তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

সংখ্যা: ১৯৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

বুখারী ও মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ‘ইহসান’ সম্পর্কে জানতে চাইলে তার উত্তরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন-

ان تعبد الله كانك تراه فان لم تكن تراه فانه يراك

অর্থাৎ ইহসান হলো: æএমনভাবে আল্লাহ পাক-উনার ইবাদত করো অর্থাৎ মুসলমানের প্রতিটি মুহূর্তই যেহেতু ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত সেহেতু প্রতিটি মুহূর্ত এমনভাবে অতিবাহিত করো যেনো তুমি আল্লাহ পাক-উনাকে দেখছো, যদি দেখতে না পাও তাহলে ধারণা করো যে তিনি তোমাকে দেখছেন।”

এ হাদীছ শরীফ থেকে মুহাদ্দিছীনে কিরাম ইহসানের দুটি স্তর বর্ণনা করেছেন। এক. বান্দা আল্লাহ পাক-উনাকে দেখে দেখে ইবাদত করবে। দুই. বান্দাকে আল্লাহ পাক দেখছেন এ ধারণা করে বান্দা ইবাদত করবে। এ দু’অবস্থা ব্যতীত ইবাদত করা হলে সে ইবাদত আল্লাহ পাক-উনার নিকট কবূল যোগ্য হবেনা।

এ হাদীছ শরীফ প্রমাণ করছে, বান্দা যমীনে আল্লাহ পাক-উনাকে দেখবে। এখন কিভাবে দেখবে সে বর্ণনা অন্য হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে এবং ইমাম-মুজতাহিদ-আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কিতাবাদিতে উনারা সেটা বর্ণনা করেছেন। আর তাহলো- মিছালী ছূরত মুবারকের বর্ণনা। কারণ আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, যমীনে আল্লাহ পাক-উনাকে হাক্বীক্বী ছূরত মুবারকে কেউই দেখবে না। মিছালী ছূরত মুবারকে দেখতে পাওয়া বহু বর্ণনার মধ্যে একটি বর্ণনা হলো বাশারী ছূরত মুবারকে দেখা।

এখন আল্লাহ পাক-উনাকে মিছালী বাশারী ছূরত মুবারকে দেখে কী একথা বলা শুদ্ধ হবে যে, আল্লাহ পাক তিনি মানুষের মতো? নাঊযুবিল্লাহ!

যদি আল্লাহ পাক উনাকে মিছালী বাশারী ছূরত মুবারকে দেখে  মানুষের মতো বলা শুদ্ধ না হয় তাহলে আল্লাহ পাক-উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মিছালী বাশার ছূরত বা আকৃতি মুবারকের কারণে অন্যান্য মানুষের মতো বলা শুদ্ধ হবে কি করে?

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টির পর থেকে যমীনে আগমণের পূর্ব পর্যন্ত শুধুমাত্র নূর মুবারকের ছূরত বা আকৃতি মুবারকে ছিলেন। আর ফেরেশতারাও নূরের দ্বারা সৃষ্টি। তাই বলে কি কোন ফেরেশতা কখনও একথা বলেছেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তিনি তাঁদের মতো? বললে কি সে কথা শুদ্ধ হতো? অবশ্যই না। তাহলে বাশারী ছূরত মুবারকের কারণে তিনি অন্য মানুষের মতো হন কি করে?

নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের তেইশ বছর যিন্দিগী মুবারকে হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম চব্বিশ হাজার বার সাক্ষাৎ করেছেন। এরমধ্যে তিনি অধিকাংশ সময় ছাহাবী হযরত দাহইয়াতুল ক্বলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু- উনার মুবারক ছূরত বা আকৃতিতে সাক্ষাৎ করেছেন। আর তাই সূরা মারইয়াম-এর ১৭ নম্বর আয়াত শরীফ-এ আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম-উনার মানব আকৃতি ধারণ করার কথা উল্লেখ করেছেন। এই আয়াত শরীফেও ‘বাশার’ বা মানব শব্দটি আছে। এখন বাশার ছিফতের অধিকারী হওয়ার কারণে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যারা তাদের মতো সাধারণ মানুষ বলছে, তারা তাহলে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে সাধারণ মানুষের মতো বলছে না কেন?

একইভাবে জিনেরাও মানুষের ছূরত ধারণ করে চলাফেরা করে, মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করে সেজন্য তাদেরকে কি মানুষ বলা শুদ্ধ হবে? কস্মিনকালেও নয়।

উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে কটূক্তি করে যারা বলছে যে, তিনি নাকি তাদের মতোই সাধারণ মানুষ। নাঊযুবিল্লাহ! যারা এরূপ জঘন্য উক্তি করছে তারা কি কখনও তাদের দলে আমীর, উস্তাদ ও পিতা-মাতার দাঁতকে কুকুরের দাঁতের মতো বলবে? যদিও কুকুরের দাঁত তাদের আমীর, মুরুব্বী, উস্তাদ ও পিতা-মাতার দাঁতের চেয়েও শক্ত।

আরো উল্লেখ্য, জগৎ বিখ্যাত নমরূদ, সাদ্দাদ, কারূন, ফিরআউন, আবূ জাহিল, আবূ লাহাব এরাও তো মানুষ, তাহলে মাঝে মাঝে ওইসব কুলাঙ্গাররা নিজেদের বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য বলুক যে, সে এবং তাদের আমীর ও মুরুব্বীগং নমরূদ, সাদ্দাদ, কারূন, ফিরআউন, আবূ জাহিল, আবূ লাহাবের মতোই। নাঊযুবিল্লাহ!

উপরন্তু ‘মিছলু’ বা ‘মতো’ শব্দটির জন্য সবকিছুকেই যদি একাকার করতে হয় তাহলে পৃথিবীটা তো কমলা লেবুর মতোই গোলাকার। ফলে তারা নিজেদের ঘরের দেয়াল চাটুক আর বলুক যে তারা কমলা লেবু খাচ্ছে। কারণ, তাদের ঘরটাতো পৃথিবীর ভিতরেই। আল্লাহ পাক কত চমৎকারইনা বলেছেন-

من اتخذ الهه هواه واضله الله على علم وختم على سمعه وقلبه وجعل على بصره غشاوه

অর্থ: æযে ব্যক্তি তার খেয়াল-খুশিকে স্বীয় উপাস্য স্থির করে নেয়, আল্লাহ পাক তিনি জেনে শুনেই তাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দেন এবং তার চোখের উপর আবরণ বা পর্দা রেখে দেন।”

ফলে, এদের পক্ষে হক্ব জানা, বুঝা, অনুধাবন করা এবং তা মানা ও গ্রহণ করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।

কাজেই যারা বলছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের মতো নাঊযুবিল্লাহ! তাদের সে কথা সম্পূর্ণরূপে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী তথা কাট্টা কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী