তাফসীরুল কুরআন: হিরছ বা লোভের নিকৃষ্ট পরিণতি

সংখ্যা: ২১৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

হিরছ ও আমাল আরবী এ শব্দ দু’টি প্রায় কাছাকাছি অর্থে ব্যবহৃত হয়। কুরআন শরীফ-এর বিভিন্ন আয়াতে কারীমায় শব্দ দুটি লোভ-লালসা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে-

ولتجدنـهم احرص الناس على حيوة ومن الذين اشركوا

অর্থ: আপনি তাদেরকে (ইহুদীদেরকে) জীবনের প্রতি সবার চেয়ে, এমনকি মুশরিকদের চেয়েও অধিক লোভী দেখবেন। (সূরা বাক্বারা: আয়াত শরীফ ৯৬)

ذرهم يأكلوا ويتمتعوا ويلههم الامل فسوف يعلمون

অর্থ: আপনি তাদেরকে ছেড়ে দিন, তারা আহার করুক, ভোগ করুক এবং আশায় মোহগ্রস্ত থাকুক। অতি সত্বর তারা (এর পরিণতি) জানতে পারবে। (সূরা হিজর: আয়াত শরীফ ৩)

আলোচ্য আয়াতে কারীমার মাধ্যমে প্রতিভাত হয়েছে যে, পানাহারকে উদ্দিষ্ট বিষয় সাব্যস্ত করে নেয়া এবং সাংসারিক বিলাস-ব্যসনের উপকরণ সংগ্রহে মৃত্যুকে ভুলে গিয়ে দীর্ঘ পরিকল্পনা প্রণয়নে মেতে থাকা কাফিরদের স্বভাব-বৈশিষ্ট্য, যারা পরকাল ও তার হিসাব-কিতাবে এবং পুরস্কার ও শাস্তিতে বিশ্বাস করে না।

পার্থিব ধন-সম্পদ কিংবা দুনিয়াবী পদমর্যাদা প্রভৃতির ব্যাপারে লোভ-লালসা বা আশা-আকঙ্খা করা নিন্দনীয় বিষয়। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, æহযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আদম সন্তান বৃদ্ধ হয়ে পড়ে কিন্তু দু’টি জিনিস তার মধ্যে যৌবনপ্রাপ্ত হয়। সম্পদের প্রতি মোহ বা লোভ এবং দীর্ঘ জীবনের আকঙ্খা।” (বুখারী, মুসলিম)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আদম সন্তানকে ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ দু’টি উপত্যকাও যদি দেয়া হয়, তবুও সে তৃতীয় উপত্যকার আকাঙ্খা করে বসবে। বস্তুত আদম সন্তানের পেট কবরের মাটি ব্যতীত আর কিছুই পরিপূর্ণ করতে পারবে না। আর যে ব্যক্তি (লোভ হতে) তওবা করে মহান আল্লাহ পাক তার তওবা কবুল করেন। (বুখারী, মুসলিম)

হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের সম্মুখে একটি কাঠি গাড়লেন এবং তার পাশে আরেকটি গাড়লেন। অতঃপর তৃতীয় আরেকটি গাড়লেন তা হতে অনেক দূরে। তারপর উপস্থিত ছাহাবাগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কি জানেন, ইহা কি? উনারা বললেন, আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই সবচেয়ে ভাল জানেন। তখন তিনি বললেন, (মনে করুন) এই প্রথম কাঠিটি হলো মানুষ আর দ্বিতীয়টি হলো মানুষের মৃত্যু। বর্ণনাকারী বলেন, আমার বোধ হয়, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দূরবর্তী তৃতীয় কাঠিটির দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, তাহলো মানুষের লোভ বা আকঙ্খা। মানুষ তার লোভ বা দীর্ঘ আকাঙ্খার মোহে ডুবে থাকে, অপরদিকে তার সে আকাঙ্খা পূর্ণ না হতেই মৃত্যু তার নিকট উপস্থিত হয়। (শরহুস সুন্নাহ, মিশকাত শরীফ)

হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার শরীরের এক অংশ ধরে বললেন, পৃথিবীতে মুসাফির অথবা পথযাত্রীর ন্যায় জীবনযাপন করুন। আর প্রতিনিয়ত তথা সর্বদা নিজেকে কবরবাসী মনে করুন। (বুখারী শরীফ)

হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই ব্যক্তির ওজরের অবকাশ রাখেননি যার মৃত্যুকে বিলম্বিত করে ষাট বৎসরে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। (বুখারী শরীফ)

হযরত আমর ইবনে শুআইব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতার মাধ্যমে উনার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, এই উম্মতের কল্যাণের সূচনা হলো মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি পরিশুদ্ধ ঈমান ও আক্বীদা এবং দুনিয়ার প্রতি বিরাগ অবলম্বন করা। আর অনিষ্টতার মূল হলো কার্পণ্য ও লোভ-লালসা। (বায়হাক্বী, মিশকাত)

হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি একবার দামেশকের জামে মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে বললেন, হে দামেশকবাসীগণ! তোমরা কি একজন সহানুভূতিশীল, হিতাকাঙ্খী ভাইয়ের কথা শুনবে? শুনে নাও, তোমাদের পূর্বে অনেক বিশিষ্ট লোক অতিক্রান্ত হয়েছে। তারা প্রচুর ধন-সম্পদ একত্রিত করেছিল, সুউচ্চ দালান-কোঠা নির্মাণ করেছিল এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা তৈরি করেছিল, আজ তারা সবাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাদের গৃহগুলোই তাদের কবর হয়েছে এবং তাদের দীর্ঘ আশা ধোঁকা ও প্রতারণায় পর্যবসিত হয়েছে।

হযরত হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে ব্যক্তি জীবদ্দশায় দীর্ঘ আকাঙ্খার জাল তৈরি করে, তার আমল অবশ্যই খারাপ হয়ে যায়। (তাফসীরে কুরতুবী)

অতএব, লোভ নামক মন্দ স্বভাবটি দূর করতে হলে একজন কামিলে মুকাম্মিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তরীক্বতের অনন্য সবক ক্বলবী যিকিরের মাধ্যমে কল্ব্ বা অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে হবে।

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী

তাফসীরুল কুরআন: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজেদের মতো বাশার বলা কাট্টা কুফরী