তাফসীরুল কুরআন: ফুহূশ বা অশ্লিলতার পরিণতি ও তার প্রতিকার

সংখ্যা: ২২৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

অশ্লীল কথা পরিহার করা ফরয; কেননা তা হারাম এবং কবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত। যার পরিণাম জাহান্নাম। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘যে ব্যক্তি অশ্লীল কথা  বলে তার জন্য জান্নাত হারাম। তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন, দোযখবাসী কতিপয় লোকের মুখ দিয়ে পূতিগন্ধময় অপবিত্র দ্রব্যাদি নির্গত হবে এবং তার দুর্গন্ধে দোযখবাসীরা অভিযোগ করতে থাকবে ও জিজ্ঞাসা করবে, এরা কারা? তখন বলা হবে, এরা হলো ঐ সমস্ত লোক যারা দুনিয়াতে কুৎসিত ও অশ্লীল কথা পছন্দ করতো এবং গালিগালাজ করতো। নাউযুবিল্লাহ!

হযরত ইবরাহীম ইবনে মাইসারা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে ব্যক্তি অশ্লীল কথাবার্তা বলে, কিয়ামতের দিন তার আকৃতি  কুকুরে ন্যায় হবে। নাউযুবিল্লাহ! (কিমিয়ায়ে সাআদাত)

মূলতঃ ঈমানদার ব্যক্তির বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, ভাল কাজের আদেশ প্রদান করা এবং মন্দ কাজে নিষেধ করা বা বাধা প্রদান করা। কিন্তু শয়তানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মন্দ বা অশ্লীল কাজে আদেশ এবং ভাল কাজে বাধা প্রদান করা।

যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

ولا تتبعوا خطوات الشيطن انه لكم عدو مبين. انما يأمركم بالسوء والفحشاء

অর্থ: আর তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা; নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো তোমাদেরকে এ নির্দেশই দেয় যে, তোমরা অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করতে থাকো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৮,১৬৯)

ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন ব্যক্তি তিরস্কার বা ভর্ৎসনাকারী, লা’নত বা অভিসম্পাতকারী, অশ্লীল গাল-মন্দকারী, নির্লজ্জ বা বেহায়াপনাপূর্ণ আচরণকারী হতে পারে না। (তিরমিযী শরীফ, বায়হাকী শরীফ, মিশকাত শরীফ)

হযরত বিলাল ইবনে হারিস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন ব্যক্তি এমন উত্তম কথা বলে, কিন্তু সে তার মর্যাদা সম্পর্কে অবগত নয়। এর জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি তার সাথে সাক্ষাৎ লাভের দিন পর্যন্ত নিজের সন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে রাখেন। সুবহানাল্লাহ! আবার কোন ব্যক্তি এমন মন্দ বা অশ্লীল কথা বলে, কিন্তু সে জানে না যে, তা তাকে কোথায় নিয়ে পৌঁছাবে। এর জন্য মহান আল্লাহ পাক তার সাথে সাক্ষাৎ দিবস পর্যন্ত নিজের অসন্তুষ্টি লিপিবদ্ধ করে রাখেন। নাঊযুবিল্লাহ! (মিশকাত শরীফ, শরহুস সুন্নাহ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, যখন কোন বান্দা কোন বস্তু বা ব্যক্তির প্রতি অভিসম্পাত করে তখন উক্ত অভিসম্পাত বাক্যটি আকাশের দিকে উঠে অতঃপর আকাশের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর তা যমীনের দিকে অবতীর্ণ হয় এবং যমীনের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর ডান দিকে ও বাম দিকে যায়। আর যখন সেখানেও কোন স্থান না পায় তখন যার উপর অভিসম্পাত করা হয়েছে, যদি সে অভিসম্পাতের উপযুক্ত হয় তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করে। আর যদি সে অভিসম্পাতের উপযুক্ত না হয় তাহলে যে অভিসম্পাত করেছে তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করে। নাঊযুবিল্লাহ! (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদা বাতাসে এক ব্যক্তির চাদর উড়িয়ে নিল, তখন সে বাতাসকে লা’নত বা অভিসম্পাত করলো। এটা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, বাতাসকে অভিসম্পাত করো না। কেননা ইহা তো আদিষ্ট। বস্তুতঃ যে ব্যক্তি এমন কিছুকে অভিসম্পাত করলো যার সে উপযোগী নয়, তবে ঐ অভিসম্পাত তার উপরই ফিরে আসবে। নাঊযুবিল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার ছাহাবীগণ উনাদের মধ্যে কেউ কারো কোন মন্দ কথা আমাকে পৌঁছাবে না। কেননা, আমি ইহাই ভালবাসি, আমি আপনাদের কাছে এমন অবস্থায় উপস্থিত হই যে, তখন (আপনাদের ব্যাপারে) আমার অন্তর পরিষ্কার ও স্বচ্ছ থাকবে। (আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “অধিকাংশ অশ্লীল কথা নির্জনবাসের ব্যাখ্যা থেকে উদ্ভুত হয়ে থাকে। নির্জনবাস সম্পর্কিত কোন কথা বলতে হলে ইঙ্গিতে বলা উচিত। স্পষ্টভাবে বললে অশ্লীল বাক্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্যান্য মন্দ কথাও পরিষ্কারভাবে না বলে ইঙ্গিতে বলা আবশ্যক। নারীদের নাম স্পষ্টভাবে উচ্চস্বরে নেয়া অনুচিত। বরং তাদেরকে মাস্তুরাত বা পর্দানশীন বলা যেতে পারে। তাদের নাম ধরে ডাকতে হলে অনুচ্চ স্বরে ডাকা উচিত।” (ক্বিমিয়ায়ে সাআদাত)

স্মরণীয় যে, অশ্লীল কথা, আচরণ ইত্যাদি পরিহার বা প্রতিকারের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ইলমে তাছাওউফ অর্জন। অতএব, প্রত্যেক ঈমানদার পুরুষ-মহিলার জন্য ইলমে তাছাওউফ অর্জন করা ফরযে আইনের অন্তর্ভুক্ত।

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী