তাফসীরুল কুরআন: জিহালত বা অজ্ঞতা এবং তা হতে বাঁচার উপায়

সংখ্যা: ২২২তম সংখ্যা | বিভাগ:

মানুষের দুর্ভাগ্যসমূহের মূল ও প্রধান কারণ হলো জিহালত বা মূর্খতা, অজ্ঞতা। জিহালতের বিপরীত বস্তু হলো পবিত্র দ্বীন ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞান তথা ইলম। আর ইলমই হচ্ছে সৌভাগ্য লাভের মূল কারণ। ইলম হচ্ছে হিদায়েত আর জিহালত হচ্ছে গুমরাহী। কাজেই জিহালতের বিপরীতে ইলম অর্জন এবং উনার অনুসরণ করা প্রত্যেকের জন্য ফরয।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

طلب العلم فريضة على كل مسلم ومسلمة

অর্থ : “ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত, মুসনাদে হযরত ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি)

মুসলমান বান্দা-বান্দী ও উম্মতের প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি হাছিল করা এবং এক্ষেত্রে ইলম হচ্ছে অন্যতম মাধ্যম। ইলম ব্যতীত উনাদের সন্তুষ্টি হাছিল অসম্ভব।

হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “ইলম উনার দুটি দিক রয়েছে। প্রথম দিক হচ্ছে সৎ পথের পরিচয় লাভ করা এবং দ্বিতীয় দিক হচ্ছে সৎ পথে চলার নিয়ম-নীতি জানা। এ দুটি দিকের ইলম অর্জিত হলে কামিয়াবী লাভ অতি সহজ হয়ে যায়।” এ কারণে খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি মুনাজাত শরীফ উনার মধ্যে এই বলে দোয়া করতেন, “আয় আল্লাহ পাক! আপনি আমাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করুন এবং তাতে চলার তাওফিক দান করুন।”

তিনি আরো বলেছেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার সম্বন্ধে মানুষের অজ্ঞ ও অচেতন থাকার কারণ হলো, পরকালীন কাজে কোশেশ না থাকা এবং সংসার মোহে মত্ত থাকা।”

এ অবস্থা সৃষ্টির কারণ হলো, মানুষ পারলৌকিক ভয়-ভীতি ও বিভীষিকা সম্বন্ধে বেখবর। পারলৌকিক ভয়াবহ দৃশ্য সবার নজরে আসেনা। এগুলো শুধু হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাই দেখতে পারেন। আর উনাদের থেকে জেনে নেন উনাদের ওয়ারিছ হক্কানী-রব্বানী আলিম বা ওলীআল্লাহগণ উনারা। আর উনাদের নিকট থেকে শুনে সর্বসাধারণ লোকদের এগুলো জেনে নিতে হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لتنذر قوما ما انذر اباءهم فهم غافلون.

অর্থ : “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষদেরকে পারলৌকিক ভীতি প্রদর্শন করা হয়নি, তারা মোহগ্রস্ত অবস্থায় বেহুঁশ রয়েছে, আপনি যেন সেই সম্প্রদায়কে ভয় প্রদর্শন করেন।” (পবিত্র সূরা ইয়াসীন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)

পরকাল সম্বন্ধে অজ্ঞ বেহুঁশ লোকদেরকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করার জন্য এবং যে কালাম মুবারকখানি জানিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করেছেন তা হচ্ছে-

ان الانسان لفى خسر الا الذين امنوا وعملوا الصالحات.

অর্থ : “নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তারা ব্যতীত সব মানুষই ধ্বংসের মধ্যে। অর্থাৎ ঈমানদার এবং নেককার ছাড়া অন্য সবাই জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত।” (পবিত্র সূরা আছর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২, ৩)

উল্লেখ্য, পাহাড়-পর্বত, অরণ্য-প্রান্তরে শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা থাকে না বলে ইলমের অভাবে এসব স্থানের লোকেরা অজ্ঞতার আঁধারেই নিমজ্জিত। এদের কাছে দ্বীন ইসলাম উনার বাণী পৌঁছানোর কেউ নেই। তাছাড়া এরা নিজেরা কিছুই জানে না। এ দু’কারণে দ্বীন ইসলাম উনার পথে গমন করে না। পল্লী গ্রামের অবস্থাও প্রায় অনুরূপ। কেননা, তথায় আলিম খুঁজে পাওয়া যায় না। যদিওবা দু-একজন থাকে কিন্তু তারা দায়িত্ব পালনের অযোগ্য। যেসব স্থানে দ্বীন ইসলাম উনার বাণী প্রচার করা হয়, সেখানে আলিমগণ আবার নিজেদের পার্থিব বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। ফলে সেখানকার জনসাধারণও দ্বীনি বিষয়ে অজ্ঞই থেকে যায়। আলিমগণ যদিও ওয়াজের মাহফিল করে কিছুটা ওয়াজ-নছীহত করে তাতে সুর-সঞ্চার, ছন্দের তাল-মিল ও রঙ্গ-রসের প্রভাবে ওয়াজের আসল বিষয় ঢাকা পড়ে যায়। সুতরাং এই ধরনের ওয়াজ-নছীহত, বয়ান-বক্তৃতা দ্বারা প্রকৃতপক্ষে মানুষের দ্বীনি শিক্ষা আদৌ অর্জিত হয় না। বিশেষত ওইসব পার্থিব কৃত্রিম বস্তুর কারণে ওয়াজ মানুষের মনে তাছীর করে না। ফলে মানুষ দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ ও অন্ধই থেকে যায়।

কাজেই, পবিত্র দ্বীন ইসলাম সম্পর্কিত জিহালত বা অজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে এবং সঠিক ইলম হাছিল করতে হলে সত্যিকার যিনি ওলীআল্লাহ উনার ছোহবত লাভ করতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমানে মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ হলেন- মুজাদ্দিদ আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি। উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ আজ অজ্ঞ, অশিক্ষিত মানুষগুলো পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সঠিক ইলম অর্জন করছে এবং সেই সাথে ইলম অনুযায়ী পবিত্র সুন্নত উনার আমল করছে এবং পাশাপাশি ইলমে তরীক্বা বা তাছাওউফ অর্জনের মাধ্যমে ইখলাছ হাছিল করছে। যেই ইলম, আমল ও ইখলাছ হচ্ছে হাক্বীক্বী মুসলমান হওয়ার জন্য অপরিহার্য বিষয়।

 

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী