান উনার সম্মানিত উপস্থিতি মুবারক থেকে খালি নয়। সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে ছহীহ সমঝ দান করুন। আমীন!

-আল্লামা মুহম্মদ আকরাম ইবনে যায়িদ।

আলআছদাকু, আলআত্বহারু, আলআত্বইয়াবু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে (সাঃ, দঃ) দুরূদ শরীফ লিখা প্রসঙ্গে

আওওয়ালু শাফিয়িন, আওওয়ালু মুশাফ্ফায়িন, আওওয়ালু মাঁইইয়ুর্হারিক হালক্বাল জান্নাতি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা প্রসঙ্গে

ইমামুল মুরসালীনা, ইমামুন্ নাবিইয়ীনা, ইমামুল উম্মাতি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়ি আলাল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস্্ সালাম রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ প্রমাণ করে যে, তিনি ইলমে গইব-এর অধিকারিণী ছিলেন

আলবাশীরু, আলবালীগু, আলবাদরুল মুনীরু, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত ও পবিত্রতা

জালীলুল ক্বদরি, জামীলুয যিকরি, জাওয়ামিউল কালিমি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ উনারা ছিলেন পবিত্র থেকে পবিত্রতম